ইঙ্গমার বার্গম্যান - ম্যাক্স ভন স্যাডো, জাঁ লুক গদার - জাঁ পল বেলমন্দ, আকিরা কুরোসাওয়া- তসিরো মিফুনে, আন্দ্রে ভাইদা - বিগনাউ কাইবুলস্কি, ফেদেরিক ফেলিনি - মার্চেল্লো মাস্ত্রইয়ানি! সমান্তরাল চলচ্চিত্র, আর্ট হাউস চলচ্চিত্র, সিরিয়াস চলচ্চিত্র যে নামেই ডাকা হোক, যারা এ ধরণের চলচ্চিত্রের সাথে নূন্যতম পরিচিত তাদের কাছে উপরের যুগলগুলি সুপরিচিত। আমাদের দেশে এই যুগলের নাম, সত্যজিৎ রায় - সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! এসবই মানসপুত্রদের কথা। কিন্তু মানসকন্যা? পুরুষমানুষের মনের ইচ্ছা বা কল্পনার প্রতিমূর্তি হিসেবে জন্ম হবে আরেকজন পুরুষের এটাই কি স্বাভাবিক নাকি সর্বত্রগামী পুরুষ-তন্ত্রের এটা আরেক ধরণের সূক্ষ্ম আত্মপ্রকাশ এই কূটতর্কে না গিয়েও একটা কথা বলা যায়, মানসকন্যার সংখ্যা তুলনায় কম। সত্যজিতের নায়িকা হিসেবে যাদের কথা বলা হয় তারা ঐ নায়িকার বেশি কিছু নয়। ভাইদার ক্রিস্টিনা জিন্দা বা ফেলিনির গুইলিয়েত্তা মাসিনা বা গদারের আনা কারিনা? উহু, যুগল হিসেবে ঠিক দাঁড়াচ্ছে না ব্যাপারটা। বার্গম্যান - লিভ উলম্যান? হ্যাঁ ঠিকঠাক। তবে এব্যাপারে এক্কেবারে মোক্ষম হল, মাইকেলেঞ্জেলো আন্তনিওনি(১৯১২-২০০৭) - মনিকা ভিত্তি(১৯৩১-২০২২) এই জুটি!
মনিকা ভিত্তিকে আন্তনিওনির মানসকন্যা বলার কারণ শুধুমাত্র এই নয় যে ওঁর একক নির্দেশিত চোদ্দ পনেরটি ছবির মধ্যে পাঁচটিতেই মনিকা অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের প্রধানতম ছবি গুলির তালিকায় নিশ্চয়ই সব ছবি পড়বে না। পড়বে ‘অপুত্রয়ী’, পড়বে ‘চারুলতা’, পড়বে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ইত্যাদি। কারণ, এগুলিতেই সত্যজিৎ-বীক্ষার সর্বোত্তম প্রকাশ ও বিকাশ দেখা গেছে। একই ভাবে আন্তনিওনির ক্ষেত্রে নাম করতে হবে তাঁর প্রখ্যাত ট্রিলজি – ‘লাভেন্তুরা’(১৯৬০) , ‘লা-নত্তে’(১৯৬১), ‘লা-এক্লিপ্স’(১৯৬২)-এর, নাম করতে হবে ‘দি রেড ডেসার্ট’(১৯৬৪)-এর। মনিকা ভিত্তিকে ছাড়া এই ছবিগুলোর কথা স্রেফ ভাবা যায় না! আন্তনিওনির বীক্ষা বিকশিত হতই না যদি না মনিকা ভিত্তি থাকতেন। সবাই জানেন আন্তনিওনির ভুবন আধুনিক যুগ জটিলতার প্রধান চিহ্নগুলির ধারক। এলিয়ানেশান, ডিস্ট্র্শন, কনফিশন এইগুলির সঙ্গে তাঁর ছবির দর্শকরা নিয়ত অভ্যস্ত। মনিকা ভিত্তি সুন্দরী, লাস্যময়ী, কিন্তু তার থেকেও বড় হল একাকীত্বের, বিহ্বলতার ও অনির্দিষ্ট যন্ত্রণাকে গোপন করে রাখার ওরকম একটি মুখ আর দ্বিতীয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই আন্তনিওনির ঐ ছবিগুলির ভুবন ও মনিকা ভিত্তি সমার্থক।