মাল্যবান, জলপাইহাটি, বাসমতীর উপাখ্যান লেখা হয়েছিল পেনসিলে। গোপনে লিখতেন কবি, আর ভাই অশোকানন্দ দাশের বাড়ি গিয়ে ট্রাঙ্কে জমা করে ফিরে আসতেন। , ১৭২/৩ রাসবিহারী এভিনিউয়ের সেই বাড়ি অতি সম্প্রতি ভাঙা শুরু হয়েছে। সেখানেই ছিল সন্দেশ পত্রিকার অফিস। বাড়িটি পেনসিলে আঁকা বাড়ির মতো ধূসর হতে হতে মুছে গেল। ট্রাঙ্কগুলি অনেকদিন আগেই জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা পড়েছিল। অনুজ প্রতিম লেখক আফসার আমেদ তা কপি করে আনত ন্যাশানাল লাইব্রেরি থেকে। ভাইরাস আক্রান্ত এই অন্তরীন কালে আমি আমার জীবনের কথা বলব ভাবছি। জীবনানন্দ মুছে যাননি, আমার লেখা অস্পষ্ট হতে হতে হারিয়ে যাবে জানি। আমি সামান্য মানুষ, জীবনভর কলমে লিখেছি, তার উপরে জল পড়ে লেখা ধুয়ে গেছে কতবার। আমি আমার কথা পেনসিলে লিখতে শুরু করলাম। এই ভাইরাস আক্রান্ত কালে মানুষের কথা মানুষ লিখে যাচ্ছেন পেনসিলেই। কোনটি থাকবে, কোনটি আবার ভেসে উঠে আমার কাছে চলে আসবে দু’বছর বাদে, আমি জানি না। তবু লেখা। কারণ জীবনে এক জাদু আছে, জীবনের জাদুতে কতবার মুগ্ধ হয়েছি, কতবার অশ্রুপাত করেছি, সেই কথাই তো লিখব, লিখতে বসেছি। অতি প্রত্যুষে এই পেনসিলিয়া খবরিয়ার নিদ্রা ভাঙে। তখন বাইরে অন্ধকার। কাকও ডাকে না। কী করবে সে? এ নভমণ্ডল তখন হিম নীলাভ, চারদিকে অসীম স্তব্ধতা, সেই নীরবতার ভিতরেই জীবনের আরম্ভে পৌঁছে যেতে চায় সে, মাতৃগর্ভে স্মৃতির কাছে ফিরে যেতে চায়। সেই স্মৃতিলেখ এই বিবরণ।
আমার ছেলেবেলার অল্প অংশে বর্তমান বাংলাদেশের সাতক্ষীরে শহরের মাইল চার দূরে ধূলিহর, বাকি অংশে কলকাতার বেলগাছিয়া আর ২৪ পরগনার বসিরহাটের লাগোয়া দণ্ডীরহাট গ্রাম। বেলগাছিয়ার বাসা নিয়েছিলেন বাবা সেই ৫৪-৫৫ সালে। আর দণ্ডীরহাটে আমাদের একান্নবর্তী সংসার গড়ে ঊঠল। সেখানে লম্বা দালান, দুদিকে দুটি বারান্দা, সামনে পিছনে, পুবে পশ্চিমে। সেই বারান্দায় ঠাকুরদা অন্নদাচরণ মিত্র চেয়ারে বসে থাকতেন। তিন বিঘে জমির উপর বসতভিটে। তার সীমানা ঘিরে নারকেল গাছ। এছাড়া হিম সাগর আমের গাছ অনেক, পুকুরপাড়ে শিউলি ফুলের গাছ। একটি জাম গাছ, লিচু ছিল না মনে হয়। সেই বাড়িতে পূর্ব পাকিস্তানের ধূলিহর থেকে লোক এসে থাকত প্রায়ই। আবার বেলগাছিয়ার বাসা ছিল যেন একটি জংশন স্টেশন। এখানে কতলোক এসে যে আস্তানা গেড়ে তারপর নিজের জায়গা খুঁজে নিয়ে চলে গেছে। যেহেতু সাতক্ষীরে ধূলিহর সীমান্তের অতি নিকটে, সেই কারণে ঐ অঞ্চলের লোক সময় করে দেশ ছাড়তে পেরেছিল মনে হয়। খুলনা জেলা এমনিতেই ছিল হিন্দু অধ্যুষিত, ভাগাভাগির সময় ইন্ডিয়ায় ছিল তিনদিন, তারপর মুর্শিদাবাদ এল ইন্ডিয়াতে, খুলনা গেল পাকিস্তানে। এই ঘটনাই বুক ভেঙে দিয়েছিল ওখানকার মানুষের। হ্যাঁ, আমাদের সাতক্ষীরে ছিল অসাম্প্রদায়িক এলাকা। দাঙ্গার কথা তেমন শুনি নি, যা হয়েছিল নোয়াখালি, কুমিল্লা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ বা কলকাতায় ছেচল্লিশের ১৪-১৫-১৬ই আগস্ট, ভাগলপুরে, ভারতের পশ্চিম সীমান্তে। এখন শুনতে পাই সেই অসাম্প্রদায়িক খুলনা এবং সাতক্ষীরে সাম্প্রদায়িকতার আখড়া। ধর্মীয় মৌলবাদীদের আশ্রয়স্থল। তবে কি ওখানে গিয়ে বুঝেছি, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধ শক্তি দুর্বল নয়। ২০১৯ এর ১৮-ই জুন সন্ধ্যা। সাতক্ষীরে প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে আমার দাদা মনোজ মিত্র, নাট্যকার সৌমিত্র বসু এবং আমিও ছিলাম। সেখানে এম, পি, লুতফুল্লা ভাই বললেন, ‘আপনারা চলে গিয়ে আমাদের কম ক্ষতি হয়নি দাদা, অনেক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছি তো নিশ্চয়।’ সেখানে এসেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড় সৌম্য সরকারের বাবা। কত গল্প হলো তাঁর সঙ্গে। যাক সে কথা, আমি বলি ছেলেবেলার সেই দণ্ডীরহাট গ্রাম আর ছেলেবেলার কলকাতার কথা।
কলকাতার বেলগাছিয়ায় যে ইন্দ্র বিশ্বাস রোডে আমাদের বাসা বাড়ি, সেখানে মস্ত টালা পার্ক। আগে যার নাম ছিল জিমখানা গ্রাউন্ড। একটা সময়ে বেঙ্গল জিমখানা নামের একটি ক্লাব কলকাতার ক্রিকেট ও ফুটবলে যে কোনো একটি ডিভিশিনে খেলত। মনে আছে বিটি রোড শ্যামবাজারের বাস সব আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেত তখন, টালা ব্রিজ হয়নি, কাঠের ব্রিজ থেকে দোতলা বাস পড়ে গিয়েছিল রেললাইনে, চিতপুর গুডস ট্রেনের ট্র্যাকে। সেই টালা ব্রিজ হলো, আবার ৫০ বছর না যেতে বন্ধ করে দিয়ে ভাঙা হচ্ছে। এক জীবনে দুবার ব্রিজ ভাঙতে, দেখলাম গড়তে দেখলাম। ছোটবেলায় ,৫৪-৫৫ সালে টালা পার্কে ছিল গোরখা রেজিমেন্টের ক্যাম্প। লম্বা লম্বা ইগ্লুর মতো বাড়ি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েই তা গড়ে উঠেছিল। ৫৪/৫৫-য় উঠে যাচ্ছে। আমাদের ফ্ল্যাটবাড়ির উপরে একটি পরিবার থাকতেন। নেপালি কিংবা গোর্খা। খুব বন্ধু ছিল তাদের ছেলেটি। হঠাত করে তারা চলে গেল দারজিলিঙের দিকে কোন গ্রামে। তার বাবা গোর্খা রেজিমেন্টে কাজ করতেন মনে হয়। ইন্দ্র বিশ্বাস রোডে ৮১ নং বাড়িটির কথা খুব মনে পড়ে। বাংলো বাড়িটি থেকে বেরিয়ে আসতেন শ্বেতাঙ্গিনী এক। সেই বাড়ির মেমসায়েব আর তার দুই সন্তান এবং উলের বলের মতো কুকুর নিয়ে ঘুরতে দেখেছি বাল্যকালে অপরাহ্নবেলায়। অবাক অবাক অবাক। তাঁরা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, চলে গেলেন কবে সে খবর জানি না। সেই বাংলো পরে চিত্র পরিচালক নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার থেকে নব্যেন্দুদার নিজস্ব বাড়ি। আমি তাঁকে মেম সায়েবের কথা বলতে অবাক। তিনি জানেন না। বাংলো ভেঙে এখন বহুতল। নব্যেন্দুদাও নেই। মনে পড়ে দুই বন্ধুর কথা, রাজিত আর সুজিত। তারা ফুটফুটে অবাঙালি ধনীর সন্তান। এ পাড়ায় ভাড়া থাকত তাদের পরিবার। আমাদের ক্রিকেট ফুটবলের সঙ্গী। আমাকে বাবাজি বলে ডাক দিত মধুর কন্ঠে। তারাও চলে গেল কোথায়। তখন ছিল স্বপ্নের কলকাতা। ধনী দরিদ্র, বাঙালি অবাঙালি, ভেদ দেখিনি কোনো। আমাদের ফ্ল্যাটের পিছনেই পার্শ্বনাথের মন্দির। কার্তিক পূর্ণিমায়, গুরু নানকের জন্মদিনে পার্শ্বনাথেরও মহা সমারোহ। রথযাত্রা আসত বড় বাজারের মন্দির থেকে। বিপুল খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হত মন্দিরে। পাশের ফ্ল্যাটের সুনন্দ বয়সে বড়, দুষ্ট প্রকৃতির। সে আমাদের নিয়ে গিয়ে পংক্তি ভোজনে বসিয়ে দিয়েছিল। তাকে চিনতে পেরেছিল মন্দিরের লোক। কিছু তো বলেইনি আমাদের, বরং বেশি করে আমাদের পাতে পুরি, সব্জি, বোঁদে প্যাড়া ইত্যাদি দিয়েছিল, খা লে বেটা, খা লে। সেই পার্শ্বনাথের মন্দির ছিল অপূর্ব, শান্ত, স্নিগ্ধ। সকলের অবাধ প্রবেশাধিকার। কনে দেখা হত শুনেছি ওই মন্দিরের উদ্যানে। ভিতরটা ভারি সুন্দর, মন্দির বাদ দিয়ে বড় দুটি দিঘি, সেখানে টলটলে জলে মাছ খেলা করে। ছোট ছোট দুটি কৃত্রিম পাহাড়, ফুলের বাগান, সবুজ ঘাসের মাঠ। পার্শ্বনাথের সমারোহে কত ব্যন্ড বাজত, কত রকম বাজনা। আমরা যেহেতু মন্দির সংলগ্ন বাড়িতে থাকি, তাঁরা ভোগ বিলি করতেন বাড়ি বাড়ি। ভোগ মানে বড় চুপড়ি ভরা বোঁদে, পুরি ইত্যাদি। অনেকটা। এখন সেই মন্দিরের পুরোন ট্রাস্টি বদল হয়ে গেছে। আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা আমাদের পাশের বাড়ির মানুষ। তাদের বাড়ির মনোজ, সূরজদের সঙ্গে আমার বন্ধুতা ছিল। একসঙ্গে খেলেছি বাল্যকালে। তাঁরা চলে গেছেন বাড়ি বিক্রি করে। এখন যাঁরা নিয়েছেন মন্দিরের পবিত্রতা ভঙ্গ করেন। উচ্চস্বরে লাউড স্পিকারে হিন্দি গানের সুরে ভক্তিগীতি আরম্ভ হলে লেখাপড়া চৌপাঠ। যখন লাউড স্পিকার নিষিদ্ধ, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের সময়, কে তাঁদের আটকায়। এই নিয়ে কত সমস্যা হয়েছে। কত আপত্তি। কে শোনে কার কথা। পার্শ্বনাথের মন্দিরে দিগম্বর সাধুরা আসেন। এইটি মোটেই শ্লীল নয়।
আমি ক্লাস ওয়ান-টু পড়িনি, একেবারে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হয়েছিলাম বেলগাছিয়ার মনোহর একাডেমিতে। বাড়িতে আমার প্রথম শিক্ষক ছিলেন রাখালবাবু। বস্তিতে থাকতেন, তাঁর ভাই বাজারে আলু বিক্রি করতেন। তা আমি পরে দেখেছি। এঁরা সব পূর্ববঙ্গের মানুষ। অবস্থার ফেরে জীবন এমন হয়েছিল। বাজারে যে চায়ের দোকান ছিল ব্রজেনবাবুর, তাঁর পুত্র তপন আমাদের বন্ধু। তারাও ছিল বড় ঘর। অবস্থার ফেরে তার বাবা এপারে এসে চায়ের দোকান করে সংসার নির্বাহ করতেন। তপনের বোন শিখা আমার বোন অপর্ণার সহপাঠী। তখন ধনী দরিদ্রে ভেদাভেদ ছিল না বিশেষ। পূর্ববঙ্গে জমি নির্ভর মানুষ দেশভাগে কী বিপন্ন হয়েছিল তা এখন বুঝতে পারি।
তখন কলকাতার পাড়ার ইস্কুলগুলো ভাল ছিল। আমাদের ইস্কুলে ধনী দরিদ্র একসঙ্গে পড়ত। আমার সহপাঠী সুপ্রভাতের বাবা ছিলেন ছুতোর মিস্ত্রি, তাদের পদবী ছিল সূত্রধর। জয়দেব রায়ের বাবা আইসক্রিম গাড়ি ঠেলতেন। জয়দেব ছিল অতি মেধাবী ছাত্র। ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেত জয়দেব। নকশাল বাড়ির আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়েছিল, জেল খেটেছিল। সে খুব সম্ভবত ফিজিক্স নিয়ে পড়েছিল। স্টেট ব্যাঙ্কের বড় চাকুরিয়া হয়েছিল জয়দেব। তারাও পূর্ববঙ্গের মানুষ ছিল। যখন আমি দেশ পত্রিকায় প্রথম লিখি সেই ১৯৮৩তে, সেই গল্প পড়ে জয়দেব আমার বাড়ি এসেছিল একদিন সকালে। সে ছিল এক অমলিন শ্যামলা বালক। আমার আর দুই সহপাঠীর বাবার মিষ্টির দোকান ছিল বাজারে। কিন্তু এখন বুঝি সেই দোকানটি ছিল বিষণ্নতায় ভরা। পূঁজিপাটা ছিল না তেমন। এপাড়ার জলধর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পাশে দাঁড়াতেই পারত না। সেই দোকানের নিমকি আর হালুয়াতে ছিল আমার অমোঘ আকর্ষণ। সেই মিষ্টির দোকান কবে ঊঠে যায় মনে নেই। মনে পড়ে তার শো-কেসে কিছুই নেই, শুধু শূন্য গামলা আর পুরোন রসের তলানি। আমাদের সেই দুই সহপাঠীর একজন কাশীনাথ হয়েছিল ট্রাম কোম্পানির ড্রাইভার। আর বিমলকে দেখতাম বাজারে শব্জি নিয়ে বসত। ক্লাসের এক সহপাঠীদের ছিল জাহাজ কিংবা স্টিমারের ব্যবসা । তাদের এপাড়ায় মস্ত চারতলা বাড়ি। সেই বাড়ির গায়ে ধবধবে শাদা রঙ। তার মাথায় বড় বড় অক্ষরে হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ লেখা ছিল। আমরা বলতাম হরেকৃষ্ণ বাড়ি। এখনো তাই বলি। হরেকৃষ্ণ বাড়ির সহপাঠী আমার পাশে বসত মনোহর একাডেমি ইস্কুলের ক্লাসে। তার বইয়ের একটি ছোট সুটকেসের মতো ছিল, তার উপরে হিমাদ্রি সাহা নাম লেখা। আমার স্কুল ব্যাগ ছিল না। ক্লাসের অধিকাংশের তা ছিল না। বই খাতা আর পেনসিল বক্স নিয়ে ইস্কুলে যাওয়া ছিল রেওয়াজ। আমার আর এক সহপাঠীর বাবা স্টেটসম্যান পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন শুনেছি । একজনের বাড়ি পাইকপাড়া যেতে মন্মথ দত্ত রোডে মস্ত জাহাজের মতো। বাড়িটির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। এই সব বন্ধুদের কথা বলার মানে ধনী দরিদ্র একসঙ্গে এক ক্লাসে পড়া। মারামারি, ভালবাসাবাসি সব একসঙ্গে। ফুটবল ক্রিকেট একসঙ্গে। এখন তেমন হয় না। গত চল্লিশ বছরে ধীরে ধীরে এইটা হয়েছে। ভাগ হয়ে গেছে, সব ভাগ হয়ে গেছে। পাড়ার ইস্কুলে গরিব বস্তিবাসী পড়ে। আর যে বাপ মার ক্ষমতা আছে, তারা তাঁদের ছেলেকে সুসভ্য দূরের ইস্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন। ইংলিশ ইস্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ধনীর ছেলে গরিবের ছেলের সঙ্গে মেশেনি, বরং দূরে থেকে ঘৃণা করতে শিখেছে কেউ কেউ। কেন এমন হল ? পরিকল্পিত ভাবে বিদ্যা-ব্যবসার ফলাও প্রসার ঘটল। পাড়ার ইস্কুলগুলো শেষ হয়ে গেল। এইটা হয়েছে। হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের পাড়ার ইস্কুল থেকে অসম্ভব মেধাবী সব ছাত্র বেরিয়েছে। সুধীর কর্মকার, সুশীল কর্মকার, শ্যাম কর্মকার--এই তিন খেলোয়াড় আমাদের পাড়ার কুমার আশুতোষ ইন্সটিটিউশনের ছাত্র। আর ছিলেন প্রশান্ত সিংহ। ভারতের হয়ে খেলেছেন জাকার্তা এশিয়ান গেমস দলে। মারডেকা কাপ জেতা দলে তিনি ছিলেন। তাঁর ভাই তরুণ সিংহ ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। কত নাম করব। নিজের খেলা হতো না, কিন্তু খেলোয়াড়দের পিছু পিছু ঘুরতে পারলে ধন্য হয়ে যেতাম। বেলগাছিয়া মুসলমান বস্তির দুই খেলোয়াড়ের কথা মনে পড়ে, সেলিম ও আনোয়ার। অসম্ভব ছিল পায়ের কাজ। সেই জুটির খেলা দেখতে মাঠ ভেঙে পড়ত। ভাবতাম তারা বহুদূর যাবে। ইন্ডিয়া খেলবে। যায়নি। দু’পাঁচ টাকায় ভাড়ায় খেলতে যেত নানা জায়গায়। খেপ খেলা বলে তাকে। টাকা পেত, খেতে পেত, আর কী চাই ? খেপ খেলতে খেলতে দুজনেই হারিয়ে গিয়েছিল।
ছেলেবেলার সেই কলকাতা ছিল শান্ত। কলকাতায় ছিল লাল দোতলা বাস। লাল পাগড়ি পুলিশ ছিল অনেকদিন অবধি। তারপর তা কবে অবলুপ্ত হল মনে নেই। তখন কলকাতা শহরের ভিতর প্রাইভেট বাস ঢুকতে পারত না। ট্রাম চলত দ্রুত গতিতে ঠং ঠং করতে করতে। আমাদের তিনঘরের ফ্ল্যাটে তখন কত লোক। বাইরের লোক বেশি। মামারা ছিলেন কিছুদিন। সে ছিল আনন্দের দিন। মামাত দিদি বোন, খুড়তুতো দিদি বোনদের সঙ্গে বড় হওয়া। তা ছাড়া ছিল, মেজকাকার বন্ধু ফনীবাবু, দণ্ডীরহাটের লোক, পূর্ববঙ্গের, ধুরোলের লোক। প্যাসেজ রান্না ঘরে পযর্ন্ত বিছানা পড়ত। আমাদের বাসা ছিল বহুজনের আশ্রয়। ওপার থেকে উচ্ছিন্ন মানুষ তারা, যাবে কোথায় ?
উদ্বাস্তু জীবন অভিশপ্ত জীবন। দেশ চলে গেলে গ্রাম চলে গেলে নদী চলে গেলে মানুষ উদ্বাস্তু হয়। বাস্তু ভিটের সঙ্গে গাছগাছালি, নদী, পুকুর, বাগান সবই তো জড়িয়ে থাকে। সাতপুরুষের দেশে যখন অবাঞ্ছিত হয়ে যায় মানুষ, তখন সে সব হারায়, নিজের গ্রাম, নিজের নদী, পুকুরঘাট, বটতলা, ঝাউতলা, হরিতলা। সীমান্তরেখা কুড়ি মাইল দূরে আমাদের গ্রাম ধূলিহর আমাদের নদী বেতনাকে কুড়ি লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের করে দেয়। আর ফেরার উপায় নেই। সব হারানোর হাহাকার ভুলতে সমস্তজীবন লাগে। এক জীবনে হয় না, আর এক জীবন লাগে। দেশ কী, দেশ হলো আমাদের সাতপুরুষের ভিটে, অন্নদা মিত্তির, তস্য পিতা যাদবচন্দ্র মিত্তির, তস্য পিতা চণ্ডীচরণ মিত্তির, তস্য পিতা লক্ষ্মীনারায়ণ মিত্তির তস্য পিতা… র ভিটেই হলো দেশ। কথায় বলে না গ্রাম দেশ। গ্রামই দেশ। স্বদেশ। আমরা সেই দেশ ছেড়ে চলে এসে ছিলাম। উদ্বাস্তু। রিফিউজি। দলে দলে। দেশভাগের পরের প্রথম নয় বছরেই পূর্ববঙ্গ ছেড়ে এসেছিলেন ২১ লক্ষেরও বেশী মানুষ।
বাবা সরকারি চাকরি করতেন, অপশন দিয়ে ভারতে এলেন। বাবার সঙ্গে কাকা, ঠাকুরদা ঠাকুমা, .সকলে। আমাদের কলকাতার তিন ঘরের ফ্ল্যাট ছিল জংশন ষ্টেশন। ওপারের মানুষ এসে আশ্রয় নিতেন, কিছুদিন থেকে নিজের কাজকম্ম, থাকার জায়গা জোগাড় করে চলে যেতেন বেলেঘাটা, দমদমা, বিরাটি, মসলন্দপুর, হাবড়া ইত্যাদি জায়গায়। চিরকাল তো ধুরোলের দাদার ফ্ল্যাটে থাকা যায় না। তিনটে ঘরে তিরিশজন মানুষ। মা আমার দশভুজা। একাই সব সামলাতেন। ঘরে জায়গা নেই, আমরা রাস্তায় রাস্তায় মাঠে মাঠে ঘুরতাম। আমার মামারা বড় পরিবার। না পেরে বড় মামা তাঁর পরিবার নিয়ে ঝাঁসি চলে গেলেন এক শালার কাছে, ব্যবসা করবেন। মামিমার ভাই ভাসতে ভাসতে ঝাঁসি গিয়ে পড়েছিলেন। ব্যবসা করা কি সোজা কথা! টাকা পয়সা খুইয়ে ফিরে এলেন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের গ্রাম রাঁঢ়ুলির দু গ্রাম পরে বাঁকা ভবানীপুর গ্রামে মামার বাড়ি। তাঁরা জমিজমা নিয়ে থাকতেন। খেয়ে পরে চলে যেত। রেলের ষ্টেশন মাস্টার বাবার মৃত্যুর পর রেলে চাকরি পেয়েও বড় মামা করেননি। কী হবে করে? ভাইবোন ছোট ছোট, তাদের মানুষ করতে হবে তো। অকালে চলে গেছেন দাদামশায়, দিদিমা। দেশ দুখণ্ড হয়ে উদ্বাস্তু হতে হবে কে জানত। এই পারে এসে কী ভয়ানক ছিল বেঁচে থাকার প্রয়াস। একই ঘটনা মেসোমশায়দের। তাঁদের কোমর ভেঙে দিয়েছিল দেশভাগ। অনিশ্চয় যাত্রায় ভারতে এসে উদ্বাস্তু মেসো মশায়রা কত অপমান সহ্য করেছেন। সকলেই ছিলেন জমি নির্ভর মানুষ। ছোট মেসো রেশন দোকানে খাতা লিখতেন, আর এক মেসো কমলালয় স্টোরসের কর্মচারী। খালি পায়ে তাঁকে আমাদের ফ্ল্যাটে আসতে দেখেছি । কিন্তু তিনি ছিলেন এক দক্ষ পেইন্টার। চিত্রকর। পোরট্রেট করতেন অসামান্য। ছবি এঁকে কিছু আয় হত। এক দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গলির মুখে দাঁড়িয়ে দেখি মেজ মামা চলেছেন। দেখি মই কাঁধে বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটছেন। মেজমামাআ...ডেকে উঠেছি। মামা একবারও না তাকিয়ে চললেন তাঁর লাইন সারানো মিস্ত্রি হুজুরের পিছু পিছু। টেলিফোন অফিসে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী।এদেশে এসেই পেটের ভাতের জন্য বেরতে হয়েছে। ছোট মেসো দেরি করে এপারে এসেছেন। জমিজমা বেচে আসবেন। তা পারেননি। তিনি চার মেয়েকে পার করিয়ে দিয়েছিলেন আগে। হাঁসুর তখন কত বয়স, সাত আট। আমার মায়ের কাছে থাকত সেই বোনটি। আর এক বোন ডলু থাকত মেজ মেসোর মেয়ে বেবিদির বাড়ি বসিরহাটে। মা বাবা পাকিস্তানে, তারা এপারে ভেসে বেড়াচ্ছে। ফটিক তো হারিয়েই গেল দিল্লি কাজ করতে গিয়ে। হারিয়ে গেছে কন্যা সন্তান, পুত্র সন্তান, মা, হাহাকার করতে করতে নতুন দেশে এসেছে নতুন ইহুদি।
এই হলো উদ্বাস্তু জীবন। না এমন নয়। আরো কঠিন ছিল সে জীবন। কুপারস ক্যাম্প, দণ্ডকারণ্য, ঝাঁসি, উত্তরাখণ্ড... কত জায়গায় গেছে তারা গ্রাম হারিয়ে ভিটে হারিয়ে। তারপর হারিয়েছে ভাষা। বাংলা বলতে পারে হয়ত, লিখতে পারে না। তারা ফিরে আসতে চেয়েছিল জল আর মাটির দেশে। মরিচঝাঁপির কথা কি ভুলে যাব আমরা ? বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনা, যশোর, ঢাকা, সিলেটের মানুষ আন্দামানে গেছে জাহাজ বোঝাই হয়ে। তারপর হ্যাভলক, রঙ্গত, নীল আইল্যান্ড, দিগলিপুর, দ্বীপে দ্বীপে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনো দিগলিপুরের বাঙালি উদ্বাস্তু তাঁদের দেশের কথা ভোলেননি। সন্ধেবেলায় বসে তাঁদের কাছে শুনেছি ফেলে আসা দেশ গ্রাম নদীর কথা। তাঁরা তাদের কলোনিগুলোকে ফেলে আসা জেলার নামে, গ্রামের নামে করেছেন। কলকাতার অদূরে বিরাটিতে একটি কলোনি আছে খলিসাকোটা কলোনি, পূর্ববঙ্গের সেই গ্রামের মানুষ এপারে এসে ওপারের দেশ গ্রামের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করেছেন এইভাবে। আন্দামানে উদ্বাস্তুদের লড়াই করতে হয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে, আন্দামানের জনজাতির সঙ্গে, পরে তামিল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে আন্দামান সেটেলমেন্টের বিরুদ্ধে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল। ফলে কী হলো সেটেলমেন্ট দেওয়া বন্ধ করল সরকার, তামিলরা সমুদ্র পার হয়ে চলে গেল আন্দামান। শ্রীলঙ্কার তামিলরা সে দেশে অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে শ্রীলঙ্কা মুক্ত হতে। অথচ কত শত বছর ধরে তামিলরা তাদের দেশ বলে ভেবেছে শ্রীলঙ্কাকে। রামায়ণের শ্রীলঙ্কা তো বৃহৎ ভারতেরই অঙ্গ ছিল। ব্রিটিশ-ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা আলাদা হয়ে যেতে বিপন্ন হলো তামিল জনগোষ্ঠী। তাদেরই এক অংশ সমুদ্র পার হয়ে আন্দামানে চলে গেল।ব্রিটিশ ভারতের বিস্তার তো কম ছিল না। ব্রহ্মদেশ ছিল ব্রিটিশ ভারতীয় উপনিবেশের অন্তর্গত। ব্রহ্মদেশ কতটা বাঙালির ছিল তা শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত, পথের দাবী, হরিনারায়ন চট্টোপাধ্যায়ের ইরাবতী, সুবোধ ঘোষের কর্ণফুলির ডাকে উপন্যাসে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রহ্মদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে কত মানুষ চলে এসেছিলেন। হিন্দুরা ভারতে। বারাসতে একটি বার্মা কলোনি ছিল। এখন আছে কি না জানি না। কবি বিনয় মজুমদার ব্রহ্মদেশে বড় হয়েছেন। ব্রহ্মদেশের মান্দালয় জেলে সুভাষচন্দ্র বসু অনেকদিন বন্দী ছিলেন।
বাড়িতে তেমন জায়গা নেই তাই বাইরে ঘুরি। খেলার মাঠে ফুটবল পেটাই। সারাদুপুর ক্রিকেট। সন্ধের আগে কিং কিং, পিট্টু। কেমন একটা বড় হওয়া বুঝিবা। আর এর ভিতরে এক একটা দিন যেন আসত রূপকথা হয়ে। টালা পার্কে চুনী গোস্বামী ক্রিকেট খেলতে এসেছেন মোহনবাগানের হয়ে। শ্যামসুন্দর মিত্র, দুর্গাশঙ্কর মুখারজি এসেছেন। এঁরা সব নামী খেলোয়াড়। এরাই হলেন বালকের রূপকথার রাজপুত্র। টালা পার্কে শীতের সময় আসত সার্কাস। অলিম্পিক সার্কাস, ওরিয়েন্টাল সার্কাস। একেবারে বাড়ির সামনে। রাতে বাঘের গর্জনও শোনা যেত। সেই শীতের আরম্ভে এসে তারা তিনটি মাস মাইক বাজিয়ে, আলোর ঝর্না বইয়ে, হাতি নিয়ে প্রচারে বেরিয়ে সরগরম করে রাখত সব। টিনে ঘেরা থাকত মাঠ।তার ছিদ্র দিয়ে সিংহ আর ব্যাঘ্র দর্শন হতো। সার্কাস ছিল যে কী আনন্দময়। সেই টিয়াপাখির কামানদাগা থেকে গ্লোবের ভিতর মোটর সাইকেল চালানো। রেবা রক্ষিতের বুকের উপর হাতি নেওয়া বা ট্রাপিজের ছেলেমেয়েদের শূন্যে বিচরণ। সার্কাসের মেয়েরা আমাদের বড় করে দিয়েছিল তাদের খাটো রঙিন পোশাকে। রঙ চঙ মাখা জোকার যখন সকালবেলায় মুদির দোকানে আসত সওদা করতে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে ধন্য হয়ে গিয়েছিলাম একদিন। একজন রিং মাস্টার ছিলেন নামী। অলিম্পিক সার্কাসের সেই জিমন্যাস্ট, রিং মাস্টারের সঙ্গে চলে গিয়েছিল পাড়ার এক দিদি। সার্কাস দেখতে গিয়েই প্রেমের সূচনা। সে কত জন্মের আগের কথা মনে হয় এখন। সুনন্দ ছিল বদমায়েশ ছেলে। সার্কাসের লোকজনের সঙ্গে তার খুব আলাপ, ফ্রি-পাস জোগাড় করে বারবার দেখত সার্কাসের শো। জোকারের সঙ্গে, মাহুতের সঙ্গে তার বন্ধুতা ছিল। ফ্রি পাসে সে আমাকেও এক দুপুরে সার্কাস দেখিয়েছিল মনে হয়। মনে পড়ে ফাল্গুন-চৈত্রে সার্কাস উঠে গেলে আচমকা পাড়াটা শূন্য হয়ে যেত। কী খালি লাগত তখন। একা একা ঘুরছি সার্কাস পার্টির ফেলে যাওয়া মাঠে। গর্ত। ঘোড়া আর হাতির বিষ্ঠা। কাঠ-কুটো। হু হু কান্না চলে এল নিজের ভিতরে। একা একা কাঁদতে লাগলাম। জোকার সেই বামন মানুষটি, হাতি ঘোড়া বাঘ সিংহের জন্য কাঁদতে লাগলাম আমি একা। আমার সঙ্গে তারা কথা বলেনি, কিন্তু আমি যে তাদের ভালোবেসেছিলাম।
খুব ভাল লাগছে পড়তে। আর অদ্ভুত এক বিষণ্ণতায় মনে ভরে যাচ্ছে !
ফেলে আসা শৈশবকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন। জেমিনি সার্কাসে রেবা রক্ষিতের বুকে হাতি তোলার দৃশ্য, লাল দোতলা বাস, শিয়ালদা স্টেশন জুড়ে উদ্বাস্তুদের সংসার সবকিছু চোখের সামনে ভেসে উঠছে। উপভোগ্য করছি আপনার স্মৃতি কণ্ডূ,, আর নিজেকেও মেলাতে পারছি।
"স্মৃতি কণ্ডূয়ন" হবে।
হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোত মন্ত্রবলে ফিরিয়ে আনলেন।আপনি যাদুকর।
অসাধারণ। পুরোটা পড়ার আগ্রহ থাকল।
অসাধারণ এই স্মৃতি আলেখ্যর সাক্ষী হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
খুব ভালো ।
অপার জীবন, তার আলেখ্য প্রকৃতির চলনের মতোই এগোবে। প্রথম পর্ব তারই ইঙ্গিতবাহী। অপেক্ষায় থাকবো পরেরটার।
দারুন লাগল পড়তে অমরদার লেখা। মন বিষন্নতায় চুপচুপে হয়ে গেল। আমারও কিছু ওপার বাংলা থেকে আসা বন্ধু ছিল। তারা আমার সাথে প্রাইমারি বা পরে হাইস্কুলে পড়ত। তারাও যে আজ কোথায় গেল! আমি স্যর মনোজ মিত্র র খুব পরিচিত। তাঁর সাথে কাজ করেছি সিনেমায়। আরও পড়ার প্রত্যাশায় রইলাম।
উদ্বাস্তু জীবন লেখকের নিজস্ব মনোভঙ্গিতে বাঙ্ময় হয়ে উঠছে।
সকালে উঠে তোমার এই লেখা পড়ে কান্না পেল বেশ। খলিসা কোটা , দণ্ড ইর হাট এই গুলো মায়ের। থেকে শুনেছি। আরও জানব। ভ্রূণ পুঁতে দেওয়ার জায়গাটা কী মারাত্মক। এই জন্য তুমি কথা শিল্পী। আমরা লিখলেও কোনওদিন এমন পারব না। লিখতে ভালবাসার একটা অন্য অনুভব আছে। কিন্তু এই লেখাটা পড়ে এমন একটা অদ্ভুত সময়ে এত কষ্ট পেলাম। এত ভাল লেখা। প্রণাম নিও
অনবদ্য
অপূর্ব! কত কথা মিলে যাচ্ছে আমার জীবনের সাথে...আমি থাকি নবদ্বীপে, আপনি থাকেন কলকাতায়... স্থান, কাল, পাত্র ভিন্ন, তবু অভিন্ন আমাদের হৃদয় । যে হৃদয় আমাদের আনন্দে নাচায়, দুঃখে কাঁদায়, ভালোবাসায় বিষন্ন করে তোলে...শূন্যতায় এই হৃদয় একমাত্র সম্বল হয়ে যায়...
ছবির মত লেখা৷ একই রকম অভিজ্ঞতা, তাই হয়তো এত ভাল লাগছে৷ এখন এই বার্ধক্যে তো দিন রাত সেই জন্মভূমিতেই আনাগোনা করি৷ কতবার যে আসি যাই,তার ইয়ত্তা নেই৷ মনে হয় এখানকার খেলা শেষ হলে যাবার পথে একবার গোপালপুর হয়ে যাব৷ জানি সেরকম ভাল লাগবে না৷ তাও যাব৷থাকব৷ বাস করব৷ সেই খাঁ খাঁ করা দুপুর, সেই সরব নীরবতা, হ্যারিকেনের সন্ধ্যা, ত্বরিত রাত, বিছানায় মায়ের কোল- ছবি তো সব ওখানেই রেখে এসেছি৷ আর একবার গিয়ে দেখতে চাই ওগুলি৷