দণ্ডীরহাট নিয়ে কথা বলছি। আগের কথা পরে, পরের কথা আগে বলে ফেলছি। তাতে অসুবিধে নেই। আমি তো দিনপঞ্জী লিখে রাখিনি। কেউ তা রাখেও না। যখন যেমন মনে পড়ে তেমনি বলে যায়, লিখে যায় । আমিও তাই। পরের কথা আগে বলেছি। আগের কথা কিছু বলি। এক অমাবস্যার কথা বলি, যার পরেই আশ্বিনের শুক্লপক্ষ শুরু হবে। আশ্বিনের শুক্লপক্ষে শুরু হয় দেবী পক্ষ। উত্তর ভারতে তা নব রাত্রি। আমাদের দুর্গোৎসব এবং নবরাত্রির ভিতরে তফাৎ আছে। আমাদের দুর্গোৎসব অনেকটাই সামাজিক। পূর্ব বাংলার রীতিতে বলি নাইওরে আসেন কন্যা। মেয়ে বাপের বাড়ি আসে ছেলেমেয়ে নিয়ে। মীরা দেববর্মণের লেখা শচীনদেব বর্মণের সেই গানটিকে স্মরণ করুন, কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া, আমার ভাইধনেরে কইয়ো নাইয়োর নিতে বইলা...।
এসব বহু চর্চিত কথা। আমি বরং বলি সেই অমাবস্যার আগের এক গোধুলির কথা যার সঙ্গে এ জীবন সংপৃক্ত হয়ে আছে। সেদিন ছিল চতুর্দশী কিংবা অমাবস্যা। কখন যে এক তিথি শেষ হয়ে অন্য তিথির আবির্ভাব হয়, তা পঞ্জিকাকাররা বলতে পারেন। বলতে পারেন মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্র চেনা মানুষজন। জ্যোতির্বিদরা। সেদিন ছিল পিতৃপক্ষের শেষের আগের দিন। পরের দিন অমাবস্যা, কৃষ্ণপক্ষ শেষ হবে। তার পরের দিন থেকে আশ্বিনের শুক্লপক্ষ, দেবীপক্ষ আরম্ভ। আমার বাবা ভাদ্রমাসের পূর্ণিমার পর কৃষ্ণপক্ষ শুরু হলে পিতৃতর্পণ আরম্ভ করতেন। অমাবস্যার দিনে, মহালয়ার দিনে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে সেই তর্পণ শেষ হতো। মহালয়ার সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটি সম্পর্ক রয়েছে। দেশভাগের পর এপারে এসে আমাদের পরিবার যে প্রথম মৃত্যুকে দ্যাখে, তা এই অমাবস্যা কিংবা চতুর্দশী ও অমাবস্যার সন্ধিক্ষণে। সেই রাত্রি ফুরোলে আমরা এরিয়াল লাগানো জি,ই,সি, রেডিওতে শুনব বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডী পাঠ এবং মহিষাসুর মর্দিনী কথিকা। দুর্গাপুজো যেন ঐদিন আরম্ভ হয়ে যেত। ভুবনে আনন্দের জোয়ার আসবে। সেই চতুর্দশী ও অমাবস্যার সন্ধিক্ষণে, দিবাবসানের সময়, গোধুলী বেলায় আমাদের পিতামহ অন্নদাচরণের জীবনদীপ নিবার্পিত হয়। তখন আমি খুব ছোট, বছর সাত-আট হবে বয়স। আমরা সকলে ঘিরে বসেছিলাম পিতামহকে। তাঁর দশটি নাতি, দশটি নাতনি। সকলে ছিল না। কনিষ্ঠ পুত্র তখনো পূবর্পাকিস্তানে। আমি দেখেছিলাম কীভাবে প্রাণবায়ু অনন্তে মিশে যায়। শ্বাস নিতে নিতে আর পারলেন না তিনি। মুখে ফোঁটা ফোঁটা জল দিচ্ছেন দুই পুত্র, আমিও দিয়েছিলাম কি না মনে নেই। দিয়েছিলাম মনে হয়। নাতি-নাতনি যারা ছিল সকলেই চামচে করে এক দুই বিন্দু জল। জল গড়িয়ে পড়ল দু’ঠোঁটের কোণ দিয়ে। বুকের ওঠা নামা বন্ধ হলো। কব্জিতে হাত রেখে নাড়ি ধরে ছিলেন বাবা। বললেন, ‘বাবা নেই।’ চোখের কোন দিয়ে অশ্রু বিন্দু গড়িয়ে পড়ল। কান্নার রোল উঠল।
তারপর তাঁর মৃত দেহ ভিতরের উঠনে নামানো হয়েছিল। একটি ছোট গহ্বরে জল ভরে তাঁর পা সেখানে রাখা হয়েছিল। সেই জায়গায় পরে একটি তুলসী মঞ্চ করা হয়েছিল। সেই মঞ্চে প্রদীপ দেওয়া হত সন্ধ্যায়। মা কাকিরা দিতেন। শঙ্খধ্বনি করে খবর দিতেন ধূলিহরের অন্নদাচরণ নেই। দণ্ডীরহাট থেকে কুড়ি-পঁচিশ মাইল গেলে সাতক্ষীরে শহরের লাগোয়া আমাদের গ্রাম ধূলিহর। খুব কাছেই সেই দেশ, অন্যদেশ। বাবারা দাহ করে ফিরেছিলেন ভোরবেলায়। তখন রেডিও থেকে বীরেন ভদ্র মশায়ের মেঘমন্দ্র কন্ঠধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে ভোরের বাতাসে। পিতৃহারা দুই পুত্র এসে বসলেন বারান্দায়। অন্য পুত্রটি তখন অন্য দেশে, জানেও না মহাগুরু পতন হয়ে গেছে তার অজান্তে। এই বছর, এই ২০২০ সালে মহালয়া হলো ভাদ্র সংক্রান্তির দিনে। ভাদ্র মাসের শেষ দিনে অমাবস্যা। ১৭-ই সেপ্টেম্বর। আমার বাবা, অন্নদাচরণের জ্যেষ্ঠ পুত্র অশোককুমার মারা যান ২০০২ সালের ভাদ্র সংক্রান্তির আগের দিনে। এবার সেই দিন মহালয়ার আগের দিন। পিতা পুত্রের মৃত্যুদিন এক হয়ে গেছে। আমার বাবা চলে যান রাত্রিকালে। আমি নার্সিংহোমে তাঁর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে সেই মৃত্যু দেখেছিলাম। শান্ত মৃত্যু, ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেল। মনিটরে তাঁর হৃদস্পন্দনের কম্পনের ঢেউ ক্রমশ অনুভূমিক রেখা হয়ে গেল। গান থেমে গেল। বাঁশির সুর থেমে গেল।
আজও মহালয়া এলে সেই মৃত্যুর কথা মনে পড়ে আমার। সেই ভোর। গুরুদশা, হাতে কঞ্চি ও কম্বলের আসন, দুই ভাই বসে আছে বারান্দায়। গ্রামের অনেক মানুষজন বসে আছে হেথাহোথা। মহালয়া এলে একটু মন খারাপ হয় সত্য। বাবা কাকারা কেউ নেই এখন। তাঁদের তর্পণ করা হয় এইদিন। আমি ভোরে বিছানায় শুয়ে সেই গোধুণঈবেলার কথা ভাবি। বাবার সঙ্গে আমি কয়েকবার গঙ্গায় গিয়েছি। শেষে বাবা আর গঙ্গায় যেতেন না, বাড়িতে করতেন পিতৃপুরুষ স্মরণ। নিজে চণ্ডীপাঠ করতেন বাড়িতে বসে। বামুন পুরুতে তাঁর কোনো আস্থা ছিল না। তাবিজ আংটি কোনোদিন ধারণ করেননি। কিন্তু এইসব আচারে যে দার্শনিকতা তা তাঁকে আকৃষ্ট করত। তাঁর ইচ্ছে ছিল দর্শন নিয়ে পড়বেন। দারিদ্রের কারণে হয়নি। কিন্তু জ্যেষ্ট পুত্রকে দর্শন পড়িয়ে তৃপ্ত হয়েছিলেন। বাবা নাটক, নভেল পছন্দ করতেন না। কিন্তু বাধাও সেভাবে দিতে পারেননি। দাদার একটিও নাটক দ্যাখেননি। ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়ে গিয়েছিলেন বড় মামা। সে এক কাহিনি। শালা ভগ্নিপতি উত্তেজিত মিনার সিনেমা হলে বসে। বড় মামা খুব কথা বলছেন। পিছনের দর্শক রাগত স্বরে বলছেন, মশায় থামবেন। বিরতির সময় বড় মামা বিনয়কৃষ্ণ বসু দাঁড়িয়ে পড়েছেন, আরে মশায়, আমার ভাগ্নে, বড় ভাগ্নে, এত বুড়ো সে নয়,ইয়াং ম্যান, কলেজে পড়ায় …, হ্যাঁ, আমার নিজের ভাগ্নে। এই যে আমার ভগ্নিপতি...। বাবা টেনে বসিয়ে দেন বড় মামাকে। কী বিপদ বিনয়বাবু আপনাকে নিয়ে।
বাবার প্রয়াণের পর আমরা তিন ভাই একসঙ্গে তর্পণ করেছি দু’বছর। হ্যাঁ, সল্টলেকে দাদার বাড়িতে। গঙ্গায় সেদিন বড় কলরব, হৈ হৈ। তার ভিতরে পিতৃপুরুষ স্মরণ হয় না। বাড়ি অনেক শান্ত। মৃত্যুর তিন বছরের মাথায় মহালয়ার আগের দিনে আমি ছিলাম সিউড়িতে এক সাহিত্যের এক অনুষ্ঠানে। অমর দে এবং তাঁর গল্প সরণি পত্রিকা ছিল তার আয়োজক। লেখক রমানাথ রায়, জয়ন্ত দে, অরিন্দম বসু ছিলেন। পরদিন ভোরে আমরা চললাম ময়ুরাক্ষী ব্যারেজে। ময়ুরাক্ষীতে পিতৃ-মাতৃ তর্পণ করব। ব্যারেজে যা হয়, একদিকে জল টলটল করছে, অন্যদিকে ধুধু বালুচর। কী অপরিসীম শূন্যতা! সেই ভোরে সেখানে মানুষজনও বিশেষ ছিল না। হয়তো নদীর অন্য কোথাও হয় তর্পণ। নিঃঝুম প্রকৃতিতে দাঁড়িয়ে অনুভব করেছিলাম প্রিয়জন না থাকার বেদনাটি। বাবার আগে তাঁর দুই ভাই চলে গিয়েছিলেন। সকলের কথা মনে পড়ছিল আমার। খা খা বালুচরে দাঁড়িয়ে তৃষ্ণার্ত পিতৃকুল, মাতৃকুল যেন জল চাইছিলেন। ধোঁয়া ধোঁয়া তাঁদের দেখতে পাচ্ছিলাম আমি। আমরা সকলেই ব্যারেজের জলের কাছে গিয়ে সেই জল হাতে ছুঁয়ে স্মরণ করেছিলাম পরলোকবাসী আত্মজনদের। প্রয়াত বান্ধব, অবান্ধবদের। চেনা অচেনাদের। আমাদের শাস্ত্র বলি দর্শন বলি তা কবি-কল্পনায় পরিপূর্ণ। বিশ্বাস এই যে মহালয়ার দিনে প্রয়াত সকল মানুষের জীবাত্মা মর্ত্যে আসে তৃষিত হয়ে। তাদের জলদান করতে হয়। শুধু আত্মজন নন তাঁরা, অনাত্মীয়, অচেনা, অবান্ধব, সন্তানহীন আত্মারা আসেন জল গ্রহন করতে। ময়ুরাক্ষী ব্যারেজের যেদিকে জল, সেইদিকে গভীরতা অনেক বেশি। বিপজ্জনকও। স্নান করা হয়নি। কিন্তু জল দিয়েছিলাম তাঁদের। তাঁরা তা নিয়েছিলেনও জানি। আমি ফিরে আসতে আসতে দেখেছিলাম ধু ধু বালুচরে দাঁড়িয়ে আছেন, পিতা, পিতৃব্য, পিতামহ, পিতামহী, মাতা, মাতামহ, মাতামহী, প্রপিতামহ......। এখন আর তর্পণ করা হয় না। ভোরে এমনিতেই ঘুম ভাঙে, ফ্ল্যাটবাড়ির নানা জানালা দিয়ে মহিষাসুর মর্দিনী কথিকার গান, চণ্ডীপাঠ ভেসে আসে। তাই কানে যতটুকু আসে।
মহালয়ার পরদিন থেকে শুক্লপক্ষের শুরু। মহালয়ার ভোরে বাণীকুমার প্রযোজিত আকাশবাণীর ওই অনুষ্ঠান পুজোর অঙ্গ হয়ে গেছে বুঝি এখন। ঐ কন্ঠই যেন ঘোষণা করে শারদোৎসব সমাগত। কতকাল ধরে, সেই বাল্যকাল থেকে শুনছি, কিন্তু এখনো যেন নতুন হয়েই আসে তা বৎসরান্তে। সুপ্রীতি ঘোষের কন্ঠে সেই গান, “বাজলো তোমার আলোর বেনু, মাতলোরে ভুবন” ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। তারপর বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে মহিষাসুর মর্দিনী। ঘুম আর তন্দ্রার ভিতরে কানে আসে সেই অমৃতবানী। হ্যাঁ, আকাশবাণীর এখানে জিত। টেলিভিশন কিছুই করতে পারেনি মহিষাসুরমর্দিনী সাজিয়েগুজিয়ে দেখিয়ে। এখানে যে কল্পনা আছে, টেলিভিশনে তা নেই। মুক্তা ফলের মতো হিম নীলাভ ঊষাকালে সেই কল্পনাকে আর কিছুই ছাপিয়ে যেতে পারে না।
মহালয়ার দিন থেকে আর মন থাকত না কাজে। আর তো কয়েকটা দিন। মহালয়ার আর এক স্মৃতি আছে, সেবার পিতামহের অসুখের চিকিৎসার জন্য বাবার হাত একেবারে খালি। পুজোর জামা প্যান্ট হয়নি। কাঁদছি। বায়না করছি।না মামারা, না কাকারা, সকলের হাত বাড়ন্ত। কেউ কিছুই দেয়নি। নতুন জামা প্যান্ট হয়নি। বাবা আমার বড় মামিমার হাতে দশটি টাকা দিয়ে বললেন, শ্যামবাজারে গিয়ে কিনে দাও যা হয়। ট্রামের সেকেন্ড ক্লাসে চেপে শ্যামবাজার গিয়ে ফুটপাথের হকারের কাছ থেকে দশ টাকার ভিতরেই জামা, প্যান্ট, এবং অলিম্পিক হাওয়াই চটি হলো খুব দরাদরি করে...। আহা কী আনন্দ। সেই আনন্দ টিকিয়ে রেখেছি এখনো। মহালয়ার দিনে সেই সন্ধ্যার কথাও মনে পড়ে খুব। এই ২০২০ তে উৎসবের সুর নেই। আশ্বিন মল মাস, ভাদ্র সংক্রান্তিতে মহালয়া, কার্তিক মাসে দুর্গোৎসব। আর চারদিকে অভাব অভাব। মহামারীর ছায়া ব্যপ্ত। এবার যে শরৎ এসেছে, তার গায়ে আতঙ্ক আর মৃত্যুর ছায়া। কত মানুষের চাকরি নেই। উৎসব হবে? ধর্ম হবে ? এক পরিচিত ব্যক্তির চাকরি গেছে,তাঁর নবম শ্রেণিতে পড়া কন্যার ইস্কুল বন্ধ হয়েছে। তিনি লোকের বাড়ির বাজার করে দিয়ে দু’পয়সা উপার্জনের চেষ্টা করছেন। এমন কত ঘটনা চতুর্দিকে। কত কত। ভাবলে চোখের কোলে কি ফোটে না দু’এক বিন্দু অশ্রু ?
আমার পিতৃপুরুষের গ্রাম ধূলিহরের কথা বলি। আসুন পার হয়ে যাই সীমান্ত, দণ্ডীরহাট থেকে মাইল কুড়ি পঁচিশ হবে ধূলিহর। ধূলিহর ছিল পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা জেলার সাতক্ষীরে মহকুমায়, অধুনা বাংলাদেশের সাতক্ষিরে জেলায়। সাতক্ষিরে শহর থেকে পাঁচ কিলো মিটারের বেশি হবে না। দেশ তখন ভাগ হয়ে গেছে। যতটা শুনেছি বা আমার অগ্রজ মনোজ মিত্রর লেখায় পড়েছি বাবা ছিলেন ওই গ্রামের প্রথম বি,এ, পাশ। ডিস্টিংশন ছিল তাঁর। অঙ্ক বাদ দিয়ে সাহিত্যের বিষয়, ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত আর ইতিহাস দর্শন –এ প্রবেশিকা পরীক্ষায় লেটার মারক্স পেয়েছিলেন। তাঁর সেই মারকশিট আমি দেখেছি। সেই ধূলিহর-এ একটি প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করেন বাবা। আবার এমন হতে পারে, বিদ্যালয়টি সংস্কার করেন। সেই ইস্কুলে আমি ২০০০সালে গিয়েছি। পরিচয় পেয়ে ইস্কুলের হেড মাস্টার ( বাবার বন্ধু মোজাহার শানার পুত্র ) ইস্কুল ঘরে বসিয়ে আলমারি খুলে ১৯৩৮ সালের রেজিস্টার বের করে আমার বাবার স্বাক্ষর দেখিয়েছিলেন। দেখিয়েছিলেন ১৯৪৪-এ আমার বড়দা( মনোজ) এবং মেজদা( মেজকাকুর বড় ছেলে রণজিৎ) যে ওই ইস্কুলে ভর্তি হয়েছিল আডমিশন রেজিস্টার খুলে তা দেখিয়েছিল। দেখতে দেখতে আমি আমার জন্মের আগের পৃথিবীতে পৌঁছে গিয়েছিলাম যেন।
ধূলিহরের ডাক নাম ধুরোল। আমরা ছিলাম সাধারণ রায়ত। খুব বেশি জমি ছিল না মনে হয়, আবার কমও ছিল না। আমার ঠাকুরদা ছিলেন অসুস্থ মানুষ। অল্প অল্প মনে আছে ভোরে ঘুম থেকে উঠে উঁচু পোতা, মাটির বাড়ির হাতনেতে রাখা নির্দিষ্ট চেয়ারে এসে তিনি বসতেন। বসেই থাকতেন। মাঝে মধ্যে মাছের খারা হাতে বাজারে যেতেন। বাজারটা কাছে পিঠেই ছিল। বাড়ির খুব কাছেই সেই বাজার। বাড়ি থেকে সামান্য হাঁটা পথ। শুনেছি ঐ বাজারকে এলাকার মানুষ বলতো " বেনে বাজার "। খুব ভোরে ঐ বাজার বসতো। সকাল দশটার মধ্যে বাজার শেষ। বাংলা বেয়ান মানে খুব সকাল বা ভোরবেলা বোঝায়। সেই বেয়ান শব্দ স্থানীয় মানুষের মুখে অপভ্রংশ রূপ নিয়েছে "বেনে " শব্দে। তাই বেয়ান বেলার বাজার অর্থাৎ সকালের বাজার হয়ে গেছে বেনে বাজার। ২০১৯ সালের জুন মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দাদাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিলেন সৌমিত্র বসু। সেখানে এসেছিলেন খুলনা ব্রজলাল কলেজের অধ্যাপক শঙ্কর মল্লিক, ধূলিহরের ছেলে। তিনি কত সংবাদ দিলেন পরে। এই সংবাদও তাঁর দেওয়া, বেয়ান বাজার। বাজারে একটা বড় চারপাশ খোলা ঘরে প্রায় প্রতিদিন নাটক - যাত্রা পালার রিহার্সাল হতো। আমার ছোট কাকা তারাপদ মিত্তির ( তারা ডাক্তার ) ছিলেন তার পুরোধা।
আমার তেমন কিছু মনে নেই। মনে আছে অনেকগুলি পুকুরের কথা, বাড়ির সামনে একটা বড় পুকুর, সেই পুকুরে জল ছিল না বেশি, পুকুরের ওপারে আমার ছোট কাকিমার মামার বাড়ি, ধর বাড়ি। মনে আছে, একবার ওই বাড়ির কেউ একজন বৃদ্ধ মারা গিয়েছিলেন। মায়ের সঙ্গে আমি দেখতে গিয়েছিলাম। বাঁশের চালিতে শোয়ান রয়েছে মৃত দেহ। আর রোখ ছেড়ে কাঁদছে নানা বয়সের নারী। সেই কান্নার কথা মনে গেঁথে আছে আমার। ওই বোধ হয় প্রথম মৃত্যু দর্শন। আর একটি কথা মনে আছে, সেই বয়সের কথা, একটি চার পাঁচ মাসের নষ্ট হয়ে যাওয়া ভ্রূণ আমি কার কার সঙ্গে গিয়ে যেন বাড়ি পিছনের বাগানে পুতে দিয়ে এসেছিলাম। সে ছিল এক মেঘময় দিন। বাগানে বা বাদাড়ে ছিল বড় বড় মানকচু গাছ। মানকচুর পাতা হয় মস্ত। বর্ষায় ওই পাতা মাথায় দিয়ে গরিব চাষাকে আত্মরক্ষা করতে দেখেছি। হ্যাঁ, ওই ভ্রূণ মাতৃগর্ভের আশ্রয়ে ন’মাস কাটাতে পারলে আমার একটি ভাই হত। কতকালের কথা, মনে আছে। আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম সেই মানুষের আকৃতি পাওয়া ভ্রূণটিকে। তখন ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়া আর শিশু মৃত্যু ছিল সাধারণ ঘটনা যেন। মায়েরা ছিলেন সবংর্সহা। আমার একটি দিদি ছিল, তাকে আমি দেখিনি। তার জন্য মাকে কাঁদতে দেখেছি। নাম ছিল ডিলডিল। আমার মা, আমার মেজদা উদয়ন বলতেন সে ছিল খুব সুন্দর। এপারে বেলেঘাটার বাসায় সে মারা গিয়েছিল কদিনের জ্বরে। আমার তার কথা মনে নেই। আসলে পার্টিশন হওয়ার পর আমাদের পরিবার ঠিক করতে পারছিল না কোথায় থাকবে। ধূলিহরের সাতপুরুষের ভিটে ছিল, সাতক্ষীরে পার হয়ে সীমান্তের এপারে বসিরহাট শহরের লাগোয়া দন্ডীরহাট গ্রামে জমি কেনা হয়েছিল ১৯৫০ সালে। সেখানেই একজনের বাড়িতে ভাড়ায় থাকা হত। আর পাসপোর্ট ছিল না বলে ধূলিহরে যাওয়া হত। পিতামহ ধূলিহরে থাকতেন। অসুখ বাড়লে ১৯৫৫ নাগাদ একেবারে চলে আসেন। তখন আমাদের বাড়িও হয়ে গেছে। বাড়ির নাম দেওয়া হয়েছিল পিতামহর নামেই, অন্নদা নিবাস। আর ঐ সময় আমরা কলকাতার বেলেঘাটায়। সন তারিখ আমার কাছে নেই। বেলেঘাটার বাসায় খুব জলকষ্ট ছিল শুনেছি। শুধু এক একদিন মায়ের নিঃশব্দ অশ্রুপাত দেখেছি আমি আনেক বড় হয়েও। ডিলডিল আর সাহেব। সাহেব ছিল আমার বড়দার পরেরজন। আমার জন্মের আগে জন্মে চলে গিয়েছিল। সেই শিশু রূপের জন্যই ছিল সাহেব।
আমাদের সেই সাতপুরুষের ভিটে ধূলিহরের তেমন মনে নেই। এপারে দন্ডীরহাটে বাড়ি হবে কিংবা হয়েছে, কলকাতায় বাসা নেওয়া হয়েছে কিংবা হয় নি। শুনেছি বেলেঘাটায় আদরের কন্যার মৃত্যুর পর বাবা সকলকে হয় ধূলিহর কিংবা দন্ডীরহাটে পাঠিয়ে দিয়েছিলে। বাবা কাকারা মিলে তিন ভাই। আমাদের ছিল একান্নের সংসার। ছোটকাকা ছিলেন ল,এম,এফ ডাক্তার, ক্যাম্বেল মেডিকাল কলেজ ( বর্তমানে নীলরতন সরকার মেডিকাল কলেজ) থেকে পাশ। ধুরোলে তাঁর খুব পশার ছিল। ডাক্তার হিসেবে তিনি গুণী ছিলেন, রোগ নির্ণয় করতে পারতেন খুব ভাল। আমার আবছা মনে পড়ে ধুরোলকে। একবার ছোট কাকা একটা বড় বক মেরে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি মেরেছিলেন বলে মনে হয় না, কোনো রোগীর বাড়ির ভিজিট হয়তো। রাতে পিঠে হয়েছে, সকালে উঠে ঠান্ডা আওটা পিঠে ( দুধ পুলি ) আমাদের দিল ঠাম্মা হেমনলিনী। সে শীতকালের কথা। অন্য সিজিনে সকালে প্রাতরাশ বলতে দুধের কড়ায় রাঁধা ফেনা ভাত, হাঁসের ডিম সেদ্ধ, গাওয়া ঘি। ঘি আর গরম ভাতে, মুসুর ডাল আলু সেদ্ধ আর গরম ভাতে সকালের খিদে কলকাতাতেও মিটেছে। আলাদা করে ব্রেকফাস্টের কথা আমরা ভাবতেও পারতাম না। তিন বেলা ভাত। সেই ভাতের অভ্যাস চলে যায় ১৯৬৬ সাল নাগাদ, যখন প্রতি কিলোগ্রাম চালের দর পাঁচ টাকা হয়ে যায়। আমরা রুটি খাওয়া ধরি। মার্কিন সরকার পি এল ৪৮০ আইনে ভারতকে গম পাঠাতে থাকে জাহাজ ভর্তি করে। তখন দুপুরেও ভাতের সঙ্গে রুটি খেতে হতো। চালে কাঁকর আসত কোথা থেকে জানি না। রেশন দোকান থেকে চাল এনে সেই চালের কাঁকর বাছতে হতো। না হলে দাঁত ভেঙে যেত ভাত খাওয়ার সময়। হ্যাঁ, তিন বেলা ভাতের অভ্যাস মনে হয় পূর্ববঙ্গে ছিল। আমি ২০১৮ সালে নিউইয়র্কে বন্ধু লেখক অনুজপ্রতিম কুলদা রায়কে দেখেছি তিন বেলা ভাত খেতে। তাঁর সেই অভ্যাস এত বছর ভিনদেশে থেকেও কাটেনি।
১৯৮০ সালে আমি অমৃত পত্রিকায় একটি উপন্যাস লিখেছিলাম, ভয়। পরে তা আলোকবর্ষ নামে বই হয়। তার ভিতরে ভ্রুণকে অন্ধকারে মাটি চাপা দেওয়ার একটি অংশ আছে। অন্ধকারে, নদীতীরে। এই উপন্যাস প্রসঙ্গে পরে বলব। পিতৃতর্পণের বিষয়টি আসেনি। হয়ত আসবে। আবার না আসতেও পারে। সব আসে না যেমন, আবার কোনটা কবে আসবে জানি না। আমি আমার জীবনের কথা লিখছি। শৈশবের অভিজ্ঞতা একটি উপন্যাসেই আছে, ধুলোগ্রাম। তবে শৈশব মানে স্মৃতিকাতরতা নয়। শৈশবে দেখা চরিত্র পরে অন্যরূপে অন্য উপন্যাসে এসেছে। কোথাকার অভিজ্ঞতা কোথায় যায়, তা কে জানে ? বাঁকুড়ার অনাবৃষ্টিই উজ্জয়িনীতে নিয়ে গেছি ধ্রুবপুত্র উপন্যাসে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাই তো সত্য। শৈশব জীবনের ঐশ্বর্য, কিন্তু তা-ই তো জীবন নয়।
১৯৮০ সালে আমি অমৃত পত্রিকায় একটি উপন্যাস লিখেছিলাম, ভয়। পরে তা আলোকবর্ষ নামে বই হয়। তার ভিতরে ভ্রুণকে অন্ধকারে মাটি চাপা দেওয়ার একটি অংশ আছে। অন্ধকারে, নদীতীরে। এই উপন্যাস প্রসঙ্গে পরে বলব। পিতৃতর্পণের বিষয়টি আসেনি। হয়ত আসবে। আবার না আসতেও পারে। সব আসে না যেমন, আবার কোনটা কবে আসবে জানি না। আমি আমার জীবনের কথা লিখছি। শৈশবের অভিজ্ঞতা একটি উপন্যাসেই আছে, ধুলোগ্রাম। তবে শৈশব মানে স্মৃতিকাতরতা নয়। শৈশবে দেখা চরিত্র পরে অন্যরূপে অন্য উপন্যাসে এসেছে। কোথাকার অভিজ্ঞতা কোথায় যায়, তা কে জানে ? বাঁকুড়ার অনাবৃষ্টিই উজ্জয়িনীতে নিয়ে গেছি ধ্রুবপুত্র উপন্যাসে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাই তো সত্য। শৈশব জীবনের ঐশ্বর্য, কিন্তু তা-ই তো জীবন নয়।
১৯৮০ সালে আমি অমৃত পত্রিকায় একটি উপন্যাস লিখেছিলাম, ভয়। পরে তা আলোকবর্ষ নামে বই হয়। তার ভিতরে ভ্রুণকে অন্ধকারে মাটি চাপা দেওয়ার একটি অংশ আছে। অন্ধকারে, নদীতীরে। এই উপন্যাস প্রসঙ্গে পরে বলব। পিতৃতর্পণের বিষয়টি আসেনি। হয়ত আসবে। আবার না আসতেও পারে। সব আসে না যেমন, আবার কোনটা কবে আসবে জানি না। আমি আমার জীবনের কথা লিখছি। শৈশবের অভিজ্ঞতা একটি উপন্যাসেই আছে, ধুলোগ্রাম। তবে শৈশব মানে স্মৃতিকাতরতা নয়। শৈশবে দেখা চরিত্র পরে অন্যরূপে অন্য উপন্যাসে এসেছে। কোথাকার অভিজ্ঞতা কোথায় যায়, তা কে জানে ? বাঁকুড়ার অনাবৃষ্টিই উজ্জয়িনীতে নিয়ে গেছি ধ্রুবপুত্র উপন্যাসে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাই তো সত্য। শৈশব জীবনের ঐশ্বর্য, কিন্তু তা-ই তো জীবন নয়।
১৯৮০ সালে আমি অমৃত পত্রিকায় একটি উপন্যাস লিখেছিলাম, ভয়। পরে তা আলোকবর্ষ নামে বই হয়। তার ভিতরে ভ্রুণকে অন্ধকারে মাটি চাপা দেওয়ার একটি অংশ আছে। অন্ধকারে, নদীতীরে। এই উপন্যাস প্রসঙ্গে পরে বলব। পিতৃতর্পণের বিষয়টি আসেনি। হয়ত আসবে। আবার না আসতেও পারে। সব আসে না যেমন, আবার কোনটা কবে আসবে জানি না। আমি আমার জীবনের কথা লিখছি। শৈশবের অভিজ্ঞতা একটি উপন্যাসেই আছে, ধুলোগ্রাম। তবে শৈশব মানে স্মৃতিকাতরতা নয়। শৈশবে দেখা চরিত্র পরে অন্যরূপে অন্য উপন্যাসে এসেছে। কোথাকার অভিজ্ঞতা কোথায় যায়, তা কে জানে ? বাঁকুড়ার অনাবৃষ্টিই উজ্জয়িনীতে নিয়ে গেছি ধ্রুবপুত্র উপন্যাসে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাই তো সত্য। শৈশব জীবনের ঐশ্বর্য, কিন্তু তা-ই তো জীবন নয়।
১৯৮০ সালে আমি অমৃত পত্রিকায় একটি উপন্যাস লিখেছিলাম, ভয়। পরে তা আলোকবর্ষ নামে বই হয়। তার ভিতরে ভ্রুণকে অন্ধকারে মাটি চাপা দেওয়ার একটি অংশ আছে। অন্ধকারে, নদীতীরে। এই উপন্যাস প্রসঙ্গে পরে বলব। পিতৃতর্পণের বিষয়টি আসেনি। হয়ত আসবে। আবার না আসতেও পারে। সব আসে না যেমন, আবার কোনটা কবে আসবে জানি না। আমি আমার জীবনের কথা লিখছি। শৈশবের অভিজ্ঞতা একটি উপন্যাসেই আছে, ধুলোগ্রাম। তবে শৈশব মানে স্মৃতিকাতরতা নয়। শৈশবে দেখা চরিত্র পরে অন্যরূপে অন্য উপন্যাসে এসেছে। কোথাকার অভিজ্ঞতা কোথায় যায়, তা কে জানে ? বাঁকুড়ার অনাবৃষ্টিই উজ্জয়িনীতে নিয়ে গেছি ধ্রুবপুত্র উপন্যাসে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাই তো সত্য। শৈশব জীবনের ঐশ্বর্য, কিন্তু তা-ই তো জীবন নয়।
এই অপরাহ্নে স্বীকার করি, আদিবাসী গণহত্যা, গণধর্ষিতার কান্না, গ্রামের পর গ্রাম পুড়ে ছাই হতে দেখেছি, ত্রিপুরার চাকমা শরণার্থী শিবির, আরো পরে কয়েক দশক ধরে একাধিকবার রোহিঙ্গা শরণার্থী বস্তি প্রত্যক্ষ করেছি, মেশিনগানের গুলির মুখে শত শত মানুষের আর্তনাদ আজো অনেক রাতে ঘুমের ভেতর তাড়া করে ফেরে।
তাই দেশ হারানোর বেদনা, ভীটেমাটির টান খুব মর্মে মর্মে জানি। এই শেল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে গেঁথে থাকে বুকের ভেতর। অক্ষরের ক্ষমতা কী তার পুরোটা প্রকাশের!
এপারে সুন্দরবন ঘেঁষে সাতক্ষীরা আপনার আদিবাড়ি জেনে ভাল লাগলো। বেড়াতে আসার আন্তরিক নিমন্ত্রন। চলুন, আবার বেনেবাজারে শিকড় খুঁজে দেখি।
এতো শত মৃত্যু দেখার পরেও যেদিন বেঘোরে আমার বাবা, বর্ষিয়ান নকশাল নেতা আজিজ মেহের মারা গেলেন, তার একমাসের মাথায় মারা গেলেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত আমার একমাত্র ভাই মানব (একদা নকশাল আমলের বিপ্লবী ছিলেন, পপ সম্রাট আজম খানের গিটারিস্ট ছিলেন), আর সে সময় আমার রেডিও অফিসের বৃদ্ধা মা আজগারী সিরাজী পুরোপুরি স্মৃতিভ্রষ্ট হলেন, তখন সত্যিই বুঝেছি, “মৃত্যু” কাকে বলে, কাকে বলে “স্বজন হারানো”র বেদনা!
এ যেন আরেক কাঁটা, অষ্টপ্রহর বিঁধে থাকে গলায়, স্মৃতিতে তার বিচরণ।
তবে এতো সুন্দর পায়েসটা তলানীতে এসে ধরে গেল। জ্যান্ত অভিজিত রায়কে সকাল-বিকাল ভার্চুয়ালি জবাই করা কিম্ভুদ তিন বেলা ভাত কেন, রসগোল্লা খেলেও অবাক হওয়ার কিছু নাই।
মানুষ নাই রে দেশে!
খুব ভালো লাগলো লেখাটি
আহা! গদ্যে মেখে গেলাম, ফ্যানা ভাতের মতো। নির্ভার, মেদহীন, হাল্কা মেঘের মতো উড়ে যায়।
শুধু "সংপৃক্ত" শব্দটি এই গদ্যের জন্য একটু ভারী হয়ে গেছে। না থাকলে বোধহয় ভালো হত। অন্য কোন শব্দ, অন্য কোন প্রকাশ!
সকলের মতামতের জন্য ধন্যবাদ। পরামর্শ মনে রাখব।