এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • পেন্সিলে লেখা জীবন (৯)

    অমর মিত্র
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১১ ডিসেম্বর ২০২০ | ৪৫৬১ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • দশ

    সেই ১৯৭৪-এর এপ্রিলে লেখা গল্প ঝুলিতে ভরে কলকাতায় ফিরলাম মাসের শেষের দিকে। নকুলদা ভরতদা খুব খুশি, নতুন গল্প, নতুন অভিজ্ঞতা, একাল বের করার তোড়জোড় চলছে। গল্প যদি পছন্দ হয়, একাল পত্রিকা ছাপবে।

    ‘একাল’ পত্রিকা নিয়ে আমার একটি আবেগ আছে। আমার বেদনাও আছে দুই সম্পাদক লেখককে নিয়ে। ১৯৭২ নাগাদ একালে আমার গল্প বেরোয়, ‘ধূসর কুয়াশায় সমুদ্রের ভাঙন’। তখন নক্সালবাড়ি আন্দোলন চূড়ান্ত জায়গায়। জেলখানা ভরে যাচ্ছে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত যুবকে। সমন এল নকুলদার কাছে। চিৎপুর থানা থেকে সম্পাদক নকুল মৈত্রকে ডেকে পাঠিয়েছিল। জেরা করেছিল দীর্ঘ সময়। থানায় যাওয়ার আগে নকুলদা আমাদের বলে গিয়েছিলেন যদি না ফেরেন, ‘একাল’ যেন বন্ধ না হয়। তা হয়নি। কিন্তু এই ঘটনা থেকে আমার মনে হয়েছিল তাঁরা দু’জন কতটা নিবেদিত ছিলেন সাহিত্যে। এবং তা সমান্তরাল সাহিত্য। যা চলতি পথ তাঁর বিপক্ষেই ছিলেন তাঁরা তাঁদের সাহিত্য দর্শন নিয়ে। পুলিশকে নকুলদা বলেছিলেন যা, তা অনেকটা এই রকম, যারা থিয়েটার করে ঘড়ি আংটি বন্ধক দিয়ে করে, সাহিত্য এমনই আর এক শিল্প। আমি গর্বিত, জীবনের প্রথম সম্পাদক এমন পেয়েছিলাম। আমার আরম্ভেই জীবন দর্শন পেয়ে গিয়েছিলাম। তাঁরা ভালো লিখতেন। ভরতদার গল্প ‘অমিতাভ ও তার হাত পায়ের জন্ম’ গল্পের কথা এখনো মনে পড়ে। নকুলদার অসুখ, মানুষ সম্পর্কিত আমি, মুণ্ডহীন মানুষের চলাফেরা...। সেই সময় কতটা প্রবহমানতার বিপক্ষে ছিল এই সব গল্প। তাঁরা বেশিদূর যেতে পারেননি। পকেটের টাকা দিয়ে একাল বের করতে পারেননি বেশি দিন। তখন লেখার জায়গাও ছিল কম। আমি বাইরে থাকি। আমার লেখার জায়গা হয়ে যাচ্ছে তখন ধীরে ধীরে। আমি আর আগের মতো সময় দিতে পারছি না। শ্যামবাজার বেলগাছিয়ার বাইরে চলে গেছি তখন। গ্রাম মফসসল আর সব নতুন লেখক বন্ধুরা এসে যাচ্ছেনএকটু একটু করে । তারা পড়ুয়া। তাদের সঙ্গে মিশে আনন্দ হয়। তারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও সাহিত্যের কথা বলে, যদি তুষার নেশা করে আসে, সাহিত্যের কথাই বলে। খালাসিটোলা কিংবা বারদুয়ারিতে মদের নেশায় তুষার আমাকে বলল, এই যে নোংরা, আবর্জনা, ঘেয়ো কুকুর, পেঁচো মাতালের গায়ের গন্ধ... এই সব গন্ধ লিখতে পারবি, পার্বতীর বোশেখ মাসে কিছুটা পেরেছিলি, তারপর ?
    না পারলে কী করব ? ওর মেধাকে আমি সম্মান করতাম।

    ফুটে যাবি। হা হা করে হাসল বন্ধু, পিঠে হাত রেখে বলল, যা পারিস তাই লিখবি। আরে তোর কলমের সঙ্গে সুলেখা কোম্পানির পাইপ লাইনে যোগ আছে, না হলে লিখিস কী করে এত।

    এত আর কোথায় ? বছরে দুটি কি তিনটি গল্প তখন। তুষার খুব বড় কবি। তুষারের নিজস্ব পাঠক আছে। ২০১১-র ২১শে ফেব্রুয়ারি অকাল প্রয়াণ হয় তার। শোকগাথা নামে একটি গল্প লিখেছিলাম আমি তুষারকে স্মরণ করে।

    নকুলদা, ভরতদা ছিলেন স্বশিক্ষিত। বাংলা সাহিত্য প্রচুর পড়তেন। পুজোর সময় এক্ষণ, গল্প কবিতা, পরিচয়, অনুষ্টুপ ইত্যাদি সাহিত্য পত্রিকা কিনতেন। তবে চিন্তার সীমাবদ্ধতা ছিল যে তা পরে বুঝি। দারিদ্র্য ছিল সঙ্গী। মন ছিল অদম্য। দু’য়েকজন শৌখীন বিপ্লবী কবি তাঁদের ভুল বুঝিয়েছিলেন। তাঁরা সময়েই সাহিত্য, কবিতা ইত্যাদি ত্যাগ করে অর্থ উপার্জনে মন দিয়েছিলেন। মাঝখান থেকে প্রকৃত লেখককে বিভ্রান্ত করে গেছেন কাছে ভুয়ো বৈপ্লবিক কথা শুনিয়ে। এক বিপ্লবী চিকিৎসকের কথা মনে পড়ে। তিনি নকুলদাদের বলতেন কেমন লিখতে হবে। বিপ্লব সমাগত। সময়ে তিনি সরে গিয়েছিলেন। নকুলদারা লেখা থামিয়ে দিয়েছিলেন ধীরে ধীরে। ক্ষমতা ছিল। কিন্তু ক্ষমতাকে সিঞ্চিত করতে পারেননি। এমন অনেক ক্ষমতাবান লেখক ছিলেন সেই সময়। জ্যোৎস্নাময় ঘোষ, দিলীপ সেনগুপ্ত, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়। তাঁরা লেখেননি সেভাবে। কেন লেখেননি জানি না। জ্যোৎস্নাময় নাটকে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর গল্প কাজি সায়েব, ‘ বিদ্যাসাগরের সার্ধ শতবর্ষ ও গ্রাম মধুবনির নকুল মণ্ডল’ গল্প মনে গেঁথে আছে। হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘শূকরী’, দিলীপ সেনগুপ্তর ‘লজ্জা’ গল্পের কথা মনে পড়ে।

    ফিরে যাই ১৯৭৪-এর এপ্রিলের শেষে। তপনজ্যোতি তখন আসে কি আসে না মনে নেই। সে ‘একাল’ পত্রিকায় একটি গল্প লিখেছিল দীর্ঘ এক কবিতার মতো। ‘এবং আমরা কখন নেমে আসি মাঠে আমাদের’। পরাবাস্তব অনুভূতি প্রবণ এক লেখা। তখন এই গল্প খুব প্রশংসিত হয়েছিল। আমি গ্রাম থেকে গল্প নিয়ে এলাম। নতুন গল্প শোনালাম ভরত সিংহ, নকুল মৈত্র এবং কৃষ্ণ মণ্ডলকে। কৃষ্ণ মণ্ডল চিকিৎসা বিদ্যার ছাত্র ছিলেন। কবিতা এবং গল্প লিখতেন। খুবই অনুভূতিপ্রবণ লেখক এবং মানুষ ছিলেন। তাঁর ভিতরে ভালোবাসা ছিল। গল্প পড়া হলো আমাদের পাড়ার ত্রিকোন পার্কে সন্ধ্যার পর বড় ল্যাম্প পোস্টের সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্পের আলোর নিচে। অবিশ্বাস্য মনে হবে। কিন্তু এইটাই সত্য। আমি গল্পের একটি নাম দিয়েছিলাম, কৃষ্ণ মণ্ডল এই গল্পের নাম বদলে দিলেন পাঠ শেষ হতেই। মেলার দিকে ঘর। একাল বেরোয় মে মাস নাগাদ। কাগজ কেনার টাকাই ছিল না। ১৫০ কপি ছাপা হয়েছিল। আমি কয়েক কপি বিক্রি করেছিলাম। একাল পত্রিকা কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায় ও প্রভাত চৌধুরীর হাতে গিয়েছিল। আমি তাঁদের চিনতাম না, মানে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। গল্প ভালো লাগে তাঁদের। কীভাবে যোগাযোগ করেছিলেন আমার সঙ্গে তা মনে নেই। পবিত্র মুখোপাধ্যায় ও প্রভাত চৌধুরী আমাকে কবিপত্রে লিখতে বলেন। মূলত কবিতার পত্র, কবিপত্রে তখন গল্প লেখকদের একটা জায়গা ছিল। আমি কবিপত্রে ১৯৭৪-এর পুজোয় লিখি পার্বতীর বোশেখ মাস। সেই সময়ে পরিচয়ে একটি গল্প লিখি শকুন্তলার জন্ম। ১৯৭৫-এ কবিপত্র একটি গল্প সংখ্যা করে, সেখানে মেলার দিকে ঘর আবার ছাপা হয়। তখন আমার বন্ধু হয়েছেন, কবি তুষার চৌধুরী, সমীর চট্টোপাধ্যায় , সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, অনন্য রায়, গল্প লেখক শচীন দাস, অসীম চক্রবর্তী, দীপঙ্কর দাস। আর আলাপ হয়েছে চন্ডী মন্ডল, রমানাথ রায়, আশিস ঘোষ, সুব্রত সেনগুপ্ত----শাস্ত্র বিরোধী লেখকদের সঙ্গে। চন্ডী মন্ডল অবশ্য শাস্ত্র বিরোধী ছিলেন না। তিনি ছিলেন নিভৃতচারী। থাকতেন আমাদের শ্যামবাজারে, পাল স্ট্রীটে। খুব বড় গল্পকার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পথে দুঃখ, শবযাত্রা, অবনীর শব কত গল্পের কথা মনে পড়ে। চণ্ডীদার শ্যামবাজারের পাল স্ট্রিটের বাড়িতে আমি কত নতুন গল্প শুনিয়েছি। তিনি এবং স্বস্তিদি কী সুন্দর মতামত দিতেন। চণ্ডীদার অকাল প্রয়াণ হয়েছে। তাঁর গল্পের দুই খণ্ড সংকলন স্বস্তিদি নিজ উদ্যোগে প্রকাশ করেছেন এবং মুশায়েরা থেকে।

    একদিন দুপুরে কফি হাউসে তুষার চৌধুরী আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল হাংরি জেনারেশনের লেখক বাসুদেব দাশগুপ্তর । তুষারই আমাকে তাঁর রন্ধনশালা বইটি পড়িয়েছিল। সমস্ত দুপুর কফি হাউসে বসে বাসুদেবের সঙ্গে আলাপ, তিনি আমার দুটি গল্প পড়েছিলেন, মেলার দিকে ঘর আর পার্বতীর বোশেখ মাস। কিছু উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলেছিলেন। আমি রতনপুর, রন্ধনশালা, বসন্তোৎসব গল্প নিয়ে কথা বলেছিলাম। বাংলা সাহিত্যের নানা লেখক নিয়ে কথা হয়েছিল অনেক। বাসুদেবের গল্প এখনো আমার প্রিয় পাঠ্য।

    যখন লিখতে আরম্ভ করি, আমাদের সামনে ছিল রাজনৈতিক আন্দোলনে রাষ্ট্রযন্ত্র ভাঙার ডাক, শাস্ত্র বিরোধী লেখকদের গল্পের ফর্ম ভাঙার আন্দোলন, ক্ষুধার্ত পত্রিকার লেখকদের সব ঐতিহ্য অস্বীকারের অঙ্গীকার---- আমাকে সব কিছুই প্রভাবিত করেছিল। কিন্তু মনে হয়েছিল নিজের মতো করে নিজেকে তৈরি করতে হবে। আর প্রবমানতার বিরুদ্ধে যাওয়াই লেখকের কাজ। তিনি এক অনিশ্চয় যাত্রা করেন। সেই অনিশ্চয় যাত্রাই বছর তিনের মাথায় গাঁও বুড়ো গল্পে বড় করে ছায়া ফেলেছিল।

    কবিপত্র পত্রিকায় লিখতে লিখতে অনেক বন্ধু হয়। দুজনের কথা খুব মনে পড়ে। একজন অসীম চক্রবর্তী, অন্যজন চন্দন সেন। চন্দন সেন কবি ছিলেন। উত্তরপাড়া না ঐদিকে কোথাও থাকতেন। ট্যাক্সি চালাতেন। তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা শোনাতেন রবিবারের আড্ডায়। আড্ডা হত ২২/বি, প্রতাপাদিত্য রোডে পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। চন্দন সেই সময় একটি কিশোর উপন্যাস লিখেছিলেন, ‘ কলকাতায় টারজান’। সে এক দারুন লেখা। কী ভালোই না লেগেছিল। চন্দন ছবি আঁকতে পারতেন ভালো। কয়েকজনের কবিতার বইয়ের কভার এঁকে দিয়েছিলেন। একদিন চন্দন বলেছিলেন গভীর রাতের ট্যাক্সিতে এক যুব নেতার উন্মত্ত আচরণের গল্প। তাঁর ট্যাক্সিতেই তা ঘটেছিল। সেন্ট্রাল এভিনিউতে নামী বারাঙ্গনা পল্লী সোনাগাছি ছিল তার গন্তব্য। সেই যুব নেতা হারিয়ে গেছেন। লেখক অসীম চক্রবর্তী আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় ছিলেন। বছর পাঁচ হবেই। বিবাহিত। এক সন্তানের পিতা। আনন্দময় মানুষ। শক্তিমান লেখক। অসীম কোনো চাকরি করতেন না। টিউশনি করতেন আর গল্প লিখতেন। গল্পের নাম ‘রণক্ষেত্রে অস্ত্রহীন একা’, ‘জনৈক উন্মাদের কথোপকথন’ ইত্যাদি। একটি ছোট উপন্যাস লিখেছিলেন নিখিল্কুমার নন্দী সম্পাদিত অনুক্ত পত্রিকায়। অনুক্ত ছিল এক প্রকৃত সাহিত্য পত্রিকা। তখনকার দিনের সেরা লেখকরা লিখতেন। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় অনুবাদ করেছেন, দেবেশ রায়ের অগ্রজ দিনেশচন্দ্র রায় লিখছেন, তরুণ প্রাবন্ধিক চিন্ময় গুহ লিখছেন, দেবেশ রায় লিখছেন, তাঁর অকাল প্রয়াত ভাই সিদ্ধার্থ রায় লিখতেন। সিদ্ধার্থর একটি গল্পের কথা মনে পড়ে। লিখেছিলেন অনুক্ত পত্রিকায়, ‘ মাটি চাঁদ হয়’। খুবই শক্তিমান গল্পকার। আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন বিয়ের পর। আত্মহত্যা করেন প্রবাসে। সে গত শতকের নব্বই দশকের কথা।দেবেশদা একটি শোকগাথা--উপন্যাস লিখেছিলেন, উচ্ছিন্ন উচ্চারণ। উচ্ছিন্ন উচ্চারণ ছিল উপন্যাসের সমস্ত ছক ভাঙা এক লেখা। দেবেশ রায়ের অগ্রজ দিনেশচন্দ্র রায় কয়েকটি গল্প এবং দুটি উপন্যাস লিখে বছর চল্লিশে প্রয়াত হন। গল্প পাঁচটি সংগ্রহযোগ্য। কুলপতি, ঐরাবতের মৃত্যুর মতো গল্পের জন্য যে কোনো ভাষা গর্ব বোধ করতে পারে। তাঁর উপন্যাস লিপ ইয়ারের মৃত্যুও স্মরণীয়।

    অসীম চক্রবর্তী ছিলেন আমার খুব কাছের, যেমন ছিল সমীর। সমীর সংক্রান্তি নামের একটি পত্রিকা বের করত। সংক্রান্তি পত্রিকায় আমি আর অসীম গল্প লিখতাম। আমি লিখেছিলাম নিবারণের কথা নেই, খাঁচার মানুষ, অসীম ‘জনৈক উন্মাদের কথোপকথন’। সংক্রান্তি পত্রিকায় আমি আরো গল্প লিখেছি, অসীমও। ১৯৭৫-৭৬ সালের কথা বলছি। বড় লেখক বলতে এই সময় আলাপ হয় জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, অসীম রায়, দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এবং একদিন দেবেশ রায়ের সঙ্গে। তিনি এসেছিলেন জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায়। পরিচয় দপ্তরে পরিচয়। ১৯৭৪-এর পুজো সংখ্যা কবিপত্রে পার্বতীর বোশেখ মাস প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি- মার্চ মাসে পরিচয় পত্রিকায় প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়, শকুন্তলার জন্ম। দীপেনদার খুব পছন্দ হয়। সেই গল্প। তখনই জুন কিংবা জুলাই মাসে দেবেশ রায় এসেছিলেন কলকাতায়। হাফ হাতা শাদা পাঞ্জাবি, ধুতি, হাস্যময় মুখ। এরপর কলেজ স্ট্রিটের পুস্তক প্রকাশনী নামে এক প্রকাশন সংস্থায় আলাপ হয় জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর সঙ্গে। ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত শীর্ণকায় মানুষ। মহত্তম গল্পকার। তিনি যদি অনূদিত হতেন বিশ্বজয়ী গল্প লেখক হতেন। কেউ পড়লই না তাঁকে এই ভৌতিক সাহিত্যের যুগে। ১৯৭৫ সালে কবিপত্র একটি গল্প সংখ্যা করে, সেখানে ‘মেলার দিকে ঘর’ পুনর্মুদ্রণ হয়। পুনর্মুদ্রণ হওয়ার পর গল্পটি বহুজনের কাছে যায়। সেই প্রতিক্রিয়া পাই পুজো সংখ্যা কবিপত্রে ‘মাঠ ভাঙে কাল্পুরুষ’ গল্প প্রকাশিত হতে। পত্রিকা দিতে গেছি আলোক সরকার, অধ্যাপক অমলেন্দু বসু, সন্তোষকুমার ঘোষের বাড়ি। সঙ্গে প্রভাতদা কিংবা পবিত্রদা, তাঁরা আমার নাম শুনে বলেন ‘মেলার দিকে ঘর’ ? অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা সেই অল্প বয়সে। ভাবতে গেলে এখনো গা সিরসির করে। সকলেই পড়েছেন। ১৯৭৬ সালে পরিচয় পত্রিকা আমার গল্প রাজকাহিনী প্রকাশ করে। তখন শারদীয় পরিচয়ে লেখা গৌরবের বিষয় ছিল। বহুদিন বাদে সমরেশ বসু আবার লিখেছিলেন পরিচয় পত্রিকায়। তাঁর সঙ্গে আমার লেখা বেরিয়েছে, ভাবতেই পারছি না। কল্পনা করছি তিনি আমার লেখা পড়ছেন…, আহা! তখন আমি ক্রমশ ঠিক করে নিচ্ছি লেখাই হবে আমার জীবন। আর যে চাকরি করছি, তাইই করব। দীপেন্দ্রনাথের সঙ্গে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংখ্যার প্রুফ দেখেছি আমি পরিচয়ে। ১৯৭৫-এর কথা। তখন এমারজেন্সি। সি পি আই কংগ্রেসের সঙ্গেই ছিল। যাদের নিয়ে জয়প্রকাশ নারায়ণ আন্দোলন শুরু করেছিলেন পরে দেখা গেছে তাদের ফ্যাসিবাদি চরিত্র। পার্টি রাজনীতি আমি করি না। করিনি কোনোদিন। কিন্তু রাজনীতি আমার লেখায় কম আসেনি। পার্টি থেকে দূরে থাকার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে।

    গল্প কবিতা ছিল সেই সময়ের এক বিখ্যাত সাহিত্যপত্র। গল্প কবিতা পত্রিকায় অসীম রায় থেকে সেই সময়ের সেরা লেখকরা লিখতেন। অসীম রায়ের উপন্যাস অসংলগ্ন কাব্য গল্প কবিতায় পড়েছি। পড়েছিলাম দেবেশ রায়ের গল্প ‘ঢাকিরা ঢাক বাজায় খালে বিলে’। তুষার রায়ের ‘ শেষ নৌকা’। গল্প কবিতার সম্পাদক কৃষ্ণগোপাল মল্লিকের প্রেসে ছাপা হত কবিপত্র। সেই দপ্তরেই আলাপ হয় অসীম রায়ের সঙ্গে। তাঁর অনেক গল্প-- অনি, ধোঁয়াধুলো নক্ষত্র, আরম্ভের রাত, শ্রেণীশত্রু আর গোপালদেব, রক্তের হাওয়া, অসংলগ্ন কাব্য ইত্যাদি উপন্যাসে অসীম রায় ছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক। মনে পড়ে কলেজ স্ট্রীট থেকে খুঁজে পেতে পাওয়া কথাশিল্প প্রকাশনীর বই ‘অন্তর্জলী যাত্রা’র পাঠের কথা। কমলকুমারকে পড়েছিলাম সমস্ত দুপুর সন্ধ্যা...। কমলকুমারকে জেনেছিলাম সেকেন্ড ইয়ারে। দেশ পত্রিকায় সনাতন পাঠকের কলমে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কমলকুমারকে নিয়ে অনেকটা লিখেছিলেন। জানলাম তাঁর বইয়ের নাম। টিউশন সম্বল যুবক ছুটল কলেজ স্ট্রিট। খুঁজে বের করল শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটে কথাশিল্প প্রকাশনী। কথাশিল্পই ছিল প্রকাশক। গেরুয়া মলাট। সে যেন গীতার মতো এক ধর্মপুস্তক। কিনে এনে দুপুরে পড়তে আরম্ভ করলাম। গ্রীষ্মের দুপুর শেষ হয়ে অপরাহ্ন, সায়াহ্ন এল। ছায়া প্রবেশ করল ঘরের ভিতর। আলো কমে আসছে। আমার পড়া চলছে। অন্ধকার হয়ে আসছে, আমার পড়া চলছে। কমলকুমার প্রণীত উপন্যাসের অক্ষরমালা থেকেই যেন আলো ফুটে বেরচ্ছিল। এখন যেমন গভীর অন্ধকারে মোবাইল বা ট্যাব থেকে পড়া যায় চমৎকার, তেমনি যেন প্রায়। কে যেন ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে দিল। অন্ধকারে কী পড়ছিস বাবুজি ? মা। সেদিন বুঝেছিলাম ক্লাসিক উপন্যাসের পংক্তি, অক্ষরমালা থেকে আলো নিঃসৃত হয়। আমি যদি আলো নিঃসরণের লেখা লিখতে পারতাম!

    ফিরে আসি ১৯৭৪-এ। আমার ক্যাম্প অফিসে। করণ্ডায়। মানুষের মুখের কথা বলি। যে মুখগুলি মনে আছে তার ভিতরে প্রধান মুখটি নিখিল প্রধানের। নিখিলবাবুকে আমি প্রথম যখন দেখি আমি তখন ২৩, তিনি ৫০। তিনি সেটেলমেন্টের ডি-গ্রুপ কর্মচারী। উপরওয়ালা স্যার, বাবুদের কাছে পিয়ন। এখন পিয়ন শব্দটি ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হচ্ছে। কর্মচারীদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ —চার শ্রেণীতে ভাগ করে সেইভাবেই অভিহিত করা হয়। এর অন্যথা হলে প্রতিবাদ হয়। প্রতিবাদ এবং সংগঠিত থেকে তাঁরা কিছুটা সম্মান আদায় করে নিয়েছেন। তবে এখনো সামান্য হোমগার্ড জেলার এস,পি, র বাড়ির বাজার করেন কি না, জামা কাপড় কাচেন কি না, ফাই ফরমাস খাটেন কি না জানি না। হয়তো বদল হয়েছে, হয়তো বদল হয়নি, এ ঘটনা সামান্য কনস্টবলের মুখে শোনা। আমি নিখিল প্রধানের কথা বলি।

    নিখিল প্রধান আমার ক্যাম্প অফিসে গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় এলেন পুরোন ময়লা সতরঞ্জি দিয়ে মোড়া কাঁথা, চাদর, তেলচিটে বালিশ নিয়ে। আর একটা বড় থলেতে লুঙ্গি, পপলিনের পাঞ্জাবি, ধুতি, গেঞ্জি আর একটি খদ্দরের চাদর। এসেছিলেন বোশেখ মাসে, এপ্রিল ১৯৭৪। প্রথম ছ-মাস আমাদের কাজ ছিল না। তারপর অঘ্রানে আরম্ভ হলো। শীত পড়েছে। মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম। এই সময়টা গ্রাম বাংলায় আনন্দের দিন। ঘরে ঘরে ধান ওঠে, ধান কেটে ধান ঝেড়ে, ধান কুটে গরিব মানুষের হাতে পয়সা আসে। ক’দিন বাদে নবান্ন। পৌষ সংক্রান্তির ভোরে টুসু ভাসান নদীর জলে, মেলা পার্বণ, পিঠে পায়েস। নিখিল প্রধান ক্যাম্পে এই কমাসে চারপাশ চিনে নিয়েছিলেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন। যেখানে থাকতে এসেছে্ন, সেই জায়গাটা চিনে তো নেবেন। গ্রামে বাবুবাড়ি কটা, মানে অবস্থাপন্ন চাষী, ভূমধ্যকারী পরিবার কটি, গরিব মানুষের বসতি কোন দিকে, কটি পুকুর আছে, বাগান আছে, হাট কতদূরে, ফসল কেমন হয়, এই সব খোঁজ নেন নিখিল প্রধান। গ্রামে তাঁর নিজের জমি আছে বিঘে দুইও নয়। ভিটে আছে চার কাঠার উপর। কিন্তু তাতে তাঁর সংসার চলে না। তিন ছেলে, দুই মেয়ে, সামান্য বেতন, নিখিল প্রধানের সংসারে ডানে আনলে বাঁয়ে ফুরোয়। তিনি বাড়ির খেয়ে চাকরি করতে পারেন না। সেই প্রথাই ছিল না। কম বেতনের দুঃস্থ কর্মচারীকে যত বেশি হেনস্থা করা যায়, তাতেই প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের সুখ। তারা সকলেই নাকি চোর। ঘুষ খোর। ক’টাকা বেতনের চাকুরিয়া তারা? তাদের দূর অঞ্চলে পাঠিয়ে বিড়ম্বিত করে দিয়েই সুখ ছিল কর্তাব্যক্তিদের। আমি তা দেখেছি। দেখেছি আমলাতন্ত্রের নিষ্ঠুরতা। অসৎ আমলার হম্বিতম্বি। সৎ ব্যক্তির জীবন কত বিড়ম্বিত করা যায়, তেমন ঘটনা কম দেখিনি। পাশাপাশি রুচিমান, সৎ মানুষকেও দেখেছি বড় চেয়ারে। প্রথমে যাঁকে মনে হয়েছে কঠিন, ক্রূর, পরে দেখেছি তিনিই সব চেয়ে মানবিক।

    নিখিল প্রধান সারা মাস গ্রামে ঘুরে ঘুরে কটি নারকেল, কিছু আলু, এমনি নানা সব্জি সংগ্রহ করে মাস বেতনের পর বাড়ি যেতেন সেই সব নিয়ে। একটা বস্তা ভরে যেত। সেই বস্তা মাথায় করে করণ্ডা নামের গ্রাম থেকে লোয়াদা নামের গঞ্জ অবধি হাঁটা। মাইল পাঁচের উপর হবে। কাঁসাই নদী পার হয়ে বাস। নিখিল বাড়ি চললেন। এই যে সংগ্রহ, তার ভিতরে আমার দেওয়া শাড়িও ছিল একবার। বাড়িতে এসে বলতে, মা একটি নতুন, কয়েকটি পুরোন দিয়েছিলেন নিখিল প্রধানের স্ত্রীর জন্য। নিখিলবাবু জরিপের কাজে গিয়ে আচমকা উধাও। কোনো গরিব চাষীর বাড়িতে ভাত খেতে বসেছেন। ভাত, খেসারির ডাল আর আলু সেদ্ধ অনেকটা। পিঁয়াজ আর শুকনো লঙ্কা পোড়া দিয়ে মাখা। অবস্থাপন্নরা নিখিলবাবুকে তোয়াজ করবে কেন? কোথাও ভাত পেলে অফিসের মেসে একটি মিল বাদ যায়। নিখিলবাবুর খরচ কম হয়। কখনো তিনি মাছ নিয়ে হাজির। খালে জাল ফেলেছিল একটা লোক, তার কাছে গিয়ে নিখিলবাবু বলেছেন, খাল তো সরকারি, সরকারি খালে মাছ ধরছ গোপাল, তোমার তো জেল হয়ে যাবে। বেআইনি কাজ করছ। এদেশে গরিব মানুষই আইন মানে। আইনকে ভয় করে। সেই গোপাল তখন নিখিলবাবুকে ধরে পড়ল, কী হবে ছার, আপনি বাঁচান। নিখিলবাবু তাকে বাঁচালেন, একটি বোয়াল মাছ নিয়ে। সেই মাছ অফিসের মেসে দিয়ে বললেন, দাম দশ টাকা হবেই, তাঁর দেওয়া হল মেস খরচ। গোপালকে তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে মাছ নিয়ে এসে মেসের খাতায় দশ টাকা নিজের নামে যোগ করে দিতেন। গরিব মানুষ, এমন উঞ্ছ বৃত্তি না করলে যে তাঁর চলে না। সেই নিখিলবাবু রাতে ঘুমের ঘোরে কাঁদছেন। আমার ঘুম ভেঙে গেছে। আমি খাটে শুয়েছি, মেঝেয় মাদুর পেতে নিখিলবাবু। কান্নার কারণ তাঁর মেয়েটি। বিয়ে দিতে চান পারছেন না। অনেক টাকা চায়। কী করে দেবেন? চেয়ে চিন্তে কত আর উঠতে পারে? নিখিলবাবুর সব খবর আমাকে দিতেন আর একজন। নৈশ প্রহরী সন্তোষ। তার বয়স কম। সে নিখিলবাবুকে দাদা বলত। নিখিলবাবুর কাজ ছিল গ্রামে গ্রামে নোটিস জারি করা। নোটিস জারি করতে গিয়ে যদি ভাত জোটে। নোটিস জারির দিন তিনি মেসে বলেই যেতেন, দুপুরের মিল বাদ। ফিরে এসেছেন পায়ে হেঁটে কুড়িটি নোটিস দিয়ে, কিন্তু খাওয়া হয়নি সারাদিন। মুড়ি খাচ্ছেন নোটিস দিয়ে এসে এমনও দেখেছি। বাবুরা পাত্তাই দেয়নি সেটেলমেন্টের ‘পিয়ন’কে। নিখিলবাবু এই যে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন, হাত খাতায় নাম লিখে আনতেন কে ভাগে চাষ করে, কিন্তু জমির মালিকের ভয়ে বলতে পারছে না। জরিপের সময় তিনি ডাকলেন, নকুল ও নকুল, কোনো ভয় নেই, এসে বলো, কোন জমি ভাগে করো। তখন ভাগচাষী এগিয়ে এল। কী অদ্ভুত মানুষ সেই নিখিলবাবু? যখন ক্ষমতা আর বেতনে অনেক উপরওয়ালা এসে বলেন, অমুক বাবুর জমির ভাগ চাষী ভুয়ো, ভাল করে তদন্ত করে দেখুন তো, তিনি জিপ হাঁকিয়ে চলে যেতেই নিখিলবাবু বলেন, বাবু ( আমাকে তিনি ঐ সম্বোধন করতেন) , ও সত্যিই ভাগে চাষ করে, ওর নামটা লিখে দিন। এখন মনে হয় তখন কেন প্রণাম করিনি মানুষটিকে। রাতে ঘুমের ঘোরে কাঁদছেন, দিনে ভাগ চাষী খুঁজে বেড়াচ্ছেন অন্ন সংগ্রহ করতে । আমার প্রথম উপন্যাস ‘নদীর মানুষ’ এর বড় অংশ জুড়ে নিখিলবাবু ছিলেন। নিখিলবাবু এবং নগেন মাইতি ( নাম পরিবর্তিত ) মশায়কে আমি ভুলতে পারব না এই জীবনে। নগেন ছিলেন পেশকার। হাতের লেখা ছিল অপূর্ব। বাংলা লেখার বয়ান ছিল চমৎকার। বাংলায় আমার ভ্রমনভাতার বিল করে দিয়ে মন কেড়েছিলেন। গল্প করতেন নিজের সেটেলমেন্ট জীবনের, কিন্তু পরে বুঝেছি সেই সব গল্পের অনেকটাই বানানো এবং মিথ্যে। নগেন মাইতির কথা পরে বলব। এক একজন মানুষের জীবন যেন নিয়তি তাড়িত হয়, উচ্ছিন্ন জীবন কত বিপন্নতার ভিতর দিয়ে যাপিত হয় তা নগেন মাইতিকে দেখে প্রত্যয় হয়েছিল। সেই যে সেই ক্যাম্প অফিস, পেশকার, মোহরার, আমিন, ডি-গ্রুপ পিয়ন, নৈশপ্রহরী সকলকে আমার মনে আছে। ১৯৭৫-এর জুলাই মাসে করণ্ডার ক্যাম্প অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয় সরকারের এক পাইলট প্রজেক্ট শুরু হওয়ায়। আমি বদলি হলাম খড়্গপুর দীঘা হাইওয়ের ধারে নারায়ণগড়ে। যতটা পথ হেঁটে ফিরেছিলাম করণ্ডা থেকে লোয়াদার দীর্ঘ পথ আমি কাঁদতে কাঁদতে ফিরেছিলাম। কানুনগো সায়েব কাঁদছে একটা গরিব গ্রামের গরিব মানুষগুলির জন্য, এই অভূতপূর্ব দৃশ্য পথের ধারের মানুষ দেখেছিল। খুব ইচ্ছা আবার একবার যাই, দেখে আসি আমার সেই আরম্ভের মাটিকে। ঐ গ্রামই তো আমার কানে মন্ত্র দিয়েছিল। বলে দিয়েছিল, এই জীবন লইয়া কী করিব।


    (ক্রমশঃ)

    ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১১ ডিসেম্বর ২০২০ | ৪৫৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অলোক গোস্বামী | 103.87.***.*** | ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:৪৭101059
  • আলো নিঃস্বরণের লেখা 

  • Prativa Sarker | ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:১৮101061
  • কতো হারিয়ে যাওয়া মানুষ ভিড় করে এলেন এ লেখায় ! 


    শেষটুকু অনবদ্য ! 

  • সংশোধনী | 2402:3a80:a77:c90e:a4ef:b19:d0cd:***:*** | ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৩৪101063
  • দেবেশ রায়ের দাদার নাম দিনেশ রায়, দীনেশ নয়। 

  • Pinaki | 136.228.***.*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:১৩101081
  • ধন্যবাদ, সংশোধন করা হল। 

  • অমর | 43.252.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৪৫101306
  • অনুক্ত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সুনীলকুমার নন্দী। আমি তাঁর অগ্রজের নাম বলেছি ভ্রম ক্রমে। এই পত্রিকা আমাদের অঞ্চল, পাইকপাড়ার নর্দার্ন  এভিনিউ থেকে প্রকাশিত হতো। তাঁর বাড়িতে রবিবার সকালে আড্ডা দিতে যেতাম। প্রবীণ সজ্জন ব্যক্তি  ছিলেন। আমাকে খুব ভালোবাসতেন। পরে এই এলাকা ছেড়ে তিনি লবন হ্রদ বাসী হন। সেই বাড়িতেও  গিয়েছি, তখন অনুক্ত বন্ধ হয়ে গেছে।          

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন