এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • পেনসিলে লেখা জীবন (পর্ব ২)

    অমর মিত্র
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ৫৫২৪ বার পঠিত | রেটিং ৩.৩ (৪ জন)
  • আমি ক্লাস ওয়ান-টু পড়ি নি। কেন পড়িনি বলতে পারব না। আমাদের যাতায়াত ছিল কলকাতা আর বসিরহাটের কোলে দণ্ডীরহাটে। তাই হয় তো ইস্কুলে ভর্তি হওয়া হয়নি। কিন্তু পড়া হচ্ছিল। হাতে খড়ি হয়েছিল পাঁচ বছরে। তারপর ইস্কুলে যাইনি। কোথায় থাকব তার স্থিরতা ছিলই না। প্রথম আমাকে বাবা এক সন্ধ্যায় এনে দেন, হাসি খুশি, সুখলতা রাও। সেই আমার প্রথম নিজের বই। একান্ত নিজের। আহা, সেই বইটির কথা যত মনে পড়ে, বাবার মুখটি মনে পড়ে। তিনি বললেন এই তোমার বই, যত্ন করে রাখবে। ছিঁড়বে না। সেই বই আমাদের ফ্ল্যাটের ভিতর কোথায় লুকোব। আলমারির তলায়, না আলনার তলায়। আমার তো নিজস্ব কোনো জায়গা নেই যে সেখানে আমার নিজের বই নিজের মতো করে রাখব। হা হা হা। এত বয়সেও তা আমার হয় নি। আমাদের সেই পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছরের পুরোন ফ্ল্যাটেই আমি থাকি। আমার নিজের ঘরখানিতে বই আর বই। সেলফ ভর্তি হয়ে মাটিতে, খাটের নিচে, কোথায় না। যে বই যখন দরকার হয় খুঁজে পাই না। তবে আমার সহধর্মিণী শ্রীমতী মিতালি তা অনেক সময় খুঁজে বেরও করে দেন। অনেক সময়ই হারানো বই আবার সংগ্রহ করতে হয়। চেয়ে নিয়ে কাজ মিটিয়ে ফেরত দিতে হয়। এসব এখনকার কথা, তখনকার কথা বলি। হাসিখুশি আমার প্রথম বই। তখন আমি পড়তে শিখে গিয়েছি মনে হয়। কবে আমার অক্ষরজ্ঞান হয় তা আর মনে নেই। ক্লাস ওয়ান-টু পড়িনি, একেবারে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হয়েছিলাম বেলগাছিয়ার মনোহর একাডেমিতে। বাড়িতে আমার প্রথম শিক্ষক ছিলেন রাখালবাবু। বস্তিতে থাকতেন, তাঁর ভাই বাজারে আলু বিক্রি করতেন। তা আমি পরে দেখেছি। এঁরা সব পূর্ববঙ্গের মানুষ। অবস্থার ফেরে জীবন এমন হয়েছিল। বাজারে যে চায়ের দোকান ছিল ব্রজেনবাবুর, তাঁর পুত্র তপন আমাদের বন্ধু। তারাও ছিল বড় ঘর। অবস্থার ফেরে তার বাবা এপারে এসে চায়ের দোকান করে সংসার নির্বাহ করতেন। তপনের বোন শিখা আমার বোন অপর্ণার সহপাঠী। তাকে আমাদের এক বন্ধু ছোটন, এখন সে বেঁচে নেই, বলত চা-উলি। খুব খারাপ লাগত। ছোটনরা ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। এসব যেমন বলত, আবার তপনের সঙ্গে মিশতও। এমনিতে সেই সময়ে ধনী দরিদ্রে ভেদাভেদ ছিল না বিশেষ। পূর্ববঙ্গে জমি নির্ভর মানুষ দেশভাগে কী বিপন্ন হয়েছিল তা এখন বুঝতে পারি। স্কুলে ভর্তি হয়েই আমি বন্ধু পেলাম। ক্লাসের ছেলেরা সব বন্ধু। রাখাল স্যার আমাকে একবছর পড়িয়েছিলেন। কলকাতার স্কুলে থ্রি আর ফোর। বন্ধু ছিল কজন। তাদের সঙ্গে টালা পার্কে ফুটবল, ক্রিকেট খেলে বড় হতে লাগলাম। বাড়িতে লোক বেশি, তাই খেলার মাঠেই বেশির ভাগ সময়। পড়াশুনোয় সুবিধে হচ্ছিল না। থ্রি থেকে ফোরে কোনো রকমে। অঙ্কে খুব কাঁচা। ফোর থেকে ফাইবেও দু’কুড়ি পাঁচ। আমার মা বলতেন ওই কথা। এর মানে কোনো রকমে পাশ। আমি অঙ্কে তাও পেতাম না। কেউ তো দেখাবার ছিল না। পেতাম এক কুড়ি পাঁচ-দশ। সেকেন্ড কলে পাশ। যারা সব বিষয়ে পাশ করতে পারে না, তাদের সেকেন্ড কল। ফার্স্ট হলো অরুণ। সেকেন্ড রণজিৎ, থার্ড জয়দেব। আমার ভালো লাগত কিশলয়, ভূগোল, ইতিহাস। গল্প থাকত তাতে। বাবা বোধ হয় এক জন্মদিনে একটি বই এনে দিয়েছিলেন, দেব সাহিত্য কুটিরের বুক অফ নলেজ। সেই বই মাসখানেকের ভিতর শেষ। কী ভাল যে ছিল সেই বই। কোন বইয়ে পড়েছিলাম মেরু অভিযাত্রীদের কাহিনি। ক্যাপ্টেন কুক, আমুন্ডসেনের কষ্টকর অভিযান। কলম্বাসের কাহিনি, ভাস্কো দ্য গামার কথা। মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল বারবার পড়ে। জন্মদিনে বইই পেতাম। হয়তো শার্ট প্যান্ট। বাবার কাঁধে মস্ত সংসার। ঠাকুরদা অসুস্থ। মেজকাকা ব্যবসা করতে গিয়ে সুবিধে করতে পারছিলেন না। দুই কাকা ছিলেন অসম্ভব স্নেহময়। তাঁদের কাছে অনেক আদর পেয়েছি। ছোট কাকা আমাকে পূজা বার্ষিকী কিনে দিয়েছেন। খেলার পত্রিকায় ছিল অসম্ভব আকর্ষণ। আমাদের ছেলেবেলায় গড়ের মাঠ, খেলার মাঠ, অলিম্পিক --এইসব নামে খেলার পত্রিকা বেরত। গড়ের মাঠের ছবিতে হাত ঘষলে হাতে কালি লেগে যেত। কাঠের ব্লকে ছাপা সেই পত্রিকার কালি শুকোত না। এর ভিতরে অলিম্পিক পত্রিকার মান ছিল ভালো। বড় বড় খেলোয়াড়দের ছবি। তখন বড়দের বিনোদন সিনেমা থিয়েটার, উলটোরথ, প্রসাদ, জলসা, সিনেমা জগত, দেশ, অমৃত, নব কল্লোল। ছোটদের বিনোদন খেলা আর বই পড়া। পত্রিকা বলতে শুকতারা, শিশু সাথী। আমাদের বাড়িতে একটা পত্রিকা আসত, ‘আশ্চর্য’। কল্প বিজ্ঞানের পত্রিকা। আমি ছিলাম আশ্চর্য পত্রিকার গোপন পাঠক। পুজো সংখ্যা পেতে খবরের কাগজের হকারই ছিল ভরসা। আমাদের বাড়িতে এক বৃদ্ধ কাগজ দিতেন। আমি বাড়িতে আসা দেশ পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম, ‘ ঝিলমিল’। দাদুকে বললাম ওই ঝিলমিল চাই। বৃদ্ধ এনে দিলেন। দাম দেবে কে ? বাবাই দিলেন। হ্যাঁ, সেই বৃদ্ধের পুত্র মুন্নাভাই এরপর কাগজ দিয়েছে। এখন দেয় যে সে মুন্নাভাইয়ের পুত্র। মানে সেই দাদুর নাতি। ভাবা যায়! এঁরা বিহারের মানুষ, এই পেশাতেই বংশ পরম্পরায় আছেন। খবরের কাগজ এবং পত্র-পত্রিকা বেচেই জীবন যায়। মুখে বিষন্নতা দেখি না কখনো। বিহারে মাঝে মধ্যে যায় দরকারে, আবার ফিরেও আসে। কলকাতা এদের নিজের শহর, অন্নদাতা শহর। ‘ঝিলমিল’ পূজা বার্ষিকীতে ক্ষিতীন্দ্রনারায়ন ভট্টাচার্যর একটি গল্পের কথা খুব মনে আছে। লাইম স্টোনে জল লেগে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কার্বন ডায় অক্সাইড জন্ম নিচ্ছে, গুহায় যে ঢুকছে, মারা যাচ্ছে। বিজ্ঞান এবং সাহিত্য তিনি এত সুন্দরভাবে মেলাতেন যে বিভোর হয়ে পড়তাম। আমাদের ছেলেবেলায় শিশু বা কিশোর সাহিত্যে খুন জখম কম থাকত। নির্মল আনন্দ থাকত বেশি। বই পেয়েছিলাম হলদে পাখির পালক। সে আর কে ভুলবে ? ‘অদ্বিতীয় ঘনাদা’ জন্মদিনে পাওয়া উপহার। ‘নবীন রবির আলো’--লেখক বিজনবিহারী ভট্টাচার্য, খুব ছোটবেলায়। সেই বইয়ে নবীন রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকা ছিল। জীবন স্মৃতি পেয়েছিলাম ক্লাস সেভেনে হয়ত। এ বাদ দিয়ে আমাদের রাস্তা ইন্দ্র বিশ্বাস রোডের জানা অ্যান্ড কোম্পানির কথা না বললেই নয়। বড় বইয়ের দোকান, ইস্কুলের বই তাঁর কাছেই পাওয়া যেত। বুক লিস্ট ফেলে দিলেই হলো। সে তো জানুয়ারি মাসে। ডিসেম্বরের শেষে রেজাল্ট আর জানুয়ারিতে নতুন বই। যাদের আর্থিক সঙ্গতি কম ছিল, তারা পুরোন বই সংগ্রহ করত হাফ দামে। উঁচু ক্লাসের ছেলেদের কাছেই তা পাওয়া যেত, কিংবা পুরোন বইয়ের দোকানে। সে দোকান বিধান সরনিতে এখনো আছে। তখন বিনা মূল্যে ইস্কুল বই দেওয়া হত না। ইস্কুলে বেতন দিয়ে পড়তে হত। বেতন বাকি পড়ায় নাম কাটা যেত অনেকের। পরীক্ষার আগে সারা বছরের বেতন শোধ না করলে, পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হত না। এমন অনেক সহপাঠীকে দেখেছি নাম কাটা গেছে রেজিস্টার থেকে। তবে তারা ইস্কুলে আসা বন্ধ করত না। টাকা পয়সা জোগাড় করে বাবারা এসে বেতন শোধ করে দিয়ে যেতেন। হ্যাঁ, আমাদের ইস্কুল বইয়ের সঙ্গে জানা অ্যান্ড কোম্পানিতে থাকত গল্প-উপন্যাসের বড় আয়োজন। আমি পয়সা জমিয়ে বই কিনতাম। আবার আবদার করেও বই পেতাম। দেব সাহিত্য কুটিরের অনুবাদ গ্রন্থমালা। টম কাকার কুটির, দ্য ম্যান হু লাফস, হ্যাঞ্চ ব্যাক অফ নোতরদাম, অলিভার টুইস্ট। অলিভার টুইস্ট অনুকরণে একটি বাংলা কিশোর উপন্যাসও ছিল, খুব সম্ভবত তার নাম ‘ মা আমি অশোক’। আবার অলিভার টুইস্ট অনুকরণে একটি বাংলা সিনেমা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল আমাদের বাল্যকালে। মানিক সেই ছবির নাম। সেই ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্যা রাণু মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন অবিস্মরণীয় গান, ‘ শোন শোন শোন মজার কথা ভাই, আমায় বান্দর সুধায় কুত্তা সুধায়, সবাই সুধায় হায়, সবারই তো মা আছে, আমার কেন নাই।’ সেই বালকের ভূমিকায় কে অভিনয় করেছিল মনে নেই। তখন দেশাত্মবোধক ছবি, ছোটদের উপযোগী ছবির প্রমোদ কর মুক্ত করে দিত সরকার। টিকিটের দাম কম হত। ইস্কুলের মাস্টার মশায়রা নিয়ে যেতেন সিনেমা দেখাতে। ছেলেবেলায় হারিয়ে যাওয়া শিশু বড় হয়ে গান গাইছে তার মায়ের সামনে এসে। তারা কেউ কাউকে চেনে না। দর্শক চেনে। সিনেমা হলে শুধু ফোপানির শব্দ।

    ক্রিকেট ফুটবল ছাড়া, কতরকম খেলা ছিল,মাটিতে উবু হয়ে বসে মার্বেল আর কাঁচের গুলি, ডাং গুলি, পিট্টু, কিংকং, চোর-চোর...। বিকেলে সব খেলা শেষ হয়ে গেলে পাড়া জুড়ে চোর চোর খেলা হত। ছোটবেলায় পকেট ভরে থাকত কাঁচের গুলিতে। সেই সব রঙিন কাচের গুলির কথা এখনো খুব মনে পড়ে। ফলে পকেট ছিড়ে যেত। আমরা বড় হলাম, আর সেই সব খেলাও উঠে গেল। গুলতি আছে নাকি এখনো? গ্রামের দিকে আছে নিশ্চয়। গুলতি পেয়েছিলাম দণ্ডীরহাটে গিয়ে। হ্যাঁ, কলকাতার মনোহর একাডেমির পাট উঠল ক্লাস ফাইভে। ফাইভে উঠে চললাম দণ্ডীরহাট। ইলেকট্রিক আলো নেই, বাস নেই, ট্রাম নেই, পাকা রাস্তা নেই, পুরোন এক গ্রাম। সেখানে ১৯৫০ এ বাড়ি করা হয়েছিল। যৌথ বাড়ি। তিন ভাইয়ের নামে জমি। বাড়ির নাম অন্নদা নিবাস। ঠাকুরদা অন্নদাচরণ মিত্রর নামে বাড়ির নাম। তিনি তখন বেঁচে। বাইরের বারান্দায় চেয়ারে বসে থাকতেন শুভ্রকান্তি পুরুষ। অনেক কম বয়স থেকেই অসুস্থ হয়েছিলেন। আমি তাঁকে সুস্থ দেখিনি কখনো। ঠাকুমা হেমনলিনী ছিলেন দাপুটে নারী। দেশভাগের পর উচ্ছিন্ন হয়ে এপারে এসে দেবী দুর্গার মুখ দ্যাখেননি শুনেছি। অন্নদাচরণ এবং হেমনলিনীকে নিয়েই আমার দাদা মনোজ মিত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুর চোখে জল নাটক লিখেছিলেন। সেই নাটক তাঁকে খ্যাতি দিয়েছিল। অপূর্ব তার গল্প। মানব জীবনের অনেক গভীরে নিয়ে স্পর্শ করেছিল।

    ক্লাস ফাইভে আমাকে কলকাতার ইস্কুল থেকে ছাড়িয়ে দন্ডীরহাট ইস্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হল। মা গেল সঙ্গে। কলকাতার বাসায় বাবা থাকলেন আর অনেকজন। আমার দুই দাদা থাকল কলকাতায়। মা আমি আর আমার পরের বোন অপর্ণা চললাম ৭৯ সি বাসে চেপে দন্ডীরহাট। লাগত পাকা তিন ঘন্টা। খুব ছোটবেলায় দেখেছি দন্ডীরহাটের পাশ দিয়ে মারটিন কোম্পানির ছোট রেলগাড়ি চলতে। আমাদের বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় বসে সেই গাড়ি দেখেছি আমি। গাড়ি বেলগাছিয়া থেকে ছেড়ে হাসনাবাদ অবধি যেত। সেই গাড়ি তখন ঊঠে গেছে। নতুন শিয়ালদা হাসনাবাদ রেলগাড়ি চালু হয়েছে, কিন্তু তা অনেক দূর দিয়ে ধানের মাঠের ভিতর দিয়ে যায়। সেই গাড়ি দন্ডীরহাটের লোকের খুব সুবিধে করে নি। এখন অবশ্য লোকজন সাইকেলে বসিরহাট গিয়ে ( আসলে স্টেশনের জায়গাটির নাম ময়লাখোলা। শহরের সমস্ত ময়লা ওখানে ডাঁই করা হতো।) যাকগে সেই কথা। ৭৯ নম্বর বাস ও অন্য সব বাসের মালিকানা তখন ছিল শিখদের। তাদের হাতেই ছিল কলকাতা ও মফস্বলের পরিবহন ব্যবস্থা। বাস কন্ডাক্টর শিখ যুবক, বাসের গা পিটোতে পিটোতে----এই ডিগা ডিগা ডিগা বলতে বলতে চালককে উৎসাহিত করত গতি বাড়াতে। কী মধুর ছিল তাদের মুখের সেই ডাক। পরে একটি গান বিখ্যাত হয়েছিল দমদম ডিগা ডিগা, মৌসম ভিগা ভিগা......। এখনো পুরোন কথা মনে পড়লে সেই ডিগা ডিগা ডাক শুনতে পাই যেন। কলকাতায় তখন অনেক শিখ ড্রাইভার, কন্ডাক্টর। তারা ধীরে ধীরে কমে গিয়ে প্রায় শূন্য। পাঞ্জাবের সবুজ বিপ্লব শিখদের নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল মনে হয়।

    দন্ডীরহাট ইস্কুলে আমি পড়েছিলাম দু বছর। দুটি বছর কেশব চন্দ্র মাস্টার মশায়ের কাছে অঙ্ক করেছি। প্রাইভেট পড়া। তিনি ছিলেন লেখক দীপক চন্দ্রর পিতা। তাঁর অন্য দুই পুত্র দণ্ডীরহাট ইস্কুল থেকে খুব ভালো রেজাল্ট করে জলপানি পেয়েছিল। তাঁদের একজন হন ইঞ্জিনিয়ার, অন্যজন ডাক্তার। দীপকদা মূলত রামায়ণ মহাভারতের চরিত্র নিয়েই উপন্যাস লিখতেন। তাঁর কথা পরে বলব। হ্যাঁ, যে আমি অঙ্কে পেয়েছিলাম ৯ আর ১৫-১৬, কেশব বাবুর কাছে অঙ্ক করে ৯০-৯৫। ম্যাজিক হয়ে গিয়েছিল। সেকেন্ড কলে পাশ করতাম মনোহর একাডেমিতে, দণ্ডীরহাট নগেন্দ্রকুমার উচ্চ শিক্ষা নিকেতনে ফার্স্ট। ফার্স্ট হলাম কী করে জানি না। বলছি মাস্টার মশায়রা ছিলেন অসম্ভব স্নেহপ্রবণ। চিনতেন সকলকে পারিবারিক ভাবে। সেই দুটি বছর আমার কাছে ছিল অমূল্য এক সময়। ইস্কুল আর নতুন বন্ধু, রক্তিম, কাশিনাথ, অজয়, কমলেশ, তপন, মতিয়ার আর গোলপুকুর রেল স্টেশনের মাস্টার বাবুর ছেলে নির্মল----আমরা হুড়িয়ে বড় হয়েছি। দন্ডীরহাটের পশ্চিমে একটি বিলেন জমি, বিস্তৃত আর্দ্র ভূমি, তা পেরিয়ে যে গ্রাম তার নাম ধলতিথা। ধলতিথায় নাট্যকার অমৃতলাল বসুর জন্ম। অবশ্য আমি তাঁর বাড়ি দেখেছি কাটিয়াহাট বা কেটে গ্রামে। কেটে বসিরহাটের ইছামতীর ওপারে। কেটে থেকে বিভূতিভূষণের প্রথম স্ত্রী গৌরীর বাপার বাড়ি পানিতর খুব কাছে। সীমান্তের দিকে। আমি পথের পাঁচালী উপন্যাসে ধলতিথার নাম পেয়েছি। পাঠ্য পুস্তক সাহিত্য চয়নে পথের পাঁচালির একটি পরিচ্ছেদ পাঠ্য ছিল, তার ভিতরে ধলতিথার নাম পড়ে বিস্ময়ে অভিভূত। ধলচিতের ( লেখায় ধলতিথা, বলায় ধলচিতে ) মাঠে আমরা ক্রিকেট ম্য্যাচ খেলতে গেছি। হেরে ফিরেছি, কিন্তু আমি তো আগে কখনো অমন বিল জমি পার হই নি। কী নতুন না লাগছিল সব। রাতে কলকাতার জন্য মন খারাপ হয় সত্যি, কিন্তু দিনের আলো ফুটতে না ফুটতে সব মন খারাপ মুছে যায়। একদিন চার বন্ধু মিলে গেলাম ইছামতী নদী দেখতে। আমাদের গ্রাম পেরিয়ে, নলকোড়া গ্রাম পেরিয়ে ধান জমি, ইট ভাটার পাশ দিয়ে চলেছি তো চলেছি। আমি তখনই গোপনে লিখতে শুরু করেছি কবিতা গল্প। সে যাই হোক, বন্ধুদের ভিতর আমাকে সব চিনিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ছিল অসীম। ইছামতীর ওই ওপারে পাকিস্তান। আমায় দেখাচ্ছে কাশীনাথ। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর লঞ্চ ঘুরছে জলে ইন্ডিয়ার ফ্ল্যাগ লাগিয়ে। ইছামতী তখন বেগবতী ছিল। সেই যে সেই নদী দর্শন, নদীর ওপারে আমাদের সেই ধূলিহর আছে, যত ভাবি তত যেন ভার হয়ে যেতে থাকি মনে মনে। ওপার থেকেই আমার ছোটকাকা এলেন কদিন আগে সাইকেলে পার হয়ে। দুদিন থেকে ফিরেও গেছেন।

    দন্ডীরহাট গ্রামটি তখন খেলাধুলো আর থিয়েটারে সব সময় মেতে থাকত। আমাদের চেয়ে বয়সে বড় তরুণদা ছিল পোস্টাপিসের ডাক পিয়ন। তার সঙ্গে স্থানীয় জমিদার (তখন প্রাক্তন, জমিদারি অধিগ্রহন আইন চালু হয়ে গেছে ১৯৫৫-৫৬-য়ে, মধ্যস্বত্ব হয়েছে বিলুপ্ত। ) বাড়ির বিপুল পুস্তক সংগ্রহের দায়িত্বে। লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক। তিনি গরমের ছুটির সময়টাতে দুপুরে আমাদের দিয়ে সুনির্মল বসুর কিপ্টে ঠাকুরদা নাটকের রিহারসাল আরম্ভ করলেন। মনে আছে বালকদের সেই গান, ঠাকুরদাদা কিপ্টে বেজায় জল গলে না হাত দিয়ে......। নিজেরা মঞ্চ বেঁধে হ্যাজাক জ্বালিয়ে নাটক অভিনয় করেছিলাম। মনে আছে সেই নাটক দেখতে গ্রাম ভেঙে পড়েছিল আর আরম্ভেই ঠাকুরদা তরুণদার শাদা দাড়ি খুলে বৈশাখের বাতাসে উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে অভিনয় থেমে থাকেনি। তরুণ বয়সের তরুণই ঠাকুরদা হয়ে উঠেছিল অভিনয় গুনে। দন্ডীরহাটের দুবছর ক্রিকেট, ফুটবল, থিয়েটার, লাইব্রেরি, বরেণ্য স্যার, মোনাজাত স্যার, অঙ্কের চারুবাবু নিয়ে বড় হয়েছিলাম। গরমের ছুটির আগেই রিহার্সাল আরম্ভ হয়ে যেত ছাত্রের পরীক্ষা কিংবা পেটে ও পিঠে প্রহসনের। ২৫ শে বৈশাখ পালন হতো। ১৯৬১ সালে আমি ক্লাস ফাইভ, দণ্ডীরহাট ইস্কুলে খুব বড় করে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী পালন করা হয়েছিল। ছাত্রের পরীক্ষা প্রহসনে আমি হয়েছিলাম ছাত্র, আমার সহপাঠী, গোল্পুকুর স্টেশনের ( মধ্যমপুর ) মাস্টারবাবুর ছেলে নির্মল নাকের নিচে গোঁফ এঁকে হয়েছিল শিক্ষক। উদ্ভিদ কাকে বলে, যা মাটি ফুঁড়ে ওঠে, উদাহরণ, কেন কেঁচো...। কত মানুষ দেখেছিলেন সেই অভিনয়। তা ছাড়া আমি একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলাম রবি ঠাকুরকে নিবেদন করে। দণ্ডীরহাট ছিল সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে অনেক উন্নত এক গ্রাম। দণ্ডীরহাটের বসু জমিদার পরিবারের মানুষ ছিলেন চিকিৎসা শাস্ত্রে কৃতবিদ্য ডাঃ জগবন্ধু বসু। কলকাতা মেডিকেল স্কুল, বর্তমানে যা কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ হয়ে আর জি কর মেডিকেল কলেজ, তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ডাঃ জগবন্ধু বসু। ১৮৮৭ সালে এই মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। জগবন্ধু বসুর জন্ম দণ্ডীরহাট গ্রামে, ১৮৩১ সালে, ১৮৫৬ সালে চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক, ১৮৬৩ সালে স্নাতোকত্তর। তাঁর নামে কলকাতা শহরে রাস্তা আছে। তিনি তাঁর গ্রামে, দণ্ডীরহাটে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন। সেই ডাক্তারখানা আমি দেখেছি ছেলেবেলায়। ছিল তখনো। দণ্ডীরহাট হাই স্কুল, নগেন্দ্রকুমার উচ্চ শিক্ষা নিকেতন তাঁদেরই গড়া, তাঁদের চণ্ডীমণ্ডপে দুরগাপুজো। থিয়েটার হত দণ্ডীরহাটে নিয়মিত। দণ্ডীরহাটের পাশের গ্রাম নলকোড়া গ্রামের কর জমিদার বাড়ির সন্তান চিত্রকর চিন্তামনি কর এবং লেখক বিমল কর। বিমল করের মুখেই আমি তা শুনেছি। তাঁর জন্ম দণ্ডীরহাটের অদূরে, টাকি রোডের ধারে শাঁখচুড়ো গ্রামে মামার বাড়িতে। তাঁর বাবা রেলে চাকরি করতেন, ফলে পশ্চিমেই তিনি বড় হয়েছেন, আসানসোল পেরিয়ে আরো দূরে...। বিমল করের লেখায় পশ্চিমের কথাই ছিল বেশি। নিষাদ গল্পের কথা মনে করুন। কিংবা খড়কুটো উপন্যাস, ভুবনেশ্বরী উপন্যাস...। এখন খুব ইচ্ছে করে দণ্ডীরহাট যেতে। ২০১০ সালে ইস্কুলের রিইউনিয়নে আমি গিয়েছিলাম। ছেলেবেলার কত বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। হ্যাঁ, আমি খেলাধুলোয় সকলের পিছনে, কিন্তু ইস্কুলের বার্ষিক খেলাধুলোয় ‘গো অ্যাজ ইউ লাইক’ প্রতিযোগিতায় প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম। রিইউনিয়নের সময় ছোটবেলার বন্ধুরা যখন এল ডাক নাম ডেকে, বাবুজি কেমন আছিস? তাকিয়ে মনে হয়েছিল সেই ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে, সকলে বৃদ্ধ ঠাকুরদা সেজে এসেছে। হায়রে জীবন।


    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ৫৫২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২৯ আগস্ট ২০২০ ১০:৩১96740
  • ১ 

    দেশ বিভাগের শেল  প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে বেড়ানো যেন এক অনিবার্য ক্ষত।  কতো লাখো কোটি জীবন  তছনছ হলো ধর্মের নামে,  জাতির নামে,  ঝরলো আরও কতো প্রাণ হিংসায়  অহেতুক অকাতরে। 

    তবু দেশ বিভাগের একটা সুফল এই যে, অনেক রক্তের বিনিময়ে "বাংলাদেশ" নামে নতুন স্বাধীন দেশ হলো! 

    ২ 

    শৈশব স্মৃতি বরাবরই মধুর,  তবে অমর মিত্রের মতো এমন ইতিহাসের ভেতর দিয়ে যাত্রা ক'জনেরই বা হয়! খুবই সুলিখিত জীবন পাঠ,  যেন সিনেমার স্লাইডের মতো একের পর এক ঘটনা পরম্পরা জাদু বাস্তবতা নিয়ে হাজির হচ্ছে। 

    ৩ 

    গুরুচণ্ডা৯ থেকে ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিক বই আকারে প্রকাশ হোক,  আগাম দাবি জানিয়ে গেলাম।  ব্রেভো!                                      

  • অলোক গোস্বামী | 103.242.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০২০ ১১:১৮96745
  • আহা। এক শৈশব অন্য শৈশবদের ডেকে নিচ্ছে।     

  • Paban | 42.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০২০ ১৩:২০96748
  • Asadharan ! Ato mone atche ?

    Monajaat sir...?

  • চকোরী | 2600:1700:2760:1110:84c3:3a1b:23b2:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২০ ১৮:১১96761
  • খুব ভালো লাগলো। 

  • সৌমিত্র | 2409:4060:396:1324:f9d5:4eb6:eb9a:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২০ ২২:২৪96768
  • ডিগা = ঠিক হ্যায়, অনেক পরে জেনেছি। ৭৯সি তে আমারও যায়াত ছিল।

  • প্রবুদ্ধ মিত্র | 42.***.*** | ২৯ আগস্ট ২০২০ ২৩:৫০96774
  • এ জীবন এমনই স্মৃতিমেদুর যে পাঠ শেষে অতৃপ্তি থেকে যায়। আমরা  প্রতি পর্বের অপেক্ষায় থাকবো। একটা গোটা জীবন দু মলাটে পাবার ভাবনা আমাদের এখন থেকেই।

    - প্রবুদ্ধ মিত্র 

  • অধ্যাপিকা ইরাবতী মণ্ডল। | 2409:4061:2c95:2340::7c8a:***:*** | ৩০ আগস্ট ২০২০ ১১:৪৪96780
  • আমার পরিচিত অনেক গুলো জায়গার নাম,পরিচিত জীবন চিত্র পেলাম।মনে হচ্ছে সবই আমার চেনা।খুব ভালো লাগলো।

  • | ৩১ আগস্ট ২০২০ ১১:০৮96804
  • পড়তে পড়তে আমারো অনেক কিছু মনে পড়ছে। কিন্তু ঝিলমিল মনে হয় আরো একটু পরের দিকে বেরোতে শুরু করে।

    'শোন শোন মজার কথা ভাই' এই গানটা 'বাদশা' সিনেমার। মানিক সিনেমার নয়। এই যে
  • | ৩১ আগস্ট ২০২০ ১১:১০96805
  • গানের লিংক

  • সৌমিত্র | 47.15.***.*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:১২97183
  • ধলতিথা, না ধলচিতা ?

  • অমর মিত্র | 2401:4900:3144:7947:64b1:9b99:d072:***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:৫৮97215
  • ধলতিথা বলে, ধলচিতেও বলে। বিভূতিভূষণে কী আছে, ধলতিথাই মনে হয়। 

    বাদশা ছবির গান। বই হওয়ার সময় সংশোধন করে নেব। ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

  • Kajari Roychowdhury | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৩৫97600
  • শৈশবের স্মৃতিকথায়  গন্ধ বর্ণ আর দৃশ্যের অপূর্ব মিশেল মনকে আলোড়িত করে তুলছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

  • Kausik Banerjee | ০৯ নভেম্বর ২০২০ ২২:০৮99820
  • খুব প্রাঞ্জল মর্মস্পর্শী বিবরণ। নিজের দেশকে তো ঠিক জানার সুযোগ ঘটলো না, অমর বাবুর এই লেখা কিছুটা পরিচয় ঘটালো।আমাদের  আন্দামান ভ্রমণের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ও  মিিল পেলাম।

  • santosh banerjee | ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৪২100131
  • ভালো লাগলো , স্যার ! একটি  সংশোধনী ..."" শোন শোন শোন মজার কথা """ গানটি "মানিক " ছবির নয় ওটা "বাদশা " ছবির গান !!আর  মানিক ছবির ওই ছেলেটির ভূমিকায় অভিনয় করেছিল তৃণাঞ্জন মিত্র !!ধন্যবাদ !!

  • Saumya Chakrabarti | ০৭ মার্চ ২০২১ ২২:৪৬103231
  • পেন্সিলে লেখা জীবন খুব ভাল লাগছে। দ্বিতীয় পর্বে লেখক রানু মুখার্জির যে গান টির কথা লিখেছেন সেটি মানিক নয়, বাদশা ছবির গান। তবে মানিক ছবিটিও খুব সুন্দর ছিল।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন