১৯৮২-র , নভেম্বরে সমীর চট্টোপাধ্যায়, ললিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিয়েতে রাধানাথ মণ্ডলের সঙ্গে পরিচয় হলো। ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত সুদর্শন যুবক। মেদিনীপুরের অখ্যাত গ্রাম বিষ্ণুদাসপুর থেকে কলকাতায় ভাগ্যান্বেষণে এসেছিল। গল্প লেখে, বাংলাভাষায় এম এ। রাধানাথ অত্যন্ত গুণী লেখক ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তাঁর ‘আটঘরার মহিম হালদার’ নামে যে গল্পগ্রন্থটি বের হয়, তা অসামান্য কয়েকটি গল্পের সংকলন। বইটি এত বছর বাদে আবার প্রকাশিত হয়েছে সৃষ্টিসুখ প্রকাশন সংস্থা থেকে। রাধানাথ ১৯৯৪ সালে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।
কয়েক মাস পরে ১৯৮৩ সালে আমার জন্ডিস হয়। সে প্রায় ছ’মাস ভুগেছি। দিন কুড়ি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। খুব রোগা এবং দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। হাঁটতে পারতাম না। এইটা হয়েছিল দীঘায় থাকাকালীন হোটেলে দীর্ঘ এক বছর খাওয়ার জন্য। পোড়া তেলে রান্না, সে কি আমার পেটে সয় ? তুষার চৌধুরী মন্তব্য করেছিল, মদ খেলাম আমরা, আর লিভার খারাপ হলো তোর। হাসপাতালে আমাকে দেখতে গিয়েছিল বন্ধুরা। শৈবালদা গিয়েছিলেন ফুল নিয়ে। মহাশ্বেতাদি গিয়েছিলেন বগলে ছাতা নিয়ে, সঙ্গে একটি বই। আমি হাসপাতালে থাকাকালীন দেশ পত্রিকায় দ্বিতীয় গল্প ‘হারাধন’ বের হয় চার মাসের ভিতর। দেশ পত্রিকায় লেখার পর আনন্দবাজার রবিবাসরীয়তে রমাপদ চৌধুরী আমাকে লিখতে বলেন। সেই গল্প বেরিয়েছিল খুব সম্ভত ১৯৮২-র ডিসেম্বরে। আমার জীবনে যে শ্রেষ্ঠ লেখকদের আমি সম্পাদক হিশেবে পেয়েছি, তাঁরা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, রমাপদ চৌধুরী, বিমল কর এবং দেবেশ রায় ও দিব্যেন্দু পালিত। দেবেশ রায় প্রতিক্ষণের সম্পাদক ছিলেন না, ছিলেন স্বপ্না দেব। স্বপ্না দেবও আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পাদকের মধ্যে একজন। এই সম্পাদকরা সকলে লেখার গুণাগুণ বিচার করতেন। লেখা খারাপ হলে বকতেন, লেখা ভালো হলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন। লেখা কত বিক্রি হবে সেই হিশেব করতেন না। অন্য সম্পাদক পছন্দ করেও করেননি, তাতে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। সকল সম্পাদকের নিজস্ব কিছু পছন্দ আছে। তাঁরা তাঁদের পছন্দের লেখকের লেখা ছাপবেন, তাতে বলার কিছু নেই। রমাপদ চৌধুরী আমাকে বলেছিলেন, ‘যাঁরা লেখা চাইবেন তাঁদের লেখা দেবেন। বড় প্রতিষ্ঠান যা আশা করে তেমন লেখেন না আপনি। কিন্তু আপনার লেখার জোর আছে। আপনি পারবেন।’ তিনি আপনিই বলতেন আমাকে। ১৯৮৫ সালের ৬-ই মে আমার প্রথম সন্তান গুড়িয়া, চকোরির জন্ম হয়। ৬-ই মে রাত ১২-৩০ নাগাদ ওর জন্ম। আর জি কর হাসপাতালে। আমি ও আমার প্রতিবেশি বন্ধু অমরেশ রাত জেগে বসেছিলাম বন্ধ ওয়ার্ডের বাইরে সিঁড়িতে। তখন দূরে কোথায় বাজি পুড়ছিল। আকাশ আলোয় ভরে যাচ্ছিল। আসলে সেদিন ছিল ইসলাম ধর্মের সবে বরাত। সবে বরাতের রাতে নাকি ঈশ্বর নেমে এসে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। আমরা রাত তিনটে নাগাদ সেই শিশু কন্যার মুখ দেখেছিলাম। সিস্টার নিয়ে এসে বন্ধ কোলাপসিবল গেটের ভিতর থেকে দেখিয়েছিলেন। তখন সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা হত। এখনো সরকারি হাসপাতালেই মানুষের জন্ম হয়, চিকিৎসা হয়। কিন্তু নানা প্রচার মাধ্যম তার বিরুদ্ধে কথা বলে বলে, বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ধাবিত করছে মানুষকে। ১৯৮৬ সালের নভেম্বরে আমার সামান্য পদোন্নতি হয় । ডিসেম্বরে চলে যাই বাঁকুড়ার শালতোড়ায়। বাঁকুড়ার উত্তরপশ্চিমে শালতোড়া পুরুলিয়া জেলার সীমানা। জীবনের শ্রেষ্ঠ এক পর্ব আরম্ভ হয় সেখানে। জলই হয়ে উঠল আমার লেখার বিষয়। ‘জলের দাম’ বলে যে শব্দবন্ধ আছে আমাদের ভাষায়, তার যে অর্থ জানতাম, বাঁকুড়া গিয়ে দেখলাম তার অর্থ অন্য। জল সেখানে অতি মহার্ঘ, গ্রীষ্মে দুর্মূল্য। পরে আমেরিকায় গিয়ে দেখেছি জলের দামের চেয়ে মদ্যের দাম কম। বাঁকুড়ায় গ্রীষ্ম অতি ভয়ানক। মেদিনীপুরের পশ্চিমাঞ্চলেও তাই ছিল। কিন্তু এত প্রকট দেখিনি তা কাছে সুবর্ণরেখা এবং ডুলং দুই নদী থাকায়। জলের টানাটানি হয়, কিন্তু টিউবওয়েল অচল হয় না। এই প্রথম দেখলাম জলের অভাবে মানুষ গঞ্জ ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যাচ্ছে। শালতোড়ায় আমি একাই গিয়েছিলাম। আমার দেড় বছরে শিশু কন্যা ও তার মা রইল কলকাতায় আমার মা বাবার কাছে। শালতোড়ায় বাঁকুড়ার সব চেয়ে বড় পাহাড় বিহারীনাথ। শালতোড়ার তিলুড়ি গ্রাম পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম গ্রামগুলির ভিতরে একটি। শালতোড়া এক টিলার উপরে অপূর্ব এক গঞ্জ ছিল তখন। দুর্গাপুর থেকে ঘন্টা দুই-আড়াই লাগত বাসে। আবার রানিগঞ্জে নেমে বল্লভপুর ঘাটে দামোদর নদ পার হয়ে মেজিয়া হয়ে যাওয়া যেত। মেজিয়া থেকে খুব বেশি দূর নয়। শালতোড়ায় গিয়েছিলাম আবার ২০০৯ সালে। নেতাজি কলেজে সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর বলতে আহুত হয়েছিলাম। বলব কী, মঞ্চে উঠে অশ্রুপাত করতে লাগলাম আমার ন’পাহাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে বলে। বাতাসে সিলিকা ভাসছে। পাহাড় ভেঙে পাথর যাচ্ছে নগর সাজাতে। স্পঞ্জ আয়রন ফ্যাক্টরির ধোঁয়ায় গাছের পাতা কালো। ও আমার ন’পাহাড়ি, সুন্দরী প্রিয়তমা, এত তাড়াতাড়ি তুই বুড়ি হয়ে গেলি!
একটু পিছিয়ে যাই। শৈশব ছাড়ে না, সুতরাং তাঁর কথা না বললেই নয়। লাবণ্যপ্রভা আমার বউদির দিদিমা । তিনি ছিলেন সাগরদাড়ির কন্যা। মাইকেল মদুসূদন দত্ত ছিলেন তাঁর সম্পর্কিত দাদু। মানকুমারী বসু তাঁর পিসিমা। বউদির বাবা আমার বাবার বাল্যবন্ধু। সেই সূত্রে তাঁর শ্মশ্রুমাতার বেলগাছিয়ায় আসা ছিল নিয়মিত। জামাইয়ের বন্ধু তো। আর পূর্ববঙ্গের শিকড়ও ছিল। অদ্ভুত তিনি। ওপার থেকে তেমন কিছুই আনতে পারেননি। অল্প বয়সে বিধবা। থাকতেন বসিরহাটে। তাঁর পুত্রটি তহসিলদার। খাজনা আদায় করেন। তখন এই বৃত্তি ছিল খুবই কষ্টের। তহসিলদার অন্য রাজ্যে তহসিলের শাসনকর্তা, এই রাজ্যে ছিল খাজনা আদায়ের কমিশিন এজেন্ট। যত আদায় তত আয়। যেতেন আবাদ অঞ্চলে। আবাদ অঞ্চল মানে সুন্দরবন এলাকা। মাসিক বেতন ছিল না। তো তিনি আবার ছিলেন আলাভোলা মানুষ। মুখখানি মনে পড়লে এখন মায়া জন্মায়। দারিদ্র ছিল তাঁর খুব। তাঁর মা, আমার বউদির দিদিমা কী করতেন, না বগলে একটা শায়া সেমিজ, থান কাপড়ের পুটলি নিয়ে বসিরহাট থেকে বেলগাছিয়ায় আমাদের বাসায়। যাবেন দিল্লি। দিল্লিতে তাঁর মেয়ে কমলা থাকে। আপার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন ছিল সেই আমলে। শিয়ালদা থেকে ছাড়ত। আড়াই দিন লাগতই দিল্লি। তিনি একা একা দিল্লি যেতেন। তাঁর কাছে আমি শুনতাম কবি মধুসূদনের কথা। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, কতটা লেখা পড়া করেছিলেন তিনি, জানি না, কিন্তু মেঘনাদ বধ কাব্যের সর্গের পর সর্গ বলে যেতেন স্মৃতি থেকে। তিনিই আমার ‘দশমী দিবসে’ উপন্যাসের মূল চরিত্র বীরাঙ্গনা। কী সাহসী নারী তিনি। একা একা হিল্লি দিল্লি করে বেড়াতেন। আমি তখন ক্লাস নাইন কি এইট হব। তারও কম হতে পারে। বসিরহাট থেকে লাবন্যপ্রভার মৃত্যু সংবাদ এল। আমি বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে খেলতে যাচ্ছি। বউদি আসছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রাস্তায় দেখা। আমি ছুটে গিয়ে অবোধের মতো বললাম, দিদিমা মারা গেছে, বসিরহাট থেকে খবর এসেছে। বউদির হাতের ব্যাগ পড়ে গেল। ব্যাগ থেকে বই ছড়িয়ে গেল ফুটপাথে। বউদির চোখ দিয়ে জল পড়ছে। বাড়িতে ফিরছেন। আমি নির্বোধ, রাস্তায় এমনি কেউ বলে? পাড়ার এক বয়স্ক গার্জেন আমাকে বকাবকি করলেন। আসলে মৃত্যু সংবাদ সংবাদই। নিজের সামনে না ঘটলে তেমন কিছু প্রতিক্রিয়া হয় না। নারসিং হোমে বাবার মৃত্যু আমি দেখেছি পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে। সঙ্গে আমার খুড়তুতো ভাই পবন। নিরঞ্জন। ২০০২ সালের ১৬/১৭-ই সেপ্টেম্বর। দেখলাম ধীরে ধীরে কম্পিউটারের মনিটরে গ্রাফ সরল রেখা হয়ে গেল। হৃদস্পন্দন থেমে গেল। এই দেখলাম আর দেখেছিলাম পিতামহর মৃত্যু, সে কথা তো লিখেইছি আগে। মায়ের মৃত্যু দেখিনি। জরুরি সংবাদ পেয়ে অনেক রাতে গিয়ে দেখলাম মা রাধারানি ঘুমিয়ে আছেন। আমার মেজদা উদয়ন মায়ের গা জড়িয়ে শুয়ে আছে। মা চলে গেছেন। আমার পাপ, আমি মায়ের ডাকে সল্টলেক যেতে পারতাম না নিয়মিত। ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগে আছি তখন, প্রায়ই তদন্তে যেতে হয় জমিহারা মানুষের গ্রামে। ফিরতে রাত হয়। কিন্তু এসব অজুহাত। বেলগাছিয়া থেকে কি প্রতি সপ্তাহে যাওয়া যেত না কি ? রবিবার সাহিত্যের আড্ডায় না গেলে হতো না কি ? ল্যান্ড লাইন ফোনে কথা হত। ভালো হাঁটতে পারে না মা। ধরে ধরে ফোনের কাছে নিয়ে আসে কেউ। অপরাধী আমি। শেষদিন মা আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। নাতি নাতনিকে দেখতে চেয়েছিলেন।
১৯৮৬ সালে খুব বিজ্ঞাপিত হয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় উপন্যাস লিখেছিলাম। ভি আই পি রোড। মাঝখানে পাঁচ বছর বাদ গেছে। লিখিনি উপন্যাস কেন, তা জানি না। হয়ত সাড়া পাচ্ছিলাম না ভিতরে। নগরে এসে গেছি। কী লিখব তা হাতড়াচ্ছি। অথচ নগরে তো নয়, গ্রামেই তো যাই সেন্ট্রালাইজড সেটেলমেন্ট হল্কা ক্যাম্পের অধিকর্তা। বাস থেকে নেমেই অফিস তখন গোলাবাড়ি। দেগঙ্গা হয়ে রাজারহাট কেন্দ্রায়িত ক্যাম্প অফিসে। তখন ভি আই পি রোড হয়েছে। তার দু’পাশের জনপদ বদলে যাচ্ছে। রাস্তার দু’পারের গ্রাম শহর হয়ে উঠছে। বিল জমি, ধান জমিতে মাটি ফেলে প্লটিং করে বিক্রি হচ্ছে। দালালিতে খুব টাকা। ফোকটের পয়সায় বড়লোক হয়েছে অনেক মানুষ। ধানজমি বেচে বড়লোক হয়েছে কত মানুষ। রাস্তার দু’পাশের জমি তখন সোনা। আমার সার্ভিসের এক ব্যক্তি, নাম বলে লাভ নেই, প্রচুর উপরি নিতেন। একদিন দেখি অফিসের পাশের সবচেয়ে সুন্দর জমি মাপছে সেই ব্যক্তি। দালালের সঙ্গে লেগেছে খুব। কুৎসিত ভাষা দুজনেই বিনিময় করছে। এই নিয়েই ‘ভি আই পি রোড’ উপন্যাস লিখলাম। জমির দালাল, প্রমোটারের জন্ম, অপরিকল্পিত নগরায়ন। আবার শালতোড়ায় ফিরি। সন ১৯৮৬-র নভেম্বর। সেই সময় আমার কন্যার বয়স দেড়, আমাকে যেতে হলো সেই দূর উত্তর-পশ্চিম বাঁকুড়ার পুরুলিয়া সীমান্তে । ঝটকা লাগল যেন। শালতোড়া এক পাহাড়ি গঞ্জ। দুর্গাপুর থেকে ঘন্টা দুই-আড়াই লাগে। আমি একাই গেলাম। ওরা থাকল কলকাতায়। পনের দিন অন্তর আমি কলকাতা ফিরি সেই পাহাড়ি গঞ্জ থেকে। সেখানে মেস করে থাকতাম। আমার অফিস ঘরের জানালা দিয়ে বিহারীনাথ পাহাড় দেখা যায়। মেসবাড়ির বারান্দায় বসেও তাই। মাটির ঢেউ, চড়াই উৎরাই। ডিসেম্বরের শীতে গিয়েছিলাম। খুব শীত। তিন মাস বাদে শীত চলে যেতে থাকে। রাতে ঠাণ্ডা, দিনে পাথর গরম। একদিন বিহারীনাথ পাহাড় থেকে অজগর ধরে নিয়ে এল এক সাপুড়ে। শিশু অজগর, তাও কম নয় সে। আমাকে দেখিয়ে গেল। বাউরিদের ঘন বসতি সেখানে। আমার সঙ্গে ঘোরে একটি বাউরি যুবক, রতন ( নাম পরিবর্তিত )। অফিসের ব্রাহ্মণ কেরানিবাবু বললেন, জল অচল ওরা, ওদের হাতের জলও তিনি খান না, অথচ আমি কিনা তাকে নিয়ে ঘুরি। মেসে ডেকে চা টিফিন খাওয়াই। এটা ঠিক না। হ্যাঁ, পরে শ্রাবণ সংক্রান্তিতে, মনসা পুজোয় আমি তার বাড়িতে নেমতন্নে গিয়েছিলাম। মাংস ভাত, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, চাটনি, দই মিষ্টি। ভুরিভোজ। আমার অফিসের অধঃস্তন সেই ব্রাহ্মণ বাবুটি আমাকে যাচ্ছেতাই করে তিরস্কার করেছিল। শালতোড়া বসবাস আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। একেই বলে ঈশ্বরের হাত। প্রমোশন পোস্টিঙে সব বন্ধুরা কলকাতার কাছেই থাকল। কেউ হাওড়া, কেউ ২৪ পরগণা, কেউ হুগলি, খুব বেশি হলে বর্ধমানের মেমারি। আমাকে পাঠাল শালতোড়া। যে কেরানিবাবুরা এই সব পোস্টিঙ তালিকা করতেন, তাঁদের চিনতে হত, বা ইউনিয়নের স্নেহভাজন হতে হতো। যাই হোক শালতোড়া যাওয়া ছিল আমার সেই ভবিতব্য যা আমি নিজেই নির্মাণ করেছিলাম। সেখানে বিচিত্র মানুষ, বিচিত্র জীবনের মুখোমুখি হলাম। শীত চলে যেতে আর ক’দিন। গ্রীষ্ম এসে গেল। গ্রীষ্মকাল ভয়ানক কাল, কুয়োর জল ধীরে ধীরে নামতে নামতে একেবারে তলানীতে। টিলার উপরের যে বাজার সেখানকার হোটেল বন্ধ হয়ে গেল জলের অভাবে। আমাদের মেস ছিল উৎরাইয়ে। বলা যায় পাহাড়তলীতে। উল্টোদিকে স্থানীয় বিধানচন্দ্র বিদ্যায়তনের হেড মাস্টার মশায় থাকেন ভাগ্নে ভাগ্নী নিয়ে। তাঁর বাড়ির কুয়ো আমাদের ভরসা ছিল ঘোর গ্রীষ্মে। ভাদ্রমাসে চাষীরা পাগল হয়ে জলের জন্য ছুটোছুটি করে। রোয়া ধান মরছে। জল চাই জল। শালতোড়ায় বিধানচন্দ্র রায় ১৯৬২-র নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। জেতার কয়েকমাস বাদে তাঁর মৃত্যু হয় জন্মদিন ১৯৬২-তে। মানুষ বলত যদি বিধানচন্দ্র বেঁচে থাকতেন তাদের এলাকার উন্নতি হতো। একটি বড় কুয়ো, যার নাম বিধান কুয়ো ব্যতীত সেই ১৯৮৬-৮৭- অবধি উন্নয়ন কিছুই হয়নি। স্বাধীনতার ৪০ বছর বাদেও জলের ব্যবস্থা ছিল না সেখানে। বিধান কুয়োর জল ফুরোত শীতের শেষ থেকে। বালি উঠতে আরম্ভ করত চৈত্রের আরম্ভ থেকেই। আমি সেখানে গিয়ে অনাবৃষ্টি আর জল চিনলাম। চিনলাম মাঘের শেষে বৃষ্টি হলে খনার বচন ( যদি বর্ষে মাঘের শেষ / ধন্য রাজা পুণ্য দেশ ) সত্য হয় কেন ? কুয়ো একটু ভরে যায় আর জমি নরম হয়। লাঙল ফেলা যায়। নতুন করে প্রকৃতি চিনতে শিখলাম। দেখলাম অঘ্রানে ধানকাটার পর বাস বোঝাই হয়ে মানুষ চলেছে নিম্নভূমি, নামালে ধান কাটতে। দেখতাম শ্রাবণের আগেই মানুষ চলেছে চাষের কাজ করতে নামালে, বর্ধমান, হুগলির দিকে। এই তাদের উপার্জনের উপায়। উৎসব হলো চাষবাস। আমি ধ্রুবপুত্র উপন্যাস লিখতে পারতাম না যদি না শালতোড়া, বেলিয়াতোড় যেতাম। যদি না সূর্যের প্রবল পরাক্রম দেখতে পেতাম। অনাবৃষ্টি, জল এরপর থেকে আমার লেখার প্রধান বিষয় হয়ে আসে। শালতোড়ায় নানা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বাঁকুড়া জেলা এমনিতেই এক ফসলী, মানুষ সরল এবং উদার। ব্যতিক্রম কি ছিল না ? সবই ছিল। রতন বাউরি এইচ এস পাস। বি এ পড়তে পারেনি। শালতোড়ায় বিশাল এক বাউরি পাড়া। সেখানে আমি যেতাম। ভয়াবহ দারিদ্র। মানুষের কাজ বলতে পাহাড়ে গিয়ে পাথর ভাঙা। পাহাড় ডিনামাইট দিয়ে ফাটানো হত। তারপর মানুষ সারাদিন রোদের ভিতরে বসে পাথর ভাঙত। রতন তা পারত না। সে চায় চাকরি। আমি কলকাতার লোক। অফিসার। আমি তাকে স্নেহ করি। আমিই পারব তাকে চাকরি করে দিতে। শালতোড়ায় ভিডিও হল। টেলিভিশন সেটে ভিডিও ক্যাসেট লাগিয়ে সিনেমা দেখান হয় টিকিট বিক্রি করে। সেই ভিডিও হল রীতিমতো সিনেমা হলের মতো চলে। রঙিন টিভিতে সিনেমা বড় আকর্ষণ। বাবা তারকনাথ দু’মাস টানা চলেছিল। আমিও দেখেছি মিঃ ইন্ডিয়া, অমর প্রেম ইত্যাদি। ফকির আমার সঙ্গী। সে বলত তারা ক্ষেত্রপাল। সেই ক্ষেত্রপাল যুবক ধরেই নিয়েছিল আমি তাকে কলকাতায় নিয়ে যাব। চাকরি দেব। সে কলকাতায় থাকবে। বড় পর্দায় সিনেমা দেখবে। কিন্তু আমার কি ক্ষমতা? তাকে কেউ বুদ্ধি দিয়েছিল যে আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে সবই সম্ভব। কীভাবে সন্তুষ্ট করবে ? না, যেভাবে ঐ দূর গঞ্জে বহিরাগত সরকারি অফিসারদের সন্তুষ্ট করতে হয়। নেমতন্ন হয়ে যাওয়ার কদিন বাদে একদিন আমাদের মেসে সন্ধ্যায় মুর্গি রান্না হবে। মেসে তিনজন থাকতেন। ভবপুলক মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ে বাড়ি। সে কানুনগো, আমি তার উপরে চাকরি করি, সার্কেল অফিসার। আব্দুল হাসিদ, বীরভূমে বাড়ি, জমি ভেস্টিঙের কাজ করতেন। সন্ধ্যায় রাস্তায় হাঁটছি। ভাদ্র মাস। বৃষ্টি নেই। আকাশ ভর্তি তারা। রতন আমাকে বলল, এমন কথা বলল, এমন প্রস্তাব দিল, যা শুনে মাথা ঘুরে গেল। নারী দেবে আমাকে। সেই নারী ওর নিকটজন। আমার নিশ্চয় পছন্দ হবে। আসানসোল কিংবা বার্নপুরে হোটেলে রুম বুক করে দেবে। নিরাপদে সব হবে। শালতোড়ায় এমনি হয়। কলকাতার স্যাররা এতেই খুশি হন তা সে জানে। হায়রে যুবক। আমার হাতে চড় খেয়ে সে ফিরে গেল। আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম। ঘুষের প্রস্তাব পেয়েছি আগে বেশ কয়েকবার, কিন্তু এমন প্রস্তাব পাইনি আগে। এরপরের ঘটনা আরো ভয়ানক এবং হৃদয় বিদারক। আব্দুল হাসিদ এবং ভবপুলক বাড়ি গেছে। ওরা ফিরলে পরের সপ্তাহে আমি বাড়ি যাব। এমনিই ব্যবস্থা ছিল। এক সঙ্গে সকলে ষ্টেশন লিভ করতাম না। আমি সন্ধ্যায় লিখছি। রতন হাজির। এতদিন সে আসেনি। জিজ্ঞেস করল, চা করবে কি না। চা করল সে জনতা স্টোভ জ্বালিয়ে। চা খেয়ে বসে থাকল। বসেই থাকল। আমার লেখা থেমে গেল। বললাম, পরদিন সকালে আসতে।
সে বলল, আমার সঙ্গে থাকবে কি না রাতে ?
না বললাম। ভবপুলক আমাকে বলে গিয়েছিল রতনকে ঘরে নিয়ে না শুতে। একবার যখন নারীর কথা বলেছে, রাতে কাউকে এনে ঘরে ঢুকিয়ে দিতে পারে আমাকে সন্তুষ্ট করতে। যাই হোক আমার কথা শুনে সে বেরিয়ে যায় ঘরের কোন থেকে দড়ি বালতি নিয়ে। আমি কিছু বলিনি। জল তুলবে হয়ত আমার জন্য। ্কাজ করে সন্তুষ্ট করবে। আগের দিনের কথা আমি তুলিনি। এরপর আর সাড়া পাই না। কী হলো তার। সিগারেট ধরিয়ে বাইরে আসতে দেখি উঠনের কুয়োতলায় কুয়োর পাড়ে সে বসে আছে। টর্চ জ্বলছে নিভছে। আমি ডাকলাম, ‘রতন কী করছ ?’ ঝুপ শব্দ হলো। সে কুয়োর ভিতরে ঝাঁপ দিয়েছে। আত্মহত্যা করতেই তো। আতঙ্কে আমি চিৎকার করতে লাগলাম, ছুটে এলেন হেড মাস্টার মশায়। পাশের পার্টি অফিস থেকে কয়েকজন। কী হয়েছে ? শুনে তাঁরা কুয়োতলায় চলে গেলেন। পাঁচ ব্যাটারির টর্চ জ্বেলে কুয়োর ভিতরে আলো ফেলে দেখি দু’হাত দুদিকে ছড়িয়ে রতন ভেসে আছে। সে সাঁতার জানে। ভেসে থাকতে জানে। সকলে ডাকতে লাগল উঠে আয়। এল না। তখন মোটর সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন সি পি আই এম পার্টির জোনাল সেক্রেটারি নাজিবুর রহমান। ভীড় দেখে তিনি চলে এসেছেন। ইতিমধ্যে খবর ছড়িয়ে গেছে। বাউরি পাড়ার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ছুটে এসেছে। যদি খারাপ কিছু হয়, আমাকে তারা ছাড়বে না। নাজিবুর রহমান সব শুনে কুয়োতলায় গিয়ে গর্জন করে উঠলেন, উঠে আয়, না হলে থানায় খবর দেব। নাজিবুর রহমান দাপুটে মানুষ ছিলেন। তাঁকে এলাকার সকলে ভয়ই করত। আমার সঙ্গে আলাপ ছিল না।কিন্তু পার্টি প্রধান হিসেবে সব খবর রাখতেন। রতন উঠে এল ভয়েই। তাকে নাজিবর সায়েব বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন তিনি। ভীড় সরে গেল। তিনি বললেন, আমি খুব বেঁচে গিয়েছি, ওর যদি কিছু হত, আমার ভয়ানক বিপদ হত। বাউরি পল্লীকে সামলানো দায় হত। আমার ঘরে বসলেন। বললেন আমার সব পরিচয় উনি জানেন। হেডমাস্টার মশায়ের কাছে আরো সব শুনে বললেন, সাবধানে মিশতে।
ঘটনা এখানে শেষ নয়। আসলে রতন ক্ষেত্রপাল কলকাতায় যাবে বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠেছিল। মনসা পুজোর সময় নতুন শার্ট প্যান্ট তৈরি করেছিল। এই শার্ট প্যান্টের টাকা এসেছিল বিডিও অফিস থেকে পাওয়া মা বাবার বার্ধক্য ভাতা বা অমন কোনো ভাতা থেকে। আগের বছর পুজোয় আমরা মেসের তিনজন ওকে একটি শার্ট দিয়েছিলাম। সেইটা ওর গায়ের ছাল হয়েছিল। এরপর ও আর ক'দিন আসে না। মেসের অন্য দুজন ফিরে এল। তারা সবশুনে চুপ করে থাকল। একজন বলল, আমি যেন বদলির চেষ্টা করি। ঘটনা ভয়ানক দিতে যেতে পারত। রবিলোচন মুখোপাধ্যায়, ইস্কুলের ইংরেজির স্যার, বয়স্ক মানুষ, সাহিত্য ভালোবাসতেন, আমাকে বললেন, দোষ আপনার সহকর্মীদের। মেসের দুজনের। তারাই ঠাট্টার ছলে বলেছিল, অমরবাবুই পারবেন কলকাতায় চাকরি করে দিতে। তাঁর অনেক ক্ষমতা। খবরের কাগজে লেখেন। তুমি শুধু অমরবাবুকে সন্তুষ্ট কর। কীভাবে করবে তা তুমিই ঠিক করবে। এই কথা রবিবাবুর সামনে হয়েছিল। কথা যে এত গভীর হয়ে প্রবেশ করবে রতনের ভিতর তা রবিবাবুও বোঝেননি। রতন আসছে না। আমি শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলাম। দেখলাম সে বসে আছে। মা হেসে বললেন, তোর রতন এসেছে গতকাল। রতনের কথা বাড়িতে জানত সকলে। সে পরিচয় দেওয়ায়, শালতোড়ার কথা বলেছে। বলেছে স্যার অমরদা বলেছেন আসতে। ঠিকানা সে আগেই নিয়েছিল। তার কলকাতায় থাকার জায়গা নেই। অমরদা বলেছেন আসতে। দাদাও আসতেন। কাজ পড়ে যাওয়ায় আগামীকাল আসবেন। ইতস্তত করেও তাকে ফ্ল্যাটে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিল মা বাবা, আমার স্ত্রী মিতালি। সকলে ওর নাম শুনেছে, চোখে দ্যাখেনি। কিন্তু মায়া হয়েছিল মুখখানি দেখে। আমি সব বললে সকলেই ভয় পেয়ে গেল। বললাম, তুমি ফিরে যাও রতন। চাকরির খোঁজ হলে তোমাকে আমি নিয়ে আসব। ভয় হয়েছিল ওর চোখ দেখে। বিশ্বাস করেনি আমার কথা। ভয় হয়েছিল যদি আমার বাড়িতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সারারাত জেগেছিলাম। পরদিন সকালে শ্যামবাজার থেকে শালতোড়ার বাসে তুলে দিলাম। কন্ডাকটরকে ভাড়া দিয়ে বলে দিলাম শালতোড়ার আগে যেন ওকে নামতে না দিই। রতনের হাতে কিছু টাকা দিলাম পথে খিদে পেলে খেয়ে নিতে। এরপর আর তার সঙ্গে দেখা হয়নি। আমি এক মাস বাদে চলে আসি শালতোড়া থেকে। পালিয়ে এসেছিলাম মনে হয়। হায়রে যুবক। তুমি এত বিশ্বাস করেছিলে কেন? নগর খেয়েছে গ্রামের সব। পাহাড়, অরণ্য শেষ করে দিয়েছে নগর। নগরকে তুষ্ট করেই যেন গ্রামের বাঁচা। আমার ‘নয় পাহাড়ের উপাখ্যান’ উপন্যাসে সে আছে। গত ২০১০ সালে শালতোড়া নেতাজি কলেজে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর সেমিনারে বলতে। সঙ্গে ছিলেন সৈকত রক্ষিত। কলেজটি হয়েছে সেই শালতোড়া প্রবেশ পথে নিতাইরণি পাহাড়ের উপর। গিয়ে দেখি কতজন এসেছেন। কত চেনা মানুষ। রবিবাবু পুরুলিয়ার লোক ছিলেন। রিটায়ার করে তিনি মারা গেছেন। আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে কী বলব, তাঁরা বললেন, আপনার যা মনে হয় বলুন। ২২ বছর বাদে এলেন। আবেগে আমার চোখে জল। নাজিবর রহমান এসেছিলেন, মঞ্চ থেকে নামতে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, বহুদিন হলো রতন রাঁচি চলে গেছে কাজের খোঁজে। আর ফেরেনি। শালতোড়া না গেলে আমি ধ্রুবপুত্র লিখতে পারতাম না। ওই খরা এসেছে ধ্রুবপুত্র উপন্যাসে। গত বছর লেখা ‘ও আমার পছন্দপুর’ উপন্যাসেও শালতোড়া আছে ন’পাহাড়ি হয়ে। অনাবৃষ্টি আমি শালতোড়া এবং বেলিয়াতোড় এ দেখেছিলাম। শালতোড়া থেকে বেলিয়াতোড় এসেছিলাম বদলি হয়ে ১৯৮৮ সালের আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে।
মন চলেছে ছুটে, আপনার লেখার সাথে সাথে।
আত্মজীবনী খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। বাংলাসাহিত্যে যে আত্মজীবনীগুলো স্থায়ী আসন পেয়েছে তার মধ্যে এটিকে দেখতে পাচ্ছি যেন। আরো লিখছেন অনীতা অগ্নিহোত্রী, যশোধরা রায়চৌধুরী। আত্মজীবনীর এই আনন্দযজ্ঞে নিমন্ত্রণ পেয়ে আমি ধন্য।
অসাধারন।থামবেন না।
মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়তে পড়তে এক অন্য জগতে যেন চলে যাই যে জগত আমাদের অচেনা অজানা |
উপন্যাসের চেয়েও টানটান। ভালোবাসার মানুষগুলিকে যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। শুধু মানুষ নয়, হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতিও।
জীবন মাত্রেই ইতিহাস । চরিত্র, গল্প ।পথে পথে । অথচ ট্র্যাজেডি এটাই, যখন তারা চিটিয়ে থাকে গায়ে গায়ে, আমল দিই না । পরে অনেক পরে নির্বাসিত জীবনে তারা নেমে আসে । তখন তাদের চিনতে পারি । জীবনের ধন । সকলে পারে না, অমর মিত্রদের মতো তাদের নিয়ে ' নয় পাহাড়ের উপাখ্যান ' লিখতে । ধ্রুবপুত্ররা আসে । চলে যায় । রতনের মতো । সাধারণে তাদের চিনতে পারে না । অমর মিত্রদের কলম তাদের জায়গা করে দেন ইতিহাসে । কল্যাণীর কিশোর সেনগুপ্তেরা সেই সব ইতিহাস জীবন্ত করে তোলেন মঞ্চে ।
অসাধারণ লেখা। বরাবরের মতো অদ্ভুত মনকেমন লেগে আছে এ লেখার গায়ে। যেন পৃথিবীতে এখনো অনেক ভালো জেগে আছে, এমন অনুভূতি হয়। পেন্সিলের লেখার তো দারুণ মায়াময় একটা ব্যাপার থাকে, এ লেখাও তেমন।
অনেকেই জীবন দেখেন , লিখতে পারেন কয়জনা। এমন জীবন তার সঙ্গে কল্পনার মিশেল মাপ মতো দিয়ে লিখতে পেরেছেন বলেই অমর মিত্র আজ একজন সম্মানিত লেখক। প্রতিটি পর্বই মন দিয়ে পড়ছি। পরের পর্বের জন্য আগ্রহ বাড়ছে তাতে ক্রমশ। অনেক কিছুই আমার জানা বা শোনা ইতিপূর্বেই কিন্তু লেখায় ধরা পড়ার পর তা পড়লে অভিজ্ঞতাই আলাদা । পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
এ কোন দেশ আমার? এত কষ্ট মানুষের? তবে উন্নয়ন মানে কি ? এখনো দেখি ঘর ভেসে যাচ্ছে বন্যায় বছরের পর বছর। ভেসে যাওয়া মানুষ কে ত্রাণ দেওয়া হয়। বাঁধ নির্মাণ হয় না। আরো কত কি!
লেখার গতিতে কালের আগুপিছু ছুটে বেড়ানো আমাকে মুগ্ধ করছে। দশমী দিবসে আপনি অনন্য।আমার মনে হয়েছে আপনি নিজে বহুবার নিজের ঐ লেখা পাঠ করেছেন ও বাস করেছেন।তাই লেখার মধ্যে আপনার যাপন ও দর্শন স্পষ্ট। এটা আমার বন্ধু ক'জনের ও মনে হয়েছে। একজন আপনার উপ ন্যাসের রেেেেেফারন্স দিয়ে উপন্যআস লিখে পড়াল। আপনি যেমন প্রক্কৃতি, সে মানব অথবা পারিপার্শ্বিক আপনাকে ঘাড়ে ধরে লেখায় তার কথা আরেকটু বেশি জানতে ইচ্ছে করছে।