এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  সীমানা ছাড়িয়ে

  • অস্বস্তিকর ভাবে উদ্ধত ও বিতর্ক-কণ্টকিত এক তুখোড় সাহিত্যিক

    পার্থপ্রতিম মণ্ডল
    পড়াবই | সীমানা ছাড়িয়ে | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪২৩৬ বার পঠিত
  • মিশেল উয়েলবেকইসলামোফোবিয়া থেকে পর্নোগ্রাফি, পুরুষতান্ত্রিকতা—বারংবার উঠেছে নানা অভিযোগ। তবু তিনি এ মুহূর্তের ফরাসি সাহিত্যের উজ্জ্বলতম তারকাদের একজন। ছত্রিশটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্য। মার্সেল প্রুস্ত বা অন্দ্রে জিদ-এর সাহিত্যশৈলীর পরম্পরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তিনি। গতবছরই দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিজিয়ঁ দ’নর’ প্রাপ্ত এই লেখকের ‘প্লাতফর্ম’ উপন্যাসে উঠে আসে ইউরোপীয় সমাজের অন্তঃসারশূন্যতার হাড়-হিম-করা ছবিও। পড়লেন ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক পার্থপ্রতিম মণ্ডল


    “ফ্রান্স আর মিশেল উয়েলবেক এক নয়…. ফ্রান্স মানে অসহিষ্ণুতা নয়, ভয় নয়, ঘৃণা নয়।’’ কোনো উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর সেদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সেই উপন্যাসের লেখক সম্পর্কে যখন এমন বিবৃতি শোনা যায় তখন সেই লেখককে নিয়ে বিতর্ক কতখানি তা বলে দিতে হয় না। ইসলাম-বিদ্বেষের অভিযোগ (যদিও উয়েলবেক নিজে তাকে ‘বিদ্বেষ’ নয় ‘ভীতি’ বলেই দাবি করে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ‘ইসলামোফোবিয়া’ শব্দটির বিষয়ে বলেছেন ‘ফোবিয়া’ মানে ‘বিদ্বেষ’ নয়, ফোবিয়া মানে ‘ভয়’) বা যৌনতা, বিশেষত ইসলাম-বিদ্বেষের অভিযোগ এই লেখককে বিতর্কের এমন এক কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে গেছে যে ফ্রান্সের রাজনৈতিক মহলও মিশেল উয়েলবেককে নিয়ে বর্তমানে যথেষ্ট আলোড়িত। সেই বিতর্ক যেন আরও নতুন মাত্রা পেয়েছে ২০১৯ সালে ইমানুয়েল মাক্রোঁ সরকার তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লেজিয়ঁ দ’নর’ প্রদান করার পর।




    মিশেল উয়েলবেক



    কিন্তু বিতর্ক যাই হোক, একথা বোধহয় অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে মিশেল উয়েলবেক এই সময়কার ফরাসি সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্বাধিক আলোচিত লেখক। ২০১০ সালে প্রি গঁকুর পুরস্কারপ্রাপ্ত এই উপন্যাস-লেখকের এক একটি বই প্রকাশিত হওয়া এখন একটা জাতীয় ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সে জনপ্রিয়তা যে শুধুমাত্র দেশের সীমারেখার গণ্ডিতে আবদ্ধ তা নয়, সারা পৃথিবীতেই মিশেল উয়েলবেক এখন সুপরিচিত নাম। এদেশেও তাঁর পাঠকসংখ্যা খুব কম নয় বলেই বিশ্বাস। কাজেই মিশেল উয়েলবেককে নিয়ে যাঁর যা আপত্তিই থাকুক না কেন, তাঁকে বাদ দিয়ে আজকের ফরাসি সাহিত্য নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়।

    মিশেল উয়েলবেকের নামটি আমাদের কাছে প্রথম এসে পৌঁছোয় নয়ের দশকের শেষ দিকে ‘লে পার্তিক্যুল এলেমঁত্যের’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর। বলাই বাহুল্য, আমরা বইটির ইংরেজি নামটির সঙ্গেই পরিচিত। ইংরেজি তরজমায় ‘অ্যাটোমাইজড’ নামের এই উপন্যাসে এক প্রেমহীন, আবেগবর্জিত পৃথিবীর ছবি আমরা দেখেছিলাম যেখানে মানুষের শরীর নিছকই কতকগুলো অণুর সমষ্টিমাত্র, তার মনও সেই আণবিক সমষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস পাঠকমহলে তীব্র আলোড়ন ফেলেছিল। ফরাসি সাহিত্যের এই নতুন তারকাকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। বিশেষত তাঁর লেখায় খোলামেলা যৌনতা, যা ‘পর্নোগ্রাফিক’ বললেও অত্যুক্তি হয় না, তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনার মুখে তাঁকে পড়তে হয়েছিল। যদিও এ কথা সবাই জানেন, ফরাসি সাহিত্যে বৌদ্ধিক ও পর্নোগ্রাফিকের মধ্যে কোনো আপাত বিরোধিতা নেই। যাই হোক, এর পর একে একে তাঁর যত উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে তাতে এই বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। যার সর্বশেষ পরিণতি, বলা যেতে পারে তার সাম্প্রতিকতম উপন্যাস ‘সেরোতোনিন’।

    আমরা যদিও আমাদের আলোচনা তাঁর ২০০১ সালে প্রকাশিত ‘প্লাতফর্ম’ (ইংরেজি তরজমায় প্ল্যাটফর্ম) উপন্যাসটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব। ‘লেপার্তিক্যুল এলেমঁত্যের’ বাদ দিলে ‘প্লাতফর্ম’ মিশেল উয়েলবেকের সাম্প্রতিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। লেখকের চিরাচরিত ইসলাম-বিদ্বেষ (বা তাঁর নিজের লব্জে ‘ইসলাম-ভীতি’) এখানেও বর্তমান, যেহেতু কাহিনির নায়কের বাবা এবং প্রেমিকা দুজনেই এখানে খুন হয় ইসলাম অনুগামীদের হাতে, বর্তমান যথেচ্ছ যৌনাচারও, তবু এ কাহিনির মূল লক্ষ্য তথাকথিত উদারবাদী ইওরোপীয় সমাজ।

    কাহিনির জটিলতা এ উপন্যাসে তেমন নেই। গোটা উপন্যাসটি এখানে বলা হয়েছে মুখ্য চরিত্র মিশেলের মুখ দিয়ে। মিশেল, পেশায় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কর্মী, অবিবাহিত, মধ্যবয়স্ক। ধরাবাঁধা পেশার বাইরে বাকি সময়টুকু সে কাটায় ‘পিপ শো’ দেখে, কিংবা টিভির সামনে বসে। কাহিনির শুরুতেই আমরা দেখি মিশেলের বাবা মঁসিয় রেনো নিহত হয়েছেন আইশা বলে বছর পঁচিশের পরিচারিকার ভাইয়ের হাতে। খুনের মোটিভ বোনের সম্মানরক্ষা, যদিও আইশা তার রক্ষণশীল পরিবারের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি পেতে চায়, সে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী—“……ils se permettent de me traiter de salopeparce que j’aienvie de travaillerplutôt que d’épouser un connard dans leur genre.” (‘ …ওরা আমাকে বেশ্যা ছাড়া আর কিছু ভাবে না, যেহেতু আমি বাইরে বের হতে চাই, কাজ করতে চাই, ওদের কোনো একজনের মতো একটা মূর্খ বেজম্মাকে বিয়ে করে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই না।’)। বাবার হত্যার পর মিশেল পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় এবং সেই অর্থ দিয়ে সে তাইল্যান্ডে এক প্যাকেজ ট্যুরে আসে। তাইল্যান্ড ভ্রমণের বর্ণনা এই কাহিনির অনেকটা অংশ জুড়ে। ‘প্লাতফর্ম’ উপন্যাসটি মূলত পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করেই। এখানেই মিশেলের আলাপ হয় ভ্যলেরির সঙ্গে। ভ্যালেরি ন্যুভেল ফ্রঁতিয়ের ভ্রমণ সংস্থার অত্যন্ত সফল এক কর্মী, বুদ্ধিমতী ও প্রবল ব্যক্তিত্বে পরিপূর্ণ। ট্যুরের বাকি সদস্যদের হট্টগোলের থেকে তার সুগম্ভীর দূরত্ব লক্ষণীয়। অথচ মিশেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের বর্ণনায় আঠাশ বছরের এই তরুণীর যে অবাধ অন্তরঙ্গতা ও উদ্দামতার ছবি ধরা পড়ে তা তার চরিত্রের এক অভিনবত্বের দিক। বর্তমান পশ্চিমি মহিলাদের থেকে তার পার্থক্যটিও তা বুঝিয়ে দেয়। ভ্যলেরির সঙ্গে সম্পর্ক মিশেলের জীবনে প্রথম অর্থপূর্ণ সম্পর্ক, এর আগে যৌনকর্মী ব্যতিত আর কারও সংম্পর্শে সে আসেনি। জীবনের চল্লিশটা বছর সে কাটিয়েছে কোনোরকম বন্ধন বা অনুরাগ ছাড়াই। তার দুখানি স্যুট আছে যেগুলিকে সে পালটাপালটি করে পরে। বই, হ্যাঁ বই তার আছে, তবে সেগুলো সে যতবার খুশি কিনতে পারে, কোনো বই-ই তার কাছে বিশেষ মূল্যবান বা বিরল নয়। অনেক মহিলা তার জীবনে এসেছে, তাদের কারো ছবি বা একটা চিঠিও তার কাছে নেই। পনেরো বছর বয়সে, কুড়ি বছর কিংবা তিরিশ বছর বয়সে সে নিজে কেমন ছিল সে সম্পর্কে কোনো বিশেষ স্মৃতি মিশেলের নেই। কোনো বিশেষত্বই তার চরিত্রে নেই। সে মনে করে মানুষ যাকে স্বাতন্ত্র্য বলে তা আসলে অ্যাবসার্ডিটি ছাড়া আর কিছু নয়। “On se souvient de sapropre vie, écritquelque part Schopenhauer, un peu plus que d’un roman qu’onauraitlu par le passé.” (‘শোপেনহাওয়ার কোথাও লিখেছিলেন, আমরা নিজের জীবনকে মনে রাখি একদা পড়া কোনো উপন্যাসের থেকে সামান্য কিছু বেশি’।) যে দূরত্ব ও অনাসক্তি মিশেলের জীবনকে এতকাল সংজ্ঞায়িত করেছে, ভ্যালেরি সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম। ভ্যালেরির সংস্পর্শে এসেই তার প্রথম উপলব্ধি হয়, ভালোবাসা আমাদের পবিত্র করে। (‘L’amour sanctifie.’)।

    ভ্যালেরির চরিত্রচিত্রণে পশ্চিমি নারীসমাজের বিপরীতে লেখক যেভাবে তাকে গড়ে তুলেছেন তাও যথেষ্ট বিতর্কসাপেক্ষ। মিশেল মনে করে, নিজের শরীর অন্যকে উৎসর্গ করার মধ্যে একটা অনন্য অনুভূতি আছে। স্বার্থহীনভাবে আনন্দদানের আনন্দ। মিশেলের মতে ভ্যালেরির এই গুণই তাকে অন্যদের থেকে পৃথক করে তুলেছে। তার মতে, আজকের পশ্চিমি নারীরা এই দেওয়ার অনুভূতিটাকেই হারিয়ে ফেলেছে। সে বলে, “L’exaltation sentimentale et l’obsession sexuelle ont la meme origine, toutes deux procèdent d’un oubli partiel de soi… Nous sommes devenus froids, rationnels, extrêmement conscients de notre existence individuelle et de nos droits” (‘আমাদের আবেগ-উচ্ছাস বা যৌনতা দুয়েরই উৎস এক, দুটোই আংশিক আত্মবিস্মৃতি দাবি করে… আমরা শীতল হয়ে উঠেছি, যুক্তিবাদী আর ব্যক্তিগত অস্তিত্ব ও অধিকার বিষয়ে অত্যধিক সচেতন হয়ে উঠেছি’)। বলার অপেক্ষা রাখে না, নারীবাদীরা উয়েলবেককে পছন্দ করেন না।

    মিশেল, ভ্যালেরি আর জাঁ-ইভ—এই তিন চরিত্রকে নিয়েই এই কাহিনির আবর্তন। আগেই বলেছি, কাহিনি এ উপন্যাসে তেমন জরুরি নয়। উপন্যাস না বলে এবইকে বলা যেতে পারে বর্তমান ফরাসি তথা ইওরোপীয় সমাজ সম্পর্কে উয়েলবেকের মূল্যায়ন। সে মূল্যায়নে জাঁ-লুই বার্মার পাঠ্যপুস্তকে ক্রেতার টাইপোলজি থেকে অগুস্ত কোঁৎ-এর পজিটিভ ফিলজফি সবই আলোচিত। গোটা উপন্যাসটিকে আজকের কর্পোরেট অর্থনীতির পাঠ বললেও অত্যুক্তি হয় না। জাঁ-ইভ ও ভ্যালেরি একই পর্যটন সংস্থায় কর্মরত, ‘অরোর’ নামের ওই সংস্থার অংশীদারও। পেশাগত সাফল্য, আর্থিক সাচ্ছল্যের নিরিখে জাঁ-ইভ জীবনের শীর্ষে উপনীত। কিন্তু পারিবারিক জীবনে সে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। মিশেল, ভ্যালেরি আর জাঁ-ইভ তিনজনের মতেই কোম্পানির রুগ্ন পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করার একটাই দাওয়াই— যৌন পর্যটন। আগামী দিনে অ্যাডভেঞ্চারের পাশাপাশি আর যে বিষয়টা মানুষকে ভ্রমণে উৎসাহ জোগাবে তা তার প্রবৃত্তির চাহিদাপূরণ। তাইল্যান্ড কিংবা কিউবার মতো এশীয় ও ক্যারিবীয় দেশগুলির রুগ্ন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াইও তাদের মতে ওটাই। কিউবা নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন লেখক। বিপ্লবের ইতিহাস, স্বপ্নভঙ্গ, সেদেশের মানুষদের বিপ্লবীদের আদর্শকে টিকিয়ে রাখার ব্যর্থতা। মানুষের অসততা সেদেশের সব স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।

    যৌন-পর্যটন নৈতিক কী অনৈতিক সে প্রশ্ন, মিশেলের চোখে, অবান্তর। মিশেল মনে করে, যৌনতা যেখানে পণ্য সেখানে অর্থের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। বুদ্ধি, প্রতিভা, শক্তি, সাহস, রূপ সবকিছুকে ব্যবহার করেই যদি অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে তাহলে যৌনতাকে নয় কেন! তার মতে, একটা সময় ছিল যখন ইওরোপ তার উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়েছিল তার আধিপত্য বিস্তারের কাজে, পরে তা তাকে সভ্যতা বিস্তারের কাজে উৎসাহ জুগিয়েছিল। কিন্তু আজ এক ধনী ইওরোপবাসী যা চায় তা হল শুধুমাত্র তার প্রবৃত্তির চাহিদাগুলোকে মেটানো। এই ধনী ইওরোপীয়রা নিজেদের মনে করে ‘ডেকাডেন্ট মানুষ’। তারা তাদের ঘনিয়ে আসা মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন। তারা স্বার্থপরতার হাতে নিজেদের উৎসর্গ করে দিয়েছে। কাজেই সে এই সুখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে অপারগ। (‘Européen décadent, conscient de ma mort prochaine, et ayant pleinement accédé à l’égoïsme, je ne voyais aucune raison de m’enpriver.’)।

    তাই ল্যান্ডেজাঁ, ভ্যালেরি আর মিশেলের এই প্রকল্প সফলভাবেই এগোয়। যদিও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার খবর এসে পৌঁছতে থাকে। এক জার্মান পর্যটকও একটি স্থানীয় মেয়েকে উগ্রপন্থীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। কয়েকদিন পর তাদের ছিন্নভিন্ন দেহ তারা ফেলে রেখে যায়। তাদের স্পষ্ট দাবি, ইসলাম এসব ব্যাভিচার বরদাস্ত করে না। দ্বিতীয়বার তাইল্যান্ডে এসে ভ্যালেরি ঠিক করে সে আর ফ্রান্সে ফিরবে না। চাকরির ক্ষতি সে মেনে নেবে। ভ্যালেরিকে নিয়ে মিশেল সন্তান আর পরিবারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই উগ্রপন্থীরা হানা দেয় রিসর্টে। গুলিতে লুটিয়ে পড়ে ভ্যালেরির দেহ। বিস্ফোরণে শতাধিক পর্যটক ও যৌনকর্মীর মৃত্যু হয়। ফ্রান্সের মিডিয়া এই ঘটনায় যত না নিন্দা করে উগ্রপন্থীদের, তার থেকেও সরব হয় পর্যটকদের বিরুদ্ধে। দেশে মানসিক অবসাদের চিকিৎসার পর মিশেল আবার ফিরে আসে তাইল্যান্ডে। সেখানে ছোট্ট এক হোটেলের ঘরে বসে সে লিখে চলে তার কাহিনি। জীবনের কাছ থেকে আর কিছুই পাওয়ার নেই তার। দেশের আর কোনো খবরই রাখে না সে। মৃত্যুচিন্তা তাকে সবসময় ঘিরে থাকে।

    আমরা যারা মার্সেল প্রুস্ত বা অন্দ্রে জিদ পড়ে আধুনিক ফরাসি উপন্যাসকে চিনেছি তাদের পক্ষে মিশেল উয়েলবেকের ধাক্কা সামলে ওঠা মুশকিল। বিশেষ করে তাঁর ভাষা। ইওরোপীয় সাহিত্যের যে তথাকথিত ‘পোলাইট ল্যাঙ্গুয়েজ’ সেই মার্জিত ভাষাকে তিনি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। পর্নোগ্রাফি ও সাহিত্যের মধ্যে যাবতীয় ভেদও তিনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্তুই হোক বা সরাসরি নাম উল্লেখ করে রাজনৈতিক নেতা কিংবা মিডিয়া সম্পর্কে তাঁর তির্যক মন্তব্য হোক, পলিটিক্যালি কারেক্ট বলতে যা বোঝায় উয়েলবেক তা নন। পাঠক মিশেল উয়েলবেককে কতখানি মেনে নেবেন তা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। খোদ ফ্রান্সেও এ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। ‘লে পার্তিক্যুল এলেমঁত্যের’ যখন প্রকাশিত হয় তখনই এ বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছিল। সমালোচকমহলে ঝড় উঠেছিল। খুবই ইঙ্গিতপূর্ণভাবে তার সপক্ষে কথা বলেছিলেন একমাত্র মারিও ভার্গাস ইয়সা। ‘Insolent’—এই কথাটিই ইয়সা ব্যবহার করেছিলেন বইটি সম্পর্কে। নেতিবাচক অর্থে নয়, ইতিবাচক অর্থে। ‘উদ্ধত’—যা আমাদের প্রচলিত বেঁচে থাকার যাবতীয় অভ্যাসগুলিকে ভেঙে তছনছ করে দেয়।



    নিজের লেখালিখি নিয়ে মিশেল উয়েলবেক-এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষাৎকার দেখে নিতে পারেন এখানে


    প্ল্যাটফর্ম সহ মিশেল উয়েলবেক-এর অন্যান্য উপন্যাসগুলি ইংরেজি তরজমায় কেনা যেতে পারে এই সাইটে


    গ্রাফিক্স: স্মিতা দাশগুপ্ত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪২৩৬ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইতি - Ankan Chakraborty
    আরও পড়ুন
    দূরত্ব - Kunal Basu
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সায়ন্তন চৌধুরী | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৭:৪৫97190
  • হুয়েলবেক এই মুহূর্তে সময়ের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা লেখক। খুবই পছন্দ করি।

  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2405:201:8008:c82b:a831:1fd1:7c86:***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৮:০৩97191
  • সেদিন ই কি প্রসংগে যেন এর গপ্প হল, সি এস? ও এবার মনে পড়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন