ভাবছি, ওঁর সাথে দেখাই করব না। কিন্তু ও ঘুরিয়ে মারছে সন্ধেবেলায় পশ্চিমবঙ্গের চায়ের দোকানে দোকানে।লম্বু বিস্কুট কেন গোল, মোষের দুধের ঘনত্ব দার্শনিক চিন্তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কালভার্টের কাছে পচা পানা আর মৃদু পেচ্ছাপের ঝাঁঝালো গন্ধ। ফর্সা জামাকাপড় পরা, চুল আঁচড়ানো এক সুপুরুষ কালো চেহারার লোক আমায় বলল - ভাই, দু প্যাকেট বাদাম কত? আমি বললাম - ছোট প্যাকেট দুটো নিলে দশ কিন্তু বাদাম আমি বিক্রি করি না।
টাকাপয়সার চিন্তা সত্যি, রোমান্টিক সঙ্গীর জন্য আক্ষেপ সত্যি, মৃত্যুবোধ মাঝেমধ্যে ঘাড়ের কাছে সুড়সুড়ি দিলেও নীল মেঘের স্তুপে ভরে ওঠা আকাশের নীচে অগাধ হাওয়ার আলাপ কেমন এক শান্তির অনুভব নিয়ে আসে। কুঁজো বুড়ি রেললাইন পার হচ্ছে লাঠি ঠুকে। হাতে জলের বোতল। হোঁচট খেলে বা ছুটে আসা ধাতুর রেল কোমর ছুঁয়ে দিলেই ফট করে ফেটে যাবে ঝুনো নারকেলের মতো মাথা। চাঁদামাছ যেমন পরিষ্কার জলে খলবল করে তেমন চাঁদ উঠছে পুবদিক থেকে; কাছাকাছি বোধহয় বুদ্ধ-পূর্ণিমা, তাই না?
জলের ধারে নৌকায় কয়েকবছর ধরে থাকে শ্যামল হালদার। ডাঙায় আসে না। খেয়া তৈরির প্রথম দিন ছটি প্রদীপ জ্বলেছিল ছয় দেবতা ও পীরের নামে। পাঁচটি দীপ নিভে যায় একটি জ্বলে থাকে কালীর নামে। তরীখানা মুণ্ডমালিনীর নামে উৎসর্গীকৃত, তাই মাংসরন্ধন নিষেধ।
- শ্যামলজেঠা, কতসালে এলা এদেশে?
- ৭১ সাল বাড়ি আছিল পাবনা
- রাতে নৌকাতে ঘুমাতে সমস্যা হয় না?
- মশারি রাহা থাহে তো
- আজ কী রাঁধলা?
- আলুসিদ্ধ দিসিলাম, মাছ খাইতে ভাল লাহে না, সরপুঁটি পাইছিলাম
- কবে ডাঙায় উঠবা?
- ছুট পোলাডারে এম. এ অবধি পড়াইছি অহন বি এড করতাসে যেদিন চাকরি পাইবে হেইদিন উঠুম জল থিক্যা।
পোঙার নীচে গলুই নড়ে ওঠে। জিলিপির ঠোঙা জলে বিসর্জন দিলাম।ছোটমাছ ঠুকরে যাচ্ছে। গলা অবধি চুবিয়ে বসলে বেশ হত, মনের ক্ষতে চুমু খেয়ে যেত পোনামাছের দল। আমার ২ টো করুণচোখ খুবলে খেলে একটি মাছের ১ রাতের আহার।
ইষ্টিশনে দুদিনের চেনা এক দাদা বকুলফুল কুড়িয়ে এনেছে আমার জন্য। সবুজ রঙের পাতা আর কলকাতার বাসটিকিট পকেটে নিয়ে ঘুরছি। ভাই বলল - লাল রঙের পুরোনো স্কুটি কিনেছি টাকা জমিয়ে, বোলপুর থেকে যে কাঠ-পাখির চাবিরিং আনলে, দ্যাখো ঝুলছে পয়লা গাড়িতে চলো গাঁয়ের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। বিশু দা রাতের বাজার করেছে শিয়ালদায়। দশটাকায় অনেক পাতিলেবু কিনে জিতে গিয়ে জানাল; জগা, তোর গলার স্বর শুনলে ভালো লাগে রে...
বেঁচে থাকা তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আজ। এসো, নারকেলতেল মাথায় দিয়ে চান করাই, সিঁথি করে দি ডানদিকে।