বুচকুন মাফিন খেতে ভালোবাসতো। তবে তার চেয়েও বড় কথা মাফিনটা শেষ হয়ে যাবার পর, কাগজটাও ও আস্ত মুখে পুরে দিতো। চামচ দিয়ে কেটে কেটে তো খায়নি কখনো, কামড়ে খেত। তারপর মাফিনের নিচের পাতলা কাগজটা, যেটাতে একটু একটু আঁঠালো মাফিনের অবশিষ্ট গুঁড়ো লেগে থাকে, সেটা টুক করে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে চিবাতো।
যেন চিবিয়ে খেয়ে নেবে সবটা। একটা গুঁড়োও বাদ যাবে না।
কোনোদিন যদি বুচকুনের মা তার মাফিন খাওয়া দেখে ফেলতো, তাহলে বেদম রেগে যেত। মাফিন বুচকুনের মা কিনতো না। মায়ের কাজের বাড়ি থেকে দিত। সপ্তাহে একবার হয়তো।যেদিন বাবু অফিসফেরত বা বৌমনি স্কুল ফেরত ছেলের জন্য মাফিন নিয়ে আসতো, শিকে ছিঁড়লে বুচকুনের জন্যেও আনতো। না এনে উপায় ছিল না। বুচকুন বিকেল বেলা মায়ের সঙ্গে কাজের বাড়ি যেত। হাঁ করে দেখত সব কিছু। মা একবেলা ঘর ঝাড়পোঁছ, কাপড়কাচা, বাসন মাজা করে। ওইবেলা ছাতের কাপড় তোলে, গাছে জল দেয়। ঘর ঝাড় দেয় আরেকবার। বুচকুন দরজার কাছে বসে দ্যাখে।
মা কুলসুম বিবি মাথায় কাপড় দিয়ে কাজ করে। বুচকুনের নাকে শিকনি দেখলে বৌমনি ভীষণ রেগে যায়। আর মা রেগে যায় মাফিনের কাগজ খেতে দেখলে। কিন্ত একমাত্র বুচকুন জানে ওই কাগজ খাবার কী সুখ! চিবিয়ে চিবিয়ে ছিবড়ে বানিয়ে দেয় কাগজটাকে। তারপর পারলে পাপোষের নিচে ঢুকিয়ে দেয়। কুলসুম দেখতে পেলে পিঠের চামড়া তুলে দেবে।
বুচকুন এইবাড়িতেই ভালোমন্দ খাবার পায়। চাউ মিন। চপ। মিষ্টি। পোলাও। কিন্ত এইসব খাবারে কোন কাগজ নেই যে খাবার শেষ হবার পরেও চিবিয়ে সুখ হবে।তাই বুচকুন মাফিনের জন্য হাঁ করে থাকে। এমনকী মা যেদিন তাকে নিয়ে যায় না, সেদিনও।
বাড়ির ভেতরে কখনো যায়নি বুচকুন। পর্দার আড়াল থেকে ভেতরঘরের কিছুই দেখা যায়। বুচকুন বসে বসে বাইরের ঘরটাই দেখে। এত সাজানো ঘর সে কখনো দেখেনি। কিন্ত ঘরের মধ্যে মোটা মোটা গদিওয়ালা সোজা, রঙবেরঙের বালিশ, মূর্তি টুর্তির দিকে বুচকুনের অত নজর যায় না। সে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা গদি-আঁটা সোফার পিছনে বিশাল একটা ছবির দিকে।হায় বাপ! এত বড় ছবি ! ঠিক যেন জিন্দা। বুচকুন ওরফে আসিফ আনসারি বন্ধুদের কাছে ছবিটার কথা বুক ফুলিয়ে বলে।
ইতনা বড়া তসবির। কোনোদিন দেখিস নাই তোরা। কত লোক ছবিতে। কত বাড়ি, ঘর ,গাছ। পাখি। বিড়াল, কুকুর। আই বাপ।
যেহেতু ছেলের গত দুবছর প্রায় পড়াশুনা নাই সেইজন্য বুচকুন মায়ের পিছে পিছে লেগে থাকে, যেহেতু কুলসুম বিবি থেকে বেওয়া হয়ে গেছে এই সময়কালে এবং আনোয়ার আনসারি মরার সময় তার বউ বেটাকে দেখতেও পায়নি, তাই তার মরণটা কেমন ধোঁয়াশা হয়ে থেকে গেছে কুলসুমের কাছে। তার সর্বদা মনে হয় লোকটা বুঝি বেঁচেই আছে। দিল্লি অনেক দূর। আনোয়ার বছরে দুইবার আসতো। সেই আসাটা একটু পিছিয়ে গেছে কেবল। কুলসুম এই ভেবে মনকে তোয়াজ দেয়। ফি শুক্কুরবার পিরের দরগাতে ধূপ দেয়। নাসিম সাহেবের বাড়ির কাজ আর মেসের কাজ দিয়ে আর চলছিল না। আরেকটা কাজ না হলেই না। করোনার সময় মেসের মাইনে বন্ধ ছিল। নাসিম সাহেবের বিবির করোনাতে ভীষণ ভয়। কুলসুমকে ঢুকতে দিত না। তখন অনেক খোঁজ করে এই বৌদির বাড়িতে ঢুকেছে কুলসুম। এঁরা পাঁড় হিন্দু। দাদার গলায় পৈতে। শোবার ঘরের একপাশে ঠাকুরের আসন। সেই ঘরে কুলসুমের ঝাড়ুপোঁছা করা নেই। ঢোকাও নেই। কিন্ত কাজ পাবার জ্বালা যেমন জ্বালা, কাজ নেবার জ্বালাও তাই। বৌদি লোকের জন্য ছটফটাচ্ছিলো। আগে যে বৌ কাজ করতো সে ফট করে মরে গেলো।ক্যান্সারে মরলো না করোনাতে সেটা ঠিক বোঝা যায়নি। তবে মরেছে। কুলসুমকে এ বাড়ির কাজের হদিস দিল মীনা বৌদি। কুলসুম স্নান সেরে, চুলটুল বেঁধে, গায়ে সাবানের গন্ধ ছড়িয়ে বুচকুনকে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল বৌদির দরজায়।
বুচকুনের প্রথম যেটা ভালো লাগে এই বাড়ির, সেটা হচ্ছে কলিং বেল। নাসিমের বাড়িতে কলিং বেল ডিং ডং। বুচকুনের সেটা শুনে কিছু মনে হয়নি কখনো। কিন্ত এই ফ্ল্যাটে বেল দিলে ভেতরে পাখি ডেকে ওঠে কলকল করে। ঝরনার শব্দ হয়। বুচকুন জিন্দগিতে ঝরনা দেখেনি। স্কুলে স্যারের কাছে শুনেছে। বাপ বলেছিল বটে দেখাবে। এখন বাপ, স্কুল, ঝরনা, কিছুই নাই। শুধু বুচকুনের পেটে একরাশ খিদে আছে।
প্রথমদিন বেল দিতে যে দরজা খুলেছিল, বুচকুনের মা তাকে বৌদি বলে। বুচকুনকে বলেছে আন্টি বলতে। সে সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে সুন্দর গন্ধ ছড়ায়। তার একটা ছেলে আছে। বুচকুনের চেয়ে কিছুটা ছোট। ছেলেটা জুলজুল করে দরজার কাছে বসে থাকা বুচকুনের দিকে তাকায়। কিন্ত বুচকুন ছেলেটার দিকে তাকায় না। সোফার পিছনের মস্ত বড় ছবিটা দেখে।
ছবিটার তাগৎ আছে বটে। মাঝখানে ইয়াই বড় একটা গাছ। গাছের পাতাগুলা নীল। বুচকুন আগে বলতো লীল। এ বাড়ির আন্টি বকে। বলে, লীল না।ব ল নীল।
বুচকুনের হাতে মাফিন দিলে বুচকুন নীল বলে। বড় গাছটার তলে বাজার বসেছে। কত মানুষ ছবিতে।কেউ গোরা। কেউ কালা। টুপিওয়ালা।টুপিছাড়া। ব্যাটাছেলে। মেয়েমানুষ। বড়গাছের পাশে ছোট গাছ। বাড়ি। হরিণ। পুকুরে হাঁস ভাসে। পদ্ম ফুটে। বুচকুনের ইচ্ছা করে একলাফে ঐ পুকুরে ডুব মারে।
আন্টি ঢোলা ম্যাক্সি পরে। কালোর ওপর লাল ফুল। মাফিন খেতে দিলে বুচকুনের ঐ পোশাকটা খুব ভালো লাগে। কাগজ চিবাতে চিবাতে সে দেখে ছবির মধ্যে পোষা কুকুরের মুখে মাংস। বিড়ালের মুখে মাছ।
সমীরা হাই তুলে কলকল করে ওঠেন।
- শোনো, তুমি আসবে, কাজ করবে, চলে যাবে। সাত জায়গাতে বলে বেড়ানোর দরকার নেই যে তুমি এখানে কাজ করো। ভ্যাকসিন নেওয়া আছে তো? দেখি সার্টিফিকেট?
ভ্যাকসিন একটা নিয়েছিল কুলসুম। পরেরটা আর নেওয়া হয় নাই। তাই বলে সার্টিফিকেট নাই এমন নয়। সে জোগাড় হয়ে গেছে।
কুলসুম খুব ঘামছিল। কাজটা হাতছাড়া হলে মুশকিল। ছেলেকে প্রাইভেটে দিতে হবে। এখন কাজের খোঁজ পাচ্ছে না তেমন।
সমীরাও ঘামছিলেন। তাঁর বাড়িতে এইপর্যন্ত যারা কাজ করেছে তারা কেউ মাথা ঢেকে কাজে আসেনি। টুনু পাল, মিনতি লস্কর বা লক্ষ্মী সামন্তকে কাজে রাখা আর কুলসুম বেওয়াকে কাজে রাখা এক নয়। তিনি একটি মাল্টিস্টোরিডে বাস করেন এবং এই আবাসনের নিয়মাবলির একটি অলিখিত শর্ত আছে, বসবাসকারী সকলেই হিন্দু হবেন। নচেৎ ফ্ল্যাট কেনা তো যাবেই না, ভাড়াও দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই বলে কি এখানে অহিন্দু কেউ আসেন না! সমীরার বর ব্যাঙ্কে কাজ করেন। দু তিনজন মুসলমান কলিগ আছেন। তাঁদের দিব্যি যাতায়াত আছে ফ্ল্যাটে। সমীরাও খুব ভালোবাসেন ইফতারের খাওয়া দাওয়া। কিন্ত কুলসুমকে কাজে রাখার আগে অনেকগুলো চিন্তা মাথায় কুরকুর করছিল। সেক্রেটারিকে বলবে না বলবে না? কমিটি যদি অ্যালাউ না করে?
দিব্য খুবই রেগে গেছিল। ধ্যুস শালা। কমিটির নিকুচি করেছে। তোমার লোক দরকার তুমি লোক রাখবে, তাতে কমিটি আসছে কোথ্থেকে? শুধু ঐ আসন ফাসনের ঘরটা বাঁচিয়ে রেখো। মা এলেও একটু সামলে।
দিব্যর মা কবে আসবেন তার ঠিক নেই। আপাতত সামলাতে পারলে বাঁচে সমীরা।
ঠিক। লোক খুবই দরকার। বিশেষত ওয়র্ক ফ্রম হোম আর তার সঙ্গেই অফলাইন ক্লাস মিলিয়ে একটা তীব্র চাপের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আরভ বেশ ছোটো। তার পেছনেও ভালো সময় দিতে হয়। তারপরে ঘরের ঝাড়ুপোঁছা করা, বাসনমাজার লোড সমীরা আর নিতে পারছে না। ময়না বা নমিতারাও এসে ইন্টারভিউ দিয়ে গেছে। পাশ করতে পারেনি। দুচারদিনেই বিদেয়।
কুলসুম খুব পরিস্কার। প্রধানত এই কারণে সে সমীরার কাছে টিকে গেছে চারমাস। দ্বিতীয়ত, সে কথা বলে কম। নিজের মনে কাজ করে যায়। বিকেলে বুচকুনকে সঙ্গে আনে বটে, তবে ছেলেটা শান্ত। চুপ করে দরজার কাছে বসে থাকে।
দরজার এপার থেকে ওপার। আরভ ও আসিফ পরস্পরকে দেখে। তবে আসিফ ওরফে বুচকুন ছবিটাকে বেশি দ্যাখে। ছবির রঙ ও মানুষ তাকে সন্মোহিত করে। সে ভাবে, ঐ লোকগুলান কারা। কোথ্থেকে এসেছে। ঐ পুকুরে, যেখানে পদ্ম ফুটেছে, সেখানে কি মাছ আছে? কী কী মাছ আছে? আরভের রঙ পেন্সিল আছে। ছবি আঁকার খাতা আছে। ইচ্ছে হলেই সেসব নিয়ে আরভ ওদের শোবার ঘরে চলে যায়। পর্দা দুলে উঠলে এক ঝলক ভেতরটা দেখে ফেলে বুচকুন। ঠান্ডা হাওয়া ভেসে আসে।তারপর দরজা বন্ধ হয়ে যায়। করোনার পরে ইস্কুল খুলেছে। ইস্কুল যেতে ভালোই লাগে বুচকুনের। তবে আরও ভালো লাগে মায়ের এই বৌমনির বাড়ি এসে হাঁ করে ঐ ছবিটা দেখতে। ছবির লোকগুলা হিন্দু না মুসলমান? নাকি হিন্দু- মুসলমান মেশানো!
কুলসুম বাথরুম থেকে জল নেয়। জলে ফিনাইল দেয়। লেবু চিপে দেয় একদিন অন্তর। খুব যত্ন করে ঘর মোছে। অফিস ফেরত সমীরা চা করে। দিব্য ক্লান্ত হয়ে ফেরার আগে বাড়িঘর চকচক করবে। আরভের টিফিন সাধারণত সমীরাই আনে। ডে কেয়ার সেন্টারে দুবার খাবার দিতে হয়। একটা ফ্রুট প্যাক। একটা লাঞ্চ প্যাক।
কুলসুম ফ্ল্যাটে ঢুকে মাথার কাপড় খুলে ফেলে নিচেই। সেইভাবেই নির্দেশিত।ঝড়ের মত আসে যাতে আশপাশের ফ্ল্যাটের কেউ কোনো প্রশ্ন না করতে পারে। সমীরা ভয় পায়। প্রতিবেশীদের শ্যেন দৃষ্টি।
কোন বাড়িতে কাজে ঢুকলে?
কী কী কাজ?
কত দেয়?
ওরা ড্রিংক করে?
লিফটম্যান কাম ওয়াচম্যানটি জিজ্ঞেস করবে খুঁটিনাটি।
কুলসুমকে বলা আছে, নাম জিজ্ঞেস করলে ডাকনাম বলবে। ডাকনাম টুলে। ওটাই চালু থাকা সুবিধে। ওয়াচম্যান থেকে প্রতিবেশী, সবাইকে সামলে চলতে চলতে হাঁপিয়ে যায় সমীরা। কুলসুমের সেসব কিছু মনে হয়না। ঘরে বাইরে বহুবিধ চাপ সামলে সে শক্ত হয়ে উঠেছে। আনোয়ারের জন্য দুফোঁটা চোখের জল ফেলবার সময় নেই।
আব্বা যখন মাফিন কিনে দিত, বুচকুন ব্যাপারটা অত পুঁছতো না। আব্বা মরে যাবার পরে তার মাফিনপ্রীতি তৈরি হয়েছে। আর কাগজ চিবানো।
রোজার সময় কুলসুমের চাপ চলছে। কাকভোরে রাত থাকতে ওঠা। বড় কঠিন দিন। কোনো বাড়িতেই ছুটি নেই। নাসিম সাহেবের বাড়িতে বেটিরা এসেছে। দামাদ এসেছে। মেসে ফিরেছে ছেলেরা। সমীরা দিব্যর অফিস পুরো দমে। এখন কোথাও ছুটি মিলবে না। কুলসুম না বলে কামাই করেও না। ইমানে লাগে। কিন্ত রোজার মাসে বড় কষ্ট। এবার গরম পড়েছে ফাটিয়ে। ঘামে গা প্যাঁচপ্যাঁচ করে। ঘামাচিতে ভরে গেছে পিঠ। বৃষ্টি না পড়লে এ ঘামাচি মরবে না। কুলসুম ফ্ল্যাটে ঢুকেই বাইরের বাথরুমে কষে কল খুলে দেয় কুলসুম। বৌদিও এ ব্যাপারটা পছন্দই করে। কাজের মানুষ পরিষ্কার না হলে বড় মুশকিল। বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে। বাসনকোসন ঝকঝকে করে মাজে কুলসুম। একটু দাগ থাকে না। সাবান জল ঝরিয়ে তুলে রাখে। গ্রামে সে পুকুরে স্নান করতো। বুচকুনকে গল্প করেছে। কেমন পদ্মের নালের মত গা এলিয়ে পড়ে থাকত পুকুরে আর ছোট মাছেরা গায়ের ওপর দিয়ে চলে যেত।
ইফতারের মুড়ি, চপ , ঘুগনি বাঁধা। কুলসুম কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গোসল করে মুড়ি নিয়ে বসে। ছেলে পাশে বসে থাকে ন্যাওটার মতো। আনোয়ার জিন্দা থাকাকালীন বড়সড় করে ইফতারি হত। তেলেভাজার সঙ্গে ছোলা সিদ্ধ। খেজুর আসতো সামান্য কিছু হলেও। তরমুজ কখনো সখনো। শরবত বানাতো কুলসুম যত্ন করে।এ খন আর সেসবের বালাই নেই। মুড়ি, চপেই কাজ চালায়। লোকটা কাফন পর্যন্ত পেলো না। চোখের জল চাপে কুলসুম। একদিন ছোলার ডাল কিনবে কিনবে মনে করেও কেনে না। আনোয়ার ছোলার ডালের হালুয়া ভালবাসত বড়ো।
সমীরা বাড়িতে একটা পার্টি দেবে ভেবেছে। অতিমারী অতিমারী করে দুবছর ঘরোয়া পার্টি ফার্টি সব বন্ধ। কাজের লোক নেই। অফিস। বাচ্চা সব সামলে সমীরা হিমসিম। এবার একটা হইচই হোক। ইফতার পার্টি।
কুলসুম শুনে তাজ্জব বনে গেল। এই বাড়িতে মুসলমান আসবে! খাওয়া দাওয়া হবে। দাওয়াত বলে কথা! ফ্ল্যাটের লোক এইসব পার্টি হলে কিছু আপত্তি করে না। কুলসুমের প্রবেশ স্পর্শকাতর ছিল বটে। গণ্ডগোল করলো, ঠিক কুলসুম নয়। তার কষ্ট আকারেপ্রকারে দেখাও গেল না।
কুলসুম খুশি মনে ছিল। সকালে ব্যাগে করে মহার্ঘ্য এনেছিল। তার বাঁচাখুচা সম্পদ। নিজের হাতের সেমাই আর এইটি এক স্টেনলেস স্টিলের বাক্স যাতে ভদ্রবাড়িতে কিছু নিয়া যাওয়া যায়। আর ইফতারের খাদ্যসম্ভার মলিন হলে তারচেয়ে দুখী মুসলমান আর কে।
কুলসুম সমীরার এইবাড়ির জন্য একবাটি সেমাই এনেছে টিফিন বাক্সে। সেটাই হল মৃত আনোয়ারের মতে রাতের সেরা খাবার। ইস্টার অব দ্য পার্টি। নল্লি নিহরি না। হালিম না।স্রেফ সেমাই।
প্রথমত তার খুবই সংকোচ ছিল। বৌদি কি তার হাতের সেমাই খাবে? সে ঘর পরিষ্কার করে। বাসন মাজে। কাপড় কাচে। কিন্ত রান্নাঘর ও শোবার ঘরে ঢোকে না। বাসনমাজার জন্য একফালি জায়গা আছে। সেখানেই মাজা বাসন উল্টে রাখে। সেমাই তৈরি করতে করতে বেশ খানিকটা বেশিই চিনি দিয়ে ফেলেছিল কুলসুম। তার শ্যামলা হাত এখন খালি। একটা চুড়ি ঢলঢল করছে। আগের থেকে স্বাস্থ্য খারাপ হয়েছে এমন না। মুখটি শুকনো। চোখগুলো আরো বড় লাগে।
বুচকুন পাশে থেকে বলে উঠেছিল, কাজের বাড়িতে দাও না কেন?
তিনটে টিফিনবক্স জোগাড় করা মুশকিল। ইদে নাসিম সাহেবের বাড়ি থেকে যে খাবার দিয়েছে টিফিন কেরিয়ারে সেটাতে সেমাই ভরে দেবে কুলসুম। মেসে অতজনকে দিয়ে উঠতে পারবে না। কাজেই সমীরার বাড়ির জন্য বড় স্টেইনলেস স্টিলের বাটিটা নিল। বামুনবাড়িতে এটা দেওয়া যায় কিনা সে নিয়ে অনেক দোনোমোনো করে নিয়েই ফেলল শেষকালে। এরা তো বাড়িতে মুসলমান বন্ধু ডাকে। খাওয়া দাওয়া করে। তবে আর কি অসুবিধা! বুচকুনকে রোজ আরভের টিফিনের থেকে কিছু না কিছু দেয় সমীরা। কুলসুমের একদিন কিছু দিতে ইচ্ছা করে না বুঝি!
আনোয়ার জিন্দা থাকাকালীন স্নান সেরে নতুন শায়া, ব্লাউজ , শাড়ি পরে চোখে হাল্কা সুর্মা দিত কুলসুম।কানের পাশে আর হাতে দিত সুগন্ধী আতর। আনোয়ার তার চিবুক ধরে বলতো, এ টুলে!
নামটা ভুলেই যেত কুলসুম, যদি না হিন্দু কাজের বাড়ি থাকত। এখন সুরমা টুর্মা দেওয়া মাথায় উঠেছে। কুলসুমের চোখের নিচে মস্ত কালি।বিকেলে বিকেল সেমাই রেঁধেছিল। পরের দিন সকালেই দেবে।
ছবিটার মধ্যে পুকুরখানা মস্ত। তাতে কত জল। নীল আর সবুজ যে এতরকম হয় বুচকুনের জানা ছিল না। জল দেখলেই তার আছাড়িপিছাড়ি করে ডুব মারতে ইচ্ছা করে। ফুলগুলো কত সুন্দর ফুটে আছে।
ভিভিয়ান হাওয়ার্ড মাসুদের আঁকা ছবিটা আসলে রিপ্রিন্ট। দেওয়াল জোড়া রিপ্রিন্ট করানোর হ্যাপা কম নয়। সমীরা অনেক ঝক্কি পুইয়ে কাজটা করিয়েছে। তার বৈঠকখানা কাম খানাঘর বেশ ছিমছাম করে সাজানো। শুধু বড় সোফার পিছনে দেওয়ালটা ঝকঝক করে ভিভিয়ানের আঁকা ' প্যারাডাইস' ছবিটার জন্য। এত পপুলেটেড আর কালারফুল একটা ছবি! কখনো নির্জনতা বোধ করতে দেয় না। ভিভিয়ান জন্মেছেন বোস্টনে। তারপর হানি মাসুদকে বিবাহ করে স্পেইন -নিবাসিনী। ক্যানভাসটা অনেকটা গঁগার মত লোকারণ্যে জমজমাট। কিন্ত ফিগার ড্রয়িং আর কালার স্কিম ভিভিয়ানের নিজস্ব। খানিকটা মাতিসের ধাঁচ। আবার নয়ও। ছবিটা সমীরাকে ভরিয়ে রাখে।
শওকত জিজ্ঞেস করেছিল, আচ্ছা এই যে পিপল অব ডিফরেন্ট রিলিজন দেখাচ্ছে ছবিতে...
ফেজটুপি পরিহিত তিনচারটি ফিগার। আবার ডাঙ্গরি পরেছে কেউ। একজন প্রিস্ট আছে, গলায় ক্রস..
-ইজ দিস অ্যাবাউট ধর্ম সমন্বয়? লিলি কাবাব তুলতে তুলতে বলেছিল।
সমীরা ঠোঁট ওল্টায়। ও জানে না।এত কালারফুল ভাইব্র্যান্ট একটা ছবি, এত পিপলড। এটাই ওর ভালো লেগেছিল।
- ফুল অব ওয়ার্মথ। লিলি নরম করে বলল কাবার খেতে খেতে।
ক্রকারি নামিয়েছে সমীরা। সাদা। গোলাপি।
কুলসুমের একমাত্র কাজ পিছনের ব্যালকনিতে সব বাসন ধুয়ে মুছে রাখা। একটা প্লেটও যেন না ভাঙে। সমীরার অতি আদরের কালেকশন।
এই ঈদ পরবর্তী সন্ধ্যায় কুলসুম পোর্সেলিনের ডিশ ধোয় আর থোয়।
আনোয়ার বেঁচে থাকলে এসময় জসন হইত জসন। মিস্ত্রি মানুষ যখন দিল্লি থেকে ফিরত হাতে বেশ টাকাও থাকতো। তখন শুধু সেমাই না। ঘরে বিরিয়ানির খুশবু থাকত। দু তিন রকমের হালুয়া। কুলসুম এখন আর সেইসব কথা মনে করতে চায় না কিন্ত বামুন বাড়িতে বিরিয়ানি পার্টি হচ্ছে বলে তার প্রাণ ছটফট করে বৈকি। এরা নিশ্চয়ই বুচকুনকে এক প্লেট বিরিয়ানি দেবে। ছেলেকে বাড়িতে রেখে আসতে শান্তি পায়না কুলসুম। আনোয়ারের বড় ভাই আজাহারের ঘর পাশেই। তার বিবি একেবারে বিছানাগত। নড়ে চড়ে না। কোমরে ব্যথা থেকে বিছানা ধরে নিয়েছে। বিছানাতে হাগা মোতা। বড় বেটিটাই সাফ সুতরো করে। ছেলে দুটো ভয়ানক গোঁয়ার। বাপের মত। চান্স পেলেই বুচকুনকে ধরে মারে। আনোয়ার বেঁচে থাকতে যেমন তেমন ছিল। এখন বাপ মরা ছেলের গায়ে কেউ হাত তুলবে, কুলসুম এমনটা সহ্য করতে পারে না। আছাড়ি পিছাড়ি করে মন।
কিন্ত আজ বুচকুন আসে নি। বৌমনি মানা করেছে। বাড়িতে পার্টি আর একটা বাচ্চা ছেলে দোরে ওয়াস্তে বসে থাকবে সেটা হয়?
ভীষণ এমব্যারাসিং।
- কাল তুমি ছেলেকে এখনো না কুলসুম। জাস্ট কালকের দিনটা। এত বাইরের লোক থাকবে। তুমি কিন্ত ইদের শাড়িটা পরে এসো।
বুচকুন হাঁ করে শুনছিল।
পার্টি হলেও বেডরুমের দরজা বন্ধ থাকবে। লোকজন আসার আগে মানে পার্টি শুরু হবার আগেই সন্ধে দিয়ে দেবে সমীরা। দ্যাট ইজ মাস্ট। দিব্য মুখে কিছু না বললেও এই ব্যাপারগুলো মার্ক করে। আরভকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে আগেই। বুচকুনের হাঁ করা মুখের দিকে তাকিয়ে সমীরা আবারো বলল, শুধু কালকের দিনটা ওকে এনো না কুলসুম। কাল ওকে সরাও।
অথচ বুচকুনের ভীষণ ইচ্ছে করছিল আসতে। কালকেই আসতে ইচ্ছে করছিল। লোকজন আসবে। সাজগোজ করা লোকজন। দাওয়াত হবে। বিরিয়ানির গন্ধ উঠবে। বুচকুন দরজার পাশে একটু বসে থাকতে পারবে না? আচ্ছা, যদি ওদের শোবার ঘরের ওপাশে যে বারান্দা আছে, বুচকুন সেখানে বসে থাকে! বাচ্চা ছেলেটা যে ঘুমিয়ে থাকবে, তাকে কিচ্ছু বিরক্ত করবে না সে।জাগাবে না। ঘুম থেকে উঠে গেলেও কাছে যাবে না। কিচ্ছু ধরবে না ঘরের। শুধু এরা আসতে দিক কালকে। দরজার এপাশ থেকে লোকজনের আওয়াজ তো পাওয়া যাবে!
কাল নিশ্চয়ই মাফিনও থাকবে দাওয়াতে।
কিন্ত কী অদ্ভুত। এরা তো বললোই না, মাও যেন কেমন করে রাজি হয়ে গেল। সকালে ইস্কুল থাকে বলে বুচকুনের অসুবিধে হয় না, কিন্ত বিকেলে মা ছাড়া থাকার অনেক অসুবিধা। কেউ খেতে দেয় না। বড় আপা তার মায়ের গু মুত ফেলে ফেলে খিটখিটে হয়ে গেছে। বুচকুনের দিকে ফিরেও তাকায় না। আর আজাহারের বড় ছেলেকে দেখলেই ভয় করে বুচকুনের। মাঝেমাঝেই কেউ না থাকলে বুচকুনকে চেপে ধরে সে। এত জোরে চেপে ধরে যে বুচকুনের দমবন্ধ হয়ে যায়। প্যান্টের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলে বুচকুন চিৎকার করতেও ভুলে যায়।
অথচ বুচকুনকে বাড়িতেই থাকতে হল সেদিন।
অন্ধকার ঘর। একটা বিছানা। পাশের ঘর থেকে নাসিবার কাৎরানি আর তার বেটির গজগজানি ভেসে আসে। আজাহারের বড় বেটা ঘরে ফেরার আগেই ঘরের ছিটকিনি তুলে দেবার চেষ্টা করল বুচকুন। টুল নিয়ে এসেছিল ছিটকিনি তুলে দেবার জন্য। আপ্রাণ চেষ্টা করছিল যাতে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করা যায়।ভীষণ কষ্ট হয় তার।কুলসুমের কাছেও কখনো বলতে পারেনি। ফয়জলের ফেরার সময় হয়ে আসছিল আর বুচকুন নীল হয়ে যাচ্ছিল ভয়ে।
আম্মা কেন সঙ্গে নিয়ে গেল না? অনেক লোকের সামনে দরজায় বসে থাকলে কি হত!
আম্মা গতকাল রাতে বুচকুনকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিল।
আতর মাখে না আম্মা আর।তবু তার গায়ে কী সুন্দর গন্ধ ! বুচকুন কুলসুমের পেটের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল যেন।
- দরজার বাইরে বসে থাকবো?
- না রে ব্যাটা। কাল ঘরে থাকিও।
বুচকুনের ঢিলে হয়ে যাওয়া তাবিজ শক্ত করে বাঁধছিল কুলসুম।
- আমাকে রঙ কিনে দিবা আম্মা?
- কী করবা বুচকুন?রঙ দিয়া?
- ছবি আঁকবো আম্মা।
অন্ধকারে মনে মনে ঠাহর করলো কুলসুম। ব্যাটা কাজের বাড়ির দোরগোড়াতে বসে হাঁ করে ছবি দেখে। তাই বুঝি রঙের শখ চেগেছে।আজাহার দেখলে গালিয়ে ভূত ছোটাবে।
- কিনে দিব ব্যাটা। এখন ঘুমাও।
একটা ছবির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুচকুন কাল। কুলসুম ছোটবেলায় যে পুকুরে সাঁতার দিত, ছবিতে সেই পুকুরটা জিন্দা ধরা আছে।একমাত্র মায়ের বুকে শুয়ে সেই পুকুরের গন্ধ পাওয়া যায়।
কিন্ত পরেরদিন যখন সত্যি কুলসুম তাকে বাড়িতে রেখে চলে গেল কাজে, বুচকুন আর পুকুরের জলের গন্ধ পাচ্ছিল না। খালি দাদা ফয়জলের ঘামের বোঁটকা গন্ধ। ওর বমি পাচ্ছিল।
বমি পাচ্ছিল কুলসুমেরও। ভীষণ বমি।
ফ্ল্যাটের নিচতলাটা সকালের দিকে বেশ লোকজন ভর্তি থাকে। বাজার যায়।আসে।কাজের লোকেরা ওঠা , নামা করে।লিফটে হুশহাশ শব্দ।
সন্ধের দিকে অনেক ফাঁকা। যে যার সময়ে বের হয়। ঢুকে যায়।
কুলসুমের সামনে দাঁড়িয়েছিল লিফটম্যান। ওর কালি পড়া চোখ অথচ ভরা শরীর মাপতে মাপতে বলেছিল, টুলে। তুমি আসলে মুসলমান। নও? কাল কী এনেছিলি? সেমাই? দিলি না আমাকে?
লিফটম্যান কাম ওয়াচম্যান। তার মুখের দুর্গন্ধ নেমে এল কুলসুমের ঠোঁটে।বু কে। পোশাক ছিঁড়ছে না। শুধু কুলসুম ছিঁড়ে যাচ্ছিল।
কুলসুম চিৎকার করতে পারছে না। চিৎকার করলেও আসবে না কেউ।পার্টি শুরু হয়ে গেছে ওপরে। সব ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ।একতলায় তো কোনো ফ্ল্যাট নেই।
খোঁচা দাড়ি। ঘেমো হাত। কুলসুম ওয়াক করে ওঠার আগেই হিসহিস করে উঠেছিল বনমালী।
- একবার চিৎকার কর। বলে দেবো তুই মুসলমান। কমিটি বসে যাবে।
কুলসুম অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে ভাবছিল, বুচকুনকে সঙ্গে নিয়ে এলো না কোন গুণাহ্তে।
এসেই বাথরুমে ঢোকে। পরিষ্কার হয়। কিন্ত বাড়িতে পার্টি চলছে। আজ এতক্ষণ বাথরুমে কেন? সমীরার বিরক্ত লাগছিল। ডিশ জমে যাচ্ছে গুচ্ছের।
অবশ্য কুলসুম শান্তমুখেই বেরিয়ে এল। চোখ যে লাল হয়ে আছে খেয়াল করেনি সমীরা।
- তাড়াতাড়ি ডিশ গুলো তুলে নাও টুলে। আর গ্লাসগুলো ধুয়ে বাঁদিকের টেবলে রেখো।
শান্ত। ধীর।কুলসুম যেন ছবির মানুষ। কাবাব তিনরকমের। ডিম ভুজি। মুর্গি রোস্ট। বিরিয়ানি। কাস্টার্ড।ফ্রুট সালাড।আইসক্রিম।
- দিব্য! সমীরা হ্যাজ ইউনিক চয়েজ। দ্যাখো, সবকটা ওয়াল প্রায় ফাঁকা বলে এই পেইন্টিংটা এত খুলেছে!
মিসেস রহমান উদ্বেলিত কন্ঠে বললেন।শালিনী মেরহোত্রা শিফন ঠিক করতে করতে সায় দিলেন। চিত্রা গুপ্ত নিজে ছবি আঁকেন। তিনি আগেই মার্ক করেছেন।
অদ্ভুত লাইভলি একটা পেইন্টিং।
বেড়ালের মুখে মাছ যেন জ্যান্ত।
কুকুরটার চোখ।
আর বাচ্চা ছেলেটা। যে পুকুরের ধারে বসে আছে। পুরো জীবন্ত যেন!
শওকত ওসমান ও রাজীব লাহিড়ির আরো ফিশ ফ্রাই চাই। খালি প্ল্যাটারগুলো সরাচ্ছিল কুলসুম। নতুন শাড়িতে কেমন পচা গন্ধ স্নানের পরেও।
জিভ কাটল সমীরা।
যাহ্! মেয়েটা সকালে সেমাই বানিয়ে নিয়ে এসেছে। বাটিটা অমনি রাখা আছে ব্যালকণিতে। কে আর খাবে?ও দেখার আগেই ফেলে দিতে হবে কাগজ মুড়ে ।আর ওর ছেলেটার জন্য কয়েকটা মাফিন দিলেই ম্যানেজ হয়ে যাবে।
সাউন্ড সিস্টেম। জোরে বাজছে। বিলায়েৎ খান। দিব্য বললো, এবার কিছু ওয়েস্টার্ন দিই! ওল্ড ক্ল্যাসিকস?
কুলসুম কাঁচের গ্লাস সরিয়ে নিয়ে গেল ধুতে।
ছবির ছেলেটা চোখ পিটপিট করে উঠেছিল পুকুরের পাশে বসে।
তার আর কোনো ব্যথাবোধ নেই। ভয় নেই।
তবে সে আর কাগজসহ মাফিন খায়নি। কোনোদিন না।
সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজছে ।
হোয়ার হ্যাভ ওল দ্য ফ্লাওয়ারস গান।
ছবির ফুল ফুটে উঠল।একটা। দুটো।তিনটৈ।
ছবির মধ্যে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেল বুচকুন। এই ঘর থেকে এখন কেউ তাকে বাইরে পাঠাতে পারবে না। কিন্ত কুলসুম পদ্মফুল হতে পারল না।
ছবিতে শুয়ে বুচকুন হেসে উঠল ফিকফিক করে। সরাও দেখি এবার !