(বাল্যবন্ধু অসীম রায়কে)
বিহ্বল গণিতবিদ্যা! সন্ধ্যাতারা ভেক্টর রাশিতে বাঁধা।
গূঢ় মান,আহা,ক্যালকুলাস আগলে রাখে আগুনের শিস
দ্যূলোক চকিতে ছাড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস মম অন্তস্থ ত্রিকোণে
দেশ-দশা, কটিতে কি বিষ! সর্পকুণ্ডলী – ঐদিকে টানো
বিজল রেখার নদী, ট্র্যাংকুইলেজারে বিভেদ কি কমবে ভাবছ?
ঝটিতি রম্বাস, কেলেংকারি, বেণী ফাঁসা খণ্ড-টুকরার আদি
অড়হর খেতে পুরনো স্বপ্নের দিন দাগকাঠি মেপে মেপে মেপে
স্বাধিকার আন্দোলন সম্ভব হবে কি? তুল্যমূল্যের দানে
সব যুক্তি টেকে না পারুল,গর্ভেই গণ্ডগোল, ধর্ম-কাহিনি
রক্তধারায় বহে যায়। কপাল লিখন আমি বলব তাহলে!
###
শোন, লক্ষ নদীর জল
জমে উঠল ছলোছল,
তটে আছড়িয়ে শক-হুন
খোলে বিষ মাখানো তূন।
ঘর পরের সংবেদনে
জ্ব্বালে তুমুল তুষানল,
ঘ্রাণ ছড়ায় রন্ধণের
জিবে স্বাদের মখমল।
স্বাদে কোন্ জ্যামিতির গান
নুন ঝরায় ঝরোকার,
পাব সামান্যে সন্ধান
মাটির ভাণ্ড ভাঙা যার!
###
হে অসীম, আমি শুনেছি আছিস শিলিগুড়ি আঘাটায়,
বস্ত্রবিতান তুলেছে নিশান তোর চারু অভিলাষে।
এখানে এখন সারা রাতভর হারমোনিয়াম কাঁদে
অসীম সসীমে লুকাল কোন-বা গণিতের ছলনায়।
মালিকের সাথে কি কাণ্ড করে দাসে,
পৃথিবীর পথ আটকা পড়েছে নানাবিধ মতবাদে!
আমি পার্কের পাকা পাতা দেখি দুমড়ানো, ব্যথাতুর
উদ্গম হল অদূরে মাটিতে ধারাল একটি ক্ষুর,
রণন ঝনন যুবা-বাহিনীর বুক চেরা দলাদলি,
তোকে খোঁজে কানাগলি।
একটা নাভির কেন্দ্রবিন্দু আর-টায় পৌঁহুছিতে
যতটা সময় ব্যয়িত হয়েছে, বদলেছে রাজা তার
উর্দি-ইস্তেহার!
বদলে গিয়েছে ব্রিজের বাতাস, নীচে তার ছোট জল
চা-খানা এখন দখল নিয়েছে খুব ছোটলোক ভূতে।
দাঁত বের করে ঝিলিক মারছে সতত শপিংমল!
এখানেও কত বস্ত্রবিতান, লাশ গুম-করা গাড়ি
সসীমই আজকে অসীমতা নিয়ে করছে কেলেংকারি।
শুধু নাই কারু কাঁটা-কম্পাস অক্ষবিন্দু ঠেসে
হঠাৎ উঠল এত রাত্তিরে পুলিশের গাড়ি হেসে।
গ্রেফতার হলি তুই,
এখন একাকী শঁপা-র বাদন শুনে তারপর শুই,
কেননা সূর্য উদয় হবেন আরো বেশি তাড়াতাড়ি।
অসীম রে, তোর দোকানেও পড়ে কাফনের বড় টান,
ঐ মেয়েটির কি হবে তাহলে, হবে কি পরিত্রাণ?
###
উল্কাক্ষপিতচমরীবালভার
হলকা লাগাল আমাকেও কিছু তার।
পোড়াল দুখানি মেহেদি মাখানো হাত
সংরম্ভনা অগ্র বা পশ্চাত।
রোমরাজি ঢাকে রঙ্গলতিকা রোম
দ্রিম দ্রিম দ্রিম গাজাতে ফাটছে বোম!
ছেলেদের খুনে হোলি-হামলায় মেয়েরা
ধুচ্ছে বিকল ক্যামেরা।
শুল্কবিরোধী-দরদি-দলভার,
পণ্যোদগমে ভাঙ্গতেছে সংসার।
###
সুমাইয়া, তোর এখনও হল না বিয়ে,
বর ছিল যারা বয়স হয়েছে ঢের।
সুমাইয়া, যত গল্প তোমাকে নিয়ে
উন্মাদ আর পায়ুমুখী কাফেরের।
সুমাইয়া, তুই চ্যানেলে চ্যানেলে ঘুরে
হারালি অচিন সোনার পুত্তলিকে,
সুমাইয়া, ওরা বেঁধেছে মানুষ বানরের লেঞ্জুড়ে
দেহলীদত্ত ফুল আঁকে দৈনিকে।
সুমাইয়া, তোর মৃত্যু লিখেছে ওরা
চার-রঙে ছাপা বিভঙ্গ ছবিতায়,
তোর যত মেদ তোর যত খেদ শুষে খেয়ে ফুরফুরা
নগদানগদি বাসভাড়াটাও চায়!
সুমাইয়া, যত চ্যানেলে চ্যানেলে তোকে
গোর-আজাবের লেলিহান বাস্তব
গিলে খেল আর দেখাচ্ছে রুজমেখে
তোর বেদনার অবিবাহী পোড়া শব।
সুমাইয়া, চল পাপ ভঞ্জিয়ে আসি
জেরুসালেমের বোমা বাঁধি বাংলাতে।
আবার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা হাসি
নুন মেখে নিই ভাতে।
###
অধীর মাঙ্গন মোর, সদ্য গিলেছি মদ, সেই পাত্র কাত।
রুশ দেশি উপকথা প্রাভদা কি মিথ্যুক রে, কিসসু বলে নি!
গুপ্ত গোবিন্দ নেড়ে স্বভাব বদলান অত সহজ কম্ম না,
কিন্তু তুই অনুধাবনীয় শীৎকার রুদ্ধ করে দিলি, এত্ত খারাপ!
তবু চাই মাইকে মাইকে এলান করুক ওরাঃ
হেলায় হারালে এ দাওয়াই একবার, জীবনের পাছা যাবে মারা!
বাচ্চালোগ, মারো হাততালি, মগর খেয়াল! লুঙ্গি যদি খোলে
তোমারও বিপদ কাহিনি ঝরে যেতে পারে। চারপাশে ঘোরে
বিভঞ্জনা বিপদের। আরে! তার কথা কও? সে বালিকা বিলা
চমনবাহার ছাড়া আর-কিছু বুঝবার পারে না। তবে এক মিনিট
অপেক্ষা করেন, আমারও মুত্রাবেগ আছে, উৎকণ্ঠ কুকিল
নিজের না গান গেয়ে রাইসুর বঙ্গানুবাদ মনেতে দোলায়
(এক মিনিট পর)
তা’লে আপনি এ তাবিজ ধারণ করেন, গিঁট্টু মেরে রাখেন বাহুতে,
আপনার অঙ্গ মেখে নেন আপনার চটকদার গু-তে!
###
এই লভিনু সঙ্গ তব রঙ্গ রাত কাল-বাউস
সুভগসেন, কাল আসেন, হয় যদি খুব হাউস।
কণ্ঠাহাড় তমিশ্রার ক্কাথ মেখে জের-জবর,
মেঘচতুর বৃষ্টিসুর বিব্রতে চিৎ প্রহর।
এই লভিনু রঙ্গ তব সঙ্গহীন ডল-হাউস
গোর-খাদে আঁটল না লালমোতির তখত-তাউস।
চান্দা দিয়ে মান্ধাতার বর্তুলের ভুল মাপন
কে হবেন এই বেলায় নিমতলায় শেষ-আপন!
###
সূর্য বরাবর ভেড়াটা থামল। বিপরীতে নিহিতের চাঁদ
ঢেলে দিল দুধ তুলার তোষনে, একই সমতলে
কখন নিঃশেষ হবে মাতৃময়তা! নাকি বরবাদ
হবার সময় হয়েছে। এই বিদ্রোহে কে কাকে বোতলে
মুগ্ধ করছে, ডর নাই জানে! কথাটা ভিন্নতর ভোল
ডলফিনের কানে কানে একদিন দুঃস্বপ্নে বলেছি
হাত-জোড় করে! জানিয়েছে, মহারথী মহা এক শোল
ফুরিয়ে আসছে তারও সময়দীপন। তার জন্য কেঁদেছি,
তাতে কিবা লাভ! সমস্ত লোকসান মানেই তিজারা,
তাতেই লাইসেন্স মেলে গম্যতার গম ও লূতার।
কীচকের সূরে খসে পরিশ্রান্ত যত-তত আধোলীন তারা
র্যাদা ঘষে ঘষে ঘাম ফ্যালে বিহ্বল সিনিক ছুতার।
কি দেখব এসব! বিপণিরচিতা, সংঘ-মেদ, পাষণ্ড নুনু
নিম্নগ মাটির টানে, চায় কি ও ঢুকে যেতে, মরে যেতে সেথা?
কর্ণবিলাস, তার কাজ হল শুনে যাওয়া রুচিরাক্ত নীপার ঘুঙুর
সেত্তেনত্রিয়ন আর জ্বলবে না, তাই বুকে ব্যথা?
###
রে গণিতা তোর পরিধি-প্রাকার কেন্দ্রের কুঞ্চনে
স্বগত মৃত্যু চায়, তবে তাকে অসীমও বুঝল না তো,
প্রেতযোনি ছেঁড়া মণ্ডল জ্যামিতিকা
বাল-বাচ্চারা গিলে খায় তার শিখা,
আর বুঝি নাই তমোঘ্ন এক রাতও
জিব লাগাবার প্রতিশ্রুতি শঙ্খযুগল স্তনে।
শিলিগুড়ি তুই গুড়ি-বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিস ভাই
কূর্ম-কলা-ই শেষতক রয় স্থায়ী বিধানের তরে।
সভা শুরু ফের, দন্তবিকাশ হো হো হাসি চারিদিক
লিখনে শিখনে বীক্ষণে মজে এমনই ফর্দাফাই
যাবতীয় প্রেম, সুমাইয়া জানে দৈনিক-পাক্ষিক,
টেলি-পর্দায় তারই লাশ আজ সাজিয়েছে থরে-থরে।
সহমরণের গ্রহগুলি থ্যাঁতলানো,
কি আর করব ওদেরই জন্যে গাইতেছি সোপ্রানো!
###
অনুমতি দাও, আরও দুই কথা লিখি
আরও দুই একাকির,
সূরা ও সাকীর
পরম্পরাকে শিখি।
অনুমতি দাও, আরও একবার ডুবি
অথই পাথার
করি একাকার
শ্যাওলা প্রাচীনা রুবি!
###
দেবে বিভা-রস, রুমান্ধকার আলো?
রগ বেঁকে গিয়ে রগে রগে আটকাল।
দাও ভরে খিল, দাও, দাও, দাউ-দাউ
বাক্যাবর্তে লীলা খোলে পর্দাও
তবু পাই না রে, তবুগুলি তবু তবু
যা চাই এখন সবই দেখি হবু-হবু।
‘এখন’ শিখেছে ‘আগামীকল্য-কলা
দেমাগে দেখায় উর্দ্ধগ বাক-ফলা।
না দিলা আদিলা, খসরুই সামলাক
জিব-ঝরা গত জীবনের চার্বাক।
আমি যাই, শুনি, শফিকের বক্তৃতা
এম এ পাশ বটে, তাছাড়া আমার মিতা!
###
আমার কিছু টাকা-পয়সা দরকার, যাকে বলে টাকা-পয়সা, ঠিক তাই
সূর্য ছিঁড়ে রওনা হয় বাস, তারপর সন্ধ্যার কার্বন-কালো আকাশে ঠেস দিয়ে
ফিরে আসে আবার, জিজ্ঞেস করি, পেলে কিছু? নিদেনপক্ষে দুয়েকটা লাশ?
কি বলবে, মুড়ির টিন? নিশ্চুপ রয়, আল্লাহ মালুম মাল-টাল খেয়ে কি না কি করেছে!
পথ যেখানে শেষ ইমানদারগণ সেখানে দাঁড়িয়ে
একেকজনের পেপসোডেন্ট সাদা আরশ পর্যন্ত আলোকিত করে আছে
একবার মনে হয় বলি, কিছু টাকা-পয়সা দরকার, যাকে বলে টাকা-পয়সা, ঠিক তাই
সুদানের প্লেনের জানালায় কার মুখ দেখা গেল ঐ
বকুল, বকুল হয়ে ওঠে যে মুহূর্তে ঠিক তেম্নি ঐ মুখ
মেঘ ছিঁড়ে একশ রজনিগন্ধা উড়ে আসে, যাকে বলে রজনিগন্ধা, ঠিক তাই
হে-ই, বাংলায় একশ ডলার রজনিগন্ধা মানে ইনফ্লেশান বুঝি!
দারিদ্রসীমার অনেক অনেক নীচে আমার ভিতর ফুল ঝরে যায়
হলুদ, হরিৎবর্ণ ফুল
রু এখন তুমি যাও
বাচ্চাদের ফরাসি শেখাও, তুমি শেখো বাঁচা, যাকে বলে বাঁচা, ঠিক তাই
কবিতার সঙ্গে মরণ-অনল লাগালাগি
পকেট চেপে বাড়ি ফিরতে থাকি, কক্খনো পৌঁছাই-না পৌঁছিয়ে গিয়ে।
এর মধ্যে মনে এল ফিলিস্তিন জ্যামিতি,
আমার জমির মাপটাও তো নিতে হবে, যাকে বলে মাপ, ঠিক তাই
সুনসান চারদিক, কৌশিকি দিল্লী যাচ্ছেন, আহা, গাইবেন ইমন কল্যাণ
বাপ তারে কোলে করে লবে তানপুরার স্বভাবে
তা হলে, আমি কি করব?
ছিঃ, এমন বলতে নাই, নিজেকে কি করা যায় নাকি!
আমার গজফিতা অর্ন্তহিত ইঞ্চির মধ্যে
মিলিমিটারের মধ্যে
ন্যানো-তমসায় লীন হয়ে গেছে
আমি আর নেইতো আমি
নাই মানে নাই
যাকে বলে নাই
ঠিক-ঠিক তাই
###
আরও লিখব, আরও?
ইচ্ছে হলে না-লিখলেও পার।
রূপসন্নয় বদলাতে কি হবে?
কি বলছে বান্ধবে!
আচ্ছা না-হয় আরেক কলম লিখি
যেমন, দেয়ালের টিকটিকি
খুঁজছে অম্বিকারে,
হতমান হাহাকারে?
লিখি, অরুণের মরা মুখ,
পইকে কাঁদানো অগ্রের ঘৃণাটুক্।
লিখি, হোসেনপুরের দূর্বহ একরাত,
অশ্বক্ষুরে ভাঙচুর করা ছাত।
লিখি, বাহিরগোলার গোপন তৎপরতা,
পিছন-ছুরি মারবার মুগ্ধতা!
লিখি, অনাদির শাস্তর,
সাত আসমান ঢেকে ফেলা এক যমুনাবতীর চর।
###
একের বিয়োগ-ব্যথা বর্গমূলে যদি থাকো, প্রিয়ে
নিরাখণ্ড এ তামাসা কেন? ক্যালকুলাস ঝরান ত্রিকাল
কেন দিলা আমার মাংসে রুয়ে এত কথা বানিয়ে বানিয়ে,
এ কি তব ধর্ম-জিরাফ রক্তাকাশে দিতেছে উড়াল!
প্রাণবায়ু, বকচ্ছপ লীলা, এই আসছ, এই যাচ্ছ চলে,
পরিমাপ-অযোগ্য শীর্ষ মান, তস্করের সংক্ষিপ্ত বিলাসে
মরণোত্তরের সভায় কবিকণ্ঠ লুকায়েছে নিজের লাশের
কর্পূর-গন্ধী মুখ, একুশ বিরিক্ষিজুড়ে লান্নত ফলে।
ফলতে থাউক