এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক

  • করোনার দিনগুলি - দ্বাদশ কিস্তি

    ঐন্দ্রিল ভৌমিক
    ধারাবাহিক | ২৫ জুলাই ২০২০ | ৩৫৮৫ বার পঠিত
  • করোনার দিনগুলি #৪৬

    রাত সাড়ে নটার সময় চেম্বার সেরে বাড়ি ফেরার সময় তিনমাস আগের অনুভূতি হল। মধ্যমগ্রামে আবার লক ডাউন শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট খাঁ খাঁ করছে। মধ্যমগ্রাম ব্রিজে আমিই একা আরোহী।

    তবে পার্থক্যও আছে। আগে লক ডাউনের শুরুতে মধ্যমগ্রামে একটিও করোনার কেস ছিল না। এখন পাড়ায় পাড়ায় কেস। আমার রোগীদের মধ্যে প্রতিদিন দু- একজনের পজিটিভ বেরোচ্ছে। আজ সকাল থেকে তিনজন জানিয়েছেন তাঁদের কোভিড-১৯ আরটি-পিসিআর পজিটিভ। তাঁদের মধ্যে একজনের বাড়ির বাকি সদস্যদের জ্বর আসতে শুরু করেছে।

    অনেকেরই প্রায় ২৫০০ টাকা খরচ করে টেস্ট করার ক্ষমতা নেই। তাঁরা চারদিন- পাঁচদিনের জ্বর নিয়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হাসপাতালে বেডের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। পজিটিভ রোগীরা অধিকাংশ বাড়িতেই থাকছেন। বার বার ফোন করছেন। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বা অন্য অসুবিধা হলে কি করবেন বুঝতে পারছেন না। আমিও সদুত্তর দিতে পারছি না।

    মার্চ- এপ্রিল মাসে লক ডাউনের প্রথম দিকে বেশ রোমাঞ্চ লাগত। একটা মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমারও কিছুটা অবদান থাকবে।যত দিন যাচ্ছে রোমাঞ্চ একঘেয়েমিতে বদলে যাচ্ছে। কতদিন ছুটি পাইনি। কতদিন কোথাও বেড়াতে যাইনি। সেই মার্চ মাসের শুরু থেকে একনাগাড়ে রোগী দেখে চলেছি।রোজ সকাল আটটা থেকে রাত সাড়ে নটা অবধি সাড়ে তেরো ঘণ্টা ধরে রোগী দেখতে আর ভাল লাগছে না। তাছাড়া আস্তে আস্তে বুঝতে পারছি, মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের নিশ্চিত পরাজয় ঘটেছে।

    স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাড় পাঁজরা বেড়িয়ে গেছে। কোভিড রোগীদের তো বটেই, অন্যান্য রোগেও চিকিৎসা পেতেও জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে।এটা হওয়ারই ছিল। মিডিয়া ও সরকারের পক্ষ থেকে যথারীতি ভঙ্গুর পরিকাঠামোকে চাপা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। মানুষেরা আমাদের গালি দিয়ে মনের ঝাল মেটাচ্ছে। কর্পোরেট হাসপাতালগুলি জনস্বাস্থ্যের এই দুর্যোগের সময়েও ব্যবসায়িক মনোভাব থেকে বেরোতে পারেনি। তারা নানা রকম করোনা প্যাকেজ চালু করেছে। তা সাধারন মানুষ তো বটেই, আমার মতো মধ্যবিত্ত চিকিৎসকেরও সামর্থ্যের বাইরে। সরকার সে সব দেখে শুনেও চুপচাপ।

    তবে এই আঁধারে একটাই আলোর রেখা, এতদিনে আমরা নিঃসন্দেহে বুঝতে পারছি করোনার মর্টালিটি রেট ততটা বেশি নয়। না হলে এতদিনে চারপাশ শ্মশান হয়ে যেতো। অধিকাংশই সেরে উঠছেন। এখনও পর্যন্ত আমার যে ১৮ জন রোগীর করোনা ধরা পড়েছে, তার মধ্যে মাত্র তিনজন কে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। বাকিরা বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকছেন।

    আরও একটি আলোর রেখা এই করোনার সময়ে বহু নিম্ন বিত্ত ও মধ্য বিত্ত তরুণেরা রোগের ভয়ে ঘরে লুকিয়ে না থেকে অসহায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ওর কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে দিনের পর দিন কমিউনিটি কিচেন চালিয়েছে। কর্মহীন সর্বহারা মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছে।

    সবে পাশ করা বহু তরুণ চিকিৎসক করোনা ও আমফান বিধ্বস্ত বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। বয়স্ক চিকিৎসকেরাও তাঁদের বার্ধক্যকে তুড়ি মেরে সন্তানসম জুনিয়ারদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

    ইদানীং রোগী দেখতে দেখতে প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতায় ভুগছি। রোগীর সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গেছে। আর তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার স্থান গুলি ক্রমশ কমে আসছে। বেশিরভাগই জ্বরের রোগী। তাছাড়া বাকিদের অনেকেরই ভয়ঙ্কর এমারজেন্সি। অনেকেরই ভর্তি প্রয়োজন। কিন্তু কেউই হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। মানসিক চাপ আরও বাড়ছে নিজের পরিবারের কথা ভেবে। বাবার বয়স ৭২ ছাড়িয়েছে। সুগার আছে। তবু কারোর কথায় পাত্তা দিচ্ছেন না। এই অবস্থাতেও প্রায় পুরোদমে রোগী দেখছেন। অপারেশন করছেন। ভাই অজ্ঞানের ডাক্তার। আমার ও ভাইয়ের স্ত্রী দুজনেই নার্স। সকলেই পুরোদমে কাজের মধ্যে রয়েছে। এখনও যে আমাদের বাড়িতে করোনা ঢোকেনি এটাই আশ্চর্যের। বাড়িতে নয়, চার ও দুই বছরের তিনটি ছোট্ট মেয়ে। করোনা ঢুকলে কি হবে চিন্তা করতেও ভয় হয়।

    তাছাড়া আমার দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট সঞ্জয়দা আর গৌড়কে নিয়েও চিন্তা হয়। আমার আশ্বাসবাণীতেই ওরা একদিনও নিজেদের কাজে কামাই করেনি। সঞ্জয়দার ছেলের বয়স মাত্র কুড়ি দিন। ওদের একটাই ঘর। সঞ্জয়দা বারান্দায় শুচ্ছে।

    এসময় মেয়েদের সহচর্য পেলে হয়তো মানসিক অস্থিরতা একটু কমতো। তারও উপায় নেই। সারাদিন রোগী দেখার পর বাড়িতেই একতলায় চেম্বারের পেছনের একটি ঘরে কোয়ারান্টাইনে থাকছি। ‘এই একলা ঘর আমার দেশ’ গানটা শুনলে আগে বেশ লাগতো। এখন শুনলে চরম বিরক্তি লাগবে।

    কবে যে এই দুর্দশা কাটবে জানি না। পরপর করোনা রোগী ধরা পড়ায় চেম্বারেও কিছু বিধি নিষেধ শুরু করতে বাধ্য হয়েছি। রোগীর সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছি, যাতে আমার চেম্বার করোনা ছড়ানোর জায়গা না হয়ে ওঠে। অনেক রোগী অসুবিধায় পড়ছেন। তাঁদের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থী। যারা সুগার, প্রেশার, থাইরয়েডের সমস্যা এই সব ক্রনিক রোগে ভুগছেন, এই সময়ে খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া দয়া করে ডাক্তার দেখাতে আসবেন না।

    কটা দিন ছুটি খুব প্রয়োজন। কিন্তু কিছুতেই ছুটি পাওয়ার উপায় নেই। একমাত্র করোনাই পারে আমাকে সেই ছুটি দিতে।
    ~~~

    করোনার দিনগুলি #৪৭

    ইঁচিবুচো কালা


    জ্বরের রোগী দেখতে দেখতে ফোন ধরা উচিৎ নয়। কিন্তু কেউ যদি একটানা ফোন করে, করেই যায়; তখন কী করবো?

    বাধ্য হয়ে স্টেরিলিটির পিণ্ডি চটকে ফোন কানে লাগালাম। ওপাশ থেকে মার্জিত গলা, 'স্যার একটা প্রশ্ন করতে পারি?’

    'সংক্ষেপে বলুন। আমি ব্যস্ত আছি। রোগী দেখছি।'

    'হ্যাঁ বলছি। আমার এক আত্মীয়ের করোনা হয়েছে। বাড়িতেই আছেন। আমি যদি তার সাথে ফোনে কথা বলি তাহলে কি আমার করোনা হতে পারে?’

    আমি বাক্যি হারা হয়ে গেলাম। এ প্রশ্নের কি উত্তর দেব! ড্রপলেট ইনফেকশন শুনেছি, vector-borne ইনফেকশন শুনেছি, জল বাহিত ইনফেকশন শুনেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ বাহিত ইনফেকশনের কথা শুনিনি।

    জিভের ডগায় চলে আসা গালাগাল সামলে কোনরকমে বললাম, 'ইঁচিবুচো কালা।'

    ভদ্রলোক উৎকর্ণ, 'এটা কি বললেন?’

    'আপনি কি কাজ করেন?’

    'সরকারি চাকরি। নবান্নে আছি।'

    'তাহলে আমায় এসব না বলে দিদিকে বলুন।' ফোনটা কেটে মোবাইল সুইচ অফ করে দিলাম।

    জ্বরের রোগীটি এতক্ষন উসখুস করছিলেন। এবার মুখ খুললেন, 'আচ্ছা ডাক্তার বাবু, RNA ভাইরাসের রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ এনজাইম নষ্ট করার জন্য কোনটা ভালো; কাঁচা হলুদ বাটা না আদা বাটা?'

    আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম।

    'কতটা গরম খেলে করোনা ভাইরাসের ক্যাপসুল নষ্ট হয়ে যায়?'

    আমি বললাম, ‘আপনি আমাকে দেখাতে এসেছেন কেন? পতঞ্জলির করোনিল তো ছিল।’

    ভদ্রলোক স্বচ্ছ ক্যাপে ঢাকা মাথা নাড়ালেন,'না না ডাক্তার বাবু, আমি সাইন্সের ছাত্র। ওসব বুজরুকি বিশ্বাস করি না।'

    আমি বললাম, 'বুজরুকি আর সিউডো সাইন্স বুঝি আলাদা? থালা বাজানোর কম্পাংকে কিভাবে করোনা ভাইরাস ধ্বংস হয়, তাই নিয়ে একাধিক জার্নালে পেপার বেড়িয়ে গেছে।'

    নাক ও গলার সোয়াব কোভিড- ১৯ পরীক্ষার জন্য লিখলাম। উনি বললেন, ‘আমার নিশ্চয়ই করোনা হয়নি, কি বলেন?'

    বললাম, 'এর পেছনেও কি আপনার কোনো বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা আছে?'

    ‘ডাক্তার বাবু করোনা হলে কি করব? কোথায় যাব? টিভিতে সারাক্ষণ দেখাচ্ছে কোনো হাসপাতালে বেড নেই। ভেন্টিলেটর ফাঁকা নেই। বিনা চিকিৎসায় রোগীরা মরে যাচ্ছে।

    'মরণ কালে হরির নাম করলে এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না। সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে বহুকাল ধরে চিকিৎসকরা চেঁচিয়েছেন। জনগণ তাঁদের পিটিয়ে হাতের সুখ করেছেন। আর সরকার মেলায় খেলায় টাকা বিলিয়েছে।'

    'আচ্ছা ডাক্তার বাবু, করোনা হলে আমি কি মরে যাব?’

    বললাম, 'আপনার তো অন্য কোনো অসুখ নেই। ভাগ্য খুব খারাপ না হলে মরবেন না।'

    ভদ্রলোক আহত দৃষ্টিতে তাকালেন, ‘আপনি একজন ডাক্তার হয়ে ভাগ্যের হাতে আমার জীবনটা ছেড়ে দিচ্ছেন?'

    হাসলাম, 'শুধু আপনার জীবন নয়, নিজের জীবনটাও ছেড়েছি। আপাতত ভাগ্যের চেয়ে ভরসাযোগ্য কিছু পাচ্ছি না। দয়া করে এর পেছনে কোনো বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা জানতে চাইবেন না।'

    পুরোটাই তিনদিন আগের ঘটনা। আজ সেই রোগী কিছুক্ষণ আগেই ফোন করেছিলেন। ওনার কোভিড– ১৯ ধরা পড়েছে। বললাম, 'টেনশন করছেন নাতো?’

    'না ডাক্তার বাবু। এখন একেবারে চাপমুক্ত লাগছে। জ্বরটাও আর আসছে না। সকালে গরম জলের সাথে পাতিলেবু, তারপর কাঁচা রসুন, দিনে চারবার স্নান- ওভাবে ভয়ে ভয়ে বাঁচা যায় নাকি?'

    বললাম, 'তাহলে এদ্দিন আমার মাথাটা কেন খারাপ করছিলেন? ইঁচিবুচো কালা...
    ~~~

    করোনার দিনগুলি #৪৮

    কাল লকডাউনে রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। লকডাউন সফল করার জন্য প্রশাসনকে তেমন কোন কষ্ট করতে হয়নি। মানুষ আতঙ্কে ঘর থেকে বেরোয়নি।

    আতঙ্কিত হওয়ার কারণও আছে। গত কয়েক সপ্তাহে মধ্যমগ্রামে করোনা রোগী প্রচুর বেড়েছে। আমার মত একজন বেসরকারি চিকিৎসকের প্রতিদিন চার- পাঁচজন রোগীর করোনা ধরা পড়ছে।

    পাল্লা দিয়ে জ্বরের রোগী বাড়ছে। হঠাৎ করে এত জ্বরের রোগী বাড়ার সাথে করোনা মহামারী সম্পর্ক বোঝার জন্য জনস্বাস্থ্য বিশারদ হওয়ার দরকার নেই। প্রায় সকলকেই কোভিড- ১৯ পরীক্ষার জন্য লিখছি। করাচ্ছেন খুব অল্প মানুষই।

    প্রাইভেটে কোভিড-১৯ (RT PCR) পরীক্ষার খরচ বেশ বেশি। প্রায় ২৫০০ টাকার মতো। সরকারি জায়গায় টেস্ট করার হাজার হ্যাপা। ঘোরাঘুরি করতে করতেই জ্বর কমে যাচ্ছে। তাছাড়া অনেকের মধ্যেই করোনা হলে সমাজচ্যুত হওয়ার ভয় কাজ করছে। সকলে টেস্ট করলে রোগীর সংখ্যাটা নিঃসন্দেহ কয়েক গুণ বেশি হতো।

    রোগ ধরা পড়লে আরেক সমস্যা। অনেকেরই শ্বাস কষ্ট, প্রচণ্ড জ্বর থাকছে। তাঁরা ভর্তি হওয়ার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন। সব জায়গাতেই শুনতে হচ্ছে, বেড খালি নেই।

    তবে এতো অন্ধকারে একটাই আশার আলো, করোনার মর্টালিটি রেট নিঃসন্দেহ খুবই কম। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখছি অধিকাংশ মানুষই হোম আইসোলেশনে থাকছেন এবং সুস্থ হয়ে উঠছেন।

    অতএব করোনা আক্রান্ত হলেই সব শেষ এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ভাগ্য খুব খারাপ না থাকলে আপনি বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে যাবেন। এবং তার জন্য হাতি ঘোড়া চিকিৎসাও কিছু লাগবে না।

    যারা হোম আইসোলেশনে থাকছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে – তারা একটি আলাদা ঘরে থাকবেন। সবসময় একটি সার্জিক্যাল মাস্ক পরে থাকবেন এবং আলাদা বাথরুম, থালা-বাসন, জামা- কাপড় ব্যবহার করবেন। বাড়িতেও অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে সরাসরি কথা না বলে মোবাইলে কথা বলবেন। জ্বর কমে গেলেও বা সুস্থ হয়ে উঠলেও অন্তত চৌদ্দ দিন আইসোলেশনে থাকবেন।

    আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিকে কখন হসপিটালাইজেশনের দরকার হয়, তাই নিয়ে গাইডলাইন আছে। পরে তা নিয়ে বিস্তারিত লেখা যাবে। তবে করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য একটি পালস অক্সিমিটার অবশ্যই জোগাড় করতে হবে। প্রতি তিন চার ঘন্টা অন্তর অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখতে হবে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫% এর কম হলে ভর্তির চিন্তা ভাবনা করতে হবে এবং ৯০% এর কম হলে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

    আমাদের দূর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো করোনার প্রথম ঢেউতেই টলমল করছে। এই পরিকাঠামো টিকিয়ে রাখতে গেলে অধিকাংশ রোগীকেই হোম আইসোলেশনে থাকতে হবে।

    মিডিয়াতে বারবার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু গুলিকে হাইলাইট করছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এগুলো ব্যতিক্রমী ঘটনা। অধিকাংশ মানুষই কিন্তু বাড়িতে থেকেই সুস্থ হচ্ছেন। এসময় টিভিতে খবর বেশি না দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ।

    তবে চিকিৎসক হিসাবে রোগীকে হোম আইসোলেশনে থাকতে বলার সময় যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি সেটা হলো, অধিকাংশ রোগীর বাড়িতেই একটি বা দুটি ঘর। রোগীকে আলাদা ঘরে রাখা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া গোটা বাড়িতে একটাই বাথরুম।

    মধ্যমগ্রাম অঞ্চলে এরকম রোগীদের জন্য একটি সেফ হোম থাকলে হয়তো সমস্যা কিছুটা মিটতো। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন- মধ্যবিত্ত রোগীরা সেখানে থাকতে পারতেন। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া সেফ হোম চালু প্রায় অসম্ভব।

    সম্ভবত ভ্যাক্সিন বাজারে আসার আগেই এ অঞ্চলে প্রায় সকলেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবো। তাছাড়া RNA ভাইরাসের ভ্যাক্সিন কতটা কার্যকরী হবে তাও এখনো বলা মুশকিল। তাই নিজের ইমিউনিটি ও মাস্ক, হাত ধোওয়া এবং শারীরিক দূরত্ব রক্ষার উপরই আপাতত আমাদের ভরসা করতে হবে। দু’বেলা পুষ্টিকর খাবারের সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

    যদিও দেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষে দু’বেলা পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করা অসম্ভব। দীর্ঘ দিনের লকডাউন তাঁদের অর্থনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দিয়েছে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৫ জুলাই ২০২০ | ৩৫৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২৭ জুলাই ২০২০ ০৭:২৭95598
  • মহামারীর জীবন্ত দলিল।

    এপারের পরিস্থিতিও প্রায় একই। প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, হাসপাতালে ছটফট করছেন হাজার হাজার মানুষ, চিকিৎসা না পেয়েও মরছেন আরও.... দেশের বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্থার মেকাপ খসে পড়েছে।...

    মনে মনে এই ধারাবাহিকটির জন্য অপেক্ষা করি। 

    আরো লিখুন 

    #

    গুরুর টেকিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পুরো লেখাটি বোধহয় "বোল্ড" আকারে প্রকাশিত হয়েছে, টেক্সট খুব চোখে লাগছে, অনুগ্রহ করে ঠিক করে দিন। ধন্যবাদ                                       

  • Guruchandali | ৩০ জুলাই ২০২০ ১৯:৩০95698
  • দুঃখিত, ঠিক করে দেওয়া হলো, বিপ্লব রহমানকে ধন্যবাদ।
  • π | ১৯ আগস্ট ২০২০ ১০:১২96427
  • ডাক্তাররা অনেকেই কর্পোরেট হাস্পতালের রকমসকম নিয়ে সরব। এই কিস্তিতেও সেকথা আছে।
    পুণ্যদাদের এই খোলা চিঠিটিও রইল।

    বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের কাছে
    একটি খোলা চিঠি

    16th August, 2020

    প্রতি,
    সম্পাদক
    Association of Hospitals of Eastern India (AHEI)

    মহাশয়,
    কোভিড রোগীর চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের আকাশছোঁয়া বিল আর ভর্তি হতে আসা রোগীরা আগাম জমা দেবার মত বিপুল টাকা না থাকায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন, এসমস্ত খবর সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত আসার জন্য জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। সাধারণ মানুষ এর ফলে আতঙ্কিত হচ্ছেন এবং এ ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়া ও সমাজে ডাক্তারদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অথচ, কর্পোরেট এবং বেসরকারি হাসপাতালের এই বিল বা ভর্তির ক্ষেত্রে আগাম অর্থ, এইসব ব্যাপারে ডাক্তারদের কোনো ভূমিকা নেই।
    এই পরিস্হিতিতে আমরা WBDF এর তরফ থেকে আপনাদের কাছে আবেদন করছি যে, চিকিৎসার নামে যে কোনো ধরনের দূর্নীতি, হয়রানি বা অনিয়ম হলে বা কোনো ধরণের অমানবিক কাজের সঙ্গে কেউ যুক্ত থাকলে, সেই ব্যক্তির বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক। আমরা *Association of Hospitals of Eastern India (AHEI)* এর কাছে দাবি করছি, এই ধরণের অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য অবিলম্বে আপনারা *Rapid Response Team* বানান। তাতে মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের নিন এবং দ্রুত সমস্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে তার সমাধান করুন। মানুষের দুর্ভোগের সময়ে এটা অবশ্যপালনীয় কাজ।
    এই অতিমারির সময় যে সমস্ত চিকিৎসক ও অচিকিৎসক কর্মী নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষের সবরকম পরিষেবায় নিয়োজিত আছেন, তাদের সকলের শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার দায়িত্ব নিন। চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মী দের বেতন সংক্রান্ত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন। সকল কোভিড- আক্রান্ত
    কর্মীদের নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং বেতনসহ কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়োগকারী হাসপাতাল নিক। মহামান্য উচ্চতম আদালত ও এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন।
    আমরা আশা রাখি রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা আপনারা গ্রহন করবেন। এই অতিমারির কালে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সরকারি, বেসরকারি সমস্ত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এক এবং একমাত্র কর্তব্য।

    সর্বতো সহযোগিতার আশা রাখি।

    ধন্যবাদান্তে,
    ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম

    Dr. Punyabrata Goon,
    উপদেষ্টা এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য
    যোগাযোগ: +919830922194
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন