সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে পরিযায়ী শব্দটা শুনলে পাখির কথা মনে হতো। একদল সুদীর্ঘ গ্রীবার বিহঙ্গ শেত শুভ্র শক্তিশালী পক্ষ মেলে বেরিয়ে পড়েছে অজানার উদ্দেশ্যে।
তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আর জন্মস্থানে ফিরে আসতে পারবে না। তবু বড্ড রোমান্টিক লাগতো এই হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার প্রচেষ্টাকে।
মুর্শিদাবাদের এক প্রান্তিক হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর প্রথম শুনলাম পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা। যে খড়গ্রাম হাসপাতালে কাজ করতাম সেই গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির অন্তত একজন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা বেশিরভাগই কাজ করতেন মুম্বাইতে। যদিও ওখানকার কেউই মুম্বাই বলতেন না। মুম্বাই এখনো তাঁদের কাছে বোম্বে। চেন্নাই পরিচিত মাদ্রাজ নামে।
মুম্বাই ছাড়াও অনেকে কেরলায় কাজ করতে যেতেন। সেই আমলে কেরলায় একেকজন অদক্ষ শ্রমিক সাড়ে তিনশো টাকা দৈনিক মজুরি পেতেন। সারা বছর কাজ করে ঈদের সময় ফেরত আসতেন। আমরা যারা কোয়ার্টারে থাকতাম ঈদের আগে পরে বাড়ি ফিরতাম না। ট্রেনে বাসে বড্ড ভিড় হতো।
এছাড়াও ধান কাটার মরসুমে লোকজন দল বেঁধে বর্ধমান, বীরভুমে যেতেন। রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে কলকাতা ও শহরতলিতে যেতেন।
অনেকে বেশি আয়ের লোভে আরব, কাতার, কুয়েত ইত্যাদি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতেও যেতেন। এইসব দেশগুলোতে যারা যেতেন, অনেকেই আর ফেরত আসতেন না। তাদের বিদায়ের সময় বাড়ির লোকজন প্রায় মরাকান্না কাঁদতেন। এরকম বেশ কয়েকটি বিদায় দৃশ্য দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো বিপদ আছে জেনেও এতো মানুষ জন্মস্থান ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন কেন? এনারা আর যাই হোন অন্তত মানসিক ভাবে লিভিংস্টোন নন।
এর কারণ বুঝেছিলাম একদিন ডাঃ পীযূষ কান্তি পালের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে। কাছের একটা বিলে পরিযায়ী পাখি দেখতে গেছিলাম। পীযূষদা কান্দির ছেলে। এ অঞ্চলের নাড়ি নক্ষত্র চেনে। বলল, 'আগে অনেক পাখি আসতো। এখন আর আসে না। যে কটা আসে বেঁচে ফেরে না।'
আমি বললাম, 'কেন, পাখি মারা তো নিষিদ্ধ?'
'সে-তো অনেক কিছুই নিষিদ্ধ। কিন্তু রাতের অন্ধকারে এই জলা জঙ্গলে পাখি মারলে কে আর দেখতে আসছে।'
পাখি দেখে আলপথ ধরে ফিরছিলাম। চারিদিকে ধানের জমি। অজস্র আল দিয়ে ভাগ করা। বললাম, 'এতো আল কেন? এতে তো অনেকটা জমি নষ্ট হয়।'
পীযূষদা বলল, 'একজন মারা যায়, আর জমি তার সন্তানদের মধ্যে ভাগ হয়। আলের সংখ্যা বেড়ে যায়। কয়েক দশক পর আর চাষের জমি থাকবে না। শুধুই আল।'
মুর্শিদাবাদ সম্ভবত সবচেয়ে জনঘনত্ব পূর্ণ এবং সবচেয়ে অবহেলিত জেলা। এখানকার রেশম জগৎ বিখ্যাত। কিন্তু যারা রেশম শিল্পের সাথে যুক্ত তাদের অবস্থা দেখলে চোখে জল আসতে বাধ্য। ফুটন্ত জলে সরাসরি হাত ডুবিয়ে সিদ্ধ রেশম গুটি তুলে আনছেন। এবং সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির বিনিময়েও বাড়ির সকলের দুই বেলা ভাত জুটছে না।
ওই অঞ্চলের আর একটি বড় শিল্প বিড়ি শিল্প। আট থেকে আশি বছরের সকলেই সামান্য মজুরির বদলে সারাদিন ঘাড় গুঁজে বিড়ি বাঁধছেন। সারাক্ষণ তামাক ঘাঁটায় তাদের বুকে বাসা বাঁধছে যক্ষ্মা।
মুর্শিদাবাদের আরও একটি শিল্প আছে। বোমা শিল্প। খড়গ্রাম ব্লকের সাদল, শংকরপুর সেই সময় ছিল বোমা বাধার জন্য বিখ্যাত। রাজনৈতিক মদতে ঘরে ঘরে বোমা তৈরি হতো। খুন জখম ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। একটি ছাগলের জীবনের দাম ছিলো মানুষের চেয়ে বেশি।
এখানকার অধিকাংশ মানুষই অল্প শিক্ষিত বা নিরক্ষর। জমির অভাবে এবং শিল্পের অভাবে অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে যেতেন। এবং বেশিরভাগ মানুষই শূন্য হাতে শরীরে রোগ নিয়ে ফেরত আসতেন।
মুম্বাই বা কেরলে একটা ঘরে তারা গাদাগাদি করে পশুর মতো থাকতেন। যার ফলে কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। অসুস্থ হলে মালিক কোনো দায় দায়িত্ব নিতেন না। তাকে হাওড়া বা শিয়ালদার ট্রেনে তুলে দিয়ে দায় সারতেন।
কিভাবে যে পরিযায়ী শ্রমিকটি শেষ পর্যন্ত মৃতপ্রায় অবস্থায় খড়গ্রাম হাসপাতালে এসে পৌঁছাতেন, সেটা ছিল একটা রহস্য। তাঁরা বেশি আক্রান্ত হতেন ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মায়। তাছাড়া এইচ আই ভি, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগও বিরল ছিল না। মুম্বাই থেকে যারা আসতেন তাঁদের ম্যালেরিয়া সহজে সেরে যেতো। কিন্তু যারা ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে বিভিন্ন খনিতে কাজ করতেন, তাঁদের ম্যালেরিয়া ছিলো ভয়ংকর।
তখন ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার আর্টেসুনেট কম্বিনেশন থেরাপি সবে চালু হয়েছে। তবু্ও সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও কয়েকজন জঙ্গলের ম্যালেরিয়া রোগীকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।
তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা ও মৃত্যু দেখেও অন্যরা ভয় পেতেন না। বাবার মৃত্যুর পর একমাসের মধ্যেই ছেলে মুম্বাইয়ে রওনা দিয়েছে। বিধবা মা সম্মতি দিয়েছেন আরও ছোটো দুজন সন্তানের কথা ভেবে।
লক ডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা হঠাৎ করে সবার সামনে বে আব্রু হয়ে গেছে। কিন্তু এই সমস্যা আজকের নয়, বহু দিনের। এই সমস্যার সমাধানের জন্য দরকার জন সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় ভাবে কাজের ব্যবস্থা করা।
নিজের চোখে দেখেছি মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ কি অপূর্ব নকসি কাঁথা তৈরি করছেন, অথচ তার ঘরে চাল বাড়ন্ত। রেশম শিল্পীদের অবিস্মরণীয় কাজ দেখেছি। রাতে নিকানো দাওয়ায় বসে হ্যাঁচাক আর চাঁদের আলোয় অলৌকিক রায়বেঁশে নৃত্য দেখেছি, মুর্শিয়া গান শুনেছি।
কিন্তু সভ্যতার কাছে এসবের কোনো মুল্য নেই। আস্তে আস্তে এসব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। মুর্শিদাবাদ পরিচয় পাবে সস্তায় শ্রমিক সরবরাহকারী জেলা হিসেবে।
করোনার দিনগুলিতে তাঁদের নিয়ে একটু নাড়াচড়া হবে। তারপর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে তাঁদের কথা কেউ ভাববে না।
~~~~
করোনার দিনগুলি #৩২
বুড়ি
কাশীবাসী বুড়ি অনেকদিনের বাসি কাশি নিয়ে চেম্বারে ঢুকলো। সঞ্জয়দা সাবধান করে বললো, 'ঠাকুমা ডাক্তারবাবুর সামনে কেশো না কিন্তু।'
বুড়ি বলল, 'কাশি আসলে চাপব কি করে বাপ আমার। তুই হাগার বেগ এলে চাপতে পারিস?’
তারপর একটি বেল বার করে টেবিলে রাখল। বলল, 'এই রাখলুম ভিজিট। টাকা পয়সা নাই কিন্তু।'
বললাম, 'বেল নিয়ে কী করবো ঠাকুমা। ও তুমি নিয়ে যাও। খেয়ো।'
রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীদের মুখের ভাষা পড়া খুবই জরুরি। ইদানীং সব মুখই মুখোশের আড়ালে। তাই চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছি। বুড়ির সুতো বাঁধা চশমার ফাটা কাঁচের আড়ালে আহত দৃষ্টি। অভিমানী স্বরে বলল, 'টাকাও দেব নে, বেলও দেব নে, তাহলে তোর চলবে কি করে?'
আমি হাসলাম, 'ঠিক চলে যাবে।'
বুড়ি বলল, 'কিচ্ছু চলবে নে। বেলটা রেখে দে। ভালো করে চটকে বিচি গুলো ফেলে দুধে গুলে খাস। আহা, অমৃতের মতো সোয়াদ। কাশী থেকে ফেরার পরে একদিনও জোটেনি। কী কুক্ষণে যে মহামারির আগে বাড়ি ফিরতে গেলুম।'
সময় নষ্ট হচ্ছে। লক ডাউনের সময় তাড়াতাড়ি রোগী দেখছি, যাতে ভিড় না জমে। রোগীদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার দায়িত্বে আছে গৌড়। কেউ চেম্বারে উঁকি মারার চেষ্টা করলেই তেড়ে ধমক লাগাচ্ছে। গৌড় বাইরে থেকে বলল, ‘ডাক্তারবাবু, একটু হাত চালিয়ে। ভিড় বাড়ছে।'
বললাম, 'আমি ইতিহাস পরীক্ষা দিচ্ছি না গৌড়, যে হাত চালিয়ে খাতা ভরে যা খুশি লিখে আসব।'
হাত চালিয়ে কি সবসময় রোগী দেখা যায়? করুণ চোখের শীর্ণা মহিলা বুকে ব্যথা নিয়ে এলে জানতে চাইব না, সে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার কিনা? এক্সরে, ইসিজি আর একটা পেন কিলার লিখেই দায়িত্ব সারব?
যাহোক বুড়িকে বললাম, 'তোমার এই বিচ্ছিরি কাশি কতো দিনের?’
'কাশি?’ বুড়ি অবাক হয়। 'কাশির জন্য তোকে দেখাতে এয়েচি কে বললে? আমি তো এয়েচি ত্রাণ নিতে।'
'ত্রাণ?’
'হ্যাঁ, তোরা কালকে দিলি না। চাল, ডাল, তেল, ডিম। আমার পাশের ঘরের একজন নিয়ে গেচে।'
'ত্রাণ নিতে তুমি ডাক্তারের চেম্বারে এসেছো?’
'আর কনে যাব? এ পাড়ায় কারো বাড়ি চিনি না তো।'
বললাম, 'ঠিক আছে, কাল সকাল এগারোটায় দুই বাড়ি পরে যে মুদির দোকান আছে, ওখানে এসো। আমি বলে রাখবো।'
সঞ্জয়দাকে বললাম, 'ঠাকুমার নামটা লিখে রাখো। চেম্বার শেষ করে ডিউকের কাছে দিয়ে দেব।'
বুড়ি বলল, 'বুকটাও একটু দেখে দে বাবা। একটু কাশির ওষুধও দিস।'
বুকে স্টেথো বসালাম। বেশ সাঁই সাঁই করছে। বললাম, 'ঠিক আছে, কাল আসো।'
বুড়ি উঠে দাড়াল। তারপর সব স্টেরিলিটির পিণ্ডি চটকে আমার মাথায় হাত রাখল। 'দীর্ঘজীবী হ বাপ।'
সঞ্জয়দা বলল, 'একি ঠাকুমা, তুমি কাশি নিয়ে ডাক্তারবাবুর মাথায় হাত দিচ্ছো কেন? তোমার যদি করোনা থাকে?’
বুড়ি থতমত খেয়ে বলল, 'আমারে যমেও ছোয় নে, আমার কি করে করোনা হবে?’
সঞ্জয়দা গজগজ করছে, 'নাকটা ভালো করে ঢাকো। নাকটাই তো বেড়িয়ে আছে। তাহলে মাস্ক পরে লাভ কি।'
ইদানীং আবার চেম্বার আর রোগীদের বসার জায়গা দিনে দুবার হাইপোক্লোরাইট সলিউশন দিয়ে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। চেম্বার শুরুর আগে আমি ফাঁকি বাজি করে কাজ সারছি। চেম্বার শেষের পর সঞ্জয়দা স্যানিটাইজ করার দায়িত্বে। সঞ্জয়দা অত্যন্ত সিরিয়াস। টেবিলের তলা, দরজার কোন কিছুই বাদ দিচ্ছে না। বলছে, 'আহা, এ যন্ত্র দিয়ে স্যানিটাইজ করতে গিয়ে চাষ আবাদের স্মৃতি আবার ফিরে আসছে।'
~~~~
করোনার দিনগুলি #৩৩
অন্ধ প্রদেশের রাজা (ডাঃ সুধাকরের ঘটনা)
রাজা এমারজেন্সী মিটিং ডেকেছেন। পরিস্থিতি গুরুতর। অদ্ভুত রোগ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। দলে দলে মানুষ কীটপতঙ্গের মতো মরছে। এই রাজ্যও সেই রোগের কবল থেকে বাঁচেনি। শুধু গরীব, খেটে খাওয়া মানুষেরা আক্রান্ত হলে অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এই রোগ গরীব -বড়লোক কাউকেই ছাড়ছে না। সেইটাই চিন্তার।
রাজার বেশ বয়স হয়েছে। অনেক রকম বয়স জনিত রোগও আছে। তবু তার ভীষণ বাঁচার লোভ। এই ক্ষমতা, বিলাস ব্যাসন ছেড়ে মরতেও ইচ্ছে করে না।
তবে আজকের মিটিং সেই রোগ নিয়ে নয়। আজকের মিটিং একজন হতচ্ছাড়া বৈদ্যকে নিয়ে। একজন সামান্য বৈদ্যকে নিয়ে এরকম জরুরি মিটিং ডাকতে হয়েছে বলে রাজা বেশ বিরক্ত। দুই পয়সার মানুষটা বড্ড বেশী গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে।
এই সরকারি বৈদ্য মহামারীর সময়ে হাসপাতালে অব্যবস্থা, তরুণ স্বাস্থ্যকর্মীদের রোগ ঠেকানোর জন্য উপযুক্ত মুখোশ ও পরিধেয়ের অভাব এই নিয়ে সরব হয়েছিল। তখনই তড়িঘড়ি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সে ব্যাটা মাথা নিচু করে কটা দিন রাজা ও মন্ত্রীদের পাদুকা লেহন করলে সমস্যা মিটে যেত। কিন্তু বৈদ্যটি অত্যন্ত ত্যাড়া লোক। একাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিত্কার চেঁচামেচি করে প্রতিবাদ করছিল। লোকজনও আস্তে আস্তে জড় হচ্ছিল।
রাজার সেপাইরা তাকে ঠ্যাঙাতে ঠ্যাঙাতে টেনে হিঁচড়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় কারাগারে পুরেছে।
সমস্যা হচ্ছে কয়েকজন সেই ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিয়েছে। তারপর থেকেই রাজার বিরুদ্ধে জনরোষ তীব্র হচ্ছে।
রাজার মেজাজ অত্যন্ত খারাপ। তিনি হুংকার ছাড়লেন, 'স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তোমার জন্য আজকে আমার এই দশা। এক সামান্য বৈদ্যের জন্য নাম খারাপ হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পঁচা শামুকে পা কাটলো?’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভয়ে ভয়ে বললেন, 'আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করেছি মহারাজ। আই টি সেলের ছেলেদের দিয়ে প্রচার করেছি ওই বৈদ্যের মাথায় ছিট আছে। অর্থাৎ ও মানসিক ভারসাম্য হীন।'
আইনমন্ত্রী বললেন, 'তাতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন গুলি মাঠে নেমে পড়েছে। তারা প্রশ্ন করছে মানসিক ভারসাম্য হীন ব্যক্তিকে এভাবে পেটানো যায় কিনা?'
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমতা আমতা করে বললেন, 'মহারাজ, আমি আরও প্রচার করেছি, ঐ বৈদ্য একটি পাড় মাতাল।'
অর্থমন্ত্রী বললেন, 'খামোশ, ভুলে যাবেন না এই দুর্দশায় মাতালরাই আমাদের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রেখেছে। মাতাল যে খারাপ আপনাকে কে বলল?’
রাজা বললেন, 'তোমার প্রচারের ফলাফল উল্টো হয়েছে। জনমত আমাদের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে।'
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, 'আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি মহারাজ।'
আইনমন্ত্রী বললেন, 'আপনার এতো চেষ্টা করাটাই গণ্ডগোল পাকিয়েছে। সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল প্রচার করা ওই বৈদ্য একজন কসাই। ওষুধ কোম্পানি, ল্যাবরেটরি সব জায়গা থেকে কাটমানি খায়। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিজের নার্সিং হোমে নিয়ে যায়। গরীবের রক্ত চুষে খায়।'
'আজ্ঞে ওই বৈদ্যের নিজের কোনো নার্সিং হোম নেই।'
'তাতে কিই বা এসে গেল। এইসব খবর আমাদের অনুগত প্রজারা হেব্বি খায়। সবাই সোশ্যাল মিডিয়াতে বৈদ্যের গুষ্টি উদ্ধার করে দেবে। সরকারি মাইনে পাওয়া প্রতিবাদী গায়ককে বললেই বৈদ্যদের গালাগাল দিয়ে একটা জীবন মুখি গান লিখে দেবে।'
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, 'তবে আজ্ঞা করুন মহারাজ, তাই করি।'
~~~~
করোনার দিনগুলি #৩৪
নার্স
“জল, নল, কল”- চিকিৎসা শিখেছিলাম ইন্টার্নশিপের প্রথম দিনই। সিনিয়র হাউস স্টাফ দাদা বলেছিল, ‘খারাপ বা অজ্ঞান রোগী ভর্তি হলেই ঝাঁপিয়ে পড়বি। আগে জল, নল, কল করে দিবি।’
ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘জল, নল, কল? সেটা আবার কি চিকিৎসা?’
দাদা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। তারপর বলল, ‘ছ্যা, ছ্যা। পাঁচ বছর ধরে তাহলে কি পড়াশুনো করলি। জল মানে স্যালাইন চালানো। নল হলো নাক দিয়ে রাইলস টিউব ঢুকিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা। আর কল হলো ক্যাথেটার পরিয়ে পেচ্ছাপ করানো। আর ওর সাথে নাকে অক্সিজেনের নলটাও গুঁজে দিস।’
সংকোচের সাথে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘রোগীর কি হয়েছে না জেনে কি স্যালাইন চালানো উচিৎ হবে?’
দাদা বিচ্ছিরি রকমের হেসে বলল, ‘ঐন্দ্রিল, রোগীর আত্মীয় বলে একটি বস্তু আছে। তাঁরা যখন পেটাতে আসবেন, তখন উচিৎ, অনুচিতের ধার ধারবেন না। মনে রাখবি, স্যালাইনটা তুই আসলে তাঁদের চালাচ্ছিস। অক্সিজেনটাও তাঁদের দিচ্ছিস।’
সেই প্রথম দিনই দুটো জিনিস বুঝেছিলাম। প্রথমতঃ দুই রকমের চিকিৎসা হয়। রোগীকে বাঁচানোর চিকিৎসা এবং নিজেকে বাঁচানোর চিকিৎসা। দ্বিতীয়তঃ ডাক্তারি শেখার পক্ষে পাঁচবছর যথেষ্ট নয়। সারাজীবন ধরেই ডাক্তারি শিখতে হয়।
হাসপাতালে কাজ করতে করতে বুঝলাম, হাসপাতাল একটা পরিবারের মতো। ডাক্তার, নার্স, গ্রুপ ডি, ফার্মাসিস্ট, সুইপার সকলকে নিয়ে এক বিশাল একান্নবর্তী পরিবার। আর এই পরিবারের মূল স্তম্ভ নিঃসন্দেহে নার্স দিদিরা।
নার্স দিদিরা পৃথিবীর অন্যতম নিয়ম শৃঙ্খলে আবদ্ধ ক্যাডার। এনারা যেভাবে মুখ বুজে বিনা প্রতিবাদে হায়ারার্কি মেনে চলেন তা শেখবার মতো। প্রথম দিকে সেটা আমার কিছুটা বিরক্তিকরই লাগত। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, চরম হট্টগোলের সরকারি হাসপাতালগুলি টিকিয়ে রেখেছে তাঁদের এই অসাধারণ শৃঙ্খলা। তাছাড়া সম্ভবত এই ক্যাডারের সকলেই মহিলা হওয়ায় এনাদের মধ্যে করাপশন প্রায় দেখাই যায়না।
নার্স দিদিদের কাছে শিখেছি অনেক কিছু। এনারা অনেকেই অত্যন্ত ভালো ছাত্রী। আজকাল তো উচ্চমাধ্যমিকে ৮০% এর বেশি নম্বর না পেলে জি এন এম নার্সিং এ সুযোগ পাওয়াই মুশকিল।
একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। আমি তখন গ্রামীণ হাসপাতালে। একটি মেয়ে প্রায় কুড়ি দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। ভর্তি করলাম। হাসপাতালে যে সব পরীক্ষা নিরীক্ষা হয় করলাম। জ্বর খুব বেশি আসছে না। কিন্তু রোগিণীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। সাথে খুকখুকে কাশি। এক্স রে করলাম। তাও পরিষ্কার। এর মধ্যে আবার তিনদিন ধরে রোগিণীর মাসিক শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড ব্লিডিং হচ্ছে।
কি করব বুঝতে পারছিলাম না। মাঝরাতে হঠাৎ কল-বুক খেলাম। আমার ডিউটি নয়, অথচ আমার নামেই কল-বুক এসেছে। যেতেই চৈতালীদি বললেন, ‘ডাক্তারবাবু, ওই জ্বর আসা মহিলার রোগ আমি ধরে ফেলেছি। মাঝরাতে কল-বুক দিয়েছি বলে রাগ করবেন না।’
আর রাগ। এমনিতেই মহিলার জ্বর নয়া কমায় আমার ঘুম উড়ে যেতে বসেছিল। বললাম, ‘কি ধরে ফেলেছেন?’
চৈতালীদি একটা প্রেগনেন্সি কার্ড বের করে দেখালেন। দুটো দাগ। মানে পজিটিভ। বললেন, ‘আমি কাল অনেক ভেবেছি। কি হতে পারে। আজ রাতে এসে আরেকবার ভালো করে ইতিহাস নিলাম। ও বারবার বলছে এর আগে মাসিক ঠিক ঠাক হয়েছে। কিন্তু এবার একটু আগে হয়েছে। প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। আমার কেমন সন্দেহ হোল। ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ‘পি ভি’ পরীক্ষা করলাম। জরায়ুর মুখ খোলা। হাতে রক্তের ক্লট ছাড়াও কিছু জিনিস পেলাম। যেরকম স্পন্টেনিয়াস এবরশনে পাওয়া যায়। ইউরিন টেস্ট করতেই পজিটিভ। আসলে কম বয়সী মেয়ে। মাস চারেক আগেই বিয়ে হয়েছে। ঠিক ঠাক বলতে পারেনি।’
বললাম, ‘রাতে যখন উঠেই পড়েছি, ডিসি সেটটা বার করুন। এখনই ফাঁকায় ফাঁকায় কাজ সেরে যাই।’
সেদিন ডিসি করে মৃত ভ্রূণের বাকি অংশ বের করে দেওয়ার পর রোগিণীর আর জ্বর আসেনি। অনভিজ্ঞ মেয়েটি বুঝতেই পারেনি কখন তার মধ্যে একটি প্রাণ বাসা বেধেছে। কখন সেটি নিজে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। পুরোটা বেরিয়ে না গিয়ে কিছুটা জরায়ুর মধ্যে আটকে থাকায় সেটা সংক্রমণের ফলে জ্বর কমছিল না।
এভাবেই একজন নার্স অনেকসময় চিকিৎসকের চোখ কান হয়ে ওঠেন। রোগীর জীবন বাঁচান। একজন নার্স দিদি শুধু নিজের জন্য কোনোদিনও টিফিন আনেন না। তিনি টিফিন আনেন ওয়ার্ডের সব স্টাফ এবং চিকিৎসকের জন্যও। তিনিই ওয়ার্ডের বেওয়ারিশ শিশুটির মা হয়ে ওঠেন। তাঁর জন্য কিনে আনেন নতুন জামা। তাঁর হাত ধরে স্লেট পেন্সিলে অ আ লেখান। তিনি পরিবার থেকে বহিষ্কৃত হয়ে হাসপাতালে ঠাঁই পাওয়া বৃদ্ধের কন্যা হয়ে ওঠেন। তিনি বিপথে যাওয়া তরুণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিদির মতো বলেন, ‘আর ওসব ছাই পাস খাসনে।’
এই করোনার সময়ে তাঁরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিউটি করতে ইতস্তত করছেন না। দিনের পর দিন নিজের পরিবার, সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে থাকছেন। এর বিনিময়ে সমাজের কাছ থেকে তাঁরা যে ব্যবহার পাচ্ছেন তা প্রকাশ না করাই ভালো।
বেসরকারি হাসপাতালের নার্স দিদিরা পড়েছেন আরও সমস্যায়। বিশেষ করে যারা ভিন রাজ্য থেকে এসেছেন। এমনিতেই তাঁদের মাইনে অত্যন্ত সামান্য। তাও করোনার সময়ে অনেক জায়গায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। উপযুক্ত প্রটেকশন ছাড়াই তাঁদের কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় নিযুক্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া তাঁরা যে যেখানে ভাড়া থাকেন, সেখান থেকে বাড়িওয়ালারা তাঁদের উৎখাত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাঁরা রাস্তায় বেরোলে, বাবা মা ছোটো ছোটো বাচ্চাদের বলছেন, ‘ওই দ্যাখ করোনা যাচ্ছে।’
ফলে তাঁরা দলে দলে চাকরি ছাড়ছেন ও রাজ্য ছাড়ার চেষ্টা করছেন। প্রায় পাঁচশোরও বেশি নার্স চাকরি ছেড়েছেন। এটা প্রতিরোধের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে যা বলেছেন তা আরও হতাশা জনক। তিনি বলেছেন পাড়ার ছেলে মেয়েদের সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে নিয়োগ করা হবে। যাতে তাঁরা একটু স্যালাইন চালাতে পারে, একটু অক্সিজেন দিতে পারে। এটুকু স্পষ্ট তিনিও ওই হাউস স্টাফ দাদার মতো রোগী নয়, রোগীর বাড়ির লোকের চিকিৎসা করতেই বেশি আগ্রহী।
কর্পোরেট হাসপাতাল গুলি লক্ষ লক্ষ টাকা নেয় রোগী পরিষেবার জন্য। তার কিছুটা অংশও তারা যদি এই অকালে স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষার জন্য ব্যায় করত তাহলে হয়ত আজ এই পরিণতি হতো না।
~~~~
করোনার দিনগুলি #৩৫
আমফানের তিনদিন পর
ঘুমের মধ্যে রোগী দেখছিলাম। সবই জটিল জটিল রোগ। কারো পেট ফুলে ঢোল। কারো হৃদযন্ত্রে ছ্যাঁদা। নড়লে চড়লেই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কারো আবার সারা গায়ে লাল, নীল, সবুজ রঙের ছোপ ছোপ বেড়িয়েছে। যেন ভিন্ন গ্রহের প্রাণী। এমন অদ্ভুত স্কিন লেশন বাপের জন্মে দেখিনি।
সমস্যা হলো কাউকে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বললেই তিনি বলছেন, 'লকডাউনের পর করব।'
হাসপাতালে ভর্তি হতে বললে বলছেন, 'লকডাউনের পর ভর্তি হব।'
একজন বললেন, ‘লকডাউনের পর ওষুধটা খেলে হয়না?'
স্বপ্নের অন্যতম অসুবিধা অনেক জানা জিনিসও মনে পড়ে না। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘লকডাউনটা কি?'
তিনি বললেন, 'আমি গরীব মানুষ বাবু। অতশত কি বুঝি। আপনাকে বরঞ্চ লকডাউনের পর ভিজিট দেব।'
হঠাৎ স্ত্রীর অতিরিক্ত মিঠে হাতের চাপড়ে ঘুম ভেঙে গেল। রূপালী বলল, ‘এতো বেলা অবধি ঘুমালে চলবে। ওদিকে যে জল শেষ হয়ে গেল।'
বলতে গেলাম, 'ঘুমালাম কই। সারারাত তো রোগীই দেখলাম।' তখনই হঠাৎ খেয়াল হল, সারারাত রোগী দেখে বেশ কিছু টাকা পয়সা উপার্জন করেছিলাম। স্বপ্নের টাকা ঘুম ভাঙার সাথেই মিলিয়ে গেছে। আহারে, অনেক গুলো টাকা।
রূপালীর তীক্ষ্ণ আওয়াজ আবার পেলাম, 'কি গো, চোখ বুজে মটকা মেরে পড়ে রইলে কেন? আবার ঘুমাচ্ছো নাকি?’
বললাম, 'ঘুমাবো কেন, আমি দেশের কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা করছি।'
রূপালী টেনে দাঁড় করিয়ে হাতে দুটো বালতি ধরিয়ে বলল, 'বাড়ির পরিস্থিতি আরও কঠিন। এক ফোঁটা জলও নেই। শিগগিরী দু বালতি জল নিয়ে এস। নইলে স্নান তো দূরের কথা, চা টুকুও জুটবে না।'
বাড়ির সামনে হট্টগোলের শব্দ। বললাম, 'অনেক রোগী এসেছে মনে হচ্ছে। গেলেই এখুনি দেখে দেওয়ার জন্য ধরবে। তুমি ওনাদের দুপুরে আসতে বলে বিদায় করো। তারপর জল এনে দিচ্ছি।'
রূপালী বলল, 'শিওর তোমার মাথা খারাপ হয়েছে। সবাইকেই রোগী ভাবছ। ওটা জল নেওয়ার লাইনের কোলাহল।'
বাড়ির সামনে কর্পোরেশনের জলের গাড়ি দিয়েছে। ঘুম চোখে হাই তুলতে তুলতে লাইনে দাঁড়ালাম।
একটা ফ্রক পরা ছোট্ট মেয়ে এগিয়ে এসে বলল, 'একি তুমি মাস্ক পরোনি কেন? ছি ছি, ডাক্তারই যদি মাস্ক না পরে অন্যরা কি শিখবে!'
মেয়েটাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। মুখ ঢাকা থাকায় চিনতে পারছি না। বললাম, 'খুকু, জল নেব আর চলে যাব। এটুকুর জন্য....'
মেয়েটি বলল, 'অন্তত এক ঘন্টা লাগবে। লাইন দেখেছো। ততক্ষণে অন্তত গোটা দশেক করোনা ভাইরাস তোমার ফুসফুসে ঢুকে পড়বে।'
এবার মেয়েটাকে চিনতে পারলাম। সানাই, আমারই বড় মেয়ে। ছোটো ছোটো দুটো বালতি নিয়ে অনেকটা আগে লাইনে দাঁড়িয়েছে। অগত্যা মাস্ক পরে এলাম।
লাইনের পিছনের কাকু জিজ্ঞাসা করলেন, 'আচ্ছা বুমবাই, এই জল খেলে কি রক্ত আমাসা হবে?'
বললাম, 'ফুটিয়ে খাবেন।'
'টাইফয়েড হতে পারে?'
'ফুটিয়ে খেলে হবে না।'
'করোনা হতে পারে?'
নাও, ঠ্যালা সামলাও।সারারাত রোগী দেখেও নিস্তার নেই। বললাম, 'জল থেকে করোনা হয়না। তবে জলের লাইন থেকে হয়। আপনি আমার এতো কাছাকাছি আসবেন না।'
একজন পার্ট টাইম মাস্ক বিক্রেতা জলের ট্যাংক দেখে দাঁড়িয়েছেন। দু লিটারের খালি বোতল বার করেছেন। সাইকেলের সামনে লাল, নীল, হলুদ- রঙবেরঙের মাস্ক ঝুলছে। নাকের জায়গায় নিশ্বাস নেওয়ার সুবিধার জন্য জাল জাল করা। ওই মাস্কে ভাইরাস আটকাবে না। মাস্ক বিক্রেতার দারিদ্র্যও আটকাবে না।
পাড়ার এক দয়ালু কাকিমা বোতলটা নিয়ে জল ভরে দিলেন। জলই এখন শ্রমজীবী মানুষের প্রধান খাদ্য। আম্ফান ঝড়ের পর সেই খাদ্যেরও অভাব দেখা দিয়েছে।
কতক্ষণ লাগবে বুঝতে পারছি না। পাড়ার এক দাদা হার্ট এটাকের কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলো। এমন সময় হঠাৎ চিৎকার 'জ্যোতি বাবু ফিরে এসেছেন, জ্যোতি বাবু ফিরে এসেছেন...’
অনেকেই বাড়িতে দৌড়ালেন হঠাৎ আসা কারেণ্টের সদব্যবহার করতে। যেসব সৌভাগ্যবান ব্যক্তির বাড়ির রিজার্ভারে এখনো জল আছে, তাঁরা পাম্প চালাবেন। কেউ পাঁচদিন পরে পাখার হাওয়া খাবেন।
লাইন বেশ ফাঁকা হয়ে গেল। আর দশটা মিনিট কারেণ্ট থাকলে আমার দুটো বালতি ভরে যাবে।