এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • গল্পের ভাষা, ভাষার গল্প

    বিপুল দাস লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১১ অক্টোবর ২০১৫ | ১৪০০ বার পঠিত
  • ভাষা যখন নীরবে অক্ষরের মাধ্যমে মানুষের চেতনায় পৌঁছতে পারেনি, তখন নিশ্চয় মানুষের জীবনযাপন শুধুমাত্র আহারনিদ্রামৈথুন, আদিম এই তিনটি প্রবৃত্তিনির্ভর ছিল না। মানুষের চেতনার জগৎ অনেক বিস্তৃত। প্রকৃতির সব উপাদান, তার দেখা অসংখ্য দৃশ্য, অসংখ্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা – সব সময়েই তার মননে সজ্ঞানে ও নির্জ্ঞানে কাজ করতে থাকে। নদী, পাহাড়, অরণ্য, বনের পশুপাখি, সুর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, বন্যা, ভূমিকম্প – সব। যদি এটা না হয়ে ওটা হত, এই ভাবনা থেকেই কিন্তু কল্পলোকে যাত্রা শুরু হয়। মানুষ গল্প বলতে আর গল্প শুনতে সন্ধেবেলা আগুনের পাশে গোল হয়ে বসত। হাটচালার নীচে একজন কথকের চারপাশে ভিড় জমে ওঠে। আসলে তো অভিজ্ঞতার বিনিময়। শ্রোতা আবার সেই গল্প নিজের ভাবনা দিয়ে বিনির্মাণ করে। এ ভাবেই গল্পের ধারা অনন্তকাল ধরে বয়ে যায় আমাদের জীবনযাপনের ভিতর দিয়ে। আদিমকালের কিছু লোকগাথা এখনও রয়ে গেছে অনেক আদিবাসী সমাজের ভেতরে। কত রূপকথা, কত দেবতার মহিমা, কত নীতিমালা এখনও আমাদের গল্পজগতের ভেতরে রয়ে গেছে।

    ভাষা যখন সাংকেতিক চিহ্নে আবদ্ধ হয়নি, শুধুমাত্র কথকের উচ্চারিত শব্দগুলো প্রকাশ করত জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা, তখন বিষয়ের বৈশিষ্ট্য কী ছিল, কোন ধরণের গল্প মানুষ বারে বারে শুনতে চাইত, মনের গভীরের কোন ইচ্ছাপূরণের বাসনা তাকে তাড়িত করত গল্পগুলোর দিকে – এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার জন্য অনেক গবেষণ হয়েছে, হয়ে চলেছে। 

    গ্রামেগঞ্জে তো গল্পের শেষ নেই। গল্পগুলো নদীর মত গড়াতে থাকে। পারের লোকজন জানে। কেউ আঁজলা ভরে, কেউ ঘটি, কেউ কলস ভরে গল্পের জল ঘরে বয়ে নিয়ে যায়। আসলে তো বংশগত ভাবে তারা গল্পটাকেই বয়ে নিয়ে চলে। চা-এর দোকানে বসে চা-এ চুমুক দিতে দিতে, মাঠে নিড়ানির সময়, সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর সময় জলের মত গল্পগুলো বা গল্পের জলধারা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। রক্তের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে। তারপর ভেতরে ভেতরে সাজানো গোছানো চলতে থাকে। মানুষের অভ্যাস এ রকমই। হাতপায়ের মত আমাদের মাথার ভেতরেও কতগুলো আঙুল থাকে। সব সময়ে কিছু একটা আঁকড়ে ধরে সেটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নতুন কিছু বানাতে চায়। আমরা বলি মননক্রিয়া, আমরা বলি ক্রিয়েটিভ সিকনেস। সেই গল্পের মত জল নিয়ে তার মনোবাসনার আঙ্গিকে নতুন একটা গল্প তৈরি হয়। 

    গল্পের নদী গড়াতে গড়াতে অনেকদূরের জনপদে পৌঁছলে গল্পের গায়ে নতুন মাটি, নতুন রং লাগে। কোনও একজন কথক হাটচালায় বসে তার ঝুলি খুলে গল্প শুরু করলে চারপাশে লোকজন জমাট হতে শুরু করে। সবাই যেন সমস্ত শরীর দিয়ে গল্পটা শুষে নিতে থাকে। কথকঠাকুর গল্পের সুতো ছড়িয়ে দেয়, বাতাসে দোল-খাওয়া সেই সুতো ধরে সবাই তার মনের মত নক্‌শা তৈরি করে নেয়। গল্পের যে অংশ তার মনোগত হয়নি, তার ইচ্ছাপূরণের মত হয়নি, সেই অংশ সে তার ভাবনা দিয়ে বিনির্মাণ করে। সেটা নির্ভর করে শ্রোতার বিশেষ মানসিক বৈশিষ্ট্যের ওপর। বিজয়ী দলের পক্ষে যেমন সোচ্চার সম্মতি থাকে, তেমনি পরাজিত দলের জন্যও কখনও ভালোবাসা তৈরি হয়। খেয়াল করে দেখুন টম অ্যান্ড জেরি দেখার সময় অবচেতনেই আমরা জেরির পক্ষ সমর্থন করতে শুরু করি। 

    এ ভাবেই হয়তো কোনও এক হাটচালায় বিশুঠাকুর নামের কোনও এক কথকের চারপাশে সবাই গোল হয়ে বসে। বলো বিশুভাই, তারপর ? রায়বংশ কি ফৌত হয়ে গেল? বংশে বাতি দেবে কে ? কার্তিক মাসে পূর্বপুরুষদের জন্য আকাশপ্রদীপ জ্বালবে কে ? গল্প বলো কথকঠাকুর। তোমার গল্প যেন নদীর জলের ধারা। আমাদের বারোমাসে শরীরে মিশে যায়। আমাদের মাথার ভেতরে জমা থাকে। আমাদের ছেলেপুলেদের তো গল্প বলতে হবে। গল্প ছাড়া মানুষ বাঁচে না। অনেক কথা ভুলে যাব, অনেক কথা আমরা নিজেরাই তৈরি করে নেব। এক বিশুপাগলের কথা, হয়তো এক কুঠিয়ালের গোমস্তার গল্প, নীলকুঠির স্কটিশ সাহেব ম্যাকার্থির কথা। সব নদীর মত বয়ে যাবে। 

    পুরনো গল্প কিন্তু মরে না। বাঁক নেয়, তার ধারায় নতুন গল্পের জল এসে মিশতে থাকে। নদীর মত তালুক, মহাল, গঞ্জ, পরগণার ভেতর দিয়ে বইতে থাকে গল্পের নদী। 

    এবার আসল কথায় আসি। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু অস্ত্বিত্ত্বের সংকট। সেই আদিম যুগ থেকেই সহস্র প্রতিকূলতাকে পার হয়ে বেঁচে থাকার তীব্র লড়াই ভেতরে ভেতরে আমাদের অবচেতনেই একটা ডিফেনস্‌ মেকানিজম্‌ তৈরি করে দেয়। সেই আদিম যুগে যা ছিল অতর্কিতে ভয়ংকর বন্যপশুর আক্রমণের ভয়, এখন তাই হয়েছে সামাজিক ভাবে দুর্বলের ওপর অধিক সবলের আক্রমণ। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে পুলিশের অত্যাচার, রাষ্ট্রীয় পীড়ন। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে তো কম সংগ্রাম করতে হয়নি। নিরক্ষরেখার উষ্ণতা, মেরু অঞ্চলের শৈত্য, ঘুম মাছির কামড়, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প, মহামারীর মত দুর্যোগ। ছোট ছোট বিভিন্ন উপজাতিদের ভেতরে উর্বর জমি, পালিত পশু, উৎপাদিত ফসল, ভূখন্ডের সীমানা নিয়ে জাতিদাঙ্গা, বন্যপশুর আক্রমণ, গুপ্তঘাতকের ভয়। গুন্টার গ্রাসের ভাষণের এক জায়গায় এ জন্যই আমরা পেয়েছি যে, গল্পকারদের মুখে প্রথম দিকে খুন, দাঙ্গা, জেনোসাইডের গল্পগুলো প্রাধান্য পেত। বিভিন্ন উপজাতিদের ভেতরে তাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধজয়ের গল্পগুলো পুরুষানুক্রমিক ভাবেই তারা বহন করে নিয়ে যেত। 

    বেঁচে থাকার ভেতরে এই যে একটা ভয় সব সময় কাজ করে, এই ভয়কে অতিক্রম করার জন্য আমাদের কল্পনায় আমরা একটা কাল্পনিক শক্তির ভরকেন্দ্র তৈরি করি। এই ভরকেন্দ্রের সপক্ষে মনে মনে যুক্তি সাজাই। শক্তির এই কেন্দ্র হতে পারে কোনও দেবতা, হতে পারে দৈবশক্তিধর কোনও বীরপুরুষ, হতে পারে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন কোনও ডাইনি। কিংবা আধা মানুষ, আধা পশু জাতীয় কোনও রহস্যময় প্রাণী। এমন কি আকাশ থেকে ভেসে আসা কোনও দৈব বাণী হতে পারে বা কোনও অদ্ভুত গোলক। 

    আমি জানি না আজ কারখানার গেটে গিয়ে ক্লোজারের নোটিস দেখব কি না, আমি জানি না আমার সন্তানকে স্কুলবাসে তুলে দেবার পর সে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরবে কি না, আমি জানি না লোন নিয়ে অনেক কষ্টে তৈরি করা আমার বাড়ির ছাদ আজ ভূমিকম্পে আমার মাথার ওপর ভেঙে পড়বে কিনা, আমি জানি না নদীর পারে আমার চালাঘর আজ প্রবল বন্যায় ভেসে যাবে কি না, আমি জানি না রাষ্ট্রের বুলডোজার এসে আজ রাতে আমার বস্তি উচ্ছেদ করে দিয়ে যাবে কি না, আমি জানি না সামান্য অজুহাতে আজ গভীর রাতে পুলিশ আমার দরজায় কড়া নাড়বে কি না। আমি জানি না আজ অফিস যাওয়ার পথে জঙ্গী-পুলিশের লড়াই-এ মাঝে আমার বুকেই গুলি লাগবে কি না। রোদ-ঝলমল সুস্থ জীবনযাপনের ভেতরে খুব ম্লান ছায়ার মত এই সমস্যাগুলো লুকিয়ে থাকে। এই হল অস্তিত্ত্বের সংকট।

    গুন্টার গ্রাস একটা ভাষণে এ বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন। লিখনপদ্ধতি আবিস্কারের আগেই কিন্তু কথকঠাকুর এই গল্পগুলোই রকমফেরে বলেছেন। অশুভ দানবশক্তির বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম, গুপ্তহত্যা, একজন হিরোর আবির্ভাব, ফ্যাট ইয়ার, লীন ইয়ার, গণহত্যা – কখনও পুরুষকার, কখনও দৈবের শক্তিতে শেষ পর্যন্ত মানুষের জয়ের কীর্তি তো মানুষেরই মানসজাত কল্পনার প্রতিচ্ছবি। কথক শুধু ইচ্ছেপূরণের ইশারাটুকু দিয়ে যায়। আসলে, এ সময়ের একজন শক্তিশালী গল্পকার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় বারে বারে বলতেন, মসৃণ জীবনযাপনে কোনও শিল্প তৈরি হয় না। অস্ত্বিত্ত্বের সংকট আর বেঁচে থাকার সংশয়ের ভেতর দিয়েই শিল্প গড়ে ওঠে। বেঁচে থাকার ওই ডিফেনস্‌ মেকানিজমের বর্ণনার ভেতর দিয়েই শিল্প তৈরি হয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সেই বর্ণনা যদি স্লোগান সর্বস্ব হয়, তবে তা কখনই শিল্প হয়ে উঠতে পারে না। শুধু মেনিফেস্টো।

    তা হলে গল্প আর ঘটনার নীরস বর্ণনা কখনও এক হয় না। আসলে গল্পের ভেতরে থাকে স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসার একটা প্রাণান্তকর চেষ্টা। একটা পাথরকে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে উঁচুতে নিয়ে গেলে তার ভেতরে কাজ করার শক্তি আসে, একটা রবারের টুকরোকে টেনে লম্বা করলে সেও কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করে, জলের স্রোত অনেক উঁচুতে থাকে বলেই প্রবল বেগে টারবাইন ঘোরাতে পারে। এ রকম অজস্র উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যা থেকে আমরা বুঝতে পারি অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আসার জন্য প্রত্যেকটা বস্তুর ভেতরে স্ট্রেস ও স্ট্রেনের খেলা চলে। মানুষের জীবনযাপনে, বেঁচে থাকার ভেতরেও সব সময় সেই ফোর্স কাজ করে। যা স্বাভাবিক নয় সেই ঘটনাই মানুষের কল্পনাকে উশকে দেয়। এক সময় সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ মানুষের কাছে অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল। তা থেকে প্রাচীন মানুষ গল্প তৈরি করত। আজ সেটা আমাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনা। সেখানে আর কোনও গল্প নেই। কিন্তু যদি দেখি সব দিক দিয়ে সফল একজন মানুষ আত্মহত্যা করেছে, সেটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। তার পেছনে একটা গল্পের খোঁজ করি আমরা। রাস্তায় পুলিশ কোনও মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের বিস্ময় জাগে না, কিন্তু যদি দেখি সাধারণ একজন মানুষ পুলিশকে কলার ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, সেটা আমাদের কাচ্ছে খুবই অস্বাভাবিক। বুঝতে পারি এর পেছনে একটা গল্প আচ্ছে। রাস্তায় আজ যে ঘটনা দেখলাম, রাতে হয়তো একা একা চিন্তা করি। তখন অনেকগুলো ‘যদি’ আপনা হতেই আমাদের ভাবনায় ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। গাড়িটা যদি আমাকেই চাপা দিত ... এখান থেকেই গল্প শুরু হয়। না হলে তো সেটা শুধু একটা দুর্ঘটনার বিবরণ হত। ফোটোগ্রাফিক সত্য আর শিল্পীর হাতে-আঁকা ছবির সত্যের ভেতরে এখানেই ফারাক হয়ে যায়। আমার পকেট থেকেই যদি পার্সটা চুরি হত, লোকটাকে যদি কেউ হাসপাতালে নিয়ে না যায়, ওর বাড়ির লোক যদি খবর না পায়, নীপা কেন আজ একবারও ফোন করল না, বাড়িতে কি কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে – এই সব অসংখ্য ‘যদি’র সুতো বেয়ে আমাদের মনে অবচেতনেই গল্প তৈরি হতে থাকে। অর্থাৎ মনন ও চিন্তনের অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে রেহাই পেতেই যেন কল্পকথার জন্ম হতে থাকে। এ জন্যই গুন্টার গ্রাস বলেছিলেন প্রাচীনকালের সেই সব কথকদের ভেতর যারা অশিক্ষিত ছিলেন, তারা অন্যদের চেয়ে ভালো গল্প বলতে পারতেন। অর্থাৎ তারা মিথ্যেগুলো শ্রোতাদের কাছে আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারতেন। 

    কিন্তু শ্রোতার কাছে গল্প মোহময় এবং আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার জন্য আরও কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে। সাংবাদিকের দেওয়া ঘটনার নিখুঁত তথ্যের বিবরণ কখনও গল্প হয় না। তা হলে রোজ খবরের কাগজ বোঝাই গল্প আমাদের পড়তে হত। কোনও স্বাভাবিক ঘটনা কখনওই আমাদের মনের জগতকে আলোড়িত করে না; কিন্তু ঘটনা অস্বাভাবিক হলেই তার ভেতরে কিছু শক্তি জন্মায়। সেই শক্তি ঘটনাকে অন্য এক পরিণতির দিকে ঠেলতে থাকে। যেমন রবার টেনে বড় করলে তার ভেতরে একটা শক্তি সঞ্চিত হয়, এই শক্তি একটা পাথরের টুকরোকে অনেক দূরে ছুঁড়ে দেয়। ঘটনাও স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। সেটা কাজ করে আমাদের চিন্তার জগতে। আর মুক্তি পাওয়াই গল্প তৈরির রসায়ন। ঘটনার তো অনেকগুলো তল বা মাত্রা থাকে। সেগুলোকে যদি গল্পঘরের জানালাদরজা মনে করি, তবে সেই বিভিন্ন পথে কল্পনার আসাযাওয়া শুরু হয়। তখন আর ঘটনার শুকনো বর্ণনা নয়, গুন্টার গ্রাসের ভাষায় এক ‘মিথ্যেবাদী’ গল্প শোনাতে বসে কবে সে এক ঝর্ণার ধারে প্রকান্ড এক বাঘ দেখেছিল, কিংবা গুহার ভেতরে সে দেখতে পেয়েছিল অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক পশুর চেহারার এক ভয়ংকর প্রাণী। এক নাবিক মৎস্যকন্যার গল্প শোনায়। একজন মোমেন বলে যে প্রতি অমাবস্যায় পিরসাহেব কালো আলখাল্লা পরে এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে যায়। সে নিজের চোখে দেখেছে। একটি বাচ্চাছেলে তার ঠাকুদার কাছে যুদ্ধের গল্প শোনে। কেমন করে স্পেনীয় আর্মাডা এসে ইনকাদের সমস্ত সোনা লুঠ করে নিয়েছিল, সেই গল্প শত বছর ধরে ল্যাটিন আমেরিকার পথে পথে ভেসে বেড়ায়। মানুষ শুনতে থাকে দেবদেবীর মাহাত্ম্যমূলক আখ্যান, নির্দয় প্রকৃতির কাছে অসহায় আত্ম-সমর্পণের গল্প, প্রবল শক্তির কাছে নতজানু হওয়ার আখ্যান। হিরো ওয়রশিপের প্রবৃত্তি থেকে বীর যোদ্ধাদের কাহিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখনও উপন্যাসে, সিনেমায়, টিভি সিরিয়ালে সংকটাপন্ন মানুষ সেই হিরোর কাছে নতজানু। দুষ্টের দমন করে যে হাততালি পায়, আসলে পাঠক, শ্রোতা বা দর্শকের সঙ্গে ওই বীরপুরুষের এক ধরণের আইডেন্টিটি হারমোনাইজেশন ঘটতে থাকে। ইচ্ছাপূরণের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় মনে হয় আমিই জিৎ, আমিই দেব, আমিই শাহরুখ খান। 

    বীরত্বমূলক আখ্যানগুলোর ভেতরেও সেই কল্পনার সুতো ছড়িয়ে দেবার টেকনিক কাজ করে। সেই সুতো দিয়ে যে যত রঙিন জাল বুনতে পারে, যে যত বড় ‘মিথ্যুক’, সে তত হাততালি পায়। একা বীর খালি হাতে কুড়িজন অস্ত্রধারীর সঙ্গে লড়াই করে নায়িকাকে উদ্ধার করে শেষ পর্যন্ত আমরা একটা দমচাপা নিঃশ্বাস ছাড়তে পারি। বুকের ভেতরে বিশ্বাসের বাতাস বয়ে যায়। একটা গল্প শোনার পর বাড়ি ফিরে সেই গল্প মনের ভেতরে জারিত হতে থাকে। শ্রোতা সেই গল্প থেকে আর একটা উপ-গল্প তৈরি করে। পুরনো গল্প মরে না। তার স্রোতে এসে মিশতে থাকে পরবর্তী সময়ের জলের ধারা, নতুন গল্প। 

    আরও একটা ফ্যাক্টর কাজ করে। সেটা হল অনিশ্চয়তা আর রহস্যময়তা। কথক এমন ভাবে তার কথকতার জাল ছড়াতে থাকেন, সাদামাটা ঘরোয়া দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বাইরে যেন একটা জাদুকরি কুহকজড়ানো বাতাস বইতে থাকে কথকতার আসরজুড়ে। রোজকার ঘামঝরানো পরিশ্রমের বাইরে কথক হয়তো এক জাদুগালিচার গল্প বলেন। হয়তো এক সন্তের গল্প বলেন যার কৃপায় বোবা কথা বলে, কাটামুন্ড জোড়া লেগে যায়। এমন জুতোর গল্প বলেন যেটা পায়ে দিয়ে ইচ্ছেমত দেশভ্রমণ করা যায়। এ অভিজ্ঞতা তো আপনাদের সবার আছে। মানুষের বুকের ভেতরে যে অসম্ভব বাসনাগুলো গোপনে লুকিয়ে থাকে, যে ফ্যান্টাসি আমরা গোপনে লালন করি, গল্পের রহস্যময়তা তাকে স্পর্শ করে। যেন ভারচুয়াল রিয়ালিটির ভেতর দিয়ে আমাদের বাসনার নিবৃত্তি হয়। এই আধো বুঝতে পারা, আধো বুঝতে না পারার ভেতরে স্ট্রেস থাকে। এই স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে গল্প শোনে, সে না-বোঝা রহস্যময়তার ভেতর থেকে আরও গল্প নিজের মত করে বিনির্মাণ করে নেয়। আর, অনিশ্চয়তা তো থাকবেই। কথক যদি কী হতে পারে, আসলে সেটা বিশাল একটা সাপ নয়, একটা মোটা দড়ি, কুমির নয়, শেষ পর্যন্ত দেখা গেল একটা গাছের গুঁড়ি – এসব আগেই বলে দেন, তবে তো সেটি আর গল্প থাকে না, সাংবাদিকসুলভ নিছক ঘটনার বিবরণ হয়ে ওঠে। নীরস সেই গল্প যেন ফোটোগ্রাফিক রিয়েলিটির মত কঠিন সত্য, গল্পের যে মাধুরী মানুষকে চিরকাল আবিষ্ট করে রেখেছে, সেই প্রাণলাবণ্যটুকু আর থাকে না। 

    এবার রবি ঠাকুরের একটা কবিতা বলি। আমি এতক্ষণ যা বলার চেষ্টা করেছি, রবীন্দ্রনাথ যেন কবিতার কয়েকটি লাইনে তার সার কথাটুকু বলে গেছেন। তুমি বললে ‘যাসনে খোকা ওরে,’/আমি বলি ‘দেখো না চুপ করে।‘/ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,/ঢাল তলোয়ার ঝনঝনিয়ে বাজে,/ কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে,/ শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।/কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,/ কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।/এত লোকের সঙ্গে লড়াই করে/ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।/আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে/ বলছি এসে,’লড়াই গেছে থেমে,’/তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে / চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে --/বলছ, ’ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল!/ কী দুর্দশাই হত তা না হলে।‘/ রোজ কত কী ঘটে যাহা-তাহা--/ এমন কেন সত্যি হয় না, আহা।/ঠিক যেন এক গল্প হত তবে,/শুনত যারা অবাক হত সবে, 

    এমন করেই রোজ যা ঘটে, সবই গল্প হয়ে ওঠে না। কিন্তু ঘটেনি, অথচ ঘটার সব শর্তই রয়েছে, সেই কথাই শেষ পর্যন্ত গল্প হয়ে ওঠে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১১ অক্টোবর ২০১৫ | ১৪০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | ***:*** | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩৪87283
  • দারুণ।
    এই নাচিজ একটু সংজোজন করতে চায়।

    স্মৃতি। এই সামান্য শব্দটির অসামান্যতা নিয়ে বলার আমি কেউ নই। স্মৃতি নিয়ে কোন রকম তত্ত্ব খাড়া করার অধিকারী নই, তবু, এই বিশাল প্রকৃতির অংশ হিসাবে আমিও স্মৃতির অধিকারী, তাই, সাহস করলাম। তাবৎ গুণিজন এই চপলতা ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন এমত আশায়।
    স্মৃতি কি সততই একসম্ভূত? বোধহয় নয়। কোন একটা বিষয়ের স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকে বহুকিছু। আর, সেই সব কিছুরই সেই বিশেষ বিষয়টি নিয়ে নানান স্মৃতি থেকেই যায়। ফলে স্মৃতি এক নয়, বহু। তবু যখন স্মৃতিচারণ হয়, তখন ব্যক্তিই হয়ে ওঠেন সেই স্মৃতির আধার ও নায়ক। এ এক আশ্চর্য প্রহেলিকা। এই প্রহেলিকাই আমাকে টেনে নিয়ে যায় আরও এক আশ্চর্য পরিসরে।
    সাধারণ ভাবে এটাই মান্য, যিনি স্মৃতিচারণ করছেন, ব্যক্তি হিসাবে তিনি সেই স্মৃতির বাস্তব অংশ। কিন্তু, এমনটাও তো হয়, ব্যক্তি হিসাবে অপরের স্মৃতির জারকে জারিত হতে হতে তা একসময়ে ব্যক্তিস্মৃতিরও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। এই হয়ে ওঠাটি শুধুই সময়ের ব্যাপার নয়। সেই স্মৃতি বা স্মৃতিসমূহের সাথে ব্যক্তিচেতনের আত্মীয়তাও সমান জরুরি। অর্থাৎ কোন ঘটনা বা কোন বিষয়ের সাথে একজন ব্যক্তি বিশেষের বাস্তব সম্পর্ক না থাকলেও সেই ঘটনাটি বা সেই বিষয়টি তার স্মৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারে। একজনের স্মৃতি অন্য একজনের স্মৃতির ভিতর, সেই মানুষটির স্মৃতি হয়ে থেকে যেতে পারে। এমন তো হয়ই, স্মৃতিতে স্মৃতির স্মৃতি। আগের প্রজন্মের মানুষদের কাছে শোনা তাদের সময়কার গল্প, আমরা আমাদের পরের প্রজন্মকে শোনাই – এই ভাবেই। আমাদের পুরাণ, আমাদের দর্শন, আমাদের মহাকাব্যগুলি; এমনকী আমাদের লোকগাথা, আমাদের রূপকথা, আমাদের নায়কদের ঘিরে অতিকথাগুলি, এ ভাবেই উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে।
    গোল বাধে অন্যত্র, যখন ব্যক্তি তাঁর স্মৃতিচারণ করেন। ব্যক্তি যদি তার স্মৃতির স্মৃতিগুলিকে, স্মৃতির স্মৃতি হিসাবে ব্যক্ত না করে স্মৃতি হিসাবেই বয়ান করেন, তখন বয়াতী অনৃতভাষণের দোষে দুষ্ট হন। এটিই সাধারণ ভাবে মান্য। অথচ যখন কথকঠাকুর বলতে থাকেন – এক নির্জন অপরাহ্ন। কৃষ্ণ প্রবেশ করছেন হস্তিনাপুরে। তিনি এসেছেন সেই মহাদৌত্যে। কৌরবদের কাছে পাণ্ডবদের হয়ে পাঁচখানি গ্রাম চাইতে। ঠা ঠা দুপুর। কাক পক্ষীটি পর্যন্ত ডাকচে না। কৃষ্ণ ভাবলেন, যাচ্চি তো বটে। তবে কি, সভায় যাওয়ার আগে দুটি পরামর্শ করে গেলে হত। সামনে বিদুরঠাকুরের বাসা। যাই দেকি ।।।।
    কথকঠাকুর যখন ধারাবিবরণী দেবার মতন করে কথকতা করেন, যেন তিনি নিজেই সেখানে উপস্থিত, তখন তাঁর উপর অনৃতভাষণের দায় বর্তায় না। এক্ষেত্রে বাঁচোয়া একটাই, কথকঠাকুর মহাভারতকালের মানুষ নন, তা শ্রোতারা জানেন। আর সবচেয়ে বড় বাঁচোয়া – কথকঠাকুর কথকতা কচ্চেন, স্মৃতিচারণ করছেন না। তাই এইভাবে বলাকে তাঁরা কথকতার কথাবিন্যাস বলে মেনে নেন।
    কথকতার কথাবিন্যাসের এই ধরনটিকে যদি সময়ের নিরিখ পাল্টে অনাদি অতীত থেকে সাম্প্রতিক অতীতে নিয়ে আসা যায়, আর কথক যদি জড়িয়ে থাকেন সেই সময়ের চুনসুরকি অলিগলিতে, তাহলে কি খুব গোলমাল হয়? এমনও তো হতে পারে, কোন ঘটনায় কথক বাস্তবত জড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু প্রতিবারের বয়ান সামান্য বদলে বদলে যায়। ঠিক ঠিক অমনটাই যে ঘটেছিল তা হয়তো আজ আর বলা যাবে না, কিন্তু ঘটতেও পারতো কিংবা সংগোপনে ইচ্ছে ছিল অমনটাই ঘটুক। এভাবেই স্মৃতির চলাচল। এভাবেই স্মৃতি আজকের চৈতন্যে, নির্মাণ করে চলে গতকাল। এভাবেই গড়ে ওঠে স্মৃতি। তার স্মৃতিচারণ। বা হয়তো সেটা আদৌ স্মৃতিচারণ নয় – স্মৃতিকথকতা।
  • সে | ***:*** | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৪২87284
  • মনের মধ্যে রেশ রেখে যাবার মতো লেখাটা। আবার পড়তে হবে মন দিয়ে।
  • ranjan roy | ***:*** | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০৫:২৩87285
  • গুরুর অ্যাডমিনদের ধন্যবাদ, ইদানীং নিয়মিত কিছু অনবদ্য ভাববার মত লেখা সংকলিত করার জন্যে! এটিও একটি উজ্বল সংযোজন।
  • i | ***:*** | ১২ অক্টোবর ২০১৫ ১০:১৫87286
  • "লেখক তো স্রষ্টা। সৃষ্টির রসায়ন তার চৈতন্যে সব সময় কাজ করতে থাকে।এই ক্রিয়াশীলতা প্রত্যেকবার চেষ্টা করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে। দড়িটা ছুঁয়ে দিলে একটা গল্পের জন্ম হয়। এখন 'জন্ম' -এই শব্দ তার প্রচলিত অর্থ অতিক্রম করলে, অনেক রক্ত দেখা যায়।এই শব্দের আগে উঁকি দেয় 'নিষেক' নমে আর একটি শব্দ। শক্তিপ্রবাহ থেকে সাঁতরে উঠে আসা একটি কণা কোনো এক আধারের প্রাচীর ভেদ করে। রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয় গর্ভমন্দিরের পিচ্ছিল অন্ধকারে। পাবলিক বলে যে-কনসিভ করেছে।
    কার সঙ্গে কার নিষেক? একটি গল্পের বীজ সার্থক জন্মের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে কোথায় আঘাতটা করবে? প্রত্যেক মানুষই দ্রষ্টা। কিন্তু লেখক, তিনি যেমনই লিখুন, দ্রষ্টার সংজ্ঞা পার হয়ে স্রষ্টার ভূমিকায় আসেন শুধুমাত্র ঐ বীজ বপন করার ক্ষমতার ফলে। সৃষ্টির রসায়ন তার চৈতন্যে সবসময় কাজ করে। যে সমাজে লেখকের শেকড়, যে বাতাসে তার রেস্পিরেশন, সেই মাটির গর্ভে চলে যায় তার বোধের শেকড়। দু- চোখ, দু-কান দিয়ে শুষে নেওয়া এই সব উপাদান-যুদ্ধ ও ভালোবাসা, ঘৃণা, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের সামনের দিকে মরণঝাঁপ, পাহাড় ও নদী-মানুষের অস্থিমজ্জাশোণিতে শোষিত হয়। রক্তের ভেতর ঘোরাফেরা করে। গোপনে একটি বীজের জন্ম হতে থাকে। সৃষ্টির জন্য একটা প্যাশন কাজ করতে শুরু করে। শেষে এইসব ঘটনাবলী, আপাতভাবে হয়ত তুচ্ছ, লেখকের মননযন্ত্রে চোলাই হয়। একটি শায়ক তৈরি হয়।
    তারপর অপেক্ষা। বাসের ভেতরে দেখা কোনো ঘটনা, ট্রেনের জানলা দিয়ে দেখা একঝলক কোনো দৃশ্য, অথবা খবরের কাগজে পড়া কোনো খবর হঠাৎ মগজে আলোড়ন তোলে। সেই বীজের ঘুম ভাঙে। সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিদ্ধ করবে বলে তার গমন শুরু হয়।
    এরপর আঘাত। এই আঘাত হয় সম্ভাব্যতার ওপর, দেখা, শোনা ও পাঠের অভিজ্ঞতায় লেখকের মনোজগতে যে তীক্ষ্ম শায়কটি তৈরি হয়েছে, সেই আয়ুধ এখন ছুটে যায় এক সেট সম্ভাব্য আধারকে বিদ্ধ করবে বলে। ঐ সেটের ভেতর থেকে একটি সম্ভাব্য ঘটনার আধারকে বিদ্ধ করে বীজ। ঐ আধারের প্রাচীরকে ভেদ করতে পারলে ঐ বীজ নিষিক্ত করে 'ঘটতে পারে' এমন এক সম্ভাবনাকে।
    এরপর তো লেখকের কেরামতি। বাক্যবিন্যাস, শব্দচয়ন, ফর্ম, ইত্যাদির চতুরালি। ভ্রূণের হাত পা গজায়। জীবনবোধের 'জিন' ঠিক করে সেই গল্পের চোখের রং, চুলের বৈশিষ্ট্য, সেই গল্পের মেজাজ। মেদ-মাংস-রক্ত নিয়ে একটি গল্পপ্রতিমা গড়ে ওঠে। দেখা, শোনা, পাঠের অভিজ্ঞতা লেখকের মনোজগতে জারিত হতে হতে যে জীবনবোধ গড়ে ওঠে, সেই বোধ এখন এক প্লাসেন্টা হয়। তার ভেতরে জেগে ওঠে গল্পকাঠামো। আস্তে আস্তে একমেটে হয়, দোমেটে হয়। ডাকের সাজ ও গর্জন তেলে একটি সার্থক গল্প ঝলমল করে।"

    ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় বিপুল দাসের দশটি গল্পের সংকলন, পরশপাথর প্রকাশনা থেকে। ভূমিকায় লেখকের কথা থেকে উদ্ধৃত করলাম ওপরে। বুলবুলভাজার মূল লেখাটির সঙ্গে এই অংশটুকুও থাক এখানে।
  • কল্লোল | ***:*** | ১২ অক্টোবর ২০১৫ ১২:৪৩87287
  • লেখকরে আভূমি কুর্ণিশ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন