অনেক বছর আগে ইউরোপে মাছ কিনতে গেলে দেখতাম যে মাছের পেটের তেল-অন্ত্র পরিষ্কার করে ও মাথাটা কেটে বিক্রিবাটা হচ্ছে। তখন বয়স কম ও সপ্তাহশেষে কোনো বাঙ্গালি খাবার ইচ্ছে হলে মাছের দোকানে পৌঁছে মাছের কাটা মাথাগুলোর খোঁজ করতাম।ফেলে দেওয়া মাথাগুলো আবার কী কাজে লাগবে, দোকানী জানতে চাইলে আমরা বলে উঠতাম,”আমাদের পুসিবেড়াল বাজারের প্যাকেটের খাবারের থেকে এই মাথা বেশি পছন্দ করে”। বড় বড় দুটো কার্পের ( কাতলা মাছ )মাথা বিনি পয়সায় নিয়ে এসে কল্পিত পুসির খাবারের বদলে আমাদের মুড়িঘন্টের উপাদান হত। পরে জেনেছিলাম যে মাছের মাথায় পচন ক্রিয়া আগে শুরু হয় তাই মাছকে বরফে রাখতে গেলেও তারা মাথা সরিয়ে দেয়। এদিকে আগরতলার এক বাঙ্গাল বন্ধু তার বাড়ীতে শুঁটকি মাছের রান্না একবার খাইয়েছিল আর আমার অদ্ভুত লেগেছিল, তাতে কোনো বাজে গন্ধ না থাকার জন্য। তবে কি মাছকে শুঁটকি করতে পচন ক্রিয়া কলাপের বিরুদ্ধে কোনো কিছু ব্যবস্থা নিতে হয় ? এই পদ্ধতির সঙ্গে কি মিশরীয় ম্যমী প্রস্তুতির মিল আছে ,এসব চিন্তা করতে করতে রবিঠাকুরের এঁদো পুকুরের ভেসে ওঠা মাছ ও পদ্মমণির লংকাঠেসা মাছের রান্নাতে মানুষের শ্রাদ্ধের সম্পর্কের যোগসূত্র খোঁজার সময় বাঙ্গালির প্রিয় ইলিশ মাছে ফর্মালিন জনিত বিষের অবস্থিতির খবরে আমার ভাবনার তিব্রতা কয়েকগু্ণ বাড়িয়ে দিলো। আর তাই অনেগুলো প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
প্রথমে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় যদি বলি একদম জ্যান্ত মাছ খাবো। মানে জ্যান্ত মাছটাকে কিনে সঙ্গে সঙ্গে কাটিয়ে নিয়ে সমস্ত রক্ত ধুয়ে বরফে রেখে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রান্না করতে পারলে মাছজনিত খাবারে কোনো বিপদ হবে না। কাটা মাছে রক্ত লেগে থাকা বিপদজনক।মাছ খাওয়ার পর গলা জ্বালা, চুলকানি, নিশ্বাস নিতে কষ্ট , পেট খারা্প, বমি,ও শরীরের রক্ত চাপ কমে যাবার লক্ষণগুলির জন্যে এক অ্যামিনো অ্যাসিড,হিষ্টামি্ন, দায়ী। মাছে এটা বেশ থাকে তবে মাছ মরে গেলে মাছে থাকা বিশেষ কিছু এনজাইমের প্রক্রিয়ার কাজ বাড়ে আর এই হিষ্টামি্নকে নিয়ে যে কাজটা বাড়াবাড়ি করে তাকে Scombrotoxin বলা হয়ে থাকে। এই ঘটনাটা বেশি জল,মাছের রক্ত ও আমাদের গরম আবহাওয়ায় বাড়তে থাকে ।নুনজল ও ফ্রিজে রাখলে এই প্রক্রিয়াকে বন্ধ করা যায়না, শুধু ওই এনজাইমের কাজের গতিকে কমিয়ে দিতে পারে ও ফ্রিজ থেকে বার করে দিলেই আবার Scombrotoxin এর প্রভাব বাড়তে থাকে।
তাহলে কী করলে শুদ্ধচিত্তে মাছ খেতে পারবো? এটা আমাকে লিখতে হলো এই জন্য যে অনেকে একটু পান থেকে চুন খসলেই গেলো গেলো রব তোলেন তাদের জন্য। এ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের মা ঠাকুমাদের টক্সিকোলজির কোনো কোর্স করতে হয়নি সেটা আমার স্মৃতিতে পরিষ্কার মনে আছে । দৃশ্যটা এরকম; খুব ছোটোবেলা্য়, একটা বাটি নিয়ে আমি রান্নাঘরের মেঝেতে বসে মাছের পিস ভাজা খাচ্ছি আর ছোট পিসিকে বড় একটা পেতলের গামলাতে অনেক মাছের টুকরোকে নুন হলুদ আর সরষের তেল দিয়ে মাখাতে আর মাকে কড়াইতে মাছ ভাজতে ও একটা থালাতে ভাজা মাছ রাখতে দেখছি তার সঙ্গে রান্না ঘরের বাইরে একটা বড় মাছকে নামিয়ে দিয়ে দাদুর প্রিয় বুধন মাঝি মা-পিসিকে বলে গেল যে বড় বাবু ( আমার দাদু )আরো দুটো মাছ পাঠালেই আজকের মাছ ধরার ইতি। এই মাছ পর্ব শেষ হতে অনেক সময় লাগতো আর আমি পিসি মারফৎ পেট ভরে ভাজা মাছ খেতাম আর আমার সামনে বাবার প্রিয় কুকুর রঘু বসে অপেক্ষায় থাকতো কখন আমি আধ খাওয়া মাছটি তার দিকে ছুড়বো বলে। পাড়া প্রতিবেশীদের দেবার মত মাছ ভাগ করে পরের দিনের বাড়ীর ব্যবহারের জন্যও মাছ আলাদা রাখা হত আর সে যুগে না তো বরফের চল ছিল না ফ্রিজ। দাদুর মাছ ধরা প্রায়ই হত আর আমরা সবাই সঙ্গে প্রতিবেশীরা দু'দিন ধরে সেই মাছ খেতাম। কারো সেই মাছ খেয়ে কখনো শরীর খারাপের খবর শুনিনি। এর মানেটা হল যে হলুদ আর নুন সহযোগে প্রায় ২৫০ ডিগরী সেলসিয়াসে মাছের সব খারাপ এনজাইমদের বারোটা বাজিয়ে ও মাছের সহজ পচনশীল তেল বা ফ্যাট কে গলিয়ে বের করে দেওয়া হত ( মাছের তেলে মাছ ভাজা কথাটা এই ফ্যাটের জন্য ) আর জল তো থাকেই না। ব্যস ভাজা মাছ শুদ্ধ বুদ্ধ নিষ্পাপ খাবার হয়ে যেতো। মাছকে ধরার পরেই পচনক্রিয়া থেকে বাঁচাতে প্রথমে পেটে থাকা সব পাচন ও পয় প্রনালীর অন্ত্রগুলি ও চর্বি তার সঙ্গে প্রায় গোটা মাথাটিকে বাদ দিয়ে সব রক্ত জল দিয়ে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে পারলে ২ দিন ফ্রিজে রাখা যায়। আবার সব বাতাস চাপ দিয়ে বের করে বন্ধ সেলোফেনে ডীপ ফ্রজে (মাইনাস ২০ -৪০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ) মাস কয়েক রাখা যেতে পারে। দেশী বাজারে প্রায় দেখতে পাওয়া যায় এক্সপোর্ট কোয়ালিটি ঠিক না রাখায় খারিজ করা প্রচুর চিংড়ি জাতীয় মাছের আমদানি । সঠিকভাবে পরিষ্কার করে না রাখলে পচন কাজের মাইক্রোব বাড়বে আর তা সহজেই কোয়ালিটি কন্ট্রোলে ধরা পড়ে। তাই এই খারিজ মাছ আমাদের মত দিশী লোকেদের সস্তায় জোটে আর তেলে ভেজে রান্নার পদ্ধতি আমাদের কিছুটা বাড়তি সুরক্ষা দিয়ে থাকে । শুঁটকি মাছের রাখার পদ্ধতি অনেকটা এই প্রকার শুধু জল ঝরিয়ে নুন মাখিয়ে রোদে রাখা আর যেসব মাছে তেল বেশি যেমন ইলিশ, সেগুলোর শুঁটকি করা শক্ত এবং করলেও বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যায় না। এবারে পচন রোধে কিছু রাসায়নিক অল্প পরিমাপে ব্যবহারের বিধি নিয়ম আছে, সাধারণত সেগুলোকেই প্রিজার্ভেটিভ বলা হয়। বাতাস সরিয়ে ভ্যাকুয়াম করে সেলোফেন প্যাকেটে বা বদ্ধ কৌটোতে এই মাছ রাখলে বাতাস জনিত মাইক্রোব থেকে বাঁচানো যায়। খারাপভাবে রাখলেই মাইক্রোব ও ফাংগাসের আক্রমণ হয়। অসাধু মাছের ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের জন্য মাছের কোয়ালিটি সঠিকভাবে না রেখে পচন রোধের জন্য কমদামি অনেক ক্ষতিকারক রসায়নিক ব্যবহার করে থাকেন। বাঙ্গালির প্রিয় ইলিশ মাছের কথায় যদি বলা হয় তাহলে ইলিশ কেনার আগে সেই ইলিশটি কিভাবে বাজারে আসে সেটা একটু ভেবে দেখা দরকার। অন্যান্য চালানি মাছ, যা অন্য শহর থেকে ট্রেনে বা ট্রাকে আসে সেগুলো সেই একই পদ্ধতিতে বাজারে আসে। আমাদের সবার বাড়ির পাশেই তো গঙ্গা বা কোলাঘাটের রূপনারায়ণ নদী নেই যে মাছের থলি হাতে নদীঘাটে জেলেদের মাছের জাল টানার অপেক্ষায় থাকবো আর জালের ভেতরে বড়সড় এক ইলিশের দরাদরি করে নিজের মাছের থলিতে পাচার করে বাড়িমুখো হবো। এই ধরণের মাছ নদী -সমুদ্রের মোহানায় ধরা হয় বেশি পরিমাণে। সেই মাছ না পরিষ্কার করে কোনো রকমে বরফ -নুনের মধ্যে জায়গা কম করার জন্য মুড়ির টিনের মত চাপা চাপি করে ফড়েদের কাছে ১-২ দিনের মধ্যে পৌঁছয় । এখানে বড় ছোটো মোটা রোগা মাছ আলাদা করে নিলাম হয় । এই সময় ধরা মাছের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে থাকে । মাছ ধরা জেলেদের সঙ্গে ফড়েদের দরদস্তুরের সময়টা কাজ চালানোর মত বরফের আচ্ছাদন মাছেরা পেয়ে থাকে। সব কেনা কাটা হয়ে গেলে ফড়েরা এবার মাছের বাজারে বিভিন্ন মাছ বিক্রেতার সঙ্গে মাছ ভাগ করতে থাকেন আর তখন তাদের মনে হয় যে দেরি হয়ে গেছে আর ভাল দাম পেতে গেলে মাছের পচনক্রিয়া জনিত দু্র্গন্ধ আর গলা ভাবটা বন্ধ করতে হবে। এঁদের কাছে ভাগাড়ের মাংসের সংরক্ষণ প্রথা ভালো ভাবেই জানা আছে তবে কারা এটার আবিষ্কারক তা জানা নেই। আ্ন্তর্জাতিক বাজারে আন্তর্জালের মাধ্যমে এসব অনেক আগে থেকে পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যাপারগুলো এই মৎস্য কারবারীরা ভালভাবেই অবগত আছেন। ইন্দোনেশিয়া,থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামে মাছের বিকৃতি কমাতে ফর্মালিনের ব্যবহারে মানুষ মারার ঘটনাগুলি তাদের নিশ্চয় জানা আছে। এরমধ্যে যেগুলো তাঁরা জানতে চাননা তা হল, ফর্মালিন ব্যবহৃত মাছ মানুষ খেলে নানা রোগে পড়তে পারে এবং বিশেষ ভাবে ব্লাড ক্যান্সারের সম্ভাবনার কথাও বিজ্ঞানীরা বলে গেছেন। মজার কথা যে ফর্মালিন মাছের কানকিতে ইনজ্কেসনের সিরিঞ্জ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার পর পচনশীল মাছের পেট শক্ত হয়ে যেতে থাকে আর মাইক্রোবদের কমিয়ে দেওয়ায় দুর্গন্ধ কমে যেতে থাকে।
ফর্মালিন, যা ফর্মাল্ডিহাইড নামক গ্যাসীয় কেমিক্যালের জলীয় দ্রবণ, যে কোনো মৃত শরীরের পচন রোধে বহুযুগ ধরে ব্যবহৃত। তাই এটা সাধারণত লাইফ সায়েন্স, প্যাথোলজি, ডেন্টিষ্ট ও অ্যানাটমিক্যাল মেডিক্যাল সায়েন্সের ল্যাবরেটরিতে রোজ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া মিউজিয়েমে পশু পাখীদের দেহের সংরক্ষণে এটার ব্যবহার অপরিহার্য। দুর্ঘটনাজনিত মানুষের মৃতদেহ পোষ্টমর্টেম ও নানারকমের লীগ্যাল ঘটনার প্রয়োজনে দেহ সংরক্ষিত করার জন্য বরফের সঙ্গে ফর্মালিনের ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া মাছ জাতীয় জলের প্রাণীদের মাইক্রোবের আক্রম্ণ থেকে রক্ষা করার জন্য কৃত্রিম পুকুরে অল্প পরিমাপে ফর্মালিনের ব্যবহার প্রচলিত। তবে এই সব ব্যবহারেই লিখিত বিধিনিষেধ যা অনেক স্বীকৃত গবেষণা দ্বারা উপলব্ধ, সেগুলো মেনে চলে কাজ করার বিধিনিষেধ আছে। এই ধরণের বেশিরভাগ রাসায়নিক হাওয়ার অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে আর তা সূর্যের আলোতে ও খুবই অল্প পরিমাণে বিশেষ কিছু মেটাল আয়নের সহযোগিতায় তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যেতে থাকে। এই প্রয়োজনীয় মেটাল আয়নগুলি ট্রেস মেটাল, যেগুলোকে আমরা প্রয়োজনীয় মিনারেল বলে থাকি সেগুলো সাধারণতঃ আমাদের জলে থাকে। সেজন্য এই ফর্মালিন যুক্ত মাছ হাওয়া ও জল মুক্ত অন্ধকার প্যাকিংএর বাক্সে বরফের সঙ্গে রাখার চেষ্টা চলে। বরফ যে কোনো সাধারণ জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়াকে এমনকি পচনকেও মন্থর করে তোলে। খুব বেশি পরিমাণ ফর্মালিন ব্যবহার করা শক্ত, কারণ এটা সাধারণ তাপে ফর্মাল্ডিহাইড হিসেবে হাওয়ায় পৌঁছে গিয়ে তীব্র ভাবে মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়া করতে থাকে এবং ত্বকে জ্বালা, শ্বাস নিতে কষ্ট, বমি ভাব,চোখে জ্বালা ও জল পড়া ইত্যাদি উপসর্গ সঙ্গে সঙ্গে শুরু হতে পারে ।এছাড়া এর তীব্র গন্ধ অসহ্য আর যারা মাছের পচন রোধে এটা ব্যবহার করছে তাদেরও স্বাস্থ্যের বারোটা বাজিয়ে দিতে থাকে। অসৎ উপায়ে আর্থিক লাভই যখন লক্ষ্য তখন কম পয়সা ব্যবহারে প্যাকিং প্রক্রিয়া এসব কাজে ত্রুটিপূর্ণ হয়ে উপভোক্তাদের এক মিশ্র কল্যাণ-অকল্যাণের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়। খারাপ প্যাকিংএ ফর্মালিনের প্রভাব কমতে থাকে যা ভাল কিন্তু তা পচন ক্রিয়া ত্বরান্নিত হতে সাহায্য করে। ব্যাপারটা শাঁখের করাতের মত। পচন রোধের প্রথম কথা যে পেটের অন্ত্র ও অন্যান্য তেল লিভার জাতীয় জিনিষগুলি ও মাথা মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে কেটে সরিয়ে দিতে হবে আর রক্ত জল দিয়ে ধুয়ে সব জল মাছের দেহ থেকে ঝরিয়ে বরফকুচি-লবনের মিশ্রণে হাওয়া সরিয়ে প্যাকিং করলে মাছকে অনেক দিন অবিকৃত রাখা যেতে পারে । এগুলো আমাদের দেশে সম্ভব নয় দুটি কারণে। প্রথমত এভাবে মাছের সংরক্ষণে শিক্ষিত লোকেদের প্রয়োজন আর যে পয়সা ব্যবহারের প্রয়োজন তা মাছের ব্যবসায়ীরা খরচ করবেন না আর ইনস্পেক্টর রাজে ঘুষের ব্যবহারে আমাদের কোনো বিধিবহির্গত কাজ করতে অসুবিধা থাকেনা। দ্বিতীয়ত ইলিশের তেল ভাজা আর মাছের মাথা যুক্ত লাউঘন্ট না খেলে ইলিশ কেনার কোনো মানেই থাকে না। কাজেই সবার প্রয়োজনে ওই যেভাবে চলার কথা তাই চলবে। সংরক্ষিত মাথা ও পেট কাটা ইলিশ দামে আর ব্যবহারে কখনোই ফর্মালিন যুক্ত গোটা ইলিশের বিক্রির সঙ্গে পেরে উঠবে না।
আরো বড় করে অনেক কিছু লেখা যেতে পারে আর আমি মোটামুটি সাধা্রণ কথাগুলো লিখলাম। একথা স্পষ্ট করে দেওয়া ভাল যে, আমি কাউকে প্ররোচিত করছিনা গোটা ইলিশ খেতে। তাই বাধ্য হয়ে যদি গোটা চালানি মাছ কিনে ফেলেন তবে মাছকে ভাল ভাবে ধোবেন। পাত্রে জলের সঙ্গে কিছু ভিনিগার মিশিয়ে তাতে মাছটি ১৫ মিনিট রাখুন এবারে জল দিয়ে ধুয়ে মাছটি কেটে টুকরোগুলো আবার নতুন করে ভিনিগার যুক্ত জলে ১৫ মিনিট রেখে তাজা জল দিয়ে মাছের টুকরোগুলো ধুয়ে নিলে ফর্মালিনের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। মাছ ধোওয়ার সময় সুর্যের আলো মাছের উপর পড়লে আলো বাতাসের মাধ্যমে ফর্মালিনের কার্বন ডাইক্সাইডে পরিবর্তন মাছকে খাদ্য উপযোগী করতে সাহায্য করে। মাছগুলোকে এবার সরষের তেলে (প্রায় ২০০-২৫০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে) ভাজা হলে মাছ ফর্মালিন মুক্ত হবে। ভাপা বা পাতুরি জাতীয় খাবার টাটকা ইলিশেই ভালো । কম সময়ে ফর্মালিনের প্রক্রিয়ায় মাছের প্রোটিনের কিছু পরিবর্তন হতে পারে যা ধোওয়ার সময় পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে পারে। তবে বেশিসময় ফর্মালিনে থাকলে এই পরিবর্তিত প্রোটিন জলে রাখলেও আগের অবস্থায় ফিরে নাও আসতে পারে তবে শরীরে তার কোনো খারাপ প্রভাবের খবর জানা নেই। এটা সত্যি কথা, যেকোনো প্রোটিন আমরা খেলে তা পেটের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে গিয়ে প্রয়োজনীয় আ্যমিনো আ্যসিড গুলি তৈরি করে আর সেই আ্যমিনো আ্যসিড গুলি দিয়ে ডি-এন-এ ও আর -এন- এ মিলিত ভাবে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করে। খাবারের যে প্রোটিনের অংশ আমরা ভাঙ্গতে পারিনা সেগুলো পয়ঃপ্রণালীর দ্বারা আমরা শরীর থেকে বার করে দিয়ে থাকি।
শেষে লিখতে চাই যে গোটা মাছ পেটের অন্ত্র পরিষ্কার করে ( বা না করেও ) যদি মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতে রেখে দেওয়া হয় তবে সমস্ত পচন ক্রিয়া থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়। তাই জার্মানিতে বসবাসকারী ভৌমিক দাদা তাঁর বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গেলে জার্মান বৌদিকে টেবিল সাজাতে বলে আমাদের বাড়ীর কেলারে (সেলারে ) অবস্থিত বিশাল ডীপ ফ্রীজারের ঢাকনা খুলে বলে উঠতেন কোন মাছটা আজ রান্না করবো। দেখতাম পর পর গোটা গোটা অনেক ইলিশ ও রুই এর সঙ্গে আরো সব ছোটো মাছের অবিকৃত অবস্থায় সহঅবস্থান ।ওই রকমই ঠাণ্ডায় রাখা বষ্টনের বাংলাদেশী মাছের দোকানি হেসে বলে ওঠতেন ;কী দেবো,গঙ্গা না পদ্মার ইলিশ ? এই মাছ গুলো কাটতে হাতে গ্লাভ্স পরে ইলেকট্রিক করাত ব্যবহার হয় নিখুত পীস গুলো করতে আর বাড়ী আসার সময় ধরে এগুলোর সাধারন (‘থ’) অবস্থায় এসে গেলে একেবারে টাটকা মাছের গুণগুলি বেরিয়ে আসে। ডলার বা ইউরো খরচ করলে সারা বছর ভালো মাছ বাঙ্গালি খেতে পারে। এটা আজকাল সবরকম খাদ্যবস্তুরর খেত্রেই হয়ে থাকে, গ্লোবাল ইকোনমির জন্য । আমাদের বীরভূম প্রান্তে একটা কথা প্রচলিত আছে, সেটাই লিখি শেষে – “ফেলো কড়ি মাখো তেল, আমি কি তোমার পর ?”