এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ‘কালো? তা সে যতই কালো হোক ....’

    ডঃ সব্যসাচী সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১১৩০ বার পঠিত
  • খুবই পুরোনো উক্তি তবে এখন তার ব্যাপ্তি গৌরী থেকে গৌর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।‘কী ফরসা দেখতে’ কথাটা প্রথম দর্শনেই মনে আসে আর কী কালোরে বাবা!- মানুষটিকে দেখলেই মনটা কেমন যেন হয়ে যায়।তাত্বিকেরা এই প্রথম দর্শনের প্রতিক্রিয়াকে তর্কের আড়ালে নিয়ে গিয়ে ‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দ কেনে’ বা ‘্কী ফরসা মাথা’, তাতে কী হয়েছে এই সব বলে একটু ডেমোক্রেটিক দর্শণ নিয়ে আসতে পারেন।কিন্তু ভুষো কালো দেখতে লোকটিকে রবিঠাকুরের ‘ কালো? তা সে যতই কালো হোক .... ‘ গেয়ে দরদ দেখালেও তার ভেতরের কালো বলে দুঃখ যাবে না। আমাদের সমাজই যেখানে সেই দুঃখ পাওয়ার বন্দোবস্ত করে রেখেছে। কবি অবশ্য কালো হরিণ চোখের প্রশংসা করে একটা বিজ্ঞান ভিত্তিক সত্য কথা বলে ফেলেছেন।শুধু কি চোখ না শরীরের সবটা , কালো ভালো - না ফরসা ভালো ; আরো একটু ফরসা করে আলোচনা করা যাক।

    আধুনিক মানুষের পুর্বপুরুষদের প্রায় ২০০০০০-১০০০০০ বছর আগে পূর্বআফ্রিকায় আবির্ভাব।তারা দেখতে কেমন ছিলো? প্রয়োজনীয় বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় তাদের গায়ের ভালুকের মত লোম সকলের বিনাশ হয়েছিলো কারণ এদের উদয় পৃথিবীর আইস এজের শেষের সময় আর শীত নিবারণের জন্য তখন আর গায়ের লোমের অত প্রয়োজন ছিলো না। গরম পৃথিবীতে ঘামার প্রয়োজনে শরীরকে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা হলো তাই লোম সকল ঝরে পড়লো । মনে রাখতে হবে গায়ের রং কিন্তু ঐ গরিলাদের মত কালোই ছিল। বাঁচার জন্য এটার খুবই প্রয়োজন ছিলো তাই আজো এই গ্রহের বিষুব রেখার কাছের দেশের মানুষদের গায়ের রং কালো। প্রাকৃতিক নিয়মে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরনকে বাধা দেওয়ার জন্য শরীরের ত্বকের নিচে মেলানিন নামক এই কালো পিগমেন্টের অবস্থিতি ।এটা শরীরের ডিফেন্স মেকানিজম যা না থাকলে অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ শরীরের চামড়াকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ক্ষতের সৃষ্টি করে ক্যান্সার নামক রোগকে ডেকে আনে।তাই আজো কালো চোখের মনি- নীল,খয়েরী বা অন্য রং এর চোখের থেকে অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরনকে বেশি ফিল্টার করে।রবি ঠাকুর এই বিজ্ঞান বোধ হয় জানতেন। কালো রং এর মেলানিন অতিবেগুনী রশ্মির প্ররোচনায় বাতাসের অক্সিজেনকে পাগলামি করতে বাধা দিয়ে থাকে। অল্প কথায় বলা যায় যে বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন শান্ত ও ভালো আমাদের কোনো ক্ষতি করে না তবে কথায় আছে- ‘ যেই রক্ষক সেই ভক্ষক’ তাই অতিবেগুনী রশ্মি এই শান্ত অক্সিজেনকে অশান্ত করে দিতে থাকে আর এই অশান্ত অক্সিজেন আমাদের ত্বকের কোষগুলিকে নষ্ট করে দিতে থাকে ও ক্রমাগত ক্ষতের সৃষ্টি করে।সে যাই হোক, প্রায় ৮০০০০ বছর আগে আমাদের একদল পূর্বপুরুষ খাবার ও উন্নত জীবনের সন্ধানে পুর্বআফ্রিকার উত্তর-পূর্ব দিশায় পাড়ি দিয়েছিল ও ভারত সহ এশিয়া ও অষ্ট্রেলিয়া মহাদ্বীপে ছড়িয়ে পড়েছিলো। এখানে সংক্ষেপে লেখা যেতে পারে যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সূর্যের আলোর প্রক্রিয়ায় যুগে যুগে মানুষদের বিবর্তনের ইতিহাস পড়া যেতে পারে। এভাবেই প্রায় ৩৫০০০ বছর আগে ঐ আফ্রিকা থেকে কালো মানুষের দল ইউরোপে পাড়ি দিয়েছিলো। প্রায় বিনা সূর্যের দেশ উত্তর ইউরোপের মানুষদের মেলানিনের প্রয়োজন খুবই অল্প তাই কালের গতিতে জীবনের বিবর্তনে কালো চামড়ার মানুষগুলো ফরসা হয়ে গেলো। দক্ষিণস্থিত ইউরোপের লোকেরা অপেক্ষাকৃত বেশি সূর্য আলো পাবার জন্য ধবধবে ফরসা না হয়ে রোমান সুন্দর-সুন্দরী হয়ে গেলেন ।এটা অনেকটা উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মানুষদের শরীরের রং এর তফাৎ এর মত। প্রচুর সূর্যকিরণের হাত থেকে বাঁচার জন্য শরীরের এই মেলানিন জাতীয় পিগমেন্ট ৈরি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।এখানে দুটো কথা বলা আবশ্যক। কালো মানুষদের স্নায়ুজনিত রোগ যেমন ‘পার্কিনসন’ প্রায় হয়না, কারন, মেলানিন তৈ্রিতে কিছু সমান পদ্ধতি ব্যবহারে নিউরনের প্রকাশে জটীল সম্পর্কের জন্য।আর ভিটামিন ডি তৈরীর জন্যও কালো চামড়ায় বেশি সূর্যের আলোর প্রয়োজন তা অবশ্য সূর্য কিরনের দেশের লোকেদের পর্যাপ্ত পরিমানে প্রাপ্তি হয়ে থাকে। ।এবারে নদীর এপার ও ওপারের বিশ্বাসের কথা। ফরসা চামড়ার লোকজন তেলজাতীয় ক্রিম মেখে আমাদের দেশে প্রচুর সূর্যের আলো আচারের মত গায়ে লাগিয়ে ট্যান হবার চেষ্টা করে থাকেন ।অষ্ট্রেলিয়া মহাদ্বীপে সূ্র্য অনেক বেশি অতিবেগুনী রশ্মি বিকিরণ করে বলে সেখানে অধুনা ইউরোপীয়ানদের বসবাস কষ্টকর তাই ফরসা ব্যক্তিরা খারাপ ভাবে স্কীন ক্যান্সারে ভুগে থাকেন।এবারে শেষ কথায় আসা যাক।আমরা কালো তাই গৌরী বা গৌরাঙ্গ হতে চাই। সাধারণ উপায়ে তা হতে গেলে অনেক জেনারেশন লাগবে আর আপনাকে স্কান্ডেনেভিয়ায় কোন রাজ্যে বসতি করতে হবে আর আজ থেকে বহু জেনারেশন পরে আপনার বংশের লোকেরা ধীরে ধীরে ফরসা হয়ে যাবে। শর্ট কা্ট যদি চান তো শরীরের মেলানিনের স্তরকে অষুধ লাগিয়ে নষ্ট করে দিতে পারেন। বা যে প্রক্রিয়ায় তা তৈ্রি হয়ে থাকে তাকে কোন রকমে বন্ধ করে।এবারে কালো থেকে শ্যামলা রং একটু এগিয়ে গেলে একটু চাপা ও আরো এগিয়ে ফরসা পরে আরো ফরসা এই গায়ের রংএর বিভেদ পৃথিবীতে অনেক দিন থেকে প্রচলিত।ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে জামা কাপড় দিয়ে না ঢাকা শরীরের অংশ বিশেষ গুলিকে আরো উজ্জলতর ফরসা দেখাতে আ্যলকেমি বা রসায়নের প্রলেপ নেওয়ার প্রচলন ছিলো। আ্যরিস্টোক্রেসির পরিচয় এই উজ্জলতর ফরসা রং তা জনমানবের স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিল। মেহনতি বা খেটে খাওয়া আলো বাতাসযুক্ত পৃথিবীর মানুষদের গায়ের চাপা রং আ্যরিস্টোক্রেসির পরিচয়ের বড় রকমের বাধার সৃষ্টি করতো। সেই সময়ে গায়ের রংএর ব্যাপারে আর্সেনিক সব থেকে প্রচলিত রসায়ন যা মুখে হাতে লাগাতে বা অষুধের মত খাওয়া হত কখনো লেড বা মার্কারী ধাতুর লব্ণেরও ব্যবহারের প্রচলন ছিলো। ।আমাদের দেশে ভেষজ গাছ গাছড়া থেকে পাওয়া বনৌষধির ব্যবহারেরও প্রচলন ছিল।আস্তে আস্তে বিশুদ্ধ হলুদ , চন্দন ,মুলতানি মাটি, গোলাপজল ও গরুর কাঁচা দুধ জাতীয় বস্তু সকল দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় আর বাজারে রসায়নে ভরা প্রেট্রোলিয়াম জেলী বেস করে সহজলভ্য ক্রীমের আবির্ভাব আমাদিকে কালো ত্বক থেকে সাদা ফরসা হবার অন্তরের সুপ্ত ইচ্ছাকে জাগিয়ে সহজ করে দিয়েছে। শরীরে যে কোনো রসায়নের প্রয়োগের কিছু বিধি নিষেধ আছে ও এর জন্য সময় ও খরচ সাপেক্ষ অনুসন্ধান ও তার সুফল ও কুফলের প্রভাব গুলি দেশের ড্রাগ কন্টোল বিভাগ বিচার করে সেটাকে বাজারে ব্যবহারের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স দিয়ে থাকে।এখানে দুটো কথা বলার আছে প্রথমত এই রসায়ন ক্ষতি কারক নয় তা জানতে বিজ্ঞানাগারে গবেষনা কত বছর লাগতে পারে আর সেটা কোন প্রাণীর ( মানুষ ! ) উপর ব্যবহারের ফল? এটা সাধা্রণত ল্যাবরেটরী আ্যনিমেলদের উপর ক’বছরের প্রয়োগের ডেটা ও সেটা কতদিনের মানুষের ব্যবহারে নিরাপদ তা জানা প্রায় অসম্ভব।এখানে মানুষ ভলান্টিয়ার পাওয়া যায় যারা পয়সার বিনিময়ে গবেষণার শেষের পর্যায়ে রসায়নের প্রভাব নিজেদের শরীর উপরে দেখার ছাড়পত্র দিয়ে থাকে সেটাও কিছুদিনের ব্যবহারের রিপোর্ট। বেশিদিন ব্যবহারের রিপোর্ট ব্যয় সাধ্য তাই এ প্রয়োগ সীমিত দিনের হয়ে থাকে। এবারে মোটামুটি ভাবে এক রসায়ন ড্রাগ কন্টোল থেকে ছাড়পত্র পেলেই যে কোম্পানী এই গবেষণা ও তার আনুষঙ্গিক খরচ বহন করে সেই সংস্থা নতুন নামকরণ করে সেই রসায়ন যুক্ত মলম বা ক্রীম বাজারে নিয়ে আসে। । টাকার বিনিময়ে সিনেমা বা খেলাধূলার সফল মানুষের চেহারা ও ভাষ্য কমিন্যুকেশনের মাধ্যমে একটি অসাধু ‘এ্যাডের’ প্রয়োগ করে এই নতুন ক্রীমের বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা চলে। স্লোগানটি প্রায় ‘ এই ক্রীমই আমার সব ৌন্দর্যের প্রকাশে সাহায্য করেছে’ ও ফটোশপ জাতীয় শফ্টওয়ার ব্যবহারে মলিন ত্বক বা মুখমণ্ডল ও পরে ক্রীম ব্যবহারের পর তরতাজা ছবি দেখানো হয়ে থাকে।তাই বিজ্ঞাপনের অর্থকরী ভাষার মানে কেও বোঝার চেষ্টা করে না যে ক্রীমটি এই মাসে বাজারে উপলব্ধ হলো সেটি বহু দিনের প্রতিষ্ঠিত মানুষটির রূপের প্রকাশে কী করে সাহায্য করতে পারে। এবারে আরো খারাপ ঘটনা ঘটে থাকে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নতুন রসায়নের গোপন ঠিকুজি বার করার চেষ্টা করে পেটেন্ট কানুন কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঐ রসায়নের সমগোত্রীয় রসায়ন তৈ্রি করিয়ে তার ক্রীমটিকে অল্প কম দামে বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে থাকে।এখানে এই ড্রাগটি বাজারে নামাতে বেশি সময় বা খরচ হয়না কারণ হাতড়ে হাতড়ে প্রথম ড্রাগটি যে অর্থ ও সময় নষ্ট করে তার গুণাবলীর প্রোটোকল তৈরি করে সেই রেসিপীকেই মোটামুটি দ্বিতীয় ড্রাগে ব্যবহার করা হয় আর রসায়নটি যদি কিছু অসুদ্ধ হয় তাহলে তো আরো কমদামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এখানে কোম্পানীর সুনাম ও প্রতিষ্ঠা জড়িত থাকে।

    ফরসা করার ড্রাগগুলি কীরকমের আর সেগুলি কীভাবে শরীরের ত্বকের উপর ক্রিয়া করে থাকে ? এগুলির বেশির ভাগই একপ্রকার পেট্রল জেলী বা ওই জাতীয় জেলপলিমারের বেসে মিশিয়ে কিছু সুগন্ধ রসায়নের নির্ষাস দিয়ে তৈ্রি করা হয়।আর কিছু গাছপালা যা ৬০ বছর আগেও আগাছা মনে করে গরু ছাগলকে আটকানোর জন্য মাঠে বেড়ার কাজে ব্যবহিৃত হত যেমন আ্যলুভেরা এখন সর্বঘটে কদলী। কাজেই একটু আ্যলুভেরার জেলী তাতে মিশিয়ে দিয়ে জিনিষটিকে প্রায় প্রাকৃতিক নির্যাস ঘোষণা করা হয়।এবারে একটু কালো শরীরের বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যাবে যে সূর্যের অতি বেগুনী আলো ও গরম আবহাওয়ার মাত্রারিক্ত প্রভাব যা মানুষের ক্ষতিকারক সেগুলো থেকে বাঁচার জন্য প্রকৃতি এক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। এক অতি প্রয়োজনীয় আ্যমিনো আসিড,টাইরোসিন, এ কাজের প্রধান রসায়ন।এবারে টাইরোসিনেজ এনজাইমের দক্ষতায় এই টাইরোসিন প্রথমে অতি প্রয়োজনীয় ডোপা নামক রসায়নে পরিবর্তীত হয়ে বেশ কয়েক এনজাইমের ধাপে ধাপে প্রভাবে কালো রঙের পিগমেন্ট , মেলালিন, তৈরি করে থাকে। এই মেলানিন তৈরীর সংযুক্ত এনজাইম প্রক্রিয়াকে মেলানোজেনেসিস বলা হয়ে থাকে।এই মেলালিনই হলো কালো রঙের উৎস যা ত্বকের নিচে অবস্থান করে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এখানে বলে রাখা ভালো যে অতি বেগুনী রশ্মিও তিন প্রকারের আর এর মধ্যে শুধু একটি একটু ক্ষণের জন্য গায়ে পড়লেই পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈ্রি করে থাকে। যার শরীরে মেলানিন কম বা নেই সে ফরসা আর যার শরীরে খুব বেশি সে খুব কালো।

    এবারে ফরসা হওয়ার ওষুধগুলিকে দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যে সমস্ত এনজাইমগুলি টাইরোসিন থেকে মেলা্নিন ৈরিতে সাহায্য করে তার কোনো একটিকে তার কাজে বাধার সৃষ্টি করা যেতে পারে বা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে ।এধরণের রসায়ন কে ইনিভিটর বা ব্লকার বলা হয়। আর অন্য ভাবে ৈরি মেলানিনকে ব্লীচ করার রসায়ন পাওয়া যায়।এখানে প্রথম পদ্ধতি বেশ বিপদজনক কারন বেশীর ভাগ এনজাইমের প্রডাক্টগুলি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। টাইরোসিনেজ এনজাইমএর কাজ বন্ধ করিয়ে দিলে মেলানিন ঋ হবে না তবে তার সঙ্গে ডোপা রসায়ন তৈ্রি থেমে যাবে আর তার জন্য নিওরোট্রান্সমিশনের অনেক ক্ষতি হয়ে আল্জাইমার বা পারকিনসন্সের মতন অসুখের সৃষ্টি হবে। এর সঙ্গে আরো নিউরো রসায়ন যেমন সেরোটনীনের কাজের ব্যাঘাত ঘটে। মনে হয় ফরসা হবার আশায় এই রকম স্নায়ুরোগে পড়ার দুর্ভা্গ্য কেও যেচে নেবেন না। তাহলে অন্য পথটাই মন্দের ভালো। ক্রীম বা অয়েন্টমেন্ট শরীরে লাগানো আর সূর্যের আলো যাতে খুবই কম পড়ে তার ব্যবস্থা করে আর অষুধের ব্লীচিং কোম্পানীর ইন্সট্রাকসনের সঙ্গে কালো- শ্যামলা-গমরঙা- ফরসা-অতি ফরসার স্ক্রীন ক্যাটালগ মিলিয়ে সপ্তাহ বা মাস ধরে লাগালেই শরীরের রঙের শেড চেঞ্জ হতে থাকবে। আপনি যদি ঘড়ি বা আংটি পরেন তা খুলে দেখবেন যে সুর্যের আলোর অভাবে সেই ঢাকা জায়গাটা ক্যাটালগে সাদার দিকে একধাপ এগিয়ে। উত্তর-পশ্চিম ভারতের তরুণীরা ডাকাতদের মত পুরো শরীর ঢেকে স্কুটার বা মোটর সাইকেল চালান সুর্যের আলো থেকে বাঁচতে। এবারে অষুধের রসায়ন গুলির কাজ হলো ব্লীচ করা মানে ত্বকের নিচের স্তরে মেলানিনকে ধংস করা।এর মধ্যে হাইড্রোকুইনোন, রেজরশিনল, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, হাইড্রজেন পারক্সাইড,পারবোরে্‌ট,মিউরিয়াটিক অ্যাসিড,ল্যাকটিক অ্যাসিড প্রভৃতি ছাড়াও প্রচুর ফল ফুলের নির্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে।আজকাল ন্যানো রসায়ন দিয়েও সবাইকে ফরসা করার আবাহন করা হচ্ছে । একটা কথা মনে রাখা দরকার যে বাতাসের জীবনদায়ী অক্সিজেন (বৈজ্ঞানিক অবস্থিতি,ট্রীপলেট) এগুলির প্রভাবে সূর্যের আলোর সাহায্যে জীবন ধংসকারী অক্সিজেনে (বৈজ্ঞানিক অবস্থিতি,সিংলেট) পরিবর্তিত হয়ে আরো মারাত্মক সুপারঅক্সাইড ও জলের সঙ্গে মিশে হাইড্রোক্লসিল র্যাডিকেল গুলি সৃষ্টি করে।এগুলিই (রিয়েকটিভ অক্সিজেন স্পিসিস) প্রকৃত ব্লীচিং এজেন্ট।এরা যেকোনো টিসুকে নষ্ট করে থাকে। বেশিদিন ব্যবহারে এরা শরীরের যে জিনগুলি মেলানিন সৃষ্টিতে কাজ করে সেগুলো সাধারণ কাজে বারে বারে বাধিত হলে মিউটেট করে ক্ষতের সৃষ্টি করতে থাকে আর এদের থামানো যায়না এই স্টেজের ক্ষতকে আমরা ম্যালিগনান্ট বলে থাকি যার সাধারণ নাম ক্যানসার। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনি বেশ ফরসা হয়ে শরীরে ক্যান্সার রোগ নিয়ে আসবেন। আজ অনেক ফেসিয়াল ক্রীমে ন্যানো রসায়ন মিশে থাকে যা পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে ব্যবহারের জন্যে বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে আধ ডজনের উপর ক্রীম আমি নিজে পরীক্ষা করে দেখেছি। সূর্যের আলো ও বাতাসের অক্সিজেন এই ক্রীমস্থিত ন্যানো রসায়নের সঙ্গে মিলিত হয়ে যা সৃষ্টি করে তার সাধারণ নাম হলো ‘রিয়েকটিভ অক্সিজেন স্পিসিস’। আলো ও অক্সিজেন এই দুই অতি প্রয়োজনীয় বেঁচে থাকার মৌলিক তত্ত্বগুলির মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়ে ফেসিয়াল ক্রীমের উপাদানগুলি আপনাকে ফরসা করতে আপনার প্রতিষেধক মেলানিন সেল গুলিকে নষ্ট করে। এই ‘রিয়েকটিভ অক্সিজেন স্পিসিস’ ই আমাদের বার্ধক্যে নিয়ে যেতে থাকে তবে ফরসা হবার জন্য বার্ধক্য আপনি অজান্তে শীঘ্র ডেকে আনছেন আর উপরি পাওনা স্কীন ক্যান্সার বা অ্যালজাইমার ও পারকিনসন্স জাতীয় স্নায়ু রোগ। আপনার প্রসাধন আপনি বেছে নিন তবে একটু ভাবুন। দ্রৌপদী বা কৃষ্ণের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্য কালো রঙের জন্য কখনো ম্লান হয়নি আর হবেও না।

    আরো জানতে আমায় লিখতে পারেন, (private e-mail: protozyme@gmail.com)।


    লেখক ভূতপূর্ব রসায়ন বিভাগ প্রধান , আই আই টি কানপুর ; অবৈতনিক অধ্যাপক আই আই ই এস টি শিবপুর
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১১৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:১৩79272
  • গুরুত্বপূর্ণ জরুরী লেখা।
  • Sumit Roy | ***:*** | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৯79273
  • অসাধারণ। পড়ে অনেক কিছু জানলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন