এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • পবিত্র ভূমি ৬

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩৬২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • পবিত্র সমাধি গিরজের সদর দরোজা ডানপাশের জানলায় মই

    স্থিতাবস্থা এবং একটি মইয়ের গল্প

    আমাদের গ্রামে মাঠের আলে বসে দেখেছি একটি সমান্তরাল কাঠের পাটাতনের পিছনে ফুটো করে তাতে শক্ত দড়ি বেঁধে বলদ দিয়ে সেটি টানা হচ্ছে। এর আগে লাঙল চলেছে, মাটির গভীরে আঁচড় কেটেছে কিন্তু জমি এবড়ো খেবড়ো। সেই পাটাতনের ওপরে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের নারান কাকা জমি সমান করার দুর্বার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আমাদের গ্রামে এর নাম মই।

    যে কাঠামোর ধাপে ধাপে পা দিয়ে মানুষ বাড়ির চালে ওঠে সেটাকেও তো বলে মই? সেই মই দিয়ে মাঠের অসমতল জমিকে সমান করা যায় না! নতুন গজিয়ে ওঠা ধানের ওপরে সেটি চালিয়ে দিয়ে ফসল বরবাদ বা অন্যের ক্ষতি করার জন্য তার ব্যবহার হয় না সেখানে লাগে আমাদের সেই কাঠের পাটাতন আর অন্তত দুটো বলদ!

    ক্রিস্টিয়ানটির পবিত্রতম গিরজে, চার্চ অফ দি হোলি সেপালকারের সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এই প্রকার অসংলগ্ন প্রশ্ন মাথায় এলো। গেটের ওপরে ডান দিকের জানলায় পাঁচ ধাপ ওলা একটা মই লাগানো রয়েছে। মাটি থেকে তার উচ্চতা অন্তত তিন মিটার। এ মই বেয়ে উঠতে গেলে প্রথমত তাতে চড়তে হবে, সেটি কি প্রকারে সম্ভব? ঝরিয়ায় স্কুলে পড়ার সময় সাধারণ জ্ঞান অর্জনের সহায়তার জন্য একটি বই কিনেছিলাম, তার নাম ‘কি, কোথায়, কেন?’ সেই বই আমার সর্বনাশ করেছে। বাকি জীবন নানা এঁড়ে প্রশ্ন করে গেলাম। উত্তর পেয়েছি অনেক কিন্তু তাতে কার কি লাভ হলো জানি না।



    মই তুমি কার

    সেবার মলদোভার একটি ছেলে নিকো আমার সঙ্গে ইসরায়েলে দু দিন ঘুরেছে, অনেক খোঁজ খবর রাখে। সে আমার বিস্ময় দেখে বললে ও সিঁড়ি দিয়ে কেউ ওঠে বা নামে না গত আড়াইশ বছর, মই আছে জানলায় লাগানো তার ব্যবহার নেই তাহলে এটা সরিয়ে নেয় না কেন? নিকো বললে, তা হবার নয়। তুর্কি সুলতানের এক ফরমান মোতাবেক একে সরানো যাবে না। সেই ফরমান বা আদেশের সরকারি নাম স্থিতাবস্থা (status quo)।

    এই জেরুসালেমে? যেখানে অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ ঘণ্টি বেজেছে একশ বছর আগে? ক্রিস্টিয়ানদের গিরজেতে তুর্কি সুলতানের ফরমান বা ফিরমান?

    প্রশ্নের উত্তরে নিকো বললে শুনলে হয়তো আরও অবাক হবেন, অন্তত আটশো বছর যাবত ক্রিস্টিয়ানদের এই পবিত্রতম গিরজের চাবি ও তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বংশানুক্রমে আছে নুসাইবা ও ইউদে নামের দুই মুসলিম পরিবারের হাতে।

    জানি আলি সাহেব জেরুসালেমকে ধর্মের ত্রিবেণী সঙ্গম বলেছিলেন। কিন্তু তার ভেতরে দুটো তরফের মধ্যে এমন ধারা গলাগলি যে এক ধর্মাবলম্বী মানুষ আরেক ধর্মের লোকের হাতে আপন মন্দিরের চাবিটি দিয়ে বলেছে, ভালো করে দেখাশোনা কোরো বাপু, তোমার ভরসায় রইলেন আমাদের গৃহ দেবতা?

    হাজার বছরের বেশি এই পবিত্র ভূমি ছিল মুসলিম শাসনে। ১০০৯ সালে আল হাকিম (‘পাগল খলিফা’) চার্চ অফ দি হোলি সেপালকারে অগ্নি সংযোগ করেন। বিশ বছর বাদে অনুতপ্ত ফাতিমিদ আল জাহির তার পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের কাহিনি আমরা শুনেছি। পবিত্র ভূমি জেরুসালেম থেকে মুসলিম শাসকদের উচ্ছেদ করার অভিলাষে বারে বারে ইউরোপ থেকে ক্রিস্টিয়ান সৈন্য বাহিনী এসেছে সমুদ্র পেরিয়ে, কখনও জিতেছে কখনও হেরেছে। একসময় টানা দুশ বছর (১০৯৯-১২৯১) জেরুসালেম শাসন করেছেন ক্রুসেডার, রাজা সাজেন নি। নিজেদের তাঁরা বলতেন গিরজের রক্ষক। পরের সাতশ বছরের মুসলিম শাসনে কোন গিরজে বা সিনাগগ ধ্বংস হয় নি, শাসকরা বরং ভাঙা চোরা ধর্মস্থান সারিয়ে দিয়েছেন, যে যার ধর্ম তার আচরণ করো নিজেদের মতন বাস করো। জেরুসালেমের চারটে পাড়া, মুসলিম মহল্লা শুক্রবারে বন্ধ, ইহুদি পাড়া শনিবারে বন্ধ, আরমেনিয়ান ও ক্রিস্টিয়ান পাড়ায় রবিবারে ছুটি। মুসলিম শাসক কারো ধর্ম আচরণে মাথা না গলানোর প্রচলিত প্রথাটি ভাঙতে বাধ্য হলেন যখন এক ধর্মের মানুষ তাদের নিজেদের মধ্যেই বিবাদ বাধাল।

    সাফ সুতরো পবিত্র সমাধির গিরজেতে দেখা দিলো এক ধর্ম সঙ্কট। যিশুকে ঈশ্বরের সন্তান জ্ঞানে বন্দনা করার অধিকার সকল ক্রিস্টিয়ানের। কিন্তু তাদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধল সেই বন্দনার আচরণ প্রক্রিয়া নিয়ে - কে কোথায় কি ভাবে কোন ঘণ্টা বাজিয়ে কোন ধুনো দিয়ে কবার পাখা নেড়ে দিনের মধ্যে কতবার প্রার্থনা করবে তাই নিয়ে লড়াই চলে ; দেবস্থানের ঠিক কোন কোণায় কে দাঁড়াবে তার মীমাংসা হয় নি, এই নিয়ে মারামারি হয়েছে প্রভুর ক্রুশের সামনে। ধর্মের এই কুরুক্ষেত্রের লিগে ছজন প্লেয়ার, ছয় পুরুত, পূজারী পক্ষ – গ্রিক অর্থোডক্স (তাদের গলা সর্বদা উঁচুতে, আমাদের ভাষায় বাইবেল লেখা হয়েছে, বাবা, নইলে কি কেউ জানতে প্রভু এয়েছেন?), আর্মেনিয়ান চার্চ (দুনিয়ার পয়লা ক্রিস্টিয়ান দেশ, যখন বাকিরা পুতুল পুজোয় ব্যস্ত), মিশরের কপটিক (প্রভুর বাল্যকাল কেটেছে আমাদের দেশে), ক্যাথলিক (রোমের সে মহান গিরজে কে বানালো শুনি?), ইথিওপিয়ান চার্চ (সলোমনের বউ আমাগো দ্যাশের মাইয়া), সিরিয়ান চার্চ (ক্রিস্টিয়ানের পয়লা দীক্ষা, দামাস্কাসের পথে?)। প্রত্যেকে চান তাঁদের আপন নিয়ম মাফিক এই গিরজের পরিচালনার ভার এবং চাবি। এই নিত্যি দিনের ঝগড়াঝাঁটিতে তিতিবিরক্ত হয়ে সম্ভবত (যতদূর জানা যায়) সালাদিন বললেন ‘তোমাদের কাউকেই দেবো না। এক দলকে দিলে আর পাঁচ পক্ষ খেউর শুরু করবে, সে ঝঞ্ঝাট আমার পোষাবে না, আমার রাজকর্ম আছে। আমি চাবি দিচ্ছি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সম্মানিত মুসলিম পরিবারবর্গের হাতে, তাঁরা বংশ পরম্পরায় এই গিরজের তত্ত্বাবধান করবেন’।



    চার্চের নতুন (৫০০ বছর) ও পুরনো অকেজো চাবি হাতে চাবি রক্ষক পরিবারের সদস্য - আদিব ইউদে

    ধর্মের নামে উন্মত্ত এই পৃথিবীতে আজ সাতশ বছর ধরে তাই চলে আসছে – খ্রিস্ট ধর্মের সবচেয়ে পূজনীয় গিরজের রক্ষণাবেক্ষণের ভার দুই মুসলিম পরিবারের ওপরে সমর্পিত। আরবরা কবে চলে গেছেন, পাঁচশ বছরের তুর্কি রাজত্বের শেষ হয়েছে এক শতাব্দী আগে। তার পরে জেরুসালেম শাসন করেছে ব্রিটিশ, জর্ডান, ইসরায়েল কিন্তু গিরজের চাবি রয়ে গেছে ইউদে ও নাসবিয়া পরিবারের হাতে।

    চাবির ভার পেলেন না কোন পক্ষ। কয়েকশ বছর কোন মতে কাটলে আবার সেই আচরণ বিধির বখেড়া মাথা চাড়া দিলো। পুজো আচ্চার রীতি রেওয়াজের ঝগড়া। গ্রিকরা বললে আমরা এখানে দাঁড়িয়ে প্রভুর অর্চনা করবো, ক্যাথলিকরা বলে মোটেও নয় ওটা আমাদের আমাদের জায়গা, আর্মেনিয়ান পুরুত মারধোর করে হটিয়ে দিলো কপটিক পূজারীকে। এবারে অটোমান সুলতান মধ্যস্ততার চেষ্টা করলেন – আহা তোমরা না হয় পালা করে সমাধির সামনে দাঁড়াবে, প্রার্থনা করবে। একদিন গ্রিক একদিন সিরিয়ান, ছদিন ছয় পক্ষ ; আবার সেই গ্রিক থেকে শুরু – এই রুটিন চলুক। সেটি বেজায় অসফল প্রমাণিত হলো : গ্রিক পুরোহিত চেয়ার নিয়ে বসে পড়েছেন তাঁর নির্দিষ্ট জায়গায় কিন্তু আর ওঠেন না, সারা রাত্তির সেখানেই অনশন করে বসে রইলেন। সকাল বেলা সিরিয়ান পূজারী এসে দেখেন তার জায়গা বেদখল। সে গেলো সুলতানের দরবারে নালিশ করতে। দিনের পর দিন একই নাটিকার অভিনয় হতে থাকে। প্রভুর সমাধির সামনে সকল পক্ষের এই মারমূর্তি, লড়কে লেঙ্গে অপনি জগহ স্লোগান শুনে শুনে অটোমান সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে এক ফরমান জারি করলেন ১৭৫৭ সালের ইস্টার পরবের দিন – তোমরা ছ পক্ষ ঠিক যে ভাবে যেখানে বসে আজকের পুজো করছ সেটাই জারি রইবে তার কোন ব্যত্যয় হবে না। এই হল স্ট্যাটাস কো (তুর্কিতে স্টাতুসকো) বাংলায় স্থিতাবস্থা। সেদিন কোন এক সন্ন্যাসী গিরজের দেওয়ালে একটা মই লাগিয়েছিল- সে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্যোগ বা হাওয়া খেতে বসার ব্যবস্থা করছিল কিনা অথবা চুনকামের মিস্ত্রি তার মই লাগিয়েছিল কিনা সে বিষয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু সেইদিনে সুলতানের ফরমান জারি হয়েছে – এই গিরজের রীতি রেওয়াজ আচার আচরনে কোন পরিবর্তন চলবে না – ছোটবেলায় অনেকে যেমন খেলেছেন ‘স্ট্যাচু’ বা ‘ফ্রিজ’, তেমনি। যে যেখানে দাঁড়িয়ে, সে সেখানেই থাকবে যে ধুনুচি যেখানে রাখা আছে সেখান থেকে নড়ানো যাবে না।

    কেউ বলেছিলেন ‘আচ্ছা ওই যে একটা মই বেখাপ্পা ভাবে জানলার গায়ে লাগানো আছে, ওটার কি হবে?’

    ততক্ষণে ফরমান পাঠ সম্পূর্ণ। প্রশ্ন শুনে সুলতানের প্রতিনিধি তাঁর হাতে রোল করা কাগজটা গুটিয়ে নিয়ে নাকি বলেছিলেন, ‘ওটাও সরানো যাবে না। আমার এই পাঠের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যাটাস কো বলবত হয়ে গেছে’।

    সেই মই আজও সেখানে লাগানো – সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।



    পু :
    এক

    প্রতিদিন সকালে নুসাইবে এসে ইউদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে স্টেপ ল্যাডারে উঠে ওপরের তালা খোলেন ক্রিস্টিয়ান তীর্থযাত্রী, সাধু প্রবেশ করেন। সন্ধ্যেয় সেই এক রুটিন। অরিজিনাল চাবি অত্যন্ত পুরনো হয়ে গেছে বলে পাঁচশ বছর আগে আরেকটি চাবি বানানো হয়েছিল সেটির ব্যবহার হয় এখন।


    রাতে গিরজেয় চাবি লাগাচ্ছেন নুসবিয়া


    পু:
    দুই

    পুজোর অধিকার নিয়ে হাতাহাতি ঠেলা ঠেলি এখনও থামে নি! হালের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখুন!

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেশ মুখার্জী | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪৩525359
  • ম‌ই‌য়ের প্রেক্ষাপট বেশ চিত্তাকর্ষক তবে প্রার্থনা করার পদ্ধতি, তা নিয়ে খেয়োখেয়ির সংবাদ অপ্রীতিকর। সত্যি -  ধর্মান্ধ মানুষ নামক প্রজাতি‌টি বড় বিচিত্র।
  • | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৫৪525360
  • ওটা ওয়ান ওয়ে মই, শুধু নামার জন্য কাজে লাগত আর কি। জানলা দিয়ে বেরিয়ে নেমে তারপর ধুপুৎ করে লাফ। একটু লম্বা মানুষের পক্ষে ৯-১০ ফুট লাফস্নো তেমন কঠিন নয়। 
     
    সব পক্ষেরই বক্তব্য পুজা ওঁহি চড়ায়েঙ্গে। 
  • | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৫৪525361
  • *লাফানো
  • হীরেন সিংহরায় | 2a00:23c7:672e:2001:6d6e:b15c:98c5:***:*** | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪৪525362
  •  
    দারুন বললেন ! পূজা ওঁহি চড়ায়েনগে! বেথলেহেমে ঠিক এই ব্যাপার চলে ! সালাদিন বা অটোমান সুলতান সেখানে ফরমান জারি করেন নি তাই বখেডা লেগেই থাকে - প্রভুর জন্ম স্থানে অবিশ্যি অরথোডকসদের বড গলা । 
  • সমরেশ মুখার্জী | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪৭525363
  • ছবিতে মানুষের উচ্চতা‌কে রেফারেন্স ধরে -- যে কার্নিশে ম‌ই‌টি রাখা আছে তার উচ্চ‌তা - জমি থেকে ৩০ ফুট বা তার বেশি‌ও হতে পারে। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০০:২৯525364
  • এই নীচের ছবিতে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে - সাদ প‍্যান্ট জামা পরিহিত লোকটি ছ ফুটের কাছাকাছি হবে - তাহলে ঐ কার্নিশ যেখানে ম‌ই‌টি রেস্ট করে আছে - কমপক্ষে ৩০ফুট তো হবেই
     
  • হীরেন সিংহরায় | 2a00:23c7:672e:2001:2595:ec74:db17:***:*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০২:০৯525366
  • সে আমলের মানুষ জন আবার খাটো মাপের হতেন! 
  • Amit | 163.116.***.*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৩:২৬525367
  • নিশ্চয় রাজমিস্ত্রির মই। ওইখানে আর কে যাবে ? :) :) 
     
    সব ধর্মের মধ্যে এই খিচখিচ চলতেই থাকে চিরকাল। শৈব-বৈষ্ণব / জাত পাত / শিয়া সুন্নি / ক্যাথলিক প্রটেস্টান্ট এটসেট্রা এটসেট্রা। এ কখনো মেটার নয়। হয়তো অন্য ধর্মের এট্যাক হলে কিছুদিন এক হয়ে কমন এনিমি র সাথে লড়া গেল। তারপর ব্যাক টু বিজনেস। বেসিক সারভাইভাল ইনস্টিকন্ট র সাথে মানুষের লোভ আর ক্ষমতার ডেডলি ককটেল। 
     
    একটা চুটকি মনে পড়ে গেলো। 
     
    একটা দেশে বেদম যুদ্ধ চলছে। হেভি মারামারি কাটাকাটি চলছে। যুদ্ধের ময়দানের পাশে একটা আপেল বাগান। কয়েকটা আপেল সেখান থেকে যুদ্ধ দেখছে আর গল্প করছে। একজন বলছে দ্যাখ দ্যাখ - মানুষগুলো কিরকম বোকা। নিজেরাই নিজেদের মেরে শেষ করছে। এইভাবে যখন মারামারি করতে করতে নিজেরা আর বাদবাকি জানোয়ার সব শেষ হয়ে যাবে , তখন আমরা , আপেলরাই দুনিয়ার রাজা হবো। কোনো কম্পিটিশন থাকবে না আর  তখন। 
     
    তো পাশের আপেলটা জিগালো - আমাদের মধ্যে কারা রাজত্ব করবে ? কাঁচারা ? না পাকারা ?
  • &/ | 151.14.***.*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৩৫525368
  • কিছু কিছু জায়গা একটু একটু ভেঙে ভেঙে গেছে, আবার মিস্ত্রী লাগানো হবে নির্ঘাৎ, সারাইয়ের জন্য। তখন মইটার একটা গতি হয়ে যাবে। :-)
    আরে আমি তো শিরোনাম দেখে অর্থনীতির স্থিতাবস্থা ভেবে এতক্ষণ ঢুকিনি লেখায় :-)
  • রঞ্জন রায় | 2401:4900:81f6:5db9:a50f:9ef0:dc1b:***:*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:১২525369
  • পুরো লেখাটাই হেব্বি লেগেছে।
    আর তাতে অমিতের চুটকি একেবারে খাপে খাপ।
  • Kishore Ghosal | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১১:২৫525374
  • বেশ লাগল এই পর্বটা।  বেশ মজার। ধর্ম নিয়ে খেয়োখেয়ি সব ধর্মেই চলছে চলবে - তার ওপর সেটা যদি  পবিত্রতম তীর্থ স্থান হয় তাহলে তো কথাই নেই - মাতব্বরি + প্রচুর দানসামগ্রীর অধিকার - এ  সব জিনিষ ছেড়ে সা আ আ আ ত শো ও ও ও বছর ধরে হাত নিসপিস করতে হয়েছে ...!  বেশ মজার।    কোনটা ধর্ম আর কোনটাই বা অধর্ম - বিচার করছেন  পুরোহিত / যাজকরা - এই না হলে ধর্মাধর্ম?  
  • Tapan Kumar SenGupta | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১২:২৩525379
  • স্থিতাবস্থা আর মইয়ের এক অসাধারণ উপস্থাপন।
    ভিডিও ফুটেজ-এ আরও রঙ্গ।
  • শিবাংশু | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৪৮525381
  • এ ব্যাপারেও বিশ্বগুরু এগিয়ে। গত হাজার খানেক বছর ধরে পুরীর মন্দিরে পণ্ডাদের নিজেদের মধ্যে বখরা নিয়ে মারপিট জনগণ দেখে আসছে ।  খ্রিস্টিয় তীর্থের পবিত্রতম কেন্দ্রের চাবি যে মুসলিমদের হাতে রাখতে হয়েছিলো,  তার সমান্তরাল উদাহরণ এদেশেও রয়েছে। তবে তার কারণটা আলাদা। বৌদ্ধধর্মের পবিত্রতম তীর্থভূমি বোধগয়ার মহাবোধি মন্দির গত সাড়ে চারশো বছর ধরে 'দখল' করে রেখেছেন শৈব মোহান্তরা। বাবা আদম থেকে শুরু করে বাবা ইব্রাহিম পর্যন্ত তাঁদের  তিন ধর্মের মধ্যে সমন্বয় আনতে পারেননি।  কিন্তু আমাদের পুরাণকাররা হাজার খানেক বছর আগে দারুণ ম্যাজিক দেখিয়ে স্বয়ং বুদ্ধকেই বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে ফতোয়া দিয়ে দিয়েছিলেন। ভাবা যায়, যে শাক্যমুনি বুদ্ধের সারা জীবনের যুদ্ধ ছিলো বিষ্ণুবাদী ব্রাহ্মণ্য দখলদারির বিরুদ্ধে, তিনিই হয়ে গেলেন বিষ্ণুর নবম অবতার। পুরীতে এসে আবার সেই বুদ্ধ জগন্নাথ  হয়ে গেলেন।  বোধগয়ার  মোহান্তরা বৌদ্ধদের মহাবোধির ধারেকাছে আসতে দিতেন না। ইংরেজরা আসার পর এডউইন আর্নল্ড ও আলেকজান্ডার কানিংহাম সাহেব জানালেন জায়গাটা আদতে বৌদ্ধদের।  ১৮৯০ সালে ভিক্ষু অনাগরিক ধম্মপাল তাঁদের কাছে দরবার করলেন। ইংরেজরা  ভেবেছিলো এটা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না। তারা একটু চেষ্টা করলো যুক্তি প্রতিষ্ঠার। মারপিট, মামলা মোকদ্দমা শুরু হলো। লাট কার্জন কিছু প্রধান ব্যক্তিদের পাঠালেন সমাধান সূত্রের খোঁজে। তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বৌদ্ধদের পক্ষে, ভগিনী নিবেদিতা হিন্দুদের পক্ষে , মধ্যস্থতা করছিলেন জগদীশচন্দ্র। সেসব লম্বা গল্প। 

    এখনও মন্দির প্রশাসকদের সাতজনের কমিটিতে তিনজন বৌদ্ধ, তিনজন অ-বৌদ্ধ (পড়ুন হিন্দু )। গয়ার জেলাশাসক তার অধ্যক্ষ। জেরুজালেম বা বোধগয়া, দুয়েরই বরাত একই  রকম। 
  • হীরেন সিংহরায় | 2a00:23c7:672e:2001:1568:db12:90ef:***:*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৪৭525383
  • পরিপ্রক্ষিতটি তুলে ধরার জন্য অশেষ  ধন্যবাদ জানাই শিবাংশু। প্রায় কিছুই জানা ছিলো না । ফাইল করব।
  • হীরেন সিংহরায় | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:০৯525388
  • অমিত 
    আপনার চুটকি অসাধারণ ! এর অর্থ বহুবিধ ! অন এ সিরিয়াস নোট - ৭৩ বি সিতে স্পারটাকাস রোমান রিপাবলিকের বিরুদ্ধে দাস বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন । তাঁরা জিতছিলেন কিন্তু শেষ অবধি দাসেরা পশ্চাদপসরণ করেন।  তাঁদের মনে সংশয় জেগেছিল - যুদ্ধ জিতলে স্পারটাকাস নিজেই প্রভু হয়ে বসবেন না তো ? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন