প্রথম দিন
জমি, জমা, সংসার ভাগ হয়। আমাদের গ্রামের উত্তর মাঠে দাঁড়িয়ে আমাদের বাগাল কীচক বলেছিল এই আলের বাঁ দিকের জমি তোমাদের, ডানদিকের জমি বড়ো বাড়ির।
দুই বাড়ির মাঝের সীমানা একটা দু ফুট উঁচু আল।
দেশ ভাগ হয়েছে আমার জন্মের আগে। কোথাও হয়তো এমনি একটা আল অথবা পাঁচির উঠেছে, নিজের চোখে নয় ভারতীয় ফিল্মস ডিভিশনের ছবিতে দেখেছি মাত্র। বীরভূম থেকে বনগাঁ বর্ডার অনেক দূরে। বনগাঁ লোকালে চড়েছি, বর্ডার দেখি নি। উনত্রিশ বছর বয়েসে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে দেশান্তরী হলাম, সে যাত্রা আকাশপথে, কাইরো আথেন্স আমস্টারডাম হয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট। বিমান বন্দরে প্রহরী দেখেছি প্রাচীর নয়। এক শনিবারে মিউনিক স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে অস্ট্রিয়ার কুফস্টাইন যাওয়া আমার প্রথম স্থল সীমান্ত অতিক্রম। ভিন দেশে যাচ্ছি বলে সঙ্গে পরিচয় পত্র রেখেছিলাম, ট্রেনে ওঠার আগে বা পরে কেউ পরিচিতি পত্র দেখতে চায় নি। কুফস্টাইনে কম লোক নামলো - চেক পোস্ট বলে কিছু নেই। স্টেশনে ইউনিফরম পরা অস্ট্রিয়ান রক্ষী আমার পাসপোর্টে ভিসা আছে কিনা দেখে নিয়ে ছেড়ে দিলো। ফেরার সময়ে প্লাটফরমে জার্মান সীমান্ত প্রহরী দেখল আমার পাসপোর্ট। ইউরোপীয় সাধারণ বাজারের দেশগুলির মাঝে চেক পোস্ট, নো ম্যানস ল্যান্ড এবং দু বার পাসপোর্ট দেখানোর পালা ছিল (বেলজিয়াম হল্যান্ড লুকসেমবুরগের ভেতরে নয়), দেওয়াল ছিল না। ১৯৭৯ সালে মারিয়েনবুরগে পশ্চিম থেকে পূর্ব জার্মানির পথে প্রথম দেখলাম দু দেশের মাঝে কাঁটা তারের বেড়া, ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়ানো সশস্ত্র প্রহরী। বার্লিন পৌঁছে তিন মানুষ উঁচু কংক্রিটের দেওয়াল দেখলাম। ক্রমশ জেনেছি পূব থেকে পশ্চিম ইউরোপের মাঝে আড়াই হাজার কিলো মিটার জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া আছে, বালটিক সাগর থেকে আদ্রিয়াটিক সাগর অবধি।
দিন বদলায়। আমার সাড়ে চার দশকের ইউরোপীয় প্রবাসে হয়তো সবচেয়ে স্মরণীয় সেই বেড়া, সেই দেওয়াল ভাঙার পালা। একদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির চেক পোস্ট অদৃশ্য হলো। ফ্রান্স থেকে বেলজিয়াম দিয়ে হল্যান্ড যাচ্ছি, ইন্দ্রনীল জিজ্ঞেস করলে আমরা এখন কোন দেশে আছি? বললাম মোটরওয়ে এক্সিটে কি লেখা আছে দেখে নাও। সরতি হলে ফ্রান্সে উইটগাংগ হলে ফ্ল্যানডারসে বা হল্যান্ডে! তারপর একদিন বার্লিন দেওয়াল, আড়াই হাজার কিলোমিটারের কাঁটাতারের বেড়া ধূলায় হয়েছে ধূলি। বলকানে যৌথ পরিবারভুক্ত মানুষেরা আলাদা হয়ে ছটি স্বতন্ত্র দেশের পতাকা উড়িয়েছে, ক্রোয়েশিয়া স্লোভেনিয়া বসনিয়ার মাঝে দেওয়াল ওঠে নি।
দেওয়াল উঠবে অন্য কোথাও।
পবিত্র ভূমিতে
ইসরায়েলে প্রথম বার। জেরুসালেমের দামাস্কাস গেটে দাঁড়িয়ে ভাবছি কিভাবে বেথলেহেম যাই। ট্যাক্সি ড্রাইভাররা ডাকাডাকি করে। অনেক ভেবেচিন্তে আরও কিছু টুরিস্টের সঙ্গে একটি মিনিবাসে উঠে পড়লাম, গাইড আছে, তারা নিয়ে যাবে আবার ফিরিয়ে আনবে তিন ঘণ্টা বাদে।
হিব্রু বেট আরবি বাইত কথার অর্থ বসত বা বাড়ি। ইসরায়েলে বহু জায়গার নামের গোড়ায় বেট শব্দটা পাবেন। বেথলেহেম অর্থ রুটির বাড়ি বা বাড়ির রুটি মানে কি বেকারি? যেখানে রুটি বানানো বিক্রি হয়? আমার পাশে দুজন বয়স্কা আমেরিকান মহিলা, হোলি ল্যান্ডে এসে একেবারে অভিভূত। খুব ঘুরছেন, হেঁটে মাসাদা কেল্লায় উঠেছেন –অবাক হলাম। ডেড সীর কাছাকাছি মাসাদা একটি পাহাড়ি দুর্গ, রাজা হেরোডের প্রাসাদ ছিল, ওপরটা কেপ টাউনের টেবল মাউনটেনের মত ফ্ল্যাট, মাটি থেকে ৪০০ মিটার উঁচু, আমি লিফটে উঠেছি। ইহুদিরা সেখান থেকে লড়েছিল রোমানদের বিরুদ্ধে ৭৩ বি সি তে। একজন মহিলা বললেন বেথলেহেমে তাঁর কেনার লিস্টের এক নম্বর আইটেম হবে – রোজারি। প্রতিদিন সকালে সেই মালা ঘুরিয়ে প্রভুর নাম করবেন আর মনে করবেন এই রোজারি বেথলেহেমের মেঞ্জার স্কোয়ারে কেনা। জেরুসালেম এখান থেকে খানিকটা উঁচুতে, পাকদণ্ডী বেয়ে বাস চলে বেথলেহেমের পথে, পট পরিবর্তন হয়, বাড়িঘর সাদা মাটা, গাড়ি বেশ পুরনো। প্রভুর জন্মস্থান লোকে লোকারণ্য। দু মাস বাদে ক্রিসমাস, কেনাকাটা তুঙ্গে। কত রকমের কাঠের সুভেনির- যিশুর মুখ, মাতা মেরির কোলে যিশু, খড়ের গাদায় শিশু, দ্বাদশ শিষ্য সমাহারে শেষ ভোজন। বিনিময়ের মাধ্যম নিউ ইসরায়েলি শেকেল বা এন আই এস*।
যিশুর জন্ম যে আস্তাবলে সেটি আসলে একটি ছোট খাটো গুহা। এই পাথুরে দেশে অনেক পরিবারে এমনি গুহার ব্যবহার হতো একটা বাড়তি ঘরের মতন। তাঁর জন্মের স্মারক গিরজে, চার্চ অফ দি নেটিভিটি গড়ে উঠেছে সেই গুহার ওপরে, তাকে আচ্ছাদন দিয়ে। বাইরে থেকে এ গিরজের আকার দুর্গের মতন, সাদা পাথরে তৈরি। কোন কারুকার্য, ফুলফলের চিত্রকলা বা ধর্ম দেবতার প্রতিকৃতি নেই তার দেওয়ালে। অনেক উঁচুতে ক্রস, সেটি না থাকলে বোঝা শক্ত যে এটা একটা গিরজে, দুনিয়ার অন্যতম প্রাচীন। যে কোন ক্যাথেড্রাল ক্লয়েস্টার চার্চে ঢুকি পেল্লায় দরোজা দিয়ে, ছোট গিরজেতেও দ্বারটি প্রশস্ত – সকলের জন্য অবারিত। চার্চ অফ দি নেটিভিটির প্রবেশ পথ অতীব সঙ্কীর্ণ, চারটে পাথরের স্ল্যাব সাজিয়ে বানানো। মাথাটি নিচু করে যেতে হয় ভেতরে – একে বলা হয় বিনম্রতার দ্বার। প্রভুর জন্মস্থান দেখতে যাবেন অবনত মস্তকে, অনেকটা আমাদের দেশের মন্দিরে গর্ভগৃহে প্রবেশের মতো। খুব ঘুপচি মতন। কয়েক পা ফেললেই বিশাল লম্বা নেভ বা হল, তার দু পাশে ক্রুসেডারদের বানানো চল্লিশটি গোলাপি মারবেলের থাম। ছাদের সঙ্গে লাগোয়া নয়, সেখানে কাঠের ফ্রেম, ভূমিকম্প হলে গোটা কাঠামো একসঙ্গে ধ্বসে যাতে না পড়ে। আরেক পূজনীয় স্থান মিল্ক গ্রোটো যেখানে মাতা মেরির এক ফোঁটা দুধ মেঝেতে পড়লে তার রঙ হয়ে যায় সাদা।
আড়াইশ বছর আগে অটোমান সুলতানরা যে স্ট্যাটাস কো বা যে যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানেই স্ট্যাচু হয়ে যাবার যে ফরমান দিয়েছিলেন, সেটি এখানেও প্রযোজ্য; তবে চার্চ অফ দি নেটিভিটিতে তিন পূজারীর অধিকার – গ্রিক অর্থোডক্স, আর্মেনিয়ান এবং ক্যাথলিক। সিরিয়ান বা কপটিকদের হাতে ম্যানেজমেন্টের কোন ভার নেই, তারা পুজো প্রার্থনা করেবন এই মাত্র। ঠিক যেখানে প্রভুর জন্ম হয়েছিল সেখানে চোদ্দ কোণাকৃতি একটি ধাতব তারকা স্থাপিত, খুব সম্ভব রুপোর (শোনা যায় একবার চুরি হয়েছিল)। বিশ্বাসে মিলয়ে বস্তু – ঠিক কিভাবে জানা গেলো তিনি সেই খানেই জন্মেছিলেন, তার ল্যাটিচুড লঙ্গিচুড নির্ভুল কিনা সে নিয়ে তর্ক বৃথা। সেই তারকার ওপরে লেখা আছে HiC DE VIRGIN MARIA JESUS CHRISTUS NATUS EST – তিনি এখানেই জন্মেছিলেন। মন্দির ওহি বনা।
তারকার ওপরে যে বেদি সেখানে পুজো চড়ানোর অধিকার কেবলমাত্র গ্রিক পুরোহিতের।
যিশুর দেহাবসানের তিনশ বছর বাদে সম্রাট কনস্তানতিনের মাতা হেলেন জেরুসালেম এসে গলগথায় যিশুর ক্রুসিফিকশনের সঠিক স্থল এবং সেই ক্রস (ট্রু ক্রস) নির্ণয় করেন, বেথলেহেমের আস্তাবলে প্রভুর জন্মস্থানের ঠিকানা স্থির করেন। মায়ের রিপোর্ট অনুযায়ী গলগথায় (৩২৫ সালে) এবং বেথলেহেমে তার জন্মস্থানে এই গিরজে (৩৩৩ সালে) বানিয়ে দিয়েছিলেন। চার্চ অফ দি নেটিভিটি ক্রিস্টিয়ানদের প্রাচীনতম ভজনালয় নয়: সিরিয়ার দুরা অয়রোপস- ২০০ খ্রিস্টাব্দ - (বর্তমানে ধ্বংস স্তূপ) সেই সম্মানের অধিকারী এবং দ্বিতীয় স্থানে মেগিদো যা সেজারিয়া থেকে নাজারেথ যাওয়ার পথে দেখেছি। মেগিদোতে (মনে করুন আরমাগেদনের মেগিদো!) প্রাচীর বিলুপ্ত, তার চিহ্ন আছে মাত্র। আজকের এ আই দিয়ে অনায়াসে তার মডেল বানিয়ে ফেলা যায়।
প্রসঙ্গত, নাজারেথের কিছু অবিশ্বাসী মানুষ যিশুকে একদিন যে টিলার ওপর থেকে তাঁকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেই লিপিং মাউনটেন হতে মেগিদো মাত্র বিশ কিলো মিটার দূরে!
প্রাচীনতম না হলেও বেথলেহেমের এই গিরজে প্রায় দু হাজার বছর যাবত নিয়মিত পূজা আচ্চার স্থান।
মেঞ্জার স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে আরেকটা কথা মনে হয়েছিল – রোমানরা ইহুদিদের জেরুসালেম থেকে বিতাড়িত করে রোমান রাজার বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহের কারণে, ধর্মের নয়। রোমান রাজত্বের কোথাও ইহুদি ধর্ম বেআইনি ঘোষিত হয় নি, ধর্ম আচরণে বাধা দেওয়া হয় নি। ইউরোপে রোমান শাসনে তাঁরা বাস করেছেন আরও অনেক জন জাতির পাশাপাশি। তাদের ওপরে সরকার কখনো উৎপাত করে নি।
রোমান গভর্নর পন্তিউস পিলাতুস (সুইজারল্যান্ডে এই নামে একটি পর্বত শিখর আছে) একদিন যিশুকে ক্রসে চড়ানোর সাজা শুনিয়েছিলেন ; নেরো থেকে দিয়োক্লিশিয়ান অবধি রোমের তাবৎ শাসক ক্রিস্টিয়ান ধর্মকে বেআইনি ঘোষণা করে এর অনুসরণকারীদের নির্যাতন করেছেন, সন্ত পলের নিধন করেছেন।
যে মানুষটি ক্রিস্টিয়ান বাইবেলের চেহারা দিলেন, যিশুর জন্মস্থান ও মৃত্যু স্থলে পূজার বেদি বানিয়ে তাঁকে স্মরণ করলেন তিনিও রোমান- সম্রাট কনস্তানতিন, তার আরও তিনশো বছর বাদে আরেক সম্রাট, জাস্তিনিয়ান এই গিরজের আদ্যোপান্ত সংস্কার করেন।
উনিশশ আটচল্লিশে প্যালেস্টাইনের তিন ভাগ করে দিয়ে ইংরেজ বীরদর্পে পশ্চাদপসরণ করে – ভাগ ঠিক সমান হয় নি, খানিকটা পেলো ইসরায়েল, খানিক প্যালেস্টাইন এবং ইস্ট জেরুসালেম সহ বাকিটা জর্ডান। তারপরে যে আরব ইসরায়েলি লড়াই হলো (ইসরায়েল যাকে বলে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ) তার শান্তিচুক্তি অনুযায়ী নতুন করে এক সীমারেখা টানা হয় – আরমিসটিস লাইন অফ ১৯৪৯। সাতষট্টির যুদ্ধে জর্ডান হারাল তার অংশ, প্যালেস্টাইন পরিণত হলো ইসরায়েলের অঙ্গরাজ্যে। রাষ্ট্রসংঘের আধ ডজন রেসোলিউশন সত্ত্বেও ইসরায়েল সাতষট্টি সালের স্ট্যাটাস কো বজায় রেখেছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক কথাটা বারবার শোনেন - সেটা ওই জর্ডান নদীর পশ্চিম কুল বলে, পূর্বে জর্ডান দেশ।
বত্রিশ বছর আগে বেথলেহেম থেকে উত্তর দিকে তাকালে চোখে পড়তো রুক্ষ পাহাড়, তার গা বেয়ে নেমে আসা রাস্তা, তার অনেক পেছনে জেরুসালেমের ওল্ড সিটি। এর মাঝে কোথাও ছিল ১৯৪৯ সালের আরমিসটিস লাইন। সেটি অনুমান করা যেতো, কোন তারের বেড়া তার নির্দেশ দিতো না; গোরু ছাগল ভেড়া গাধা মানুষ অবধি নির্দ্বিধায় সেই লাইন অতিক্রম করত, যেমন বার্লিনে এক সেক্টর থেকে অন্য সেক্টরে যাওয়া যেতো, যেমন আমি একটি আরব মিনি বাসে চড়ে দামাস্কাস গেট থেকে বেথলেহেমের মেঞ্জার স্কোয়ারে হাজির হয়েছি। পকেটে বেঢপ নীল ভারতীয় পাসপোর্ট, হোটেলের ঘরে পাসপোর্ট রাখি না বলেই। সঙ্গে সেটি আনা যে জরুরি তা কেউ বলে দেন নি। আমি কোন দেশের লোক তা জানতে কেউ উৎসুক বলে মনে হলো না। বেথলেহেমের ক্রিস্টিয়ান মানুষ যেমন চার্চ অফ দি নেটিভিটিতে মানত করতেন তেমনি ইস্টারের পরবে জেরুসালেমে যিশুর শেষ যাত্রার পথেও হেঁটেছেন বাকি দুনিয়ার তীর্থ যাত্রীদের সঙ্গে, চার্চ অফ দি হোলি সেপালকারে গিয়ে প্রার্থনা করেছেন।
সেটা বদলে গেলো বিশ বছর আগে।
পু:
*ব্যাঙ্কে কাজ করেছি সারা জীবন। যখনই কোন দেশের পতাকা বা রাষ্ট্রভূমি বদলায় তখন দেনা পাওনা মেটানোর মাধ্যম, কারেন্সির কি পরিবর্তন হয় এ ব্যাপারে কৌতূহল জাগে। তাই ইসরায়েলের বিনিময় মাধ্যম নিয়ে দু চার কথা এসেই যায়। আগাম ক্ষমা চেয়ে নিয়ে তার ব্যাখ্যান করি –
পাঁচশ বছরের অটোমান রাজত্বে অন্য সুবের মতন প্যালেস্টাইনেও চালু ছিল তুর্কী লিরা শব্দটা এসেছে ল্যাটিন লিব্রা (৩৩০ গ্রাম খাঁটি রুপো) থেকে – তার অপভ্রংশ শব্দগুলো এখনও চালু আছে অটোমানদের পুরনো রাজত্বে – আলবানিয়াতে লেক, বুলগারিয়ার লেভ, রোমানিয়ার লেউ। ইতালিয়ান লিরা এসেছে সেই লিব্রা থেকে।
অটোমান শাসন শেষে ১৯১৮ সালে ইংরেজ সামরিক প্রশাসন দেশটা চালায় বছর তিনেক, তখন ব্যবহার হয়েছে ইজিপশিয়ান পাউনড (ব্রিটিশ পাউনডের সঙ্গে বাঁধা), তার সঙ্গে ব্রিটিশ স্বর্ণ মুদ্রা। সিভিল অ্যাডমিনিসট্রেশন চাইলেন নিজস্ব মুদ্রা - ব্রিটিশ সরকার তখন এক কারেন্সি বোর্ড স্থাপন করে প্যালেস্টাইন পাউনড বাজারে ছাড়লেন, সে বেজায় মূল্যবান - ব্রিটিশ পাউনডের সঙ্গে তার বিনিময় মূল্য ১:১! নোট ছাপা হলো তিন ভাষায় – ইংরেজি, আরবি ও হিব্রুতে, যদিও সে সময়ে প্যালেস্টাইনের দেড় লক্ষ বা ১৪ শতাংশ মানুষ ইহুদি। জাইওনিজমের ডাকে ইউরোপীয় ইহুদি তেমন সাড়া দিচ্ছিলেন না, নাৎসিদের ক্ষমতায় আসতে কয়েক বছর দেরি আছে। এই নোটে একটি বিচিত্র তথ্য মেলে: হিব্রুতে প্যালেস্টাইন শব্দের পরে দুটি হিব্রু অক্ষর যোগ করা হয়েছে – বর্ণমালার প্রথম অক্ষর আলেফ, দশম অক্ষর ইয়ুদ তার ভেতরে নিহিত যে শব্দ সেটি হলো ‘এরেতস ইসরায়েল’ বা ল্যান্ড অফ ইসরায়েল। অর্থাৎ নোট ছাপলেন ব্রিটিশ সরকার, দেশটার নাম প্যালেস্টাইন, ইংরেজি আরবিতে সেই নাম কিন্তু হিব্রুতে সেখানে যোগ করে দেয়া হলো এরেতস ইসরায়েল! ইংরেজ বা আরব কেউ যে লক্ষ করেন নি তা মনে করার কোন কারণ নেই, তবে তাঁরা বাধাও দেন নি (সূত্র -জাওয়াহিরিয়ে, স্টোরি টেলারস অফ ইসরায়েল) ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ইসরায়েল রাষ্ট্রে চালু হলো ইসরায়েলি লিরা, পরে তার নতুন নাম দেওয়া হলো, বাইবেলে উল্লিখিত মুদ্রা শেকেল। ১৯৮৫ সাল থেকে নিউ ইসরায়েলি শেকেল বা এন আই এস।
ইংরেজ বিদায় নিলে গাজা স্ট্রিপ যায় মিশরের দখলে। সেখানে চলতো ইজিপশিয়ান পাউনড। সাতষট্টির যুদ্ধে জিতে ইসরায়েল গাজা দখল করে।
বাকিটা ইতিহাস। রেস্ট ইজ হিস্ট্রি।