দু দশক বাদে
ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অবিভাজ্য। আমাদের মধ্যে একজনও যদি শিকলে বাঁধা থাকে, বাকিরাও স্বাধীন নই।
– জন ফিটজেরালড কেনেডি, শ্যেনেবেরগ রাটহাউস, বার্লিন, ২৬শে জুন ১৯৬৩ –‘ইখ বিন আইন বেরলিনার।’
এখনও দামাস্কাস গেট থেকে বাস ছাড়ে, সামনে হিব্রু আরবি ইংরেজিতে লেখা বেথলেহেম কিন্তু সে বাস থামে যেখানে তার নাম চেক পয়েন্ট ৩০০। সামনে উঁচু কংক্রিটের দেওয়াল তার ওপরে কাঁটার মালা সাজানো। বাস থেকে নেমে আপন পরিচয় পত্র পকেটে নিয়ে একটি প্রায়ান্ধকার কাউনটারে গিয়ে জানাতে হয় কোন অভিসন্ধিতে আমি এখানে হাজির হয়েছি। ভাবলেশহীন মুখে অফিসার এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি করেন। এবার একটা লম্বা খাঁচার মধ্যে দিয়ে হাঁটা, যেন ফড়ে পুকুরে টকি শো হাউসের সেই পঁয়ষট্টি পয়সার লাইন! তবে জনশূন্য। সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে ইসরায়েলি দেওয়াল পেরিয়ে অন্যদিকে বেরুতে মিনিট খানেক, সেখানে হলুদ ট্যাক্সির ভিড়, সবাই আপনাকে চার্চ অফ দি নেটিভিটি নিয়ে যেতে চায়। হেঁটেও যেতে পারেন, দু কিলো মিটারের পথ।
যে প্রাচীর পেরিয়ে এলাম তার উচ্চতা নয় মিটার, নির্মাণের কাজ শেষ হলে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক জুড়ে তার দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে সাতশ কিলো মিটার (বার্লিন ওয়াল দেড়শ কিলো মিটার, উচ্চতা গড়ে চার মিটার)। বাস থেকে নেমে এই দেওয়ালের ভেতরের দিয়ে আসতে আমার এক মিনিটের মতন সময় লাগলো। একটু থেমে ভাবি, আমি বিদেশি, ব্রিটিশ পাসপোর্টধারি আমি যে পথে এলাম সেটা কি সবার জন্যে উন্মুক্ত? আর কে বা কারা এই চেক পয়েন্ট পার হতে পারে? আইনে কি বলে?
আমার ট্যাক্সিওলা ইউসুফ জানালে বেথলেহেমের জনসংখ্যা পঁচিশ হাজার, তার বিশ শতাংশ ক্রিস্টিয়ান। তাঁরা ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বাসিন্দা, কিন্তু কেউ এই চেক পয়েন্ট পেরিয়ে জেরুসালেম যেতে পারেন না, যদি না তাঁর ইস্ট জেরুসালেমে বসবাসের প্রমাণ থাকে। প্যালেস্টাইন অথরিটি ঘোষিত হবার পরে ইজরায়েলি নাগরিকও আসতে পারেন না, বিশেষ অনুমতি বা পারমিট ছাড়া। ২০০২ সালে দেওয়ালের ভিত খোঁড়ার সময়ে জানানো হয়েছিল সেটি উঠবে ১৯৪৯ সালের আর্মিসটিস লাইন বরাবর কিন্তু আদতে অনেক জায়গায় সেই লাইন ছাড়িয়ে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের কয়েক কিলো মিটার ভেতরে ঢুকে এসেছে ইসরায়েল সরকার বলেছেন উঁচু নিচু পাহাড়ি জায়গায় দেওয়াল বানানো শক্ত তাই একটু সমতল এলাকায় সরে আসতে হয়েছে তাই এই অনিচ্ছাকৃত অধিকরণ। একটু পিছিয়ে ইসরায়েলি জমিতে সেটা করা যেতো না কি? এ প্রশ্ন কেউ করেন না। তবে ওই বাড়তি জায়গায় সেটলাররা বাড়ি ঘর বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা কখনো আনসেটলড হবেন বলে আমার ড্রাইভার ইউসুফ মনে করেন না।
মেঞ্জার স্কোয়ারের পরে শেফার্ডস ইন দি ফিল্ড দেখতে গেলাম।
বেথলেহেমের অনতিদূরে, বেট সাহুরে, কয়েকটি রাখাল রাতের বেলায় মাঠের গোরু ছাগলের ওপরে নজর রাখছিল। অকস্মাৎ এক দেবদূত আবির্ভূত হলেন, বললেন ‘ভয় নেই, শোনো। ভাল খবর এনেছি। তোমাদের এই বেথলেহেমে, ডেভিডের নগরে, এক মুক্তিদাতা জন্ম নিয়েছেন। তাঁকে গিয়ে দেখো সেখানে এক আস্তাবলের ভেতরে, খড়ের গাদায় তাঁর শয্যা’। এ কথা শুনে রাখাল বালকেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলে, ‘চলো যাই বেথলেহেম। দেখি ঈশ্বর আমাদের জন্যে কি এনেছেন (লুক ২:৮-১৫)’।
সেই মাঠের ওপরে গ্রিক অর্থোডক্স এবং ফ্রান্সিকান ফাদারদের দুটি স্বতন্ত্র চার্চ আছে। সেখানে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে ভজনার বেদি, জল প্রণালী, রুটি বানানোর ব্যবস্থা, অলিভ ওয়েল প্রেস করার সরঞ্জাম। মাটির গভীরে গুহার ভেতর প্রভুর বন্দনার স্থান। বাইরে ঝলমল করছে রোদ্দুর- দু হাজার বছরের পুরনো গোরু ছাগলের এই চারণ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে চোখ তুলে তাকাতেই মনে হলো অনতিদূরে কে যেন টাঙ্গিয়ে রেখেছে একটা প্রকাণ্ড অখণ্ড ঝকঝকে সাদা পর্দা; যেমন ফোটোগ্রাফাররা আলোর মাত্রা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে থাকেন। মরুভূমিতে মরীচিকা দেখা দেয়, দূরে জলের রেখা, দেখে তৃষ্ণার্ত পথিক সে দিকে ধাবিত হন। ঠিক দেখছি? ধন্দে পড়ে ইউসুফকে জিজ্ঞেস করলাম ইসরায়েলি সেপারেশন ওয়াল তো পার হয়ে এসেছি তাহলে ওই টানা সাদা দেওয়ালটা কি? ভুল দেখছি? ইউসুফ হেসে বললেন সার, ওগুলো ইসরায়েলি সেটলারদের বাড়ি। পাহাড়ের ঢালে গায়ে গায়ে অজস্র বাড়ি উঠেছে বলে এই চড়া সূর্যের আলোয় এখান থেকে আপনার মনে হচ্ছে ওটা একটা টানা সাদা পর্দা! এক সময় সবুজ পাহাড় ছিল, আমরা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এই বিভাজনের কঠোর সাক্ষ্য রেচেলের সমাধি (আরবিতে রাহেল) যেটি ইহুদি, ক্রিস্টিয়ান এবং মুসলিমের পুণ্য তীর্থ। রেচেল তিন পেত্রিয়ারকের (আব্রাহাম আইসাক জেকব, ইসলামে ইব্রাহিম, ইশাক, ইয়াকুব) অন্যতম জেকবের দ্বিতীয় পত্নী এবং জোসেফ তথা বেঞ্জামিনের মাতা; সকল আব্রাহামিক ধর্ম এই তিন পেত্রিয়ারক বা কুলপতিকে সমান সম্মান করে (আব্রাহাম এবং আইসাকের পত্নী সারা ও রেবেকা হেবরনে সমাহিতা)। দেড় হাজার বছর যাবত প্যালেস্টাইন ও জেরুসালেমের সকল মুসলিম শাসক তিন ধর্মের মানুষকে রেচেলের সমাধিতে প্রার্থনার অনুমোদন দিয়েছেন, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের দখলে এলে তৎকালীন সরকার মুসলিমদের প্রার্থনার জন্য আলাদা মিহরাব বানিয়ে দেন। আজকে রেচেলের সমাধি ইসরায়েলি সুরক্ষা দেওয়ালের ভেতরে আবদ্ধ।
বার্লিন দেওয়াল কেবলমাত্র কোন কোন পাড়াকে দুভাগে ভাগ করে নি, পড়শিকে আলাদা করে নি, কোথাও কোথাও এক বাড়ির রান্নাঘরকে শোবার ঘর থেকে আলাদা করে দিয়েছিল। কোন দেশে খাটটা পড়বে সে সিদ্ধান্ত ছিল কমিউনিস্ট সরকারের হাতে, গেরস্তের নয়।
বেথলেহেমের নাগরিক আজ যে শুধু জেরুসালেম যেতে পারেন না তাই নয়, তাঁদের পক্ষে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেরই শহর রামাল্লা (যেখানে প্যালেস্টিনিয়ান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অফিস) বা হেবরন যেতে হয় অনেক প্রহরীর শ্যেন চক্ষু পেরিয়ে। তাঁরা যে বড়ো শহরে কেনাকাটা করতেন, সেই ইস্ট জেরুসালেমের সাধারণ আরব দোকানদারদের ব্যবসা লাটে উঠেছে। ইউসুফের কথা শুধু নয়, এ আমি লিবারাল ইসরায়েলি কাগজ হায়ারেতসেও পড়েছি।
১৯৯১ সালে যখন ইসরায়েল এসেছিলাম তখন গোটা ইউরোপের সীমান্তের কাঁটাতার, দেওয়ালের কংক্রিটের স্ল্যাব নির্বাসিত হয়েছে কোনো গুদাম ঘরে।তোমার খোলা হাওয়া, লাগিয়ে পালে! সেই হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকায়, নেলসন ম্যানডেলা মুক্ত পৃথিবীর বাতাসে নিশ্বাস নিচ্ছেন।
তার দু দশক বাদে শান্তির দূত প্রভু যিশুর আপন জন্মভূমিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দেওয়াল, ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়েছে বন্দুকধারী প্রহরী? মানুষে মানুষে আবার সেই বিভেদ? বৈষম্য?
কেন?
ইসরায়েলের বক্তব্য - যখন জনগণের যাতায়াতে কোন বাধা ছিল না, তখন আকছার সুইসাইড বমার জেরুসালেমের বাসে উঠে ইসরায়েলি নাগরিকের প্রাণহানি করেছে, সন্ত্রাসবাদে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। এমন ঘটনা আটকানোর জন্যেই এই দেওয়াল তোলার আয়োজন। ইসরায়েল এর নাম দিয়েছে সুরক্ষা দেওয়াল। প্যালেস্টিনিয়ানরা বলে বিভাজন বা আপারথাইদ দেওয়াল।
আরেকটা কথা আগাম জানিয়ে রাখা ভালো – আপনার আমার সব ভ্রমণের গাইড যে গুগল ম্যাপ, স্ট্রিট ভিউ সেখানে আমাদের পাইকপাড়া বাড়ি, আমাদের পদুমা গ্রাম দেখতে পাই। ইসরায়েলের কোথাও কোন চেক পোস্ট আছে কিনা বা থাকলে কোথায়, সে বিষয়ে গুগল নিশ্চুপ। এ নিয়ে কোন কথাও হয় না।
ইহা কি কোন ভ্রান্তি অথবা ইচ্ছাকৃত?
১৯৬৭ সালে যুদ্ধ জয়ের পরে গোটা প্যালেস্টাইন ইসরায়েলের অধিকারে। কঠিন ব্যঙ্গের মতো শোনাবে তবু দেশটা ঘুরে মনে হয়েছে প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটির কোন অথরিটি নেই যা আছে সেটা ওই নামেই। রাষ্ট্রসঙ্ঘের জেনেরাল কাউন্সিলের কড়ি সে কড়ি নিন্দা এবং অনেক লিখিত, অনুমোদিত রেসোলিউশন সত্ত্বেও ইসরায়েল প্রায় কোন জমি থেকে পিছিয়ে আসে নি (গাজায় কিছু সেটলারকে ফিরিয়ে আনা বাদে)। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের অধিকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলিদের পাকা বাড়ি ঘর বানানোর ব্যাপারটা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের পরিপন্থী, রাষ্ট্রসংঘের নির্দেশেরও। আমার বেশ মনে আছে ১৯৯১ সালে এমনকি আমেরিকা তার বিরোধিতা করেছিল। এই বিষয়ে কোন আলোচনা লন্ডন নিউ ইয়র্ক ওয়াশিংটন বা ব্রাসেলসে আজ বন্ধ হয়ে গেছে।
প্যালেস্টাইনের ধূসর রুক্ষ মাটিতে ধান গমের শীষে বাতাসের ঢেউ খেলে যায় না। এঁদের সবচেয়ে দামি ফসলের নাম অলিভ। এই দেওয়ালের আঁকা বাঁকা পথযাত্রার ফলে নষ্ট হয়েছে মূল্যবান বহু একর চাষ জমি। হাজার দশেক মানুষ বাকি জগত থেকে শুধু নয়, তাঁদের অলিভ ক্ষেত থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আপন চাষের জমিতে গেট দিয়ে ঢুকতে হয় ইসরায়েলি প্রহরীকে প্রবেশের পারমিট দেখিয়ে।; সেটিও পাওয়া যায় অত্যন্ত গিনে চুনে বছরের কয়েক দিনের জন্যে। অলিভ গাছের নিয়মিত দেখ ভাল অসম্ভব-ফসলের ক্ষতি। যেহেতু এই দেওয়াল তাঁদের ঘিরে ফেলেছে, আপন বাড়িতে বাস করার জন্য তাঁদের ইসরায়েলি রেসিডেনস পারমিট প্রয়োজন যা দু বছরের জন্য ভ্যালিড। তারপর?
আজকের অবরুদ্ধ বেথলেহেমে কথা বলে গ্রাফিতি – সেপারেশন দেওয়াল থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্র দেখবেন মানুষের আর্তির প্রকাশ। আমরা যারা পূর্ব ইউরোপে শ্রমিক কৃষকের দেশের, বার্লিন শহরের দেওয়াল দেখে বড়ো হয়েছি তারা সবাই এই আবেগের সঙ্গে পরিচিত – ওয়াচ টাওয়ার, কংক্রিটের দেওয়াল, কাঁটাতার আর সেই দেওয়ালের গায়ে গ্রাফিতি। ইংল্যান্ডের ব্রিসটল শহরের এক অনামা মানুষ ব্যাঙ্কসি ইউরোপের নানান দেশে গ্রাফিতিকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়, প্রতিবাদকে দিয়েছেন নীরব ভাষা। শুধু দেয়ালে নয়, বিভাজিত দেশের যন্ত্রণাকে বাস্তবের চেহারা দিয়ে ব্যাঙ্কসি একটি হোটেল বানিয়েছেন ইসরায়েলি দেওয়ালের গায়ে, তার নাম ‘ওয়ালড অফ হোটেল’ (Walled off Hotel)। সেখানে রাত্রিবাস করাটা আবশ্যিক নয়, টুরিস্টরা সেখানে গিয়ে ব্যাঙ্কসির আর্ট কফি খেতে খেতে জানলার বাইরে দেওয়ালের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন
বেথলেহেমের পথে অনেক মানুষ, এ শহর বেঁচে আছে টুরিস্টের কল্যাণে. দু দশক আগে দেখে দেখেছি চার্চ অফ দি নেটিভিটি, এবার যোগ হলো শেফার্ডস ফিল্ড, সলোমনের পুল আর এক দেওয়াল এবং দেওয়াল লিখন।
আমি কোন ভু রাজনীতিক নই, এই পৃথিবীকে দেখে গেলাম এক কৌতূহলী শিশুর দৃষ্টিতে। ইউরোপে ভেঙ্গে পড়লো দেওয়াল, গড়ে উঠলো এই পবিত্র ভূমিতে। শুধু বেথলেহেম নয় ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক জুড়ে হেবরণ শহরে আজ বাইশটা চেক পোস্ট, গুগল ম্যাপে একটাও দেখতে পাবেন না।
আমরা কি আবার অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছি? ইতিহাস শুধু অন্ধকার নয়, আলোর নিশানাও তো পেয়েছি আমরা।
দুই শতাব্দী আগে এক তরুণ ফরাসি জেনেরাল তাঁর বাহিনী নিয়ে ভেনিস জয় করে এগারশ বছরের পুরনো ভেনিস রিপাবলিকের উচ্ছেদ করলেন - ১২ই মে, ১৭৯৭।
শহরে ঢুকে বিজয়ী জেনেরাল দেখেন একটা এলাকা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। জানতে চাইলেন, এটা কি? এর পিছনে কি আছে? তাঁকে বলা হলো ‘ঘেটো*। এখানে শহরের দশ হাজার ইহুদি বাস করে। ভেনিসের নাগরিকদের পাশাপাশি তাদের বাস করা মানা’। তিনি বললেন ‘তারা ভেনিসে বাস করে কিন্তু নাগরিক নয়? কামান দিয়ে উড়িয়ে দাও এই দেওয়াল, এখুনি’। দু মাসের মধ্যে ইহুদিদের একঘরে বা আলাদা করার রীতি বর্জিত হলো চিরতরে। ১৭৯১ সালের ফরাসি সংবিধানে ইহুদিদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেওয়া হয়েছিল, ইউরোপে সেই প্রথম।
সেদিন ভেনিসকে ফরাসি বিপ্লবের মন্ত্র, লিবারতে, এগালিতে, ফ্রাতারনিতের পাঠ পড়ালেন আঠাশ বছরের যুবক নেপোলিওন।
ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরোপে যখন নেমে এলো শ্মশানের শান্তি, পশ্চিম জার্মানির নতুন সংবিধান শুরু হয়েছে এই ক’টি শব্দ দিয়ে:
মানুষের মর্যাদা অলঙ্ঘনীয় (ডি উরদে ডেস মেনশেন ইস্ট ঊনটাসটবার)।
জন কেনেডির চব্বিশ বছর বাদে আরেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বার্লিন ওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন,‘আপনি যদি পূর্ব ইউরোপের উন্নয়ন চান, যদি উন্মুক্ত দিন দেখতে চান, এখানে আসুন, খুলে দিন এই দ্বার, ভেঙ্গে দিন এই দেওয়াল! টিয়ার ডাঊন দিস ওয়াল মিস্টার গরবাচভ’ (রোনালড রেগান, ব্রানডেনবুরগ গেট, বার্লিন, ১২ জুন, ১৯৮৭)।
আড়াই বছর বাদে এক সন্ধ্যায় ভেঙ্গে পড়ে বার্লিন ওয়াল, ৯ নভেম্বর, ১৯৮৯; এপার ওপারের জনস্রোত মিলে মিশে এক হয়ে যায়।
তাহলে এখানেও কেউ কি কারো কাঁধ ছুঁয়ে বলবে, দেখিস, একদিন আমরাও **….
পু:
ভেনিসের সেই ঘেটো অঞ্চলের নতুন নাম দেওয়া হয় – একতার এলাকা (কন্ত্রাদা দেলউনিয়নে)। সন্ত মার্ক স্কোয়ার, রিয়ালটো ব্রিজ, দীর্ঘশ্বাসের সেতু দেখা ও গনডোলায় চড়ে ‘ও সোলে মিও’ শোনার পরে নেপোলিয়নের সেই মুক্তির আহ্বানের সম্মানে একবার যাবেন কানারেজিও সেস্তিয়েরে। দেখবেন দুটি ছোটো সেতু - তাদের নাম পুরনো ঘেটো ও নতুন ঘেটো। ইহুদি ঘেটো আজ নেই, সেদিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় - আর কখনো নয়, নেভার এগেন, নি উইডার।
**বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয় নি কিছুই
- কেউ কথা রাখে নি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়