

ক্যাথলিক বনাম প্রটেস্টাণ্টের তিরিশ বছরের ধর্ম যুদ্ধ শেষে ওয়েস্টফেলিয়ার শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো ১৬৪৮ সালে। রণক্ষেত্রে, দুর্ভিক্ষে, মহামারিতে প্রাণ হারালেন ষাট মতান্তরে সত্তর লক্ষ মানুষ, জনসংখ্যার বিশ শতাংশ, শুধু ধর্মের নামে।* ইউরোপের জার্মান ভাষাভাষী জনসংখ্যা অর্ধেক হলো। বুভুক্ষু আর্ত মানুষ ইউরোপ ছেড়ে নিরাপদ আবাসের সন্ধানে বেরুলেন; কিছু গেলেন পশ্চিমে, নিউ ইয়র্কের এলিস আইল্যান্ডে, যেখানকার ইমিগ্রেশন নাম জিজ্ঞেস করে, ধর্ম নয়। ব্রিটেন পর্তুগাল ফ্রান্সের সক্ষম ব্যবসায়ীরা জাহাজ ভাসালেন গল্পের, রূপকথার সোনার দেশ ভারতের উদ্দেশ্যে, ডাচ গেলেন ভারত ছাড়িয়ে আরেকটু পূবে, সুমাত্রা জাভায় মশলা দ্বীপের খোঁজে। আফ্রিকার উপকূল ধরে ছ মাসের এই দীর্ঘ যাত্রায় বিরতি প্রয়োজন, শুধু হাত পা ছড়িয়ে নেওয়া নয়, পানীয় জলের ট্যাঙ্ক, সবজির ভাঁড়ার ভরানোর জন্যেও। সে বাণিজ্য বহর থামত কেপ টাউনে। জায়গাটা ভালো, বিদেশি দেখলেই বিষাক্ত তীর চালায় না স্থানীয় বাসিন্দা। সেই বন্দরে তিনটে জাহাজ নিয়ে একদিন হাজির হলেন হল্যান্ডের ইয়ান ফান রিবেক সঙ্গে আশিজন পুরুষ, আট জন নারী। তিনি বললেন এখানেই বাঁধি নোঙর। মশলার খোঁজ মাথায় থাক। ডাচ রিফরমড চার্চে একদিন সবার সঙ্গে নতজানু হয়ে প্রতিজ্ঞা নিলেন হল্যান্ডে তাঁরা কোনদিন ফিরবেন না, এই তাঁদের দেশ, নতুন গিরজে। উটরেখট আমস্টারডামের ডাচ ভাষার সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করলেন - একটি নতুন ভাষার জন্ম হলো, তার নাম আফ্রিকানস, নিজেদের নতুন পরিচয় দিলেন – তাঁরা আফ্রিকানার।
দেশটা কোন শূন্যের উদ্যান নয়, সেখানে বাস করেন খোইখোই সহ নানা উপজাতি। আফ্রিকানার এসে সংসার পাতলেন, খামার গড়লেন নিজের বিষয় আশয় গুছিয়ে নিলেন – জমি নিলেন বিনামূল্যে, রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখা হল নতুন ভাষায়। বন্দুকের সামনে ট্যাঁফোঁ করার হিম্মত কার? একদিন দুষ্টবুদ্ধি ইংরেজ হাজির হলো, সুবোধ প্রতিবেশী নয়, সম্পত্তির মালিকানার দাবি নিয়ে। ডাচরা বুঝলেন এখানকার এখানে অন্ন উঠিল। পুত্র কন্যা হাঁড়ি বাসন বলদের গাড়িতে তুলে একহাতে বাইবেল অন্যহাতে বন্দুক নিয়ে জি পি এসের সাহায্য ছাড়াই চললেন পূবের নিশানায়। পথে পড়ল বিশাল নদী, তার জলের রঙ ফ্যাকাশে, নাম দিলেন ভাল। সেই নদী পেরিয়ে স্থায়ী আস্তানা গাড়লেন যে প্রদেশে তার নাম হলো ট্রান্সভাল, ভাল পেরিয়ে। এবার জবর দখলের লড়াই, হাজার বছর যে সব মানুষ প্রথমে ফল কুড়িয়ে, পরে চাষ করে খেয়েছে, আপন কুঁড়েতে বাস করেছে, মাঝে মধ্যে ডাকাত পিটিয়ে গৃহ রক্ষা করেছে, তাদের জমি জিরেত হাতালেন এই শ্বেত ইউরোপীয় ডাকাত। এদের হাতে অন্য রকমের অস্ত্র। পরবর্তী ঘটনাবলী সবার জানা, ইংরেজ এখানেও উঁকি দিলো। লড়াইয়ে হেরে আফ্রিকানার তাদের বশ্যতা স্বীকার করলেন। ১৯১০ সালে দুটি আফ্রিকানার প্রদেশ ট্রান্সভাল, অরেঞ্জ ফ্রি ষ্টেট; দুটি ব্রিটিশ কেপ কলোনি, নাটাল মিলে গড়া হলো ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা, পরে সাউথ আফ্রিকা। একদিন তার হাল ধরলেন আফ্রিকানার।
কালো মানুষকে বন্দুকের ডগায় উচ্ছেদ করে আফ্রিকানার হাজার হাজার একর জমির দখল নিয়েছিলেন; তাঁরা একই সঙ্গে জমিদার, বিচারক, রাজশক্তি, আইন প্রণেতা; পুলিস সৈন্য প্রশাসন তাঁদের। কিন্তু গুনতিতে তাঁরা দেশের জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ। বাকি কালো মানুষগুলো লাগত চাষের কাজে, জোহানেসবুরগ, কিম্বারলির সোনা হীরের খাদানে। এই উদ্বাস্তুদের পাঠানো হলো ক্যাম্পে, জমিদারির পাশাপাশি অথবা খনির বসতিতে। শহরেও কালো মানুষ লাগে, বাড়ির বাসন মাজা, মালির কাজে – তারা থাকবে কোথায়? সাদা মানুষের পাশে নয়, এরা কাজ করে আপন বসতিতে ফিরে যাবে কিন্তু থাকবে তফাতে, ব্যবহার করবে আলাদা বাস, টয়লেট, ট্রেনের কামরা, সমুদ্রের বিচ।
তাদের দেখা যাবে, তারা কাজে লাগবে কিন্তু তারা সাদা মানুষদের থেকে দূরে থাকবে। এই আইন তৈরির কথা যিনি প্রথম ভাবেন তিনি ইংরেজ, অক্সফোর্ড শিক্ষিত জন সিসিল রোডস। তিনি বলেন কালো মানুষদের কাজে লাগাতে হবে, নিয়ন্ত্রিত করতে হবে তাদের গতিবিধি, রাখতে হবে দূরত্বে।
নির্বাচন হতো দক্ষিণ আফ্রিকায়। সাদা মানুষেরা সাদা মানুষদের ভোট দিয়ে গণতন্ত্রের যে ধ্বজা উড়িয়েছেন তার নৈতিকতা সম্বন্ধে পশ্চিমি গণতান্ত্রিক দেশগুলির কোন সংশয় ছিল না। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার স্কোয়ারে দক্ষিণ আফ্রিকান ইউনাইটেড পার্টির নেতা ইয়ান স্মাতসের স্ট্যাচু আছে, তিনি আফ্রিকার কালো মানুষদের ওপরে পাস ল চালু করেন; কাগজ না দেখালে কোথাও যাওয়া যাবে না। প্রায় দেড় দশক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, ইংরেজের প্রিয়।
কালো মানুষদের ওপরে বাধাবন্ধ, নিত্যি দিন খোঁচাখুঁচি কিন্তু সেটা আইনে লিপিবদ্ধ করা হয় নি।
১৯৪৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এলো ন্যাশনাল পার্টি। প্রায় সর্ব সম্মতিক্রমে তাদের নেতা ডানিয়েল মালান এক নতুন আইন জারি করলেন – আপারথাইড (শব্দটা ইংরেজ আমাদের শিখিয়েছে, প্রকৃত উচ্চারণ আপার্টহাইড, ডাচ ভাষার মতই আফ্রিকানসে শব্দ জুড়ে সমাস হয়, অক্ষর জুড়ে সন্ধি নয়!)
এবার ভেদ ভাব, গন বিভাজন আইন সম্মত। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের উন্নয়ন হবে, তবে ভিন্ন গতিতে।
মে ১৯৫০
কে কোথায় বাস করবে সেই গ্রুপ এরিয়া নির্দেশিত হলো গায়ের রঙ অনুযায়ী, সাদা (ইউরোপীয়), কালো, মিশ্রিত বর্ণ, ভারতীয়।
মিশ্র বিবাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
চলাফেরায় কড়াকড়ি : আপন গ্রুপ এরিয়ার বাইরে বেরুতে গেলে অশ্বেতকায় সকল মানুষ পথে বেরুবেন পরিচয় পত্র নিয়ে – পাসপোর্ট নয়, আইডেনটিটি কার্ড নয়, এটির নাম রেফারেন্স বুক। এখানে লেখা থাকবে নাম, পাতা, কাজের ঠিকানা বাড়ির ঠিকানা, পরিবারে কতজন মানুষ, কোন কেস বা কনভিকশন আছে কিনা,, মানে আপনার আধার কার্ড প্যান কার্ড এবং পুলিশি রিপোর্ট একসঙ্গে।
শিক্ষা ব্যবস্থা আলাদা, কালোরা ততটুকুই শিখবে যাতে চাষের, খনির কাজ চলে।
আইন ভাঙলে কঠোর শাস্তি।
জমি থেকে উৎখাত হওয়া মানুষের তাঁবু উঠলো দেশজুড়ে।
তফাত যাও, তফাতে থাকো
পুলিশি অত্যাচার, শারপেভিলে ছাত্রদের ওপরে জোহানেসবুরগের কাছে সোয়েতোতে প্রতিবাদী জনতার ওপরে গুলি বর্ষণ- অসংখ্য মৃত্যু।
সাউথ আফ্রিকা স্পোর্টিং নেশন, তারা রাগবি, ক্রিকেট পাগল, কিন্তু সে দলে কালো মানুষের স্থান নেই। গণতান্ত্রিক মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ দেশ ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড নিয়মিত টেস্ট ম্যাচ খেলে তাদের বিরুদ্ধে, কোন প্রশ্ন তোলে না।
প্রতিবাদে গড়ে উঠেছে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস, তাঁরা বলেন এ দেশ সাদা, কালো সবার, এক মানুষ এক ভোট। তারা দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসবাদী- তাদের বেআইনি ঘোষণা করলেন দক্ষিণ আফ্রিকান সরকার।
যিনি গোপনে তাদের নেতৃত্ব দিলেন, সেই সন্ত্রাসবাদী নেলসন রহিলালা ম্যানডেলা জেলে নিক্ষিপ্ত হলেন।
পশ্চিমের সরকারগুলি সম্পূর্ণ উদাসীন কিন্তু পৃথিবীর পথে পথে আওয়াজ উঠল -ফ্রি ম্যানডেলা। বন্ধুরা আর সাহারা দিতে পারলেন না।
অনেক রক্তের বিনিময়ে একদিন অন্ধকার কাটলো।
দক্ষিণ আফ্রিকার আপারথাইড স্থায়ী হয়েছিল ৪২ বছর।
সবাই এখন একত্রে রাগবি ক্রিকেট খেলে, তাদের সদ্য রাগবি ওয়ার্ল্ড কাপ বিজয়ী অধিনায়কের নাম সিয়া কোলিসি (২০১৯ সালে তাঁর বিজয় রথের পাশে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য হয়েছে), ক্রিকেট অধিনায়কের নাম টেম্বা বাভুমা। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় পাঁচটা ভাষায়; পৃথিবীর একমাত্র উদাহরণ।
বর্ণের কারণে ওরা আর ওধারে থাকে না।
চতুর্থ শতাব্দীতে রোম ক্রিস্টিয়ানিটিকে সরকারি ধর্ম মেনে নেওয়ার পরে বাকি ইউরোপের আরও হাজার বছর লেগে গেছে রবিবারে চার্চে ভজনার অভ্যাস আয়ত্ত করতে। ইতিমধ্যে প্যালেস্টাইন থেকে উদ্বাস্তু ইহুদি হাজির হয়েছেন অ্যাসাইলামের আশায়।অর্ধেক ইউরোপ ততদিনে জেনে গেছে যিশুকে এঁদের পূর্বপুরুষ ক্রসে চড়িয়েছেন (ইহুদি রসিকতা বইয়ে বিস্তারিত লিখেছি)। ইহুদিকে ক্রিস্টিয়ান ইউরোপ সর্বদা দূর ছাই করেছে, সামাজিক ভাবে এবং আইনত। তারা শহর গ্রামের এক প্রান্তে বাস করে, সরকারি চাকরির দ্বার রুদ্ধ, পঠন পাঠনেও অনেক কড়াকড়ি, নানা দেশ তাদের দূর করে দেয়। এ ব্যাপারে পথিকৃৎ ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড; এখানে ওখানে ধাক্কা খেতে খেতে ইহুদি পৌঁছুলেন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের একটি বৃহৎ ওপেন এয়ার জেলখানায় যার নাম পেল অফ সেটলমেনট, এই গাজার মতন। বাকিটা নিতান্ত তিক্ত ইতিহাস।
আপারথাইডের ব্লু প্রিন্ট ইউরোপে বানানো হয়, তার বলি ইউরোপের ইহুদি। ১৭৮৯ সালের বিপ্লবের পরে লেখা সংবিধানে ফরাসি দেশ ইহুদিকে পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়, তারপরে অন্যান্য দেশ। কানুনি হিসেবে আপারথাইড আর জলচল নয় কিন্তু বিদ্বেষ রোষ গেলো না। ১৯০৫ সালে অস্ট্রিয়ান সাংবাদিক থিওডোর হ্যরজল বললেন, আর নয়,আমাদের চাই আপন দেশ জাইওন ভূমি, পবিত্র ভূমি, ইসরায়েল- মন চল নিজ নিকেতনে। সেখানে তখন তুর্কি শাসন। নানা ধর্মের মানুষ বসবাস করে, কি করে রাজ্যপাট বসাবে ইহুদি? প্রথম মহাযুদ্ধে ইংরেজের সাফল্য এলো, সে সময়ে ব্রিটিশ ক্যাবিনেটে ইহুদি সদস্য ছিলেন। অটোমান শাসনের অবসানে ইংরেজ প্যালেস্টাইনের দখল নিলো বটে কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়, লিগ অফ নেশনস ব্রিটেনকে সাময়িক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বা ম্যানডেট দিলেন, বিশ বছরের জন্য, যতদিন না জুতসই কোন ওয়ারিশন খুঁজে পাওয়া যায়!
বালফোর ঘোষণায়, নভেম্বর ১৯১৭ ইহুদিদের আপন আবাস (এ ন্যাশনাল হোম) প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন জানানো হলো। এটি প্রকৃতপক্ষে এক লাইনের চিঠি যা ভবিষ্যতে কেবল ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা নয়, এক দীর্ঘস্থায়ী অশান্তির বীজ বপন করল।
আপনাদের ধৈর্যের ওপরে কর বসিয়ে এই ঘোষণাটি আরেকবার পড়ি:
প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের একটি জাতীয় আবাস গঠনের প্রস্তাবকে ব্রিটিশ রাজকীয় সরকার সমর্থন করবেন কিন্তু বর্তমান অইহুদি অধিবাসীদের সামাজিক ও ধার্মিক অধিকারের ওপরে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ সর্বথা বর্জনীয়।
২ নভেম্বর ১৯১৭
ন্যাশনাল হোম কাকে বলে? এর কোন নজির নেই আন্তর্জাতিক আইনে। ভারত বা আয়ারল্যান্ডের মতো প্যালেস্টাইন কোন ব্রিটিশ কলোনি ছিল না, এটা তাঁদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যে ইচ্ছেমত দান খয়রাত করবেন। তাতে কি? তারাশঙ্কর বলেন নি, জমি বাপের নয়, জমি দাপের? তৎকালীন প্যালেস্টাইনের অধিবাসী বা তাদের নেতাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হয় নি। এটা ওই মিউনিক চুক্তির মতন, চেকোস্লোভাকিয়াকে ভাগ করল ইংরেজ জার্মান ফরাসি মিলে, সে মিটিঙে কোন চেক প্রতিনিধি ছিলেন না।
ইউরোপে ইহুদি হত্যাকাণ্ড তখনও শুরু হয় নি, কিন্তু কিছু ইহুদি প্যালেস্টাইনের বালুভুমিতে আসতে আরম্ভ করেছেন। আরব চাষি ক্রিস্টিয়ান ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কষ্টে সৃষ্টে বাস করছেন সেই অটোমান রাজত্বে, এবার তাঁরা শঙ্কিত হলেন। ইউরোপ থেকে আগত এই মানুষেরা কি তাঁদের ঘর বাড়ি ছিনিয়ে নেবেন? অশান্তির সূচনা হলো। অন্যদিকে থিওডোর হ্যরজেলের জাইওনিজমে ইউরোপীয় ইহুদি বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাঁরা বার্লিন আমস্টারডাম প্যারিস লন্ডনে সফল ব্যাংকার, প্রোফেসর, সঙ্গীতজ্ঞ, বৈজ্ঞানিক, ডজন ডজন নোবেল পুরস্কার পান। ঘটনার মোড় ঘোরাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং নাৎসিদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে ইহুদি নিধন প্রকল্প। মনে রাখা দরকার মুসলিম আলবানিয়া বাদে ইউরোপের আর কোন দেশ ইহুদি উদ্বাস্তুকে আমন্ত্রণ জানায় নি, কোন ট্রাক বা জাহাজ পাঠায় নি। ১৯৩৯ সালে এম এস লুইস জাহাজ হামবুর্গ থেকে আটশো ইহুদি যাত্রীর নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আমেরিকান বন্দরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, এমনকি কিউবাতেও। সেই যাত্রীরা ফিরতে বাধ্য হলেন ইউরোপে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে। চোরা গোপ্তা কিছু ইহুদি ব্রিটেনে আসছিলেন বটে কিন্তু ডোভারে কোন অভ্যর্থনা সমিতি দেখা যায় নি বরং ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেন এঁদের আসা বন্ধ হোক - এই এখন যেমন শরণার্থীদের নৌকো আটকানো হয়।
ইহুদি ইউরোপের সমস্যা নয়।
ফাস্ট ফরওয়ার্ড
জ্বলন্ত ইউরোপ ছেড়ে ইহুদি আবাসের খোঁজে যে দেশে আসতে আরম্ভ করলেন তার নাম প্যালেস্টাইন। বালফোর ঘোষণার সময়ে তার জনসংখ্যার ৯% ইহুদি, ১৯৪৭ সালে ৩০%। মেজরিটি আরব এবং বহু ক্রিস্টিয়ান সেখানে বাস করছেন বিগত হাজার বছর ধরে, সে জমি যে অন্য কারো নামে ওপরওলার খাতায় রেজিস্ট্রি করা আছে না জেনেই। ইহুদি সংগঠিত হলেন, বললেন ঈশ্বর আমাদের এই জমি লিখে দিয়েছেন চার হাজার বছর আগে। তোমরা কেটে পড়ো, নইলে কেটে দূর করবো। আরব চাষি সাধ্যমতো অস্ত্র তুলে নেয় টিকে থাকার জন্যে, তাদের উচ্ছেদ করার বাসনায় ইহুদি সন্ত্রাসবাদ জবাব দেয় গেরিলা আক্রমণ করে, রাতের অন্ধকারে হানা দিয়ে – পারস্পরিক খুনোখুনি শুরু হলো। এক পক্ষ ঘর বাঁচাতে চান অন্য পক্ষ ঠিক সেইখানেই ঘর বানাতে চান। হিব্রু বাইবেল পথ নির্দেশ করে। তাঁরা কেবল আরব নিধন করেন নি, ১৯৪৮ সালেই ব্রিটিশ ম্যানডেট শেষ হবে জেনে তাদেরও যথাশীঘ্র বিতাড়িত করতে চেয়েছেন। ইরগুন নামের এক আধা সামরিক ইহুদি বাহিনী দিনে রাতে অসংখ্য আরব গ্রামে হানাদারি করে, কখনো হাগানা, নাৎসি এস এস স্টাইলে (এপ্রিল ১৯৪৮ সালে ডের ইয়াসিনে ঘুমন্ত শিশু নাড়ী বৃদ্ধের মাসাকারের পরে ঠিক এই শব্দাবলী সহকারে আলবার্ট আইনস্টাইন তার নিন্দা করেছিলেন)। তাদের নেতার নাম মেনাখেম বেগিন, যিনি জেরুসালেমের কিং ডেভিড হোটেলে বোমাবাজি করেন, ৯১ জন মারা যান। কালক্রমে বেগিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হবেন, একদিন নোবেল পুরস্কার পাবেন। নিরপেক্ষ হিসেব অনুযায়ী কেবল এপ্রিল ১৯৪৮ সালে তাঁরা ৮০০ আরব নিধন করেন, হাইফা রিফাইনারিতে আরবের পাল্টা আক্রমণে ৩০ জন ইহুদি মারা যান। সন্ত্রাসের আরও কয়েক নেতা পরবর্তীকালে দেশের হাল ধরেছেন, এই যেমন ইতঝাক রাবিন। আজকের ইসরায়েলের ৮৫% অঞ্চল ছিল আরব অধ্যুষিত, ১৯৪৮ সালে সেই আরব জনতা স্থানান্তরিত হলেন শরণার্থী শিবিরে, তাঁরা সেখানেই আছেন এখনও। গাজা, লেবানন, জর্ডান, সিরিয়াতে ছেষট্টিটি শিবিরে বাস করেন অন্তত পঞ্চান্ন লক্ষ প্যালেস্টিনিয়ান।
ইউরোপ হাজার বছর লাঠি ঝ্যাঁটা মেরেছে, মাঝে মধ্যে তাদের ওপরে টার্গেট প্র্যাকটিস করেছে। নাৎসিদের নিধনযজ্ঞে চোখ বুজে থেকেছে। বাকি ইহুদি অন্য কারো সমস্যা হয়ে উঠুক, ফ্র্যাঙ্কলি মাই ডিয়ার উই ডু নট গিভ এ ড্যাম। ইউরোপের সামগ্রিক অপরাধী বিবেক শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র ইহুদি রাষ্ট্রকে সমর্থন জানায়, প্যালেস্টিনিয়ান আরব চুলোয় যাক ইহুদি সম্পত্তি করায়ত্ত করেছেন যে পোলিশ ইউক্রেনিয়ান জার্মান রোমানিয়ান গেরস্থ তাঁদের দেশের সরকার কোন ইহুদিকে ঘরে ফেরার অধিকার দেয় নি – যাও প্যালেস্টাইনে, সেখানে তোমাদের প্রতিশ্রুত ঘর আছে।
যাওয়ার আগে ইংরেজ তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্যালেস্টাইনকে তিন টুকরো করে গেলো (যেমন পাততাড়ি গুটনোর আগে ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার ইংরেজ অভ্যাস দেখা গেছে আয়ারল্যান্ড, সাইপ্রাস, ভারতে)।
সেদিন আরও সাড়ে সাত লক্ষ প্যালেস্টিনিয়ান গৃহ হারালেন। ইসরায়েলি সৈন্যের পাহারায় তাঁরা নির্বাসিত হলেন রেফিউজি ক্যাম্পে। এটি নাকবা বা বিপর্যয় নামে পরিচিত (নাকবার স্মরণে কোন অনুষ্ঠান আজ ইসরায়েলে নিষিদ্ধ, যেমন আর্মেনিয়ান গণহত্যার উল্লেখ তুরস্কে নিষিদ্ধ)।
১৯৬৭ সালে আরব ইসরায়েলি যুদ্ধে বিজয়ী হলো ইসরায়েল। জুড়ে নিলো জেরুসালেম থেকে গাজা, গোলান হাইট থেকে সিনাই। প্যালেস্টাইন শব্দটা খবরের কাগজের পাতা থেকে অদৃশ্য হলো। বেন নিতাই (পরে জানা গেলো তাঁর পুরো নাম বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু) নামের একজন তরুণ ইসরায়েলি অক্সফোর্ড ডিবেটে ঘোষণা করলেন প্যালেস্টিনিয়ানদের আপন দেশ তো আছে, তার নাম জর্ডান।
ফ্রি প্যালেস্টাইনের দাবিতে লাইলা খালেদ নাম্নী একজন মহিলা যখন ট্রান্স ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের প্লেন হাইজাক করে দামাস্কাসে নামালেন, প্যালেস্টাইনের নাম আবার শোনা গেলো। পপুলার ফ্রন্ট ফর লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইনের নেতা জর্জ হাবাস বললেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ কেন ভাগ হবে, দেশ হোক একটাই যেখানে ইহুদি আরব মুসলিম ক্রিস্টিয়ান বাস করবেন। আরব প্রতিবাদকে কণ্ঠ দিলেন ইয়াসির আরাফত তাঁকে ও তাঁর সংগঠনকে তৎক্ষণাৎ সন্ত্রাসবাদী ঘোষিত করা হলো। বিশ বছর বাদে একদিন তাঁর সঙ্গে হাত মেলালেন ইতঝাক রাবিন, অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। এবার দুই স্বাধীন রাষ্ট্র শান্তিতে পাশাপাশি বাস করবে এমন আশার কথা শোনা গেলো। ক্লিনটন থেকে শুরু করে সব আমেরিকান প্রেসিডেন্ট টু ষ্টেট সলিউশনের কথা বলে গেলেন। পঁচিশ বছর কেটে গেছে, এখনও বড়ো বড়ো রাষ্ট্রনেতারা বলেন, টু স্টেট সলিউশন** প্রয়োজন। কবে? সে রয়ে গেল কেবল কথায়?
রাষ্ট্র সঙ্ঘে রেসোলিউশন সই হয়েছে, ইসরায়েল তার অধিকৃত এলাকা পরিত্যাগ করুক, সেখানে বাড়িঘর বানানো বেআইনি।
ইসরায়েল কোন রেসোলিউশন মানে নি।
ইসরায়েলের আপারথাইড শুধু দেওয়ালের এপারে ওপারে নয়।
ইসরায়েল থেকে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ঢোকার চেক পোস্ট বাইশটা। কিন্তু অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ভেতরে আছে ছশো চেক পোস্ট। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের মানুষ এ পাড়া থেকে ওপাড়া যেতে গেলে পরিচয় পত্র দেখাতে বাধ্য – এটি আইডেনটিটি কার্ড নয়, রেফারেন্স কার্ড যেখানে লেখা আছে নাম পাতা বাড়ির কাজের ঠিকানা – আধার আর প্যান কার্ডের যুগলবন্দী। চেক পোস্টে সশস্ত্র পুলিস মোতায়েন।
ইসরায়েলি সেটলার বাড়ি বানাতে পারেন যেখানে ইচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইন তাঁদের ওপরে প্রযোজ্য নয়। অনায়াসে প্যালেস্টিনিয়ান চাষ জমির দখল নিতে পারেন। আজ অধিকৃত অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইনকে কলা দেখিয়ে যে সেটলমেনট গড়ে উঠেছে সেখানে বাস করেন পাঁচ লক্ষ ইসরায়েলি। গ্রুপ এরিয়া নির্ধারিত হয়েছে, কে কোথায় বাস করতে পারেন। সেই এরিয়া আবার ইসরায়েলের ইচ্ছেমত বদলে দেওয়া যায়।
সেটলার বাস করেন স্বতন্ত্র, প্যালেস্টিনিয়ান সেখানে কোনভাবে উপনীত হলে প্রাণনাশের আশঙ্কা।
ওরা থাকে ওধারে। থাকবে।
বিধ্বস্ত ইউরোপ ছেড়ে বাইবেল হাতে ডাচ একদিন বাসস্থান খুঁজেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, বন্দুকের ডগায় উচ্ছেদ করেছিলেন আদি বাসিন্দাদের। এমনটা আমরা দেখেছি আমেরিকায় অস্ট্রেলিয়ায় কানাডায় সেখানকার আদি বাসিন্দাদের মেরে ইউরোপীয়রা বানালেন আপন রাষ্ট্র। ১৯৭৮ সাল অবধি আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের কোন রিচুয়াল পালন বেআইনি ছিল; অস্ট্রেলিয়া তাদের রেখেছিল র্যাবিট হ্যাচে। আলোকিত সভ্য সমাজের বিবেক বিচলিত হয় নি।
সাদা মানুষ দ্বারা নির্বাচিত সাদা মানুষ আইন প্রণয়ন করলেন- কিভাবে দেশে বাকি ৯৫% শতাংশ মানুষ জীবন কাটাবেন। সেই বিভাজনের ভিত্তি গায়ের রঙ। তাঁরা গড়ে তুলেছিলেন এক শক্তিশালী আপারথাইড স্টেট যাকে মেনে নিতে বহু বছর সভ্য পশ্চিমের কোন অসুবিধে হয় নি।
প্রতিশ্রুত কানানে রাজ্য প্রতিষ্ঠা সহজ হবার কথা ছিল না। ঈশ্বর মোসেসকে বলেছিলেন তোমাদের হাতে তুলে দেবো সেই সব মানুষকে যারা এখন সেথায় বাস করে, তোমরা তাদের বিতাড়িত করবে সেখান থেকে। তোমাদের জমিতে কখনো তাদের বাস করতে দেবে না। তারই প্রতিধ্বনি করে মোসেস জশুয়াকে বলেন “তরবারির ডগায় মেরে ফেলো নির্বিচারে পুরুষ, মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, গোরু ছাগল গাধা”।
হাজার বছর যাবত ইউরোপিয়ান আপারথাইডের ভুক্তভোগী ইহুদি ইউরোপের বধ্যভূমি থেকে পালিয়ে বাইবেলে প্রতিশ্রুত দেশ এবার বন্দুকের ডগায় দখল করলেন, সেই কানান বিজয়ের কায়দায়, সাড়ে তিন হাজার বছর বাদে। এবার উৎখাত করলেন আরবদের যারা মাঝের হাজার দুই বছর তাদের বাপ পিতেমোর জমিতে বাস করেছে, নিহত হলেন বহু পুরুষ মহিলা শিশু। এথনিক ক্লিনসিং। বাইবেলের বাণী পুনরায় সত্য প্রমাণিত করে ইহুদি দখল নিলেন সেই দেশের, গড়ে তুললেন এক শক্তিশালী আপারথাইড স্টেট যাকে মেনে নিতে সভ্য পশ্চিমের কোন বিবেকের বিড়ম্বনা হলো না।
আধা সামরিক জাইওন বাহিনী ইরগুন, দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সন্ত্রাসবাদী প্রতিষ্ঠান বলে ঘোষিত হয়েছিল। ইরগুনের লিডার মেনাখেম বেগিনকে ব্রিটেন এক দশক যাবত ভিসা দেয় নি, আর এক নেতা ইতঝাক রাবিনের রিপোর্ট কার্ডও খারাপ ছিল, লিদ্দ্যা ও রামলে (রাষ্ট্রসংঘের পার্টিশনে এই আরব শহর দুটি ইসরায়েলের ভাগে পড়ে নি) থেকে পঞ্চাশ হাজার প্যালেস্টিনিয়ানকে এক মৃত্যু মিছিলে পাঠানোর সুপারিশে রাবিনের সই ছিল। নেলসন ম্যানডেলা জেলে কাটান ছাব্বিশ বছর। পি এল ওর নেতা ইয়াসির আরাফতের পেছনে সব সময় ইসরায়েলি সিক্রেট সার্ভিস লেগেছিল, শোনা যায় শেষ দশ বছর তিনি এক শয্যায় দু রাত্তির কাটান নি।
তারপর একদিন এইসব সন্ত্রাসবাদীরা, মেনাখেম বেগিন, ইতঝাক রাবিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, নেলসন ম্যানডেলা নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন। ইয়াসির আরাফত পি এল ওর চিফ, প্রধানমন্ত্রী রাবিনের সঙ্গে বসে অসলো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চারজন নোবেল শান্তি পুরস্কারে বিভূষিত হয়েছেন।
* তিরিশ বছরের ধর্মযুদ্ধের পটভূমিকায় লেখা বেরটোলট ব্রেখটের 'মুটার কুরাজ উনড ইহরে কিনডার (মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন)' নাটকটিকে কেউ কেউ বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ও সর্বকালের সেরা যুদ্ধ বিরোধী নাটক মনে করেন।
** বছরের পর বছর নেতানিয়াহুর সরকার গাজা স্ট্রিপ এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়েছে মাহমুদ আব্বাসের হাত দুর্বল করেছে যাতে প্যালেস্টাইন নামের কোন স্টেট মাথা না তুলতে পারে। মিশরের মাধ্যমে ইসরায়েলি সরকার হামাসকে নানাভাবে প্রোৎসাহিত করে চলেছে – তাল শ্নাইডার, টাইমস অফ ইসরায়েল, অক্টোবর ৮, ২০২৩।
শ্নাইডার ইহুদি সাংবাদিক।
“প্যালেস্টাইন স্টেটের গড়ে ওঠা আটকাতে গেলে গাজায় নিয়মিত অর্থ সরবরাহ করে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজার মধ্যে বিভাজন বজায় রাখা প্রয়োজন” নেতানিয়াহু, জেরুসালেম পোস্ট ১২ মার্চ, ২০১৯।
লাহাভ হারকভ, ইসরায়েলি সাংবাদিক।
Rashida | 65.49.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪৯526096
hu | 72.24.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০৪526100
আবিদ | 65.49.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৮526102
হাসান | 64.62.***.*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০০:২৫526103
dc | 2401:4900:1cd0:b15f:30a0:7214:1fa0:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৪৬526105
r2h | 165.***.*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:০২526106
dc | 2a02:26f7:d6c1:680d:0:9a2a:287f:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:১০526107
r2h | 165.***.*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:১৪526108
হীরেন সিংহরায় | 151.33.***.*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:১৭526109
dc | 2a02:26f7:d6c1:680d:0:ae33:6983:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:২০526110
dc | 2a02:26f7:d6c1:680d:0:b63f:3655:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:২৩526111
dc | 2401:4900:1cd0:e691:752e:7cee:ddf2:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:৫৪526115
পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:9d80:81a4:e9b7:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:৫৫526116
dc | 2401:4900:1cd0:e691:752e:7cee:ddf2:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:৫৬526117
dc | 2401:4900:1cd0:e691:752e:7cee:ddf2:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০১:৫৭526118
dc | 2401:4900:1cd0:e691:752e:7cee:ddf2:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০২:০২526119