এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  সমাজ

  • পবিত্র ভূমি ১৩

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | সমাজ | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৫২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৬ (৫ জন)
  • মাউনটেন অফ টেমপটেশন - জেরিকো

    পুরানো জানিয়া


    জেরিকো

    পাঁচ জন অর্থনীতিবিদ একত্র হলে যে কোন বিষয়ে ছয় রকমের অভিমত প্রকাশ করেন। মতের অমিল অন্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও হয়তো সম্যক প্রযোজ্য - কিন্তু অন্তত একটি শহরের বয়েস সম্বন্ধে গুণীজনেরা একমত। এই পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরের নাম: হিব্রুতে ইয়ারিহো, আরবিতে আরিহা, ইংরেজিতে জেরিকো। এগারো হাজার বছর যে তার স্থাপনা হয়েছিল সকলে মানেন। ঈশ্বরের আদেশ অনুযায়ী জর্ডান নদী পেরিয়ে কানানের আদি অধিবাসীদের উৎখাত করে প্রতিশ্রুত ভূমি দখলের সদুদ্দেশ্য নিয়ে জশুয়া তাঁর অভিযান শুরু করেছিলেন- নতুন দেশে ঢুকেই প্রথম যে দেওয়াল ঘেরা শহরের মুখোমুখি হলেন তার নাম জেরিকো। সে শহরের রাজা সব দ্বার বন্ধ করে দুর্গে কুলুপ মেরে বসে রইলেন। ঈশ্বর তখন জশুয়াকে আদেশ দিলেন ছদিন ধরে তুমি এই দেয়াল প্রদক্ষিণ করবে, দিনে একবার, সপ্তম দিনে সাত বার – শেষের সে দিন সাত পুরোহিত ঐশ্বরিক চুক্তির দলিল (আর্ক অফ কভেনানট) সামনে রেখে শিঙ্গা বাজালে হুড়মুড় করে ধ্বসে পড়ে জেরিকোর শক্ত দেওয়াল। জেরিকোর মানুষ লড়াই করেছেন বলে জানা যায় না তবে হিব্রু বাইবেল বলেছে জশুয়ার বাহিনী শহরে প্রবেশ করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে হত্যা করে, গোরু ছাগল গাধা বাদ যায় নি। কানান অভিযানের প্রথম যুদ্ধে বিজয়ী জশুয়া জেরিকোকে শাপ দিলেন – ভবিষ্যতে কেউ যদি জেরিকোর প্রাচীরের পুনপ্রতিষ্ঠা করে তাদের প্রথম সন্তানের তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হবে (জশুয়া ষষ্ঠ বই)। তাদের পানীয় জলের স্বাদ হবে তিক্ত।

    এইখানে আমাদের গাইড, ইস্ট জেরুসালেমের সায়েদ একটু বিরতি নিলেন।

    সকালে জেরুসালেম থেকে বেরিয়েছি সঙ্গে কন্যা মায়া। তার স্কুলের রিলিজিয়াস এডুকেশন পাঠে একটু সহায়তা করতে গিয়ে কথা দিই একবার আমরা জেরুসালেমে একসঙ্গে ইস্টার পরব কাটাবো, যিশুর শেষ যাত্রা পথে হাঁটবো তার আগে বাকি দেশটা একটু দেখে নেওয়া যাবে। জেরুসালেম থেকে খাড়া উত্তরের যাত্রা পথে বাঁ পাশে চলেছে জুডেয়ার পাহাড়, প্রখর রৌদ্রে তার চেহারা আরও ভয়ঙ্কর, রুক্ষ। কোথাও কোন সবুজের, প্রাণের চিহ্ন মাত্র নেই। ভেড়া গোরু চরতে দেখা যায় না প্রায়। মরুভূমির এই সফরে ক্রমশ নেমে যাচ্ছি সমুদ্রতট (সী লেভেল) থেকে নিচে আরও নিচে।



    সাক্ষ্য প্রমাণ সহ - প্রাচীনতম শহর জেরিকো

    অকস্মাৎ মায়া একটি প্রশ্ন করল – আচ্ছা সায়েদ এটা হিব্রু ৫৭৭৮ সাল, তাই তো (আনো দমিনি ২০১৭ সাল সেটা)? জেরিকোর বয়েস এগারো হাজার বছর যদি হয় তাহলে আদম ইভ, হিব্রু দিন গণনা শুরুর সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেই এই শহর তৈরি হয়েছে?

    আমার সংসর্গের প্রভাবে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং যত্র তত্র এঁড়ে তর্ক করাটা মায়ার অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। তবে তার যুক্তিটা কোন দিকে যাচ্ছে বুঝতে অসুবিধে হয় না। সম্মানিত ইহুদি পণ্ডিত দার্শনিক মায়মনিদেস বিস্তর গবেষণা করে বললেন বিশ্বসৃষ্টির সময়কাল হলো খ্রিস্টপূর্ব ৩৭৮১। সেই বছরে ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন আলো, দ্বিতীয় দিনে আকাশ ইত্যাদি। সেই সব কঠিন কর্ম শেষে সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম নিলেন, অর্থাৎ ৫৭৭৮ বছর আগের প্রথম শনিবার। সেটাই হিব্রু ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন। তাহলে জেরিকোর বয়েস কেমন করে এগারো হাজার হয়?

    এই বছরটা ৫৭৮৪।

    প্রমাদ গুনলাম। মায়া হিব্রু পঞ্জিকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে! এই পুণ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে বাইবেলের গণনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা? সায়েদ ইহুদি নন, কিন্তু সকল আব্রাহামিক ধর্ম ছ দিনে দুনিয়া বানানোর তত্ত্বটা মেনে নেয়। ঠিক কোন বছর ঈশ্বর এ কাজ শুরু করেছিলেন তা নিয়ে কোন বিতর্ক ক্রিস্টিয়ান বাইবেল বা কোরানে সম্ভবত নেই। তবে ঈশ্বরের স্টার্ট ডেট নিয়ে তিন মত – তাই তাঁর বিশ্রামের দিন ইহুদি মতে শনিবার, ইসলামে শুক্রবার, ক্রিস্টিয়ান মতে রবিবার। জেরুসালেমের চারটে পাড়া, ক্রিস্টিয়ান ও আর্মেনিয়ান পাড়ায় রবিবার দোকান বন্ধ, ইহুদি পাড়ায় শনিবার, মুসলিম পাড়ায় শুক্রবার। সেখানে ব্যাঙ্কের কাজ যে কিভাবে চলে জানি না। তবে যেখানে আমাদের মুখ্য ব্যবসা সেই তেল আভিভে কেবল শনিবারে ছুটি।

    সায়েদ গাইড, তিনি সব গল্পের খবর রাখেন, হর তালেকা চাবি রখখে হর চাবি কা তালা! দুনিয়ার সকল প্রকার চিড়িয়ার সঙ্গে পরিচিত। তিনি ম্যানেজ করলেন ভালো, একবার মায়ার হাতের আইফোনটা দেখে নিয়ে বললেন - মায়া, বাইবেলের দিন তারিখের হিসেবের সঙ্গে আমাদের হিসেব মেলে না! ওটা তোমার স্টিভ জব সাহেবের আগের ক্যালকুলেশন। এই যে আমরা বলি, আপেলের সঙ্গে আপেলের তুলনা চলে, পীচ ফলের নয়!

    জেরিকোর বিশেষ উল্লেখ আছে হিব্রু এবং ক্রিস্টিয়ান বাইবেলে। সায়েদ সেগুলি দেখাতে বদ্ধ পরিকর।

    জেরিকো ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে, নামে প্যালেস্টাইন অথরিটি অধীনে, প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল দ্বারা অধিকৃত। আমরা এসেছি ইস্ট জেরুসালেম থেকে প্যালেস্টিনিয়ান গাইড তথা ড্রাইভারের সঙ্গে (ইসরায়েলিদের এমনিতে এ অঞ্চলে প্রবেশ নিষেধ)। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের নাম্বার প্লেট ওলা গাড়িতে। এ দেশে গাড়ির নাম্বার প্লেট দু রকমের – ইসরায়েলি গাড়িতে হলুদ পটভূমিকায় কালো নম্বরে তিন-দুই-তিন সংখ্যা, প্রথম ছটি রেজিস্ট্রেশন এবং শেষের দুটি সিরিজ চিহ্নিত করে। প্যালেস্টাইনের নাম্বার প্লেট সম্পূর্ণ আলাদা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে সাদার ওপরে সবুজ অথবা সাদার ওপরে কালো। আগাম চিনে নেওয়া যায় কার আনুগত্য কোন খানে।

    প্রথম স্টপ একটি বটগাছ, ইংরেজিতে তার নাম সিকামুর (বাংলায় কোন নাম খুঁজে পাই নি)

    যিশু নামের একজন মানুষের কথা খুব শোনা যাচ্ছে। গুজব তিনি পঙ্গুকে সচল করেন, অন্ধকে দৃষ্টিদান করেন, সাতটা রুটি আর কয়েক টুকরো মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার মানুষকে পেট পুরে খাওয়ান। এই বার্তা রটি গেল গ্রামে শহরে, তিনি এবার জেরিকো আসবেন। জাকেউস এক ধনী ব্যক্তি, তখন জেরিকোর ট্যাক্স কালেক্টর, শহরে বাজারে তাঁকে কেউ পছন্দ করে না। এমন মানুষও কৌতূহলী হলেন- কে এই যিশু? তাঁকে কি আগে ভাগে দেখা যায়? একটা সমস্যা ছিল- জাকেউস মাথায় খাটো। যিশুর ভক্ত গোষ্ঠীর ভিড়ভাট্টার ভেতরে তিনি কি সেই যিশু নামক মানুষটির কাছাকাছি যেতে বা তাঁকে দেখতে পাবেন? জাকেউস একটা শর্ট কাট বের করলেন - শহরের ঢোকার মুখে চৌরাস্তার মোড়ে ছিল একটি সিকামুর গাছ, তিনি সেই গাছে চড়ে বসলেন। যিশু তাঁর অনুগামীদের নিয়ে জেরিকো প্রবেশ করার সময়ে তাঁকে লক্ষ করলেন, বললেন গাছ থেকে নেমে আসুন, আমার সামনে দাঁড়ান। লুকের সুসমাচার (গসপেল) অনুযায়ী যিশু জাকেউসকে বলেন, আমি কি আপনার গৃহে আজকের সান্ধ্য আহার গ্রহণ করতে পারি? শহরে জাকেউসের বিশেষ বদনাম ছিল, রোমান রাজার কর্মচারী তিনি, ট্যাক্স হিসেব করায় ধূর্ত অনেককে ঠকিয়েছেন। সমবেত জনতা এইসব বলে তাঁকে তুলোধোনা করতে শুরু করলেই জাকেউস যিশুকে বললেন, আমি কথা দিচ্ছি যার কাছ থেকে যা বেশি নিয়েছি তার চারগুণ ফেরত দেব। লুকের সুসমাচার অনুযায়ী এইভাবে জাকেউসের হৃদয় পরিবর্তন হলো, তিনি যিশুর অনুগমন করলেন।



    সিকামুর বৃক্ষ রক্ষকের সঙ্গে মায়া - জেরিকো

    এই গাছটি দু হাজার বছরের পুরনো একথা মনে করবার কোন সঙ্গত কারণ দেখলাম না, বরং আমাদের শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের বটগাছটি রীতিমত অথেনটিক রকমের প্রবীণ। রাস্তার মোড়ে সেই গাছের তলায় একটি ছোটো খাটো জনতা। সায়েদ বললেন, টুরিস্টের ভিড় আমরাও থামব। যিশুর স্মৃতি বিজড়িত এই গাছটির রক্ষণাবেক্ষণের ভার বহু দিন যাবত একটি মুসলিম পরিবারের হাতে আছে, নিদেন পক্ষে অটোমান সুলতানদের আমল থেকে। তাঁদের একজন হয়তো সমাগত টুরিস্টকে গাছের পাতা বিতরণ করছেন সুভেনির স্বরূপ, খানিক দক্ষিণার বিনিময়ে। তিনি ঠিক কেন জানি না মায়াকে একটা পাগড়ি গোছের কিছু মাথায় পরিয়ে দিলেন, আরও একটু দক্ষিণা লাগলো, পবিত্র ভূমির পাগড়ি বলে কথা!



    পবিত্র ভূমির পাগড়ি



    এবার এলিশার ঝর্না।

    জেরিকোর জলকষ্ট সেই জশুয়ার অভিশাপ থেকে। একদিন প্রফেট এলিশা বললেন তিনি জল শুদ্ধ ও পানের উপযুক্ত করে দেবেন। তিনি চাইলেন একটা নতুন পাত্র আর একটা নুনের গোলা। সেই গোলা জলে ডোবাতেই জেরিকোর জল হলো স্নিগ্ধ পানীয়। শুষ্ক রুক্ষ জেরিকোতে প্রাণ সঞ্চার করেছে এই ঝর্নার জল। জব গম ধান এখানে গজায় না কিন্তু গোটা শহর শহরতলি ভরে আছে অজস্র পাম গাছে যার জন্য জেরিকোর আরেক নাম সিটি অফ পামস, ঝর্নার নাম স্প্রিং অফ এলিশা।



    সিটি অফ পামস, স্প্রিং অফ এলিশা

    তার ঠিক পিছনেই টেল জেরিকো অথবা টেল এস সুলতান- বহু হাজার বছরের দেওয়াল, টাওয়ারের সন্ধান মিলেছে, প্রমাণিত হয়েছে জেরিকোর বয়েস! এই ভগ্নস্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে একটা আশ্চর্য অনুভূতি হয়েছিল – চোখ চলে যায় দিগন্তে ডেড সীর জলরেখা, জুডেয়ার উষর পাহাড় তারই মাঝে ঝর্নার জলে সিঞ্চিত পাম গাছের সারি, সবুজের ছাউনি - অনন্ত কালের মাঝে আমি একা।

    আরেক দিকে ক্রিস্টিয়ান বাইবেলে বর্ণিত প্রলোভনের পর্বত (মাউনটেন অফ টেমপটেশন), মাউনট কুরুন্তুল। জন দি ব্যাপ্টিস্টের কাছে দীক্ষা লাভের পরে যিশু সেখানে চল্লিশ দিন উপবাস করে তপস্যায় রত ছিলেন – সেই সময় শয়তান এসে তাঁকে অনেক প্রলোভন দেখায়। যিশু অটল থাকেন। হতাশ হয়ে শয়তান আপন গৃহে প্রত্যাবর্তন করলে যিশু পাহাড় থেকে নেমে এসে গ্যালিলিতে তাঁর ধর্মপ্রচার কাজে ব্রতী হন।

    স্থানীয় এক ধনী ব্যক্তি কেবল কার বানিয়ে দিয়েছেন, তাতে চড়ে সিধে প্রলোভনের পর্বতে উঠে জেরিকোর প্যানোরামিক ভিউ দেখা যায়। তবে সেখানে গেলে প্রলোভনগুলি পুনর্বার প্রদর্শিত হয় না, সেটা বড়ো আশ্বাসের কথা – আমার মতো দুর্বল চিত্ত মানুষ অতি সহজেই দিকভ্রান্ত হতে পারে।

    স্প্রিং অফ এলিশার ওপরে জেরিকো শহরের বয়েসের সার্টিফিকেট পাথরে খোদাই করা আছে – ওলডেস্ট সিটি ইন দি ওয়ার্ল্ড! এই খ্যাতির কোন চ্যালেঞ্জার এতাবৎ দেখা দেয় নি।

    পু:
    জেরিকো কেবল প্রাচীনতম শহর নয়, দুনিয়ার সবচেয়ে নিচা নগরি! সমুদ্রতট রেখার পৌনে তিনশ মিটার নিচে তার অবস্থান। হল্যান্ডের স্কিফোল এয়ারপোর্টে যখন প্লেন নামে, আপনি জানেন সমুদ্রতটের বারো ফিট তলায় চলে এলেন। চারিদিকের সফেন সমুদ্র দেখলে এই তথ্য হৃৎকম্প জাগানোর পক্ষে যথেষ্ট। হল্যান্ডের স্কিফোল এয়ারপোর্ট জলপ্লাবিত হবার সম্ভাবনা দুর্বার – ডাইক বানিয়ে আর ক্যানেল খুঁড়ে ডাচরা কোনমতে ঠেকিয়ে রেখেছে।। তবে জেরিকোর পাশে যে জলরেখা আছে সেই ডেড সী আরও দুশো মিটার নিচে, কাজেই জেরিকোতে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শান্তনু চক্রবর্তী | 2409:4060:2e88:9ea6::adca:***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:১৮526053
  • ছোটবেলায় স্কটিশচার্চ স্কুলে বাইবেলে এই কর আদায়কারীর নাম পড়েছিলাম সক্কেয়। সয়ের নিচে আবার হসন্ত ছিল। দিব্যি লাগতো গল্পগুলো পড়তে।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:1941:ab71:4d52:***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪১526069
  • যীশুর প্রলোভনের গল্পটা পড়লে বুদ্ধ ও মার মনে পড়ে। সুজাতার পায়েসের মত মেরী ম্যাগদালিনের হামুস ও পিটা ব্রেড থাকলে আরো ভাল লাগত।
  • হীরেন সিংহরায় | 85.255.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১৮526088
  • সবই অনুবাদকের মর্জি মাফিক । 
     
    ক্রিসটিয়ান বাইবেল গ্রিক ভাষায় লেখা। অনুবাদ যে যার মতন করেছেন যেমন
    It is easier for a camel to go through the eye of a needle than for a rich man to enter the kingdom of God" (Jesus and the rich man)

    ঊটের পক্ষে ছুঁচের সুতো পরানোর ঘরে ঢোকার প্রশ্ন এলো কোথা হতে ? গ্রিকে আছে Camillo বা কাছির দডি যা দিয়ে নৌকো বাঁধা হয় । খুব মোটা তাই ছুঁচে পরানো যায় না। অনুবাদক camillo কে Camel করে দিলেন ! 
    • ম্যাথু বাংলায় মথি হলেন গ্রিক মাথাইওস জারমান মাথিয়াস ইতালিয়ানে মাতেও
  • সমরেশ মুখার্জী | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১৮526256
  •  “আমার সংসর্গের প্রভাবে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং যত্র তত্র এঁড়ে তর্ক করাটা মায়ার অভ্যেসে পরিণত হয়েছে।” তবে মায়ার সেই প্রশ্নটি - (হিব্রু পন্ডিতের মতে ঈশ্বর কর্তৃক বিশ্বের সৃষ্টি যদি ৩৭৮১ BC তে হয়ে থাকে তাহলে জেরিকোর বয়স এগারো হাজার বছর হয় কী করে?) আমার কিন্তু এঁড়ে তর্ক মনে হয়নি। খুবই ভ‍্যালি‌ড প্রশ্ন তবে ছদিনে বিশ্ব সৃষ্টির ঢপের তত্ত্ব যারা বাজারে ছেড়ে অবিরল, অক্লান্ত প্রচার করে চলেন তাদের প্রতিনিধি‌দের পক্ষে এমন অকাট‍্য আপাতবিরোধীতাপূর্ণ অসঙ্গতি‌র জবাব দেওয়া অসম্ভব। তাই তারা সদগুরু জাগ্গী বাসুদেবের মতো গোলমেলে, ধোঁয়াটে জবাব দেবে - এটাই প্রত‍্যাশিত। এই জন‍্য ধর্ম টর্ম জাতীয় গাঁজাখুরি ব‍্যাপার নিয়ে ঘামিয়ে আমার ক্ষুদ্র মগজটি বিচলিত করতে আমি নারাজ।

    বরং আমার প্রিয় লেখক সুনীলের ভ্রমণকাহিনী‌র কিছুটা অংশ শেয়ার করি। ষাটের দশকের শেষে ভ‍্যাগাবন্ড সুনীল পাঁচমাস ধরে ইওরোপ, কানাডা, আমেরিকায় ওর পরিচিত, বন্ধু বা বন্ধুর রেফারেন্সে তার বন্ধুর বাড়িতে থেকে, তাদের সাথে তাদের গাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে আলস‍্যময় রুটি‌নে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক স্বপ্নিল ভ্রমণে। সেভাবেই শিকাগোতে এসে দেখা হোলো বাল‍্যবন্ধু সূর্য‌র সাথে। সে এখন প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ার। সে পরদিনই কর্মোপলক্ষে দেড়মাসে‌র জন‍্য চলে যাচ্ছে নাইজেরিয়া। সে তার এ্যাপার্টমেন্টের একটি চাবি দিয়ে গেল সুনীলকে। স্টোরে স্টক করা প্রচুর রেশন। সুনীল ভাবলেন, প্রচুর তো ঘোরাঘুরি হোলো, কদিন সূর্য‌র ফ্ল‍্যাটে একান্তে থাকি। সেখানেই সে টিভিতে যা দেখলো তার ওপরে লিখেছেন এই অংশ‌টা:

    এদেশে এখনও ভগবানের বেশ জনপ্রিয়তা আছে। ভগবানের তল্পিবাহকরাও বেশ জোরদার। টিভিতে প্রত্যেক রবিবার সকালে যে-কোনও চ্যানেল খুললেই শোনা যায় পাদরিদের বক্তৃতা। আজকাল আর অনেকেই কষ্ট করে রবিবার সকালে গিরজায় যেতে চায় না, তাই টিভিতেই শোনানো হয় পাদরিদের সারমন। সকাল মানে অবশ্য সাড়ে ন'টা-দশটা। শনিবার রাত্তিরে পার্টি সেরে রবিবার তার চেয়ে আগে কেউ ঘুম থেকে ওঠে না। 
    পাদরিদের বক্তৃতা সাধারণত অন্তহীন হয়। গল্পে আছে, এক পাদরি তার সুদীর্ঘ বক্তৃতা শেষ করে বলেছিলেন, দুঃখিত, আমার হাতে ঘড়ি নেই, তাই বুঝতে পারিনি এতটা সময় কেটে গেছে। শ্রোতাদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিল, দেওয়ালে তো ক্যালেন্ডার ঝুলছে, সেটা তো দেখতে পারতেন।

    টিভি-র মতন চাক্ষুষ-মাধ্যমে লম্বা বক্তৃতা সাধারণত দেখানো হয় না। কিন্তু পাদরিদের বক্তৃতা চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিটের কম হয় না। সেই জন্য টিভি-র পাদরিরা সকলেই অত্যন্ত জবরদস্ত বক্তা, কথার মায়াজাল বোনায় দক্ষতা অসাধারণ এবং উচ্চাঙ্গের অভিনেতাদের মতন তাঁদের কন্ঠস্বরও নাটকীয়ভাবে ওঠে-নামে।

    আমি নিজেই টিভি-তে এরকম দু-একজন পাদরির বক্তৃতা একটুখানি শোনবার পরই মন্ত্রমুগ্ধের মতন আটকে গেছি। চোখ সরাতে পারিনি। বক্তৃতার মধ্যে ধর্মের নাম গন্ধও নেই, বিষয়বস্তু হচ্ছে বিশ্বশান্তি। ইতিহাস ও সাহিত্য থেকে অজস্র উদাহরণ টেনে আনছেন তিনি, পৃথিবী যে এক অনিবার্য ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে তাও মর্মন্তুদভাবে বুঝিয়ে দিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর সার কথা, ভগবান যিশুর শরণ নিলে এইসব সমস্যাই মিটে যাবে, এমনকী অ্যাটম বোমাও ব্যর্থ হতে বাধ্য।

    ভগবানের সঙ্গে ডারউইন সাহেবেরও নতুন করে ঝগড়া লেগেছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্বের একেবারে গোড়ায় কোপ মেরেছে গত শতাব্দীতে। ডারউইনের মৃত্যু শতবার্ষিকীর বছরে বাইবেলপন্থীরা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছেন। তাঁদের দাবি, যেসব স্কুল-কলেজে ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়ানো হয়, সেখানে বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বও পড়াতে হবে। যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা দুটো দিকই যাচাই করতে পারে। অনেক স্টেটে এই নিয়ে মামলা হয়েছে, টিভিতেও এর প্রচার খুব জোরদার।
     
     আশ্চর্যের ব্যাপার, এই প্রচারে কয়েকজন বৈজ্ঞানিককেও দেখা যায়। তাঁদের বক্তব্য, ডারউইনের মতবাদ অকাট্য নয়, সুতরাং ধর্মীয় তত্ত্বই বা অগ্রাহ্য করা হবে কেন ?
    বিজ্ঞানের ডিগ্রি থাকলেই বৈজ্ঞানিক হওয়া যায় না। বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী   - পশু-পাখি, তরু-লতাসমেত সব কিছু এবং মানুষকে ভগবান আস্ত-আস্ত ভাবে সৃষ্টি করেছেন মাত্র ছ'দিনে। সপ্তম শতাব্দীর এক আর্চ বিশপ বাইবেল থেকে হিসেব করে দেখিয়েছিলেন যে, ভগবানের এই সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন হয়েছিল ঠিক খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার চার সালে। 

    সপ্তদশ শতাব্দীতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ জন লাইটফুট এই হিসেবটি আরও নিখুঁত করেছিলেন। তাঁর মতে প্রথম মানুষের জন্ম হয়েছিল ঠিক খ্রিস্টপূর্ব ৪০০৪ বছরে ২৩শে অক্টোবর সকাল ৯টার সময়। 

    অর্থাৎ মানুষের ইতিহাস মাত্র ছ-হাজার বছরের। সুসভ্য, সুশিক্ষিত, ইংরেজি-জানা ভদ্রলোকেরা এখনও যে এই মতের সমর্থনে বক্তৃতা করতে পারে, তা নিজের কানে না শুনলে বিশ্বাসই করতুম না। ঈশ্বর বিশ্বাস যে মূককেও বাচাল করে দিতে পারে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন