#দুয়ারে_ত্রাণ ২
দুয়েকটি কথা
বিদ্যাসাগর বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে গদ্যকার (প্রবন্ধ সাহিত্যে) বলতে প্রথমেই যাঁদের নাম আসবে, তাঁদের নাম ইদানীং রহস্যময় কারণে অনুল্লেখিত থাকে। কাজী নজরুল ইসলাম এবং সৈয়দ মুজতবা আলী। দুজন দুই ঘরানার গদ্যশিল্পী।
এরপর রাশিয়ান ব্যালে শিল্পীর মতো যিনি গদ্যকে নিয়ে অনায়াসে খেলা করেছেন, সেই অশোক মিত্র, তাঁর একদা প্রায় তিন গুরু-- ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু; সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, রবীন্দ্র ভাবাদর্শী প্রমথ চৌধুরী, কবি শঙ্খ ঘোষ, ঐতিহাসিক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, নাট্যকার উৎপল দত্ত, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, বাংলাদেশের আহমেদ ছফা, আহমেদ শরীফ, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গদ্যকারদের শিক্ষক। বলা ভালো, তর্জনী তোলা বিদগ্ধ অধ্যাপক। অন্নদাশঙ্কর রায়, এস ওয়াজেদ আলি, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল ওদুদ, জসীমুদ্দিন চিরস্মরণীয় নাম। তপন রায়চৌধুরী চমকে দিয়েছিলেন সময়ের ইতিহাস লিখে। তিন বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ি, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, গোলাম কুদ্দুস, গোপাল হালদার, সমর সেন, দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলাই বাহুল্য । কী সব গদ্য লেখন। দীনেশকুমার সেন, আব্দুল করিম অনবদ্য। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ সাহিত্যে কম যান না।
বিশ শতকের পঞ্চাশ দশক পরবর্তী সময়ে ভবানী গুপ্ত, রবীন্দ্র গুপ্ত, ক্ষেত্র গুপ্ত, অরুণ বসু, বিষ্ণু বসু, আরেক অরুণ বসু, বিমল মুখোপাধ্যায় চমৎকার সব লেখা লিখেছেন। বিজিত দত্ত, কৃষ্ণরূপ চক্রবর্তী অল্প কথায় অনেক কিছু বুঝিয়ে দেন। বিনয় ঘোষ, বিনয় সরকার, স্বপন বসু, মুনতাসীর মানুন সম্পূর্ণ এক নতুন ঘরানা। গোলাম মুরশিদ শিল্পললিত গদ্যকার ও ইতিহাসকার। শামসুজ্জামান খান ফোকলোর চর্চার অগ্রণী। দেবেশ রায় উজ্জ্বল সব ক্ষেত্রেই। আর মুজফফর আহমেদ, নীরেন্দ্রনাথ রায়, অমলেন্দু দাশগুপ্ত বিস্মৃত নাম।
শিশিরকুমার দাস, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুণ মুখোপাধ্যায়, অরুণ সোম, আব্দুল জব্বার, সোমনাথ লাহিড়ী, সরোজ দত্ত, ভবানীপ্রসাদ গুপ্তসহ বহু নাম মনে আসছে। সুধীর চক্রবর্তী অবিস্মরণীয়। আরেকজন দেবজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। দুজনেই যেমন বলা। তেমন লেখা। বাউল গবেষণায় আবুল হাসান চৌধুরী, শক্তিনাথ ঝা পথিকৃৎ। ভাষাতত্ত্ব আলোচনায় বহু নাম। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সুকুমার সেন, দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু, পবিত্র সরকার, গিরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, আবদুল হাই, হুমায়ুন আজাদ।
হুমায়ুন আহমেদ বড় ঔপন্যাসিক। স্মৃতিচারণমূলক লেখা মনে রাখার মতো। স্মৃতিকেন্দ্রিক দুটি লেখা আমার মতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ: এক, আগুনপাখি।। হাসান আজিজুল হক। এটা উপন্যাস। তাই এখানে আলোচনা করবো না। দুই, দয়াময়ীর কথা।। সুনন্দা শিকদার। অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ মেদুর মধুর গদ্য কথন।
কী ভালো কী ভালো-- ঋতুপর্ণ ঘোষ হলে বলতেন। কবীর সুমনের 'আলখাল্লা'ও আমার বেশ ভালো লাগে।
বর্তমান সময়ের গদ্যকার বললে বলতেই হবে, জয় গোস্বামী, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসুর নাম।
জয় গোস্বামীর কবিতা বিশ্লেষণ শেখার মতো। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিশেষ কারণে খ্যাতি কুখ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁর চলচ্চিত্র বিষয়ক সমালোচনা পড়ার জন্য আশির দশকে মুখিয়ে থাকতাম। এখনও বই বিষয়ক লেখা খুঁটিয়ে পড়ি। প্রদীপ ঘোষ( ঘোষ!) বসুমতীতে সহজ বাংলায় চলচ্চিত্রের এক দিগন্তের খবর দিতেন আর রজনীগন্ধা গদ্যে রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। গৌতম ঘোষ, অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় চলচ্চিত্র সমালোচনায় উল্লেখযোগ্য নাম।
সুজিত সরকারের কবিতা আলোচনাও আমার ভালো লাগে । সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় কালিঘাট থেকে ঋত্বিক, ঋত্বিক থেকে উত্তমকুমার বা নজরুল-- সবেতেই আলোকবর্তিকা। স্বপ্নময় চক্রবর্তী প্রবন্ধ কম লেখেন। 'সাদা কাক' প্রবন্ধ নয়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত গদ্য। অপূর্ব।
ব্রাত্য বসুর পড়াশোনার জগৎ সুবিশাল। এত পড়েন কখন কে জানে?
বিচিত্র বিষয়ে বৌদ্ধিক ধী-গদ্যে আমাদের মগজে শান দেন, তীক্ষ্ণ শব্দচয়ন ও বসরাই বাতাসিয়া গদ্যের অন্তর্ভেদী লেখনী কৌশলে।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একটু পরে লিখছি।
আপনার মতপার্থক্য থাকলেও গদ্যকার বিষয়ে আলোচনায় এঁদের নাম বাদ দেওয়া একদেশদর্শিতা।
নাটকের মানুষ বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কিশোর সেনগুপ্তের গদ্যও অন্যরকম। কিন্তু তাঁরা প্রায় লেখেনই না ।
বাংলাদেশের আমীরুল ইসলাম, জাকির তালুকদার, মুজফফর হোসেন বেশ ভালো লেখেন। ফারুক ওয়াসিফ এখন বিতর্কিত। গদ্যের হাত কিন্তু চমৎকার। শহীদ ইকবাল ভালো লেখেন।
নবীনদের মধ্যে আমার প্রিয় গদ্যকার শুভময় মণ্ডল, মজিদ মাহমুদ (বাংলাদেশ), সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, আব্দুল কাফি, মাজহারুল ইসলাম, অংশুমান ভৌমিক, পিয়াস মজিদ, অনিমেষ বৈশ্য, ঋজু বসু, শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, মানস ঘোষ, মলয় রক্ষিত, তৌহিদ হোসেন, সাহেবুল হক, শিমুল সেন, অত্রি ভট্টাচার্য, ।
(ষাটের নীচে বা একটু উপরে বয়স হলে নবীন বলা যায় তো! )
ঝরঝরে বাংলা লেখেন প্রচেত গুপ্ত, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। আমাদের বন্ধু ঐতিহাসিক শুভ বসু, চিকিৎসক বন্ধু কৌশিক লাহিড়ী ভালো বাংলা লেখেন। শুভ বসু কত অজানা দুনিয়ার সন্ধান দেন সরস ভঙ্গিতে। তথ্য তত্ত্বের যুগলবন্দি তাঁর লেখা।
আর লিখতেন সুরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। কী ভালো যে লেখা। শুধু দাঁতের ডাক্তারি করে। কেন যে লেখে না। হাসির আড়ালে এক একটি চাবুক। দেওয়াল পত্রিকায় তাঁর জন্ম। দেওয়াল পত্রিকায় শবাসন।
ফেসবুকে সরস বাংলা লেখেন কয়েকজন। সব নাম এখন মনে পড়ছে না। এঁদের অন্যতম দিলীপ ঘোষ, লিয়াকত আলি, অরূপশঙ্কর মৈত্র, কল্লোল বসু।
ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার অমর মিত্র ভালো লেখেন। ফেসবুকে চমৎকার গদ্য লিখছেন কয়েক বছর। অপেক্ষায় থাকি। অশোকেন্দু সেনগুপ্ত, শুভাশিস মৈত্র, অমল সরকার, প্রশান্ত ভট্টাচার্য, প্রবুদ্ধ মিত্র, কণিষ্ক চৌধুরী, সুব্রতা ঘোষ রায়, প্রবীর ঘোষরায়, মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো লেখেন।
সাংবাদিক গদ্যে ঈশ্বর গুপ্ত, অক্ষয়কুমার দত্তের পর বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, সন্তোষকুমার ঘোষ, অশোক দাশগুপ্ত, বরুণ সেনগুপ্ত, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। তুলনায় নবীন রূপায়ণ ভট্টাচার্য, সমৃদ্ধ দত্তঅনিমেষ বসু, সেমন্তী ঘোষ, ঈশানী দত্তরায়, বৈজয়ন্ত চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, প্রেমাংশু চৌধুরী। 'রোববার' সূত্রে পেয়েছি ঋতুপর্ণ ঘোষ, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর লেট, রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে। দুই বিতর্কিত সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায় ও কুণাল ঘোষ দুজনেই পরিষ্কার বাংলা লেখেন। বক্তব্য আপনার পছন্দ নাও হতে পারে।
কুণাল তো একদিনে তিন নামে তিন ধরনের বিপরীত লেখা দিতেন। নিবারণ চক্রবর্তী, অপরাজিতা এবং ভোলানাথ ঘোষ। তিন নাম। চলিত বাংলায় তিনটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী বক্তব্য।
মনে পড়ছে কমল চক্রবর্তীর কথা। অরুণ মিত্র, সরোজ আচার্যের মতো প্রবাদপ্রতিম লেখকের বয়ান।
হামদি বে বাংলায় লিখতেন না, অনুবাদ, কিন্তু খুব ভালো লাগতো -- বে অফ বেঙ্গল। জিষ্ণু উপাধ্যায়, বাহারউদ্দিনও একসময় খুব মন কাড়তেন এবং 'হামলোগ'-এর সমর বসু বা 'ঢেউ গুনছি সাগর'-এর আশাপূর্ণা দেবী। এবং অনবদ্য মহাশ্বেতা দেবী। একটা তখন অতি অপছন্দের কাগজে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সমর বসু, আশাপূর্ণা, মহাশ্বেতা লিখতেন। না কিনেই পড়তে যেতাম। খোসবাগান মোড়ে বাদলদার কাগজের ঠেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। নিয়মিত। আবার কিনে পড়তাম, আজকাল, অশোক মিত্রের পটভূমি এবং অশোক দাশগুপ্তের নানা লেখা, নেপথ্য ভাষণ, বাবুরাম সাপুড়ে নামিত, হিংটিংছট। মতি নন্দী ও শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় দুজন দুই ঘরানার খেলা লেখোয়াড়। পড়তেই হতো (লেখোয়াড়, কৃতজ্ঞতা, মনোরঞ্জন ব্যাপারী। মনোরঞ্জনদা সোজাসাপ্টা লেখেন)।
অশোক দাশগুপ্তের বাংলা অবিকল্প। তুলনারহিত। বাংলা সাংবাদিক গদ্যে একটি বিশিষ্ট নাম।
আরেকজন মেধাবী গদ্যকার চিন্ময় গুহ। তপোধীর ভট্টাচার্যের লেখা পড়তে শিক্ষক লাগে। সমর নাগ খুব কম লেখেন। কিন্তু বাংলা বেশ ভালো।
আমি নিজে বিবেকানন্দ, নজরুল, এবং কিছুটা হাল আমলের রণজিৎ রায়, বরুণ সেনগুপ্ত বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সাধারণ মানুষের মুখের ভাষায় লেখার পক্ষপাতী। যদিও আগের যত জনের কথা লিখলাম, তাঁদের কাব্যিক, মেধাবী গদ্য আমি যত্ন নিয়ে পড়ি। কিন্তু বার তিনেক ছাড়া চেষ্টা করিনি। একবার হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের আত্মজৈবনিক লেখার অনুলিখন করতে গিয়ে তাঁর পুরানো ও নতুন লেখা মেলাতে গিয়ে ওইরকম গদ্য লেখার মকশো করেছিলাম, তাতে হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, আমি নিজেই তো আর আগের মতো আমার করে আমার বাংলা লিখতে পারি না।
লিখিয়ে রাখা উচিত ছিল কথাগুলো। লিখলেই বা রাখতাম কোথায়। এতবার মেস ও বাড়ি বদলাতে হয়েছে! আর একটা কথা, ওই লেখা শেখার পর ছাড়া যে কত্ত কঠিন হয়েছে, মেঠো আটপৌরে গদ্যে ফিরতে।
কবি জয়দেব বসু ও কবি শিবাশিস মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে দুটো পণ্ডিতি কাব্যিক গদ্য লিখেছি। ( দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আমি এ-রকম ভঙ্গিতেই লিখতাম। পাঠক চাইলে জয়দেব বসুকে নিয়ে লেখাটি পড়তে পারেন। সুতো দিচ্ছি। শেষে)।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা, বাগ্মিতা, একটাও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করে বলা এবং তাঁর মিত শব্দ চয়নে লেখা স্মৃতিকথন, ইতিহাস নির্মাণ, সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ আমাকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে। অসীম দাশগুপ্তও বিশুদ্ধ বাংলায় বলতেন। তবে তা চেষ্টিত। মেঠো আটপৌরে বাংলা বলতেন, বক্তব্যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করেও জ্যোতি বসু।
আমার লেখার ভঙ্গি ও শৈলী আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার সম্পূর্ণ বিপরীত। মেঠো কাদামাটির গন্ধ মাখা অনভিজাত। তবু তিনি আমার লেখা পছন্দ করেন জেনে আমি বিস্মিত।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গদ্য পদ্মার অনাবিল অনাবিষ্কৃত ঢেউ, তাতে আছে কত্থকের বাহার, কথাকলির মহিমা, ভরতনাট্যমের ধ্রুপদী ছন্দ, বাউলের লীন লয়, টেরাকোটা ও গথিক ভাস্কর্যের মিশেল। মেলে
বেনারসি শাড়ির সুগন্ধ, তোলাপাড় শাড়ির তোলপাড় সুবাস, রাঢ় বাংলার খাসকানি চালের অ-ঘ্রাণ হাওয়া। খাসকানি চাল চেনেন না? যাকে কলকাতা গোবিন্দভোগ বলে ডাকে!
বিশ্বাস করতে চাইছেন না, শুধু 'আমলার মন' পড়ে একবার দেখুন।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসক না হয়ে শুধু লিখলেও বাংলার সাহিত্য ও ইতিহাসে তাঁর নাম থেকে যেত এবং যাবে।
প্রশাসনিক বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা আমার হয় না। হওয়ার কথাও নয়। যেটুকু কথা লেখালেখি নিয়ে। সমাজ বিশ্লেষণ নিয়ে। বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে। ভালো লেখা পেলে দুজন দুজনকে পাঠাই। ভালো চলচ্চিত্র দেখার প্রস্তাব (সাজেশন) দেন, আমারও ভালো লাগা ছবি দেখতে বলি। বিশেষ করে মুঘল আমলে মহিলাদের প্রভাব বুঝতে তিনি 'দ্য এম্পায়ার' ছবিটি দেখতে বলায় আমি কৃতজ্ঞ।
১২ অক্টোবর ২০২৫ সরাসরি কথা বলতেই হল, বানারহাট কার্গিল বসতিতে ৪৫-৫০ টি পরিবার আছে। তাঁদের বাসনকোসন হাঁড়ি কুঁড়ি দরকার-- সে নিয়ে। আমরা ভেবেছিলাম, প্রেসার কুকার দেবো। এক বন্ধু বারণ করলেন, কাঠের আগুনে প্রেসার কুকার কি ঠিক হবে? আরেক বন্ধু পরামর্শ দিলেন, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলে দেখুন না। যদি কিছু হয়।
আমি রাত ১০টায় বার্তা পাঠানোর দু মিনিটের মধ্যেই জানালেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
১৩ অক্টোবর সকাল আটটার সময় দেখি একাধিক ভিডিও। বাসনকোসন সমেত যা কিছু প্রয়োজন কার্গিল বসতির মানুষ পেয়েছেন। এলাকার মানুষরাই ভিডিওতে বলছেন। এঁদের কয়েকজন আমাদের চেনা। ত্রাণ দিতে গিয়ে দেখেছি। বিডিও নিজে ওখানে গেছেন।
আমি আগেও খুব বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, মুখ্যসচিব থাকাকালীনও, একটা বার্তার উত্তর দিতে দু মিনিটের বেশি সময় নেননি।
এত ব্যস্ততার মধ্যে কী করে পারেন?
আমি তো পারিই না একদম। হয়তো দেখাই হয় না সবসময়, সব বার্তা। সে-নিয়ে বন্ধুদের নানা অনুযোগ।
একজন অতি ব্যস্ত মানুষ কীভাবে পারেন? দু মিনিটে উত্তর দিতে।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সব আমলেই কেন গ্রহণযোগ্য তার একটা বড় কারণ, আমার মতে -- তিনি অত্যন্ত কর্মদক্ষ এবং মনোযোগী মানবিক প্রশাসক, আমার মতো সাধারণ মানুষদের কথাও শোনেন, জানেন; মাটির সঙ্গে গভীর যোগাযোগ এবং নতুন চিন্তা করার সাহস দেখান।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় একজন খুব ভালো গদ্যকার, এবং সুদক্ষ প্রশাসক।
ভিন্নমত হলেও এটুকু বোধহয় মানতে আপত্তি হওয়ার কথা নয়।
বিধিসম্মত সতর্কতা: আমি কেবল প্রবন্ধ গদ্য নিয়ে লিখেছি।
গল্প উপন্যাস চিত্রনাট্য নাটক নিয়ে নয়।
আর যদি অন্য কোনও নাম মনে পড়ে, বলবেন।
প্রবল ছুটোছুটির মধ্যে, এই, অসন্তুষ্ট বিদ্বিষ্ট সময়ে কিছু লিখলেই সমস্যা।
তবু মনে হল, লেখা উচিত।
লিখলাম। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকলে বলবেন। অকারণ বিদ্বেষ দেখাবেন না আশা করি।
সংযোজন: পাঠক পড়তে পারেন
অরুণ নাগ, চিত্রিত পদ্মে
অশোক মিত্র, তিন কুড়ি দশ
ভবতোষ দত্ত
অনুস্মৃতি / পাবলো নেরুদা অনুবাদ ভবানীপ্রসাদ দত্ত।। অবিশ্বাস্য ভালো অনুসরণ
শবনম/ দেশে বিদেশে: সৈয়দ মুজতবা আলী
মণীন্দ্র গুপ্ত : অক্ষয় মালবেরি
অশোক মিত্র : আপিলা চাপিলা
সুকুমার সেন : দিনের পরে দিন যে গেল
হায়দার আকবর খান রনো: শতাব্দী পেরিয়ে
আহমেদ রফিক :
একজীবনে যাদের সঙ্গে : আমীরুল ইসলাম
বাংলাদেশের রঙ্গ সমগ্র : শামসুজ্জামান খান
কলিকাতার পুরাতন কাহিনি ও প্রথা : মহেন্দ্রনাথ দত্ত
প্রবাদের গল্প : বাসুদেব ঘোষ
অমূল্যভূষণ বিদ্যারত্ন রচনাবলী
স্মৃতিময় প্রীতিময় : ফরিদুর রেজা সাগর
মধ্যযুগের কবি ও কাব্য : শঙ্করী প্রসাদ বসু
অলস দিনের হাওয়া : সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
অগোছালো অক্ষর মিছিল : শ্যামল চক্রবর্তী
মণিমুক্তোর দিনরাত্রি : প্রচেত গুপ্ত
হিয়া টুপটাপ জিয়া নস্টাল : শ্রীজাত
হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে নয় রাত : মাজহারুল ইসলাম
সেকাল একাল : রবীন সেন
রণবাউল ( সমর বাওড়া)
অর্ধেক জীবন: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
অকপটে : সমরেশ মজুমদার
অফ দ্য রেকর্ড : সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়
আমলার মন: আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়
দাঙ্গার ইতিহাস : শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আমার পাওয়া শান্তিনিকেতন : শিশিরকুমার ঘোষ
মংপুতে রবীন্দ্রনাথ : মৈত্রেয়ী দেবী
পায়ে পায়ে পাঁচালি
রাঢ় বাংলার একটি গ্রামের আত্মকথা : বীরেন্দ্রকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
শিকড়ে শাখায় : শান্তিসুধা মৈত্র/ সুছন্দা লাহিড়ী
বন্দরের সান্ধ্যভাষা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
সব নাম আপাতত মনে পড়ছে না। পরে লিখবো। পাঠক বইগুলো পড়তে পারেন।
তালিকা অবশ্যই অসম্পূর্ণ। যোগ করতে পারেন
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।