“হেই সামালো ধান হো
কাস্তেটা দাও শাণ হো
জান কবুল আর মান কবুল
আর দেব না আর দেব না
রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো।।”
সলিল চৌধুরী যখন এই গান লিখছিলেন এবং তা সুর করে জনতার মাঝখানে ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন, তখন হয়তো ভাবেননি তাঁরই গান ২০২১ সালে এসেও সমান জনপ্রিয় থাকবে এবং সমসাময়িক রাজনীতির সাথে মিলে যাবে।
সমবেত সাংস্কৃতিক কণ্ঠ মৌলালী’র রামলীলা পার্কে একটি ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক উদ্যোগ নিল সম্প্রতি। ১৯ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়ে কর্মকাণ্ড চলল ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে এই উদ্যোগটিতে শামিল ছিল বাংলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল। মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা প্রসূন দাস বললেন, “শেষ কয়েক বছরে বাংলার সংস্কৃতির উপর এইরকম ফ্যাসিবাদী আঘাত আসেনি। প্রতিনিয়ত বাংলার সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের যে ভাবনা সারা ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে, তার থেকে বাদ যাচ্ছে না আমাদের বাংলাও। কিন্তু আমাদের বাংলা নজরুল-রবীন্দ্রনাথের বাংলা, বাঙালির এই সংস্কৃতির সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। তাকে নষ্ট করে দেওয়ার যে চক্রান্ত তার বিরুদ্ধে আমাদের এই উদ্যোগ। বাংলায় খুব ভাবনা-চিন্তা করে যারা ফ্যাসিস্ত আরএসএস-বিজেপিকে জায়গা করে দিচ্ছেন, তাঁরা আপামর বাঙালির ভালো চান না।”
গোটা রামলীলা পার্ককে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল ফ্যাসিস্ত বিরোধী পোষ্টারে। মাঠের একদিকে ছিল লিটল ম্যাগাজিনের স্টল। উদ্যোক্তাদের অন্যতম অরিজিৎ চক্রবর্তীর কথায়, “প্রথমে যখন এই উদ্যোগটি নেয়া হয়, মাত্র কয়েকটি দল থাকলেও ক্রমশ ২০টিরও বেশি সংগঠন উদ্যোগের অংশীদার হয়ে ওঠে। তাছাড়া মৌসুমী ভৌমিক, অসীম গিরি, বিপুল চক্রবর্তীর মত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এই উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আয়না নাট্যগোষ্ঠী, ব্রীহি, বই-চিত্র, প্রতিচ্ছবি, দৃশ্যান্তর, থ, পথসেনা, জনগণমন সহ অনেকগুলি দল এই উদ্যোগের সাথে জড়িত। সারা বাংলা জুড়ে যেভাবে ফ্যাসিস্ত আগ্রাসন শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধেই আমাদের এই লড়াই। আগামী দিনে এই আন্দোলনকে আমরা কলকাতার বাইরে অন্যান্য জেলা ও গ্রামে পৌঁছে দিতে চাইছি প্রবলভাবে। এই দুঃসময়ে আমরা গুটিকয়েক সাংস্কৃতিক কর্মী ফ্যাসিবাদী হামলাকে প্রতিহত করতে পথে নেমেছি। জোট বাঁধার জন্য নাট্যকর্মী, সঙ্গীত শিল্পী, আবৃত্তিকার, লোকশিল্পীরা গড়ে তুলতে চাইছি সমন্বয়ধর্মী সাংস্কৃতিক মঞ্চ। গানে, কবিতায়, নাটকে, নৃত্য উপস্থাপনায় তুলে ধরতে চাইছি বাংলার জনসংস্কৃতির ইতিবাচক ধারাকে।”
১৯ ফেব্রুয়ারি কোরাসের গান, অশনি নাট্যমের শতবর্ষে বিদ্রোহী পরিবেশিত হয়। সংগীত পরিবেশন করেন নীতিশ রায়, বিপুল চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়। আয়না পরিবেশন করে তাদের নাটক ‘রৌরব’, দৃশ্যান্তরের নাটক ‘ঘরে ফিরবে প্রহ্লাদ’। শেষে গান পরিবেশন করেন সাত্যকি ও বর্ণ অনন্য। ২০ তারিখ ছিল অসীম গিরির গান, থ পরিবেশন করে নাটক বেগুন। এছাড়াও গান করেছিলেন মৌসুমী ভৌমিক, সঙ্গে সাত্যকি। পরে ফালতু উপস্থাপিত করে নাটক পথসেনা। ফকিরি গান পরিবেশন করেন খইবুর ফকির। ২১ তারিখ করম নাচ, ছৌ নাচ সহ রূপকথার গান ও কবিতার কোলাজ, বহরমপুরের ব্রীহির নাটক- আমি পৃথা, জনগণমন আর গণবিষানের গান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনার পাশাপাশি লিটল ম্যাগাজিনের স্টলও ছিল। সেখানে অংশগ্রহণ করে গুরুচণ্ডা৯, অনীক, মাতৃভাষা, নিষ্পলক এর মতো ছোট কাগজ ও প্রকাশনীগুলো। ফ্যাসিবাদকে রুখে দেওয়ার জন্য ছোট কাগজ ও তাতে প্রকাশিত লেখা অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে, এমনটাই মনে করেন সমবেত সাংস্কৃতিক কণ্ঠের উদ্যোক্তারা। কলকাতায় এই উদ্যোগ শুরু হলেও আগামী দিনে তা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা থেকে গ্রামে। তবে এই মুহূর্তে তাঁদের এ ছাড়া বিস্তারিত পরিকল্পনা নেই। রামলীলা পার্ক এলাকায় এই আয়োজনে শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ অংশের মানুষের যোগদান বেশ লক্ষ্যণীয়। কাছাকাছি এলাকার সংখ্যালঘু নাগরিকদের যোগদানও ছিল ভালো।
আর কিছুদিন পরেই এই রাজ্যে ভোট। তার আগে সারা রাজ্যেই ডান-বাম সব পক্ষই নানা মঞ্চ গড়ে তুলে পরোক্ষভাবে ভোটের প্রচার-ই করছে। বিভিন্ন মঞ্চের হিসেব থেকে দেখলে আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে প্রচারের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। সেই প্রচার ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে জানা নেই, তবে বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার জন্য যে লড়াই চারদিকে চলছে, তা ভোট পরবর্তী সময়েও বাঙালির মেরুদণ্ড ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
বয়স এবং স্থান দূরত্ত্ব এইসব কারণে যদিও যোগদান করতে পারছি না ।।.সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং সমর্থন রইলো আপনাদের এই কর্মকান্ডের প্রতি !!স্বাধীনতা উত্তর ভারতে এতো বড় সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিপর্যয় এর আগে দেখা যায় নি !!কারা এর জন্য দায়ী ।..ওসবে না গিয়ে বলবো .....দুর্দমনীয় প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ প্রয়োজন !!! লড়াই শুরু হোক আবার .....!!
সমবেত সাংস্কৃতিক কন্ঠের তিন দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক উদ্যোগের সংবাদ পরিবেশন করার জন্য গুরুচন্ডালীকে আন্তরিক অভিনন্দন