১১ জানুয়ারি দেশের সুপ্রিম কোর্ট নতুন কৃষি আইন স্থগিতের কথা বললেও দিল্লির সিংঘু বর্ডার থেকে আন্দোলন বন্ধ বা বাতিলের কোনও খবর নেই। দেশের অন্যান্য প্রান্তেও আইন বিরোধী কর্মসূচি জোরদারভাবে চলছে।
এর মাঝেই বাংলার বীরভূম জেলার রামপুরহাটে কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে গঠিত ধর্নামঞ্চ পঞ্চমদিন অতিক্রম করেছে। সোমবার এই আইনের বিরুদ্ধে রামপুরহাটে ট্রাক্টর মিছিল সংগঠিত করে ধর্নামঞ্চের উদ্যোক্তা ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’। শ’খানেক ট্রাক্টর ও প্রচুর কৃষক এবং কৃষকদের সমর্থনে অন্যান্য পেশার মানুষেরা যোগ দিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কৃষি আইন বাতিল না হলে তাঁরা যে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেবেন না তা বুঝতে বাকি নেই।
‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চে’র পক্ষে তন্ময় ঘোষ বললেন, “আমাদের ধর্নামঞ্চের আজ পঞ্চমদিন। সুপ্রিম কোর্ট এই আইনের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিলেও আন্দোলন প্রত্যাহারের কোনো প্রশ্নই নেই। আগামী দিনগুলিতে এই আন্দোলন ব্লকস্তরে নিয়ে যাওয়া হবে।”
কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আসা নানা বিপত্তির মধ্যেও প্রায় দেড় মাস ধরে দিল্লির সিংঘু বর্ডারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা। দেরিতে হলেও এর আঁচ বাংলায় এসে পড়েছে। প্রথমে রামপুরহাট এবং পরে কলকাতার বুকে ধর্মতলায় গণধর্না মঞ্চ তৈরি হয়েছে।
রামপুরহাটে ৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় লাগাতার ধর্না। ভাঁড়শালা মোড় থেকে পদযাত্রা করে এসে রামপুরহাট পাঁচ মাথা মোড়ে শুরু হয় এই ধর্না কর্মসূচি। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের রাজ্য সভাপতি সামিরুল ইসলাম, রাজকুমার ভুঁইমালী, সুদীপ দাস, বদিউজ্জামান-সহ প্রায় ৫০০ জন মানুষ এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। মিছিলে পা মেলান কৃষকেরা। ধর্নামঞ্চ থেকে কৃষি আইন ও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেয়া হয়। মঞ্চের নেতা তন্ময় ঘোষ আরও বলেন, “পাঞ্জাব ও বাংলার কৃষকদের চাষাবাসের প্রেক্ষিত কিছু ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে, কিন্তু মূল সমস্যা একই। পাঞ্জাবের কৃষকরা এই আইন সম্পর্কে প্রথম থেকেই ওয়াকিবহাল ছিল কিন্তু বাংলার কৃষকরা দেরিতে হলেও এখন তা বুঝতে শুরু করেছে বলেই রাস্তায় নেমে এসেছে। এই আন্দোলন ধীরে ধীরে অন্যান্য স্থানে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাবে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ।”
পঞ্চম দিনের ধর্না আন্দোলনে ট্রাক্টর মিছিলে কৃষকদের পাশাপাশি অন্যান্য পেশার মানুষেরাও এসেছিলেন। এসেছিলেন জনজাতি অংশের মানুষেরাও। মিছিলে গান গেয়েছেন সাধারণ মানুষ। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের রাজ্য সভাপতি সামিরুল ইসলাম বলেছেন, “কৃষকদের জন্য আইন হলেও কৃষকেরা এই আইন চাইছেন না, এরপরেও কেন বিজেপি সরকার এই আইন প্রত্যাহার করছে না স্পষ্ট, কারণ আইন বানানো হয়েছে আম্বানি-আদানিদের জন্য। এই লড়াই শুধুমাত্র কৃষকদের না, সাধারণ মানুষেরও। কারণ এই আইনের জেরে কৃষকের পাশাপাশি আম-জনতা বিপুলভাবে আক্রান্ত হবেন।”
২০২১’র ভোটের বাজারে এই মঞ্চকে ব্যবহার করার প্রয়াস হতেই পারে। এই বিষয়ে তন্ময় ঘোষ জানান, “বাংলায় বিজেপিকে ভোট না দেয়ার যে মঞ্চ তৈরি হয়েছে তার অন্যতম সংগঠক বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ। আমরা এই মঞ্চকে ভোটের মঞ্চ হিসেবে এই মুহূর্তে ব্যবহার করতে নারাজ তবে আপামর জনগণ জানেন তাঁদের মূল দায়িত্ব কী, এবং আমরাও সেই কথা প্রচারে আনব।”
রামপুরহাটের ধর্না মঞ্চের সঙ্গে কলকাতার ‘অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি’র-ও যোগাযোগ রয়েছে। দুই মঞ্চের প্রতিনিধিরাই অন্য মঞ্চে আসা-যাওয়া করবেন। ২৬ জানুয়ারির মধ্যে আইন প্রত্যাহার না হলে বীরভূম, মালদা এলাকায় বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ ‘লং মার্চ’ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। আপাতত এই মঞ্চের আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রামগুলিকে একজোট করার পরিকল্পনা চলছে। গ্রামে গ্রামে আন্দোলনের তেজ পৌঁছে গেলে তা আরও জোরদার হবে এই পরিকল্পনাই করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য লিফলেট, ছোট ছোট তথ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
২০২১ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকেরা ট্রাক্টর র্যালিসহ নানা পরিকল্পনা করছেন, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে কর্মসূচি চলছে তার সাথে নতুন সংযোজন এই মঞ্চ। বলাই বাহুল্য এখানে শুধু কৃষক নয়, আপামর নানান মানুষের মিলনভূমি হয়ে উঠছে এই কৃষি আইন বিরোধী ধর্না মঞ্চ, যা নতুন পথ রচনা করতে চলেছে বাংলা জুড়ে।
দারুণ!
অসাধারণ খবর। খুব আনন্দ হল।
"কারণ এই আইনের জেরে কৃষকের পাশাপাশি আম-জনতা বিপুলভাবে আক্রান্ত হবেন।”
--এই কথাটি স্পষ্ট করে বলার জন্যে 'বাঙলা সংস্কৃতি মঞ্চকে ধন্যবাদ। অনেকেই এই আন্দোলনকে " ্শুধু ধনী কৃষকদের আন্দোলন" ভেবে দূরে সরে রয়েছেন।