গত প্রায় দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাসের অতিমারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করেছে, জীবনের নানান দিক আর আগের মতন নেই | প্রাণঘাতী এই বিশ্বব্যাপী অতিমারী না হয় একরকম, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরেকটি অতিমারী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, সেটি তথ্যবিভ্রান্তির অতিমারী। বিশেষ করে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের টিকা, এবং টিকা দেওয়া-নেওয়া নিয়ে নানান রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য চোখে পড়ছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি নিয়ে এই আলোচনা। প্রতিটি “ভ্রান্ত ধারণা” (“মিথ”) আমরা প্রথমে উল্লেখ করে তারপর সেটিকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি।
(১) মিথ - “টিকা নিয়ে যে ট্রায়াল হয়েছে তাতে মৃত্যু বা সংক্রমণ রোধ করা নিয়ে কোনো প্রমাণ নেই১”
এই দাবিটি ঠিক, মনে হয় না নানা কারণে। প্রথমত, আধুনিক কালে মানুষের শরীরের ওপর কোন গবেষণা কেউই Human Ethics Committee'র শ্যেনচক্ষু পরীক্ষায় পাস না করে করতে পারেন না, কাজেই যাচাইকাণ্ডের ছক যদি গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুর আশঙ্কা না কমানোর ব্যাপার না থাকে, কেউ গবেষণা শুরুই করতে পারেন না। দ্বিতীয়ত, গবেষণার ফলাফল পেশ করার সময়েও এই বিষয়গুলো লিখতেই হয়। তৃতীয়ত, যে সময়ের কথা বলা হয়েছে , অক্টোবর, তখন interim result বেরিয়েছিল, দ্রুত পরীক্ষার রিপোর্ট পেশ করার তাগিদে। এখন ২০২১ এর মে মাসে কিন্তু মোটামুটি জানা যাচ্ছে যে টিকা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ (অন্তত ভাইরাস সংক্রমণের চেয়ে তো বটেই)| আরেকটু বিশদে জানতে হলে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের একটি নথিপত্র রয়েছে২, কী ধরণের এন্ডপয়েন্ট এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে টিকাটিকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন দেশে তার সম্যক ধারণা পাওয়া যেতে পারে খানিকটা।
সহজ করে বললে যে কোনো নিরাপদ ও কার্যকরী টিকা-ই দুইভাবে প্রতিরোধ করে, এক, প্রত্যক্ষ প্রতিরোধ সবথেকে বেশি ‘রিস্ক’ যাদের তাদের টিকা দেওয়া যাতে আক্রান্ত না হন, আর দুই, পরোক্ষ, যারা এই হাই-রিস্ক মানুষের সংস্পর্শে আসবেন তাদের টিকা দেওয়া যাতে সংক্রমণ ছড়ায় কম৩। কোভিড-১৯এর জন্যেও পশ্চিমা দেশের ভ্যাকসিন রোল-আউট প্ল্যান এইসমস্ত মাথায় রেখেই করা হয়েছে। আর এটাও বলে রাখা উচিত যে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এফিকেসি আর বাস্তব জগতের এফিসিয়েন্সি এক নয়, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আরও অনেক প্রভাব থাকতে পারে যা ট্রায়ালে কন্ট্রোল করা শক্ত । তবে, সমস্ত টিকার-ই বাস্তব কার্যকারিতা মাপার জন্য টিকাকরণের পরেও অনেকদিন পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা চলে যাতে সেই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখা যায় যা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সম্ভব নয় - যেমন, প্রত্যেকটি বয়স বা কো-মর্বিডিটি গ্রূপে টিকা কতোটা কার্যকরী (সাবগ্রূপ-স্পেসিফিক এফিকেসি), বিকল্প টিকাকরণ-শিডিউলের প্রভাব, টিকাকরণের পর কতোদিন প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে এবং নিত্যনতুন ভেরিয়েণ্ট-দের মোকাবিলা করার ক্ষমতা। আশার কথা, পৃথিবীর একাধিক দেশ একসাথে এই কাজগুলো করছে, যেমন হু-এর সলিডারিটি ট্রায়াল, আবার সদ্যপ্রকাশিত একটি আর্টিকেলে দেখানো হয়েছে ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দুটো ডোজের পরে নতুনতম ভ্যারিয়েন্টের (B.1.617.2) বিপক্ষে কার্যকারিতা বেশ বেশি৪।
(২) মিথঃ “জিন নিয়ে নাড়াচাড়ার (ম্যানিপুলেশন) মাধ্যমে তৈরি এটি, জিনটিকা, অতএব ভয়ঙ্কর?”
mRNA-র কথাই ধরা যাক, যা ফাইজার ও মডার্নার টিকার মূল উপাদান - যা থেকে এই বিভ্রান্তি বা আশঙ্কার উৎপত্তি যে বুঝি mRNA জিন-কেই বদলে দিয়ে ভয়ঙ্কর কিছু করে ফেলবে শরীরে। সাধারণ মানুষের ভয় অমূলক নয়, তবে একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞকেও এই কথা লিখতে দেখলে আশ্চর্য লাগে, আশঙ্কা হয়।
কী সেই mRNA? সহজে বললে, mRNA অর্থাৎ messenger RNA এমন একটা জিনিস যা আমার-আপনার সবার দেহে সমস্ত কোষে আছে। আমাদের কোষগুলিতে অন্ততঃ ২০০,০০০ মেসেনজার আর-এন-এ প্রতিনিয়তঃ খেটে যাচ্ছে উৎসেচক (এনজাইম) ও প্রোটিন তৈরি করতে, যা বাঁচিয়ে রাখছে আমাদের।
এই mRNA কী নিরাপদ? ২০১৩ সালের একটি গবেষণা পত্রে৫ কী বলছে দেখা যাক?
"When compared with viral vectors or plasmid DNA, mRNA is safe, as it lacks genomic integration capacity and only results in transient expression of the encoded protein." [লিন্ট ও অন্যান্যরা, হিউম্যান ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনোথেরাপি জর্নল, ২০১৩]
তাহলে mRNA-র ভূমিকা কী? সহজে বললে mRNAর ভেতর থাকে প্যাথোজেনের (এক্ষেত্রে করোনা-ভাইরাসের) সঙ্গে লড়ার জন্য একটি বিশেষ অ্যান্টিজেনের জিন-কোড বা নকশা, যা থেকে আমাদের শরীর, অর্থাৎ ‘হোস্ট’ বানিয়ে নিতে পারে একটি দরকারি প্রোটিন-যৌগ, আর সেই যৌগ-ই প্রতিরোধের ক্ষমতা দেয় আমাদের শরীরে। একবার এই প্রোটিন তৈরি হয়ে গেলে সেই নকসার প্রয়োজন ফুরোয়, আমাদের শরীর তখন নষ্ট করে ফেলে mRNA-টিকে। মানুষের কোষে mRNA-র হাফ-লাইফ, অর্থাৎ বর্তমান পরিমাণ থেকে অর্ধেক হয়ে যাওয়ার সময় মাত্র কয়েকটি দিন৬।
কাজেই এ বাবদেও যে জিন প্রযুক্তি নিয়ে খুব ভীত হবার কিছু আছে বলে মনে হয় না। অন্ততঃ এই টেকনোলজি ১৯৮৯ থেকে বহু গবেষক ব্যবহার করছেন, হয়ত করোনাভাইরাসের এই ভয়ঙ্কর মহামারী না এলে এতটা ব্যাপক হারে ব্যবহার হত না।
(৩) মিথঃ “টিকা নিয়ে বিপদের ইতিহাস খুব কম না।”
টিকা নিয়ে বিপদের ইতিহাস নেই তা নয়, তবে সে ইতিহাস একে পুরোনো আর দুয়ে কিছুটা হলেও অতিপল্লবিত তো বটেই। যেমন পোলিও টিকার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ‘কাটার ইনসিডেন্ট৭’। সেই ঘটনার পরে কেটেও গেছে অনেকদিন, আর যে দেশে এই কাটার ইন্সিডেন্ট ঘটে, অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাতে এর প্রভাবেই চালু হয় ফেডারেল রেগুলেশন, যার ফল আজকের টিকা - নিরাপত্তার নিরিখে যা “unmatched by any other medical product”।
আর টিকা না দেওয়ার ফলে বিপদ? ১৯০৮ সালে পোলিওভাইরাস শনাক্ত করার এক দশকের মধ্যেই শুধু নিউ ইয়র্কেই মারা যান ২৪০০ মানুষ যার অধিকাংশ-ই শিশু, আর হাজারের উপর মানুষ পঙ্গু হন পোলিওয়। ১৯৫০-এ গ্রীষ্মে পোলিও আউটব্রেকে আক্রান্ত হন দশ হাজারের ঘরে মানুষ, প্রাণ হারান শয়ে শয়ে। সেই সময়ের আমেরিকায় পোলিওর ভয় ছিলো পারমাণবিক বোমার পরেই দ্বিতীয় স্থানে৭। সেই ভয়ঙ্কর অসুখ আজ প্রায় গোটা পৃথিবীতে নির্মূল, আমাদের দেশ-ও ২০১৪ থেকে সরকারিভাবে পোলিও-মুক্ত।
আর শুধুই কি পোলিও? ইতিহাসে টিকা নির্মূল বা প্রায়-নির্মূল করে ফেলেছে এমন রোগের তালিকা শুনুন। ১৭৯৬-সালে এডয়ার্ড জেনার টিকা আবিষ্কার করেন স্মলপক্সের (গোবসন্ত)। তার প্রায় একশো বছর পরে টিকা বেরোয় কলেরা, প্লেগ, টাইফয়েড ও জলাতঙ্কের। ১৯২০’র দশকে টিকা বেরোয় হুপিং কাফ (Pertussis), ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, bacille Calmette-Gu´erin against tuberculosis, ১৯৩০-এ, ইয়েলো ফিভার, ইনফ্লুয়েনজা, রিকেট, আর বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সেল-কালচারের হাত ধরে, পোলিও, মিজলস, মাম্পস, রুবেলা, চিকেনপক্স (varicella), হেপাটাইটিস এ, বি ইত্যাদি। কতো রোগের নাম-ই মানুষে প্রায় ভুলতে বসেছে শুধুমাত্র টিকার দৌলতে৮ [৮]।
(৪) মিথঃ “নোবেল লরিয়েট বলেছেন টিকার ফলেই নিত্যনতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব৯”
আচ্ছা, যদি বলা হয় ভারত-চিন সীমান্তে সৈন্যবাহিনী আছে বলেই ঝামেলা হচ্ছে এবং আমেরিকা-কানাডার বর্ডারে কোনো সেনা নেই তাই কোনো ঝামেলাও নেই, এই কথাটা কি ঠিক হবে? যুক্তিটা ভুল, এই সম্ভাবনা প্রবল। ঝামেলা আগে থেকে আছে তাই সেনা রয়েছে, আমেরিকা-কানাডার বর্ডারে ঝামেলা নেই তাই সেনাও নেই।
একটা কোভিড ভ্যারিয়েন্ট (ঝামেলা) তখনই তৈরি হবে যখন সেটা কোষের মধ্যে রেপ্লিকেট করবে, এবার যদি অ্যান্টিবডি (সেনা) সেই কোষের মধ্যে ভাইরাসের ঢোকার সংখ্যা কমিয়ে দেয় তাহলে ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হবার চান্সও তো কমে গেল, কিন্তু যার শরীরে আপতত কোনো অ্যান্টিবডি নেই তার শরীরে যথেচ্ছ ভাইরাল রেপ্লিকেশনের ফলে ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হবার সুযোগ তৈরি হলো। যদি বলা হয় যে প্লাসমা থেরাপির পর এই ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, যার প্লাসমা থেরাপি হলো সে নিশ্চয় ক্রিটিকাল অবস্থায় ছিল, মানে সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এবার সে কী করে পপুলেশনে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়ালো? যদি প্লাসমা থেরাপি দেবার পর এই ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয় তবে সেই অবস্থায় যে রুগি সে তো সর্বোচ্চ সাবধানতা মধ্যে ছিল, তার থেকে কারও শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা ক্ষীণ, অথচ পপুলেশনে এই ভ্যারিয়েন্ট গুলোই ডোমিনেন্ট দেখাচ্ছে। এর একটা মানে দাঁড়ায় যে এই ভ্যারিয়েন্টগুলো আগে থেকেই পরিবেশে ছিল। যারা এই ভ্যারিয়েন্ট গুলো দিয়ে ইনফেকটেড হলো তাদের কিছু অংশ হাসপাতালে ভর্তি হলো কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হবার পর এই ভ্যারিয়েন্টগুলো তৈরি হলো এবং তারপর তারা ভ্যারিয়েন্ট পপুলেশনে ছড়ালো সেটার সম্ভাবনা তুলনায় অনেক কম।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নি যে অ্যান্টিবডির জন্যেই এইসব ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছে তবে অ্যান্টিবডি তৈরি তো আমাদের শরীরে টিকা দেওয়া হোক, কি না হোক, কোভিড-১৯ ইনফেকশন হলে সেটা এমনিতেই হবে, যে কোনো ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধেই হবে, এটাই তো ন্যাচারাল রেসপন্স। অথচ, এখন যতো ভ্যারিয়েন্ট দেখা আসছে তাদের সিংহভাগ ভারত, কিংবা ব্রাজিল থেকেই বেরোচ্ছে কিন্তু টিকা তো সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে ইজরায়েল, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, এবং আরও ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে। তবে সেখান থেকে বর্তমানে কোভিড ভ্যারিয়েন্ট বেরোচ্ছে না কেন? বেরোচ্ছে না তার একটা কারণ হলো, টিকা ভ্যারিয়েন্ট তৈরির জন্য মুখ্য ফ্যাক্টর নয়। ইনফেকশনের হার যতো বেশি হবে ততোধিক ভাইরাল রেপ্লিকেশন হবে এবং ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হবার সম্ভাবনা বাড়বে।
(৫) মিথঃ বাস্তবে কি টিকা মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতা রোধে কার্যকরী? অন্য দেশের তথ্য কী বলছে?
টিকা কতোটা ‘কার্যকরী’ - এই প্রশ্নটার মধ্যে লুকিয়ে আছে আরেকটা প্রশ্ন, ‘কার্যকরী’ মানে কি? কিসের বিরুদ্ধে কার্যকরী? সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা, গুরুতর অসুস্থতা, না মৃত্যু? এ ছাড়াও মানুষের মনে দ্বিধা থেকেই যায়, ক্লিনিকাল ট্রায়ালের যে জনগোষ্ঠীর উপরে টিকা পরীক্ষিত, তা কি বাস্তবের বিপুল জনগণের ক্ষেত্রেও একই রকমের ‘কার্যকরী’?
কিছুটা উত্তর পাওয়া যেতে পারে ইজরায়েলের দিকে তাকালে, যে দেশে ডিসেম্বর ২০২০ থেকে উনিশে এপ্রিল, ২০২১ অব্দি চার মাসে ১০ মিলিয়ন (অর্থাৎ এক কোটি) টিকা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে সম্পূর্ণ জনসংখ্যার ৫৪% ও ৫০-উর্ধ্ব জনসংখ্যার ৮৮% দুইটি ডোজ-ই পেয়েছেন। অবশ্যই ইজরায়েলের এতো দ্রুত টিকাকরণের নেপথ্যে অনেক কারণ আছে, তা সে দেশের অল্প জনসংখ্যাই হোক বা তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নতি বা কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বোঝাপড়া - যার সবকটিই আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবুও, টিকার বাস্তব কার্যকারিতার অত্যন্ত আশাজনক ছবি ফুটে উঠছে এখনো অব্দি পাওয়া তথ্য থেকে।
ইজরায়েলের টিকা রোল-আউট শুরু হয় কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের সময়, যখন দৈনিক নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিলো ৮,২৩৮ - আর এপ্রিল ১৯-এ সেই সংখ্যাটিই নেমে আসে মাত্র ১৪৯-এ (দুটি সংখ্যাই সাত-দিনের চলমান-গড়, অর্থাৎ মুভিং অ্যাভারেজ)। শুধুই কি তাই? কার্যকারিতার সবকটি মাপকাঠি-ই, গুরুতর অসুস্থতা অথবা মৃত্যু, ঘোরাফেরা করছে ৯৫%-এর উপরে। ল্যান্সেটের প্রকাশিত গবেষণাপত্র১০ থেকে পাওয়া যাচ্ছেঃ
“Adjusted estimates of vaccine effectiveness at 7 days or longer after the second dose were 95·3% (95% CI 94·9–95·7) against SARS-CoV-2 infection, 91·5% (90·7–92·2) against asymptomatic SARS-CoV-2 infection, 97·0% (96·7–97·2) against symptomatic SARS-CoV-2 infection, 97·2% (96·8–97·5) against COVID-19-related hospitalisation, 97·5% (97·1–97·8) against severe or critical COVID-19-related hospitalisation, and 96·7% (96·0–97·3) against COVID-19-related death”
খুব সহজ করে বললে, আর কিছু না হোক, এই একটি দেশের টিকার সাফল্য আমাদের আশা দেখায় যে জনসংখ্যার একটা বড়ো অংশ-কে টিকাদানের মাধ্যমে করোনার ভয়ানক মৃত্যুমিছিল-কে কিছুটা রুখে দেওয়া সম্ভব। সম্ভব স্বাভাবিক জীবনচর্যায় ফিরে আসা, যেমন এপ্রিল মাসেই ইজরায়েলে খোলা জায়গায় মাস্ক পরার নিয়ম শিথিল করা হয়েছে, তুলে নেওয়া হয়েছে দেশজোড়া লকডাউনের বিধিনিষেধ।
(৬) মিথঃ টিকা নেওয়া সত্ত্বেও আরেকটি ওয়েভ আসছে - তাহলে টিকা নেওয়া অর্থহীন
এই কথাটি সদ্য বলা শুরু হয়েছে, যুক্তরাজ্যে গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ ধীরে ধীরে হলেও বাড়তে থাকার পর। যদিও এই বিষয় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য আরো সময় লাগবে, কিন্তু এখনো অবধি যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে , তা এই তত্ত্বের বিপরীতেই নির্দেশ করছে। সেগুলির উল্লেখ প্রয়োজনীয়।
এবারের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ১০-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে। Public Health England এর সর্বশেষ সাপ্তাহিক সার্ভালেন্স সূত্রে ১১, প্রতি এক লাখে এই বয়সীদের মধ্যে কেস ৭২, যা আগের হপ্তায় ছিল ৫৫। এবার এর সঙ্গে এই তথ্যটা জোড়া যাক, এই বয়সীদের টিকাকরণ হয়নি। ইস্ট আঙ্গেলিয়ার অধ্যাপক পল হাণ্টার এই তথ্য দেখিয়েই বলছেন, গণটিকাকরণই চাবিকাঠি।
এছাড়াও, এবারের সংক্রমণে মূলত পাওয়া যাচ্ছে নতুন ভেরিয়েন্ট। ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ডেলটা ভেরিয়েন্ট।
একেবারে হাতে গরম স্টাডি বলছে, কিছু টিকার একটি ডোজ এই নতুন ভেরিয়েন্টের উপর পুরানো ভেরিয়েন্টের তুলনায় কিছুটা কম কার্যকরী , কিন্তু দুটি ডোজ নিলে প্রায় সমান কার্যকরী।
আর সেইজন্যেই ব্রিটেনে দুই টিকার মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার দাবি জোরদার করা হয়েছে, বিজ্ঞানীমহল থেকে।
এর সঙ্গেই আরো দুটো-তিনটে কথা বলে না রাখলেই নয়।
ক) টিকা নিলেও কোভিড সংক্রমণ হবে না এমন নয়, তবে গুরুতর অসুস্থতার সম্ভাবনা খুব-ই ক্ষীণ। আবার উলটো দিক থেকে দেখলে যদি জিগ্যেস করেন, যতজন লোক কোভিড-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের কত শতাংশ টিকা পেয়েছিলেন? সেই উত্তর-টা সহজে দেওয়ার জন্যে নিচের ডায়াগ্রাম-টি দেখুন।
মোট ৪৬ জন করোনাক্রান্তের মধ্যে যদি ৬ জনের টিকা নেওয়া থাকে, তাহলে শতকরা হিসেব বলে ১৩%। অবশ্য এতে বিস্তর assumption আছে, টিকা না পেলে যে করোনা ১০০% হবেই, তার কোন মানে নেই।
খ) কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের মধ্যে সংক্রমণের হারের পার্থক্য সামান্যই। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে ১২ দেখা যাচ্ছে, কোভ্যাক্সিনের জন্য ০.১৩% মানুষ টিকা পাওয়ার পরে আক্রান্ত হয়েছেন, আর কোভিশিল্ডের জন্যে ০.০৭%। সংখ্যাদুটির মধ্যে সামান্য পার্থক্য থাকলেও রাশিবিজ্ঞানের ভাষায় সেই পার্থক্য ‘উল্লেখযোগ্য’ নয়। আবার-ও মনে রাখা দরকার, কোভিডের সংক্রমণ মানে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতা নয়, এবং টিকার আসল ‘কাজ’-ই গুরুতর পরিণতি ঠেকানো।
গ) কোভ্যাক্সিনের সম্পূর্ণ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ডেটা এই লেখাটি তৈরি করার সময় অবধি প্রকাশিত নয়, যা আছে তা অন্তর্বর্তী (ইন্টেরিম ট্রায়ালের) ডেটা। কিছুটা বিভ্রান্তি যে এর থেকেও তৈরি হচ্ছে না, তা নয়। কোভিড সংক্রান্ত সবরকমের তথ্য, তা মৃত্যুই হোক, বা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারেই হোক, বা ভ্যাকসিন ট্রায়াল-ই হোক, সম্পূর্ণ ভাবে স্বচ্ছ হওয়া বাধ্যতামূলক হতে হবে জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে।
আসলে বিপদ তাহলে কোথায়? বিপদ এই যে আগাম সতর্কতা সত্ত্বেও আমাদের পরিকাঠামো তৈরি হয়নি, বিপদ এই যে প্রত্যেকটি প্রশাসনিক স্তরে অভূতপূর্ব তথ্যবিকৃতি হয়েছে, বিপদ এই যে আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের কোনো সামাজিক নিরাপত্তা নেই আর আসল বিপদ এই যে এতো প্রমাণের মুখেও, এতো সচেতনতার পরেও মানুষের মনে ভয়-ঢোকানো অ্যান্টি-ভ্যাক্স প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে পড়ছে দিকে-দিগন্তরে। ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভ্যানিয়ার গবেষক পল অফিত, যিনি টিকা-বিরোধী প্রচারের বিপক্ষে যুক্তির নিরলস যুদ্ধ চালিয়েছেন গত দুই দশক ধরে, তার একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের ১৩ একটুখানি উদ্ধৃত করা হলো নিচেঃ
‘Well, I would say having written about the anti-vaccine movement for the last 20 years, that nothing they would ever do would surprise me. I was wrong. They can still surprise me here in the midst of the pandemic that has brought us to our knees, that has caused mess of joblessness and homelessness and food insecurity, and depression and other psychological issues and an increase in child abuse and domestic violence, which has caused us to economically just stop doing everything we were doing. And within a year, you have a vaccine that is remarkably safe and remarkably effective. Still, they find a way to try and tarnish that vaccine with bad information.
I think the big ones I get are, one, that the vaccine can affect fertility, which it can't. Two, that it will somehow alter your DNA, which it can't. Or three, that it itself can cause SARS-CoV-2, which obviously it can't. Or then, my favorite is that when you get this vaccine, that would cause you to somehow cause other people to get SARS-CoV-2. I mean, they continue to make it up with outlandish claims. And so, we just keep playing whack-a-mole with each of these claims.”
প্রশ্ন করা খারাপ নয়, যুক্তিবাদীরা প্রশ্ন করলে দাগিয়ে দেবেন এই আশঙ্কা অমূলক, বরং তারা প্রশ্ন-ই আহ্বান করেন, তবে প্রশ্ন করা আর নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে খুঁজে বেছে দুটো বিভ্রান্তিমূলক জিনিস বের করে জুড়ে দেওয়া এক জিনিষ নয়। দ্বিতীয়-টা এই অতিমারীর মৃত্যু মিছিলের মাঝে অপরাধের সামিল।
এর মানে কিন্তু এও নয় যে, সব প্রশ্নের উত্তর এসেই গেছে বা যা কিছু বলা হচ্ছে, তাই ধ্রুবসত্য।
বিজ্ঞান কখনো তা বলেও না। বিজ্ঞানীর কাজই হল আগের কাজের ফাঁকফোকর ভরাট করে পরের কাজে আরেকটু উন্নতিসাধন।
কিন্তু যে যে তথ্যের ভিত্তিতে টিকা বিরোধী যুক্তিগুলির উপস্থাপনা করা হয়ে চলেছে, সেই তথ্য যদি ভুল হয় বা অর্ধসত্য, অথবা সঠিক তথ্যও এমনভাবে প্রযুক্ত, পরিবেশিত হয় যে সত্যের অপব্যাখ্যা ঘটে, তখন তাকেও প্রশ্ন করতে হয় বইকি , আর সেই কাজও করে বিজ্ঞানই। এখানে সেরকমই কিছু চেষ্টা করা হয়েছে।
হ্যাঁ, বিজ্ঞানের উপর মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সময় লাগে, সে অর্জনের দায়িত্ব বিজ্ঞানীদের, যার জন্য এই লেখার অবতারণা। তবু ভরসা আছে মানুষের বোধবুদ্ধির উপর, বিচারের উপর, ভয়-ও আছে। ভারতবর্ষে ইনকুলেশনের ইতিহাস বহু প্রাচীন, এ দেশে প্রথম স্মল-পক্সের টিকা পান তিন বছরের অ্যানা ডাস্টথাল, আজ থেকে দুশো-কুড়ি বছর আগে, ১৮০২ সালে, এই মে মাসেই১৪। আশা করা অমূলক নয় যে সে দেশের লোক শীতলা মন্দিরের বদলে টিকাকেন্দ্রের লাইনে বেশি ভরসা পাবেন।
হ্যাঁ, টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়ালে আদর্শ পরিস্থিতিতে অনেক বেশি সময় লাগে। সব দিক দেখে শুনে, সব সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নানাবিধ ফাঁকফোকর ভরাট করার জন্যেই। কিন্তু অতিমারীর পরিস্থিতিতে সেই আদর্শ দূর অস্ত। তাও এখনো এই ভ্যাক্সিন বিজ্ঞানের উপরে বিজ্ঞানেরই কড়া নজরদারি চলেছে আর চলতে থাকবে, সেটাই কাম্য। কিন্তু সে যেন ভুল তথ্য আর ভ্রান্ত যুক্তি দিয়ে বোনা অপবিজ্ঞানের জালে ফেঁসে না যায়, এটিও কিছু কম কাম্য নয়।
সাবধান হওয়া সদাসর্বদা ভাল, তবে শিয়রে শমন, এই অবস্থায় সেই ভয় পেলে, যা কিনা অমূলক, তাতে আখেরে ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই মনে হয় বেশি |
@Aloke বাবুঃ আপনার (১)-(২)-এর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। উপরে প্রতিভা-দির উত্তরে একটি পেপারের কথা বলা আছে, যাতে 7-day moving average এর কথা বলা হয়েছে। সেই পেপারে বলা হচ্ছেঃ
"Vaccines were rolled out around the time of Israel's third and largest wave of SARS-CoV-2 infections, with a peak 7-day moving average of 8328 new infections per day, which resulted in a 2-month national lockdown."
(https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(21)01018-7/fulltext)
এই নিন। সি এম সি ভেলোরের স্টাডি। সদ্য প্রকাশিত।
Drm Joy J Mammen এর গ্রুপের কাজ।
Total 10600 HCWs
Christian Medical College, Vellore, a 2600-bed tertiary care hospital in India with
10600 employees, vaccinated 8991 staff (84.8%) between 21st January 2021 and 30th April 2021. A majority (93.4%) received Covishield™, the Oxford-AstraZeneca vaccine manufactured by Serum Institute of India, and the remainder, Covaxin™, a killed virus vaccine, produced by Bharath Biotech, India.
We report the incidence of symptomatic COVID-19 infection among HCWs between 21st February and 19th May 2021. In the 1350 staff tested positive on RT-PCR, the median (interquartile range) age was 33 years (27-41); female: male ratio was 3:2. The median time from first dose to development of infection was 77 (62-89) days and coincided with the second peak in India during April and May 2021. Thirty-three HCWs developed infection within 2-weeks of the second dose of vaccine.
Among fully vaccinated HCWs (n=7080), 679 (9.6%) developed infection 47 days (34-58) after the second dose. The risk of infection among fully vaccinated HCWs was significantly lower when compared with unvaccinated HCWs (Relative Risk (RR) 0.35, 95% Confidence interval (CI) 0.32-0.39). Similarly vaccination with two doses reduced hospitalization (RR 0.23; 95%CI 0.16-0.32), need for oxygen therapy (RR 0.08; 95%CI 0.03-0.26) and ICU admission (RR 0.06; 95%CI 0.01-0.27). The protective effect of vaccination in preventing infection, hospitalization, need for oxygen and ICU admission were 65%, 77%, 92% and 94% respective
Summary:
10600 HCWs এর 8991 vaccinated
93.4% by covishield
7080 had both doses
679 developed C19
64 hospitalised
4 needed oxygen
No deaths
Protective effect of 2 doses estimated to be 65% against infection, 77% against hospitalisation, 92% against need for O2 , 94% against ICU admission and 100% against death.
এটাও রইল।
“Breakthrough” infections, or COVID cases in those fully vaccinated, accounted for 1,200 of more than 853,000 hospitalizations in the U.S., making it 0.1% of hospitalizations. Data also showed that 150 of more than 18,000 COVID-19 related deaths were fully vaccinated people, which means they accounted for 0.8% of deaths.
Although the data from the Centers for Disease Control and Prevention only gathers data on breakthrough infections from 45 states that are reporting such cases, it demonstrates how effective the vaccine is at preventing deaths and hospitalizations due to COVID-19.
এটা রইল। টাইটেল নয়, লেখাটা। পেপারটাও দিয়ে রাখব।
https://nationalpost.com/news/world/virus-antibodies-are-no-match-for-delta-variant-study-shows
এটাও রইল।
এক শ্রদ্ধেয় সিনিয়র চিকিৎসক মহাশয় এর একটি বক্তব্য নেট মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তিনি ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন, একটা কন্সপিরেসি থিওরি এর হিন্ট দিয়েছিলেন।
একটা তথ্য জানাই।
ইংল্যান্ডে গতকাল 32000 কোভিড কেস হয়েছে।
জানুয়ারি মাসে প্রায় সমসংখ্যক কেস হয়েছিল।
তাহলে তফাতটা কোথায়?
জনগণের 85 পার্সেন্ট প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন পেয়ে গেছে, প্রায় 65 শতাংশ দুটো ডোজ পেয়ে গেছে। তাহলে লাভ কি?
লাভ একটাই।
জানুয়ারি মাসে দিনে বারোশো রোগী মারা যাচ্ছিল।
গতকাল এই সংখ্যাটা কুড়ি!
আগে দৈনিক হাসপাতাল এ ভর্তি হওয়া রুগীর সংখ্যা ছিল
4 হাজার, এখন সেই সংখ্যা 550!
অর্থাৎ hospitalisation প্রায় 8 ভাগের এক ভাগ হয়েছে।
ভ্যাকসিন নেবেন কি নেবেন না আপনার সিদ্ধান্ত। কিন্ত অপপ্রচার দয়া করে বন্ধ করুন।
পুনশ্চ: পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড তার data প্রকাশ করেছে:
ডেল্টা প্রজাতির ক্ষেত্রে pfizer ভ্যাকসিন 96 শতাংশ ক্ষেত্রে hospitalisation কমাতে পারে, Astra zeneca vaccine কমাতে পারে 92 পার্সেন্ট।
আরেকটা কথা বলি।
শেষ এক বছরে ইংল্যান্ডে 25 টি বাচ্চা covid এ মারা গেছে।
বাচ্চাদের covid থেকে মৃত্যুর চান্স 5 লাখে 1 জন!!
আইসিইউ তে ভর্তির চান্স 1: 50000।
বাচ্চাদেরকে কোভিড vaccine দেওয়া হয় না।
বাচ্চাদের কোভিড নিয়ে অকারণ আতঙ্ক ছড়ানো বন্ধ করুন।
ভরসা থাকুক ভ্যাকসিনে, ভরসা থাকুক চিকিৎসকে।
শিবালিক ব্যানার্জী,
Consultant Rheumatologist, NHS England