এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • দেশভাগঃ পশ্চিম বঙ্গের মুসলমান এবং ধারাবাহিক অবক্ষয় - প্রথম পর্ব

    দেবব্রত চক্রবর্তী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ জুন ২০১৬ | ৩২২০ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব


    সুশান্ত, তোমার মনে পড়ে
    সরলার মাকে, যে এখানে
    কাজ করত? হঠাৎ সেদিন
    শুনলো যেই বন্যা পাকিস্তানে,
    বুড়ি গিয়ে বসল বারান্দায়,
    দেখি তার চোখে জল ঝরে।...  
    (চিঠি - মণীন্দ্র  রায় ) 


    বাঙলার অর্থব্যবস্থা, সামাজিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক পরিচিতি, স্মৃতি এলোমেলো করে দেওয়া এই যে দেশভাগ।  উদ্বাস্তু স্রোত এবং তাদের অসহায়তা। দাঙ্গার বীভৎসতা। রক্ত, ধর্ষণ।  সারা জীবনের মত ভিখারি হয়ে যাওয়া অসংখ্য পরিবার। উদ্বাস্তু কলোনি এবং তা নিয়ে বামপন্থী রাজনীতি। এই সমস্ত  সত্য তার তথ্যাবলি নিয়ে  বর্তমান। কিন্তু অদ্ভুত নির্লিপ্ততায় এই পুরো ব্যাখ্যানটিতে‘মুসলমান‘ আশ্চর্যজনক ভাবে অনুপস্থিত। দেশভাগ যেন কেবলমাত্র অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ বর্ণ বাংলাভাষী হিন্দুদের সমস্যা। দেশ ভাগের বেদনা, স্মৃতি, ছিন্নমূল জীবন নিয়ে কত না কবিতা, গল্প, সিনেমা কিন্তু বিগত ৬৮ বছরের এই আখ্যানে নিন্মবর্গের  হিন্দু এবং আপামর মুসলমান প্রায় অস্তিত্বহীন। আমার এক সাহিত্য পড়ুয়া বন্ধুর কাছে খোঁজ করাতে তিনি আমাকে মাত্র একটি উপন্যাসের খোঁজ দিতে পেরেছিলেন -‘ কালো বরফ‘ যেখানে মনি ভাইজান তাদের পড়শি এপারের ছবি'দির কাছ থেকে চুলের কাঁটা, ক্লিপ, ফিতে - স্মৃতি হিসাবে নিয়ে দৌড়ে ওপারে যাওয়ার ট্রাক ধরতে  চলে যাচ্ছেন। ওই একটিই অথবা আরও দু একটি, কোথাও দিব্যেন্দু পালিতের ছোট গল্প, কোথাও আরও কিছু ছোট গল্প ইত্যাদিতে ধরা আছে বাঙ্গালী মুসলমানের দেশভাগের বেদনার উপাখ্যান কিন্তু  মূলত দেশভাগের কাহিনীর বেদনার ইতিহাসে বাংলার‘মুসলমান‘ সত্যই অস্তিত্বহীন। 


    দেশভাগের প্রভাব নিয়ে পরবর্তীকালে যে বিভিন্ন গবেষণা তাতেও প্রায় একই চিত্র। মুসলমান সংখ্যালঘু সমাজে দেশভাগ এবং তার প্রভাব নিয়ে গবেষণা প্রায় শূন্য। এমনকি বর্তমানের‘Bengal Muslims’ নামক যে স্কলারশিপ তাতেও আশ্চর্যজনক ভাবে দেশভাগের পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সমাজের অবস্থান, তাদের রাজনৈতিক প্রভাব খর্ব হওয়ার ইতিহাস, আর্থ  -সামাজিক পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা প্রায় নগণ্য। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান যে কেবল আর্থ -সামাজিক অবস্থানে ক্রমশ দেওয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া এক পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় তাই নয়,  সাহিত্যে, সিনেমায়, অ্যাকাডেমিক গবেষণায় এবং সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলনে এক চরম উপেক্ষিত জন সমাজ। সেকুলার ভারতবর্ষ তাদের না দিতে পেরেছে জীবনের নিরাপত্তা না উন্নত করতে পেরেছে তাদের অর্থ -সামাজিক অবস্থান। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের এই ধারাবাহিক অবক্ষয়ের চিত্র প্রথম প্রকাশ্যে আসে সাচার কমিটির রিপোর্টের মাধ্যমে। জম্মু কাশ্মীরে ৬৭%, আসামে  ৩০% এর পরেই পশ্চিমবঙ্গে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বাসস্থান, পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যা প্রায় ২৭-২৯%।  দীর্ঘকাল সংখ্যালঘু দরদী বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন  যে রাজ্যে বর্গাদার আইন, ভূমিসংস্কার এবং ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজকর্ম হয়েছে সেই রাজ্যে মুসলমানদের অবস্থা ভয়ঙ্কর এমনকি তফশিলি জাতি উপজাতি  এবং আদিবাসীদের তুলনাতেও  খারাপ। ২০০৬ সালে প্রকাশিত সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পরে অতি সম্প্রতি অমর্ত্য সেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের বর্তমান  আর্থ সামাজিক অবস্থান নিয়ে আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, সেই চিত্রও সাচার কমিটির রিপোর্ট এর থেকে উন্নত কিছু অবস্থানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করায় না উল্টে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবস্থা ২০০৬ সালে প্রকাশিত সাচার কমিটির উল্লেখিত অবস্থার থেকেও খারাপ। পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যা  ২৭-২৯% হলেও সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুসার সরকারী চাকুরিতে তাদের অনুপাত  ছিল মাত্র ২,১%! 


    অথচ দেশভাগের পূর্বে অপেক্ষাকৃত বর্ধিষ্ণু, বাংলার রাজনীতিতে নির্ণায়ক স্থানের অধিকারী, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের এই ক্রম অবক্ষয়ের কারণ কী ? দেশভাগ তাদের কাছে কি অর্থ বহন করে আনে ? তাদের চিন্তাধারা, জীবনযাপন, পেশা এবং প্রাত্যহিকতায় বা কী প্রভাব ? দেশভাগের পরবর্তী কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের সারভাইভাল স্ট্রাটেজিই বা কী ? এই সমস্ত প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর নেই। রাজনৈতিক নেতাগণ  মুসলমান ভোট ব্যাংকের হিসাব  নিয়ে ব্যস্ত এবং আমরা আমাদেরই পড়শি সম্বন্ধে চরম উদাসীন, নির্লিপ্ত। বাঙলায় মুসলমান - সাহিত্যে, সিনেমায়, রাজনীতিতে এবং সামাজিক অবস্থানে এক চরম উপেক্ষিত সম্প্রদায় - যেন ভিন গ্রহের বাসিন্দা। 


    বাঙলায় মুসলমানঃ


    মোটামুটি  ত্রয়োদশ শতাব্দীর সময় থেকে বাঙলায় ইসলামের পদার্পণ। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ব্রিটিশ লক্ষ করে যে বাংলার পূর্ব প্রান্তের গ্রামাঞ্চলে মুসলমান জনসংখ্যার ঘনত্ব অস্বাভাবিক রকমের বেশি। ১৮৭২ সালের সেন্সাস পরবর্তী চমকে দেওয়ার মত মুসলমান জনসংখ্যার  তথ্য  এবং তার ফেনমেনা বিষয়ে ব্রিটিশ গবেষণা করতে শুরু করে। এই যে বিপুল পরিমাণ মুসলমান জনসংখ্যা কেন এবং কিভাবে তা ব্যখ্যা করতে  উঠে আসে মূলত চার ধরনের মতামত। প্রথমত অভিবাসনের তত্ত্ব, দ্বিতীয়ত তরবারির ক্ষমতায় ইসলামে পরিবর্তনের মতামত, তৃতীয় মতামত অনুসার  সামাজিক  মুক্তির ধর্ম হিসাবে বাংলার নিন্মবর্গের ইসলামকে  স্বীকৃতি দান এবং চতুর্থত  মুসলমান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইসলামের প্রসার বিষয়ক  তত্ত্ব। 


    অভিবাসন তত্ত্ব অনুসার ভারতের অধিকাংশ মুসলমান বিভিন্ন সময় ধরে এদেশে আসা মূলত বিদেশী মুসলমান জনসম্প্রদায়ের বংশধর। সন্দেহ নেই দক্ষিণ এশিয়ার সে সমস্ত ভূখণ্ড যেখানে ইরান বা মধ্যপ্রাচ্য  ভূমি পথের মাধ্যমে সংযুক্ত অথবা আরবসাগরের রাস্তায় আসা সম্ভব সেখানে ইসলাম ধর্ম প্রসারে এই বিদেশী মুসলমান অভিবাসীগণ সাহায্যকারীর ভুমিকা পালন করেছেন। তবে এই তত্ত্ব কেরল, গুজরাত, কাশ্মীর অথবা উত্তর ভারতের ক্ষেত্রে  প্রযোজ্য হলেও বাংলার পূর্ব প্রান্তের  গ্রামাঞ্চলে  বিপুল পরিমাণ মুসলমান  জনসংখ্যার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেনা। ইরান এবং আরব সাগর থেকে বহুদূরের এই ভূখণ্ডের ৯৯% মূলসমান স্থানীয় জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং শারীরিক গঠন আরব বা ইরানের অধিবাসীদের তুলনায় সম্পূর্ণ পৃথক। 


    তরবারির ক্ষমতায় ইসলামের বিস্তারের তত্ত্ব ক্রুসেড পরবর্তী পশ্চিমি চিন্তা জগত উৎসাহের সঙ্গে মেনে নিলেও বা অটোম্যান সাম্রাজ্যের এবং বিভিন্ন মূলসমান সাম্রাজ্যের বিস্তারের  সাথে সাথে ইসলামের বিস্তারের এক যোগ সূত্র হিসাবে ধরে নিলেও ভারতে ইসলামের বিস্তারের সাথে এই তত্বের খুব একটা যোগসূত্র নেই। যদি সত্যই রাজনৈতিক অথবা সামরিক শক্তির বলে ভারতে মুসলমান ধর্মে পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে থাকত তাহলে সে সমস্ত অঞ্চল দীর্ঘ কাল ধরে মুসলমান শাসনের অধীন ছিল সেখানে বা তার আশেপাশে মুসলমান জনসংখ্যা এতদিনে সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়ার কথা অথচ ঘটনা বা বাস্তব তার বিপরীত। ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে মুসলমান জনসংখ্যা সংখ্যাগুরু  যেমন বাঙলার পূর্বের জেলাগুলিতে,পশ্চিম পাঞ্জাবে সেই সমস্ত অঞ্চলে মুসলমান শাসকের তরবারির ক্ষমতা ছিল দুর্বল। এই সমস্ত প্রান্তিক অঞ্চলে পাশবিক বল  ছিল সব থেকে কম প্রভাবশালী। বাংলার পূর্ব প্রান্তে এবং পশ্চিম পাঞ্জাবে যেখানে প্রথম সেন্সাস তথ্য অনুযায়ী ৭০-৯০% মুসলমান সেখানে গঙ্গার অববাহিকায়  এবং উত্তর ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা মাত্র ১০-১৫%। অন্য অর্থে ভারতীয় উপমহাদেশে যে সমস্ত অঞ্চলে মুসলমান রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তি দুর্বল ছিল সেই সমস্ত অঞ্চলে মুসলমান ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা তুলনামূলক অধিক এবং যে সমস্ত অঞ্চলে দীর্ঘ কাল যাবত মুসলমান রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তি বলবত ছিল সেই সমস্ত অঞ্চলে মুসলমান ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মালদা এবং মুর্শিদাবাদ প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে মুসলমান নবাবদের রাজধানী হওয়া স্বত্বেও রাজশাহী, দিনাজপুর এবং নদীয়ার তুলনায় এই সমস্ত জেলাতে মুসলমান জনসংখ্যার হার আনুপাতিক হারে কম ছিল। সুতরাং তরবারির ক্ষমতায় ভারতে, বাঙলায় বা পশ্চিম পাঞ্জাবে ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে তথ্যগত ভাবে তা সত্য নয়।


    এই পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসে ইসলাম অবলম্বন করে সামাজিক মুক্তির তত্ত্ব। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদগণ  এবং এথনগ্রাফার্স'রা, ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রসারের কারণ হিসাবে ইসলামের প্রগতিশীলতা, জাতিভেদ প্রথা না থাকা এবং হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে বিপুল সংখ্যক নিন্মবর্গিয় হিন্দুদের ইসলাম অবলম্বনের অন্যতম কারণ হিসাবে উল্লেখ করতে থাকেন। এই তত্ত্ব অনুসার হিন্দুধর্মের চূড়ান্ত জাতিভেদ প্রথা এবং সেই কারণে বিচ্ছিন্ন নিন্মবর্নের  হিন্দু  ইসলামের সামাজিক সমতার দর্শনে আকর্ষিত হয়ে দলে দলে ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলমান হয়ে যেতে থাকেন। বাঙলায় এবং ভারতে এই তত্বের সত্যতা যথেষ্ট দুর্বল, শুধু তাই নয় এই তত্ত্ব ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্মীয় ভূগোলের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৮৭২ সালের সেন্সাসের তথ্য অনুসার ভারতে সর্বাধিক মুসলমান জনঘনত্ব বাংলার পূর্বের জেলাগুলি, পশ্চিম পাঞ্জাব, বালুচিস্তান এবং নর্থ ওয়েস্ট  ফ্রন্টিয়ার এলাকায়। এই প্রত্যেকটি এলাকাই হিন্দু হার্ট ল্যান্ড থেকে বহু দুরে। এই সমস্ত এলাকায় হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাব ছিল তুলনামূলক ভাবে কম। মনুর বিধান ছিল প্রায় অজানা। বিশেষত বাংলায় মুসলমান ধর্মে  পরিবর্তিত জনজাতি মূলত রাজবংশি, পোদ, চণ্ডাল, কোচ এবং অন্যান্য স্থানীয় ক্ষুদ্র সম্প্রদায় এই সম্প্রদায়ের ওপর ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাব ছিল  অতি নগণ্য। অনুরূপ ভাবে পশ্চিম পাঞ্জাবেও বিভিন্ন জাট গোষ্ঠী মূলত মুসলমান ধর্মে পরিবর্তিত জনজাতি। তাই হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে ইসলাম অবলম্বন এই তত্ত্বও বাঙলায় মুসলমান ঘনত্বর  কারণ হিসাবে ঠিক প্রযোজ্য নয়। 


    অনেকে বলেন অতি ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন বাঙলার কৃষি এবং রাজনৈতিক সীমান্তে ঘটেছে। বাঙলার গ্রামীণ আঞ্চলিক সংস্কৃতির সাথে ইসলাম এমন ভাবে মিশে গেছে যে স্থানীয় অধিবাসীদের ইসলামকে বিদেশী ধর্ম হিসাবে কখনো মনেই হয়নি। বাঙলার পূর্বের প্রদেশ গুলীতে কৃষি এবং কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের  বিস্তারের সাথে সাথে কৃষিজীবী গ্রামীণ জনতার স্বাভাবিক ধর্ম হয়ে গেছে ইসলাম। ইসলাম বাংলার গ্রামীণ আঞ্চলিক সংস্কৃতির সাথে মিশে তার আরবিয়ানা হারিয়ে এক বিপুল সংখ্যক জনতার ধর্মে পরিবর্তিত হয়ে গেছে - তার সাথে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, তরবারির ক্ষমতায় ধর্ম পরিবর্তন অথবা হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ইসলাম অবলম্বন এর কোনটাই বাঙলায় বিশেষত বাঙলার পূর্বের জেলাগুলিতে ৭০-৯০% মুসলমান জনসংখ্যার অস্তিত্বের কারণ হিসাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনা।  


    বাঙলার মুসলমানদের সামাজিক বিভেদঃ 


    হিন্দু সমাজের মত গভীর এবং কঠিন চতুবর্ণ বিভাজন না থাকলেও বাঙলার মুসলমান সমাজের মধ্যেও স্পষ্ট সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিভাজন বর্তমান। বাঙলায় সব থেকে উচ্চ শ্রেণীর মুসলমানেরা হলেন  - আশরাফ অথবা শরীফ। এনারা  মূলত জমিদার, ভূস্বামী, শিক্ষক উচ্চ পদাধিকারী ইত্যাদি। বিদেশী অভিবাসী মুসলমান, উত্তরভারতীয় মুসলমান বনিক এবং উচ্চ শ্রেণীর হিন্দু পরবর্তীতে ইসলাম অবলম্বী সম্প্রদায়ের বংশধর বাঙলার মুসলমান সমাজের উপরের স্তরের  এই গোষ্ঠীর  অধিকাংশের উপাধি সৈয়দ, শেখ, পাঠান, মালিক  ,মির্জা ইত্যাদি।  মুসলমানদের মধ্যে দ্বিতীয় সামাজিক অবস্থানে আছেন আজলাফ অথবা আতরাপ/আতরাফ। এই শ্রেণীর অধিকাংশ অপেক্ষাকৃত নিন্মবর্গ  হিন্দু থেকে মুসলমানে পরিবর্তিত হওয়া জন সম্প্রদায়। সৈয়দ বা শেখেদের চোখে নিচু শ্রেণীর  মুসলমান। পেশাগত ভাবে জোলা( তন্তুবায় ) হাজাম (নাপিত ), ধুনকর, নিকারি, ধোপা, ক্ষুদ্র ব্যবসাদার ইত্যাদির অধিকাংশ এই আতরাফ শ্রেণীর  মুসলমান। এদের উপাধি প্রায় হিন্দুদের মতই - মণ্ডল, সরকার, বিশ্বাস,সর্দার  ইত্যাদি। 


    হিন্দু সমাজের শূদ্রদের মতই সবথেকে নীচের স্তরের সামাজিক অবস্থানের  মুসলমানেরা হলেন  - আরযুল। মূলত পতিত, দলিত এবং নমশূদ্র সমাজ থেকে মুসলমানে পরিবর্তিত জনগোষ্ঠীর অংশ।  হিন্দু অন্ত্যজ গোষ্ঠীর  সমগোত্রীয় এই আরযুল মুসলমানেরা তাড়ি বা মদ বানানোর পেশাতে যুক্ত, কসাই, মেথর, চামার, জিপসি ইত্যাদি। সামাজিক ভাবে প্রায় প্রান্তিক এই মুসলমানদের সাথে ওপরে বর্ণীত দুই মুসলমান সমাজের মধ্যে  প্রকৃত অর্থে কোন সামাজিক, বৈবাহিক যোগসুত্র অবর্তমান। বাঙলায় মুসলমান সমাজের মধ্যেও কাস্ট এবং তার কুফল যথারীতি বর্তমান। আশরাফ এবং আতরাপ/আতরাফদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বর্তমান অথবা পেশা পরিবর্তন এবং সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে ওপরের গোত্রের মুসলমান হিসাবে  উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা বর্তমান - যেমন একজন আতরাফ  মুসলমান বলতে পারেন  ‘ গত বছরের  আমি জোলা ছিলাম এই বছর আমি শেখ হয়েছি  যদি এই বছর ভালো পাটের দাম পাই তাহলে আগামী বছর আমি সৈয়দ হয়ে যাব”। কিন্তু আরযুল অথবা একদম নিচের শ্রেণীর মুসলমান এই বৃত্তের বাইরে, মুসলমান সমাজে তাদের স্থান আমাদের দলিত সম্প্রদায়ের মতই -সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে উপেক্ষিত এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য আলাদা কবরস্থান বর্তমান। বাঙলার বিপুল পরিমাণ মুসলমানদের মধ্যে ১৮৭১ সালের সেন্সাসে দেখা যাচ্ছে মাত্র ১-১,৫% মুসলমান আশরাফ অর্থাৎ সৈয়দ, শেখ, পাঠান, মালিক, মির্জা ইত্যাদি বাকি ৯৯% হয় আতরাপ/আতরাফ অথবা আরযুল। এই ৯৯% এর  মাতৃভাষা বাঙলা। সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ঐতিহ্য, আচার আচরণ পোশাক প্রায়  হিন্দুদের মতই। নিজেদের মধ্যে কাস্ট সিস্টেম সূক্ষ্ম মাত্রায় বর্তমান। গ্রামের পূজা আর্চায় অংশগ্রহণ কারী, ঢাকি, মালাকার ইত্যাদি। এদের মধ্যে অধিকাংশ কৃষিজীবী অথবা তন্তুবায়, মাঝি, মাছুয়া, ধুনকর, নাপিত, চামড়ার কাজ এবং বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত মূলত নিন্ম বর্গের  হিন্দু এবং বৌদ্ধ সমাজ থেকে মুসলমানে  পরিবর্তিত জন সমাজ। 


    বাঙলার মুসলমান সমাজে পরিবর্তন এবং দেশভাগঃ  


    বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে বাঙলার মুসলমান সমাজে এই স্থবির সামাজিক অবস্থানের বিপুল পরিবর্তন হতে শুরু করে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটি ঘটে চিরাচরিত কৃষি ভিত্তিক পেশার পরিবর্তে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মুসলমান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের উদ্ভব। শিক্ষা, চাকরী, সংস্কৃতি এবং রাজনীতিতে এই মুসলমান সম্প্রদায়ের উপস্থিতি ক্রমশ লক্ষিত হতে থাকে। ১৮৭০/৭১ সালে বাঙলার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৪% ছাত্র ছিল মুসলমান অথচ ১৯২০/১৯২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় প্রায় ১৪-১৫ %। বাংলার কোন কোন অঞ্চলে যেমন ঢাকা, হুগলী এমনকি প্রেসিডেন্সি কলেজে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা হিন্দু ছাত্রদের সংখ্যার সমপরিমাণ এমনকি কোথাও কোথাও বেশি হয়ে দাড়ায়। আর এই নব্য শিক্ষিত মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী পরবর্তীতে বাঙলার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। মুসলমানদের এই অভাবনীয় অগ্রগতি তাদের হিন্দু কাউন্টার পার্টের সাথে প্রতিযোগিতা একই সাথে মুসলমান জনসংখ্যার বৃদ্ধি ক্রমে বাঙলায় হিন্দু জনসংখ্যা কে পেছনে ফেলতে শুরু করে। ১৯৩১ সালে বাঙলায় মুসলমান জনসংখ্যা বেড়ে দাড়ায়  ৫৪.২৯%। পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা। 


    বাঙলার অধিকাংশ জেলায় তাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা, নব্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত যুবক সম্প্রদায় মুসলমান সমাজের মধ্যে এক প্রত্যয়ের জন্ম দেওয়া শুরু করে। অপ্রত্যক্ষ ভাবে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বলীয়ান, হিন্দুদের সাথে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে দর কষাকষি, রিজার্ভ সিট, মুসলিম কোটার অধিকারের মাধ্যমে  বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে হিন্দু আধিপত্যের সাথে মুসলমানদের সূক্ষ্ম সংঘাতের সূত্রপাত হতে শুরু হয়। ১৯৩২ সালে ম্যাকডোনাল্ডের সম্প্রদায়ভিত্তিক রোয়েদাদের ফলে প্রদেশে নাটকীয় ভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রায় একই সাথে ঘোষিত হয় পুনা প্যাক্ট, প্রাদেশিক আইনসভায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পরে, ‘ মুসলমানদের কাছে তাদের চিরস্থায়ীভাবে অধীনতা সম্ভাব্য ভবিষ্যতের ছবি হয়ে পরে‘। বাঙলায়, সিন্ধে, পাঞ্জাবে এবং আসামে মুসলমান জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এবং মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মুসলমান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বে কংগ্রেস মুসলিম লীগের হাতে পরাজিত হয়। অবিভক্ত বাঙলার শাসন ক্ষমতার শেষ দশ বছর ছিল মুসলিমলীগের সরকার। স্বাধীনতার ঠিক পূর্বে  ১৯৪৬ সালে সুরাবর্দির নেতৃত্বে বাঙলার সরকার সেই সময়ে সারা ভারতে একমাত্র মুসলিম লীগ সরকার।


     ১৯৩০ সালের সময় থেকেই বাঙলায় পরিষ্কার মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলমান সম্প্রদায় হিন্দুদের সাথে সম স্পর্ধায় তাল ঠুকছেন প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে। বাঙলার রাজনীতিতে মুসলিম লীগ যথেষ্ট প্রভাবশালী -এমত সামাজিক পরিস্থিতিতে  পাঞ্জাব এবং বাংলার হিন্দু প্রধান জেলাগুলি যাতে পাকিস্তানে চলে না যায় সেই স্বার্থে হিন্দু মহাসভা এবং কংগ্রেস এই দুই প্রদেশ কমিউনাল লাইনে ভাগ করার স্বপক্ষে দাবী জোরালো করতে থাকে। অন্যদিকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী যেরকম শরৎ চন্দ্র বসু, সুরাবর্দি  , কিরণ শঙ্কর রায়, আবুল হাসিম, সত্য রঞ্জন বক্সী এবং মোহাম্মদ আলি চৌধুরী বাঙলা ভাগের বিরোধী "সংযুক্ত স্বতন্ত্র বাঙলার “ স্বপক্ষে দাবী পেশ করতে থাকেন। সুরাবর্দি এবং শরৎ চন্দ্র বসু  বাংলার কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের এক কোয়ালিশন সরকার গঠন করে বাংলার জনতাকে সাম্প্রদায়িক লাইনে বঙ্গ ভঙ্গের বিরোধিতা করার জন্য উৎসাহিত করতে থাকেন, সাক্ষরিত হয় বেঙ্গল প্যাক্ট।  ২৭ সে এপ্রিল ১৯৪৭ সালে সুরাবর্দি দিল্লীতে  এক প্রেস কনফারেন্স এই স্বতন্ত্র অবিভক্ত বাংলার পরিকল্পনা পেশ করেন। ২৯ সে এপ্রিল আবুল হাসিম কোলকাতায় সমরূপ ইচ্ছা প্রকাশ্য করে এক বিবৃতি প্রকাশ করেন। একই সময়ে ১৯৪৭ সালের ২১ এপ্রিল খ্যাতিমান বাঙালী নিন্মবর্ণ নেতা এবং তৎকালীন ভারতের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রী যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে জানান, বাঙলার নিন্মবর্ণ হিন্দুরা বাঙলা ভাগের প্রস্তাবের বিরোধী। 


    কিন্তু কংগ্রেস, বাঙলার মারোয়াড়ী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং শ্যামাপ্রসাদের আগ্রহে স্বতন্ত্র অভিভক্ত বাংলার প্ল্যান দুঃখজনক ভাবে পরাজিত হয়। প্যাটেল  সার্বভৌম বাঙলার দাবীকে বর্ণনা করেন‘ একটা ফাঁদ হিসাবে যেখানে কিরণ শঙ্কর রায় শরৎ বসুর সঙ্গে আটকা পড়বেন‘ ততদিনে কুখ্যাত কোলকাতা রায়ট দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন রেখা গভীর এবং প্রায় অলঙ্ঘনীয় করে তুলেছে। বর্ধমান মহারাজের সভাপতিত্বে হিন্দু প্রধান জেলাগুলির আইনপ্রনেতারা এক বৈঠকে ৫৮ জন বিভাজনের পক্ষে ভোট দেন কিন্তু সেই সভাতেই মুসলিম লীগের ২১ জনা বিভাজনের বিপক্ষে ভোট দেন।  ৫৮ জনের সংখ্যাগরিষ্ঠ পক্ষ আরো সিদ্ধান্ত নেয় যে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো ভারতে যোগদান করবে। অন্যদিকে, মুসলিমপ্রধান জেলাগুলোর আইনপ্রণেতাদের মধ্যে ১০৬ জন যার মধ্যে ১০০ জন ছিলেন মুসলিম লীগের,  ৫ জন ছিলেন নিন্মবর্নের হিন্দুদের প্রতিনিধি এবং এক জন ছিলেন খ্রিস্টানদের প্রতিনিধি বাঙলা ভাগের বিপক্ষে ভোট দেন। বাকি ৩৫ জন পক্ষে ভোট দেন। পরবর্তীতে বর্ধমান মহারাজের সভাপতিত্বে  হিন্দুপ্রধান এলাকাগুলোর আইনপ্রণেতাদের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে ১০৭-৩৪ ভোটে মুসলিমপ্রধান এলাকার আইনপ্রণেতারা প্রস্তাবিত পাকিস্তানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, বেঙল ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে তাল মিলিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার বেঙল শাখার সাথে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রণেতারা বাঙলা ভাগের পক্ষেই  ভোট দিয়েছিলেন। 


    মুসলিম লীগের এক বিপুল অংশ এবং বাঙলার নিন্মবর্ণ মূলত নমঃশূদ্র হিন্দুরা বাঙলা ভাগের প্রস্তাবের বিরোধী হলেও, কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা এবংকমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার বেঙল শাখার আগ্রহে, নেহেরু প্যাটেল লবির কাছে শরৎ চন্দ্র বসু, সুরাবর্দি  , কিরণ শঙ্কর রায়, আবুল হাসিম, সত্য রঞ্জন বক্সী এবং মোহাম্মদ আলি চৌধুরী  বাঙ্লাভাগের বিরোধী সংযুক্ত স্বতন্ত্র বাঙলার স্বপ্ন পরাজিত হয়। অবশেষে ২০ সে জুন ১৯৪৭ সালে বাঙলার লেজিসলেটিভ  অ্যাসেম্বলিতে বাঙলা ভাগের পরিকল্পনা  গৃহীত হয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রোধে বাঙলার যে শিক্ষিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী অংশ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র ৪ দশকের ব্যবধানে বাঙলার সেই শিক্ষিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী অংশ দেশভাগের পূর্বে ধর্মের ভিত্তিতে প্রদেশকে ভাগ করার পক্ষে সংবদ্ধ আন্দোলন চালায় এবং প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে বাঙলা ভাগ মেনে নেয়। 


    অবিভক্ত বাঙলার মুসলমান  যারা দীর্ঘকাল বাঙলায়  সংখ্যা গরিষ্ঠতার সুবিধা ভোগ করে এসেছেন  দেশভাগের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু হয়ে পরে। সেই অর্থে দেশভাগ পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের  ধারাবাহিক অবক্ষয়ের ইতিহাসের এক জল বিভাজিকা বলা যেতে পারে।  


    ( পরের পর্বে সমাপ্য) 


    লেখাটির সংক্ষিপ্ত রূপ 'দুর্বার ভাবনা'য় প্রকাশিত হয়েছিল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব
  • আলোচনা | ১৫ জুন ২০১৬ | ৩২২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেবব্রত | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ০২:৫২80862
  • প্রতিভা দি বাঙালী মুসলমানদের নিয়ে , দেশভাগের ফলে তাদের ছিন্নমূল অবস্থান নিয়ে ,প্রান্তিক অবস্থান নিয়ে আমাদের গুরু স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের উদাসীনতা দেখবার মত -দেশভাগ যার মুল থিম সেই ঋত্বিক ঘটক , সত্যজিৎ রায় এবং অন্যান্যরা উল্লেখযোগ্য প্রায় কিছুই রেখে যাননি । এর উদাসীনতার পেছনে আছে অনবদ্য মার্ক্স । শ্রেণীচরিত্র , অর্থনৈতিক এবং শ্রেণী স্বার্থের সম্পর্ক । বাঙলার ভদ্রলোক শ্রেণীর সমৃদ্ধির ভিত্তি ব্যবসা বা শিল্প ছিলোনা -তাদের সমৃদ্ধির ভিত্তি ছিল জমি । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অপরিহার্য উপজাত ফল হল বাঙালী হিন্দু ভদ্রলোক শ্রেণী । ঠাকুর পরিবারের মত বড় জমিদার থেকে সাধারণ তালুকদার পর্যন্ত সব্বাই ছিল একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত । এই শ্রেণী জীবনে পরিশ্রম করতনা , জমিতে খাটতোনা ,জমি থেকে প্রাপ্ত খাজনা দিয়েই তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ হত । 'ভদ্রলোক শ্রেণী হল দেশের অনুভূতিহীন মাটির সন্তানদের ঠিক বিপরীত । কায়িক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকাকে এই বাবু শ্রেণীর লোকেরা নিজেদের ও সমাজের নিন্ম শ্রেণীর লোকেদের মধ্যে একটা সামাজিক দূরত্বের জন্য অপরিহার্য উপাদান বলে বিবেচনা করত ' আর এই শ্রেণী থেকেই প্রায় সমস্ত বাঙালী বুদ্ধিজীবীর উদ্ভব ।

    ১৮৮৫ সালে জমিদারদের ক্ষমতা সীমিত করার ফলে জমির খাজনা থেকে আয় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় ভদ্রলোক শ্রেণী নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি এবং আয়ের সূত্র বজায় রাখতে পাশ্চাত্য শিক্ষাকে একটা উপায় হিসাবে দেখতে শুরু করে । বস্তুত যে ধরনের শিক্ষা ভদ্রলোকদের জন্য প্রচলিত রীতিসম্মত হিসাবে পরিচিতি পায় তা শুধু ঔপনিবেশিক প্রশাসনের জন্যই প্রয়োজনীয় ছিল তা নয় বরং ভূমি মালিকের অলস জীবনযাপন কারি শ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল ' প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান শিক্ষা বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার তুলনায় তাদের প্রিয় ছিল সাহিত্য ,ইতিহাস ,ইংরাজি সাহিত্য ইত্যাদি । ধীরে ধীরে সম্পদের আভিজাত্যের সাথে সৃষ্টি হতে থাকে সাংস্কৃতিক আভিজাত্য -বিংশশতাব্দীর বাঙালী ভদ্রলোকের পরিচিতি এমন এক ক্রমবর্ধমান ধারনার ওপরে স্থিতিশীল হয় যে তারা সংস্কৃতিবান ও আলোকিত শ্রেণী ।বেঙ্গল রেনেসাঁর উত্তরসূরি এবং অগ্রগতি ও আধুনিকতার পতাকা ধারী -তা এই বৃত্তে কৃষক মুসলমান এবং দরিদ্র নমশূদ্র ঠাঁই পায় কি উপায়ে ?

    ১৯৩০ এর দশক থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারনে বাঙালী জমিদারদের প্রভাব কমতে থাকে , মুসলমান রায়তরা খাজনা দিতে অস্বীকার করে ,প্রদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়ে যায় ,কৃষিজাত পণ্যের মূল্য ও গ্রামীণ ঋণ আকস্মিক ও নাটকীয় ভাবে কমে যায় -অথচ এইগুলিই ছিল বাঙালী ভদ্রলোকের আয়ের উৎস -এই সমস্ত হিন্দু আধিপত্য কমাতে শুরু করে -বাঙালী ভদ্রলোক শ্রেণীর মধ্যে সম্পদ হারানো ,রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানো এবং মুসলমান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের উদ্ভব -হিন্দু সাম্প্রদায়ীকতার বীজ বুনতে শুরু করে । এই রক্তে প্রোথিত অর্থনৈতিক স্বার্থ , শ্রেণী স্বার্থ এবং হিন্দু ভদ্রলোক সমাজের মধ্যসত্তভোগী আরামের বিরামের কারন হিসাবে মুসলমানবিদ্বেষের উদ্ভব এবং অধিকাংশ সংস্কৃতিবান ও আলোকিত শ্রেণী বেঙ্গল রেনেসাঁর উত্তরসূরি এবং অগ্রগতি ও আধুনিকতার পতাকা ধারী বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী কুল মায় ঋত্বিক ঘটক সমেত এই কারনে মুসলমান বিষয়ে উদাসীন ।

    ঠিক এই কারনেই দেশভাগের ইতিহাসে মুসলমান অনুপস্থিত , নমশূদ্র অনুপস্থিত -দেশভাগ কেবলমাত্র বাঙালী হিন্দু ভদ্রলোক শ্রেণী এবং তাদের বেদনা ।
  • সে | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ০৩:১১80863
  • ভালো লেখা।
  • Rouhin | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ০৬:০৭80864
  • আঙ্গালী মুসলমান কে নিয়ে মানিক বাবু ( রায় নন - বারুজ্জে) কিছু লিখেছেন তো - আর কোন উল্লেখযোগ্য নাম এখুনি মনে করতে পারছি না। হ্যা^ গফুর আর তার মহেশ কে এই আলোচনায় আর টানলাম না
  • দেবব্রত | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ০৬:২৭80865
  • না না সে মুসলমান তো অনেক লেখাতেই আছে -আমি দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানদের উচ্ছেদের ,দেশত্যাগের কাহিনীর ,তাদের বেদনার কথা বলছি । দেশভাগের ফল তো শুধু উচ্চবর্ণের হিন্দুরা ভোগ করেন নি তার সাথে মুসলমান এবং নিন্মবর্গের হিন্দুরাও ভোগ করেছেন -তাদের কথা কোথায় ? সাহিত্য /প্রবন্ধ /সিনেমা /থিয়েটার /রাজনৈতিক আন্দোলন -ইত্যাদি ? থাকলেও অতি নগণ্য তথ্য হাতড়াতে হবে ।
  • kaushik | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ১০:১১80859
  • অত্যন্ত মনোগ্রাহী, তাৎপর্যপূর্ণ ও তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। পুরো লেখাটা পড়ার পরেই হয়ত মতামত দেওয়া উচিৎ ছিলো, কিন্তু একটা প্রশ্ন মনে এল। লেখাটায় রয়েছে -

    "বিশেষত বাংলায় মুসলমান ধর্মে পরিবর্তিত জনজাতি মূলত রাজবংশি ,পোদ , চণ্ডাল ,কোচ এবং অন্যান্য স্থানীয় ক্ষুদ্র সম্প্রদায় এই সম্প্রদায়ের ওপর ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাব ছিল অতি নগণ্য । অনুরূপ ভাবে পশ্চিম পাঞ্জাবেও বিভিন্ন জাট গোষ্ঠী মূলত মুসলমান ধর্মে পরিবর্তিত জনজাতি । তাই হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে ইসলাম অবলম্বন এই তত্ত্বও বাঙলায় মুসলমান ঘনত্বর কারণ হিসাবে ঠিক প্রযোজ্য নয় । "

    বাঙলায় ইসলামের আগমন যতদূর জানি লক্ষ্মণ সেনের পতনের আগে পরেই। তা, লক্ষ্মন সেনের কৌলিন্য প্রথার কুফলে প্রান্তিক মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি বলছেন?

    জাটেদের সম্পর্কে বলি, আজও উত্তর ভারতে জটেদের সামাজিক অবস্থান (অর্থনৈতিক নয়) রাজপুতদের চাইতে নিচে। রাজস্থানে জাটেরা একসময় মূলত উচ্চ বর্গীয়দের ক্ষেত-খামারে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করত। তা এহেন অবস্থায় "সামাজিক ন্যায়ের" দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে "সাম্যের ধর্ম" ইসলাম গ্রহন করাটা কি একটা lucrative offer নয়?

    প্রতিবেদক আমার এই ধোঁয়াশাটা কাটালে ভালো লাগবে।

    ভালো থাকবেন।
  • দেবব্রত | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ১১:০৪80860
  • kaushik ঃ- আপনার প্রশ্ন সঙ্গত কিন্তু বাঙলার যে সমস্ত অঞ্চলে মুসলমান ঘনত্ব অত্যাধিক ছিল প্রায় ৭০-৯০% , অবিভক্ত বাঙলার পূর্বের জেলাগুলি এবং রংপুর ও রাজবংশি অধ্যুষিত অঞ্চল ইত্যাদি এবং দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন লাগোয়া নমশূদ্র অধ্যুষিত অঞ্চল সেই অঞ্চলে লক্ষণ সেনের প্রভাব বা কৌলীন্য প্রথা তুলনামূলক কম ছিল অন্যদিকে বাঙলার পশ্চিমের জেলাগুলিতে বীরভূম ,বাঁকুড়া ,মেদিনীপুর ,হুগলী , বর্ধমানের কিছু এলাকা মুসলমান জনঘনত্ব তুলনামূলক ভাবে অনেক কম ছিল কিন্তু কৌলীন্য প্রথার প্রভাব যথেষ্ট ভাবে বর্তমান ছিল -তার মানে এই নয় যে বিপুল মুসলমান ঘনত্বের কারন হিসাবে কৌলীন্য প্রথা বা জাতিভেদ প্রথা একেবারেই কাজ করেনি ,কিন্তু সেইটাই একমাত্র বা প্রধান কারন হিসাবে যুক্তিগ্রাহ্য নয়। যেমন তরবারির ক্ষমতায় ইসলাম এই তত্ত্ব সেন্সাস সমর্থন করছেনা । ( লিখেছি মুল লেখায় ) বাঙলায় , বিশেষত বাঙলার পূর্বের জেলাগুলিতে বিপুল মুসলমান জন ঘনত্ব বেশ জটিল ইতিহাস ।
  • প্রতিভা সরকার | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ১১:০৭80861
  • দেশবিভাগ আর বাঙালি মুসলমান নিয়ে লেখা কম থাকার কারণ কি এই যে ছিন্নমূলদের বেশিটাই হিন্দু ? পাঞ্জাবী মুসল্মান উদ্বাস্তুরা কিন্তু মুহাজির কৌম মুভমেন্ট গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। তবে হ্যাঁ, নিম্নবর্গীয় ও উচ্চবংশীয় হিন্দু মুসলমানের যন্ত্রণার অনুপাত ও সাহিত্যে তার প্রতিফলন নিয়ে আমায় একটু পড়তে হবে।
    লেখাটায় মোক্ষম জায়গাগুলো ধরেছেন । কৌতুহল জাগায়। যেমন এখুনি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল জোর করে ধর্মান্তরকরণ ছিল খুব কম এটা আগেও পড়েছি। কিন্তু এই যে সাড়ে চারশো বছর রাজত্ব করার পরও স্বজাতিদের টেনে তুললাম না, তাদের বেশির ভাগই থেকে গেল কৃষিকাজে, এর থেকে আজকের রাজনীতিজ্ঞদেরো কিছু শেখার আছে। মানে তখন স্বজনপোষণের এমন রমরমা ছিল না। অনুগ্রহ বিতরণ করা হলেও জাত ধর্ম তেমন দেখা হতো না। নাহলে একটা শিক্ষিত সচ্ছল শ্রেণীর উদ্ভব হতে এত সময় লাগে !
    তবে যে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমান শাসকদের কুশাসন নিয়ে এত মুখর !
  • কল্লোল | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৬ ০২:৩০80866
  • উদ্বাস্তু বাঙ্গালী মুসামানের যন্ত্রনা উঠে আসা উচিৎ ছিলো ৪৭ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্যে। আমার এ নিয়ে ভালো ধারনা নেই। কেউ দুপয়সা দেবেন?
  • b | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৬ ০৩:৩৪80867
  • হয়নি, তার কারণ দুটো
    ১। উদ্বাস্তু মুসলমান সংখ্যায় কত ছিলো?
    ২। যাঁরা গেছিলেন, তাঁরা সম্ভবতঃ পাকিস্তান দাবীর মূল হোতা ও মুসলমান সমাজের এলিট (আবুল হাশিম/সুহরাওয়র্দী), তাঁদের কাছে পাকিস্তান একটা মুক্তি। কাজেই উদ্বাস্তু বেদনা বেশি না থাকাই স্বাভাবিক, এক যদি না কলকাতা নামক কসমোপলিট্যান শহরের প্রতি স্মৃতিমেদুরতা থাকে।
    ৩। কয়েকটি জায়গায় অতিসরলীকরণ ঘটেছে। হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি সুহরাওয়ার্দির আমলে মুসলমান সাম্প্রদায়িকতাও মাথা চাড়া দিয়েছিলো। বিমলকরের উড়ো খই (প্রথম খন্ড) পড়ে দেখবেন।
    ৪। সাহিত্য, ইতিহাস, ইংরিজি সাহিত্য অপ্রয়োজনীয় হবে কেন বুঝলাম না। বিজ্ঞান লোকে পড়ত না এটাই বা কে বলল।
    ৫। নমশূদ্রদের ১৯৫০ এর রায়টে পেঁদিয়ে বের করে দেওয়া হয়। মহাপ্রাণ যোগেন মন্ডল, পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী, পালিয়ে আসেন, বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে ১৯৫১ সালে লড়েন ও তাঁর জামানত জব্দ হয়।
  • Arupsakar | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৬ ০৪:১১80869
  • অসম্ভব ভালো একটা প্রবন্ধ পড়লাম। এই নিয়ে ভাসাভাসা ধারণা ছিল ! প্রসঙ্গত তিনটি বিসয়ে দৃষ্টি আকর্সন করছি জহর সরকারের কোন লেখায় জেনেছিলাম যে বাংলায় মুসলমান ধর্মান্তকরণের ৯০% হয়েছিল ১৪ -১৫ সতকের মাত্র কয়েকটা দশকে ।যদি সত্য হয় তাহলে তার নিশ্চই তাত্পর্জ আছে , কোথায় জেনেছিলাম মনে নেই ১৫১৬-১৮ সাল নাগাদ রাজমহল পাহাড়ে ব্যাপক ভূমিকম্প হয় ফলে গঙ্গার খাত পরিবর্তিত হয়ে যায় ,বর্তমান ভাগীরথী শুকিয়ে যায় পদ্মা যা কিনা পাউয়া খাল নামে পরিচিত ছিল ক্রমশ বড় হয়ে যায় । কয়েক দশকের মধ্যে হাওড়া,হুগলি, মেদিনীপুর এবং নদিয়া থেকে মাস এক্সোডাস শুরু হয় চাষীদের ! চাষী যেহেতু মুসলমান বেশি তাই মুসলমানের ঘোনোত্ব পূবে বেড়ে যায় । আমার মনে হয় হিন্দু সব্দটা না বলে উচ্চ বর্ণ হিন্দু বলা ঠিক হবে ।বাংলায় উচ্চবর্ণ দের প্রাদুর্ভাব অপেক্ষাকৃত আধুনিক ! তারা আজও নিজেদের পৃথিবীতে বন্দী আনলাইক উত্তর ভারত ? আমার ধারণা এটা। আপনার ফেসবুক লিংক খুলে এখানে মন্তব্য করলাম , সরগর নই অনেক বানান ভুল হলো । পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম , ফেসবুকে ট্যাগ করে দেবেন। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা প্রবন্ধ পড়িনি স্বীকার করতে লজ্জা নেই ।
  • দেবব্রত | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৬ ০৬:৩৭80868
  • মুলত লেখাটি দুটি পর্বে দেশভাগের সাথে বর্তমান বাঙলার মুসলমানের অবক্ষয়ের ধারবাহিকতার ইতিহাস বিষয়ক , দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হোলে বিষয় কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে যে কিছু মুসলমান স্বেছায় দেশত্যাগ করলেও বিভিন্ন সময় ধরে বিপুল পরিমাণ মুসলমানকে খেদানো হয়েছিলো এবং উচ্চবর্ণের বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের লেখা পত্তরে তাদের এই রিভার্স মাইগ্রেসন অনুপস্থিত , একই ভাবে নিন্মবর্গের বাঙালীরাও দেশভাগের এই বৃতান্তে অনুপস্থিত ।

    মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা তো ছিলই ,সাথে ' ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রোধে বাঙলার যে শিক্ষিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী অংশ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র ৪ দশকের ব্যবধানে বাঙলার সেই শিক্ষিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী অংশ দেশভাগের পূর্বে ধর্মের ভিত্তিতে প্রদেশকে ভাগ করার পক্ষে সংবদ্ধ আন্দোলন চালায় এবং প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে বাঙলা ভাগ মেনে নেয় ।' কিন্তু কে বেশী সাম্প্রদায়িক বা দেশভাগের বিষয়ে শিক্ষিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী অংশ ১৯০৫ সালের ভূমিকা নিলনা কেন সেই দিকটা এই লেখাটির পরিধিতে নেই -যা আছে তা হোল দেশভাগ পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের পক্ষে ধারবাহিক অবক্ষয়ের সূত্রপাতের অন্যতম প্রধান কারন । মনে হয় দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হোলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে ।
  • দেবব্রত | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৬ ০৬:৪৭80870
  • ধন্যবাদ আপনি লেখাটি পড়েছেন -যদিও বাঙলায় মুসলমান কিভাবে এলো ,কিভাবে কেবলমাত্র বাঙলার পূর্বের জেলাগুলিতে বিস্তার লাভ করলো অথচ পশ্চিমের জেলাগুলিতে বিস্তার লাভ করতে পারলনা তা এই লেখাটির আলোচ্য নয় তবে আপনি জহর সরকারের উল্লেখ করেছেন তাই বলি জহর সরকার এবিষয়ে খুব আগ্রহজনক মতামত রেখেছেন “ Islam came into Bengal through a palace coup in 1202 and there is little evidence of resistance to it or battles offered by Hindu forces. Since wealth was not concentrated in Hindu temples or courts, there are very few records of pitched battles or extremely violent events that have been mentioned so emotionally without reference to hard data.

    বাঙলার প্রাথমিক মুসলমান শাসনের কালে অত্যাচার ,খুন জখম , মন্দির ধ্বংস , যুদ্ধ বিগ্রহের কাহিনীর ভিত্তি নেই (যদিও সুনীতি বাবু এইরকম গল্প কিছু ফেঁদেছিলেন বটে )
    জহর সরকার আরও বলছেন ঃ-
    “ We need not get into the complexities of the state in which Hinduism was in other parts of India on the eve of the definitely invasive entry of Islam. But, in Bengal, we have little or no evidence to corroborate this conventional assertion, for Bengal was a Buddhist-ruled state presided by a non-Brahmanical dynasty for over three and a half centuries of the four and half that preceded the arrival of Islam. It is difficult to believe that the abortive attempts of just a few decades of Sena-sponsored Brahmanism successfully managed to attract the mainly autochthonous masses of this province from their Buddhist or folk deities30 to its own brand to inegalitarian, caste-conscious Hinduism. If one travels with Eaton’s logic, which we shall revisit at relevant intervals later in this piece, we may be more open to the distinct possibility that the transfer of loyalties of the majority of the Bengalis to Islam may have been effected directly from a stage when they were immersed in different shades of ‘popular religion’— and not from any recognisable or concrete ‘Hindu state’.”
    জহর সরকার এবং Eaton কেউই কিন্তু বাঙলার পূর্বের জেলাগুলিতে মুসলমান জনঘনত্বের কারন হিসাবে ব্রাহ্মণ্য তন্ত্র এবং কাস্ট কন্সাস হিন্দুইজমের অত্যাচারে ফলে নিন্মবর্গের হিন্দুদের দলে দলে মুসলমানে পরিবর্তিত হওয়ার কারন হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না । উল্টে বলছেন সেই সময়ে বাঙলার অধিকাংশ জনতা different shades of ‘popular religion’ এ বিশ্বাস করতেন “ and not from any recognisable or concrete ‘Hindu state”
    আপনার দ্বিতীয় বক্তব্য যে গঙ্গার খাত পরিবর্তিত হওয়ার ফলে জলের অভাবে ভাগীরথীর পশ্চিমপারের চাষি -মূলত মুসলমান পূর্ববঙ্গে মাস এক্সোডাস করে ফলত পূর্ববঙ্গে মুসলমান জনঘনত্ব বেড়ে যায় - এই ধারনাটি ঐতিহাসিক ভাবে অসমর্থিত । বরং ভাগীরথী এবং দামোদর দক্ষিণে সরে আসার ফলে মধ্যবর্তী এলাকায় বিভিন্ন বিল এবং জলাভূমির উদ্ভব হয় ,তাতে এই প্রথম রাড়বঙ্গে চাষের বিস্তৃতি ঘটে , পূর্ববঙ্গের তুলনায় রাড়বঙ্গে চাষের বিস্তার অপেক্ষাকৃত নবীন , সুতরাং চাষিদের মাইগ্রেট করে পূর্ববঙ্গে চলে যাওয়ার প্রশ্ন আসছেনা ,তাছাড়াও বাঙলার পূর্বের জেলাগুলির মধ্যে রংপুর /সিলেট এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা মুসলমান জনঘনত্ব প্রায় ৮০-৯০% ছিল রাড়বঙ্গ থেকে বহুদূরের পথ অথচ খুলনা/যশোর যা রাড়বঙ্গের থেকে তুলনামূলক ভাবে নিকটবর্তী সেখানে হিন্দু জনসংখ্যা এই কিছুদিন পূর্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল ।
    জহর সরকার বলেছেন “ Eaton examined the existing theories of 'forced conversion', 'allurements offered', etc, and concluded that the most significant factor was the spread of full-time agriculture in the East and North regions of Bengal, that was led by Muslim leaders later deified as
    holy Pirs, who led socially backward communities to a new life that lay beyond the rigid caste system of Sanskritic Hinduism.”

    বাঙলার পূর্বপ্রান্তে মুসলমান জনঘনত্বের অন্যতম কারন সুফি /পীর /আউলিয়া এবং তাদের ফ্লেক্সিবল ,হাফ তান্ত্রিক ,হাফ ম্যাজিকাল ধর্মাচারন । তুর্কী সুলতানদের নিন্মবর্গের বিপুল পরিমাণ হিন্দু জনসমাজ কে মুসলমান ধর্মে পরিবর্তিত করবার বিন্দুমাত্র উদ্যোগ ছিলনা । কিন্তু বর্ধমান /বীরভূম /হুগলী /মেদিনীপুর /চব্বিশ পরগনা /খুলনা এই ছয়টি জেলাতে মুসলমান তুলনায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় থাকলো কেন ? তার ইতিহাস ভিন্ন আগ্রহউদ্দীপক । অন্য কোন লেখায় লেখা যাবে ।
  • Arupsankar | ***:*** | ১৮ জুন ২০১৬ ০৫:০৫80871
  • ইন্টারেস্টিং প্রবন্ধ ,অন্নদাশংকর রায় সম্ভবত দেশভাগের সময় মুর্শিদাবাদের জেলাধিকারি ছিলেন তার বিনির ডায়েরী তে মনে হয় পড়েছিলাম তৎকালীন কংগ্রেসিদের মুসলমান ভাগিয়ে ওপারের উদ্বাস্তুদের এপারে জায়গা করে দেওয়ার চক্রান্তের কথা ।

    আপনি লিখছেন ‘ বর্ধমান মহারাজের সভাপতিত্বে হিন্দু প্রধান জেলাগুলির আইনপ্রনেতারা এক বৈঠকে ৫৮ জন বিভাজনের পক্ষে ভোট দেন কিন্তু সেই সভাতেই মুসলিম লীগের ২১ জনা বিভাজনের বিপক্ষে ভোট দেন ‘ বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন ?

    পুরো ব্যাপারটাই আমাদের জ্ঞানচর্চার বৌদ্ধিক চর্চার এলাকার বাইরে । বেশ কয়েকবার পড়তে হবে । হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মুসলমান সম্পর্কিত তত্ত্ব ( বেনের মেয়ে উপন্যাসে ব্যবহার করেছেন ) মাথা মোড়ানো বৌদ্ধরা দলে দলে মুসলমান হন, তাই বাঙলায় তাঁদের নাম হোল নেড়ে -সেটা দেখলামনা ।

    এই ব্লগ আমার নিয়মিত দেখা হয়ে ওঠেনা , পরের পর্ব প্রকাশিত হোলে আপনার ফেসবুক পেজে লিংক দিয়ে রাখবেন যাতে পড়তে পারি । আমার প্রশ্নের উত্তর যদি দেন সেটাও ফেসবুকে আপনার পেজে দিতে পারেন । আমি সেখানেও আপনার পেজে একই প্রশ্ন রেখেছি ।

    তবে প্রথম পর্বটি বেশ উৎসাহ জনক !
  • দেবব্রত | ***:*** | ১৮ জুন ২০১৬ ০৭:১৬80872
  • বেশ , আপনি জানেন রাজনৈতিক কারনে ব্রিটিশ নীতিনির্ধারকরা প্রদেশগুলির বৃহত্তর স্বায়ত্বশাসনের সুযোগ সীমিত করে রাখতে বেশ কিছু রক্ষাকবচের পরিকল্পনা করে, ১৯৩২ সালের সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ ছিল সেই কৌশলের অন্যতম অঙ্গ । প্রদেশগুলিতে বিভিন্ন সম্প্রদায় /জাতি এবং সামাজিক গ্রুপের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়ার জন্য ,ডিভাইড অ্যান্ড রুলের মাধ্যমে এক জাতির সাথে আরেক জাতির বিরোধ বজায় রেখে ভারতে ব্রিটিশ শাসন নিশ্চিত করতে এই গ্র্যান্ড প্ল্যান রচিত হয় । কেন্দ্র ও প্রদেশগুলির আইনপ্রনেতাগন কে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও স্বার্থের মধ্যে ভাগ করা হয় ।

    বাঙলার প্রস্তাবিত আইনসভার ২৫০ টি আসনের মধ্যে ইউরোপীয় গ্রুপ কে দেওয়া হয় ২৫ টি আসন অর্থাৎ ১০ ভাগ অথচ বাঙলায় তাঁদের জনসংখ্যা ছিল শতকরা এক ভাগেরও কম । আইনসভায় নির্বাচন ছিল পৃথক প্রতিনিধিত্ব মূলক -মুসলমানেরা নির্বাচিত করবে মুসলমানদের , হিন্দুরা হিন্দুদের এবং ইউরোপীয়রা নির্বাচিত করবে ইউরোপীয়দের । অন্নুনত শ্রেণী সহ হিন্দুদের দেওয়া হয় ৮০টী আসন মোট আসনের শতকরা ৩২ ভাগ অথচ ১৯৩১এর সেন্সাস অনুযায়ী বাঙলায় তাঁদের সংখ্যা ছিল 44%। জনসংখ্যার অনুপাতে মুসলমানেরাও সামান্য কম আসন পায় । ১৯৩১ সালে বাঙলায় মুসলমান ছিল শতকরা ৫৪% কিন্তু তাঁদের দেওয়া হয় ১১৯ টি আসন শতকরা 47.8% । ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস পায় ৮৬ টি আসন ,মুসলিম লীগ ১১৩ টি আসন ,নির্দল ১৪ টি আসন , ইউরোপিয়ান ২৫ টি আসন এবং অন্যান্য ১২ টি আসন । বর্ধমান মহারাজের নেতৃত্বে যে মীটিংটা সংগঠিত হয় সেখানে এই নির্দল ,অন্যান্য এবং কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে ৫৮ জন বিভাজনের পক্ষে ভোট দেন ।

    অন্নদাশংকর রায়ের বিনির ডায়েরী হাতের কাছে নেই , এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য আমি এই মুহূর্তে সমর্থন বা অসমর্থন করবার জায়গায় নেই । কারো পড়া থাকলে বলুন ।

    হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর “ নেড়ে “ তত্ব অর্থাৎ মাথা মোড়ানো বৌদ্ধরা দলে দলে মুসলমান হন, তাই বাঙলায় তাঁদের নাম হোল নেড়ে এই বলে যদি কিছু থাকে তবে তা অসূয়া প্রসূত ,এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা -বাঙলা সাহিত্যে ,নাটকে মুসলমানদের ব্যাঙ্গ /তাচ্ছিল্য এবং নিচু দেখানোর প্রতিবাদ হিসাবে সেই সময়ে ১৯০৩ সালে ইসলাম প্রচারক পত্রিকায় এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় । প্রবন্ধ টি ১৮৯৮ সালে Muslim Education Society’র “the animosity...found in Bengali literature.” নামক এক রেসলিউসনের ভিত্তিতে লেখা তাতে লেখা হয় : “ Everyone, beginning from the poet Iswar Gupta, Rangalal Band- hopadhyay, novelist Bankimchandra, the poet Hem Chandra Bandyopahyay, and Nabin Chanra (Sen) right down to the dis- ciples of their disciples which means any Hindu Tom, Dick and Harry, does not hesitate diabolically to abuse the Muslim race and to vilify their glorious ancestors. their use of abusive terms like Yavana, Mleccha, Pati Nere and so forth; their bad treatment of Mus- lim over jobs and their general inclination to do Muslims down wherever “their own interests are involved... All these things render Hindu-Muslim unity more distant.”

    যবন, ম্লেচ্ছ ,নেড়ে এইসব অবমাননা সূচক টার্ম ,তার সাথে “মাথা মোড়ানো বৌদ্ধরা দলে দলে মুসলমান “ হয়ে গেলো বলে নেড়ে বলা হত এর ঐতিহাসিক ভিত্তি অতি দুর্বল । পাল রাজাদের শাসনের অবশেষে ,লক্ষণ সেনের ব্রাহ্মণ্য যুগের দাপটে বাঙলার বৌদ্ধরা মুসলমান ধর্মান্তরিত হওয়ার সময়ে অধিকাংশই মাথা মোড়ানো শ্রমণ টাইপের কিছু ছিলেন বলে জহর সরকার সমর্থন করছেন না ।
  • Dilip | ***:*** | ২১ জুন ২০১৬ ০১:৪০80873
  • Few queries-
    'নেড়ে' নামের ঐতিহাসিক ভিত্তি কি ?
    দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানের সংখ্যা শতকরা কত ছিল ? ধারাবাহিক অবক্ষয়ের ফলে কতয় দাঁড়িয়েছে ?
  • Debabrata Chakrabarty | ***:*** | ২২ জুন ২০১৬ ০৬:২২80878
  • পুনরায় " যেহেতু লেখাটি বেশ দীর্ঘ ,সেহেতু লেখাটির একটি পর্ব এতাবৎ প্রকাশিত হয়েছে । লেখাটির শিরোনাম " "দেশভাগঃ পশ্চিম বঙ্গের মুসলমান এবং ধারাবাহিক অবক্ষয়" আমার মনে হয় দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হোলে বিষয় স্পষ্ট হবে ।

    ৩৭ সাল এবং ৪৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বলে কিছু ছিলোনা ।
    ৩৭ সালে মুসলিম লীগ একার ক্ষমতায় জেতেনি আশা করি মোটামুটি শিক্ষিত বাঙালি এই বিষয়ে অবগত তাই জাস্ট ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে মুল প্রবন্ধের বিষয় কে কভার করার জন্য -" অথচ দেশভাগের পূর্বে অপেক্ষাকৃত বর্ধিষ্ণু ,বাংলার রাজনীতিতে নির্ণায়ক স্থানের অধিকারী ,পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের এই ক্রম অবক্ষয়ের কারণ কী ? দেশভাগ তাদের কাছে কি অর্থ বহন করে আনে ? তাদের চিন্তাধারা ,জীবনযাপন , পেশা এবং প্রাত্যহিকতায় বা কী প্রভাব ? " এই প্রশ্নটির পরিপ্রেক্ষিতে -যে দেশভাগের পূর্বে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান কোথায় ছিল এবং দেশভাগের পরে কোথায় দাঁড়ালো ।

    পোলারাইজেশনের প্রশ্ন যখন আনছেন তখন এই বিষয় টিও নজরে রাখবেন ১৯৪৫-৪৬ এ কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগে উভয়েরই সর্বভারতীয় ফলাফল ১৯৩৬ এর তুলনায় ভালো হয় । তার ফলে উভয়েই আলোচনার টেবিলে আসে । ধর্ম নিরপেক্ষ কংগ্রেস মূলত হিন্দুদের দলে পরিনত হয় । সেই নির্বাচনে কংগ্রেস সারা ভারতে মাত্র ১,৩% মুসলিম ভোট পেয়েছিল । বাঙলায় ১৯৩৬ সালে কংগ্রেস মোট ৫২ টি আসন পেয়েছিল কিন্তু ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে ৮৬ টি আসন পায় । সমস্ত হিন্দু ভোট প্রদেশে এবং কেন্দ্রে কংগ্রেসের খাতায় গিয়ে জমা হয় ।

    অবিভক্ত বাঙলার ৬টি জেলাতে মুসলমান কখনোই সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিলোনা ১। বাঁকুড়া 2। পূর্ব মেদিনীপুর 3।বর্ধমান ৪ । হুগলী ৫ । চব্বিশ পরগনা ৬। খুলনা (সম্ভবত বীরভূমও ) এবং এর পেছনে নানাবিধ ঐতিহাসিক কারন বর্তমান কিন্তু বাকি জেলাগুলিতে বিংশ শতাব্দীর ২এর দশক পর্যন্ত হিন্দুরা সংখ্যালঘু হওয়া স্বত্বেও সমস্ত ক্ষমতায় মুসলমানদের থেকে এগিয়ে ছিল আর এই ক্ষমতাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে ।ইতিমধ্যে লিখেছি ।
  • দেবব্রত | ***:*** | ২২ জুন ২০১৬ ০৬:৫৩80874
  • মুসলমানদের ধারাবাহিক অবক্ষয় অর্থে জনসংখ্যা নয় নিশ্চয়ই । অর্থনৈতিক ,সামাজিক ,রাজনৈতিক অবক্ষয় এবং তার সাথে দেশভাগের সংযোগ ।
  • প্রশ্ন | ***:*** | ২২ জুন ২০১৬ ১০:০৭80875
  • মুসলমান অর্থনৈতিক ,সামাজিক ,রাজনৈতিক অবক্ষয় এবং তার সাথে দেশভাগের সংযোগ নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছে তখন অবিভক্ত বাংলায় মুসলমান প্রতিপত্তি বনাম দেশভাগের পর শুধু পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান অবক্ষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে । তুলনাটা কি ঠিক হলো ? সেই মাপকাঠি মানলে দেশভাগ পূর্বে সমগ্র বাংলায় হিন্দু অবস্থা ও এখন পূর্ববঙ্গে হিন্দু অর্থনৈতিক ,সামাজিক ,রাজনৈতিক অবক্ষয় নিয়েও প্রবন্ধ লেখা যায় ।
    হয় দেশভাগের আগে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান অর্থনৈতিক ,সামাজিক ,রাজনৈতিক অবস্থা বনাম এখন অবস্থা অথবা পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে মিলিতভাবে তখন ও এখনকার অর্থনৈতিক,সামাজিক ,রাজনৈতিক অবস্থার তুলনা করা উচিত ।
  • Debabrata Chakrabarty | ***:*** | ২২ জুন ২০১৬ ১০:৫৯80876
  • যেহেতু লেখাটি বেশ দীর্ঘ ,সেহেতু লেখাটির একটি পর্ব এতাবৎ প্রকাশিত হয়েছে । লেখাটির শিরোনাম " "দেশভাগঃ পশ্চিম বঙ্গের মুসলমান এবং ধারাবাহিক অবক্ষয়" -পূর্ববঙ্গের মুসলমান বা সেখানকার বর্তমান হিন্দু এই লেখাটির পরিধিতে অবর্তমানে ।তবে কেউ লিখতেই পারেন । লেখাটি পড়বার জন্য ধন্যবাদ ।
  • প্রশ্ন | ***:*** | ২২ জুন ২০১৬ ১২:৪৫80877
  • লেখাটির শিরোনাম " "দেশভাগঃ পশ্চিম বঙ্গের মুসলমান এবং ধারাবাহিক অবক্ষয়" -
    কিন্তু লেখার বিষয়বস্তু সমগ্র বাংলা । যেমন -
    " ১৮৭০/৭১ সালে বাঙলার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৪% ছাত্র ছিল মুসলমান অথচ ১৯২০/১৯২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় প্রায় ১৪-১৫ % । বাংলার কোন কোন অঞ্চলে যেমন ঢাকা ,হুগলী এমনকি প্রেসিডেন্সি কলেজে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা হিন্দু ছাত্রদের সংখ্যার সমপরিমাণ এমনকি কোথাও কোথাও বেশি হয়ে দাড়ায় । আর এই নব্য শিক্ষিত মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী পরবর্তীতে বাঙলার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে । মুসলমানদের এই অভাবনীয় অগ্রগতি তাদের হিন্দু কাউন্টার পার্টের সাথে প্রতিযোগিতা একই সাথে মুসলমান জনসংখ্যার বৃদ্ধি ক্রমে বাঙলায় হিন্দু জনসংখ্যা কে পেছনে ফেলতে শুরু করে । ১৯৩১ সালে বাঙলায় মুসলমান জনসংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ৫৪.২৯% । "
    - "বাংলার কোন কোন অঞ্চলে" বললে অস্পষ্ট হয় ,পশ্চিম বঙ্গের কোন কোন অঞ্চলে বলুন । ঢাকা তো পব নয়।

    "বাঙলায় ,সিন্ধে ,পাঞ্জাবে এবং আসামে মুসলমান জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এবং মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মুসলমান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বে কংগ্রেস মুসলিম লীগের হাতে পরাজিত হয়। অবিভক্ত বাঙলার শাসন ক্ষমতার শেষ দশ বছর ছিল মুসলিমলীগের সরকার। স্বাধীনতার ঠিক পূর্বে ১৯৪৬ সালে সুরাবর্দির নেতৃত্বে বাঙলার সরকার সেই সময়ে সারা ভারতে একমাত্র মুসলিম লীগ সরকার ।"
    - 37 সালে কংগ্রেস ছিল বৃহত্তম দল (https://en.wikipedia.org/wiki/Indian_provincial_elections,_1937) আর 46 সালে মুসলিম লীগ হলো বৃহত্তম দল ( https://en.wikipedia.org/wiki/Indian_provincial_elections,_1946) । পোলারাইজেশনের ফলে 37 সালের অন্য দল গুলোর আসন 46 সালে কোথায় গেলো খেয়াল করুন ।

    "অবিভক্ত বাঙলার শাসন ক্ষমতার শেষ দশ বছর ছিল মুসলিমলীগের সরকার" - 37 সালে ভোটে মুসলিম লীগ কিন্তু জেতে নি , প্রজা কৃষক পার্টি-র সাথে পোস্ট ইলেক্শন এলায়েন্স গঠন করে ( সঙ্গে নির্দল ও ছিল ) ও কৃষক পার্টি-র ফজলুল হক কে প্রধানমন্ত্রী বানায় , যে ফজলুল লীগ নেতা নাজিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছিলেন ও জিন্নার বিরোধিতায় করেন ।পরে তিনি মুসলিম লিগে ঢুকে পড়েন ।

    আর 37 ও 46 সালে পশ্চিমবাংলায় কোন জেলায় মুসলিম লীগ জিতেছিল বলুন তো ?
    প্রশ্ন থেকেই যায় , স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সমগ্র বাংলার মুসলমান আর এখন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানের তুলনাটা কি ঠিক হলো?
  • হাসান | ***:*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:১৮80879
  • গোটা বাংলা দখল করবে বৃহং ভারত গড়বে হায়না প্যাটেল, নেহেরু, মাউন্ট ব্যাটেন এর মত ফিরিঙ্গিরা আর বাংলার শিক্ষিত মুসলিম মদখোর রা
    মুরসিদাবাদ, নদীয়া , মালদা, বনগা , দিনাজপুর , কৃষাণগন্জ , কোচবিহার , তিপুরা , করিমগন্জ, হালিয়াকান্দি , কাছার ধুবড়ী , রাখাইন তুলে ‍দিল ইন্ডিয়ার রেন্ডিদের কাছে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন