এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  ইদের কড়চা  ইদের কড়চা

  • তেলাপোকা

    স্মৃতি ভদ্র
    ইস্পেশাল | ইদের কড়চা | ১৩ মে ২০২১ | ২৪৩০ বার পঠিত
  • অন্ধকার একটু গাঢ় হতেই সে বেরিয়ে এলো, চারপাশ ভাল করে দেখে খুব ধীর পায়ে শুরুতে এগোলো। এরপর অন্ধকারের নিস্তব্ধতা মেপে গতি বাড়লো একটু। অন্ধকার পুরোপুরি চোখ সওয়া হতেই এদিক ওদিক ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াতে লাগলো।

    আজ সন্ধ্যা হতেই হামিদুল সাহেবের মেজাজ খুব বিগড়ে আছে। সাধারণত এমন হয় না। ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের সৌম্যকান্তি মানুষটিকে দেখলেই মনে কেমন শ্রদ্ধাভাব জেগে ওঠে। এমনকি আশেপাশের লোকজনের কথা বাদ দিলেও নিজের বাসার মানুষগুলোর কাছেও তিনি রীতিমতো মাটির মানুষ। মাঝেমাঝে তো এমনও হয় কেউ হয়তো তার উপরে প্রচণ্ড রেগে আছে, কিন্তু যেই না হামিদুল সাহেবের মুখোমুখি হয়েছে, নির্ভেজাল সরল মুখটা দেখে অন্যের রাগও গলে জল হয়ে গেছে।

    এজন্যই বাড়ির মানুষ থেকে বন্ধু বান্ধব সবারই ওই এক কথা, হামিদুল আসলে এ যুগের বড় বেমানান মানুষ।

    অন্ধকারের নির্ভরতায় পুরোপুরি থিতু হতেই মনে হলো, একা কেন কয়েকজন মিলেই তো আজ কাজটি করা যায়। আর ভাবনা আসতেই ওদেরকে ইশারায় ডাকতে যাবে, ঠিক তখনি কারো পায়ের আওয়াজ খুব কাছে চলে এলো।

    হামিদুল সাহেব বেশ কিছুদিন হলো বাসায় একা। তার পরিবার বেশ লম্বা সময়ের জন্য গ্রামে গেছে। পরিবার বলতে ওই তো স্ত্রী আর একটি ছেলে সন্তান। পরিবারহীন একলা সময় যতটা খারাপ লাগবে বলে ভেবেছিলো, ততটা খারাপ অবশ্য লাগছে না তার। নিজের ইচ্ছেমতো যা খুশি করা যায় একা হলে, এটা আবিষ্কার করার পরেই উল্টো ভাল লাগতে শুরু করেছে। আর সেই আনন্দেই আজ সারা দুপুর ভরে এক হাঁড়ি সবজি খিচুড়ি রান্না করেছে। দু’দিন রেখে খেতে পারবে, এটা ভেবে।

    পায়ের আওয়াজটা খুব কাছে এসে থেমে গেলো। কিছু সময় এরপর শুধুই নিস্তব্ধতা। এতই নিঃস্তব্ধ যে মনে হচ্ছিলো একটু নড়লেই খসখস শব্দের ঝড় উঠবে। তাই প্রায় নি:শ্বাস বন্ধ করে চুপচাপ পড়ে থাকলো কিছুক্ষণ।

    ভাবলে কী হবে, রসিয়ে সবজি খিচুড়ি খাওয়ার ভাগ্য নেই হামিদুল সাহেবের। একটু পরেই বেরোতে হবে তাকে। সাধারণত যখন এরকম হুট হাট ডাকে যেতে হয়, তখন মনে মনে খুব উত্তেজিত হয়ে থাকে সে। কিন্তু আজই প্রথম তার মেজাজ বিগড়ে গেলো। এমনিতেই ক’দিন ধরে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে সে খুব ব্যস্ত। দিন নেই রাত নেই সবসময়ই জটিল এই প্রজেক্টের কাজ নাক গুঁজে করে যাচ্ছে। আর তার উপর যখন তখন সাইটে গিয়ে ফিল্ড ওয়ার্কও করতে হয়। ঠিক এ কারণেই পরিবারকে লম্বা সময়ের জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রজেক্টের কাজে কোনোরকম ব্যাঘাত ঘটুক তা কেউ চায় না।

    পায়ের আওয়াজটা কিছু সময় পরেই আবার ফিরে এলো। এবার খুব দ্রুত শব্দটা নিকটে আসছে। হাতে সময় খুব কম তা নিশ্চিত । আর নিশ্চিত হতেই মনের ভেতর এক অদ্ভুত দোলাচল শুরু হলো। কী হবে আজ যদি ধরা পড়ে যায়? ধরা পড়ার পরেও যদি ছুটে গিয়ে লুকিয়ে পড়া যায়, তাহলে কেমন হবে? নাকি অন্ধকারেই লুকিয়ে পড়বে? এসব ভাবতে ভাবতেই একটা তীক্ষ্ণ আলো এসে চোখে বিঁধলো।

    পরিবার কাছে নেই বলে এতদিন ধরতে গেলে খাওয়া দাওয়ার দিকে নজরই দেয়নি হামিদুল সাহেব। কোনোরকমে দু’টো চাল ফুটিয়ে নিয়েছে। গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। এমন বৃষ্টি অনেকদিন হয়নি। শেষ এমন বৃষ্টির কথা মনে করার চেষ্টা করলেই হামিদুল সাহেবের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মনে পড়ছে।

    হামিদুল নামটির সাথে তখন সাহেব শব্দটি যুক্ত হয়নি। বন্ধুদের কাছে শুধুই হামিদ। অনেকে আবার মজা করে হামিদ সাধু বলতো। কারণ আর কিছুই নয়, হামিদুল সাহেবের থিসিসের বিষয় ছিল লালন সাঁই। আর একারণেই হামিদুল সাহেবকে প্রায়ই যেতে হতো আখড়ায়। সেখানে অন্য সাধুদের দ্বারা এতই প্রভাবিত হয়েছিল যে তার আচার আচরণে তো বটেই চেহারাতেও প্রভাব পড়েছিলো খুব। লম্বা চুল চূড়ো করে বাঁধা, হাতে গলায় পেঁচানো রুদ্রাক্ষের মালা আর সাদা পাঞ্জাবিতে মায়াবী চোখের হামিদুলকে আক্ষরিকভাবেই লালনের সাধক মনে হতো।

    আলোর তীক্ষ্নতা যতটুকু যন্ত্রণা দিলো তার থেকেও বেশী কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো মরার মতো পড়ে থাকা। আওয়াজের দ্রুততাকে রীতিমতো পেছনে ফেলে মানুষটি খুব কাছে চলে এসেছে। এখন নড়বার সময় নেই মোটেও। নড়তে গেলেই নির্ঘাত নজরে পড়ে যাবে। যে জায়গাতে আছে সেখানে একটু আধটু আড়াল আছে। তাই পা’ গুলো কোনোরকমে জড়ো করে এখানেই নি:শ্বাস বন্ধ করে পড়ে আছে। যদিও এটুকু জায়গায় এভাবে গুটিয়ে থাকতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। শরীরের প্রতিটি কোষে ছড়িয়ে পড়ছে সেই অসহ্য যন্ত্রণা। তবুও নড়ার উপায় নেই, নড়লেই আধো অন্ধকার থেকে শরীরটা পুরোপুরি আলোতে এসে পড়বে।

    হামিদুল সাহেব কিন্তু শুধু অ্যাকাডেমিক কারণেই লালন সাঁইকে অনুসরণ করতো তা নয়, অদ্ভুতভাবে মন থেকেও একটা নৈকট্য ছিল। আসলে নাড়ির টানেই এটা হয়েছে। তার বেড়ে ওঠা তো ওই পরিবেশেই।

    ছেঁউড়িয়া আখড়ার পাশের গ্রমেই হামিদুল সাহেবের বেড়ে ওঠা। আর তার আব্বাও ছিলেন লালন সাঁইয়ের অনুসারী।শুধু অনুসারী বললে মনে হয় ভুল হবে, উনি মনেপ্রাণে অনুসারণ করতেন লালন সাঁইয়ের পথ। এজন্যই হামিদুল সাহেব যখন লালন সাঁইকে নিয়ে থিসিস করতে চাইলো, তখন তিনি খুব আবেগ নিয়ে বলেছিলেন, ‘আব্বা রে, সংসারে মানব জাতির উপর উপাস্য নাই, সাঁইজিকে পড়লে এ কথাই পাইবা।’

    কতক্ষণ এরকম দম আটকে থাকা যায়? আর এদিকে পা’গুলো মনে হচ্ছে ব্যথায় অবশ হয়ে আসছে। অল্প এই জায়গায় যেকোন কায়দায় পা একটু নাড়িয়ে সচল করতে হবে। না হলে পঙ্গু জীবন বয়ে বেড়াতে হবে নির্ঘাৎ। আর ভাবনাটা আসতেই পায়ের টনটনে ব্যাথাটা কয়েকগুণ বেড়ে গেলো।

    সংযোগও ঘটে গেলো আচমকা।

    মোবাইল ফোনের রিংটোন খিচুড়ি, বৃষ্টি, লালন থেকে মন সরিয়ে নিলো হামিদুল সাহেবের। আর সাথে সাথেই মনের সেই বিগড়ানো ভাবটাও উবে গেলো। প্রায় দৌড়ে গেলেন ফোনের কাছে। তবে বেশী কথা নয়, হুঁ হ্যাঁ দিয়েই সেরে নিলেন কথা।

    সুযোগটা কাজে লাগিয়েই পা একটু ছড়িয়ে নেবার অবকাশ এলো। পালানোর কথাও মনে এলো তখনি। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে আর অন্য কোনো উপায় থাকবে না। পা গুলো একটু স্বাভাবিক হতেই দৌঁড়াতে গেলো, পারলো না। এরপর প্রায় খুঁড়িয়েই আলোর জায়গা টুকু পার হয়ে অন্ধকারে পুরোপুরি মিশে গেলো।

    ফোনে কথা শেষ করেই খুব ফুরফুরে হয়ে উঠলো হামিদুল সাহেব। ওদিকে বাইরে বৃষ্টির তোড় বাড়ছে। না, আজ সবজি খিচুড়ির লোভ তার পক্ষে সামলানো খুব কঠিন। বৃষ্টি হলেই খিচুড়ির অভ্যাস তো তার আজ নতুন নয়। আর সেই অভ্যাসে নতুন করে রঙ চড়িয়েছে নবনী। নবনী'র নাম মনে আসতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে ওঠলো হামিদুল সাহেবের। নবনী মানুষটিই এমন। খুব শান্ত, কিন্তু আগাগোড়া মায়াবী একটি মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নবনীর সাথে পরিচয় তার। তখনও অবশ্য নবনী তার এই নামটি পায়নি। আয়েশা আখতার নামের গ্রামের সরল মেয়েটি ভর্তি সংক্রান্ত জটিলতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলো। তখনি হামিদুল সাহেব এগিয়ে গিয়েছিলো সাহায্য করতে। সেই এগিয়ে যাওয়াটা নৈকট্যে পরিবর্তন হতে সময় লাগেনি। নবনী নামটিরও হামিদুল সাহেবের মনে আবির্ভাব হয়েছিলো তেমন কোনো নৈকট্যের সাক্ষী হয়েই। তবে আজকাল নবনী নামটাকে মোটামুটি ভুলিয়েই দিয়েছে সে, কারণ আর কিছুই নয় ওসব আবেগের কাছে 'আয়েশা' নামের ধর্মীয় ব্যাখ্যাটা এখন বেশী যুক্তিযুক্ত এখন হামিদুল সাহেবের কাছে।

    বৃষ্টিদিন বলেই বুঝি এতদিন পর সেসব কথা মনে পড়ছে হামিদুল সাহেবের। নয়তো এখন ভাববে সামনের গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের কথা, কীভাবে ফিল্ড ওয়ার্ক করে একটা ফলপ্রসূ পরিকল্পনা দাঁড় করানো যায় সেসব কথা। তা নয় এখন তার মাথায় আসছে নবনী, লালন সাঁই, আব্বা এদের কথা। ভীমরতি মনে হয় একেই বলে।

    সত্যি বলতে ভীমরতি কিন্তু সেদিনও হয়েছিলো যেদিন আব্বা তাঁর সারাজীবনের সম্পদ হামিদুল সাহেবের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলো, সাঁইজিকে নিয়ে আমার জমানো কথার এই খাতা তোমারে দিলাম; দেখো কোনো কাজে আসে কীনা।

    কাজে আসবে কীনা সেটার অপেক্ষায় থাকেনি হামিদুল সাহেব। বরং সাঁইজিকে এমনভাবে জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেলেছিলো যে খাতাটির প্রাসঙ্গিকতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলো তার জীবনে। থিসিস শেষ করার পরে কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিপার্টমেন্টে লালন সাঁইয়ের কোর্সে অতিথি শিক্ষকের কাজও করলেন। কারণ আর কিছুই নয়, সাঁইজির ভাবধারা পুরোপুরি হামিদুল সাহেবের মনে ততদিনে গেড়ে বসেছে। সাঁইজিকে নিয়ে বড় কিছু করার ইচ্ছা জীবনে একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    ঠিক সে সময়েই নতুন একটি চাকুরির অফার এলো হামিদুল সাহেবের। পার্ট টাইম চাকুরি ছেড়ে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হলেন তিনি। সেই চাকুরিসূত্রেই এখন হামিদুল সাহেব এখানে। আর এই চাকরিই কীভাবে যেন এখন তার ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠেছে। বলা যায়, আমূল পালটে দিয়েছে এই চাকরি হামিদুল সাহেবকে। তবে এটা হয়েছে খুব ধীরে, সময় নিয়ে।

    প্রথম প্রথম তো হামিদুল সাহেব এই চাকরি করতেই চাননি। যোগ দেবার কিছুদিন পরেই বুঝতে পেরেছিলেন এই চাকরি আর কিছু না হোক তার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে সময়। নয়টা-পাঁচটা ক্লাসের পরেও সেমিনার, সভা এটা ওটা লেগেই থাকতো। আর তার উপর কাজের জায়গার পরিবেশ। সবাই কেমন যেন সারাক্ষণ ঘাড় গুঁজে থাকতেই বেশী পছন্দ করতো, কোনো মতের বিনিময় নেই, একাডেমিক আলোচনার বাইরে কোনো কথা নেই; মোট কথা সবকিছুতেই কেমন প্রাণহীন ভাব। চাইলেই হামিদুল সাহেব লালন সাঁই নিয়ে কথা বলতে পারে না, দু'লাইন গুনগুন করে গেয়ে উঠতে পারে না,

    'পাবে সামান্যে কি তার দেখা
    বেদে নাই যার রূপরেখা...'

    তবে শুরুতে যে হামিদুল সাহেব চেষ্টা করেনি এমনটা নয়। একে তাকে ধরে লালন সাঁইজির জীবনবোধের গল্প বলা, হেঁটে যেতে যেতে দু'লাইন গেয়ে ওঠা; তবে তাতে যা হলো অন্তত একজন মানুষ জুটে গেলো তার কথা বলার।

    মানুষটি প্রথম কয়েকদিন হামিদুল সাহেবের হাবভাব খুব করে লক্ষ্য করলো, এরপর কিছুদিন সময় নিলো ভাবার। তারপর একদিন লাঞ্চ ব্রেকে গিয়ে বসলো হামিদুল সাহেবের পাশে, আমি প্রফেসর এম, এ, হাশেম-----বলে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো।

    সেদিনের সেই বাড়িয়ে দেওয়া হাত আজও ধরে আছে হামিদুল সাহেব।

    ফোনটা একটু আগে হাশেম সাহেবই করেছিলো। এই মানুষটার সাথে কথা বললেই মন ভাল হয়ে যায় হামিদুল সাহেবের। তবে শুরুতে কিন্তু এমন হয়নি। পরিচয়ের খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হামিদুল সাহেব বুঝে গিয়েছিলো অন্যপাশের মানুষটি শুরু অন্য মেরুরই নয়, অন্য ধরণেরও। তাই দু'একটা কথার পরেই যখন সুরের ছন্দপতন হচ্ছিলো তখন হামিদুল সাহেব ঠিক করেই নিয়েছিলেন মানুষটিকে এড়িয়ে চলবেন। কিন্তু ওই যে হাশেম সাহেব মানুষটিই অন্য ধরণের। নিজের দলে কাউকে টানার পণ করেই তিনি হাত বাড়ান। তাই প্রায় যেচে পড়েই হামিদুল সাহেবের সাথে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে গেছেন। এমনও হয়েছে কোনো বিষয়ে তুমুল তর্কের পর হামিদুল সাহেব যখন প্রায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন, তখনই নতুন কোনো ছুতোনাতায় আবার হাশেম সাহেব এগিয়ে এসেছেন। বলতে গেলে হাশেম সাহেবের পুরোপুরি চেষ্টাতেই হামিদুল সাহেব ঠিক এখনকার মানুষটি হয়ে উঠেছেন।

    ফোন রেখে ফুরফুরে মনে হামিদুল সাহেব আবার রান্নাঘরের দিকে যান। এমনিতেই বৃষ্টির রাত তার উপর এই প্রজেক্টের সব কাজ গোছানো শেষের খবর পাওয়া গেলো, এখন অন্তত সবজি খিচুড়ির উপলক্ষ্য খুঁজতে হবে না।
    বিকেলে রান্না করা সবজি খিচুড়ির পাতিল উলটে দেয় ডাস্টবিনে হামিদুল সাহেব। এরপর পাতিল ধুয়ে কাটতে শুরু করে সবজি। নতুন খিচুড়ি বসাতে হবে। হুট করেই সে সুর ভাঁজতে শুরু করে,

    'মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি'

    ইচ্ছে করেই 'মানুষ' শব্দটির উপর জোর দেয় হামিদুল সাহেব।

    গানটি নবনী ওরফে আয়েশা খুব ভাল গাইতো। আজ বারবার নবনী নামটি এসে টোকা দিচ্ছে হামিদুল সাহেবের মনে। সেই কবে থেকেই তো নামটিকে বনবাস দিয়েছে সে। প্রথম প্রথম 'আয়েশা' নামে অবাক হতো আয়েশা। বলতো, এই নামে কেন ডাকছো, কী হয়েছে তোমার? আর এর সাথেই অসন্তোষের ভাঁজগুলো মুখে ছড়িয়ে জানান দিতো, ভালবাসার সেই 'নবনী' নামটি ছাড়তে নারাজ সে। কিন্তু সে অসন্তোষ খুব বেশীদিন প্রতিরোধ করতে পারেনি। আয়েশা নামের প্রকৃত অর্থের কারিগরি হাজির করে হামিদুল সাহেব বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি এ নামটিকেই ভালবাসতে চান। আর 'নবনী' নামের সাথে সাথেই আয়েশার কাছ থেকে গানও বিদায় নিয়েছে।

    তবে সেসব কিন্তু ঘরে। বাইরে এর তার সামনে ডাকার প্রয়োজন হলে এখনো নবনী নামটিই বেছে নেয় হামিদুল সাহেব। আরোও অবাক করা বিষয় সুযোগ পেলেই সবার সামনে লালনের গান গাইবার জন্য নবনীকে অনুরোধ করা। বেচারি নবনী এই আচরণের কোনো খেই না ধরতে পেরে শুধু 'গান গাওয়া অনেকদিন ছেড়ে দিয়েছি বলে' নিঃস্পৃহ হয়ে যেতো।

    এতটাই নিঃস্পৃহ যে, আজ অব্দি হামিদুল সাহেবের এমন আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি সে।

    নবনী ওরফে আয়েশা মেয়েটিই এমন। খুব শান্ত, ধীর-স্থীর, অভিযোগহীন আর হামিদুল সাহেবের ভাষায় 'সরল'।

    নবনীর ভাবনা দূরে ঠেলে হামিদুল সাহেব সবজি কাটায় মন দেয়। সবজি কাটতে কাটতেই মনের ভেতর হিসেব কষে নেয়। আর মাত্র দু'দিন। এরপর প্রজেক্ট শেষ হলে তিনিও লম্বা সময়ের জন্য গ্রামে যাবেন আয়েশার কাছে। এজন্য অবশ্য ডিপার্টমেন্টে দরখাস্তও করে রেখেছেন।

    ছুটির ভাবনা আসতেই হামিদুল সাহেবের সৌমকান্তি চেহারায় প্রশান্তি ফুটে উঠলো। কতদিন গ্রামে যাওয়া হয়নি। এবারের প্রজেক্ট নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথাবার্তা চলছিলো। খুব জটিল প্রজেক্ট বলে সময় দিতে হচ্ছে খুব। এজন্য বুঝি একটু ক্লান্তিও এসেছে। আসলে প্রজেক্টের কাজ তো প্রায় সারা বছরই লেগে থাকে, তবে সেসব খুব বড় কিছু নয়। অন্তত এবারের মতো জটিল নয়।

    মনে মনে ঠিক করেও রেখেছে কবে যাবে গ্রামে। সেই যে সে বছর, যে বছর প্রথম জয়েন করলো এখানে সেবারই শেষ গিয়েছিলো গ্রামে হামিদুল সাহেব। আর যা ঘটেছিলো সে বছর তা তো সে মনে আনতেই চায় না।

    সেবার অগ্রহায়ণের শেষে গ্রামে গিয়েছিলো। আব্বা তখন পহেলা কার্তিক নিয়ে খুব ব্যস্ত। বলতে গেলে আখড়াবাড়িতেই সারাদিন পড়ে থাকে। হামিদুল সাহেবকে দেখে বলেছিলো, খুব ভাল হয়েছে তুমি এসেছো আব্বা, আখড়াবাড়ির অনুষ্ঠানে সাঁইজিরে নিয়ে তোমার পড়াশুনার গল্প শুনাবা সবাইরে।

    আব্বার এই অনুরোধে হামিদুল সাহেব শুধু এটুকুই বলেছিলো, সেসব তো সব সময় হয় আব্বা, আর আমি তো পহেলা কার্তিকের জন্য আসিনি; এই বয়সে আখড়াবাড়িতে সারাদিন পড়ে থাকা ঠিক নয় আপনারও।

    গুনে গুনে এ কয়েকটা শব্দই, তাতেই আব্বার মুখটা কালো হয়ে যেতে দেখেছিলো হামিদুল সাহেব। আর এর পরেরদিনের ঘটনায় তো আব্বা অসুস্থই হয়ে পড়লেন।

    সেদিন আখড়াবাড়ির অনুষ্ঠান শেষ করে আব্বা সাথে দু'জন সাধু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। মরা কালী নদীর ঠিক ভেঙে পড়া পাড়ের কাছে কোথা থেকে কয়েকজন এসে দু'জন সাধুকে আব্বার সামনেই গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। জ্যান্ত মানুষ দু'টোর মুরগীর মতো ছটফট করা মৃত্যূ দেখার আগেই জ্ঞান হারিয়েছিলো আব্বা। সে জ্ঞান ফিরেছিলো ঠিক কিন্তু আব্বা আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি পক্ষাঘাতগ্রস্ত আব্বা সেদিনের পর থেকে কথা বলাও ভুলে গিয়েছিলো। অনেক চেষ্টা করে মুখ থেকে যেসব শব্দ বের হতো গোঙানি থেকে তা আলাদা করা খুব কঠিন হতো। অসুস্থ আব্বাকে সেভাবে রেখেই ফিরতে হয়েছিলো হামিদুল সাহেবের ডিপার্টমেন্টের জরুরী কাজে।

    এরপর আব্বা আর বেশিদিন বাঁচেননি।

    শুনেছে আব্বার কবরটা পাশের পুকুরের সাথে প্রায় মিশে যাবার উপক্রম হয়েছে। ইচ্ছে আছে এবার গ্রামে গিয়ে আব্বার কবরটা সিমেন্টে বাঁধিয়ে দেবার।

    সবজি খিচুড়ি চুলোয় চাপাতেই আবার ফোনের রিং টোন। একটু অবাকই হয় হামিদুল সাহেব। কারণ একরাতে দু'বার ফোন করেন না হাশেম সাহেব। খুব জরুরী কিছু হবে। স্বভাববিরুদ্ধ প্রায় দৌড়ে গেলেন হামিদুল সাহেব। বিছানার উপর থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়েই কানে ঠেকালেন। কথা শুনতে শুনতে কয়েকবার ভ্রু কুঁচকে গেলো তার। আর ফোনটা রাখার আগে শুধু বললেন, আজ রাতেই তাহলে করতে হবে?

    সবজি, সুগন্ধি চাল আর গরম মশল্লা মিলেমিশে অপূর্ব ঘ্রাণ ছড়িয়েছে। অন্ধকারে সেই ঘ্রাণ মিশে অদ্ভুত আলোড়ন তুলছে। না, খুব বেশী সময় এ ঘ্রাণ উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তবে অপেক্ষা করতে হবে উপযুক্ত সময়ের জন্য।

    হামিদুল সাহেব ফোন রেখেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে তাড়াহুড়ো করে। প্রজেক্টের প্রতিটি ফাইলে চোখ বুলিয়ে একটি নতুন আপডেটেড ফাইল খোলে। এরপর ফাইলটি ইমেইল করে দেয় হাশেম সাহেবকে।

    হামিদুল সাহেবের সেই সৌমকান্তি চেহারায় অজস্র ঘামের বিন্দু। কয়েকবার ঘর বারান্দা করলো তিনি। ঢক ঢক করে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেন। এরপর ঘরের বাতি নিভিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লেন।

    চুলায় তখন সবজি খিচুড়ির চালগুলো ফুটে গলতে শুরু করেছে। সবজিগুলো সেদ্ধ হয়ে মিশে যাচ্ছে চালডালের মিশ্রণে।

    বাইরে বৃষ্টির তোড় বেড়েই যাচ্ছে।

    সেই বৃষ্টিতে আবছায়া একটি গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে শহরের চৌমাথার দিকে।

    সবজি খিচুড়ির পানি শুকোতে শুরু করেছে।

    অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার উপযুক্ত সময় এটাই। খুব নিস্তব্ধে এক পা দু' পা ফেলে সামনের দিকে।

    বৃষ্টিতে ভিজে গাড়িটি এসে থামে বিশাল একটি স্থাপত্যের সামনে। বলা হচ্ছে, এই এক স্থাপত্যই নাকি পুরো দেশকে চিত্রিত করছে।

    খিচুড়ি পানি ফুরিয়ে পুড়তে শুরু করেছে। সেই তীব্র পোড়া গন্ধে ঘুম ভেঙে যায় হামিদুল সাহেবের। সে ভুলেই গিয়েছিলো সবজি খিচুড়ির কথা। ছুটে চলে আসে রান্নাঘরে।

    অন্ধকার পেছনে ফেলে আলোতে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র। এবার পাতিল নয়, লক্ষ্য ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া বিকেলের খিচুড়ি। মাথা ঘুরিয়ে সেদিকেই তাকাতেই সামনেই বিশাল একটি মানুষ।

    হামিদুল সাহেব এবার আর নিজেকে সংযত করতে পারলেন না। সারাবাড়িতে এদের অত্যাচার বেড়েই চলেছে। ব্যাপারখানা এমন, এরা চাইলেই যা খুশী করতে পারে। বিকেলে রান্না করা অতগুলো খিচুড়ি এদের জন্যই এখন ডাস্টবিনে। এসব আর কতদিন মেনে নেওয়া যায়।

    প্রথমে হাতের কাছে পাওয়া খুন্তি তুলে ছুড়ে মারে। কাজ হয় না। খুন্তির তলা থেকে বের হয়ে দৌড় লাগায় বাসনের ক্যাবিনেটের দিকে। ওই অন্ধকারে মিশে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

    এবার হামিদুল সাহেব সব ক্রোধ নিয়ে হামলে পড়ে।

    সবজি খিচুড়ি তখন পুড়ে কালো হয়ে যাচ্ছে।

    হামিদুল সাহেবের নিজের উপর এখন কোনো কন্ট্রোল নেই। ভয়ংকর হয়ে উঠছে সে। সব বিরক্তি আর রাগ উগড়ে দিচ্ছে আজ। তীব্র আক্রোশে পা তুলে দিলো হামিদুল সাহেব।

    প্রচণ্ড বিস্ফোরণ বৃষ্টির পানিতে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো ইট সুরকির টুকরোগুলো।

    আর এদিকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে পিষতে থাকা হামিদুল সাহেব হঠাৎ আবিষ্কার করলো তার পিঠে গজিয়ে উঠেছে বাদামী রঙের পাখা, ঠিক পায়ের নীচে নিস্তেজ হয়ে আসা তেলাপোকার পাখার মতো।




    অলংকরণ- মনোনীতা কাঁড়ার
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ১৩ মে ২০২১ | ২৪৩০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ঘন্টাঘর - একক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 2402:3a80:1347:31:f59b:628d:7468:***:*** | ১৪ মে ২০২১ ১৬:০৬105964
  • বেশ 

  • Somenath Guha | ১৫ মে ২০২১ ১৫:০৯106015
  • ভালোই।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন