এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পিপীলিকার পাখা

    Muradul islam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ অক্টোবর ২০১৭ | ২৩৮৩ বার পঠিত
  • এক
    আরমান সাহেব তার কাজের ছেলে মজনুকে জিজ্ঞেস করলেন, “এতে কি হবে বলছিস?”

    মজনু মাথা নেড়ে বলল, “জি স্যার। এই বেপারে নিশ্চিন্ত থাকেন। বইন্যার সময় দেখেন না পিঁপড়া নাই হইয়া যায়। বলেন তো তারা কই যায়?”

    আরমান সাহেব আসলেই বুঝতে পারলেন না বন্যার সময় পিঁপড়াগুলো কোথায় যায়। এ নিয়ে তিনি আগে কখনো চিন্তা করেন নি। মজনুকে জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যায়?”

    মজনু হাসিমুখে বলল, “মাটির নিচে যায়। গিয়া সেইখানে বইসা থাকে। আর যারা সাহসী আছে তারা উপরে আসার চেষ্টা করে এবং মইরা যায়।”

    মজনু নিশ্চয়ই আরো কিছু কথা বলত। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে আরমান সাহেবের স্ত্রী তাকে ডাকছিলেন। সুতরাং সে চলে গেল। আরমান সাহেব আবার বাগানের পিঁপড়াদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে বসলেন। মজনুর দেয়া আইডিয়াটার ভালো মন্দ দিক নিয়ে ভাবতে হবে। যেকোন কাজ শুরু করার আগে ভালো দিক এবং মন্দ দিক নিয়ে ভাবতে হয়।

    আরমান সাহেব অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। তার সুদৃশ্য বাসার সামনে একটি বাগান। সেই বাগানে দুয়েকটা ফুলের গাছ, কয়েকটা সবজির গাছ ইত্যাদি ছিল। চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর আরমান সাহেব বিভিন্ন ধরনের ফুলের এবং বারোমাসি সবজির গাছ লাগালেন বাগানে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি অদ্ভুত এক সমস্যায় পড়েছেন। তার বাগানে পিঁপড়াদের আগমন হয়েছে এবং এই পিঁপড়াদের তিনি সহ্য করতে পারছেন না।

    প্রথমে যেদিন পিঁপড়া দেখলেন সেদিন তিনি পিঁপড়াদের সারি লক্ষ করে হাঁটতে হাঁটতে তাদের গর্তের দেখা পেলেন। কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে সে গর্ত ঢেকে দিলেন। ভেবেছিলেন বোধহয় সব সমস্যা শেষ হয়ে গেল। যেন তিনি নিজের কিছু গোপন পাপ চাপা দিচ্ছেন এমনভাবে পিঁপড়াদের গর্ত মাটি চাপা দিয়ে সরে পড়লেন।

    কিন্তু পরদিন সকালে খবরের কাগজ এবং চা হাতে যখন বাগানে বসেছিলেন তখন দেখলেন সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে সাবলিল ভাবে হেঁটে যাচ্ছে পিঁপড়ার সারি। দেখে তার সারা গায়ে যেন আগুন ধরে গেল। কাছে গিয়ে পিঁপড়াগুলিকে তিনি যেন চিনতে পারলেন। তার মনে হল এগুলো কালকের পিঁপড়াই। গর্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্যদিকে খুঁড়ে বের হয়ে এসেছে নিশ্চয়ই।

    সেদিন পিঁপড়াগুলো খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাদের অনুসরন করে গিয়ে পেলেন আরেকটি গর্ত। রান্নাঘর থেকে ‘তেলাপোকা ও পিঁপড়া মারার ওষুধ’ এনে ঢাললেন গর্তে। ছটফট করে পিঁপড়াগুলো মরছিল। দেখে আরমান সাহেবের বিজয়ের আনন্দ হল। অনেকক্ষণ ধরে তিনি পিঁপড়া মারলেন। নাস্তার জন্য ডাকতে ডাকতে কোন সাড়া না পেয়ে তার স্ত্রী মজনুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোর স্যার কোথায়?”

    মজনু বলল, “স্যার বাগানে।”

    “বাগানে কী করে এতক্ষণ! যা গিয়ে নাস্তা খেতে আসতে বল।”

    “স্যার আসতে পারবেন না। তিনি বিজি।”

    “কী নিয়ে বিজি?”

    “স্যারে পিঁপড়া মারে।”

    “কী মারে?”

    “পিঁপড়া।”

    আরমান সাহেবের পিঁপড়া মারার খবর এভাবেই তার স্ত্রীর কানে গেল। নাস্তার টেবিলে তার ছোট ছেলে এবং মেয়ে ছিল। তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে মেয়ে সবার ছোট। বড় ছেলে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি করে একটা চাকরীতে ঢুকেছিল। কয়েকদিন হল চাকরী ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে আছে। কারো সাথে তেমন কোন কথা বলছে না। ছোট ছেলেমেয়ের দুজনই দুইটা ভালো কোম্পানিতে চাকরী করে। সমবয়েসী চাকরীজীবি এবং আধুনিক পৃথিবীর অন্য সবার মত তারা বেশিরভাগ সময়েই থাকে খুব ব্যস্ত। ছেলেমেয়ে দুজন তাদের গুরুগম্ভীর পিতার এমন আচরনে বেশ অবাক এবং কৌতুহলী হয়ে উঠল। আরমান সাহেবের স্ত্রীও বেশ অবাক হলেন। তিনি ছুটলেন বাগানের দিকে। পিছু পিছু এল ছেলে মেয়ে দুটি। সাথে আসল মজনুও।

    তারা ধীরে ধীরে এসে দাঁড়ালেন আরমান সাহেবের পিছনে। আরমান সাহেব তখন বসে পিঁপড়াদের মৃত্যু দেখছেন আর মাঝে মাঝে তেলাপোকা ও পিঁপড়া মারার পাউডার ছিটাচ্ছেন গর্তের আশপাশে।
    তিনি অস্ফুটভাবে গাইছিলেন, “আমি তো মরে যাবো, আমি তো মরে যাবো চলে যাবো, রেখে যাবো সবই, আছস নি কেউ সঙ্গের সাথী, সঙ্গে নি কেউ যাবি, আমি মরে যাবো...”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী ঠান্ডা গলায় বললেন, “এখানে হচ্ছেটা কী?”

    আকস্মিক প্রশ্নে আরমান সাহেব চমকে উঠলেন। তার হাত ছিঁটকে পড়ল কিছু পিঁপড়া মারার পাউডার। তিনি পিছন ফিরে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা এখানে! কী হয়েছে?”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী বললেন, “এখানে কী হচ্ছে দেখতে এসেছি। এতক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করছি নাস্তার টেবিলে আসার জন্য। তোমার কোন সাড়াশব্দ নাই। তারপর জানলাম এখানে নাকী পিঁপড়া মারা হচ্ছে।”

    “কে বলেছে এসব?” প্রশ্নটা করে আরমান সাহেব তাকালেন মজনুর দিকে। মজনু সাথে সাথে বলল, “আমি বলি নাই স্যার।”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী বললেন, “কে বলেছে তার কী দরকার। তার চেয়ে আমাদের বলো এখানে কী চলছে?”

    আরমান সাহেব আবার পিঁপড়ার গর্তের মুখের সামনে বসতে বসতে বললেন, “দেখতেই তো পাচ্ছো। পিঁপড়া মারা হচ্ছে। পিঁপড়া নিধনযজ্ঞ।”

    “কিন্তু এর কারণ কী?”

    “কারণ কী মানে? পিঁপড়াদের জন্য আমি বাগানে কিছু ফলাতে পারছি না। এদের মারতে হবে না? সব ক’টাকে মেরে শেষ করতে হবে।”

    আরমান সাহেবের মেয়ে বসে পড়ল গর্তের আরেক পাশে। পিঁপড়া মারায় হয়ত তার কোন আগ্রহ নেই কিন্তু বাপের কাজকর্মে সে মজা পাচ্ছে। আরমান সাহেবের ছোট ছেলে একবার হাই তুলে ফিরে চলল নাস্তার টেবিলের দিকে।

    আরমান সাহেব তার মেয়েকে বললেন, “গুড মরনিং মা জননী।”

    তার মেয়ে ঝট করে উঠে পড়ল। এবং বলল, “আমাকে মা জননী বলবে না তো বাবা। মা জননী শুনলে মোড়ের ভিখারীটার কথা মনে হয়। প্রতিদিন যখন রাস্তায় রিকশার জন্য দাঁড়াই তখন এসে বলে, দুটা টেকা দেন মা জননী।”

    আরমান সাহেব বললেন, “আমি তো তার কাছ থেকেই শিখেছি। মা জননী শব্দটার মধ্যে মায়া আছে।”

    এই কথার পর আরমান সাহেবের মেয়েও ফিরে চলল নাস্তার টেবিলের দিকে। আরমান সাহেব তার স্ত্রীকে বললেন, “তোমার ইল্ডেস্ট সান আসল না? নাকী তার পিঁপড়া নিধন দেখতে কোন আগ্রহ নেই?”

    “সে তার ঘর থেকে বের হয় নি। কয়েকদিন ধরে ছেলেটা কারো সাথে কথা বলছে না। চাকরী কেন ছেড়ে দিল তোমাকে কি কিছু বলেছে?”

    “না। তার সাথে কয়েকদিন ধরে আমার দেখাই হয় নি।”

    সেদিন পিঁপড়া মারা অসমাপ্ত রেখে আরমান সাহেব নাস্তা করতে যান। নাস্তা শেষে আবার ফিরে আসেন পিঁপড়া মারতে। এবং প্রায় ঘন্টাখানেক পরে তিনি বুঝতে পারেন পিঁপড়ার সংখ্যা অনেক। তিনি যত ভেবে ছিলেন তার থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি। ফলে এভাবে পিঁপড়া নিধন সম্ভব না।
    এজন্য তিনি নাওয়া খাওয়া ভুলে চিন্তায় নেমে পড়েন। কীভাবে পিঁপড়া নির্মূল করা যায়। মজনুকে দায়িত্ব দেয়া হয় একটা উপায় বের করার জন্য। আজ মজনু একটা উপায় বের করেছে। সেটা হল সমস্ত বাগানে প্রচুর পানি স্প্রে করা। বুদ্ধিটা আরমান সাহেবের ভালো লেগেছে।

    এর ভালো এবং মন্দ দিক নিয়ে ভাবতে গিয়ে আরমান সাহেব লক্ষ করলেন এর ভালো দিক বেশি। যেমন, পিঁপড়া নিধনের পাশাপাশি পানি দেয়া মাটির জন্যও ভালো হবে। মন্দ দিকের মধ্যে একটা হল সমস্ত বাগানে পানি দিতে হলে বিশাল আয়োজনের প্রয়োজন। এতে তার স্ত্রী রাগ করতে পারেন। এমনিতেই কয়েকদিন পিঁপড়া নিয়ে আরমান সাহেবের উদ্বিগ্নতা দেখে তিনি ক্ষেপে আছেন। এছাড়া আরেকটি ব্যাপার হল অতিরিক্ত পানি দিলে মাটির উর্বরতা কমে যেতে পারে।

    দুই
    বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আরমান সাহেব বাগানে পানি দেয়ার ব্যাপারে মনস্থির করলেন। এ ব্যাপারে মজনুকে বললেন, “কীভাবে কী ব্যবস্থা করতে হবে কর।”

    মজনু বলল, “স্যার একটা লম্বা পাইপ আনা লাগব। তারপর সেই পাইপ লাগাইয়া ছাদের টেংকি থেইকা পানি আনা যাইব।”

    আরমান সাহেব মজনুকে টাকা দিয়ে পাইপ আনতে পাঠালেন। পাইপ আনা হল। ট্যাংকিতে ভালো করে পানি তোলা হল। তারপর বিকেলের দিকে সেই পাইপ দিয়ে ট্যাংকির পানি বাগানে ভালোভাবে ছিঁটাতে শুরু করলেন আরমান সাহেব।

    তার স্ত্রী এসে কিছুক্ষণ হইচই করলেন। কিন্তু আরমান সাহেব পানি ছিঁটানো বন্ধ করলেন না।

    সন্ধ্যার দিকে পানি দেয়া শেষ হল। পানির তোড়ে পিঁপড়ার বংশ নির্বংশ হয়ে যাবার কথা। আরমান সাহেব স্বস্তি অনুভব করলেন। তিনি আনন্দিত মন নিয়ে ঘরে ফিরলেন।

    সেদিন রাতে খাবার টেবিলে আবার এই বিষয়ে কথা জমে উঠল। তার স্ত্রী পিঁপড়া সংস্লিষ্ট বিষয়টাকে বললেন, “পাগলামি।”

    আরমান সাহেব বললেন, “যা বুঝ না তা নিয়ে কথা বলতে এসো না। ছোট প্রাণী হয়েছে বলে কি সে তুচ্ছ হয়ে গেল? দুনিয়ার সব প্রানীদের নিয়ে যদি কোন অধিবেশন হয় তাহলে হাতিও যেমন এক সিট পাবে, পিঁপড়াও তেমনি এক সিট পাবে। পিঁপড়া তুচ্ছ না।”

    কথাবার্তার এক পর্যায়ে আরমান সাহেব তার বড় ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। সে রাতের খাবার টেবিলেও আসে নি। আরমান সাহেবের স্ত্রী এর কোন উত্তর দিলেন না। মুখ গোমড়া করে রইলেন।

    আরমান সাহেবের ছোট ছেলে বলল, “ভাইয়া তার রুমে বসে আছে। সে রুম থেকে বের হয় না। সেখানেই খাওয়া দাওয়া হয়।”

    আরমান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “কেন?”

    ছোট ছেলে বলল, “সে কবি হয়ে গেছে বলে তার ধারণা।”

    এই কথা শোনার পর আরমান সাহেব চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। সোজা চলে গেলেন তার বড় ছেলের রুমে।

    গিয়ে দেখলেন তার বড় ছেলে চেয়ারে বসে আছে। তার সামনে একটি সাদা কাগজ। সে কাগজটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

    আরমান সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন, “কী ব্যাপার? তুমি খেতে আসছো না কেন?”

    ছেলেটি কোন উত্তর দিল না। সে একবার আরমান সাহেবের দিকে তাকাল। তারপর আবার তাকিয়ে রইল কাগজের দিকে। আরমান সাহেব অবাক হয়ে গেলেন। তার ছেলের এরকম করার কথা না।
    তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে বাবা জালাল?”

    ছেলেটা এবারও কোন উত্তর দিল না। আরমান সাহেবের পিছু পিছু উঠে এসেছিলেন তার স্ত্রী। তিনি পিছনে এসে দাঁড়ালেন। ছেলেটা কারো সাথে কথা বলছে না। শুধু নিজের রুমে বসে আছে।

    আরমান সাহেব পিছনে স্ত্রীর উপস্থিতি লক্ষ্য করে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কথা বলছে না কেন? কী হয়েছে?”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী বললেন, “সেটাই তো জানতে পারছি না। কারো সাথে কোন কথা বলছে না।”
    “কতদিন ধরে?”

    “চাকরি ছাড়ার পর থেকে।”

    “আমাকে আগে বলো নি কেন?”

    “তুমি তো ব্যস্ত ছিলে তোমার পিঁপড়া নিয়ে।”

    “একে তো ডাক্তার দেখাতে হবে।”

    আরমান সাহেব ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “বাবা জালালউদ্দিন, কী হয়েছে তোর?”

    ছেলে একবার বাবার দিকে আর একবার মায়ের দিকে তাকাল। কিন্তু কোন উত্তর দিল না। সে তার সামনের সাদা কাগজে লিখল-
    Beloved be the one who sits down.

    আরমান সাহেব সত্যিকার ভাবে চিন্তিত হয়ে উঠলেন। তার সুস্থ সবল ভালো ছেলে হঠাৎ করে এমন নিশ্চুপ হয়ে যাবে কেন? তিনি তার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করলেন। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। ভদ্রলোক আসলেন রাত এগারোটার দিকে। তিনি এসে ছেলেটাকে ভালো করে দেখলেন। বিভিন্ন প্রশ্ন করলেন। কিন্তু ছেলেটা বসেই রইল। কোন উত্তর দিল না।

    ডাক্তার বললেন, “আপাতত কিছু ঔষধ দিয়ে যাচ্ছি। এগুলো নিয়ম করে খাওয়াবে। আমার মনে হচ্ছে তার ঘুম দরকার। আমি কয়েকদিন পর আবার দেখতে আসব। এমনিতে শরীর স্বাস্থ্য ভালো। তাই বড় কোন প্রবলেম হয়েছে বলে মনে হয় না।”

    তিন
    ছেলেটাকে ওষুধ খাওয়ানো হল। ওষুধ খাওয়ানোর পর থেকে সে আর বসে থাকে না। নাক ডেকে ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠলে খুব কম কথাবার্তা বলে। বাকী সময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।

    ডাক্তার বললেন, “আস্তে আস্তে উন্নতি হবে। হয়ত কোন ধরনের শক থেকে এই অবস্থা হয়েছে। আজকালকার ছেলেপেলে। প্রেম ট্রেম ইত্যাদি কত ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছে। বুঝই তো আরমান।”

    আরমান সাহেব বললেন, “সেটা বুঝতে পারছি। তবে সমস্যাটা কী জানতে পারলে ভালো হত।”

    “কিন্তু সেটা তো ভাই ছেলে পুরোপুরি কথাবার্তা বলা শুরু না করলে বুঝা যাবে না। তোমার ছেলে বাইরের পৃথিবী থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। তাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এই প্রসেসটা ধীর।”

    ধীরে ধীরেই কাজ হতে লাগল। আরমান সাহেব ছেলের নিয়মিত খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলেন।

    ছেলেকে সময় দিতে গিয়ে তিনি পিঁপড়ার কথা ভুলে গেলেন। এবং আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করলেন না যে তার স্ত্রী ইদানীং যেন অন্যকিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

    কয়েকদিন পর ছেলে যখন অল্প অল্প কথা বলা শুরু করেছে তখন আরমান সাহেবের মনে হল বাগানের পিঁপড়াদের কথা। তিনি মজনুকে ডেকে বললেন, “কী রে, বাগানে কি পিঁপড়া আছে এখনো?”

    মজনু মাথা চুলকে বলল, “দেখি নাই স্যার।”

    আরমান সাহেব গর্জে উঠলেন, “কী করিস তাহলে সারাদিন!”

    মজনু বলল, “ভাইজান অসুস্থ হইয়া গেলেন। বাড়িতে একজন অসুস্থ মানুষ, কত টেনশন। তাই বাগানের কথা মনে ছিল না।”

    আরমান সাহেব বললেন, “যা এখন গিয়ে দেখে আয়!”

    মজনু তৎক্ষণাত বাগানে যেতে শুরু করল। একপর্যায়ে আরমান সাহেবও গেলেন পিছু পিছু। বাগানে হাঁটতে হাঁটতে খুব ভালোভাবে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলেন পিঁপড়া। এবং একসারি পিঁপড়া দেখে একই সাথে হতাশ এবং উত্তেজিত হয়ে পড়লেন।

    রাগী গলায় মজনুকে বললেন, “হারামজাদা! এই পিঁপড়াগুলো এখানে কেন? তুই না বললি পানি দিলে চলে যাবে?”

    মজনু বলল, “পিঁপড়া মনে হয় আবার ফিইরা আসছে।”

    আরমান সাহেব রাগে গিয়ে পিঁপড়াগুলো পা দিয়ে মাড়িয়ে দিতে লাগলেন।

    কিছুক্ষণ পর আরো কিছু পিঁপড়া দেখতে পেলেন ঘাসের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে পিলপিল করে। আরমান সাহেব রাগ হলেও তিনি দিশা হারালেন না। স্থিরভাবে বাগানের একপাশে রাখা চেয়ারে গিয়ে বসলেন। মজনু মুখ কাচুমাচু করে এসে দাঁড়াল তার পাশে।

    আরমান সাহেব একবার মজনুর মুখের দিকে তাকালেন। তার মনে হল মজনুর দোষ নেই এখানে। পিঁপড়াগুলোই আবার ফিরে এসেছে। হয়ত তারা এটা ইচ্ছা করেই করেছে যাতে আরমান সাহেব নিজেকে তাদের কাছে পরাজিত মনে করেন।

    আরমান সাহেব মজনুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তেলাপোকা মারার পাউডার কেজি দরে পাওয়া যায়?”

    মজনু বলল, “জানি না স্যার। ডিলারের কাছে খোঁজ নিয়া জানতে হইব। বাজারে তো পাওয়া যায় কৌটায়।”

    আরমান সাহেব মজনুকে নিয়ে গেলেন বাজারে এক ডিলারের কাছে। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা তেলাপোকা মারার যে পাউডার কৌটাতে বিক্রি করেন সেটা কি কেজি দরে দিতে পারবেন? আমি অনেক বেশি নেব।”

    ডিলার বলল, “জি না। কৌটা আমাদের কাছে সরাসরি কোম্পানি থেকে আসে। আমরা দোকানে সাপ্লাই দেই। কেজি দরে নিতে হলে আপনাকে কোম্পানিতে যোগাযোগ করতে হবে। তবে তারা কেজি হিসেবে দিতে পারবে কি না আমি জানি না।”

    আরমান সাহেব বললেন, “কিন্তু আমার আসলে আট দশ কেজির মত দরকার?”

    ডিলার বলল, “এত পাউডার নিয়ে কী করবেন? ব্যবসার জন্য নিতে চাইলে তো কৌটাই ওর্ডার করতে পারেন।”

    মজনু বলল, “আমরা বাগানে দিব পাউডার। পিঁপড়ার জন্য।”

    ডিলার কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, “বাগানে দিবেন? বাগানে কীটনাশক দিচ্ছেন না কেন? কীটনাশকও পিঁপড়া তাড়াবে আমার ধারণা।”

    আরমান সাহেব নিজের মাথায় এই চিন্তা আসে নি কেন ভেবে লজ্জাই পেলেন যেন। তিনি ডিলারকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি নিশ্চিত কীটনাশকে কাজ হবে?”

    ডিলার বলল, “কিছু কীটনাশকের গায়ে পিঁপড়ার ছবি থাকে। সেগুলো যদি ব্যবহার করেন তাহলে নিশ্চিত কাজ হবে।”

    আরমান সাহেব ডিলারকে ধন্যবাদ দিয়ে কীটনাশকের দোকানে গেলেন। আট লিটার তরল কীটনাশক নিয়ে ফিরে এলেন বাসায়।

    বাসায় এসে দেখলেন তার মেয়ে মুখ ফুলিয়ে আছে। দেখে মনে হয় কাঁদছিল। সাধারণত এই মেয়েকে কাঁদতে দেখা যায় না। সুতরাং আরমান সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে? কাঁদছিস কেন?”

    মেয়ে বলল, “বাবা তুমি কোথায় থাকো সারাদিন, এদিকে মা কী করছে দেখো না?”

    “কী করছে?”

    “আমি বলতে পারবো না।”

    “না বলতে পারার কী আছে। তোর মা কোথায়?”

    “দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে আছো।”

    “তোদের দু’জনের ঝগড়া হয়েছে নাকী? বাহ বাহ! অনেকদিন পর।”

    আরমান সাহেব হালকাভাবে কথাটা বললেন। কিন্তু তার মেয়ে রাগ দেখিয়ে উঠে চলে গেল। যাওয়ার আগে বলল, “পিঁপড়াদের পিছনে লেগে তোমার মাথাটা গেছে। আর এদিকে মায়ের মাথাটাও গেছে। লজ্জায় মুখ দেখাব যাবে না মানুষের সামনে!”

    আরমান সাহেব মেয়েটার শেষে বলা কথাটা বুঝতে পারলেন না। লজ্জা পাবার কী আছে?

    তবে রাতে খাবার টেবিলে বিষয়টা বুঝতে পারলেন। খাবার টেবিলে ছিলেন তিনি, তার মেয়ে, ছোট ছেলে আর তার স্ত্রী। ছোট ছেলে একটা ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে খাচ্ছিল। মেয়েটা বসেছিল গম্ভীর হয়ে। আরমান সাহেব খাওয়া শুরু করবেন এমন সময় তার স্ত্রী বললেন, “তোমাদের সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ন কথা আছে।”

    ছেলেটা ম্যাগাজিন থেকে মাথা তুলল না। মেয়েটাও তাকাল না। আরমান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “কী কথা?”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী বললেন, “আমি যখন সদ্য ইউনিভার্সিটি থেকে বের হই তখন কোন কিছু না ভেবেই তোমাকে বিয়ে করে বসি। বলাবাহুল্য এটা ছিল আমাদের প্রেমের বিয়ে। কিন্তু আমরা মানুষেরা যা চাই বলে ভাবি তা আসলে আমরা সত্যিকার অর্থে চাই না। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঘটেছে। আমি এতদিন তোমার সংসার করে বুঝেছি আমি আসলে তোমাকে চাই নি কখনো। তোমার সংসারও চাই নি।”

    আরমান সাহেব বললেন, “তাই নাকী?”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী বললেন, “হ্যা, এটা কিছুদিন ধরেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম। তারপর আমি আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করি। একসময় ছেলেমেয়ে ছোট ছিল। কিছু দায়বদ্বতা ছিল। কিন্তু এখন ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। নিজের জীবন নিজেরা চালাতে পারবে। সুতরাং, সেই দায়বদ্বতা আর নেই। তাই আমি ঠিক করেছি নিজের জীবন নিজের মত করে যাপন করব।”

    আরমান সাহেব বললেন, “ভালো চিন্তা। তাহলে আমরা দুজন ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে পারি।
    ছেলেমেয়েরা তাদের কাজ নিয়ে থাকুক। কী বলো?”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী বললেন, “না। তোমার সাথে আমি আর থাকতে চাই না। আমি আগেই বলেছি তোমাকে আমি কখনো চাই নি। সুতরাং, তোমার সাথে থাকার প্রশ্নই আসে না।”

    আরমান সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে কী করতে চাও?”

    তার স্ত্রী বললেন, “একটা ছেলেকে আমার ভালো লেগেছে। সে অবশ্য বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট। সদ্য এমএসসি করে বের হয়েছে। কিন্তু আমাদের আন্ডারস্টেন্ডিং ভালো। আমরা প্ল্যান করেছি বাকী জীবন একসাথে কাটাব।”

    আরমান সাহেব এই কথা শোনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলেন ফান হচ্ছে কী না। কিন্তু তার স্ত্রীর মুখ সিরিয়াস। আরমান সাহেব এতই অবাক হলেন যে বলা যায়, স্বয়ং জিউস যদি অলিম্পাসের চূড়া থেকে নেমে এসে তার মাথায় বর্জ্রদন্ড দিয়ে আঘাত করতেন তবুও এতটা অবাক তিনি হতেন না।

    তিনি একবার তার মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়েটি মাথা নিচু করে খাচ্ছে। ছেলেটির দিকে তাকালেন। সে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। কিন্তু এখন আবার ম্যাগাজিনে চোখ দিয়েছে।
    আরমান সাহেব কী বলবেন বুঝতে পারলেন না।

    তার স্ত্রী বললেন, “এই দেখো তার ছবি। আশা করছি তুমি কোন ঝামেলা করবে না। আমাকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে কী হতে পারে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ।”

    আরমান সাহেব যদিও প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তবুও তিনি জানেন তার স্ত্রীর শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে। ভদ্রমহিলা কোন কিছু ঠিক করে ফেললে সেটা থেকে তাকে ফেরানো সম্ভব না।

    তার স্ত্রী একটা ছবি এগিয়ে দিলেন। দেখবেন না দেখবেন না করেও আরমান সাহেব ছবিটা হাতে নিয়ে তাকালেন। ছবিটার দিকে তাকিয়েই তার বিপর্যস্ত মুখ কিছুটা সজীব হয়ে উঠল। কন্ঠস্বরের শুষ্কতা কমে গেল কয়েকগুণ।

    তিনি বললেন, “মাশাল্লাহ! খুব সুন্দর ছেলে। তোমার সাথে মানাবে ভালো।”

    বলে হাসিমুখে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। কিন্তু স্ত্রীর মুখ এখনো কঠিন দেখে ভড়কে গেলেন। তিনি একটি হাসিমুখ প্রত্যাশা করেছিলেন।

    তার মেয়ে পিতার কথায় বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিল। সে ছবিটার দিকে তাকাতে চেষ্টা করল।

    আরমান সাহেব মেয়ের সামনে ছবিটা এগিয়ে দিলেন। ছবিটা দেখে মেয়ের মুখও বদলে গেল। সে বলল, “আরে! এটা তো বাবার ছবি। মা তোমার এই নাটকের কী দরকার ছিল?”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী গর্জে উঠলেন, “বাবার ছবি কী? এটা তোর বাবার ছবি হল কেমন করে? থাপড়ে মুখের দাঁত ফেলে দেব মেয়ে। কথা বলা শিখে নি এখনো।”

    আরমান সাহেব বিস্মিত মুখে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। মেয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেল। ছেলেটি একবার ছবিটাকে দেখল এবং তারপর সেও উঠে চলে গেল।

    আরমান সাহেবের স্ত্রী ছবিটা নিয়ে তার ব্যাগের মধ্যে রাখলেন।

    সেদিনই আরমান সাহেবের স্ত্রীর পুরো সমস্যাটা বুঝা যায়। তিনি বলছেন যুবক আরমান সাহেবের মত দেখতে একটি ছেলের প্রেমে পড়েছেন। সেই ছেলের সাথে বিকেলে পার্কে গিয়ে দেখা করেন।
    পরদিন বিকেলে যখন তিনি পার্কের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান তখন পিছু নিয়েছিলেন আরমান সাহেব। পিছু পিছু গিয়ে দেখেন তার স্ত্রী পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছেন। এমন ভাবভঙ্গী করছেন যে মনে হচ্ছে কারো সাথে কথা বলছেন। কিন্তু বেঞ্চিতে আর কেউ নেই।

    এরকম সমস্যা আর কখনো দেখেন নি আরমান সাহেব। অথবা কারো হয়েছে এমনও শুনেন নি। সন্ধ্যার দিকে তাই তার মানসিক রোগের চিকিৎসক বন্ধুর চেম্বারে গেলেন। ফোন দিয়ে এসেছিলেন। গিয়ে দেখলেন ভেতরে রোগী। সুতরাং বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হল।

    রোগীরা যেখানে বসে অপেক্ষা করেন সেখানে বসেছিলেন তিনি। সেখানে তার এক পরিচিত লোককে পাওয়া গেল। ভদ্রলোকের নাম হবিবুল্লাহ তরফদার। তিনি কিছুদিন আরমান সাহেবের প্রতিবেশী ছিলেন। হবিবুল্লাহ হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, “ভাই কার জইন্য এসেছেন?”

    আরমান সাহেব বললেন, “আমার স্ত্রীর ব্যাপারে। আপনার রোগী কে?”

    হবিবুল্লাহ বললেন, “আমার রোগী আমিই। রাইতে ঘুম অয় না। তবে আমার তো বউ নাই, বউর লাগি দৌড়াদৌড়িও নাই।”

    আরমান সাহেব ভদ্রতা দেখাতে সামান্য হাসার চেষ্টা করলেন।

    হবিবুল্লাহ একটু থেমে বললেন, “আরমান ভাই, আপনার পুরা জীবন গেল বউর লাগি দৌড়িয়া। বউর কতায় যারা উঠে বসে তারারে আমরার সিলটি ভাষায় কিতা কয় জানইন নি?”

    আরমান সাহেব বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বললেন, “না।”

    হবিবুল্লাহ বললেন, “তারারে কয় মাউগা। তবে আমি আপনারে মীন কররাম না।”

    বলে বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে শব্দহীন হাসি হাসলেন হবিবুল্লাহ তরফদার। এই লোক এসব করে মজা পায়।
    হয়ত লোকটি আরো কিছু কথা বলত। কিন্তু এর আগেই ডাক্তারের রুম থেকে রোগী বের হল এবং ডাক্তারের সহকারী এসে আরমান সাহেবকে বলল, “স্যার, আপনি ভেতরে যান।”

    আরমান সাহেব উঠে চলে গেলেন ডাক্তারের চেম্বারে। ডাক্তারকে সব বুঝিয়ে বললেন। ডাক্তার বললেন, “চিন্তা করার কিছু নেই। আমি কাল সকালে একবার গিয়ে ভাবীকে দেখে আসব। তার সাথে কথা না বলে আসলে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

    চার

    সন্ধ্যায় কালো ময়লা কোট পড়া একটা লোক আসল বাসায়। আরমান সাহেব তখন তার বসার কক্ষে বসে কিছু একটা ভাবছিলেন। লোকটাকে দেখে তিনি এগিয়ে এলেন।

    লোকটা তার পান খাওয়া লালচে দাত বের করে হেঁসে বলল, “আপনি কী জালাল সাহেব? লেখক জালাল?”

    আরমান সাহেব বললেন, “না। আমি তার বাবা হই। আপনি কে?”

    লোকটি বলল, “আমি একজন প্রকাশক। শিল্প সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বই প্রকাশ করি। চব্বিশ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনী আমার।”

    “তা এখানে কী মনে করে?”

    “এখানে এসেছি একটা কাজে। আপনার বাড়িতে সাড়ে চারশো খরগোশ দেয়া হবে। পঁচিশ পার্সেন্ট কমিশনে। টাকা কি এখনি দিয়ে দেবেন?”

    আরমান সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী বলছেন এসব? কীসের খরগোশ? কীসের টাকা?”

    লোকটি হাত কচলে বলল, “না মানে আপনার ছেলে জালাল সাহেব আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। টিভিতে আমার একটা সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়েছিল। সেটা ইউটিউবে দেখে তিনি আমাদের ইমেইল করেন।”

    “তো?”

    “মানে তিনি আমাদের এখান থেকে বই করতে চান। কবিতার বই। নতুন লেখকের বই প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের শর্ত হল তিনি আমাদের সাড়ে চারশো খরগোশ পঁচিশ পার্সেন্ট কমিশনে কিনে নেবেন। আমাদের খরগোশগুলো ভালো। দেখতে সুন্দর।”

    “খরগোশ কিনতে হবে কেন? বইয়ের সাথে এর কী সম্পর্ক?”

    “এটা আমাদের বিজনেস পলিসি। আমরা এভাবেই কাজ করি। এটাকে খরগোশদের প্রতি আমাদের মমতাও বলতে পারেন।”

    “আচ্ছা, তাহলে আমাকে এখন কী করতে হবে?”

    “টাকা দিতে হবে। টাকা পাওয়ার পরপরই আমরা খরগোশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দেব।”

    “আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি আগে আমার ছেলের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে দেখি।”

    “নিশ্চয়ই।”

    লোকটি তার পকেট থেকে একটি হলুদ রঙের কার্ড বের করে দিল আরমান সাহেবকে। বলল, “আপনি কী সিদ্ধান্ত নেন আমাকে জানাবেন। আমি এখন চলে যাচ্ছি। আরো কয়েকটা বাসায় খরগোশ সাপ্লাই দিতে হবে। বইয়ের সিজন এগিয়ে আসছে তাই এখন খুব ব্যস্ততা।”

    লোকটা তার কার্ড দিয়ে চলে গেল।

    এইসময় মজনু এসে প্রবেশ করল ঘরে। আরমান সাহেবকে বলল, “স্যার, কীটনাশক কী করব?”

    আরমান সাহেবের তখন মনে হল পিঁপড়ার কথা। এই কয়েকদিনের ব্যস্ততার জন্য বাগানে আর যাওয়া হয় নি। তিনি মজনুকে বললেন, “কাল সকালে আট লিটার কীটনাশক আরো আট লিটার পানিতে মেশাবি। তারপর পুরো বাগানে ছিঁটাতে হবে।”

    মজনুকে নির্দেশ দিয়ে তিনি গেলেন তার বড় ছেলের কক্ষে। গিয়ে দেখলেন সে বসে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “একটা লোক এসেছিল, খরগোশ বিষয়ে কীসব বলল। তোমার সাথে লোকটার কথা হয়েছে?”

    ছেলেটা মাথা নেড়ে বলল, “জি হয়েছে।”

    “কিন্তু এত খরগোশ দিয়ে তুমি কী করবে?”

    ছেলেটি উত্তর না দিয়ে আরমান সাহেবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। আরমান সাহেব বিব্রত হলেন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আর এতগুলো খরগোশ রাখবে কোথায়?”

    ছেলেটি বলল, “তারা খাঁচা দেবে। বড় একটা খাঁচা।”

    আরমান সাহেব তার পকেট থেকে হলুদ কার্ডটি বের করে টেবিলে রাখলেন। তারপর বললেন, “তাহলে ঠিক আছে। লোকটাকে বলে দিও যাতে পাঠিয়ে দেয়। যখন দিয়ে যাবে তখন টাকা দিয়ে দেব।”

    ছেলেটা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

    পরদিন সকাল বেলায় একটা বড় খাঁচা এল বাগানের পাশে। সে খাঁচায় সাড়ে চারশো খরগোশ।

    বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়া গেছে। পঁচিশ পার্সেন্ট কমিশন। তারা যখন খরগোশ এনে দিল তখন আরমান সাহেব টাকা দিয়ে দিলেন।

    খরগোশ দেখতে দেখতেই সকাল দশটা বেজে গেল। আরমান সাহেবের বড় ছেলে তার রুম থেকে বের হয়ে এসেছিল। এতগুলো খরগোশের সাথে ফ্রীতে দেয়া হয়েছে এক ঠেলাগাড়ি ভর্তি সবুজ ঘাস। সে আনন্দের সাথে খরগোশকে ঘাস খাওয়াতে লাগল।

    এই সময়ে মজনু বসল কীটনাশক নিয়ে। সে আট লিটার কীটনাশকে আট লিটার পানি মিশিয়ে ষোল লিটারের মিশ্রণ তৈরী করল। তারপর আরমান সাহেবকে বলল, “স্যার, এবার কি বিসমিল্লা বলে ছিঁটানো শুরু করব?”

    আরমান সাহেব বললেন, “হ্যা। উত্তর দিক থেকে শুরু কর।”

    উত্তর দিক থেকে বললেন কারণ উত্তর দিকেই প্রথম দেখেছিলেন পিঁপড়াদের।

    মজনু বলল, “স্যার, এইবার আর পিঁপড়াদের রেহাই নাই। একটা পিঁপড়ার দেখছি ডানা গঁজাইছে।”

    আরমান সাহেব বললেন, “তাই নাকী! পিপীলিকার পাখা গঁজায় মরিমার তরে। তারা দেখি মৃত্যুর গন্ধ পাচ্ছে।”

    মজনু যখন কীটনাশক ছিঁটাতে শুরু করল তখন আরমান সাহেবও লেগে গেলেন তার সাথে। তবে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলেন না। তার ছোট শালা এসেছিল। সুতরাং, তিনি বাগান থেকে উঠে গেলেন বসার কক্ষে।

    তার ছোট শালা একজন বড় উকিল। সে এসে বলল, “দুলাভাই, আপা আপনাকে ডিভোর্স দিতে চায়। আমাকে কাগজপত্র রেডি করতে বলেছেন। এসব কী হচ্ছে?”

    আরমান সাহেব বললেন, “তোমার আপার মাথায় সমস্যা হয়েছে। তোমাদের বংশে যে জেনেটিক পাগলামী আছে সেটা তার উপর ভর করেছে। শক্ত চিকিৎসা দরকার।”

    তার শালা বলল, “আপার সব কথা শুনে আমার খারাপ লাগছে। এখন কী করব আপনি বলেন? ডাক্তার দেখিয়েছিলেন?”

    “সরাসরি ডাক্তার দেখানোর তো কোন সুযোগ নেই। কোন পাগলই নিজেকে পাগল মনে করে না। তাই আমার এক মানসিক রোগের ডাক্তার বন্ধুকে বলেছিলাম। সে হয়ত আজ আসবে। প্রথমে তার সাথে আলোচনা করে বুঝতে হবে বিষয়টা কতটুকু ক্রিটিক্যাল।”

    “আর জালালের কী খবর?”

    “সে উন্নতির পথে আছে।”

    “দুলাভাই, আমি বলি কী, আপাকে কয়েকদিন আমার বাসায় নিয়ে রাখলে কেমন হয়?”

    “সেটা তুমি চেষ্টা করে দেখতে পারো। আমার কোন আপত্তি নেই।”

    তারা যখন কথাবার্তা বলছিলেন তখন আরমান সাহেবের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বন্ধুর আগমন ঘটল। তিনি কিছুক্ষণ সাধারন কথাবার্তার পর রোগীর সাথে কথা বলতে চাইলেন। আরমান সাহেবের স্ত্রী তখন সদ্য ঘুম থেকে উঠে চা খাচ্ছেন।

    ডাক্তার বললেন, “কেমন আছেন ভাবী?”

    আরমান সাহেবের স্ত্রী বললেন, “ভালো। আপনি কী জালালকে দেখতে এসেছেন? সে ভালো আছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখুন। খরগোশকে ঘাস খাওয়াচ্ছে।”

    “জালাল তো ভালোই আছে। তার উন্নতি হচ্ছে। তবে আপনার ব্যাপারে কিছু একটা শোনলাম ভাবী।”

    “কী শুনেছেন?”

    “এই যে আপনি নাকী...”

    “বুঝেছি। যা শুনেছেন ঠিক শুনেছেন। এবার আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান। আরমান নিশ্চয়ই সবাইকে বুঝাচ্ছে আমার মাথা ঠিক নেই। আমি আগেই এটা আশংকা করেছিলাম।”

    “না ভাবী, আপনি যা ভাবছেন...”

    “আপনি চলে যান। আমি আপনাকে চলে যেতে বলেছি সামনে থেকে। নাহলে কাপশুদ্ধ চা ছুঁড়ে মারব।”
    ডাক্তার একরকম ভয় পেয়েই উঠে গেলেন। আরমান সাহেবকে গিয়ে বললেন, “অবস্থা তো মারাত্মক। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”

    এইসময় বাইরে হুলস্থুল শোনা গেল। আরমান সাহেব, ডাক্তার এবং তার শালা তিনজনই বাইরে বের হয়ে আসলেন। এসে দেখলেন সমস্ত বাগানময় লাফিয়ে বেড়াচ্ছে খরগোশেরা। সাড়ে চারশো খরগোশ বের হয়ে গেছে বাগানে। খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছে আরমান সাহেবের বড় ছেলে জালালউদ্দিন।

    পাঁচ

    সেদিন রাতে আরমান সাহেবের বাসায় পুলিশ এল। রাত তখন বারোটা হবে। তার ছোট ছেলে এবং মেয়ে তখন ঘুমিয়ে গেছে। আরমান সাহেব বসে টিভি দেখার চেষ্টা করছিলেন। তার স্ত্রী ছিলেন নিজের রুমে।

    দরজা খুলে পুলিশ দেখে আরমান সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার?”

    একজন পুলিশ অফিসার, তার বয়স সম্ভবত চল্লিশ হবে, তিনি বললেন, “ব্যাপার আছে। ভেতরে ঢুকতে দেন।”

    পুলিশ অফিসারের সাথে প্রবেশ করলেন একজন বয়স্ক কনস্টেবল। কনস্টেবলের মাথাভর্তি সাদা চুল। বড় সাদা গোঁফ।

    পুলিশ অফিসার আরমান সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার বড় ছেলে জালালউদ্দিন খাঁ কোথায়?”

    আরমান সাহেব কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন। তিনি বললেন, “সে তার রুমে। কিন্তু আমার ছেলের নাম তো জালাউদ্দিন খাঁ না!”

    পুলিশ অফিসার বললেন, “ওই হলো। জালালউদ্দিনের সাথে খাঁ টা এমনিতেই এসে যায়। আপনার ছেলের রুম কোথায়? আমাদের নিয়ে যান। জলদি করেন। টাইম নাই।”

    আরমান সাহেব পুলিশকে নিয়ে গেলেন তার বড় ছেলের রুমে। ছেলে তার রুমে বসে ছিল। আজ খরগোশ ছাড়ার পর আরমান সাহেব তাকে সামান্য বকেছিলেন। অবশ্য প্রথমে তার বকাবকি করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু ছেলেটা যখন জিজ্ঞেস করল, “কীটনাশকযুক্ত ঘাস খেলে খরগোশের কি ফুড পয়জনিং হবে?” তখন তিনি রাগ আটকে রাখতে পারেন নি। তার বকা খেয়ে ছেলেটি রুমে এসে বসেছিল। আর বের হয় নি।

    পুলিশ ছেলেটাকে ঝাঁপটে ধরল। তার দু হাতে হাতকড়া পরাতে পরাতে বলল, “কী খবর জালালউদ্দিন খাঁ? ব্যাটা, পালাবি কোথায়!”

    আরমান সাহেব বললেন, “হাতকড়া পরাচ্ছেন কেন? আমার ছেলের অপরাধ কী?”

    পুলিশ অফিসার আরমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনার ছেলে এক ভয়ানক সন্ত্রাসী। একটা রেপ, দুইটা মার্ডার কেস তিনটা মাদক মামলার আসামী। সে আত্মগোপন করে এখানে বসেছিল। কতবড় সাহস!”

    আরমান সাহেব উত্তেজিতভাবে বললেন, “আপনি মিথ্যা বলছেন? আমার ছেলে এসব কাজ করতে পারে না। এ ক’দিন আগেও সে একটা বড় কোম্পানিতে কাজ করত। তার সব ডকুমেন্টস আছে।”

    পুলিশ অফিসার একটা দেয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে দাঁত খিলাল করতে করতে বলল, “ডকুমেন্টস ধুয়ে পানি খান। আপনি গভর্নমেন্টের চেয়ে বেশি বুঝেন? আমরা সন্ত্রাসী বললে আপনি তা মিথ্যা প্রমান করতে পারবেন? হাউ ফানি!”

    আরমান সাহেব অসহায় বোধ করলেন। পুলিশ অফিসার চারিদিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগল। একটা সাদা কাগজে লেখা “Beloved be the one who sits down.” পড়েছিল টেবিলে। এটা দেখে সন্দিগ্ধ চোখে তাকাল পুলিশ অফিসার। কনস্টেবলকে বলল, “গ্ল্যাভস কোথায়?”

    কনস্টেবল সাদা গ্ল্যাভস এগিয়ে দিল। পুলিশ অফিসার গ্ল্যাভস হাতে পরে খুব সাবধানতার সাথে সেই কাগজখানা ধরল এবং একটি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিল। তারপর আরমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, “এভিডেন্স।”

    পুলিশ অফিসার ছেলেটাকে ঘাড় ধরে তুলল এবং টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল। ছেলেটা ছিল নিশ্চুপ এবং ভাবলেশহীন।

    পিছু পিছু যাচ্ছিল কনস্টেবল। পুলিশ অফিসার যখন ছেলেটাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হল আরমান সাহেব তখন মুষড়ে পড়লেন। তখন তার কাঁধে হাত রাখল বয়স্ক কনস্টেবল। সে বলল, “আপনার ছেলে রেপ, মার্ডার এসব করে নি। তার সবচেয়ে বড় অপরাধ সে বসেছিল। আমি ছোট মানুষ। ছোট পদে কাজ করি। আমার ক্ষমতা অল্প। তাই জানিনা আপনার ছেলের ভাগ্যে কী আছে। তবে ভুলেও ভাববেন না আপনার ছেলে বসে থাকা ছাড়া অন্য কোন অপরাধ করেছিল। বিদায়।”

    পুলিশ ছেলেটাকে নিয়ে চলে গেল।

    পরদিন আরমান সাহেবের বাগানে পাওয়া গেল কিছু মৃত খরগোশ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ অক্টোবর ২০১৭ | ২৩৮৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    হেলেন - Muradul islam
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • T | ***:*** | ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:৩৩61748
  • ইন্টারেস্টিং, ভেরি ভেরি ইন্টারেস্টিং।
  • I | ***:*** | ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৯61749
  • কাফকাস্ক। ভালো লাগলো।
  • de | ***:*** | ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ১১:৩৩61750
  • বাঃ!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন