এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শেষ অস্ত্র

    Muradul islam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১৯৯৮ বার পঠিত
  • ইঁদুরের উপদ্রব এতোই বেড়েছে যে, তাদের যন্ত্রণায় বেঁচে থাকাটা দায় হয়ে পড়েছে। আব্দুর রহমান সাহেব তার এই পঞ্চাশ বছরের জীবনে এমন ইঁদুরের বিস্তার দেখেন নি। সারা বাড়িতে ইঁদুর আর ইঁদুর। দিনে দুপুরে দেখা যায় ইঁদুরেরা দলবল নিয়ে ঘোরাঘোরি করছে।

    এতোসব ইঁদুরকে নিধন করা বিড়ালের কাজ নয়। বিড়ালেরা তাই অসহায়, তারা আত্মসমর্পন করে বসে আছে। আব্দুর রহমান সাহেবের বাড়িতে তিনটি বিড়াল। তারা ইঁদুর মারে না, ইঁদুরের পিছনে ধাওয়াও করে না। ভাত মাছ যা পায় খায়, ইঁদুরদের ঘাঁটাতে যায় না।

    ভাতের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে ইঁদুর মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। মরেছেও অনেক। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি। ইঁদুরেরা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। যে হারে মরেছে তার চাইতে বেশি বেড়েছে। ফলে গণিতের অলঙ্ঘনীয় নিয়ম মতেই ইঁদুরদের সংখ্যাধিক্য হয়েছে। হয়েই চলেছে।

    বায়োলজিতে কীসব ব্যাপার স্যাপার আছে। কোন এক সিস্টেমে কোন এক প্রাণীর সংখ্যা এভাবে বেড়ে যেতে পারে না। এতে বাস্তুসংস্থান তাল হারিয়ে ফেলে, হয়ে যায় টালমাটাল। ফলশ্রুতিতে, এক নীরব কলকাঠি থাকে প্রকৃতির হাতে, যা সিস্টেম সন্নিবেশিত প্রাণীকূলের সংখ্যাকে এক সাম্যাবস্থায় রাখে।

    আব্দুর রহমান সাহেবের বাড়িতে এটি রক্ষিত হচ্ছে না। এক প্রাণী বেড়েই চলেছে। কেন এমন হচ্ছে, কে জানে!

    আব্দুর রহমানের দাদা হারিছ চৌধুরী ইঁদুর পুষতেন এই জন্যই কী?

    এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যায় না। কারণ এমন হওয়াটা স্বাভাবিক যে, বাস্তব জীবনে অনেক অনেক প্রশ্ন থাকে যেগুলির উত্তর জানা যায় না।

    আব্দুর রহমানের মেজাজ খিচরে আছে। তিনি তার বড় ছেলে মজনু শেঠকে একটু আগে বলেছেন একটা ইঁদুর ধরে আনতে। ইঁদুর যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য সর্বশেষ যে অস্ত্র তার কাছে আছে, আজ তিনি সেটিই প্রয়োগ করবেন। কাল রাতেই মনস্থির করে ফেলেছেন। যা হবার হবে।

    এতদিন তিনি অপেক্ষায় ছিলেন। আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। গ্রামের বাঁশঝাড়ে বাঁশঝাড়ে তীক্ষ্ণ নজর রেখে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

    বাড়িতে ইঁদুরের উপদ্রবকে সহ্য করে যাচ্ছিলেন বাঁশঝাড়ের দিকে চেয়ে। শুনতে অবিশ্বাস্য ও উদ্ভট মনে হলেও এটা সত্য।

    আব্দুর রহমান ধারণা করেছিলেন বাড়িতে ইঁদুরের উপদ্রব আসলে একটি সংকেত। বাঁশঝাড়ে ফুল আসার সংকেত। কত শত বছর পরে পরে নাকি এমন হয়। বাঁশঝাড়ে ফুল আসে। দুই তিনশ বছর পরে পরে মনে হয়। আব্দুর রহমানের ঠিক ইয়াদ নেই।

    তবে তিনি নিশ্চিত, একথা তার দাদীর মুখে শুনেছেন। দাদী তার তখন থুত্থুড়ে বৃদ্ধ। ভাঙা ভাঙা গলায় বলেছিলেন, জমাদার শেঠ আলুর ক্ষেতে বাক্সভর্তি সোনার মোহর পেয়েছিল যেই সময়, তখন বাঁশঝাড়ে এসেছিল ফুল, আশ্চর্য ঘটনা।

    এই জমাদার শেঠ আব্দুর রহমানের নিকঠ পূর্বপুরুষ।

    আচ্ছা, এইজন্যই কি আব্দুর রহমান সাহেবের দাদা ইঁদুর পুষতেন খাঁচায়, লেজ কেটে দিয়ে?

    আব্দুর রহমান অনেক বাঁশঝাড়ে ঘুরেছেন। নানা গ্রামে খবর লাগিয়েছেন। দিন গেছে। দিনে দিনে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়েছে বাড়িতে। কিন্তু কোথাও বাঁশঝাড়ে ফুল আসার খবর আসে নি।

    তাই, আব্দুর রহমান শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তার জানা শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করে তিনি ইঁদুরদের সমূলে নিধন করবেন। অব্যর্থ অস্ত্র।

    মজনু শেঠ ইঁদুর ধরে নিয়ে এসেছে। ঘাড় বাঁকা এক ইঁদুর।

    আব্দুর রহমান হাতের সুঁই ও কালো সুতা নেড়ে বললেন, এরে উলটা কইরা ধর, বান্দির পুলা।

    মজনু শেঠ ইঁদুরকে উলটা করে ধরে।

    অল্প দূরে ভীড় জমিয়েছে বাড়ির ছেলে বুড়োরা। তারা কৌতূহল নিয়ে দেখছে আব্দুর রহমানের কার্যকলাপ। কিন্তু কাছে ঘেঁষতে সাহস পাচ্ছে না।

    আব্দুর রহমান ছেলের দিকে খেঁকিয়ে উঠলেন, বান্দির পুলা, মাথা চাইপা ট্যাং শক্ত কইরা ধর।

    ছেলে মজনু শেঠ বাপের কথামতো তাই করে। আজকের গালিতে তার মন খারাপ হয় না। কারণ তার ভিতরেও কৌতূহল।

    ইঁদুরকে শক্ত করে ধরা হয়েছে। ক্যাঁক ক্যাঁক শব্দ করছে ইঁদুর।

    আব্দুর রহমান বললেন, উঁচা কইরা ধর, আমার সামনে আন।

    ছেলে ইঁদুরকে আব্দুর রহমানের মুখের সামনে নিয়ে আসে।

    আব্দুর রহমান বলেন, শক্ত কইরা ধরবি। ছাড়বি না। মইরা গেলেও ছাড়বি না। ছাড়লেই সব শেষ।

    ছেলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

    আব্দুর রহমান লম্বা সুঁই নিয়ে ইঁদুরের পশ্চাতদেশ সেলাই করতে থাকেন। ইঁদুরের আর্তচিৎকার শুরু হয়।

    মজনু শেঠ শক্ত করে ধরে রাখে। উত্তেজনায় তার নাক ঘেমে যায়।

    অল্প দূরে থাকা বাড়ীর লোকেরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে যেন দেখতে থাকে।

    এই ইঁদুরকে পশ্চাতদেশ সেলাই করে ছেড়ে দেয়া হবে। এটি দৌড়ে যাবে তার দলের কাছে। সে যন্ত্রণা পেতে পেতে একসময় মারা যাবে।

    কিন্তু এই যন্ত্রণায় দিনগুলিতে, এই চূড়ান্ত ভয়াবহতার দিনগুলিতে তাকে যেসব ইঁদুরেরা দেখবে, তারা ভয়ে এই বাড়ী ছেড়ে পালাবে। আর কখনো আসবে না।

    এমনই হয়। এমনই হয়ে আসছে।

    ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১৯৯৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    হেলেন - Muradul islam
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | ***:*** | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৫49793
  • ভালো লাগলো।
  • শঙ্খ | ***:*** | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩৭49794
  • ওফ, সলিড লেখা কাকা, সলিড।

    এমনই হয়। এমনই হয়ে আসছে।
  • | ***:*** | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৪৮49795
  • "এমনই হয়। এমনই হয়ে আসছে।"

    হুঁ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন