শহরে তিনতলা বাড়ি ছিল দুর্লভ। গ্রামে গ্রামে তো দোতলা বাড়ি হাতে গোনা।
কিন্তু তেতলা বাড়ি ছিল। মুরগির জন্য। ছবি পেলে দেবো।
আমাদের গ্রামে মাটির কয়েকটি দোতলা বাড়ি ছিল। বারান্দা থাকলে দোতলা বলা হতো। নাহলে মাঠকোঠা। যে মাঠকোটা তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে করালী। তারাশঙ্করের 'হাঁসুলীবাঁকের উপকথা'র করালী। গ্রামের দেবতা বটঠাকুর রেগে যাবে বলে সে মাঠকোঠা গুঁড়িয়ে দেয় কাহারদের মোড়ল বনওয়ারী।
মাঠকোঠা গ্রামে ছিল ১১ টা। পাকা বাড়ি একটি। বারান্দা সমেত দোতলা। বলা হতো, দালান। দালান শব্দ হয়ে গেছিল মানুষের প্রতীক। লোকজন বলতেন, আমিও বহুদিন বলেছি, দালানদের বাড়ি।
বারান্দা ওলা মাটির বাড়ি ছিল যতদূর মনে পড়ছে দুটি।
এখন তো অজস্র পাকা বাড়ি।
এখন বিদ্বেষী সাম্রাজ্যবাদী ইজরায়েলের বন্ধু সৌদি আরব এবং নাগপুরের প্রভাবে মুসলিম হিন্দু দুই নামধারী মৌলবাদীরাই লোকায়ত ধর্ম ও লোক জীবনের সমন্বয়বাদী উৎসবগুলো বাতিল করতে লেগেছে।
শবে বরাতে মোমবাতি ধূপ জ্বালানো হয়, অন্য ধর্মের মানুষদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়, গরিব দুঃখীদের দান করা হয় বলে কিছু মৌলবাদী আপত্তি করেছে।
ওরা চায়, ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়াতে। সব অর্থ ওদের কাছে যাবে।
অথচ ইসলামে ধর্মাচারণ করে অর্থোপার্জন হারাম।
হিন্দু ধর্মেও সাধু সন্ন্যাসী ক্ষমতা বা বিষয়ের দিকে ঝুঁকবেন না।
সাধনা করবেন।
লোকে দিলে খাবেন। চাইবেন না।
চৈতন্যের জীবন দেখুন।
শবে বরাতে আগে দলে দলে ফকির মিসকিন আসতেন চালের আটার রুটি, পোলাও, হালুয়া, ফিরনি, মাংসের তরকারি সংগ্রহ করতে। গ্রামের ছেলেরাও ফকির সেজে চালের আটার রুটি, ফিরনি, হালুয়া, মাংস সংগ্রহ করতেন। সে দলে বামুন বা অন্য পরিবারের দুই ছেলে থাকতেন। যাঁরা জন্মসূত্রে 'হিন্দু'। একজন সম্পর্কে জনশ্রুতি ছিল, গোরুর পাঁচকিলো মাংস একাই খেতে পারতেন।
এ-নিয়ে 'কাদামাটির হাফলাইফ' প্রথম খণ্ডে বিস্তারিত লিখেছি।
পাঁচ কিলো মাংস নিয়ে অবাক হবেন না।
হিটু মুন্সির ১০ কিলো রসগোল্লা প্রবাদ আমাদের এলাকায়।
গল্পটা বলেই নিই।
গ্রীষ্মের দুপুর। হিটু মুন্সি সেহারাবাজার গেছেন। সেহারাবাজার স্টেশনের উত্তরদিকে একটা মিষ্টির দোকান ছিল। রসগোল্লা, মণ্ডা, দানাদার, মাখা সন্দেশ পাওয়া যেত। আর সকালে লুচি তরকারি। ওই দোকানের মালিকের ছেলে আমাদের সঙ্গে নবম দশম শ্রেণিতে পড়েছে।
হিটু মুন্সি জিজ্ঞেস করেছেন, রসগোল্লা কত করে?
তখন রসগোল্লা হতো দুরকম। ছোটর দাম চার আনা ( ও বাবা, চার আনা মানে ২৫ পয়সা। ২৫ পয়সার একটি সুন্দর ব্রোঞ্জের মুদ্রা ছিল) আর আট আনা। এছাড়া একটু হালকা হলুদ রঙের কমলা ভোগ। ষাট পয়সা দাম। আট আনা দামের মিষ্টির নাম রাজভোগ। এখন যেটি ভীমনাগ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে, সেই আয়তন।
দুপুর বেলা। সেকালেও গরম পড়তো। আর সে-সময় সেহারাবাজারে কোনও দোকানেই বিদ্যুতের পাখা ছিল না। আমাদের ১৯৮০-৮২ তে স্কুলেও।
দোকানদার রেগে বলেছেন, কত করে মানে? খাবে দুটো রসগোল্লা? কত করে জিজ্ঞেস কেন?
হিটু মুন্সির নবাবি মেজাজ।
বললেন, গামলার দাম?
গামলার দাম? বলে কী? খেতে পারলে পয়সা লাগবে না ফিরি (ফ্রি, এই ইংরেজি শব্দ খুব চলতো)।
ওহ, আচ্ছা দাও।
দোকানদার কী বুঝে বললেন, জল খেতে পারবে না। আর রস চিপতে পারবে না । সব খেতে পারলে ফিরি। না খেতে পারলে ডবল দাম দিতে হবে।
এক গামলায় নয় থেকে দশ কেজি মিষ্টি থাকতো। এক কেজি মিষ্টিতে ৩২ টি চার আনা বা ষোলোটা আট আনার মিষ্টি ধরতো।
জনশ্রুতি, হিটু মামা গামলা নিয়ে বসেন এবং ঘন্টা খানেক পরে গামলা ফাঁকা করে বলেন, আর আছে?
দোকানদার তো কেঁদে কেটে একশা।
১৯৭০-৭১ এ একশো টাকা অনেক টাকা। এক বিঘা জমি পাওয়া যেত আমাদের গ্রামে। আজ যার দাম অন্তত পাঁচ লাখ টাকা।
ধানের দাম ধরলে তিন কুইন্টাল ধানের দাম।
চালের দাম ধরলে দুই কুইন্টাল চাল।
এরমধ্যে কথা রটে গেছে। মোবাইল না থাকা সময়েও গল্প এবং গুজব ছড়াত অতি দ্রুত। বহু মানুষ ভিড় করেছেন খাওয়া দেখতে।
দু একজন বলতে শুরু করেছেন, করেছো কী? কাকে কী বলেছো? জানো উনি কে? ডাবল এম এ। একশো বিঘে জমির মালিক।
বন্দুক নিয়ে ঘোরে। আজ নেই তোমার ভাগ্যি।
কেউ বললে, পলাশন স্কুলের হেডমাস্টার ছিল জানো।
ধর্ম নিয়ে কথা তোলায় এককথায় ছেড়ে দেয়।
আরেকজন বললে, ওর কলমের খুব জোর। এক কলম যদি লেখে বিডিওকে! কী হবে ভেবেছো?
সবাই বললে, দোকানদারের খুব অন্যায় হয়েছে?
ক্ষমা চাও।
দোকানদার তো ভয়ে অস্থির । সে পায়ে পড়তেই বাকি রাখলে।
হিটু মামা বড় মনের দরাজ দিলের মানুষ।
মুহূর্তেই ক্ষমা করে দিলেন। তবে কথা শোনাতে ছাড়লেন না, বললেন, মানুষ বুঝে কথা বলবে।
মুড়ি মিছরি এক করো না। খদ্দের লক্ষ্মী। আদর করে বসতে বলবে।
দোকানদার কী করে? অনেকেই তো দুপুর বেলায় আসে বসে। জগে রাখা জল খায়। ট্রেনের জন্য বসে থাকে। সে বেচারি পাতা বেঞ্চে ঘুমাতে পারে না।
তখন তো দোকানদারই কারিগর, কারিগরই দোকানদার বা মালিক।
যাক, হিটু মামা শান্ত হলেন, সবার জন্য মণ্ডার হুকুম দিয়ে বললেন, কত কেজি মিষ্টি ছিল?
আজ্ঞে দশ কেজি।
কত দাম?
আজ্ঞে একশো টাকা হয়।
একসঙ্গে নিলে কমসম করে দিই বিয়েশাদিতে।
আচ্ছা দেড়শো টাকা রাখো।
আর মণ্ডার দাম কত হল বলো?
আমাদের সহপাঠী অতনু সেনকে আমি বিয়ে বাড়িতে ৮০টি রসগোল্লা খেতে দেখেছি। গুঁড়ুভাইকে দেখেছি, এক ধামা লুচি সাবাড় করতে। আমি নিজে বছর দশেক আগেও দেড় কেজি মাংস খেয়েছি। সাতজনের ভাত খাওয়ার গল্প মনে হয়, লিখেছি প্রথম খণ্ডে।
এখন?
পরীক্ষা করে দেখতে হবে!
মাংস কিছুটা পারবো। ভাত তিন থালা। সিঁদল বা মানকচু বাটা হলে।
লেখাটা খাওয়ার দিকে চলে যাচ্ছে। কী করা যাবে! এতো বৈঠকি লেখা। সায়ন বলেছেন, যা মনে হবে, লিখবে। অত হিসেব করবে না।
বরপক্ষ কনেপক্ষকে নাকাল করার জন্য খাইয়ে লোক 'হায়ার' বা ভাড়া করে নিয়ে যেত, এ গল্প তো গ্রাম শহরে ভুরিভুরি।
আমাদের স্কুলের সরস্বতী পুজোর একটা গল্প বলি।
আমরা নবম দশম শ্রেণিতে বাড়ি থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে ভর্তি হয়েছি। গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। পুরানো পাঠকদের মনে থাকতে পারে এ-সব কথা। আগের স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে উঠলে সরস্বতী পূজা করার দায়িত্ব পাওয়া যেত। করেছি ধুমধাম করে। তবে গ্রামে খিচুড়ি খাওয়ার চল ছিল না পেটপুরে। প্রসাদ মিলত। লুচি সুজির হালুয়া নানারকম ফল। খাওয়া নয়, পূজার আয়োজন ছিল আসল। অন্যদিন শীতকালে লাইতে (নাইতে/ চান করতে/ শহুরে স্নান করতে) ইচ্ছে করতো না, ওইদিন ভোর ভোর উঠে পুকুরে ডুব দিয়ে নতুন জামা পরে ছুট স্কুলে। ধুপধুনোর গন্ধ আমাকে খুব টানতো। আমার তো পরে ইচ্ছে করতো, বর্ধমানে অমল ব্যানার্জিদের পারিবারিক দুর্গাপূজার আয়োজন দেখে, একটা আস্ত দুর্গাপূজা একাই করতে। ২০১১ থেকে ২০২২ একটা দুর্গাপূজার অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে আমি পূজা পরিচালনা করেছি। ভোর পাঁচটায় উঠে রাত বারোটার সময় ঘরে ঢুকেছি। চারদিন দুবেলা খাওয়ার আয়োজন (পেটপুরে প্রসাদ ধরলে চার বেলা) একশো পরিবারের। সাড়ে তিনশো থেকে সাড়ে চারশো মানুষের। ২০২৩-এ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্য মাঝপথে কেরালায় চলে যেতে হয় ।
যাক, সরস্বতী পূজার কথায় ফিরি। সেহারাবাজার স্কুলে শুনি সরস্বতী পূজার দায়িত্ব একাদশ শ্রেণির। তাঁদের মাথারা সব ছাত্র পরিষদ সমর্থক। পরে এদের পাণ্ডা আরামবাগের কাছে কালীপুর কলেজে গিয়ে এসএফআইয়ের জিএস হয়।
তারা তো আমাদের পাত্তাই দিচ্ছে না।
নিয়ম নাকি নাই।
আমি সকল কাজের কাজী স্যার শিশির দত্তকে বলে সাত আটজন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে আগের রাতে থেকে গেলাম।
রাতে প্রবল বৃষ্টি হল। ঠান্ডা। সম্বল শুধু সোয়েটার আর মাফলার। চাদরও আনিনি কেউ। কেউ তো থাকবো বলে ভাবি নি।
একালের লোক অবাক হবেন। বা শহরের বাসিন্দারা। আমাদের সময়ে ছেলে বাড়ি ফিরছে না তো ফিরছে না বাবা মায়ের তেমন চিন্তা নাই।
তবে শিক্ষক বাড়ির ছেলেদের সমস্যা ছিল। যে কারণে আমার মামাতো ভাইকে চলে যেতে হল।
বৃষ্টি। প্রবল ঠান্ডা। তখন তো কথায় কথায় ডেকোরেটর, শতরঞ্জি, কম্বল, বালিশ, তোষক মিলতো না। ১০ পয়সা করে মাসে মাসে চাঁদা নিয়ে ছাত্রী ছাত্রপিছু বছরে এক টাকা কুড়ি পয়সা করে নিয়ে পূজা। এত পয়সাই বা কোথায়? আর বললেও তো মুশকিল, তোদের কে থাকতে বলেছে।
রাত যা হোক করে কাটল। ত্রিপল পাতা ছিল। অর্ধেকটা গুটিয়ে তার তলায় আটজন ঢুকে গেলাম।
ভোর ভোর ওঠা আমাদের গ্রামের ছেলেদের অভ্যাস। এগারো ক্লাসের আট দশজন আছে দোতলায়। তাঁরা বাজারের ছেলে। বড়লোকি চাল। ধূমপান করে কেউ কেউ।শোনা গেল, গাঁজাও খেয়েছে। এই প্রথা ছিল বহুকাল। ওরা ঘুমে কাদা। আমরা উঠে সব পরিষ্কার করে ফেললাম। রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজেরা চাঁদা দিয়ে কাগজ কিনে শিকলি বানিয়ে ছিলাম। সেগুলো টাঙিয়ে দিলাম। তুলি দিয়ে মার্বেল পেপারে কবিতা লিখে গেটের সামনে লাগিয়ে দিলাম। আর ক্লাসের মেয়েদের (নবম শ্রেণি সি সেকশন), বলা ছিল আটটার মধ্যে চলে আসবি। দল বেঁধে। শাড়ি পরে। তখন নবম শ্রেণিতে সবাইকেই শাড়ি পরতে হতো। নন্দা শুক্লা আত্রেয়ী মৈত্রেয়ী মাধবী মালা কৃষ্ণা ডালিয়া ইতি-- এক বিরাট দল লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে হাজির। নটার মধ্যে আলপনা দেওয়া, ফল কাটা সব শেষ।
শিশিরবাবু, গজেনবাবু, চিত্তবাবু, প্রিয়নাথবাবু, পরেশবাবুরা তো স্কুলে এসে অবাক। সাড়ে এগারোটা বারোটার আগে পূজা শুরুই হয় না।
ইমান, কারা করল এসব?
মেয়েরা গর্ব করে বলল, আমরা ক্লাস নাইন।
ইলেভেনের পাণ্ডারা ঘুমিয়ে কাদা। তারা তো জানতেই পারলো না।
লালু, সুবীর ভৌমিকের ওপর দায়িত্ব ছিল পুরোহিতকে সাড়ে নটার মধ্যে পাকড়াও করে আনার।মেয়েদের স্কুলে পুজো করে তবে এখানে আসতেন।
ওরা তো পুরোহিত মশাইকে নটার মধ্যেই হাজির করে দিয়েছে।
ইলেভেন টুয়েলভ ছাড়া বাকি ক্লাসের ছেলেমেয়েদের কাছে গোপন বার্তা ছিল সব নটার মধ্যে চলে আসবি।
সব হাজির।
প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত।
তাঁকে গিয়ে ধরলাম, স্যার প্রায় সবাই হাজির। পূজা হয়ে যাক।
শিশির কী বলো?
হোক স্যার। ভালোই হবে। ছেলেমেয়েরা তাড়াতাড়ি প্রসাদ পাবে।
পূজা শুরু হয়ে গেল।
শাঁখের আওয়াজেও ইলেভেনের আটদশজন পাণ্ডার ঘুম ভাঙল না।
শিশিরবাবু তাদের তুললেন।
তারা চোখ কচলাতে কচলাতে এসে দেখল, অঞ্জলি শুরু হয়ে গেছে।
দুপুর ও রাতে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন শিশিরবাবু একটা হোটেলে। তখন সেহারাবাজারে মোট তিনটি হোটেল ছিল। মনোরমা রেস্টুরেন্ট। একটু দামি। দেড়টাকা মাছভাত। পরিষ্কার চেয়ার টেবিলে খাওয়া। টেবিল সানমাইকা দেওয়া।
আর বক্সি এবং আরেক হোটেলে সবজি ভাত বারো আনা ( ৭৫ পয়সা), মাছভাত একটাকা। পেট চুক্তি। স্কুল বলে নব্বই পয়সা।
আগের রাতে দুপুরে এবং রাতে খাওয়া ভালো লাগে নি। শুনে দ্বিতীয় দিন নজরুল বলে একজন বলল, আমাকে রাতে নিবি থাকতে।
কী করে হবে? স্যারকে বলা নেই।
তুই বল না, তুই বললেই স্যার রাজি হবেন।
আমরা বললাম। ঠিক আছে।
আমরা তখন প্রচুর খেতাম। নজরুলও। কিন্তু সে খুব কম খেল। বক্সিদা তো খুব খুশি।
বললে, তোমার তো পাখির আহার। রাতে এসো, আগে। আলাদা করে। আলু পোস্ত আর ডিমের ঝোল। তোমাকে ভালো করে খাওয়াবো। মত ইচ্ছে খাবে। এত কম খাও কেন?
নজরুল বললে, আমি তো ওদের মতো নির্লজ্জ নই যে, বেশি খাবো। অল্পই খাবো।
রাতে নজরুল আমাকে ডেকে বলল, এখন পৌনে নটা বাজে। তোরা ঠিক নটা চল্লিশে আসবি। মজা দেখবি।
নজরুল তো চলে গেল।
খাচ্ছে।
ভাত দিয়েছে।
ন্না আর ন্না।
আরে খাও।
তোমার মতো ভালো ছেলে দেখিনি। ওগুলো বদের ধাড়ি। শুধু এই চায় সেই চায়। কিছু বললেই বলে, স্যারকে বলে দেবো।
নজরুল বলে, আমি তেমন ছেলেই না। আমার সামান্য খাওয়া।
এত কম খাও কেন? ভালো করে খাও। যত খুশি।
কী যে বলেন! নজরুল বিনয় করে।
তোমার মতো ভালো ছেলে দুটো দেখিনি। এক ঝুড়ি ভাত তুমি খেলেও আমার কিছু মনে হবে না। ওগুলোকে খাওয়াতে গায়ে লাগে।
বলছেন, এক ঝুড়ি খেতে।
হ্যাঁ হ্যাঁ খাও তো।
নজরুল খেতে খেতে এক ঝুড়ি ভাত সব প্রায় শেষ করে এনেছে, আমরা হাজির।
আমরা তো বাসস্ট্যান্ডের কাছেই লুকিয়ে ছিলাম।
ঝুড়ি ভর্তি ভাত শেষ হওয়ার মুখেই হাজির।
খিদে পেয়েছে। এখনই খেতে দাও।
ভাত কোথায়? ভাত তো নেই!
তাহলে ক্ষতিপূরণ কী হবে?
স্যারকে কিছু বলো না ভাই, আমি আলু পোস্ত বসিয়ে দিচ্ছি। আর কাল দুপুরে আলু ভাজা বাড়তি। দাম লাগবে না।
রাত সাড়ে এগারোটায় ভাত আলুপোস্ত ডিমের ঝোল রেডি হল।
খেলাম।
নজরুলের আরেকটা ঘটনা আছে। কলকাতায় শিয়ালদহের কাছে ১৩ ফরডাইস লেনের মেসে।
সে আরেকদিন।