

আজকাল বড় ধীরু হয়ে গেছি। লেখা আসতেই চায় না। ছুটছি আর ছুটছি। ছুটতে ছুটতেই কথা শুনি।
জার চলে যাচ্ছে।
হ্যাঁ। এবার জার তেমন পড়লই না।
জানো তো দাদা বাবু বলছে জার কী? জার শোনেই নি।
আজকালকার ছেলেমেয়েরা জার শোনেইনি।
আমার শাশুড়ি খুব বলে জানো তো। জার।
যেতে যেতে কথা শুনি দুই গৃহ সহায়িকার।
সুন্দরবনের মানুষ। এখন কলকাতায় থিতু। সেদিন এক তরুণ বন্ধু বললেন, আমার দাদি খুব আমড়ার খাটা খেতে ভালোবাসতো।
খাটা। কতদিন পর শুনলাম। আমরা খেতাম পাকা আমড়া একটু থেতো করে আধবাটা পোস্ত দিয়ে খাটা--টক।
কী যে স্বাদ। জারকালে কী ভালো যে লাগতো। কিন্তু আমড়া আসতে আসতে তো ফাগুন মাস। চৈত বোশেখেও খুব খাওয়া হতো।
আমড়ার খাটা নেই, আমের খাটা ডাল আছে, তেঁতুল খাটা পাতলা ডাল কতদিন খাই না।
মায়ের হাতের রান্না ছোটবেলায় তেমন ভালোবাসতাম বলে আলাদা কোনও স্মৃতি ছিল না।
এখন যত বয়স হচ্ছে, তত ছোটবেলার মায়ের রান্না অমৃত মনে হচ্ছে।
এক বন্ধুর বাড়ি গেলে মাঝে মাঝে, মুসুড় ডালের ফোড়নে মায়ের স্বাদ পাই।
মায়ের রান্নার স্বাদ যেমন নেই, তেমন ক্লাব সংস্কৃতিও নেই।
কৌতূহলী আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, ক্লাব নিয়ে জানতে।
আশির দশক পর্যন্ত গ্রাম বাংলার বেশিরভাগ ক্লাব ব্যস্ত থাকতো ফুটবল নিয়ে। পরের দিকে ক্রিকেট ভলিবল এসব আসে। এছাড়া কবাডি প্রতিযোগিতা হতো। আর ছিল যাত্রা গ্রামীণ কোনও মেলা বা উৎসব ঘিরে যাত্রা করা। বাইরের দল নিয়ে যাত্রার আয়োজন করা হতো ফুটবল মাঠের উন্নয়ন বা ইত্যাদি বিষয়ে। কিন্তু অ্যামেচার যাত্রা এবং নাটক ছিল ক্লাবগুলোর প্রাণ। এছাড়াও ক্যারাম, দাবা, চাইনিজ চেকার, তাস, দাবার আয়োজন থাকতো। আড্ডা ছিল ক্লাবের প্রাণ। পানভোজন ক্লাব সংস্কৃতির অঙ্গ হয়নি। অন্তত আশির দশক পর্যন্ত।
আর কিছু ছিল রাজনৈতিক ক্লাব। যেমন বর্ধমানের শিবাজী সঙ্ঘ, সেহারাবাজারের ওঁ গোষ্ঠী, আরামবাগ কালীপুরের কালীপুর ক্লাব এগুলোর খ্যাতি ছিল ফুটবলের জন্য। অখ্যাতি, বামমহলে, কংগ্রেসের ক্লাব বলে।
বামপন্থীরা প্রচার করতো, কংগ্রেসের বাহিনী হিসেবেও কাজ করে এই ক্লাবগুলো।
বামফ্রন্ট আমলে এদের রমরমা কমে যায়। যদিও ফুটবল ময়দানে এই তিন ক্লাবের দাপট ছিল দারুণ।
বর্ধমান শহরের আর এ ইউ সি বলে একটা ক্লাব সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতো।
বিতর্ক তাৎক্ষণিক কুইজ ছবি আঁকা গান কবিতা নানা বিষয়ে প্রতিযোগিতা করতো। এখন স্টুডেন্টস হেলথ হোমের সম্পাদক পবিত্র গোস্বামীর বাবা জগজ্জীবন গোস্বামী প্রতি বছর পাড়ার ছোটদের নিয়ে নিজের লেখা চমৎকার নাটক করাতেন। বেশিরভাগ ক্লাব রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তী করতো খুব গুরুত্ব দিয়ে।
এছাড়া পাড়ার মেয়ের বিয়ে, শ্মশানে কবরে যাওয়া, হাসপাতালে রাতজাগা, রক্তদান এরকম নানা সামাজিক কাজ করতো। এছাড়া চোখের ছানি অপারেশন, পুরুষদের বন্ধ্যাত্বকরণের মতো সরকারের উদ্যোগে সামিল হতো।
আমাদের গ্রামের একটা ঘটনা মনে পড়ছে। জরুরি অবস্থার সময়। ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র সঞ্জয় গান্ধী তখন শ্লোগান তুলেছেন -- হাম দো হামারা দো।
নাশবন্দির ঢেউ দেশ জুড়ে।
আমাদের গ্রামেও এল তার তরঙ্গ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজন হল ভ্যাসেক্টমি।
কৌতুহলী | 115.187.***.*** | ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩৬540800
binita Rahaman | 117.195.***.*** | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৯541314