এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন

    ইমানুল হক
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩৪৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • নামাঙ্কনঃ ইমানুল হক। ছবিঃ র২হ

    কথা - ২৪


    আমি যখন কলকাতার একটি নামী দৈনিকে কাজ করতে যাই, নয়ের দশকের মাঝামাঝি, তখন বিশিষ্ট সাংবাদিক, বর্ধমান জেলার সিপিএম সম্পর্কে জানতে চান। আমি একটি বিষয় ঠিক করে নিয়েছিলাম, আমি বর্ধমান নিয়ে কিছু বলব না, বা লিখব না।
    বর্ধমান সিপিএম তখন একটা মিথ।
    লালদুর্গ।
    আরও দুয়েকজন সাংবাদিক ছিলেন। তাঁদেরও খুব আগ্রহ।
    আমি বলতে চাই নি। পরেও বলি নি। লিখি নি। শুধু একটা বিষয় বলেছিলাম।
    ১৯৮৯-এ দুই শীর্ষ পার্টি নেতার সঙ্গে এক গাড়িতে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়। এটা মাঝে মধ্যেই পরে ঘটেছে। সেদিন ছিল নতুন মারুতি গাড়ি কেনার পরের দিন। তাঁরা দু ঘন্টার পথে সদ্য কেনা মারুতি গাড়ি ও তাতে কী ধরনের তোয়ালে কেনা হবে সে নিয়ে আলোচনা করে গেলেন। এবং বলেন ড্রাইভার ছাড়া তিন জনের বেশি তোলা ঠিক হবে না। সেটিই তখন অ্যাম্বাসেডরের বাইরে প্রথম মারুতি।

    আমাকে বিশিষ্ট সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি এটাকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছ কেন?
    আমি বললাম, তখন টিভিতে হিটলার পূর্ব জার্মানির অপেরা নাটকের মতো রামায়ণ মহাভারত হচ্ছে, ওঁরা, তাঁদের মধ্যে একজন বড় তাত্ত্বিক বলে পরিচিত সেটা ধরতে পারছেন না কেন, উদ্বিগ্ন নন কেন, বম্বে ডাইংয়ের তোয়ালে ভালো, না, অন্যদের, সে নিয়ে ভাবিত-- এইটা আমাকে খুব ভাবায়। অবাক হই।
    রাজনৈতিক পরিপক্বতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ি।

    আমি আর কিছু বলি নি।

    তাঁদের বেশ কিছু কাজের জন্য আমি আজও শ্রদ্ধা করি।
    কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারি নি, দলের অন্যতম তাত্ত্বিক বলে পরিচিত নেতা কেন টিভিতে রামায়ণ মহাভারত দেখানোর বিপদটা ধরতেই পারলেন না!

    পরে প্রবুদ্ধ বাগচী র একটি লেখা পড়ে পুরাতন প্রসঙ্গ লিখতে ইচ্ছে হল।
    অশোক মিত্র তখন রামায়ণ, মহাভারত টিভিতে দেখানো নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, ওগুলো টিভিতে দেখানোর সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, অনেকে ধূপ নিয়ে বসে পড়ছেন।
    আর পার্টি জিবিগুলোতে বাবরি মসজিদের ইতিহাস বলা হচ্ছে, সম্প্রীতির কথা বলা হচ্ছে, রাম যে ঐতিহাসিক পুরুষ নন, মহাকাব্যের চরিত্র মাত্র-- তা অনেকেই বলছেন না।
    নেতা তো তিনিই যে দূর দেখতে পান।

    দূরকে দেখতে পাই নি, ১৯৮৭ তে যেদিন, কমিউনিস্ট পার্টির কাছেও মুচলেকা নেওয়া হল, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে, সংবিধান মানি, এটা বলতে হবে।

    বলা হল।

    বিপ্লবী রাজনীতি থেকে পাকা হয়ে গেল সংসদীয় পথে যাত্রা।
    কেরল এখনও আর এস এস ঠেকাতে পারছে কারণ শুধু বক্তৃতা নয়, সশস্ত্র আর এস এস ঠেকাতে যা তা করা দরকার করছে।

    আমরা এখানে সব আমলেই আর এস এসকে বাড়তে দিয়েছি।
    কলকাতার বহু নামী স্কুল চালায় আর এস এস।

    নামগুলো শুনলে আঁতকে উঠতে পারেন। মনে রাখবেন, ভবন নামের বেশিরভাগ বিদ্যালয় সংঘ পরিবারের মতাদর্শের।

    আর এস এস ট্রেনিং আগেও হতো। এখনও হচ্ছে। বেশি সংখ্যায়। বেশি শক্তিশালী হয়ে। অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
    আর হোয়াটসঅ্যাপে চলছে মানসিক অস্ত্রচালনা। দাঙ্গার ঘোরতর পরিবেশ।

    লেবানন বেইরুট নিয়ে পোস্ট পাবেন না। ।বেইরুট ধ্বংস প্রায়।। ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ মুসলিম। কিন্তু
    মুসলিমদের দোষ সব-- শেখানো হচ্ছে সেখানে।

    আমরা একটা ফ্যান ক্লাবের বিরুদ্ধে হাওয়া দিয়ে চলেছি।
    যুদ্ধপ্রবণ মৃত্যু চিন্তক মন হয়ে গেছে।

    করোনা কালে মানুষের অমানবিকতা আকাশ থেকে তৈরি হয় না।
    আপনি বাঁচলে বাপের নাম-- মানসিকতা এর জন্য দায়ী।

    আসুন ঘুরে দাঁড়াই।
    আসুন এক সঙ্গে পা ফেলি।
    মানবিকতা বাঁচিয়ে তুলি।
    স্ত্রী ভাই সহ মানব সমাজ আমার পরিবার-- এই বোধ জাগাই।

    দ্বিপাক্ষিকতা থেকে বের হই।

    মহাভারত একটা পারিবারিক বিরোধের সম্পত্তিগত বিরোধ-- তাতে দুপক্ষই অনৈতিক। বুঝি। বোঝাই। এটা কোন ন্যায় অন্যায়ের যুদ্ধ নয়।

    রাম রাজ্য মানে স্ত্রী ভাইকে বিনা দোষে ত্যাগ। এস সি এস টি হত্যার আয়োজন--বুঝি। একজন অন্যজনের বোনের নাক কেটে দিচ্ছে। প্রতিশোধ নিতে আরেকজন তাঁর বউকে তুলে নিয়ে পালাচ্ছে। দুটোই অন্যায়। অপরাধ।
    পুরুষের বিরুদ্ধে লড়া কঠিন। নারীর ওপর প্রতিশোধ।

    দু পক্ষের অপমানের প্রতিশোধের সহজ অস্ত্র নারীকে অপমান। নারী এবং ভূমি দখল-- অস্ত্র, অস্ত্র। বীরভোগ্যা নারী বীরভোগ্যা বসুন্ধরা-- এইসব কথা তো ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী।
    এটা আমরা বুঝি নি। গৌরবান্বিত করেছি।
    স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় পরধর্ম ভয়াবহ-- এই ভুল দর্শনকে মাথায় তুলে নেচেছি।

    তোমার ধর্ম তোমার কাছে আমার ধর্ম আমার কাছে--,বলি নি।
    বিধর্মী, কাফের, মুনাফেক, উঁচু জাত, নীচুজাত-- লিখেছি। বলেছি।

    আজ বুঝি চলুন।

    এবং বোঝাই।

    অকারণ মহত্ত্ব আরোপ ভালো নয়।

    যে মহত্ত্ব আরোপ করেছিলাম আদবানি বাজপেয়ির ওপর, ইন্দিরা বিদ্বেষে।

    মারুতি গাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সঞ্জয় গান্ধি। ইন্দিরা গান্ধির বিরুদ্ধে যে-সব দুর্নীতির অভিযোগে আকাশ বাতাস মুখর করে তোলা হয়েছিল, তার একটি মারুতি কেলেঙ্কারি।
    আর দুটি নাগরওয়ালা কেলেঙ্কারি ও মুন্দ্রা কেলেঙ্কারি।
    ১৯৮০ তে ইন্দিরা গান্ধি আবার ক্ষমতায় ফেরার পর কাউকে এই দুর্নীতি নিয়ে একটা কথাও বলতে শুনিনি। যেমন রাজীব গান্ধির বোফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে শোর মাচিয়ে তাকে ভোটে হারিয়ে আদবানি বাজপেয়ির দলের আসন ২ থেকে ৮৯ করে ক্ষমতায় আসার পথে এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
    আদবানি তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী থাকার সুবাদে নিজেদের বহু মানুষকে ভালো পদ দেন। অনেককে কাছে টানেন।
    এঁরাই ১৯৮৭র ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৮-র ৩১ জুলাই পর্যন্ত 'রামায়ণ' ধারাবাহিক চলায় মদত দেন।

    আর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা অপরিণামদর্শী শাসক রাজীব গান্ধি একটার একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
    রাজীব ব্রিগেড বলে একটা ইয়াং ব্রিগেড তৈরি হয় দলে।
    কথায় আছে, পৃথিবীতে সুপরামর্শের চেয়ে ভালো কিছু নেই, কুপরামর্শের চেয়ে ক্ষতিকর কিছু নেই।

    রাজীব গান্ধির কাছের সবকটি লোক পরে বিজেপির লোক হন।
    সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া এখন দুর্গাপুর বর্ধমানের সাংসদ। আরিফ মহম্মদ খান কেরালার রাজ্যপাল। সিপিএম সরকারের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত।
    অরুণ নেহরু বিজেপির নেতা হন।
    রাজীব গান্ধির প্রথম ভুল শাহবানু মামলায় হেরে গিয়ে তাঁর স্বামী খোরপোশ দিতে বাধ্য বলে আদালত রায় দিলে তাকে ঠেকাতে মুসলিম মৌলবাদীদের খুশি করতে মুসলিম মহিলা বিল আনা।
    এবার হিন্দু মৌলবাদীদের খুশি করতে বাবরি মসজিদের মধ্যে ১৯৪৯-এ রাতের অন্ধকারে রেখে যাওয়া রামলালার মন্দিরের তালা খুলে দেওয়া।

    হিন্দু মৌলবাদীদের পোয়া বারো হল।
    শুয়ে পড়া আদবানি বাজপেয়ি চাঙ্গা হয়ে উঠলেন।

    রামজন্মভূমি ন্যাস কমিটি গড়ে উঠল। মাথায় রইলেন রামচন্দ্র পরমহংস। পিছনে অশোক সিঙ্ঘল, প্রবীণ তোগাড়িয়া। আর তাঁদের প্রধান মুখ তখন আদবানি। বাজপেয়ীকে ছাপিয়ে উঠতে চাইছেন। এরমধ্যেই ধুয়ো উঠল বোফর্স কেলেঙ্কারির । রাজীব গান্ধির অর্থমন্ত্রী মান্ডির রাজা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে এলেন। বের হলেন আরিফ মহম্মদ খান এবং অরুণ নেহরু।
    ভিপি সিং এবং আরিফ মহম্মদ খান তখন বামপন্থীদের নতুন নায়ক।
    আরিফ মহম্মদ খান আগেই পদত্যাগ করেছিলেন মুসলিম মহিলা বিলের বিরোধিতা করে।
    তিনি বলতে বলে এলেন সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির ডাকে। বর্ধমান টাউন হলে। হইহই করে সবাই গেলাম।
    এরমাঝে এসেছে জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬।
    রাজীব গান্ধির পরামর্শদাতারা বোঝাচ্ছেন, দেশে নতুন কিছু করতে হবে।
    তুমুল ছাত্র ও শিক্ষক অধ্যাপক আন্দোলন।
    পড়াশোনা বন্ধ করে রাতদিন বলে চলেছি সভায় সভায় গ্যাট ডাঙ্কেল জাতীয় শিক্ষানীতি মুসলিম মহিলা বিল বোফর্স নিয়ে।

    ওদিকে গ্রামে শহরে তাবলিগ জামাতের প্রভাব বাড়তে লাগলো।
    আগে গ্রামের দুয়েকজন যেতেন এক চিল্লা বা দু চিল্লায় এখন সংখ্যা বাড়ল।

    এক চিল্লা মানে চল্লিশ দিন ধরে ঘুরে ঘুরে ধর্মপ্রচারকের কাজ করা।
    নিজের খরচে নিজের মালপত্র নিজে বয়ে মসজিদে থেকে সবাই একসঙ্গে এক বড় খাঞ্চায় খেয়ে গ্রামে শহরে ঘোরা।
    এবং সবাই সমান।
    বিচারপতি বা আইনজীবী বা প্রধান শিক্ষক বা চাষি কোনও ভেদাভেদ নেই।

    সমতার ভিত্তিতে চলা।
    ওদিকে কমিউনিস্ট পার্টিতে সমতা কমছে। নেতাদের আলাদা থাকার জায়গা। খাওয়ার জায়গাও সম্মেলনে আলাদা হচ্ছে। মঞ্চে নেতাদের জন্য আলাদা কাপে একাধিকবার চা। বাকি কমরেডদের মাটির ভাঁড়।
    মুসলিমদের একটা অংশ তাবলিগ জামায়াতের ভিড়তে লাগলেন আদর্শগতভাবে।
    আগে বর্ধমানে বা অন্যত্র দেখেছি, শিক্ষিত মুসলিম মানেই বামপন্থী। আগে হয়তো নামাজ রোজা করতেন এসএফআইয়ের সংস্পর্শে এসে সেসব বাতিল। ১৯৮৯-এর পর উলটপুরাণ শুরু হল।

    কেন?
    ১৯৮০ থেকেই আর এস এস নানা নামে কাজ করতে শুরু করে।
    ভারত সেবাশ্রম ইত্যাদি সংগঠন ছিলই।
    তরুণ প্রজন্ম এবং শিক্ষিত সমাজের মানুষের কাছে পৌঁছাতে আকাশবাণীর প্রণবেশ চক্রবর্তী সামনে এলেন। গড়ে তুললেন বিবেকানন্দ ভাবানুরাগী সমিতি।
    জেলায় জেলায় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিতর্ক তাৎক্ষণিক বক্তৃতা শুরু হল। বামপন্থীদের কায়দায়।
    আমিও এইভাবে জুটলাম বিবেকানন্দ ভাবানুরাগী সমিতিতে।‌১৯৮২তে। বর্ধমান টাউন হলে হল বিরাট বিতর্ক তাৎক্ষণিক আলোচনা।
    আমি প্রতিযোগিতায় সফল হলাম।‌ 'যুগান্তর' কাগজে আমার নাম ছাপলেন সাংবাদিক নিরুপম চৌধুরী। স্বভাবতই খুব উত্তেজিত। যে কাগজ ছোট থেকে পড়ছি, সেখানে নাম।

    আমার মতো এই ঘটনা নিশ্চয়ই আরও কিছুজনের ঘটেছে।

    আমার সঙ্গে আমাদের পাশের গ্রাম পলাশনের একজন বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুলে পড়তেন। এক ক্লাস আগে। তাঁকে দলে ভেড়ালাম। দুয়েকটি সভায় গেলাম একসঙ্গে।
    এর কিছুদিন পর দেখি, সে আমাকে এড়িয়ে চলছে। বৈঠকে তাঁর ডাক পড়ছে। আমার নয়। অথচ বিবেকানন্দ নিয়ে তাঁর চেয়ে আমি অনেক বেশি পড়েছি।‌ সে তো প্রতিযোগিতায় কিছুই হয়নি।
    আর কিছুদিন পর যেখানে কমিউনিস্ট পার্টি ও নকশালদের বিরাট বিরাট দেওয়াল লিখন হতো, সেই জিটি রোডের ধারে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুলের চারশো ফুট লম্বা ১৫ ফুট উঁচু দেওয়ালে বিরাট বিরাট করে কালো কালিতে পেশাদারি লেখা-- গর্বের সঙ্গে বলো আমি হিন্দু।

    তলায় লেখা বিবেকানন্দ।
    এবং নতুন নাম শুনলাম বিশ্বহিন্দু পরিষদ।
    স্কুলের দারোয়ান বললেন, দেওয়াল লেখার তদারকি করেছেন অনেকের সঙ্গে আমার চেনা পলাশনের সেই নিরীহ দাদাটি।


    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:196b:d3f5:678:5634:1232:***:*** | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩৪530292
  • অবশেষে একদিন এই বৌদ্ধপ্রভাবের বন্যা যখন সরিয়া গেল তখন দেখা গেল সমাজের সমস্ত বেড়াগুলা ভাঙিয়া গিয়াছে। …একদিন বিশ্লিষ্ট সমাজকে বাঁধিয়া তুলিবার জন্য এমন একটি পুরাতন শাস্ত্রকে মাঝখানে দাঁড় করাইবার দরকার হইয়াছিল যাহার সম্বন্ধে নানা লোক নানাপ্রকার তর্ক করিতে পারিবে না— যাহা আর্যসমাজের সর্বপুরাতন বাণী; যাহাকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করিয়া বিচিত্র বিরুদ্ধসম্প্রদায়ও এক হইয়া দাঁড়াইতে পারিবে। এইজন্য বেদ যদিচ প্রাত্যহিক ব্যবহার হইতে তখন অনেক দূরবর্তী হইয়া পড়িয়াছিল তথাপি দূরের জিনিস বলিয়াই তাহাকে দূর হইতে মান্য করা সকলের পক্ষে সহজ হইয়াছিল। …তাহার পরে আর্যসমাজে যত কিছু জনশ্রুতি খণ্ড খণ্ড আকারে চারি দিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল তাহাদিগকেও একত্র করিয়া মহাভারত নামে সংকলিত করা হইল। …আধুনিক পাশ্চাত্ত্য সংজ্ঞা অনুসারে মহাভারত ইতিহাস না হইতে পারে কিন্তু ইহা যথার্থই আর্যদের ইতিহাস। ইহা কোনো ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিবৃত্তান্ত। কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি যদি এই-সমস্ত জনশ্রুতিকে গলাইয়া পোড়াইয়া বিশ্লিষ্ট করিয়া ইহা হইতে তথ্যমূলক ইতিহাস রচনা করিবার চেষ্টা করিত তবে আর্যসমাজের ইতিহাসের সত্য স্বরূপটি আমরা দেখিতে পাইতাম না। মহাভারত সংগ্রহের দিনে আর্যজাতির ইতিহাস আর্যজাতির স্মৃতিপটে যেরূপ রেখায় আঁকা ছিল, তাহার মধ্যে কিছু বা স্পষ্ট কিছু বা লুপ্ত, কিছু বা সুসংগত কিছু বা পরস্পরবিরুদ্ধ, মহাভারতে সেই সমস্তেরই প্রতিলিপি একত্র করিয়া রক্ষিত হইয়াছে।
     
    -রবীন্দ্রনাথ
  • r2h | 208.127.***.*** | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:১৫530300
  • উফ এই ভদ্রলোক কিছুতেই একটা পোস্টে নিজের বক্তব্য সুন্দর করে বুঝিয়ে লিখতে শিখবেন না, রেলগারির মত পোস্টের পর প্স্ট পোস্টের পর পোস্ট পোস্টের পর পোস্ট।

    যাগ্গে, ইমানুলদা, এইটা যদিও স্মৃতিকথা, কিন্তু কয়েকটা প্রশ্ন, সেই সময়ের ভাব্নার ভিত্তিটা বোঝার জন্য।

    টিভিতে রামায়ন ও মহাভারত আমাদের দেশের বর্তমান ধর্ম ও বিনোদনের দিশা নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এটা আমিও বুশ্বাস করি, এবং যেদিকে ব্যাপার স্যাপার গেছে, সেগুলি খারাপই, তাও বিশ্বাস করি। সামাজিক অসাম্য বা সমস্যা, দেশভাগ, বিশ্বসাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে দূরদর্শনের অনেক অনুষ্ঠান হত, তার থেকে একটা বড় রকমের অভিমুখ পরিবর্তন।

    কিন্তু রামায়ন সম্প্রচারের 'বিপদ' বোঝা - এটা নিয়ে আরেকটু বুঝতে চাইছি। কী করা যেত? বন্ধ করে দেওয়া? অনুমতি না দেওয়া? পাড়ায় পাড়ায় রামায়ন সিরিয়েলকে কাউন্টার করে সভা করা?
    এর কোনটাই কি ভায়েবল অপশন?
    তার মানে আমাদের সংখ্যাগুরু গণচেতনায় সম্প্রীতির সুর তৈরিই হয়নি, একটি বিপুল সংখ্যক মানুষ সুযোগের অপেক্ষাতে ছিলই। রামায়ন অনুঘটকের কাজ করেছে, কিন্তু একে আটকানোর উপায়টা কি? মানুষ গল্পখোর, মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে গল্পের ভূমিকা অনেক, আর রামায়ন মহাভারতের মত গল্পের আকরের জুড়ি মেলা ভার। গল্প হিসেবে রামায়ন মহাভারতের চর্চা হবে না - তাও তো হয় না। এইসব নিয়ে বিশ্লেষণ, তাত্ত্বিক আলোচনা - সেও অনেক পুরনো ধারা। কিন্তু সাধারন মানুষের কাছে সেসবের থেকে গল্প অনেক বেশি জোরদার।
    তো প্রশ্ন সেটাই, বিপদ বুঝলে ঠিক কী করা যেত? পৌরানিক বা পুরান নির্ভর গল্প নিয়ে বিনোদনের ধারা প্রাচীন, রামায়ন মহাভারত বাইবেল (দূরদর্শনেই হত, রোব্বার), আলিফ লায়লা (এটা বোধহয় আরব্য রজনীর গল্প থেকে, নাকি ভুল বলছি?) এইরকম হাজার জিনিস আছে। রামায়ন সিরিয়েল খুবই সুপারফিশিয়াল, ও না হলেও চাড্ডিপনা কিছু কম পড়তো বলে মনে হয় কি?
    আর সব্চে বড় কথা, তোমার মতে কাউন্টার কীভাবে করা যেত?

    আর "স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় পরধর্ম ভয়াবহ-"- এটা ভুল দর্শন কেন? এটাকে এমন ভাবে দেখা যায় না, ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম ছিল কেউ কারও আচার ও বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ না করে পাশাপাশি থাকা, কলোনীতে পরিবর্তিত হওয়ার পর সেই ধর্ম ভুলে পাশ্চাত্য জাতিরাষ্ট্র ও আইডেন্টিটির সংকীর্নতায় ডুবে আজকের ভয়াবহ পরিনতি (দেশভাগ, দাঙ্গা, অনন্ত কনফ্লিক্ট)? নিজেদের সহাবস্থানের ধর্ম আঁকড়ে কিছু শর্ট টার্ম স্বার্থ ছেড়ে দিলেও আজ হয়তো উপমাহাদেশের চরিত্র অন্য রকম হত?

    মানে, এখানে স্বধর্ম বলতে যে রিলিজিয়ন বোঝানো হচ্ছে না, তাতে আশা করি আমরা একমত, যেমন মহাভারতেও রাজধর্ম মানবধর্ম ইত্যাদি আলাদা কারা...
  • b | 117.194.***.*** | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৩৮530301
  • এই সিরিজটা প্রথম থেকে পড়লে মনে হয় মোবাইলে লেখা, লাইনগুলো আলাদা আলাদা, অনুচ্ছেদগুলো ভেঙে ভেঙে গেছে। তো বুবুভার লেখা যখন, গুরুর পক্ষ থেকে আরেকটু সম্পাদনা  করা যেত না কি ?
  • Guruchandali | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪২530302
  • লেখক সচেতনভাবেই লাইন ও অনুচ্ছেদের এই ব্রেকগুলি রেখেছেন, এতে কোন রকম সম্পাদনাতে তাঁর অনুমতি নেই।
  • দীপ | 2402:3a80:a04:a0e5:0:62:92bd:***:*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০০:২০530312
  • এখন কি রবীন্দ্রনাথের লেখাতেও সমস্যা হচ্ছে?
    চালিয়ে যান! 
    অবশ্য এরপরও আপনারা বড়ো বড়ো বাতেলা মারবেন!
  • Arindam Basu | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:১৯530315
  • @র২হ, 
    রামায়ণ সম্প্রচার, শাহবানো মামলা, আর রামমন্দির ধ্বংস করা, এগুলো পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। 
    একদা বামপন্হীরা ইন্দিরাকে ঠেকাতে বাজপেয়ী আদবানীর হাত ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করেছিলেন ।
    জর্জ আর লরেন্স ফারনানডেজের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন হয়নি যে যে লোকটি ইন্দিরাকে দূর্গা বলে ঘোষণা করছে, তাকে নিয়ে কেন জোট বাঁধব। 
    এই যে, শত্রুর শত্রু আমার বন্ধুর সুবিধাবাদী রাজনীতির ট্রযাডিশন ভারতে বরাবর চলেছে, তার কুফল আজও ভুগছেন। 
    রামায়ণ দেখানোটাই উচিত হয়নি, প্রশ্ন করা উচিত ছিল রামায়ণের কোন ভার্সন দেখাচ্ছেন? 
     
  • Arindam Basu | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:২২530316
  • @দীপ, আপনি রবীন্দ্রনাথের রামায়ণের ইনটারপ্রিটেশন নিয়ে আলাদা করে একটা টই খুলুন, আপনার নিজের কি বক্তব্য পেশ করুন। 
  • Arindam Basu | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:২৪530317
  • ইয়ে রামমন্দির নয়, বাবরি মসজিদ ধ্বংস হবে, :-)
  • দীপ | 2401:4900:3fab:9d6f:f790:f985:1ba6:***:*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৩১530318
  • আপনার উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।
    আমি কি করবো, সেটা আমিই ঠিক করবো।
    আপনার চিন্তার কোনো প্রয়োজন নেই!
  • দীপ | 2401:4900:3fab:9d6f:f790:f985:1ba6:***:*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৩৪530319
  • আমার লেখাগুলো যখন মুছে দেওয়া হয়, তখন আপনি তো‌ কোনো কথা বলেন না! 
    এখন জ্ঞান দিতে এসেছেন!
  • দীপ | 2401:4900:3fab:9d6f:f790:f985:1ba6:***:*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৪৭530321
  • যেমন আমার লেখা মুছে দিয়েছেন!  
    তারপর কথায় কথায় গণতন্ত্রের বুলি ঝাড়বেন!
  • r2h | 208.127.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৫০530322
  • অরিনদা, এই ক্রোনোলজি, বা ব্যাপারগুলি সম্পর্কিত - ইত্যাদি নিয়ে আমার খুব দ্বিমত নেই। আমি ভাবছি, ব্যাপারটাকে বাস্তবসম্মত কোন উপায়ে কাউন্টার করা যেত।
    পৌরানিক কাহিনী বা মহাকাব্যনির্ভর টিভি সিরিয়েল দেখানো যাবে না - এরকম কোন অবস্থান নেওয়া কি ভারতের সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল?

    যেটা করা যেত, অন্যরকম, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞাননির্ভর, সম্প্রীতির ধারনা - এইসব জিনিসকে গণমাধ্যমে আরও বেশি করে নিয়ে আসা - সেটা হয়তো হয়নি।

    আবার বাম দলগুলির লক্ষ্যচ্যূত হওয়া হয়তো একটা বড় ব্যাপার। একেবারে শুরুতে মারুতি গাড়িতে কোন তোয়ালে লাগানো হবে আর ক'জন বসবে সেই নিয়ে আলোচনা ইঙ্গিতপূর্ণ।

    ৮৭তে রামায়ন শুরু হয়ে বোধহয় ৮৮তে শেষ হল, তারপর মহাভারত, ৯১তে রাজীব গান্ধীর মৃত্যু, ৯২তে বাবরি, মুক্ত অর্থনীতি, দূরদর্শনের দ্রুত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া - একের পর এক ঘটনা।

    রামায়নের আগে বিক্রম বেতাল সিরিয়েল শনিবার করে হতো, রামায়নের মত না হলেও বিশাল জনপ্রিয় হয়েছিল। পুরানের গল্প, মহাকাব্যের চরিত্র যে কাল্পনিক চরিত্র - তা নিয়ে সচেতনতার প্রসার হয়তো অন্য ভাবে করা যেত, বন্ধ করার মত দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া কি সম্ভব হতো আদৌ?
  • r2h | 208.127.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৫৯530324
  • হামলোগ বুনিয়াদ তমস গণদেবতা চেকভ কি দুনিয়া হিমালয় দর্শন কব তক পুকারু নিম কা পেড় দর্পন ভারত এক খোঁজ দর্পন - দুনিয়ার জানালা খুলে দেওয়া একের পর এক টিভি সিরিয়েল চলতো দূরদর্শনে। রামায়ন আর মহাভারত - এই দুটি সিরিয়েল টিভি বিনোদনের ধারা আমূল বদলে দিলো।
    এই জিনিসটা কীভাবে কাউন্টার করা যেত, এইটা একটা গুরুতর প্রশ্ন মনে হয়।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:১২530326
  • দ্রৌপদীর ভূমিকায় অভিনয় করে একটানে বিখ্যাত হয়ে গেলেন রূপা।
  • অরিন | 119.224.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৫১530328
  • র২হ, রামায়ণ, মহাভারত, দুটোর একটাও টেলিভাইজড না হলেই বা কি হত? পৌরাণিক কাহিনি দেখানো যাবে না সরকার বলবেই বা কি করে, এদিকে ঘটা করে মহালয়ায় মহিষাসুরমর্দিনী রেডিওয় চালাচ্ছে তো (মহাযলয়ার সঙ্গে মহিষমর্দনের কোন পৌরাণিক যোগ নেই, তা সত্ত্বেও ঐ)। 
    তবে কলকাতা দূরদর্শনে কিন্তু খুড ভাল বিজ্ঞান ম্যাগাজিনও দেখান হত। 
  • অরিন | 119.224.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:০৪530329
  • @&\, রামায়ণ, মহাভারত, দুটোই সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে ভারতে প্রোথিত করেছে। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান বা অরুণ গোভিলের, যে ভদ্রলোক রাম সেজেছিলেন, এনার বিজেপিতে যোগদান কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। 
    পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোন অভিনেত্রীকে দ্রৌপদী সাজানোটাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:১৬530330
  • রামায়ণ মহাভারত নির্ভর যাত্রাপালা টালা কিন্তু শয়ে শয়ে বছর ধরে বা আরও বেশি বছর ধরে ভারতে (বাংলায় যাত্রাপালা, অন্য অঞ্চলে অন্য নাম) চলছে। সেসবে কিছু হয় নি? বিনোদনের কর্পোরেটাইজেশন হবার পর সেসব আস্তে আস্তে কমে গেছে বা লোপ পেয়েছে।
  • r2h | 165.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:২০530331
  • কিছুই হতো না; আমার জিজ্ঞাসাটা অপারেশনাল। ধরুন একটা টিম একটা প্রোজেক্ট প্রস্তাব করলো - একটা পাইলট বানালো, দপ্তরে জমা দিল। ভালো গল্প, জনপ্রিয়তার ভালো সম্ভাবনা, প্রোডিউসার তৈরি, দেশের সাধারন জনগনের মূলধারার আগ্রহ ও মূল্যবোধের সঙ্গে বেশ মেলে।
    দূরদর্শন কর্তৃপক্ষ কোন কোন যুক্তিতে সেটা বাতিল করতে পারে?

    রূপা গাঙ্গুলি সেই সময় ঘোষিতভাবে বাম ঘনিষ্ঠা - তার অনেক দিন পর পর্যন্ত তাই ছিলেন। দ্রৌপদীর ভূমিকার দক্ষিন ভারতের একজন অভিনেত্রীও স্ট্রং ক্যান্ডিডেট ছিলেন।
    রূপা গাঙ্গুলিকে বেশ দৃঢ় ও স্বাধীনচেতা মানুষ বলেই মনে হয়, বিজেপিতে যোগ দেওয়াতে খুবই আশ্চর্য হয়েছিলাম। যদিও সে তো ভূপেন হাজারিকাও গেছিলেন।

    তাও হতেই পারে এই সব কিছুর পেছনেই সুপরিকল্পিত গ্র‌্যাণ্ড ডিজাইন ছিল। হতেই পারে, কে জানে।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৩৩530332
  • একটা সময়ে যাত্রাপালা জিনিসটারই নাম হয়ে গেছিল কৃষ্ণযাত্রা, কৃষ্ণ চরিত্রটি সেখানে এতটাই সর্বব্যাপী ছিল। সে বৈষ্ণব পদাবলির প্রেমিক কৃষ্ণই হোক বা কুরুক্ষেত্রের অর্জুন-সারথী কৃষ্ণ। বলা হত 'কানু বিনা গীত নাই'।
  • অরিন | 119.224.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:১৩530333
  • র২হ, 
    ব্যক্তিগতভাবে যে কোন মানুষের গণতন্ত্রে অধিকার আছে পছন্দের রাজনৈতিক দল বেছে নেবার। 
    সেটা একটা ব্যাপার।
    কিন্তু উল্টোটা, যেখানে রাজনৈতিক দল মানুষ কে গ্রুম করছে, একটা সামাজিক এক্সপেরিমেন্ট করছে, এইগুলো প্রত্যাশিত নয়, অথচ ভারতে এইটাই হয়ে এসেছে এবং হচ্ছে।
    আসলে বাম, দক্ষিণ, কংগ্রেস, এইগুলো নামমাত্র, লেবেলে, এদের মধ্যে তফাত বিশেষ নেই। 
  • Arindam Basu | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৩৮530334
  • খুব ভাল বললেন &/, 
     
    এবং এই ব্যাপারটাতেই যাত্রাপালা, পাণ্ডবানি, প্রভৃতির সঙ্গে সিরিয়ালাইজড, টেলিভাইজড, স্যানিটাইজড টেলিভিশনে দেখানো মহাভারতের তফাত। আজকাল দেখুন, উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়ে গেছে, এখন কিন্তু ভারতকথার আখ্যানকে মানুষকে দেখানোর আর তাগিদ নেই। 
    মহাভারতের পূর্ণাঙ্গ রূপ একত্রে পিটার ব্রুক করেছিলেন, সে এক ৯ ঘন্টার নাটক, পরে তাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেই মহাভারত আর বি আর চোপড়ার উগ্র ভার্সন এক জিনিস নয়। 
    আমাদের দেশের সাবেক যাত্রাপালা, পাণ্ডবানি, কি পিটার ব্রুকের ওপাস আর চোপড়ার টেলিভাইজড মহাভারত এক জিনিস বলে আমার মনে হয় না। 
  • Arindam Basu | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৪৬530335
  • "কিছুই হতো না; আমার জিজ্ঞাসাটা অপারেশনাল। ধরুন একটা টিম একটা প্রোজেক্ট প্রস্তাব করলো - একটা পাইলট বানালো, দপ্তরে জমা দিল। ভালো গল্প, জনপ্রিয়তার ভালো সম্ভাবনা, প্রোডিউসার তৈরি, দেশের সাধারন জনগনের মূলধারার আগ্রহ ও মূল্যবোধের সঙ্গে বেশ মেলে।
    দূরদর্শন কর্তৃপক্ষ কোন কোন যুক্তিতে সেটা বাতিল করতে পারে?"
     
    যে যুক্তিতে বাতিল করতে পারে এ পোড়া দেশে সেই যুক্তি পেশ করার বুকের পাটা এদের নেই। 
     
  • Eman Bhasha | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪৮530346
  • রামায়ণ মহাভারত টিভি সিরিয়ালে দেখানোতে আপত্তি নয়। আপত্তি রামায়ণ মহাভারত উপস্থাপনার ধরনটা।
    আমি যেখানে জন্মেছি। সেটা মুসলিম প্রধান গ্রাম‌। সেখানকার প্রধান উৎসব ছিল ইদ বকরিদ বা দুর্গাপূজা নয়, কলেরা ঠেকানোর দেবী ওলাইচণ্ডী পূজা। এই পূজা ১৯০৮-১০ এ গ্রামে বারবার কলেরা হওয়ার পর তিন চারজন ব্যক্তির উদ্যোগে চালু হয়। তার বছর দশকে পরে মেলা ও মাত্রা। পূজা প্রচলনে চারজন মানুষের দুজন ছিলেন জন্মসূত্রে মুসলিম। তাঁর একজন আমার পূর্বপুরুষ। মেলায় যাত্রা শুরু হয় মূলত কলকাতায় কাজ করতে আসা মুসলমানদের উদ্যোগে। এঁদের অন্যতম আমার ঠাকুরদা। যিনি কলকাতায় একটি বিখ্যাত হলে তুলসীবাবুদের সঙ্গে অভিনয় করতেন। আমার বাবু বিদ্যালয় শিক্ষক না হয়েও মাস্টারমশাই নামে যাত্রামোদীদের কাছে পরিচিত ছিলেন।
    যাত্রার প্রশিক্ষক হিসেবে।
    আমাদের গ্রামে রামকে নিয়ে একাধিক যাত্রা হয়েছে। আমাদের দু ভাইকে বলা হতো রাম-লক্ষ্মণ জুটি। সবসময় একসঙ্গে ঘুরতাম বলে। রামকে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় পালা ছিল, রাজলক্ষ্মী। ব্রজেন্দ্রনাথ দে-র অসাধারণ লেখা।
    ১৯৬৪-তে কলকাতা যখন দাঙ্গার আগুনে জ্বলছে, আমাদের গ্রামে প্রথমবার হলো 'রাজলক্ষ্মী' পালা। আবার এক যুগ পর। প্রথমবার রাম সেজেছিলেন আমার বাবা। দ্বিতীয়বার তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে দু চিল্লা করা আমার বাবা করেছিলেন গোয়েন্দা দুর্মুখ চরিত্র। যিনি খবর আনেন, শম্বুক তপস্যা করায় দেশে অনাচার দেখা দিয়েছে। ব্রাহ্মণের সন্তানের অকলপ্রয়াণ হয়েছে।
    এখন প্রশ্ন, একটা মুসলিম প্রধান গ্রাম, যাঁর যাত্রাভিনেতাদের ৯৫% মুসলিম। দর্শকদের ৭০% মুসলিম, সেখানে এই পালা দুবার হলো কেন? 
    কারণ, সেই রাম প্রজানুরঞ্জক রাম। যিনি প্রজাদের কল্যাণের জন্য সব করেন। সেই রাম শান্ত সমাহিত প্রসন্ন মুখ।
    তাঁকে দেখলে মনে ভক্তি জাগে।
    তাঁর নাম শুনলে মনে শান্তি আসে। 
    রামায়ণ মহাভারতের গল্প তো মুসলমান দাদি নানিরাও ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়াতে বলতেন। আমরাও তো শুনেছি।
    টিভি সিরিয়ালের প্রবণতায় রামকে বদলে দেওয়া হল।
    হিংসাত্মক যুদ্ধবন্দনা একটা  বড় উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হল।
     
    এই রাম চেনা রাম নন।
    এই যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দেখে মন শান্ত হয় না, যুদ্ধং দেহি ভাব জেগে ওঠে।
    রাম ও শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। যাত্রায় বংশীধারী শ্রীকৃষ্ণ বহুবার এসেছেন গ্রামে।
     
    যুদ্ধংদেহি শ্রীকৃষ্ণ নন, কল্যাণ ও শুভ আশির্বাদক শ্রীকৃষ্ণ।
    যিনি ত্রাতা মধুসূদন। সংহারী নন।
     
    এই চেনা শান্ত সমাহিত  প্রসন্ন মুখ রাম এবং কৃষ্ণকেই তো বদলে দেওয়া হল,  টিভি সিরিয়ালে।
     
    এইটুকুই বলার।
     
     
  • Eman Bhasha | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৩530347
  • একটা চমৎকার প্রসঙ্গ এসেছে, মহিষাসুরমর্দিনী।
     
    মহালয়ার ভোরবেলায় শোনেন না, এমন মুসলিম কতজন পাবেন? 
     
    আমি জন্মসূত্রে মুসলিম। 
    আমি তো গ্রামে ১৯৮০-তে প্রথম মাইকে মহিষাসুরমর্দিনী শোনাই আমাদের বৈঠকখানা থেকে। ১০০ ফুট দূরেই মসজিদ। সেখানে ভোরের ফজরের নামাজ যথারীতি হয়েছে। কেউ আপত্তি করেননি।
     
     
    মহিষাসুরমর্দিনীর সুর মন জুড়ায়, উত্তেজিত করে না।
    উদ্বোধিত করে প্রাণিত করে প্রাণ নিতে বলে না।
     
    ছোট থেকেই শুনে আসছি, মরা মরা বলতে বলতে রাম বলেছিলেন বাল্মীকি, এখন রাম রাম বলতে বলতে কেউ যদি মার মার করেন, তাহলে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন