তোমার সঙ্গে ঝগড়া আছে!
কেন? কী করলাম আবার?
আর তোমার নাম তো শান্তি, শান্তিভাবি তো নাটকে ঝগড়া করতো, বাস্তবে তো শান্তি।
না ভাই, ঝগড়া তো করতেই হবে।
কেন? আবার বলি।
ভাইয়ের নাম লিখেছো এতবার, ভাবি বাদ।
তাই তুমি পড়েছো?
না পড়লে বলছি কী করে!
১৯ মাঘ মেলার দিন সন্ধ্যাবেলায় আমি আর আনন্দবাজারের খ্যাতিমান সাংবাদিক ঋজু (বসু) বের হয়েছি মেলা দেখতে ও অসমাপ্ত গ্রাম পরিভ্রমণ করতে। এবার প্রথম মেলা মাঝের পাড়া পর্যন্ত চলে এসেছে। ঘরের কাছেই মসজিদতলা ছাপিয়ে বাবলু চৌধুরীদের ঘরতক মেলার দোকানপাট। আজমের ডাক্তারখানায় আড্ডা বসে। আজ সেখানে এখনও সবাই আসেনি। আলমের সঙ্গে দেখা।
চল, আমাদের ঘর।
যাবো তো, তবে অতগুলো আন্ডা খেতে পারবো না।
আগে তো চ।
আলম আমার চেয়ে বছর পাঁচেকের বড়। গ্রামীণ অভ্যাসে আলম সিরাজ সবাই তুই এবং চাচা।
আলমের ঘর যাওয়া মানে কম করে চারটি ডিমসেদ্ধ খাওয়া।
পোল্ট্রি যুগের আগে থেকেই আলমের এই দস্তুর। আলম এবং সালামচাচা আমাদের খারাপ দিনে সঙ্গী ছিল।
দুজনেই বামবিরোধী।
কিন্তু আমাদের পরিবারের বড় সুহৃদ। সালামচাচা ও বাবা সব
বিষয়ে পরস্পরের পরামর্শদাতা। আমার বাবা পরিবর্তনে গা ভাসাতে পারেননি। বলেছিলেন, সিপিএমকে মুচলেকা দিই নি, তৃণমূলকেও দিতে পারবো না। তাতে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সামাজিক বয়কটের মুখে পড়েছিলেন। ২০১৩ তে বহুদিন ধরে হারা বুথে লালঝান্ডাকে জিতিয়ে শান্তি পান। ১৯৮৭তে পার্টি ছেড়েছিলেন এই পার্টিটা নষ্টবাদী, কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বারশিপ দেওয়ার যোগ্যতা এদের নেই, বলে। আর আমার এখনও ত্রিশ বিঘে জমি আছে, আমিও কমিউনিস্ট পার্টি করার যোগ্য নই।
এই ছিল সাফ কথা।
বাবা একাই লালঝান্ডার প্রচারে বের হওয়ায় লোকে বলে, অসৎগুলো গেছে, তুমি ন্যায্য কথা বলো, তুমি বলছো যখন, আবার ভোট দেবো।
পঞ্চায়েতে অসুস্থ শরীর নিয়ে রাতদিন প্রচার করে জেতানোর চার মাস পর বাবা রক্তাল্পতা তথা প্লেটলেট কম হতে হতে মারা গেলেন। বাবার শরীরে লালঝান্ডা দেওয়ায় আমাকে খুনের হুমকি শুনতে হয়। তখন ফেসবুকে ফেবুপ্লবীরা আমাকে তৃণমূল বলে দেগে চলেছে।
আসলে আমি নিজে সংখ্যাগুরুবাদের বিরুদ্ধে। ভিন্নমতের অধিকার চাই।
বাবার শিক্ষা, মাথা নত না করা, চাপের কাছে।
আমি বিশ্বাস করি, প্রধান বিপদ ঠেকাতে ভারতের সব বিরোধীদলের এক হওয়া জরুরি। জার্মানির ভুল যেন না করি।
এখানেও তাই হচ্ছে মনে হচ্ছে!
শান্তিভাবি ভালো নাটক করতো। আমার দিদির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দিদি আর শান্তি খালা ( পরে সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের পর খালা হয়ে গেল, ভাবি) 'দুই মেয়ে' ও 'দুই বোন' নাটকের পর পর দু'বছর নায়িকা।তবে শান্তিভাবি কুঁদুলে মেয়ের ভূমিকায় অসাধারণ।
এক্কেবারে পেশাদার।
সময়ে তো বটেই ১৯৭২ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত গ্রামের জুনিয়র ও প্রাইমারি স্কুল মিলে রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তীতে দুদিন নাটক হতো।
একদিন মেয়েদের একদিন ছেলেদের।
রবীন্দ্রনাথ থেকে অগ্রদূত ছিলেন নাট্যকার।
মেয়েদের নাটকে আমাদের পাঁচ দিদি বোন নাটক করেছে। অভিনেত্রীদের ৯৯ ভাগ জন্মসূত্রে মুসলিম।
গ্রামে সবচেয়ে আলোচিত হতো, রবীন্দ্রনাথের 'ডাকঘর' নাটক। অমন নাটক নাকি আর হয়নি। তাতে অমল আমার বড়ভাই বা বড়দা। শ্বশুরবাড়িতে বধূনির্যাতনের শিকার মেজদি সুধা।
আমি দেখেছি না দেখিনি মনে পড়ছে না। দেখলেও সেভাবে মনে থাকার কথা নয়।
তবে কল্পনায় দেখতে পাই আমার সুদর্শন দাদা ও দিদিকে।
দিদির নাকি ডাকঘর, মুকুট এইসব নাটক ছিল মুখস্থ।
দিদি পড়তে ভালোবাসত, তাই শাশুড়ি দেখতে পারতেন না। মুখে নোড়া দিয়ে দাঁত ভেঙে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
আমার বাবা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য, কোনও মামলা করেননি।শুধু বলতেন, রুবি আমার মা ছিল। আমার মায়ের মতো দেখতে। বুকটা খালি করে দিয়ে গেছে। আর দিদির শাশুড়ির কথা উঠলে বলতেন, বড় ভালো পেঁয়াজ পোস্ত রান্না করতো।
বাবা কিছু ঘুষখোর পার্টি নেতা ছাড়া কারও নিন্দা করতেন না।
যা বলার মুখের ওপর বলে দিতেন, মনে পুষে রাখতেন না।
বাবার কথা শেষ হওয়ার নয়। বারবার ফিরে আসে। আসলে গ্রামে তো আমার অধ্যাপক সাংবাদিক সমাজকর্মী ভালো ছাত্র বা লেখক এ-সব পরিচয় তুচ্ছ, গৌণ ।
এনামভাইয়ের ছেলে।
সবার এনামভাই।
সবার মুখে বাবার কথা।
লোক ছিল বটে!
বাঘের মতো দাপট আর শিশুর মতো নরম মন।
বড় ভুল হয়ে গেছে ভাবি। পরের বার থাকবে দেখো। কলকাতা বইমেলায় সমরেশ বসু মঞ্চে বসে আছি, ঝন্টু 'কাদামাটির হাফলাইফ' কিনে দেখিয়ে নিয়ে গেল।
ঝন্টু ইঞ্জিনিয়ার, প্রকৌশলী। সেলিমভাই শান্তিভাবির ছেলে। ছোটছেলে বিপু উকিল।
এখানে রাতে ভাত খাবি। বলে সেলিম ভাই। সায় দেয় রনি।
রনি বড় মিষ্টি ছেলে। ছোটবেলায় ওকে সবাই খেপাত আর ও তেড়ে গাল দিত।
আমি ওকে দেখলেই কাছে টেনে আদর করে বলতাম, সবচেয়ে ভালো ছেলে।
আর রনি আমার সামনে কেউ কিছু করলেও বাখান না করে চুপ করে থাকতো।
মা এবং জেঠিকে বলতো-- গ্রামের ভালো লোকটা এয়েচে, ভালোমন্দ খাওয়াও। রনির ভাই জনি এখন চিকিৎসক। এমবিবিএস পাস করেছে।গ্রামের প্রথম এমবিবিএস ডাক্তার। ওঁর বাবা আমাদের সঙ্গে পড়তেন। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ওই প্রথম কলকাতা দেখে, মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে।
১০ পয়সা করে মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের পতাকা কিনে নিয়ে যায়।
আমরা ওকে বলতাম, শহিদ মিনার দেখেছিস?
হ্যাঁ।
বলতো কত উঁচু।
আমরা আমাদের পড়া বিদ্যা দিয়ে আমাদের না দেখা জীবনকে ঢাকতে চাইতাম।
ও ক্রীড়া আনন্দ ও খেলার আসর কিনে নিয়ে গিয়েছিল। পালা করে পড়া হয়েছিল কদিন।
সেলিম ভাইয়েরা আমার ছোটমামার বাড়ি কিনেছে। ছোটমামা বড়মামাকে ভিটে ছেড়ে দিয়ে গোলামহলে হিটু মুন্সিদের বাপের আমলের হাতিশালার জায়গায় ঘর বানায়। পরে ছোটমামা ছেলেমেয়েদের পড়ার সুবিধা হবে বলে সেহারাবাজারে বাড়ি কেনেন।
ছোটমামা জুনিয়র হাইস্কুলের ইংরেজি ও ইতিহাসের শিক্ষক।রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ।
গ্রামের প্রথম স্নাতকোত্তর।
গ্রাম ছেড়ে প্রথম বাজারে বাস করার সিদ্ধান্তও নেন ছোটমামা।
সাত কিলোমিটার দূর থেকে গ্রামে শিক্ষকতা করতে আসতেন। সৌম্য সুদর্শন চেহারা। আজীবন সিপিএম। দাদা আজীবন কংগ্রেসি। ভাই দাদার মুখের ওপর কোনও কথা বলেন না, কিন্তু দুলাভাইয়ের পার্টির বুথ এজেন্ট হন প্রতিবার।
১৯৮৯ এর ইটপূজা এবং ১৯৯২ আমাদের গ্রামে একটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনে। বারোয়ারি তলায় শিবমন্দিরে মসজিদের রকে আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়।
মন্দির এবং মসজিদে তালা লাগে।
অবারিত দ্বার থাকে না।
যদিও আমাদের গ্রামে এখনও এই বাজারেও মিলমিশ এত বেশি ভাবা যায় না।
কথা বলতে বলতে পশ্চিমদিকের মাঠে যাই। আমাদের বিশ বিঘা জমি এখনও এক টানা। মাঝে আর কারও জমি নেই। সব আমাদের। অন্ধকারে একটা টর্চ নিয়ে দেখাই ঋজুকে। টর্চটা আমার বোনের শ্বশুরবাড়ি থেকে আনি। বোনের নাম পাল্টেছে শ্বশুরবাড়ি। বিয়ের পর।
লুৎফা খাতুন থেকে মালতী প্রামাণিক। আমাদের বাড়ির বউদের পদবী পালটায় নি। লাহিড়ী সাহা সব আছে।
বড় জামাই মণ্ডল, ছোট জামাই মুখার্জি।
আমার বাবার খুব শখ ছিল, সাঁওতাল মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেওয়ার।
একজনকে পছন্দও করেছিলেন।
মেলায় দুপুরে দেখা হয়েছিল বদ্যিনাথ কাকার বউয়ের সঙ্গে। বদ্যিনাথ কাকার মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছবি তোলে। কাকিমা বলেন, নাতি চারচাকা গাড়ি কিনেছে। গাড়ি করে ঠাকুর দেখাতে এনেছে। নাতির নাম জয়রামন। পুলিশ অফিসার জয়রামনের নামে নাম। এখন কাশ্মীরে সেনা জওয়ান।
বদ্যিনাথকাকা ছিলেন বাবার খুব বন্ধু এবং ভক্ত। মাথায় সিধু কানুর মতো চুল। ফর্সা খালি গায়ে ঘুরতেন।
মনে হতো সিধু আর কানুর ভাই।
আর একজনের ছিল এ-রকম পেটানো চেহারা ও বাবরি চুল। মঙ্গলা দিদির বর। কালীসাধক।
রাতে আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে মঙ্গলা ওরফে আমাদের মুংলা দিদির সঙ্গে দেখা হল না। দিদি সেহারাবাজারে গেছে। কুটুমবাড়ি।
মুংলাদিদি দেখলেই জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে মাথায় আর মা বাবার নাম করে কাঁদবে।
মুংলাদিদির মা বাবা ছিল আমাদের বাবা মা। ছোটবেলায় বাবা মাকে হারায়
মুংলাদিদি। আর আমাদের ছোটবেলায় কোলে পিঠে করে মানুষ করে।
আর লালু সরেন কাকাও নেই। চলে গেছেন।।
লালুকাকার পিঠে ও মাথায় চাপানোর কায়দাই ছিল আলাদা।
আমাদের পূর্বপুরুষরা বসিয়েছিলেন প্রথমে তিনঘর পরে ১১ ঘর আদিবাসী পরিবারকে। পরে বাবা পাট্টা দিয়ে দেন। এখন পাড়া বেড়েছে। অনেক নতুন মানুষ এসেছেন। ৪০টি পরিবার।
আমরা গিয়েছি একটু ভুল পথে। হুমটো যাওয়া । মাঠে মাঠে। রাতের অন্ধকার।
হাতে একটাই টর্চ। পশ্চিমপ্রান্তের জমির গোড়ায় দেখা একদল ছেলের সঙ্গে। গ্রামের পূর্ব দিকে পলাশন অঞ্চলের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা।
ওঁরা বললেন, রাস্তা আছে। যান। গ্রামের কিছু পরিবার মাঠে বাড়ি করেছেন। সামনে কবরখানা। আমাদের দেওয়া অনেকটা জায়গা জুড়ে কবরখানা।কবরখানায় পাঁচিল দেওয়া হয়েছে। প্রায় নয় বিঘা জমি আমি ও ঋজু হোঁচট খেতে খেতে পার হই।
দুপুরে দুর্গাপুরের প্রধান শিক্ষক ভাই দুই গাছপাগল মানুষ দিব্যেন্দু বিশ্বাস ও বাদল মণ্ডলকে নিয়ে ঘুরিয়ে গেছেন আদিবাসী পাড়া। আগে নূরপুরের মাঠে আদিবাসীদের মোরগ লড়াই হতো।
এখন ওলাইচণ্ডী পূজার মেলার দিনে আমাদের জমির কাছে মোরগ লড়াই হয়।
সে-সব দেখে দিব্যেন্দুদা ও বাদলদা খুব বেশি।
ড্রাগন গাছের চারা অনেকেই গাঁয়ে লাগিয়েছেন, আমাদের বাড়িতেও ৫০ টা চারা রোপণের জন্য এনেছিলেন ওঁরা। ঘরে কেউ থাকেন না। জল দেবে কে? প্রধান শিক্ষক ভাই নিয়ে গেলেন।
আদিবাসী পাড়ায় যেতে অনেকে দেখা করতে এলেন। গুরুচরণ কাকা ছিলেন পাড়ার একমাত্র কংগ্রেস সমর্থক। কারণ মনিববাড়ি ছিল কংগ্রেস।
গুরুচরণ কাকার দুই ছেলেই ডিগ্রিপ্রাপ্ত। একজন বিএ, একজন এম কম।
সনাতন হাঁসদা এম কম পাশ করে জীবনবিমার বড় আধিকারিক ছিলেন। কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
তাঁর স্মরণে একটা সৌধ করা হয়েছে।
গ্রামে হিন্দু মুসলমান আর কারও সৌধ নাই।
লাঠি ঠুকঠুক করতে করতে সনাতনদা আর নির্মলের মা এলেন। নির্মল এখন বড় পুলিশ অফিসার। সনাতনদার নাম করে পিসি কাঁদলেন। আমার বাবা গুরুচরণকাকা সবাই মিশে গেল কান্নার জলে। গুরুচরণ কাকা আশ্চর্য বিষয়, আমাদের তুমি বলতেন এবং লালু কাকা বা গুরুচরণ কাকা কোনওদিন মদ বা হাঁড়িয়া খেতেন না।
মদ খেতেন রাধুকাকা আর পণ্ডিতপাড়ার বাদল পণ্ডিত। বাদল পণ্ডিত বড় ভালো মনের মানুষ। ভালো কবিতা লিখতেন। যাত্রা করতেন। বাবার অকৃত্রিম সুহৃদ। আমাকে তুমি বলতেন।
কী লিখেছো বাবা, শোনাও তো একবার।
নিজে মুখে কবিতা বানাতেন। ভালো যাত্রা করতেন। দানশীল ছিলেন। শেষে নেশা এবং দানধ্যান --প্রায় নিঃস্ব হয়ে মারা যান।
লালুকাকার ছেলেরা বসায় আমাদের।
পাড়ার তরুণরা ভিড় করে আসে। কেউ গ্রাজুয়েট কেউ এইচ এস। লালু কাকার নাতি সুকান্ত পুলিশ।
দার্জিলিংয়ে পোস্টিং।
পুরাতন দিনের কথা ওঠে।
লালুকাকার ছেলে অনিল আমার দেখা প্রথম সাহসী ছেলে। আমার ক্লাস টুর একনিষ্ঠ বন্ধু। আমার টারজান হওয়ার সঙ্গী।
আমি সাপকে খুব ভয় পেতাম। অনিল কুছ পরোয়া নেহি।
অনিল সাপের লেজ ধরে মাথার ওপর ঘুরিয়ে ছুঁড়ে দিত। সেই সাপ মেরে খাওয়া।
আর অনিল ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে ইঁদুর ও ধানের শিষের গোছা বের করে আনতো।
মাঠের ধানের খড়ের পড়ে থাকা অংশ জড়ো করে পাতায় মুড়ে ইঁদুর পোড়া।
অপূর্ব খেতে।
একটু নুন লঙ্কা কোঁচড়েই থাকতো। মেখে দুই বন্ধু মিলে খাওয়া।
তবে সাপ খেয়েছি জেনে লালু কাকা অনিলকে খুব বকেন।
আমি যত বলি, ওর কী দোষ, আমিই তো খেতে চেয়েছি। শোনেন না।
সে-সব কথা হল।
আলি ভাই গ্রামে থাকলে এক কিলোমিটার হেঁটে আদিবাসী পাড়ায় আড্ডা মারতে আসেন। বলেন, এঁরাই খাঁটি মানুষ।
আলি ভাই লরিতে লরিতে সারা দেশ ঘোরেন।
বলেন, আদিবাসীদের মতো ভালো মানুষ আর একটাও নেই।
আমি বর্ধমানে না থাকায় কী ক্ষতি হয়েছে সে-সব তোলেন কেউ কেউ।
হাসপাতালে বা কোনও দরকারে রাতবিরেতে গেলেই হলো।
আমিও মারিও পুজোর 'গডফাদার'-এর একটা কথায় বিশ্বাস করি, কাউকে ফিরিও না।
আলিভাই বলেন, গ্রামে ফিরে এসো। গ্রামে না হয় বর্ধমানেই থাকো।
বাকিরা ধরতাই দেন।
ঋজুর সামনে এ-সব কথা!
বোঝাতে পারি না, আমি সামান্য কর্মী মানুষ, ঠোঁট কাটা, আজকের যুগে বড় বেমানান!
২০০৯ থেকে ২০১৯ মার্কসবাদে বিশ্বাসের কারণে গ্রামে কষ্ট পেতে হয়েছে। সিপিএম সমর্থকদের বিজেপি হয়ে উত্থানে কিছু অতি উৎসাহী গ্রামীণ গোষ্ঠী নেতার অতি অতি তৎপরতা ও মাতব্বরি থমকায়।
ফেসবুকে প্রধান বিপদকে আটকানোর কথা লেখায়, তৃণমূল বলে গাল খাচ্ছি, গ্রামে সিপিএম বলে।
পুরো স্যান্ডউইচ দশা।
তাই চুপ করে যাই।
সে-কথা কী করে বোঝাই!
তাই উঠে আসি।
দুটি মোরগ বসেছিল চালের বাঁশে।
ওভাবেই নাকি সারারাত বসে থাকে। আর প্রহরে প্রহরে ডাকে।
ভোর চারটার সময় বাঙ দেয়।
সমাজে বাঙ দেবে কে?