বিজয়াদশমীর দিনটা উত্তর ভারতে রামের হাতে রাবণের পরাজয়ের উদযাপনের দিন, আর পূর্বভারতে দুর্গার হাতে মহিষাসুরের। দুটো আলাদা যুদ্ধ, আলাদা কাহিনি- সম্পূর্ণ আলাদা। আজকের ভাষায় আমরা যাকে ক্রসওভার বলি, সেরকম একটা ক্রসওভার গল্প এই দুইয়ের মধ্যে আছে, তার নাম অদ্ভুত রামায়ণ। ক্রসওভার অবশ্য ভারতীয় পুরাণে কোনও বিরল বস্তু নয়। অদ্ভুত রামায়ণের রচয়িতার নাম বাল্মীকি বলেই সবাই জানে, তবে এটা তাঁর লেখা নয়। এই রামায়ণের সুপারহিরো সীতা। রাবণ এখানে সহস্রমস্তকযুক্ত আরও ভয়ঙ্কর রাবণ। তার সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে রাম অজ্ঞান হয়ে পড়লেন, রণক্ষেত্রে এলেন সীতা। সীতা কালীর রূপ নিয়ে এই রাবণের বধ করলেন।
“রামং তথাবিধং দৃষ্ট। মুনয়ো ভয়বিহ্বলাঃ। হাহাকারং প্রকৃধ্বস্তঃ শান্তিং জেপুশ্চ কেচন তা সা মুনিভিদ ই। সীতা প্ৰাহ সিতাননা। বশিষ্ঠপ্রমুখাঃ সৰ্ব্বে সীতাং প্ৰোচুৰ্ম্মহৰ্ষয়ঃ।” (রামের অবস্থা দেখে ভয়বিহ্বল মুনিরা হাহাকার করলেন, শান্তিজপ শুরু করলেন। মুনিগণ সীতার প্রতি দৃষ্টিক্ষেপ করলে সিতাননা সীতা তাঁদেরকে আশ্বাস প্রদান করলেন।)
এই কাহিনি অনেকটাই দেবীমাহাত্ম্য- যেটাকে শ্রী শ্রী চণ্ডীও বলা হয়- তারই মত। প্রতি বছর মহালয়ায় যে চণ্ডীপাঠ হয়, সেটি রচিত হয়েছিল দেবীমাহাত্ম্য নাম দিয়ে। চণ্ডী বা মহিষমর্দিনীকে নিয়ে প্রাচীনতম বড়মাপের সাহিত্য ছিল এই দেবীমাহাত্ম্য। এটি মার্কণ্ডেয়পুরাণের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মার্কণ্ডেয়পুরাণের রচনাকাল তৃতীয় শতক, তবে দেবীমাহাত্ম্য ষষ্ঠ শতকে রচিত বলে মনে করা হয়।
সীতা যখন যোদ্ধ্রী ও রাবণপুত্রী:
অদ্ভুত রামায়ণে আমরা দেখি - সহস্রমস্তক রাবণের যতবার মাথাকাটা হচ্ছে, ততবার এক বিন্দু রক্ত মাটিতে পড়লেই নূতন মাথা যোগ হচ্ছে - শিবের বরের প্রভাবে। শেষ অবধি সীতা সমস্ত ভূপতিত রক্ত নিজে পান করে মাথাগুলিকে ধড়ে যোগ হওয়া থেকে ব্যাহত করলেন। এই গল্পটা অনেকটা চণ্ডী সাহিত্যের মত। সামগ্রিক কথনভঙ্গিও চণ্ডীর মত।
“সাট্টহাসং বিনদ্যোচ্চৈঃ সীতা জনকনন্দিনী ॥ স্বরূপং প্রজহো দেবী মহাবিকটরূপিণী। ক্ষুৎক্ষামা কোটরাস্ফীচ চক্ৰভ্ৰমিতলোচনা ॥ দীর্ঘজঙ্ঘা মহারাবা মুণ্ডমালাবিভূষণ।।”
(জনকনন্দিনী উচ্চৈঃরে অট্টহাস্য পূর্ব্বক নিজরূপ পরিত্যাগ করে অতি ভীষণরূপ ধারণ করলেন। দেবী ক্ষুধায় ক্ষীণাঙ্গী, চক্ষু কোটরে নিমগ্ন হয়ে চক্রের ন্যায় ঘূর্ণিত হচ্ছে, তাঁহার জঙ্ঘাদ্বয় দীর্ঘ, রব অতি উচ্চ, মুণ্ডমালা তাঁর বিভূষণ।)
অদ্ভুত রামায়ণের সীতার জন্মবৃত্তান্তও ভারী অদ্ভুত। সীতা এখানে মন্দোদরীর কন্যা। ঋষি গৃৎসমদ কন্যালাভের আশায় একটি কলসে প্রতিদিন অল্প অল্প করে মন্ত্রঃপূত দুগ্ধ সঞ্চয় করতেন। রাবণ গৃৎসমদসহ দণ্ডকারণ্যের ঋষিদের বধ করে তাদের রক্ত ঐ কলসটিতে করেই লঙ্কায় নিয়ে আসেন, আর মন্দোদরীকে ওটি রাখতে বলেন, এবং সতর্ক করে দেন, যে ঐ রক্ত বিষাক্ত। রাবণের দিনের পর দিন বহুনারীসম্ভোগে বিরক্ত হয়ে মন্দোদরী আত্মহননের পথ বেছে নেন। সেইজন্য বিষ ভেবে তিনি ঐ কলসের রক্ত পান করেন। কিন্তু বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হওয়ার পরিবর্তে উল্টে গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এদিকে রাবণের সাথে তাঁর দীর্ঘদিন কোনও সংসর্গ হয়নি, অতএব তিনি জানতেন এই সন্তান রাবণের নয়। কলঙ্কের ভয়ে তিনি কুরুক্ষেত্রে পালিয়ে আসেন এবং গর্ভপাত করেন। ভ্রূণটিকে তিনি মাটি চাপা দিয়ে দেন, যাকে জনক পরে খুঁজে পান আর নাম দেন সীতা। সেই অর্থে সীতা মন্দোদরীর কন্যা, যদিও রাবণের ঔরসজাত নয়। তবে কাহিনিতে সীতাকে রাবণদুহিতাই বলা হচ্ছে। অদ্ভুতরামায়ণ অনুযায়ী ব্রহ্মা রাবণকে বর দিয়েছিলেন - রাবণের মৃত্যু একমাত্র তখনই হবে, যখন রাবণ নিজ দুহিতাকে কামনা করবেন। সে যুগের নিয়মানুযায়ী, ঔরস যারই হোক না কেন, মন্দোদরী রাবণপত্নী তাই সীতা রাবণদুহিতা। অন্য একদিক থেকে দেখলে গৃৎসমদকে সীতার ঔরসপিতা বলা যেতে পারে, কারণ তাঁর সঞ্চিত দুধের কলস থেকে সীতার জন্ম।
মূল রামায়ণের সঙ্গে এই কাহিনির একটা বড় পার্থক্য হল এই কাহিনি অনেকটাই নারীকেন্দ্রিক। মন্দোদরীকে তাঁর প্রাপ্য ন্যায়বিচার বা পোয়েটিক জাস্টিস - যাই বলা হোক না কেন - সেটি দেবার জন্যই সীতার জন্ম এখানে। গৃৎসমদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেও তাঁর জন্ম বলা যায়। কোনও একটা প্রফেসিকে সার্থক করার জন্য পুরাণকাহিনিতে রাম বা কৃষ্ণের মত নায়কদের জন্ম হত। অদ্ভুত রামায়ণে এই ভূমিকা সীতার। অর্থাৎ একটি নারীচরিত্রকে এখানে মসিহার স্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরও লক্ষণীয়, যে এখানে গৃৎসমদ কন্যালাভের আশায় দুগ্ধসঞ্চয় করতেন, অথচ সেই যুগে পুত্রেষ্টিযজ্ঞের প্রচলন আমরা বেশি দেখতে পাই। এটিও বেশ ব্যতিক্রমী।
এই কাহিনির শেষে সীতার অগ্নিপরীক্ষা বা পাতালপ্রবেশের কাহিনি নেই। কাহিনির শেষে দেবগণ এবং রামকে সীতার স্তব করতে দেখা যায়। এটা দেবীমাহাত্ম্যের শেষেও দেখা যায়। এখানে রাম সীতাকে বন্দনা করেছেন প্রকৃতি, শিবা, পরাগতি, পরমাশক্তি ইত্যাদি নাম দিয়ে। প্রধান, পুরুষ, মহৎ, ব্রহ্ম, ঈশ্বর সবই সীতার অংশমাত্র - এভাবেই রাম তাঁর বন্দনা করেছেন। এই শব্দগুলো সাংখ্যদর্শন থেকে নেয়া।
সীতা যখন স্বতন্ত্রা দেবী:
অদ্ভুত রামায়ণ সপ্তম শতক বা তারও পরের রচনা ঠিকই, তবে স্বতন্ত্রা দেবীরূপে সীতার উপস্থিতির কাহিনি অনেক পুরনো - বাল্মীকি রামায়ণের থেকেও পুরনো। ঋগ্বেদ ৪/৫৭/৬-এ দেখতে পাই সীতার বন্দনা। এই ৪/৫৭ সূক্তটি সামগ্রিকভাবে কৃষি ও পশুপালনের মাধ্যমে সমৃদ্ধি আনার প্রার্থনা। সীতা এখানে লাঙলের ফলা, উর্বরতার প্রতীক। সীতাকে বন্দনা করা হয়েছে সুভগা এবং সুফলা বলে। ভগ শব্দের অর্থ যোনি, আবার সম্পদের ভাগ অর্থেও ব্যবহার হয়। সুভগা অর্থ হল সুন্দর যোনিবিশিষ্টা বা সৌভাগ্যদায়ী। এর পরের মন্ত্র ৪/৫৭/৭-এ ইন্দ্র পুষণের সহায়তায় ভূমিকর্ষণ করেন সীতাকে ব্যবহার করে। সীতাকে এখানে উত্তরোত্তর দুগ্ধ বা সম্পদদায়িনী "পয়স্বিনী" বলে বন্দনা করা হয়েছে। আধুনিক যুগের লাঙলপুজো বা অন্যান্য যন্ত্রাদির পূজার মতই এটি একটি লাঙলপুজোর বর্ণনা। শুক্লযজুর্বেদের গৃহ্যসূত্রওে সীতা ইন্দ্রপত্নী।
অথর্ববেদের কৌশিকসূত্র ১০৬.৭-এ তাঁকে শ্রী বলে বন্দনা করা হয়েছে। "কুমুদ্বতী পুষ্করিণী সীতা সর্বাঙ্গশোভনী। কৃষিঃ সহস্রপ্রকারা প্রত্যষ্টা শ্রীরিয়ংময়ি।" সীতা এখানে কুমুদ্বতী পুষ্করিণী অর্থাৎ পদ্মময় পুকুর। এখানেও তিনি কৃষির ফলপ্রদায়িনী। হরিবংশেও তাঁকে কৃষকদের দেবীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বৌদ্ধ দুটি রামোপাখ্যান- বেসসন্তর জাতক আর দশরথজাতকেও তাঁকে সীতাদেবী বলা হয়েছে।
তাহলে সীতা কীভাবে তাঁর স্বতন্ত্র দেবীসত্তা হারালেন? দূর অতীতে দ্বিতীয় খৃষ্টপূর্বশতকে আমরা স্বতন্ত্র গজলক্ষ্মী দেখতে পাই সাঁচী ও ভরহুতের বৌদ্ধস্তূপে, পঞ্চম শতকের দেবীমাহাত্ম্যে দেখি মহালক্ষ্মী বধ করছেন মহিষাসুরকে - পুরুষ দেবতারা যাকে দমন করতে পারেনি। কিন্তু ষষ্ঠশতকের পর থেকে এই স্বতন্ত্রা লক্ষ্মী ধীরে ধীরে বিষ্ণুপত্নী ও বিষ্ণুপদসেবিকায় পরিণত হয়েছেন - ব্রাহ্মণ্যধর্ম ও স্মৃতিশাস্ত্রর দৌলতে। একইভাবে সীতাও ব্রাহ্মণ্য ও স্মৃতি সাহিত্যে মিশে স্বতন্ত্রতা হারিয়েছেন। তবে শাক্ত ও তন্ত্রসাহিত্য এই দেবীদের স্বতন্ত্রতাটাকে কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে রেখেছে।
তা এমন অদ্ভুত রামায়ণ কেনই বা লেখা হল আর কবেই বা লেখা হল? বাল্মীকির নাম দিয়েই এটি প্রচলিত, তবে এটি অনেক পরবর্তী যুগের। বাল্মীকি-রামায়ণ ষষ্ঠ খৃষ্টপূর্ব শতক থেকে দ্বিতীয় শতকের মধ্যে রচিত। অদ্ভুত রামায়ণ আনুমানিকভাবে দেবীমাহাত্ম্যর পরবর্তীকালে লেখা - অবশ্যই ষষ্ঠ শতকের পরে। সপ্তম থেকে পঞ্চদশ শতক যেটি শাক্ত ও তান্ত্রিক সাহিত্যের শীর্ষযুগ - ঐ সময়ে লেখা বলে অনুমিত। শাক্তধর্ম ও তন্ত্রের প্রচারের জন্যই এই রামায়ণ লেখা হয়েছিল। দেবীমাহাত্ম্য তথা অন্যান্য শাক্ত সাহিত্যের মত এখানেও সাংখ্যদর্শনের পুরুষ-প্রকৃতি, কার্যকারণ আর বেদান্তের অদ্বৈত বা দ্বৈতের ধারণা, সগুণ ও নির্গুণ ব্রহ্মের ধারণা ব্যক্ত করা হয়েছে। এগুলোও মোটামুটি ঐ সময়কালেরই আভাস দেয়।
তাছাড়া জৈন রামোপাখ্যানগুলিতেই প্রথম সীতাকে রাবণপুত্রী হিসাবে বর্ণিত হতে দেখা যায় - এবং এই ধারাটি সপ্তম শতকে শুরু হয়। অদ্ভুত রামায়ণও সম্ভবত এদের থেকে পুরনো নয়। ইতিহাসবিদ সুবীরা জয়স্বালের মতে এটি কাশ্মীরে রচিত, এবং তন্ত্রশাস্ত্র দ্বারা প্রভাবিত। তামিল কাহিনী শতকণ্ঠরাবণেও সীতার যোদ্ধ্রীরূপ দেখা যায়।
জৈন ও বৌদ্ধ রামোপাখ্যানগুলিতে সীতার অন্যরূপ:
বাল্মীকি-রামায়ণে না থাকলেও সীতা যে রাবণের কন্যা - সেই ধারণাটি মোটামুটি সপ্তম শতাব্দীর বিভিন্ন সাহিত্য থেকে দেখা যেতে থাকে। সংঘদাস রচিত বসুদেবহিণ্ডী (৬০৯ অব্দ), গুণভদ্র রচিত উত্তরপুরাণ (নবম শতক), মহাভাগবৎ পুরাণ - এগুলিতে সীতাকে রাবণপুত্রী হিসাবে দেখা যায়। প্রথম দু'টি ছিল জৈন রামকাহিনি। জৈন রামোপাখ্যানগুলি বরাবরই ব্যতিক্রমী। যেমন, বিমলসূরির জৈন রামকাহিনি "পৌমচরিয়ম" (অর্থাত পদ্মচরিত) - তৃতীয় থেকে সপ্তম শতকে রচিত - রাবণকে ভাল চরিত্র হিসেবে তুলে ধরার একটা চেষ্টা করে। বিমলসূরি পূর্ববর্তী ব্রাহ্মণ্য বা বৈষ্ণব রামায়ণকারদের "মূর্খ কু-কবি" বলে বর্ণনা করেছেন।
সীতার কিছু অপরিচিত রূপ আমরা দেখলাম - রাবণকন্যা সীতা, রাবণসংহারিকা সীতা, কৃষিদেবী সীতা। তাঁর আরও একটা অল্পপরিচিত, কিন্তু বহুচর্চিত রূপ হল রামের ভগিনীরূপে সীতা। রাম-সীতার ভাইবোনের সম্পর্ক দেখা যায় দুটি বৌদ্ধজাতকে - দশরথজাতক এবং বেসসন্তর জাতক। এই কাহিনিদু'টিতে সীতা রামের বোন ও পত্নী দুইই। ব্রাহ্মণ্য বা জৈন রামোপাখ্যানগুলিতে এটা দেখা যায়না। বৌদ্ধ দীঘনিকায়গ্রন্থে দেখা যায় বুদ্ধের শাক্যবংশ রামের ইক্ষ্বাকু বংশেরই শাখা। ওক্কাক অর্থাৎ ইক্ষ্বাকু নিজের এক পুত্রকে রাজ্যপাট দিয়ে বাকি পুত্রকন্যাদের তাড়িয়ে দেন। তারা পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং সেখানে তিন ভাই তাদের চার বোনকে বিয়ে করে শাক্যবংশের প্রতিষ্ঠা করে। যার ফলে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে ভাইবোনের বিয়ে ব্যাপারটা অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হয়, কারণ তারা জনবিরল অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত ভাবে থাকে। আর যখন একটা নূতন ট্রাইব কোনো পাহাড়ি অঞ্চলে আসে - খুব স্বাভাবিকভাবেই পুরনো ট্রাইবের মানুষেরা নূতনদের সঙ্গে বহির্বিবাহে সহজে লিপ্ত হবে না - ফলে নূতন জনগোষ্ঠীর মানুষদের পক্ষে নিজেদের সংখ্যায় বাড়ানোর ও শক্তিবৃদ্ধি করার একটা উপায় হল ভাই-বোন বা তুতো ভাই-বোনেদের মধ্যে বিয়ে। লিচ্ছবি বংশেরও সূচনা এভাবেই হয়। আর রাজরক্ত সংরক্ষণের জন্য ভাইবোনের বিয়ের উদাহরণ মিশর থেকে আধুনিক ইউরোপ - পুরো ইতিহাস জুড়ে আছে। যমী যমকে প্রেম নিবেদন করার সময় দূর অতীতে ভাইবোনের বিয়ের উদাহরণ দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় শতাব্দীর পর বৌদ্ধরা রামোপাখ্যান লেখা বন্ধ করে দেয় - ব্রাহ্মণ্য ও বৈষ্ণবধর্মের সঙ্গে নানারকম বিভেদ সৃষ্টি হবার ফলে। যে কাহিনিগুলোতে সীতা রামের ভগিনীরূপে বর্ণিত হয়েছেন সেগুলি বৌদ্ধ মূলের এবং পঞ্চম খৃষ্টপূর্ব শতক থেকে দ্বিতীয় শতকে লেখা। যে কাহিনিগুলোতে সীতা রাবণের পুত্রী - সেগুলি জৈন বা তান্ত্রিক মূলের - সপ্তম শতক বা তারও পরে লেখা। এই দুই ধারার কাহিনিকে একত্র হতে দেখা যায়নি।
মনে রাখতে হবে, প্রতিটি রামায়ণেই অনেক নিজস্ব কাহিনি এবং আখ্যান থাকে। ওড়িয়া রামায়ণে দেখি রামকে শবরীর এঁটো কুল খেতে, যা অন্য রামায়ণে নেই। কৃত্তিবাসী রামায়ণে ভগীরথের মা আর মাসির সমকামিতা দেখতে পাই যা বাল্মীকি-রামায়ণে নেই। জৈন রামায়ণগুলি পুরো অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা - রাবণ সেখানে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছেন। কাহিনির বিভিন্নতা নানা কারণে আসে - স্থানভেদ, কালভেদ, দার্শনিক মতের ভেদ। কয়েকশ' রামায়ণে কয়েক সহস্র কাহিনি - আর তার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ছোট ছোট বিস্ময়।
তথ্যসূত্র: