কর্মক্ষেত্রে মানববৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতেই যেখানে বহু দশক লেগেছে আর এখনো অনেক কাজ বাকি আছে, সেখানে অন্যান্য প্রান্তিক মানুষদের, যেমন প্রতিবন্ধী ও যৌন সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তি আরও কঠিন বিষয়।
এলজিবিটি সম্প্রদায় অর্থাৎ যৌন সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হল,
এক, এদের একটা বড় অংশ (লেসবিয়ান, গে ও বাইসেক্সুয়াল) শারীরিকভাবে যৌন সংখ্যাগুরুদের চেয়ে আলাদা নয়, যেটা নারী ও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে খাটে। যার ফলে অন্তর্ভুক্তির হিসেবনিকেশ করা মুশকিল।
দুই, যে অংশটা যৌন সংখ্যাগুরুদের চেয়ে আলাদা (ট্রান্সজেন্ডার এবং ইন্টারসেক্স) তারা সংখ্যায় খুব কম হওয়ায় তাদের পক্ষে সংঘবদ্ধ হওয়া কঠিন। এই দ্বিতীয় অংশটা বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান বলে এদের প্রতি সমাজের স্টিগমাও চোখে পড়ার মত। প্রথম দলের দিকেও সমাজের স্টিগমা কম নয়, কিন্তু অনেক সময় পুরোপুরি প্রকাশ্যে আসে না, তবে তার পরোক্ষ উপস্থিতি কর্মক্ষেত্রে দেখা যায়।
বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি (diversity and inclusion) জরুরি কেন? কারণ হল বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা – যার মুখোমুখি সংখ্যালঘুরা হয়। এছাড়া কর্পোরেটের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক এতে কর্পোরেটের কী লাভ:
ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির কর্মী কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে আসে।
দশজনের মস্তিষ্ক একইরকম ভাবে কাজ করলে সেটা দশটা মস্তিষ্ক হয় না, দশের কম হয়। আগে মানুষ ভাবনার বৈচিত্রকে ভয় পেত, এখন সেটাকে কাজে লাগাতে জানে। পশ্চিমী দুনিয়ার কর্পোরেটগুলো এখন মানববৈচিত্র বিষয়টাকে বুঝতে শিখেছে।
তবে এমন নয় যে সবাই বৈচিত্রের গুরুত্ব বোঝে, বা বুঝলেও কর্মক্ষেত্রে মানববৈচিত্র্য আনার বিষয়ে সক্রিয়। বৈচিত্র আনার ও রক্ষার উপায় কী? উত্তর হল, কর্মীনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনা, আর যে কর্মীরা আছে তাদের জন্য অনুকুল কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। এই অনুকুল কর্মক্ষেত্র কিরকম? সেখানে কী আশা রাখা যায়?
❖এক, দৃশ্যমান বৈষম্য থাকা চলবে না, সুপ্ত বৈষম্য থাকলেও চলবে না।
❖দুই, যে এমপ্লয়মেন্ট বেনিফিটগুলো বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে খাটে, সেগুলো যথাসম্ভব সমকামী কাপলদের ক্ষেত্রেও প্ৰযোজ্য করা – যেরকম জীবনসঙ্গীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা, পার্টনারের দত্তক সন্তানের জন্য সেইসব বেনিফিট – যা নিজের সন্তান পায়। দ্বিতীয় উদাহরণটার বিষয়ে বলি, সেম সেক্স কাপলরা ভারতে একজনের নামেই দত্তক নিতে পারে। সে আইনত অন্যজনের সন্তান গণ্য হয় না।
❖তিন, সামগ্রিক সচেতনতা। যেরকম, মানুষের প্রিভেসি সম্পর্কে সচেতনতা – ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কী প্রশ্ন করা যায়, কোনটা করা যায় না – সেই বিষয়ে সহকর্মীদের সচেতনতা। স্টিরিওটাইপিংএর শিকার যাতে কেউ না হয়, তার দিকে লক্ষ রাখা।
❖চার, ট্রান্সজেন্ডারদের যেহেতু বাড়তি বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়, তাই তাদের দিকে আলাদা করে মনোযোগ দেওয়া আর তাদের মধ্যে থেকে কর্মীনিয়োগের দিকে বিশেষ করে নজর দেওয়া।
❖পাঁচ, ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য প্রয়োজনীয় sex reassignment সার্জারি আর হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা। ভারতে অনেক স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানি এখনও এগুলিকে কসমেটিক সার্জারির আওতায় রাখে, তাই এই বিষয়টা নজর দেওয়া প্রয়োজন হয়।
❖ছয়, লিঙ্গ নিরপেক্ষ শৌচাগার, যেটা ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে।
❖সাত, ড্রেস কোড – অনেক কোম্পানিতে নারী ও পুরুষ কর্মীদের আলাদা ড্রেস কোড হয়। সেখানে ট্রান্সজেন্ডাররা পুরুষ বা নারী – যে কোডটা অনুসরণ করতে চান, সেটা করতে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
❖আট, সঠিক সর্বনামের প্রয়োগ আর সেই বিষয়ে সহকর্মীদের সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে ট্রান্সজেন্ডার কর্মীদের ক্ষেত্রে। বাংলায় সর্বনামের লিঙ্গ হয় না, কিন্তু ইংরাজিতে সর্বনামের লিঙ্গ হয় আর হিন্দিতে ক্রিয়ার লিঙ্গ হয়।
শুধু যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য নয়, লিঙ্গ নিরপেক্ষতা সবার জন্য জরুরি। একটা কোম্পানির একটা কর্মখালির বিজ্ঞপ্তি – সেখানে যদি কাজের বিবরণে খালি he/his দেখা যায়, তাহলে কি একজন মহিলা আবেদনকারী ভাববেন না, যে এই কাজটা শুধু পুরুষেরই জন্য? এটা কি তার উৎসাহকে দমিয়ে দেবে না? এটা ছোট্ট উদাহরণ মাত্র। যখন একজন কর্মী বা আবেদনকারীর মনে হয় এই কর্মক্ষেত্র শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য, তখন তার উৎসাহ কমে যায়, আর কর্মীদের আগ্রহ কমলে কর্মক্ষেত্রের আউটপুটও কমে।
এবার বাস্তব সমস্যাগুলো দেখা যাক। সমাজ দীর্ঘদিন ধরে একটা কাঠামোয় চলে এসেছে। সেটা ভাঙা কঠিন। যৌন সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করাই যে সমাজে স্বাভাবিক, সেই সমাজের প্রতিফলনই কর্মক্ষেত্রে দেখা যায়। এটা একটা সমস্যা। আরেকটা অসুবিধা হল মানববৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তিকে ব্যবসায়িক লক্ষ্যের সঙ্গে যোগ করা। একটা উদ্দেশ্যকে কোম্পানির ব্যবসায়িক লক্ষ্যের সঙ্গে যোগ করতে না পারলে সেই উদ্দেশ্যটায় কোম্পানিকে বিনিয়োগ করানো কঠিন। মানববৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে, না হলে তা খালি লোকদেখানো রামধনুতে পরিণত হয়। কীরকম বিনিয়োগ? এক, কর্মীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং দেওয়া বা সচেতনতা জাগরণের জন্য ক্যাম্পেইন করা। অন্ততপক্ষে ম্যানেজারদের এই বিষয়ে শিক্ষিত করা। দুই, যৌন সংখ্যালঘু কর্মীনিয়োগের জন্য সঠিক লেবার সোর্সিংয়ের চ্যানেল খুঁজে বার করা। তিন, বীমা কোম্পানির সঙ্গে বোঝাপড়া। চার, ধরে ধরে বিভিন্ন ওয়ার্কপ্লেস পলিসি বদলানো। পাঁচ, কাজের সুযোগ তৈরি করা।
এগুলি সবই সময়সাপেক্ষ কাজ, এবং কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ। অনেক কোম্পানির লিডারশিপ এগুলোর পিছনে ব্যয় করতে রাজি হয়, অনেক ক্ষেত্রে হয় না।
এই ব্যয় কিছুটা কমানোর উপায় আছে - কোম্পানির যৌন সংখ্যালঘুদের মধ্যেই ভলান্টিয়ার খুঁজে বার করা – তারা অনেকেই নিজের আগ্রহে সময় বার করে এই কাজগুলো করে থাকে। মূল কাজের পাশে কিছুটা স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে। তবে তার জন্য অবশ্যই দরকার তাদেরকে একটা অনুকুল পরিবেশ দেওয়া। এদেরকে এমপ্লয়ি রিসোর্স গ্রুপ (ERG) বলা হয়। আলাদা আলাদা বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা এমপ্লয়ি রিসোর্স গ্রুপ – নারী কর্মীদের জন্য, প্রতিবন্ধীদের জন্য, যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য। এদের কাজ সচেতনতা জাগরণ, যেসব পলিসির পরিবর্তন প্রয়োজন সেগুলো খোঁজা আর সেগুলোর বিষয়ে দাবি তোলা, বিভিন্ন বিভাগ, যেমন মানবসম্পদ, লিগাল ইত্যাদির সঙ্গে নেগোশিয়েশন করা, উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা।
এমপ্লয়ি রিসোর্স গ্রুপ মানবসম্পদ বিভাগ (এইচ আর) থেকে স্বতন্ত্র। এমপ্লয়ি রিসোর্স গ্রুপ কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন নয়। এমপ্লয়ি রিসোর্স গ্রুপের সাধারণত নিজস্ব বাজেট থাকে না, সাধারণত মানবসম্পদ বা অন্য কোনো বিভাগের বাজেট ব্যবহার করে কাজ করতে হয়।
যৌন সংখ্যালঘুদের এমপ্লয়ি রিসোর্স গ্রুপে শুধু যে যৌন সংখ্যালঘুরাই থাকবে তা নয়, যৌন সংখ্যাগুরুদের থাকাটাও বাঞ্ছনীয় – অ্যালাই (Ally) হিসেবে। অনেক সময় একজন যৌন সংখ্যালঘু মানুষের পক্ষে প্রকাশ্যে আসা সম্ভব হয় না, নির্ভয়ে নিজেদের দাবিদাওয়া তোলা সম্ভব হয় না, একজন অ্যালাই কিন্তু নির্দ্বিধায় এগুলো করতে পারে। একজন অ্যালাই বার্তাবাহক হতে পারে, নূতন অ্যালাই বানাতে পারে। শুধু যৌন সংখ্যালঘু কর্মী নয়, যৌন সংখ্যালঘু গ্রাহক এবং সরবরাহকারীদের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি এবং এভাবে একটা কোম্পানি অনেক নূতন লয়াল গ্রাহক এবং সরবরাহকারী পেতে পারে। এবং এই প্রচেষ্টা এখন হচ্ছেও।
একটা ব্যাংকে গতবছর সমকামী যুগলদের জন্য জয়েন্ট একাউন্ট, নমিনি চয়ন ইত্যাদির ব্যবস্থা হয়েছে বলে ঘটা করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু ক্লায়েন্ট বাস্তবে একাউন্ট খুলতে গিয়ে লক্ষ করে, ফ্রন্টলাইন কর্মীরা অনেকেই এই নূতন পলিসির কথা জানেই না বা বিষয়টা স্পষ্টভাবে বোঝে না। কারণটা দুর্বোধ্য নয়। সেই ব্যাংকে লাখের কাছাকাছি কর্মী ও ঠিকাকর্মী কাজ করে। কয়েক হাজার শাখা তাদের। একটা পলিসি তৈরি হলেই তার সচেতনতা তৃণমূলস্তরে পৌঁছে যাবে তা নয়। তার জন্য যথেষ্ট ট্রেনিং দিতে হবে, আর সেটার একটা খরচ আছে। পলিসি আর প্রয়োগের ব্যবধান ইন্ডাস্ট্রিতে ভালমতই পরিলক্ষিত হয়। সেই ব্যবধান কমানোর কাজ করে যেতে হবে।
একটা লক্ষণীয় সমস্যা হল, ট্রান্সজেন্ডারদের বিষয়ে অনেকের ধারণা অস্পষ্ট। ট্রান্সজেন্ডারদের আর্থসামাজিক শ্রেণিবিভাগ ভালভাবে বোঝা প্রয়োজন। ট্রান্সজেন্ডারদের একটা দৃশ্যমান অংশ হল হিজড়া সম্প্রদায়, এবং আরাবনি বা জোগাপ্পার মত সম্প্রদায়গুলো। এদের অনেকেই বিদ্যালয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, বা সম্পূর্ণ হয়নি। এদেরকে ব্লু কলার জবে সাধারণত নিয়োগ করা হয়, এবং এদের নিয়োগ করার সময় অনেক কোম্পানিই এদের স্বল্পমূল্যের শ্রমের উৎস হিসেবে দেখে। এভাবে দেখাটা ঠিক নয়। অনেক সময় এত কম মাইনে অফার করা হয়, যে, তাদের কাছে নিজেদের প্রথাগত কাজগুলো (নাচগান, ভিক্ষাবৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি) চাকরির থেকে অনেক ভালো অপশন বলে মনে হয়। একটা সংস্থার কখনো এরকম মনোবৃত্তি নিয়ে চলা উচিত নয়, যে চাকরি দিচ্ছি মানে বিরাট উপকার করছি। নির্ধারিত মাইনের চাকরি পাওয়া মানেই স্থিতিশীলতা, সম্মান এবং সুরক্ষা নয়। অর্থাৎ একটা সংস্থা যখন চাকরি অফার করছে একজন হিজড়াকে, তখন তার প্রথাগত কাজের সমান বা বেশি আয়ের কাজই অফার করা উচিত।
ট্রান্সজেন্ডারদের আরেকটা অংশ হল, যারা শিক্ষা সম্পূর্ণ করেছে; অনেকে উচ্চশিক্ষাও সম্পূর্ণ করেছে। এরা ছোটবেলায় পরিবার পরিত্যক্ত নয়। এদের অনেকে লিঙ্গ পরিবর্তন করেছে কৈশোর পেরোনোর পর অথবা এখনও করেনি। এদের চাকরি দেওয়ার সময় সেই চাকরিই দেয়ার কথা যা এদের সমান শিক্ষার যৌন সংখ্যাগুরু মানুষকে দেয়া হয়। একজন কলেজ শিক্ষিত ট্রান্সজেন্ডারের সেই চাকরি পাবার কথা, যা একজন কলেজ শিক্ষিত যৌন সংখ্যাগুরু মানুষ পাচ্ছে। এদের যদি শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়ে থাকে, এদের নিয়ে তাহলে অতিরিক্ত ভাবনা কেন? এটা প্রয়োজন আছে, কারণ হল বৈষম্য। একই শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে একই কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা একজন ট্রান্সজেন্ডার মানুষের ক্ষেত্রে কম, অন্যদের তুলনায়।
এ তো গেল টেক ইন্ডাস্ট্রি এবং একটু আধুনিক কর্মক্ষেত্রগুলোর কথা। এইসব জায়গায় দেশের বড়জোর এক শতাংশ মানুষ কাজ করে। এর বাইরে বৃহত্তর শিল্পক্ষেত্রের কথা ভাবা প্রয়োজন। যারা একটু পুরোনো প্রথাগত ইন্ডাস্ট্রিগুলোয় কাজ করে, যারা সরকারি চাকরি করে, যারা শিক্ষকতা করে – এরকম বৃহত্তর পেশার জগতে মানববৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি কীরকম? এখানে আরও অনেক কাজের প্রয়োজন আছে। এই পেশাগুলোয় এমপ্লয়ি রিসোর্স গ্রুপ বানানো কঠিন, তবে এইসব পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন সক্রিয়। ট্রেড ইউনিয়নে মানববৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির এজেন্ডা রাখার প্রস্তাব রাখা যায়, বিশেষ করে তাদের ওয়েলফেয়ার এজেন্ডায়। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা আছে। ট্রেড ইউনিয়ন যেহেতু নির্বাচনভিত্তিক তাই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠই প্রাধান্য পায়। মনে রাখতে হবে ভারতে ট্রেড ইউনিয়নে আলাদা করে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই (তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের এসোসিয়েশন থাকে, ইউনিয়ন নয়- দুটো আলাদা জিনিস) , তাই যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা অনেক দূরের ব্যাপার।
একটা প্রায়-অদৃশ্য জনসংখ্যার পক্ষে এসোসিয়েশন বানানোও সহজ কাজ নয়। ইউনাইটেড কিংডমে ট্রেড ইউনিয়ন সদর্থক ভূমিকা পালন করেছে কর্মক্ষেত্রকে যৌন সংখ্যালঘুদের অনুকুল বানানোর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সেটা হয়েছে। ভারতে এরকম কোনো দৃষ্টান্ত এখনও তেমনভাবে চোখে পড়েনি।
শিক্ষকদের ইউনিয়ন হয়, সেখানে সচেতনতা জাগরণের চেষ্টা করা উচিত। এতে শুধুই যে যৌন সংখ্যালঘু শিক্ষকরা লাভবান হবেন তা নয়, দেশজুড়ে যৌন সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা যে হেনস্থার শিকার হয়, আত্মহত্যার দিকে এগোয়, অনেক সময় শিক্ষকদের মুখেই তাদের কটুকথা শুনতে হয় - সেই ছাত্রছাত্রীরাও লাভবান হবে। তবে এগুলো হতে অনেক সময় লাগবে। চেষ্টা জারি রাখা প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি এবং অনুকুল পরিবেশ যৌন সংখ্যালঘুদের আর্থিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক সম্মানের জন্য একটা প্রয়োজনীয় ধাপ। শুধু যৌন সংখ্যালঘুরা নয়, এর ফলে সমাজ এবং অর্থনীতিও লাভবান হবে।
লেখক পরিচিতি: সুদীপ্ত পাল একজন পরিসংখ্যানবিদ। কর্মক্ষেত্রে এলজিবিটি এম্প্লয়ী রিসোর্স গ্রুপ নির্মাণ এবং চালনার কাজে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সমকামিতা বিষয়ক দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে - “সমকামিতা ও বিবর্তন” এবং উপন্যাস “ভালো না বাসার গল্প”