গতকাল এক অনেক আগের ব্যাচের এক ছাত্র মেসেজ করে জানাল, আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাইড ওয়াক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি যে মেডিক্যাল কলেজে পড়াই, সেখান থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী যাচ্ছে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমি আসতে পারব কিনা।
আমার মনে হঠাৎ একরাশ পুরোনো স্মৃতি ভেসে উঠল।
২০০১ সালে যখন প্রথম queer rights নিয়ে সক্রিয় হই, তখন আমি ১২ ক্লাসের ছাত্র। সবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছি। তারপর ২০০৩-০৪ সালে প্রথম ডকুমেন্টারি ছবি “পিকু ভাল আছে”। শহরের কাগজে কাগজে রিভিউ আর কলেজ, ঘর, পাড়ার কোণায় কোণায় উৎসহিষ্ণু, অবাক, বিদ্রূপাত্মক চোখ – ছেলেটা কী বলে রে বাবা!
এমনকি শহরের closeted গে, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল মানুষেরাও internalised phobia থেকে থু থু করে উঠল – “দিব্বি ছিলাম বাপু, ৩৭৭ ধারা থেকে বেঁচে, ক্যাসুয়াল ডেট করে। দিল সব ফাঁস করে”।
তার পরের পথ চলাটা যত কঠিন, ততটাই political। আমি তো নিমিত্ত মাত্র – কত শত মানুষ পথে হেঁটেছে, বিচারালয়ে লড়েছে, বাড়িছাড়া হয়েছে, বন্ধুহীন হয়েছে, কাজ খুইয়েছে, পথে বসেছে, আবার সেই পথেই হেঁটেছে। ভালবাসা কি কখনো হারে!
এরই মধ্যে, গত সপ্তাহে আমার এক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রর মা ফোন করে বললেন, ওঁর ছেলে গে। উনি তার চিকিৎসা চান। আমি যখন বললাম, আপনার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ, তিনি প্রায় আমাকে এই মারেন কি সেই মারেন। বললাম, আপনি আপনার পছন্দসই মনোরোগ বিশেষজ্ঞর সাথে কথা বলুন। মনে মনে প্রমাদ গুণলাম – কোনো homophobic ডাক্তারের পাল্লায় পড়বেন না তো! ছাত্রটিকে বললাম, তুই ভাল করে পড়। ৪-৫ বছর পরে আর কারোর ওপর নির্ভর করতে হবে না।
আর ঠিক সেই সময়, আমার এক ছাত্র মেসেজ করে জানাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাইড ওয়াক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবাই যাচ্ছে। আমি আসতে পারব কিনা।
আজ এই আনন্দ আমি রাখি কোথায়!
যুগের নিয়মে সময় বদলাচ্ছে। হয় বদলান, বা কালের প্রবাহে হারিয়ে যান। ইচ্ছেটা আপনার।