নাটক “তুঁহু মম - unseen and beyond”-এর কাহিনির কেন্দ্রে আছে দুটি তরুণহৃদয় ও তাদের প্রেম। আর পাঁচটা ভালবাসার গল্পের মতই তাদের প্রথম প্রেমের উদ্ভাস ধরা থাকে গানে, নৃত্যের মুর্ছনা ফুটিয়ে তোলে তাদের মানপর্ব, চিৎকৃত কলহে তাদের তুচ্ছ দৈনন্দিন বিবাদ কখনো বা বাদ সাধে সযত্নলালিত, দীর্ঘ পরিকল্পনাপ্রসূত কোনও উদযাপনে। আবার চেনা ছকেই প্রত্যাবর্তন করে দুজনের ভালবাসা, পরিমার্জিত মার্জনা -কাঙ্ক্ষা ও -দানে ভরে ওঠে তাদের খুশির ভাণ্ডার। কিন্তু এই প্রেমের দুই পাত্রই যেহেতু জন্মসুত্রে পুরুষ, যাদের ভালবাসতে চাওয়াটাই সর্বব্যাপ্ত-হতে-উন্মুখ “বিষমকামী- স্বাভাবিকতা” (heteronormativity)-র বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ, তাই এই গল্প হয়ে ওঠে অন্যরকম, কথোপকথন ও দৃশ্যায়নে মুকুরিত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা-গর্বী (majoritarian) বিষমকামী মানুষদের অসংবেদী, রূঢ়, ব্যক্তিগত-পরিসরগ্রাসী আচরণগুলিও।
নাট্যদল সমুহ-র এই নির্মাণে প্রায় সারাক্ষণ দর্শকদের সঙ্গ দেয় সুপরিবেশিত পদাবলী গীতি আর ভারতীয় শৈলীর নাচ। কোনও কষ্টকর ভাবনা এবং কথা-পরিবর্তন ছাড়াই তারা মিশে যায় সমপ্রেমের এই গল্পে একইরকম সহজভাবে যেমন সেগুলি বিষমপ্রেমের গল্পে আসে, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে শাশ্বত হয়ে ওঠে দুটি মানুষের মধ্যের সম্পর্ক, জন্মগত লিঙ্গ-পরিচয় যেখানে প্রতিবন্ধকরূপে প্রতীয়মান নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে আরোই দাগ কাটে সেই নির্বাক পার্শ্বদৃশ্যটি যেখানে দুই নৃত্যশিল্পীর রূপায়ণে শুধুমাত্র তাঁদের আঁখি ও আননে বিম্বিত হয় তাঁদের নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া-অভিমানের টানাপোড়েন আর তাঁদের পদক্ষেপে কখন যেন দর্শক-অবচেতনে ঘাই মেরে যায় লাতিন নাচের পদবিন্যাস। সেই যাদুমুহূর্তে মনে হয়, এরকম আরো কাহিনি বিকশিত হোক অন্য আরো প্রযোজনায়, তুঁহু মম-র কাহিনিতূণীর ভরে উঠুক প্রান্তযৌনতার আরো আরো আখ্যান নিয়ে, এমন প্রেমের গল্পরা আরো আরো সামনে আসুক।