উফফ্ দু-দণ্ড যে একটু শান্তিতে দিন কাটাব, তার যো নেই। হতভাগাগুলো আবার “দাও দাও” আবদার শুরু করেছে। হ্যাঁ রে, অনামুখোর দল, এই যে তোদের কথামতো ৩৭৭ সরালুম, তাতেও তোদের আশ মিটল না? না, মানে, আমরা সরিয়েছি তা নয়, সুপ্রিম কোর্ট সরিয়েছে, কিন্তু আমরা কি তাতে কিছু বলেছি? হুঁ হুঁ বাবাসকল, এ হল অমৃতকাল, সবকা বিকাশ না করে ছাড়বো না। এই যা, বাবাসকল বলে দিলাম, তোদের তো আবার কে বাবা আর কে মা—তার ঠিকঠিকানা নেই। আজকে দাড়িগোঁফওয়ালা শাড়ি পরে ঘুরছে, তো কাল আরেকজন মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাচ্ছে। এরকম ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল চলতে থাকলে আমরা কি আর তাল রাখতে পারি?
যাক গে, যাক। যে কথা বলছিলাম। ৩৭৭ গেল কি গেল না—তোরা এসে উপস্থিত হলি "বে করবো" বায়না নিয়ে। বলি, বিয়ে কি ছেলের হাতের মোয়া না নোটবন্দি – যে চাইলেই করে ফেলবি? এ হল অতি গুরুতর বিষয়, সমাজের হিত, দেশের ভিত, আর ঐতিহ্যের মিথ – সব এতে মিলেমিশে আসে। অমন বিয়ে করব বললি আর অমনি আমরা অনুমতি দিয়ে দিলাম, এ আবার হয় নাকি?
শোন, বিয়ে আমাদের ভিত্তি, আর সন্তান হল আমাদের ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যতই যদি অন্ধকার হয়, তবে বিয়ে করে করবি কী তা বল! তোদের তো আর বাচ্চাকাচ্চা হবে না। তবে কেন তোদের বিয়ে করতে দেব শুনি?
কী বললি? অনেকেরই তো বাচ্চা হয় না, তবে কি তারা বিয়ে করে না? দত্তক সন্তান কি সন্তান নয়? আহা, তা কেন? তবে তোদের দত্তক নেওয়ার রাস্তা তো ২০১৫তেই বন্ধ করে দিয়েছি। বলে দিয়েছি, যে, অবিবাহিত দু-জন মানুষ একসাথে দত্তক নিতে পারবে না। দেখেছিস, আমরা কত উদার? শুধু অবিবাহিত বলেছি, স্ট্রেট-গে-হোমো—কিচ্ছুটি বলিনি। এবার, তোদের তো আর বিয়ের অধিকার নেই। ফলে তোরা বিবাহিত কাপল হতে পারবি না। ফলে তোরা দত্তক নিতে পারবি না। অর্থাৎ, নো সন্তান। আর, সন্তানই যদি না রইল, তাহলে আর বিয়ের অর্থ কী? অতএব, তোদের বিয়ের অধিকার দেওয়া যাচ্ছে না। বুঝলি তো, খুবই সোজা ব্যাপার-স্যাপার। হুঁ হুঁ বাবা, আমাদের সব কিছু স্বচ্ছ। একেবারে ট্রান্সপারেন্ট। এতই স্বচ্ছ, যে আছে কি নেই—তাই বোঝা যাবে না। তবে কেউ যদি বলে, “রাজা, তোর কাপড় কোথায়?” তাহলেই হয় সোজা মর্নিং ওয়াক, নয়তো দেশদ্রোহ আইন।
আবার কী বলছিস? শাহফিন জাফরির কেসে ২০১৮ সালে কোর্ট বলেছে, যে নিজের পছন্দে বিয়ে করা সংবিধানের আর্টিকল ২১-এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ? অতএব, তোদের বিয়ে করতে না দেওয়া সংবিধান বিরোধী?
শোন বাছারা, আমাদের সংবিধান দেখাস না, কেমন? সংবিধানটা যে এখনও পাল্টাইনি—সে তোদের বাপ-ঠাকুদ্দার ভাগ্য। নিজের পছন্দে বিয়ে? বলি, এটা কি মগের মুলুক নাকি? ভিন্ন ধর্মে ছেলে মেয়ের বিয়েই আমরা আটকে দিই, পার্কে বসলে কান ধরে উঠবোস করাই, সরকারি পয়সায় রোমিওদমন বাহিনী বানাই, আবার তোদের বিয়ে? ভালবাসা-টালোবাসা ওসব আমরা বুঝি না। আমাদের ছেলেমেয়েরা ভিনজাতে প্রেম করলে সেই প্রেমের জোয়ারে দোঁহার লাশ ভাসিয়ে দিতে আমাদের হাত কাঁপে না। আমাদের এতদিনের ময়ূরের চোখের জলে ধোওয়া সনাতন ঐতিহ্য, তাকে আমরা বুক দিয়ে আগলে রাখি। সাচ্চা মরদের মত।
আর কোর্ট? রাজ্যসভার সিট, রাজ্যপালের পদ —এগুলো আছে কী করতে, শুনি? দুটো অমন ছুঁড়ে দেব, চারটে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে…। যাক গে, যাক। মোদ্দা কথা হল, বিয়ে অতি পবিত্র বস্তু। চন্দন-ফুল-মন্ত্র টন্তের দিয়ে করা একটা শুদ্ধাচার ব্যপার স্যপার। সেই শুদ্ধাচার শুধুমাত্র নারী-পুরুষের মধ্যেই হতে পারে। সেখানে সমলিঙ্গে বিয়েতে সায় দিলে এর পবিত্রতা নষ্ট হবে।
যেটা বলছি, মন দিয়ে শোন। বিয়ে আমাদের অধিকার। বিয়ের পর বৌকে ছেড়ে চলে আসা আমাদের অধিকার। তাকে ডিভোর্স না দেওয়া, তার পাসপোর্ট আটকানো আমাদের অধিকার। এমনকি ম্যারাইটাল রেপও আমাদের অধিকার। এমনি সেমনি না, পবিত্র অধিকার।
সমলিঙ্গে বিয়ে মেনে নিয়ে সেই পবিত্র অধিকার আমরা কলুষিত করতে পারব না।
তাতে করে আমাদের বক্তব্য যদি গোঁড়া ক্যাথলিক চার্চ বা কাঠমোল্লাদের মত শুনতে লাগে, তো লাগুক গে।
দেখেছো, কথা বলতে বলতে কতবার “গে” বলে ফেললাম।
যাই, একটু গঙ্গাজলে কুলকুচি করে আসি গে।