অবিবাহিত ছেলেরা তিরিশের গণ্ডি পার করলে, তাদের একটা নতুন জীবন শুরু হয়। চাকরি-জীবনের চাপ, নিঃসঙ্গতার চিন্তা, এবং তার মধ্যে সব থেকে অপ্রীতিকর হল, দিবারাত্রি মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের এক প্রশ্ন – বিয়ে কবে করবি। আমার ক্ষেত্রে মা-বাবার দিক থেকে কোনও চাপ নেই, তবে অন্যদের অবাঞ্ছিত প্রশ্ন এবং পরামর্শ লেগেই আছে।
গত ছয় মাস ধরে আমাদের আবাসন পরিসরে অনেকগুলো বিয়ে হল। প্রত্যেকটি ছেলেই প্রায় আমার বয়সী বা হয়তো একটু ছোট। সবাই একে অপরকে চেনে এবং তাদের বন্ধুত্বও বেশ ভাল। তাই এক জনের বিয়ে যেই হল, অমনই অন্য ছেলেদের মায়েরা তড়িঘড়ি করে তাদের ছেলেদের জন্যে উঠেপড়ে পাত্রী খুঁজতে লাগল, এবং অন্তত আগামী ছয় মাসের মধ্যে সবার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। তা যাই হোক, বিয়েবাড়ি খেতে দারুণ লাগে, তাও আবার তিন-চার দিন ধরে নেমন্তন্ন – দু’-বেলা করে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া। শুধু কি তাই, তার সঙ্গে সাজার শখটাও পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু, বিয়েবাড়িতে গেলে সব থেকে প্রথম প্রশ্ন ওঠে, “কী রে, তোর বিয়েতে কবে খাব... ???”
এই প্রশ্ন তো সয়ে গেছে এবং আমি বেশ ইনোভেটিভ উত্তরও দিই। তার ভয়ে আর কেউ এই কথা আর তোলে না। তবে একটা জিনিস অনুভব করি – যেটা আজকাল বেশ মনে হয়; সেটা হল একটা অদ্ভুত exclusion – অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার একটা অনুভূতি। হয়তো এটা পুরোপুরিভাবে আমার নিজের মনগড়া একটা ভাব, তবুও এই বোধটার উন্মেষ মনে হয় সমাজের বিষমকামভিত্তিক নিয়মগুলো থেকে। আরও কেমন লাগে, যখন দেখি, যে সেই বিবাহিত জুটিদের নিজেদের মধ্যেকার হাসা-হাসি-ইয়ার্কি, সেখানেও সেই exclusion-এর একটা অনুভূতি। অথচ আমার মনে কিন্তু একটা অপূর্ণ সাধ রয়েই গেছে – বিয়ে করার, ঘর বাঁধার – এইসব শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি শুনলে এই ইচ্ছেগুলো বেশ নড়েচড়ে ওঠে, নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়, মন কেমন করিয়ে তোলে।
আমার পুণের এক প্রবীণ বন্ধুর কথা মনে পড়ে যায়। সে বলত, “Aritra, I’m not sad because I’m gay, but I’m sad because I’m not straight!” – (আমি সমকামী বলে দুঃখ হয় না, আমার দুঃখ হয় বিষমকামী নই বলে!) কথাটা বেশ অদ্ভুত, একটু ভেবে দেখলে তবেই বোঝা যায় এর মর্ম।
হয়তো কোথাও একটা ক্ষোভ থেকেই যায়, সবার কাছে সমান হওয়ার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে।
আশা করি, আমাদের পরের প্রজন্মে এই সাম্য আরও বেড়ে উঠবে।