এলজিবিটিকিউ দের নিয়ে লিখতে বা বলতে গিয়ে আমরা অবচেতনে অনেক সময়ই কিউ শব্দটা এড়িয়ে যাই। আমরা সমকামীদের নিয়ে লিখি-টিখি, কিন্তু এই কিউ বা কুইয়ার, বাংলা করলে যার প্রতিশব্দ 'উদ্ভট'এর কাছাকাছি, সেটাকে ছুঁই না। কারণ, যে ব্যাপারটা নামেই উদ্ভট, তার মধ্যে ঢোকা কঠিন। কে জানে কী জটিলতায় জড়িয়ে যাব। ওই কারণেই, ঘোষিত ভাবেই যাঁরা কুইয়ার, তাঁদের নিয়ে তেমন লেখাপত্র চোখে পড়েনা। তার চেয়ে কোনো একটা নির্দিষ্ট খোপে ঢুকে থাকা নিরাপদ। সমকামিতা এখনও, সমাজে পুরোপুরি গৃহীত নয়। কিন্তু তবুও সেটা নিয়ে লেখা সহজ, যখন পুরুষ চায় পুরুষকে, অথবা নারী কামনা করে নারীকে -- এরকম এক বোধগম্য সুনির্দিষ্ট খোপ আছে। উভকামিতা বা বিষমকামিতাও তাই। কিন্তু বাকিটুকু তো কেমন তরল, ধোঁয়ায় ঢাকা, যেন পাহাড়ের গায়ের কুয়াশা, যেখানে এদিক-সেদিক থেকে কখন কোন পাইনবন উঁকি মারবে বোঝা দুষ্কর। এ কুয়াশা যেন রহস্যময়। কোনো পাত্রে আঁটানো অসম্ভব। কোনো আকার দেওয়া কঠিন।
এই এড়িয়ে যাওয়াটুকু তাই বোধগম্য। এবং ঠিক, এই কারণেই এই আন্দোলনের যে দৃশ্যমান প্রতীক, রামধনু, তা কোনো খোপে আঁটা চিহ্ন না। রামধনুতে দৃশ্যমান রং কয়েকটাই। কিন্তু সে তো আমাদের চোখের অক্ষমতা। আসলে তো এক রঙ থেকে আরেক রঙে গড়িয়ে যায় যৌন চাহিদার অভিজ্ঞান। তাতে অজস্র ছায়া, অসংখ্য শেড। কামনার অজস্র ধরণ, বেঁচে থাকার সংখ্যাতীত প্রকরণ। অজস্র ছোটো-ছোটো চাওয়া, সঙ্গে আশাভঙ্গ, বেদনা। বিষমকামী চোখে এর কিছু দেখতে পায়, বাকিগুলো তাই, 'উদ্ভট'। কুয়াশার মতোই, একে দেখা যায় ঠিকই, কিন্তু ধরার বাইরে।
অথচ এই চাহিদাগুলো আছে আমাদের চারদিকে। কেউ বেশি উদ্ভট কেউ কম। অর্থাৎ কিনা সামাজিক খোপ থেকে কেউ বেশি পিছলে যায়, কেউ কম। তাতে করে তো এদের অস্তিত্ব মিথ্যে হয়ে যায়না। বরং এত রঙকে দেখতে না পেলে, আমাদের দৃষ্টিই ফস্কে ফেলে বৈচিত্র্যের এই উদযাপনকে। যা আছে সামনেই, কিন্তু আমাদের অধরা -- নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে। যৌনতার নানা প্রকরণ যদি উদ্ভট হয়, এই দেখতে না পাওয়াও তাহলে অদ্ভুত।
এই সোজা-সরল দৃষ্টির অক্ষমতা ঘোচাতে গুরুচণ্ডা৯ নিয়ে এসেছে তার কুইয়ার-কথা। যা আসলে উদ্ভটত্বের মহোৎসব। নানা রঙের উদযাপন। গোটা সমাজ জুড়ে দোলখেলা এতেই শুরু হয়ে যাবে তা নয়, কিন্তু শুরু তো হোক অন্তত।
** এই সংখ্যার জন্যই এই শনিবারে ধারাবাহিক, এবং রবিবারে পড়াবই প্রকাশিত হল না।
সম্পাদনা: ঋষভ
কেমন আছি আমরা?
যারা ছিলেন বলে আমরা আছি
আমাদের সঙ্গে যারা আছেন
পাখির চোখে দেখা: কী চাইছি, কী পাচ্ছি