অর্ক,
আজ এত বছর পর তোমার নামে একখান চিঠি লিখতে ইচ্ছা করছে। কেমন আছো অর্ক? কেমন আছে তোমার বান্ধবী? প্রাইড মান্থ চলছে। চারিদিকে কত রকমের কাজ করছে কম্যুনিটির সকলে। আমি কম্যুনিটি-ফিটি বুঝি না। আমি বুঝি আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। তুমি পুরুষ, আমিও। ব্যস এটুকুই। মনে আমার রাজনীতির বীজ সেই কবে থেকে, তুমি জানো। তাই সকলকে কিছু না কিছু করতে দেখলে কেমন হয়! তবে, তুমি তো এটাও জানো যে আমি চিরকেলে অকর্মণ্য। করব ভাবি, কিন্তু কিছুই করি না। তারপর ঠিক করলাম এই চিঠিটা লিখব। যে চিঠি তোমার কাছে পৌঁছাবে না কোনোদিন। উত্তর আসবে না। শুধু শুধুই লেখা। অসম্পূর্ণ কাজ করা স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে পূর্ণতা যে কী, আমি এখনও বুঝিনা অর্ক। তোমার সাথে আমার আর কথা হয় না। তবু, আমি তোমার কথা ভাবি। আমাদের প্রেমদিনগুলোর কথা ভাবি, প্রায় প্রতিদিন। এ কি পূর্ণতা না অপূর্ণতা? মাঝে মাঝে জীবনে প্রেম পায়, প্রেম আসে। তবুও তোমার মত করে কেউ আসে না। মানে, তারা তাদের মত ভালই। তবু, কেন জানি না, সেইবারের মত অনুভূতি হয় না। আর তা হয় না বলেই কেমন কেমন লাগে। মনেই হয় না প্রেম করছি। মনেই হয় না তুমি আবার ফিরলে। তুমি হয়ে না ফিরলে, কারোর সাথেই প্রেমটা আমার হবে না অর্ক! ওদের সাথেও হয়নি।
তোমাকে এখন কেমন দেখতে হয়েছে ছবিতে দেখেছি। সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবু আমার সামনে যখনই তুমি আসো, স্মৃতিতে বা স্বপ্নে, আমি তোমাকে আজও সেইদিনের মতই দেখি। আমি এখনও এই সময় থেকে এগোতে পারিনি অর্ক। তুমি এগিয়েছ আমি জানি! কী করে এগোলে বল! না, এতে কোনো ব্যঙ্গ নেই। এটা একটা সেকুলার প্রশ্ন। আমিও এগোতে চাই। সত্যি বলতে আমি তোমার সাথে এ জন্মে আর দেখা করতে চাই না, অর্ক। তুমি অস্বস্তিতে পড়বে। আমিও। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করবই, তুমি আজ এই এ’ক্ষণে দাঁড়িয়ে আমাদের সম্পর্ককে কীভাবে দেখ? তুমি কি মনে করো ওটা আমাদের ঐ বয়েসের ভুল? বা, তোমার লভ্যতায় কোনো মেয়ে ছিল না, ছিলাম আমি! বা, ওই সময়ে দাঁড়িয়ে ওটাই ছিল সভা, এখন আর নয়? আমি খুব করে চাই তুমি বল, তুমি আমাকে এখনও ভালবাস। আগের মতই। প্লিজ, শেষেরটাই বোলো। আমার সব লেখা, আমার সব প্রতীক্ষা, আমার সব অজিজ্ঞাসা ঐ উত্তরটার জন্যই। তুমি ও উত্তর না দিলে আমার সমস্ত লেখা বৃথা। আমার সমস্ত প্রতীক্ষা অর্থহীন হয়ে যাবে, অর্ক। আমি এই ভয়েই তোমার সামনে যেতে চাই না। এই ভয়েই তোমার সামনে যাব না। ফেসবুকে দেখি কোনো বন্ধুর বিয়েতে পুরোনো বন্ধুদের পুনর্মিলন হচ্ছে। তোমারও বিয়ে হবে। তুমিও সংসারী হবে। তুমি যদি তোমার বিয়েতে ডাকো আর আমি যদি না যাই, তুমি জেনো, আমি তোমাকে ভালবাসি তাই যাইনি। তুমি খারাপ ভেবো না তখন। আমি জানি হয়তো ভাববে না। তুমি খারাপ ভাববে, নিজেকে এই প্রবোধেই কথাগুলো বলা।
এ লেখা তোমার কাছে যাবে, তুমি পড়বে, এ ভ্রমে আমি নেই। তবু যদি এই উড়োচিঠি হাজির হয় তোমার কাছে কোনোদিন, কোনোভাবে – নিজে থেকে শুধু মেসেজ কোরো ‘পড়েছি’। আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে তোমায় কোনো কথা জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করব না। অর্ক, ভালবাসা তো প্রকাশ পেতে চায়। পৌঁছাতে চায় গন্তব্যে। অনেকের ভালবাসা সে পথে হাঁটা শুরুই করে না। আমাদের করেছিল। আমি বিশ্বাস করি করেছিল। কিন্তু মাঝপথে যেই হারিয়ে ফেলার কষ্ট তো যাওয়ার নয়। তবু তুমি ‘পড়েছি!’ জানালে, জানব, একসাথে না হোক, আমরা কোনো একভাবে গন্তব্যে পৌঁছলাম। হলই বা আলাদা আলাদা। তবু পৌঁছলাম। খবর দিলাম পৌঁছেছি। ক্ষণিকের এটুকু ঘরবাঁধা হলই বা! আরো কত কথা লিখতে চাই অর্ক। সব কথা, সব ঘটনা, সব দৃশ্য লিখে আমি বোঝাতে চাই আমার সবটায় কতটা জুড়ে আছো তুমি! কিন্তু, সব লিখে রিক্ত হতে ভয় লাগে। ওগুলোই আমার সব। আমার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। ওগুলোই আমার সাথে যাবে। সেইসবে বড় মায়া। তোমায় জড়ানো মায়া ছেড়ে মোক্ষপ্রাপ্তি আমার সইবে না, অর্ক। তুমি ভাল থেকো।
‘পড়েছি!’র অপেক্ষায় রইলাম!
পুনশ্চ: আমাকে একদিনও এক মুহূর্তের জন্যেও ভালোবেসেছিলে – এই বিশ্বাসে, হ্যাপি প্রাইড