রথের রশি। সেই রথের রশি, যেখানে জগন্নাথের বাস। জগন্নাথ তো আর একটুখানি কথা নন। কথাখানা ভাঙলে দাঁড়ায় জগতের যিনি নাথ। তাঁকে বয়ে নিয়ে চলা আমাদের মতন শত শত প্রাণ, সেও কি চাট্টিখানি কথা! এই রথযাত্রা নিয়ে ছোটবেলা থেকে টুকরো টুকরো অনেক কথা শুনেছি। রথের দিন নাকি একটু বৃষ্টি হয়, রথের দড়ি একটু স্পর্শ করতে পারা নাকি সৌভাগ্য বহন করে আনে, জগন্নাথ শবরদের জাগ্রত দেবতা ছিলেন, সেখানকার রাজা নাকি তাঁর আরাধনা করার জন্য অনেক পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই সূত্রেই আমার নীলাচলের সাথে আলাপ। আলাপ সেই দারূব্রহ্মের বিগ্রহের সাথে। তাঁর পহন্ডি, তাঁর রথযাত্রা, ভার অনেক তার। রথে করে মাসির বাড়ি যাওয়ার সময় রথের চাকা ভেঙে যায়, মাসির বাড়িতে তার জ্বর আসে। এমন আরো কত টুকিটাকি। সেইসব চেনা গল্পের ভিড়ে আমায় রথের রশিটা খুব টানত। তখন আমি খুবই ছোট। শুনেছি ঠাকুমা কোনো একসময় রথযাত্রায় পুরীযাত্রা করেছিলেন রথের রশি টানবেন বলে। আমার মা পুত্রবধূ সুলভ বাচনভঙ্গিতে যা বলেছিলেন, তার সারাংশ হল এই, যে বয়সের ভারকে তোয়াক্কা না করে রথযাত্রায় পুরীতে গিয়ে রথের রশি টানতে চাওয়া... এটা ওঁর নিতান্ত ছেলেমানুষী কাজ। মায়ের কথাগুলো ফেলে দেওয়ার নয়। তবু সেই জেদি বৃদ্ধা গিয়েছিলেন। পরবর্তী প্রজন্মের সাথে পূর্ববর্তী প্রজন্মের যেমন অভিযোগের টানাপোড়েন থাকে, তেমনই কিছু টানাপোড়েন কাটিয়ে তিনি গিয়েছিলেন পুরী। রথের রশি তিনি ছুঁতে পেরেছিলেন কিনা, বলতে পারি না। তবে আজ বুঝি, এক পরত আনন্দগন্ধ মেখে ফিরেছিলেন নিশ্চয়ই। তখন তো আর ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামে স্টোরি দেওয়ার চল ছিল না। তাই গোটা আনন্দটা তাঁর শরীরে আর মনে রিনরিন করছিল নিশ্চয়ই।