এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হনুগণের বঙ্গবিজয় 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬৫ বার পঠিত
  • রাম কহিলেন, ওহে সুগ্রীব, বঙ্গজয় আর কদ্দূর? 
    সুগ্রীব কহিলেন, রাত দশটায় দখল করে ফেলব স্যার। 
    রাম নিশ্চিন্ত হইলেন। তখন সকাল সাত ঘটিকা। বানর সেনা বঙ্গে মার্চ করিতে লাগিল। তাদের মুখ নিশ্ছিদ্র কালো, কোনটি মুখ কোনটি মাথা, কোনটি সম্মুখ, কোনটি পশ্চাত বোঝার উপায় নাই। পশ্চাতে বৃহল্লাঙ্গুল দোদুল্যমান। দুই নগরললনা পথে হাঁটিতেছিল। তাহাদের একজন দেখিয়া আঁতকে উঠিয়া কহিল, মুখপোড়াদের শরম নাই গো, সব কিছু বার করে হাঁটছে? দ্বিতীয়জন তাহাকে সান্ত্বনা দিয়া কহিল, ওটা তো পিছন দিক রে, পিছন থেকে ন্যাজ বেরিয়ে আছে। এই লইয়া কিছু রঙ্গ হইল। 

    এইসব তামাশা সত্ত্বেও যুদ্ধজয় অনিবার্যই ছিল। তাই ইহারই মধ্যে কোনো এক বুদ্ধিমান বানর স্থির করিল, শুধু যুদ্ধজয়ে আনন্দ নাই। রণহুঙ্কার চাই। অতএব দশ ঘটিকায় লোকালয়ের বিপনী উজাড় করিয়া ডিজে পেটিকা উপস্থিত হইল। পেটিকা পরিচালক জিজ্ঞাসা করিল, কী সঙ্গীত চালাইব? শুনিয়া সঙ্গীতসুধাকর বানরগণ মস্তক চুলকাইতে লাগিল। শেষে এক পালের গোদা অনেক ভাবিয়া কহিল, ওইটা চালাও, দুধ মাঙ্গোগে তো ক্ষীর দেঙ্গে , কাশ্মীর মাঙ্গোগে তো চির দেঙ্গে। পরিচালক অবাক হইয়া বলিল, কিন্তু এটা তো কাশ্মীর না। একজন কহিল, তাতে কী। স্বাধীনতার সময় হাতে-টিউবওয়েল নিয়ে বলিউডের হিরোর গান চালাসনা? তখন কি দেখতে যাস, কে দেশ স্বাধীন করেছে? অন্য আরেক বানর কহিল, কে বলেছে, কাশ্মীর এখানে নয়, যাদবপুরই তো কাশ্মীর। 

    ধ্বনিভোটে ব্যাপারটা পাসই হইয়া যেত। কিন্তু বাগড়া দিল বিহার হইতে আগত এক বানর। তাহার সোচ্চার বক্তব্য, ওই বিশ্ববিদ্যালয় কাশ্মীর নহে। উহা আদতে যাদবদের সম্পত্তি, তাই উহার নাম যাদবপুর। 

    এই বাগবিতণ্ডায় দ্বিপ্রহর অতিক্রম হইয়া যাইবার উপক্রম। শেষে স্বয়ং পবনপুত্র হস্তক্ষেপ করিলেন। ছোটোবেলায় লাফ দিয়া তিনি চন্দ্রমাকে ধরিতে গিয়াছিলেন বলিয়া, বঙ্গে তাঁহার নাম শুভ ইন্দু। তিনি গোলমাল থামাইয়া বলিলেন, ওই গানটা নয়, তবে কাছাকাছি একটা গান চালানো হোক। "ঘোড়া চাইলে ছোলা দেব, হনু চাইলে কলা দেব"। 

    শুনিয়া সকল হনুমান আহা-আহা হুপহাপ করিয়া উঠিল। যুদ্ধজয়ের এই তো প্রকৃত সঙ্গীত। রণহুঙ্কার। কিন্তু এতক্ষণ বাগ্বিতণ্ডায় তাহাদের দম ফুরাইয়া আসিয়াছে। তাছাড়া দ্বিপ্রহরের ক্ষুধা। তাই ক্রিকেটে যেমন জলপানের বিরতি হয়, যুদ্ধ শুরু করিবার পূর্বে কলাপানের বিরতি ঘোষিত হইল।

    বিরতি পাঁচ পলকের হইবার কথা ছিল, কিন্তু হনুমানরা দেখিল যতগুলি লোক তাহার চেয়ে বেশি কলা। কে কটি লইবে বুঝিতে না পারিয়া কাড়াকাড়ি পড়িয়া গেল। একজন অন্যজনের লাঙ্গুল মাড়াইয়া দেয়, অন্যজন কাহাকে দাঁত খিঁচায়, কেউ আসিয়া চড় মারে। ইহাকে যবনরা বলিয়া থাকে ক্যাডাভেরাস অবস্থা। একদিকে দাঁড়াইয়া সুগ্রীব, অন্যদিকে পবনপুত্র বাঁশি বাজাইতে লাগিলেন, কিন্তু কলা ও বানররা এক ও অবিচ্ছেদ্য। তাহারা নড়েনা। 

    বেগতিক দেখিয়া পবনপুত্র বলিলেন, তোরা দাঁড়া।  কে কটা কলা পাবে হিসেব করছি। বলিয়া তিনি আঁক কষিতে বসিলেন। গণনায় সাক্ষাৎ বরাহমিহির বলিয়া সে হিসেব আর কিছুতেই মেলেনা। প্রথমে প্রতিজনকে দুটি কলা দেন, কিছু কম পড়ে। একটি দিলে বেশি।অঙ্কটি নিঃসন্দেহে কঠিন। ইহাকে আগে বলা হইত  বানরের পিঠে ভাগ। এই দিনের পর হইতে নাম হইয়া গেল বানরের কলাভাগ। এই করিতে করিতে আলো পড়িয়া আসিল। অঙ্ক আর মেলেনা। শেষে বিরক্ত হইয়া পবনপুত্র বলিলেন, এই, কে কোথায় আছিস, আরও কটা সৈন্যকে নিয়ে আয়। সবাইকে একটা করে দিয়ে দেব। ল্যাটা চুকে যাবে। 

    যেমন কথা তেমনি কাজ। দূত ছুটিল সৈন্য জড়ো করিতে। কিন্তু সেও আর ফেরেনা। প্রায় আঘঘন্টা পরে ফিরিয়া আসিয়া করজোড়ে  কহিল, কী আর বলব প্রভু। 
    পবনপুত্র বলিলেন, নির্ভয়ে বল। 
    দূত বলিল, সৈন্যরা হাইজ্যাকড হয়ে গেছে প্রভু। 
    পবনপুত্র বলিলেন, সে আবার কী? 
    দূত বলিল, এক তৃণস্য তৃণ সভাসদ, যে এমনকি ভোট দিতেও যায়নি, সে একটা ডিজে বক্স এনেছিল প্রভু। আমাদের সৈন্যরা তার পিছনে পিছনে দৌড়েছে। 
    পবনপুত্র ভয়ঙ্কর রাগিয়া কহিলেন, দৌড়েছে মানে? এরা পাঁঠা না ছাগল? 
     দূত বলিল, কোনোটাই নয় প্রভু, এরা বানর। সভাসদ এক কাঁদি কলাও এনেছেন। আমাদের বানর এখন ওদের বানর। 

    পবনপুত্র এবার ভয়ঙ্কর রাগিয়া গেলেন। সেনা দখল, তাও কলা দেখাইয়া? ইহারা কি মানুষ, থুড়ি বানর? গর্জে উঠিয়া কহিলেন, আর সৈন্য লাগবেনা। যা আছে তাই দিয়েই দখল করব। ডেডলাইন ১০ টা। চালাও ডিজে। 

    বলামাত্র ডিজে পেটিকা গর্জিয়া উঠিল। "ঘোড়া চাইলে ছোলা দুঙ্গা, হনু চাইলে কলা দুঙ্গা" গর্জনে দিগ্বিদিক মুখরিত হইল। খোলা তলোয়ার এবং মসৃণ গদা লইয়া বানরসেনা নৃত্য করিতে শুরু করিল। রাজ্যবাসীর কর্ণপটাহ বিদীর্ণ হইবার উপক্রম। রাম সান্ধ্যকালীন মৌতাতের আশায় পদ্মকাননের দিকে যাইতেছিলেন, তাঁহার মৌতাত ছুটিয়া গেল। বিরক্ত হইয়া তিনি বলিলেন, এত চিৎকার কীসের? রাজ্যদখল কি হয়ে গেল? 

    পবনপুত্র করজোড়ে কহিল, প্রায়। যাদবদের রাজত্ব যাদবপুর দখল করতে যাচ্ছি স্যার। ওটা দখল করলেই তো প্রতীকী রাজ্যজয়। বাকিটার আর দরকার নেই। 
    শুনিয়া অবশিষ্ট বানর সেনা লাঙ্গুল দুলাইয়া রণধ্বনি দিয় উঠিল। ঘোড়া চাইলে ছোলা দুঙ্গা, হনু চাইলে কলা দুঙ্গা।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • MP | 2401:4900:314f:b7f9:391c:e00:68a7:***:*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪৯542155
  • অসাধারণ লিখেছেন দাদা l লিখতে থাকুন l 
  • Sara Man | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০৯542167
  • চমৎকার, দিল মাঙ্গে মোর। 
  • Saikater Oboidho Baap | 2401:4900:8828:3849:30a4:a845:84ce:***:*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:০৬542171
  • এবাৰ মোহাম্মাদ কীভাবে  আয়েশা   কে চুদেছিলো সেটা নিয়ে একটা পোস্ট কর |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন