এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  নাটক  শনিবারবেলা

  • প্রতিমানাটক - ১ম অঙ্ক

    শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
    নাটক | ০৪ মে ২০২৫ | ৪৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অঙ্ক ১

    প্রতিমানাটক নামে মহাকবি ভাসের একটি নাটক আছে। আমাদের এই নাটকটি ভাসের নাটকের বঙ্গানুবাদ নয়। এর পরিণতি ভিন্ন। প্রথম অঙ্কের প্রেক্ষাপটটি ভাসের অনুসারী এবং প্রেক্ষাপটের যুক্তিতেই কয়েকটি সংলাপ প্রায়-অনুবাদ। তাঁর নিজের সময়ে ভাস ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী নাট্যকার; আমি ভাবতে ভালোবাসি, আজকের দিনে লিখলে ভাসের নিজের নাটকটিও হয়তো এই ধরণের কোন পরিণতি পেতে পারতো। মহাকবির মূল নাটকটি ছাড়াও এ নাটক রচনায় আমি শ্রদ্ধেয় রাজশেখর বসুর বাল্মিকী রামায়ণের সারানুবাদটি ব্যবহার করেছি। যাঁরা এই রামায়ণটি পড়েছেন তাঁরা জানেন বাংলায় চলিত ভাষার ভঙ্গীতে সাধু ভাষার ব্যবহারে রাজশেখর বসু শুধুমাত্র সিদ্ধহস্তই ন'ন, কোন কোন জায়গায় তাঁর ভাষার কোন বিকল্পই হয় না, ফলত সে রকম দু-একটি জায়গায় আমার নাটকের সংলাপ প্রায় রাজশেখরের রচনা থেকে হুবহু নেওয়া হয়েছে। কৃতজ্ঞতা জানাবার প্রশ্ন নেই, তাঁর ভাষাটি এখন আমাদের উত্তরাধিকার। নাটকের শেষ অঙ্কে দূতের দুর্মুখ নামটি ভবভূতির উত্তররামচরিত থেকে নেওয়া।

    ১ম অঙ্ক
    নাটকটি শুরু হওয়ার সময়, পর্দা উন্মোচনের আগেই, ভেতর থেকে আরতির ঘন্টাধ্বনি শোনা যায়,
    কোন পূজার আভাস। পর্দা যখন ওঠে, নান্দী সদ্য শেষ হয়েছে। একটি হাতলবিহীন চেয়ারকে
    কাপড়ে আবৃত করে নান্দী তৈরি করা যায়, সেটি ফুল এবং মালায় শোভিত। পর্দা উঠলে দেখা যাবে
    দুজন লোক ধরাধরি করে নান্দীকে সরিয়ে নিয়ে যায়, তাদের বিপরীত দিক দিয়ে সূত্রধার প্রবেশ করে।


    সূত্রধার। সুগ্রীবী, সীতাপতি, লক্ষ্মণাত্মা, রাবণঘ্ন, সর্বজনপালক শ্রীরামচন্দ্র, দেবীর সঙ্গে একীভূত হয়ে জন্ম জন্মান্তর আমাদের রক্ষা করুন (উত্তোলিত হাতে করতলদ্বয় যুক্ত করে নমস্কার করে) । (ভেতরের দিকে তাকিয়ে) আর্যে, এসো এসো।

    নটী। (প্রবেশ করে) এসেছি আর্য, এই তো আমি।

    সূত্রধার। এলে? ও, আচ্ছা, এই শরৎকালে একটা শরতের গান হোক না―

    নটী। হোক। (নাচ ও গান)


    শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।
    ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।
    শরৎ, তোমার শিশির-ধোয়া কুন্তলে
    বনের পথে লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে
    আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।
    মানিক-গাঁথা ওই-যে তোমার কঙ্কণে।
    ঝিলিক লাগায় তোমার শ্যামল অঙ্গনে।
    কুঞ্জছায়া গুঞ্জরণের সংগীতে
    ওড়না ওড়ায় এ কী নাচের ভঙ্গিতে,
    শিউলিবনের বুক-যে ওঠে আন্দোলি।


    সূত্রধার। শুধু শিউলিবন কেন, কাশবন? আর সাদা শিউলি-সাদা কাশের মতো সাদা হাঁস? আর সাদা হাঁসের নদীতীরে দ্রুত বিচরণ?

    নটী। হ্যাঁ, বুঝেছি। (উইংসের ভেতরে আঙুল দেখিয়ে নির্দেশ করে) ঐ রাজবাড়িতে প্রতিহাররক্ষীর দ্রুত বিচরণের মতো?


    (নেপথ্যে আর্য আর্য শোনা যায়)


    সূত্রধার। চলো, দেখি। (দুজনের প্রস্থান, আর্য আর্য বলতে বলতে প্রতিহারীর প্রবেশ)

    প্রতিহারী। (নটী-সূত্রধার যেদিক দিয়ে প্রস্থান করে তার বিপরীত দিকের উইংসের দিকে তাকিয়ে) আর্য! কাঞ্চুকীয়রা কেউ আছেন নাকি এখানে?

    কাঞ্চুকীয়। (প্রবেশ করে) হ্যাঁ, এই তো। কেন, কী দরকার?

    প্রতিহারী। আমাদের মহারাজ, রথিশ্রেষ্ঠ রাজরাজেশ্বর দেবাসুরসংগ্রামে অপ্রতিহত রাজাধিরাজ দশরথ, আদেশ করছেন যে তাঁর উত্তরাধিকারীর অভিষেকের যাবতীয় উপকরণ যেন এখনই আনা হয়।

    কাঞ্চুকীয়। হ্যাঁ হ্যাঁ, যা যা আনার কথা ছিলো আর যেভাবে সাজানোর কথা ছিলো সে সবই তো হয়েছে। এই দেখুন না, (যে দিক দিয়ে প্রতিহারী প্রবেশ করেছে উইংসের সেই দিক নির্দেশ করে) চামর আনা হয়েছে, কাড়া-নাকাড়া এবং মঙ্গলাসন ঠিক ঠিক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে, তীর্থবারিতে মঙ্গলঘটগুলি পূর্ণ করা হচ্ছে, মহাঋষি বশিষ্ঠ তাঁর আসনে বসেছেন, মন্ত্রী-অমাত্য সকলেই উপস্থিত, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের রাজন্যবর্গ নিজের নিজের আসন গ্রহণ করেছেন, পৌরবর্গ এবং অগণিত কৌতূহলী প্রজাবর্গের আনন্দধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

    প্রতিহারী। পেটিকাটি?

    কাঞ্চুকীয়। কোন্‌ পেটিকার কথা বলছেন?

    প্রতিহারী। এই যে এতজন সমবেত হয়েছেন, রাজপ্রাসাদে প্রবেশের সময় এঁদের প্রত্যেককে নিজ নিজ মত নির্দেশ করার জন্য যে লেখ্যপত্র দেওয়া হয়েছিলো তার গণনা শেষ করে যে পেটিকাতে রাখা হয়েছিলো সেটি কি আনা হয়েছে?

    কাঞ্চুকীয়। রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী নির্বাচনের জন্য যে লেখ্যপত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো, তার কথা বলছেন?

    প্রতিহারী। হ্যাঁ, সেটিই তো এই মুহূর্তে সর্বাপেক্ষা জরুরী উপকরণ। সেটি না এলে কার অভিষেক হবে? কে অভিষিক্ত হবেন?

    কাঞ্চুকীয়। মহারাজের আদেশ অনুসারে পেটিকাটি কোষাগারে বিশেষভাবে রক্ষিত আছে। মহারাজ আদেশ দিলেই সেটি আনীত হবে।

    প্রতিহারী। তাহলে রক্ষীপ্রধানকে আপনি খবর দিন।


    দৃশ্যটি বদলিয়ে যায়। রাজসভা। মহাঋষি বশিষ্ঠ, রাজপুরোহিত, মহারাজ
    দশরথ, আমন্ত্রিত রাজন্যবর্গ, বসে আছেন এবং অগণিত প্রজা দাঁড়িয়ে।


    দশরথ। মহাঋষি বশিষ্ঠ এবং কুলপুরোহিত বামদেবকে প্রণাম জানিয়ে আজকের বিশেষ সভা পরিচালনার অনুমতি চাইছি।


    বশিষ্ঠ এবং বামদেব কথা না বলে আশীর্বাদের ভঙ্গীতে হাত তোলেন এবং অনুমতির ইঙ্গিত দেন।


    দশরথ। ইক্ষ্বাকুবংশীয় নরপতিরা এই কোশলরাজ্যের প্রজাদের যুগ যুগ ধরে পুত্রবৎ প্রতিপালন করে আসছেন আপনারা তা জানেন। আমিও আমার পূর্বপুরুষদের নির্দেশিত পথেই রাজ্যচালনার চেষ্টা করে এসেছি। বহু সহস্র বৎসর আমার বয়স হয়েছে, আমার শরীর এখন জীর্ণপ্রায়, প্রজাদের মঙ্গলার্থেই আমার এখন বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। রামসহ আমার চার পুত্র আমার যাবতীয় গুণের অধিকারী হয়েছেন জন্মসূত্রেই। এঁদের যে কোন একজনই পুত্রবৎ প্রজাপালন করার যোগ্য। এবং এমনকি আমার পুত্ররা ছাড়াও উপস্থিত রাজন্যবর্গের মধ্যে অনেকেই এ যোগ্যতা রাখেন আমি তা জানি। প্রজারাই আমার এ রাজ্যের প্রধান ও মূল চালিকাশক্তি। আমার অবসর গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই আমি তাঁদের সুখবৃদ্ধি করতে ইচ্ছা করি। আমি এ রাজ্যে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

    বশিষ্ঠ। এ ভূমিকা আপনার অপ্রয়োজনীয় মহারাজ, আমি নিশ্চিত এখানে উপস্থিত সবাই আপনার জ্যেষ্ঠপুত্র রামকে
    সিংহাসনে দেখতে চাইবে।


    সভায় সমবেত রাম রাম ধ্বনি শোনা যায়


    দশরথ। রামের প্রতি আপনাদের আস্থা এবং শুভেচ্ছা দেখে কৃতার্থ হলাম। কিন্তু আমি বোধ হয় আমার অভিলাষ আপনাদের ঠিক ঠিক বোঝাতে পারিনি। রাম শব্দের একটি বিশেষ অর্থ হলো, যিনি কার্যে রত করান। রাজত্ব চালানো প্রজাগণের স্বার্থে; রাজত্ব চালানোর যে কাজ, সেই কাজে রত করানোর দায়িত্ব অতএব প্রজাদের। অর্থাৎ প্রজারা যখন কার্যে রত করান তখন রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।

    সমবেত। সাধু সাধু।

    দশরথ। আমি আপনাদের বলেছিলাম প্রজাদের আমি সুখবৃদ্ধির ইচ্ছা করি। আমি মনে করি প্রজাবৃন্দ যে ব্যক্তিকে রাজকার্যে রত করাবেন, তাঁরই রাজা হওয়া উচিত। তিনি যা প্রতিষ্ঠা করবেন, তা-ই রামরাজ্য। আজ এ সভায় সমস্ত রাজ্যবাসীর নিমন্ত্রণ ছিলো। আপনারা প্রাসাদে প্রবেশ করার সময় আপনাদের প্রত্যেককে একটি করে লেখ্যপত্র দেওয়া হয়েছিলো এই সিংহাসনে প্রতিটি ব্যক্তি স্বতন্ত্রভাবে কাকে অভিষিক্ত দেখতে চান তা নির্দেশ করার জন্য। আপনারা সবাই নিজেদের স্বতন্ত্র মত ব্যক্ত করেছেন কি?

    সমবেত। করেছি মহারাজ।

    দশরথ। এমন একজনও কি আছেন যিনি করেননি অথবা করতে পারেননি? (সভা নিরুত্তর।) তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি আজ এখানে যাঁর অভিষেক হবে তিনি প্রজাদের দ্বারা নির্বাচিত?

    সমবেত। হ্যাঁ মহারাজ।

    দশরথ। তিনিই হবেন রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা?

    সমবেত। হ্যাঁ মহারাজ।

    দশরথ। রক্ষীপ্রধান, আপনি পেটিকাটি সভাস্থলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন।

    রক্ষীপ্রধান। পেটিকা এই সভার বাইরেই আছে, শত প্রহরী দ্বারা রক্ষিত। ইঙ্গিত করলেই তারা নিয়ে আসবে।

    দশরথ। ইঙ্গিত করুন।


    রক্ষীপ্রধান উইংসের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করেন, চার জন বাহক একটি পেটিকা বহন
    করে নিয়ে এসে সভার কেন্দ্রস্থলে একটি বিশেষভাবে নির্মিত মঞ্চের ওপর রাখে।


    দশরথ। মহামাত্য সুমন্ত্র, লেখ্যপত্রগুলি পরীক্ষা এবং গণনা করেছেন কে?

    সুমন্ত্র। আমি নিজেই করেছি মহারাজ।

    দশরথ। সভাস্থ সকলের মহামাত্য সুমন্ত্রের গণনার উপর আস্থা আছে?

    সমবেত। আছে।

    দশরথ। যদি একজনেরও আস্থা না থাকে অনুগ্রহ করে নির্দেশ করুন। (সভা নিরুত্তর) তাহলে আমরা ধরে নিচ্ছি এই গণনাই প্রজাবর্গের নির্বাচন সূচিত করবে। মহামাত্য সুমন্ত্র, আপনি আপনার গণনার ফলাফল লিপিবদ্ধ করে এই পেটিকাতেই রেখেছেন?

    সুমন্ত্র। হ্যাঁ মহারাজ, এই পেটিকাতেই।

    দশরথ। এটি কি আপনি নিজস্ব শিলমোহর দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিলেন?

    সুমন্ত্র। রেখেছিলাম, মহারাজ।

    দশরথ। তাহলে আপনি পরীক্ষা করে দেখে নিন শিলমোহরটি অটুট আছে কিনা।

    সুমন্ত্র। (সুমন্ত্র এগিয়ে এসে পরীক্ষা করেন) হ্যাঁ মহারাজ, অটুট।

    দশরথ। রক্ষীপ্রধান, আপনি ফলাফলটি অনুগ্রহ করে পড়ুন। জোরে পড়তে হবে, সবাই যাতে শুনতে পায়।

    রক্ষীপ্রধান। (শিলমোহর ভেঙে পেটিকাটি খুলে একটি দলিল বের করেন) এই পেটিকাতে এই দলিলটি আছে। আমি মহামাত্যকে অনুরোধ করবো দলিলটি পরীক্ষা করে সভাস্থ ভদ্রমণ্ডলীকে অবহিত করতে দলিলের স্বাক্ষরটি তাঁর নিজের কিনা।


    সুমন্ত্র এগিয়ে এসে রক্ষীপ্রধানের হাত থেকে দলিলটি নিয়ে সেটি দেখে আবার ফিরিয়ে দেন


    সুমন্ত্র। (উচ্চস্বরে) হ্যাঁ, এটি আমারই স্বাক্ষরিত দলিল।

    রক্ষীপ্রধান। মহামাত্য সুমন্ত্র এই সংক্ষিপ্ত দলিলটিতে এই বাক্যসমূহ লিখেছেন: (দলিল দেখে) প্রতিটি লেখ্যপত্র আমি পড়েছি। নির্দেশ ছিলো লেখ্যপত্রে মতদাতা যেন স্বাক্ষর না করেন। তৎসত্ত্বেও তিনজন মতদাতা হয়তো অনবধানতাবশত তাঁদের লেখ্যপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। সেগুলি অতএব গণনার জন্য গ্রহণ করা হয়নি। বাকি সমস্ত লেখ্যপত্র আমি পরীক্ষা করেছি, এবং অবাক হয়েছি প্রতিটি লেখ্যপত্রেই একটি মাত্র নাম দেখে। অর্থাৎ সমস্ত মতদাতাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে একজনকেই যোগ্যতম মনে করেছেন। নামটি ঘোষণা করার আগে আমি আপনাদের জানাতে চাই যে সকলের মতের এই অতি আশ্চর্য সমাপতন দেখে কৌতূহল নিবৃত্ত করতে না পেরে আমি অগ্রাহ্য লেখ্যপত্র তিনটিও পরীক্ষা করি। আশ্চর্য, মহাশ্চর্য, এই তিনটি লেখ্যপত্রেও ঐ একই নাম! অর্থাৎ কোশলরাজ্যের প্রজাবৃন্দ, সমস্ত কর্মচারি ও অমাত্যবৃন্দ, মহারাজের সকল উপদেষ্টা এবং প্রতিবেশী রাজন্যবর্গ, প্রত্যেকেই স্বতন্ত্রভাবে, একজনকেই এ রাজ্যের সিংহাসনে অভিষিক্ত দেখতে ব্যগ্র। এ মতের বিরোধী কেউ নেই। কোশলের ভবিষ্যৎ সেই প্রজাপালকের নাম শ্রীরামচন্দ্র।


    কোলাহল শুরু হয়। “শ্রীরামচন্দ্রের জয়”, “অভিষেক, অভিষেক” – এই ধ্বনিতে মুখরিত
    হয়ে ওঠে সভাস্থল। কিছুক্ষণ নীরবতার পর দশরথ হাত তুলে সভাস্থ সকলকে থামান


    দশরথ। আমি আজ মহাসুখী, আমি ঈশ্বরের এবং ইক্ষ্বাকুবংশের কুলগুরু মহাঋষি বশিষ্ঠ এবং কুলপুরোহিত মহাসম্মানিত বামদেবের আশীর্বাদধন্য। আজকের অভিষেকের পর কোশলরাজ্যে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এবং এ অপেক্ষা সুখকর আর কী হতে পারে যে এই রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র! সভাস্থ সকলকে আমি অনুরোধ করব আপনারা আনন্দ করুন, উৎসব করুন, বিভিন্ন ভোজনকক্ষে খাদ্যের যে আয়োজন করা হয়েছে তা গ্রহণ করে আমাকে এবং ইক্ষ্বাকুবংশকে কৃতার্থ করুন, এবং সেই অবসরে অভিষেকের আয়োজন সম্পূর্ণ হোক।


    কাড়া-নাকাড়া বেজে ওঠে। “অভিষেক, অভিষেক”, “শ্রীরামচন্দ্রের জয়” ইত্যাদি ধ্বনি সহযোগে মঞ্চের একটি
    দিক দিয়ে এক এক করে সভাস্থল থেকে সবাই বেরোতে শুরু করেন। ক্রমে সভাস্থল খালি হয়ে যায়, তিনজন
    তখনও বসে থাকেন: মহারাজ দশরথ, মহাঋষি বশিষ্ঠ এবং বামদেব। যখন মনে হয় দশরথ বশিষ্ঠকে কিছু
    বলতে চাইছেন ঠিক সেই মুহূর্তে সকলে উইংসের যে দিক দিয়ে বেরিয়েছেন তার বিপরীত দিক দিয়ে কুব্জা
    মন্থরা এবং তার অনুগামী হয়ে রানি কৈকেয়ী প্রবেশ করে ধীরে, অতি ধীরে দশরথের দিকে সোজা হেঁটে যান।
    জয়ধ্বনি এবং কাড়া-নাকাড়ার ধ্বনি চলতেই থাকে, পর্দা নেমে আসে। পর্দা নামানো অবস্থাতেই নেপথ্যে একটি পুরুষকণ্ঠ শোনা যায়।


    পুরুষকণ্ঠ। হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনি সহ-পুরোহিত এবং তন্ত্রধারককে খবর দিন, অযথা সময় নষ্ট করবেন না। অতিথি-অভ্যাগতের খাদ্যগ্রহণ শেষ হলেই অভিষেকের কাজ শুরু করতে হবে, এই মহারাজের আদেশ। সারসিকে! সারসিকে! তুমি একবার সঙ্গীতশালায় যাও। সেখানে নটনটীদের বলো সময়োপযোগী একটা নাটকের প্রযোজনা হবে। তারা যেন প্রস্তুত থাকে। তাদের মনে করিয়ে দিও বিস্তর অতিথি-অভ্যাগত আছেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের রাজন্যবর্গও আছেন। নাটক যেন উপভোগ্য হয়, কোশলরাজ্যের শিল্পীদের বদনাম যেন না হয়। আর আমিও এদিকে মহারাজকে বলে আসি যে সব ঠিকঠাক আছে।


    দৃশ্যান্তর। মঞ্চটি অসমান দু্টি ভাগে বিভক্ত। বড় অংশটি আলোকিত, ছোটটি
    অন্ধকারে থাকবে। আলোকিত অংশে অবদাতিকা প্রবেশ করছে, এবং সংলাপ বলছে।


    অবদাতিকা। ওঃ বাপরে বাপ! ঘেমে নেয়ে যাচ্ছি! মজার ছলে বল্কলটা চুরি করেও এত ভয়! তাহলে সত্যিকারের চোরদের কী অবস্থা হয়! ভয়ও পাচ্ছে, হাসিও আসছে আবার। তার চেয়ে হাসিই না! না বাবা, একা একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছি দেখলে লোকে কী বলবে!
    (সঙ্গীসাথীসহ সীতার প্রবেশ)

    সীতা। ব্যাপারটা কী? অবদাতিকাকে একটু অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে না! এদিকে দরদর করে ঘামছে, কিন্তু মুখটা কেমন হাসি হাসি করার চেষ্টা করছে মনে হচ্ছে!

    চেটী। ও নির্ঘাত কিছু একটা কাণ্ড করেছে ভট্টিনী। চারধারে এত কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে, অনেকেই লোভ সামলাতে পারে না।

    সীতা। না না, মুখটা দেখ্‌ না, হাসি চাপতে পারছে না মনে হচ্ছে।

    অবদাতিকা। (এগিয়ে এসে) সত্যি বলছি ভট্টিনী, আমি কিন্তু করিনি কিছু।

    সীতা। হুঁ হুঁ, কিছু যে তুই করিসনি সে তো বুঝতেই পারছি! তোকে জিজ্ঞেসটা করেছে কে যে 'আমি কিন্তু কিছু করিনি'! হ্যাঁ রে, তোর বাঁ হাতে ওটা কী?

    অবদাতিকা। ওটা কিছু নয়, ও একটা বল্কল।

    সীতা। বল্কল? বল্কল কেন?

    অবদাতিকা। তাহলে শুনুন ভট্টিনী। আজ মহলা-টহলা সব শেষ হবার পর নেপথ্যপালিকা যখন সব কিছু গুছিয়ে-টুছিয়ে তুলে রাখছিলেন, আমি একটা পল্লব চেয়েছিলাম। একটা পল্লব শুধু, আর কিছু নয়! তা-ও নেপথ্যপালিকা আমায় দিলেন না। আমি ভাবলাম ঠিক আছে, জব্দ করবো। তাই এই বল্কলটা নিয়ে এসেছি, লুকিয়ে রাখবো!

    সীতা। এটা ঠিক করিসনি অবদাতিকা। যা যা, ফেরত দিয়ে আয়।

    অবদাতিকা। আমার মনে কোন পাপ নেই ভট্টিনী। শুধু মজা করার জন্যই এনেছি।

    সীতা। ফিরিয়ে দিয়ে আয়, ফিরিয়ে দিয়ে আয়। তোর মনে পাপ নেই আমি জানি, কিন্তু এই করে করেই অপরাধ বেড়ে যায়।

    অবদাতিকা। তাহলে দিয়েই আসি ভট্টিনী। (ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এগোতে থাকে)

    সীতা। এই শোন্‌ অবদাতিকা, এদিকে আয় তো একবার। (অবদাতিকা সীতার দিকে আসে ― বল্কলটা দেখিয়ে) এটা পরলে আমাকে কেমন দেখাবে রে? মানাবে?

    অবদাতিকা। মানাবে না আবার! যার রূপ আছে সে যা পরে তাতেই মানায়। পরুন না আপনি।


    (সীতা বল্কলটি পরতে শুরু করে, অবদাতিকা সাহায্য করে)


    অবদাতিকা। হ্যাঁ, বাঁ হাতটা তুলুন। ব্যস। দেখুন না কেমন মানিয়েছে আপনাকে। বল্কল যেন সোনা হয়ে গেছে, সোনার বল্কল!

    সীতা। সোনা বললি বলে মনে পড়ে গেলো, বল্কলের সঙ্গে এই সব সোনার অলঙ্কার মানাবে? দাঁড়া দাঁড়া, এগুলো খুলে ফেলি।


    একটি একটি করে অলঙ্কার খুলে ছোট একটি পেটিকায় রেখে পেটিকাটি পাশে রেখে দেয়


    অবদাতিকা। অলঙ্কার আপনি যতই খুলুন এই বল্কল আজ অলঙ্কার হয়ে কী শোভাই না বাড়িয়েছে আপনার!

    সীতা। (চেটীকে) হ্যাঁরে, তুই যে কিছু বলছিস না!

    চেটী। বেশি কথায় কী কাজ! (নিজের হাত তুলে দেখিয়ে) এই দেখুন না, আমার কেমন রোমাঞ্চ হচ্ছে!

    সীতা। রোমাঞ্চ হচ্ছে! হ্যাঃ, বাড়াবাড়ি! একটা আয়না নিয়ে আয় তো দেখি।


    (চেটি উইংসের ভেতরে ঢুকে যায়, একটা আয়না নিয়ে আসে, কিন্তু মুখে একটা চাপা উত্তেজনা)


    চেটী। এই যে আয়না, দেখুন না।

    সীতা। থাক আয়না। ( (চেটীর মুখের দিকে একটু ভালো ভাবে তাকিয়ে)( তুই যেন কিছু একটা বলতে চাইছিস মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা কী?

    চেটী। এইমাত্র শুনে এলাম কাঞ্চুকীয় কাকে যেন 'অভিষেক' 'অভিষেক' বলছেন!

    সীতা। তাই নাকি! তা হবে হয়তো কারোর কিছু একটা অভিষেক।


    (আর একজন চেটীর প্রবেশ)


    ২য় চেটী। কারোর কিছু একটা নয় ভট্টিনী, সুখবর আছে, সুখবর।

    সীতা। কী সুখবর?

    ২য় চেটী। কুমার শ্রীরামচন্দ্রের অভিষেক হবে।

    সীতা। অ্যাঁ, বলিস কী! আমার শ্বশুরমশাই মহারাজ দশরথ ভালো আছেন তো?

    ২য় চেটী। মহারাজ নিজেই তো উদ্যোগ নিয়ে অভিষেকের ব্যবস্থা করছেন।

    সীতা। হ্যাঁ, তাহলে তো মানতেই হবে সুখবর। (দুজন চেটী এবং অবদাতিকাকে) তোরা তিন জন আঁচল পাত তো।


    আঁচল পাতে, সীতা পাশের পেটিকা থেকে অলঙ্কার নিয়ে তিনজনকেই একটা করে অলঙ্কার দেন, নেপথ্যে পটহের শব্দ শোনা যায়


    অবদাতিকা এবং চেটীদ্বয়। পটহের শব্দ ভট্টিনী, উৎসব শুরু হলো বোধ হয়।

    সীতা। তা-ই হবে।

    ১ম চেটী। কিন্তু একবার বেজেই থেমে গেলো কেন? দেখি তো ― (ভেতরে চলে যায়)

    সীতা। কোন প্রতিবন্ধক নাকি?

    ১ম চেটী। (ফিরে এসে) ভট্টিনী, আমি শুনে এলাম কুমারের অভিষেকের পর মহারাজ বনে যাবেন।

    সীতা। মহারাজ বনে যাবেন? সে কী!


    ধীরে ধীরে মঞ্চের এই অংশ অন্ধকার হয়ে যায়, পাশের ছোট অংশের আলো জ্বলে ওঠে। সেখানে রাম প্রবেশ করেন


    রাম। (প্রবেশ করতে করতে) একটু অদ্ভুত হলেও ভালো-ই হলো। মানে, মহারাজ নিজেই ডেকে পাঠালেন অভিষেকের জন্য। এলাম যখন, দেখলাম কুলগুরু মহর্ষি বশিষ্ঠ এবং কুলপুরোহিত বামদেবের সঙ্গে বসে আছেন মহারাজ। আমি নির্দিষ্ট মঙ্গলাসনে বসলাম, পটহ বেজে উঠলো, স্কন্ধোস্থিত নতমুখ ঘট থেকে জল পড়তে শুরু হলো, এমন সময় মহারাজ আমাকে ডেকে বললেন, এখন কিছুদিন বিশ্রাম নাও। অসাধারণ! ভালোই হল! বেশ সুস্থই আছেন মহারাজ, প্রজারাও সুখেই আছে, এমন সময় হঠাৎ আমার অভিষেকের কথা শুনে একটু বিচলিতই হয়েছিলাম। এখন আমি যে-রাম সেই রামই রইলাম, আর মহারাজ মহারাজই রইলেন, এর চেয়ে ভালো আর কীই বা হতে পারে! কিন্তু আমি যেটা বুঝতে পারি না তা হচ্ছে এই নানা সভাসদের কথাবার্তা। আমি হাসিমুখে চলে আসছি দেখে একদল 'আহা, কী ধৈর্য, কী ধৈর্য' বলে উচ্ছ্বাস দেখাতে শুরু করলো। আরে, এতে এত অবাক হবার কী আছে! পিতা ডেকেছিলেন, পুত্র আমি, আমি এলাম। পিতা বললেন, এখন অভিষেক স্থগিত থাকবে। তো থাকবে! এতে এত অবাক হবার কী আছে! যাই, এখন বরঞ্চ সীতার সঙ্গে দেখা করে আসি।


    রাম মঞ্চের অন্য অংশটির দিকে এগোতে থাকেন, আগের অংশের আলো স্তিমিত হতে হতে
    একেবারে নিভে যায়, অন্য অংশটি আলোকিত হয়ে ওঠে। দর্শকের দৃষ্টি এখন সেই অংশে।


    অবদাতিকা। ভট্টিনী, কী লজ্জা কী লজ্জা! বল্কল খোলেননি এখনও! স্বয়ং কুমার রামচন্দ্র আসছেন যে।


    (রাম প্রবেশ করেন)


    রাম। সীতা এখানে কী করছো?

    সীতা। (স্বগত) তাই তো, আর্যপুত্রই দেখছি! (প্রকাশ্যে) আর্যপুত্রের জয় হোক।

    অবদাতিকা। (সীতার একেবারে কাছাকাছি এসে, চাপা গলায়) কুমার তো তাঁর সাধারণ পোষাকেই আছেন দেখছি। তাহলে কি ঐ অভিষেকের ব্যাপারটা...এ সব কি মিথ্যা?

    সীতা। কাঞ্চুকীয়র মতো মানুষ মিথ্যা বলবেন, এ বিশ্বাস করি না। কিছু একটা হয়েছে হয়তো, রাজসভার সব কথা কি বোঝা যায়?

    রাম। সীতা, কী এতো ফিসফাস চলছে?

    সীতা। না না, তেমন কিছু নয়। আসলে এই মেয়েটি অভিষেক সংক্রান্ত কিছু গুঞ্জন শুনেছে।

    রাম। হুঁ, তোমাদের কি-ব্যাপারে কৌতূহল বুঝতে পেরেছি। শোন তাহলে। আজ রাজসভায় আমাকে ডেকে পাঠিয়ে কুলগুরু এবং কুলপুরোহিতের আশীর্বাদ নিয়ে, অমাত্য ও আমলাবর্গ, প্রজাসাধারণ এবং বহু নিমন্ত্রিত রাজন্যবর্গের সামনে, আমাকে কোলে বসিয়ে সস্নেহে মহারাজ বললেন, পুত্র, এই রাজ্যের ভার গ্রহণ করো।

    সীতা। আপনি কি করলেন?

    রাম। তোমার কী মনে হয়?

    সীতা। আমার মনে হয় আপনি নির্বাক ছিলেন। স্পষ্টত মহারাজের আদেশ অমান্য আপনি নিশ্চয় করেননি, কিন্তু নির্বাক থেকে এবং তাঁর চরণে ভক্তিপূর্ণ প্রণাম করে রাজসিংহাসনে আপনার অনাসক্তি আপনি প্রকাশ করেছিলেন।

    রাম। ঠিকই ধরেছো। আশীর্বাদস্বরূপ পিতার স্নেহাশ্রু আমার মস্তকে, এবং আমার অশ্রু তাঁর চরণে, একই সঙ্গে পতিত হলো।

    সীতা। তারপর?

    রাম। পিতার অনেক অনুনয় সত্ত্বেও আমি যখন রাজ্যগ্রহণে আমার অনিচ্ছা প্রকাশ করতেই থাকলাম, পিতা তখন দিব্যি দিলেন! দিব্যি, দিব্যি দিলেন! আমি অসম্মত হলে তাঁর জরাগ্রস্ত দেহের পরিণতির বিষয়ে তিনি আমাকে দিব্যি দিলেন।

    সীতা। তারপর?

    রাম। তারপর আর কী! লক্ষ্মণ আর শত্রুঘ্ন ঘট ধরলো, পিতা স্বয়ং আমার মাথায় রাজচ্ছত্র ধরলেন, পটহ বেজে উঠলো। অভিষেক যখন শুরু হতে চলেছে, হঠাৎ কুব্জা মন্থরা রাজসভায় প্রবেশ করে হাত তুলে অভিষেকে বাধা দিলো। তারপর ওর পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা দ্রুত এগিয়ে এসে নিম্নস্বরে মহারাজকে কিছু বললো। (এই পর্যন্ত বলে রাম হঠাৎ চুপ করে যান, নিঃশব্দে সামান্য পদচারণা করেন, তারপর হেসে) আমিও রাজা হলাম না!

    সীতা। ভালোই হলো তো। মহারাজ মহারাজই রইলেন, আর্যপুত্রও আর্যপুত্রই রইলেন। ভালোই হল, তাই না?

    রাম। (সীতাকে হঠাৎ ভালো করে পরখ করে) কিন্তু আর্যে, তুমি অলঙ্কার খুলে ফেলেছ কেন?

    সীতা। খুলিনি, খুলিনি। পরিইনি তো।

    রাম। (সীতার অবয়বে নিবিড় দৃষ্টিপাত করে) উঁহু, মানা গেল না। এই তো, যেখানে যেখানে অলঙ্কারগুলি চেপে বসেছিল, সে সব জায়গায় এখনও তার চিহ্ণ দেখা যাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে খুলতে গিয়ে কানের লতিগুলি আহত হয়েছে। তোমার হাতের তালু দুটি এখনো লাল; জোর করে চুড়ি বা বালা খোলার লক্ষণ; অলঙ্কার তুমি সদ্য খুলেছো!

    সীতা। বাবা বাবাঃ, আর্যপুত্র কেমন সাজিয়ে-গুছিয়ে, মিথ্যাকেও প্রায় সত্যের মতোই বলতে পারেন!

    রাম। (ঈষৎ আনমনা) না না না না, তুমি অলঙ্কার পর। (পাশে পড়ে থাকা আয়নাটি হঠাৎ দেখতে পেয়ে) অবদাতিকা, আয়নাটা আমাকে দাও তো, আমি আয়না ধরছি। নাও, তুমি অলঙ্কার পর। (আয়নাটা সীতার সামনে ধরেন, তারপর আয়নার ভেতর চোখ পড়তে) এ কী, এ কী, তোমার পরনে এটা কী? বল্কল নাকি? (এবার সীতার দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে, হেসে) সূর্যরশ্মি আমার, ঠিকই ধরেছি! এই তো, হেসে ফেলেছ তো! বল্কল পরেছ কেন? শুধুই কৌতুক, নাকি বিশেষ কোন ব্রত আছে? অবদাতিকা, ব্যাপারটা কী?

    অবদাতিকা। না, মানে পরলে কেমন দেখায়, মানায় কিনা, তাই বোঝার জন্য কৌতুক করেই পরেছেন উনি।

    রাম। কিন্তু তুমি কি জানো ইক্ষ্বাকুরাজন্যবর্গ বার্ধক্যে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন? না জেনে তুমি ইক্ষ্বাকু বংশের বার্ধক্যের অলঙ্কার পরেছো! তা বেশ তো, আমারও এ অলঙ্কার বেশ লাগে; অবদাতিকা, আর একটা বল্কল আনো তো।

    সীতা। (সন্ত্রস্ত) না না আর্য, এ অলক্ষুণে কথা। এ কথা মুখেও আনবেন না।

    রাম। কেন, কী হল?

    সীতা। না না, অভিষেক হতে গিয়েও হল না, এতে অমঙ্গল সূচিত হল না?

    রাম। আরে দূর, অমঙ্গল কিসের? অনর্থক দুশ্চিন্তা কোরো না সীতা। আর তাছাড়া, মজা করে তুমি তো আগে থেকেই বল্কল পরেছিলে! (হেসে) আরে যা বল তা বল অর্ধাঙ্গিনী, তুমি যে-অঙ্গে যা আগের থেকেই পরে বসে আছ তা তো আমারই অর্ধাঙ্গ!


    (হঠাৎ নেপথ্যে মহারাজ! মহারাজ! বিলাপ)


    সীতা। কিসের বিলাপ আর্যপুত্র?

    রাম। কিসের বিলাপ! নারীপুরুষের সমবেত ক্রন্দনধ্বনি শুনছি। দৈবসৃষ্ট কোন অনিষ্ট নিশ্চয়ই। অবদাতিকা, দেখে এস তো কী ব্যাপার।


    (কাঞ্চুকীয় প্রবেশ করেন)


    কাঞ্চুকীয়। রক্ষা করুন কুমার, রক্ষা করুন।

    রাম। রক্ষা করবো? কাকে রক্ষা করবো?

    কাঞ্চুকীয়। মহারাজকে।

    রাম। মহারাজকে রক্ষা করতে হবে! কে রক্ষা করবে, আমি? যাবতীয় বিশ্ব-চরাচর যাঁর দেহে লীন, সেই পিতাকে রক্ষা করব আমি! কিন্তু হলটা কী? কোথা থেকে এল বিপদ?

    কাঞ্চুকীয়। কোথা থেকে বিপদ এল? আর্য, অপরাধ নেবেন না, বিপদ এল স্বজনের থেকে।

    রাম। স্বজনের থেকে? তাহলে সে বিপদ থেকে মুক্ত করবে কে? শত্রু যখন আঘাত করে, সে করে শরীরে। তার চিকিৎসা আছে। স্বজনের আঘাত তো হৃদয়ে, অন্তরের অন্তঃস্থলে। কে এই স্বজন?

    কাঞ্চুকীয়। (স্বগত) কীভাবে বলি! (স্পষ্টত) মাননীয়া কৈকেয়ী, আঘাত মাননীয়া কৈকেয়ীর কাছ থেকে!

    রাম। কী বললেন, মা কৈকেয়ী? না না, আপনি ভুল বুঝেছেন আর্য, ভুল বুঝেছেন। তাহলে আপাতবিপদ মনে হলেও পরিণামে নিশ্চয়ই বিপদ নেই, পরিণাম শুভ হতে বাধ্য। ইন্দ্রতুল্য বীর মহারাজ দশরথ যাঁর স্বামী, ভরত-লক্ষ্মণ-শত্রুঘ্ন এবং আমি যাঁর পুত্র, কোন্‌ ইচ্ছাপূরণের আশায় তিনি অন্যায় করবেন?

    কাঞ্চুকীয়। আপনি আপনার যোগ্য কথাই বলেছেন। কিন্তু আপনার স্বাভাবিক সারল্যে স্ত্রী-বুদ্ধির কৌটিল্য বিচার করবেন না। কুমার, আপনি কি জানেন তাঁর ইচ্ছাতেই আপনার অভিষেক বন্ধ হয়েছে?

    রাম। ভালোই তো হয়েছে আর্য।

    কাঞ্চুকীয়। ভালো হয়েছে? কিরকম?

    রাম। ভালো হয়নি! এই দেখুন না, মহারাজকে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করতে হল না, প্রজানুরঞ্জক এই রাজার উত্তরসুরী কেমন হবে এ ব্যাপারে প্রজাদের কোন দুশ্চিন্তা রইল না, দায়িত্বের থেকে মুক্তি পেয়ে আমিও শৈশবের আনন্দেই থাকলাম, আর দশরথপুত্রদের ভোগসুখও অটুট রইল। এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?

    কাঞ্চুকীয়। তবে শুনুন। বিনা আহ্বানে অভিষেক-সভায় এসে কৈকেয়ী মহারাজকে বললেন, রাজ্যে রামকে নয়, ভরতকে অভিষিক্ত করা হোক্‌। এর পরেও জিজ্ঞাসা করবেন কোন্‌ ইচ্ছাপূরণের আশায় কৈকেয়ী অন্যায় করবেন? বলবেন, তাঁর লোভ নেই?

    রাম। আমার প্রতি অতিরিক্ত স্নেহবশত আপনি একদেশদর্শী হচ্ছেন আর্য, আমার দিকটাই দেখছেন শুধু। আসল সত্যটা কিন্তু আপনার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে।

    কাঞ্চুকীয়। কোন্‌টা আসল সত্য?

    রাম। তিনি তো প্রতিশ্রুত রাজ্যই চেয়েছেন ভরতের জন্য, স্বয়ং মহারাজ দশরথের প্রতিশ্রুতি; সেটাই লোভ? আর, কনিষ্ঠের রাজ্য অপহরণ করলেও আমি নির্লোভ হতাম?

    কাঞ্চুকীয়। আর তাছাড়া―

    রাম। ক্ষান্ত হোন আর্য, আর মাতৃনিন্দা শুনতে চাইনা আমি। আপনি বরঞ্চ মহারাজের সংবাদ বলুন।

    কাঞ্চুকীয়। শোকে নির্বাক মহারাজ সব শুনে ইঙ্গিতে আমাকে বিদায় দিলেন, আর তারপরেই মূর্ছিত হলেন।

    রাম। মূর্ছিত হলেন?



    নেপথ্যে কণ্ঠস্বর: মূর্ছিত হলেন? মহারাজকে এই যে মূর্ছায় ঠেলে দেওয়া হলো এ
    যদি সহ্য করতে না পারেন তাহলে ধনুর্গ্রহণ করুন, অস্ত্র হাতে নিন, আর দয়া নয়!


    রাম। এ কী! এ তো লক্ষ্মণের কণ্ঠস্বর! বীতক্ষোভ লক্ষ্মণকে এত বিচলিত করল কে? তার কণ্ঠস্বরে মনে হচ্ছে শত লক্ষ্মণ এক সঙ্গে কথা বলছে!


    (লক্ষ্মণের প্রবেশ)


    লক্ষ্মণ। ধনুর্গ্রহণ করুন, অস্ত্র হাতে নিন, আর দয়া নয়। স্বভাবতই যাঁরা কোমল, স্বজনদের প্রতি যাঁরা ক্ষমাশীল, তাঁরা এভাবেই লাঞ্ছিত হন। আপনার যদি রুচি না থাকে আর্য, তাহলে আমার ওপর ছেড়ে দিন। আমাদের বৃদ্ধ পিতার যুবতি ভার্যা কৈকেয়ী আপনাকে লাঞ্ছিত করেছেন। এই যুবতিই আপনার বঞ্চনার কারণ, আমি তাই প্রতিজ্ঞা করছি পৃথিবীকে আমি যুবতিহীন করে ছাড়ব।

    সীতা। স্বয়ং মহারাজ দশরথ অসুস্থ, এখন তো শোকের সময়, কান্নার সময়! এই সময় লক্ষ্মণ ধনুর্ধারণ করল! তার এরকম আচরণ তো পূর্বে কখনও দেখিনি।

    রাম। কী হল লক্ষ্মণ? তোমার এত উত্তেজনার কী কারণ?

    লক্ষ্মণ। কী হল জিজ্ঞাসা করছেন আপনি? উত্তরাধিকার-সূত্রে প্রাপ্য রাজ্য আজ শুধুমাত্র উত্তরাধিকার-সূত্রেই নয়, এমনকি প্রজাদি সকলের নির্বাচনেও আপনি প্রাপ্ত হতে-না-হতেই হাতছাড়া হয়ে গেল, অতর্কিত আঘাতে স্বয়ং মহারাজ অসুস্থ হয়ে ধূলিশয্যা নিলেন এখনও আপনার প্রশ্ন, কী হল? এখনো সন্দেহ? সংশয়? এখনও ক্ষমা? আর কত আত্মপ্রবঞ্চনা করবেন আর্য, কত অসম্মান মেনে নেবেন?

    রাম। বুঝেছি লক্ষ্মণ, আমার রাজ্যচ্যুতিই তোমার চাঞ্চল্যের কারণ, কিন্তু পুরো ব্যাপারটা ভেবে দেখ। এই আপাত রাজ্যচ্যুতি তোমার মতো সুবিবেচককে উতলা করবে কেন! আমি নই, কিন্তু ভরত তো রাজা হবে। তফাৎ কোথায়! আর ধনুর্বিদ্যার অহঙ্কার যদি তোমাকে আত্মসচেতন করেই থাকে, নিজের বিপুল শক্তি প্রদর্শনের জন্য তুমি যদি এতই ব্যগ্র হয়ে থাক, তাহলে তোমার কর্তব্য এখন ভরতকে রক্ষা করা।

    লক্ষ্মণ। আমার ভালো লাগছে না আর্য, আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। হোক্‌ যা খুশি, আমি চললাম!

    রাম। না না, শোন শোন। আমি তোমার ভ্রূকুটি দেখতে পাচ্ছি, তুমি অতিরিক্ত ক্রুদ্ধ হয়েছো, তোমার ক্রোধের পরিণাম মারাত্মক হতে পারে, এ তো তুমি জানো। এদিকে এসো লক্ষ্মণ, আমার কাছে এসো।

    লক্ষ্মণ। (কাছে এসে) বলুন আর্য।

    রাম। শোন, শান্ত হও। তিনটি অভিযোগ তোমার থাকতে পারে। ঠিক আছে, এক এক করে তিনটিই আমি বলছি, তারপর তার প্রতিকার তুমি নিজেই বেছে নিও। এ কথা ঠিকই যে পিতা আমাকে অভিষেকের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন, এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করতে পারেননি। পারেননি, অতএব কী করবো, ধনুর্গ্রহণ করবো তাঁর বিরুদ্ধে? মাতা কৈকেয়ী, যাঁকে তুমি বৃদ্ধস্য যুবতি ভার্যা বলে ইঙ্গিত করলে, তিনি তো শুধুমাত্র তাঁর প্রতিশ্রুত বরই গ্রহণ করেছেন। এতে অপরাধ কোথায়? এর জন্য কি তাঁর প্রতি বাণ নিক্ষেপ করবো? আর স্নেহাস্পদ অনুজ ভরত, সে তো কিছুই করেনি, এমনকি সে এখানে নেই পর্যন্ত। বলো লক্ষ্মণ, তাকে কি হত্যা করবো? আমাকে বলে দাও এই তিনটি পাতকের মধ্যে কোন্‌টা করলে তোমার ক্রোধ প্রশমিত হবে।

    লক্ষ্মণ। (সাশ্রুনেত্রে কপাল চাপড়িয়ে) আমিই হতভাগ্য, আমাকে কেউ বুঝবে না! এই যে অভিষেক বন্ধ করে দেওয়া হল, এই যে প্রাপ্য রাজত্ব থেকে আপনাকে বঞ্চিত করা হল, এতেও আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি; কিন্তু আপনাকে যে নির্বাসিত করে চোদ্দ বছরের জন্য বনবাসে পাঠানো হচ্ছে এ আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।

    রাম। বুঝলাম। এবং মহারাজ দশরথের মূর্ছার কারণও বুঝলাম। স্নেহের মোহে তিনি আত্মকর্তৃত্ব হারিয়েছেন, তাই মূর্ছা। সীতা, যৌবনে প্রব্রজ্যার সুযোগ ইক্ষ্বাকুবংশে এর আগে কেউ পায়নি, এই শুভ কাজে অতএব বিলম্ব করা সমীচীন হবে না। অবদাতিকার কাছ থেকে বল্কল আনিয়ে নাও, ধর্মপালনের এই সুযোগ।

    সীতা। এই তো বল্কল।

    রাম। তুমি কী করবে এখন?

    সীতা। আমি? আমি কী করবো? সহধর্মিনীর ধর্ম পালন করবো।

    রাম। না না, আমার একার জন্যই বনগমন নির্দেশিত হয়েছে।

    সীতা। অতএব আমার জন্যও।

    রাম। কিন্তু ব্যাপারটা কি তুমি বুঝতে পারছো? বনেই থাকতে হবে।

    সীতা। বুঝতে পারছি। বনে, কিন্তু আপনার সঙ্গে একসাথে। তাহলে তো বনই আমার প্রাসাদ।

    রাম। আর শ্বশুর-শাশুড়ীর সেবা? সে-ও তো তোমার কর্তব্য।

    সীতা। প্রণাম করে আমার সে কর্তব্য দেবতাদের উদ্দেশে নিবেদন করলাম।

    রাম। লক্ষ্মণ, এঁকে বারণ করো।

    লক্ষ্মণ। স্বাভাবিক ধর্মে বাধা দেব কেন? তারকাসমষ্টি কী রাহুগ্রস্ত চাঁদের অনুগমন করে না? তরু যখন ভূপাতিত হয় আশ্রিত লতা কী তাকে ত্যাগ করে, না একই সঙ্গে ভূপাতিত হয়? পঙ্কমগ্ন হস্তীও হস্তিনীকে পরিত্যাগ করে না। ইনি আপনার অনুগমন করে ধর্মই পালন করবেন, বাধা দেব কেন?


    (চেটীর প্রবেশ, সঙ্গে বল্কল)


    চেটী। ভট্টিনীর জয় হোক্‌। নেপথ্যপালিকা রেবা দেবী খবর পাঠিয়েছেন যে অবদাতিকা সঙ্গীতশালা থেকে বিনা অনুমতিতে বল্কল নিয়ে এসেছে। উনি এই যে বল্কল পাঠিয়েছেন তা অন্য বল্কল, আগে কেউ ব্যবহার করেনি, আপনাদের প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার করুন।

    রাম। ভালোই তো, আমাকে দাও। উনি তো আগেই পেয়েছেন।

    চেটী। এই নিন প্রভু। (প্রস্থান)


    রাম বল্কল পরেন


    লক্ষ্মণ। এ কী আর্য! এতদিন পর্যন্ত তো আপনার সবকিছুর অর্ধাংশই আমাকে দিয়েছেন―পরিচ্ছদ, অলঙ্কার, মালা― সবকিছু! আজ বল্কলের ক্ষেত্রে অন্যথা কেন?

    রাম। সীতা, সীতা, লক্ষণকে তুমি বারণ করো।

    সীতা। লক্ষ্মণ, নিবৃত্ত হও।

    লক্ষ্মণ। দেবী, বনবাসে আমাকে বঞ্চিত করতে চান? আর্যের দুটি চরণের দক্ষিণটি আপনি নিন, বামটি আমার থাকুক।

    সীতা। লক্ষ্মণকে বঞ্চিত করবেন না আর্যপুত্র, ও-ও বড় দুঃখী, বড় কষ্ট ওর।

    রাম। ঠিক আছে, লক্ষ্মণ, এই নাও তোমার বল্কল, তপস্যায় এ-ই তোমার রক্ষক, এ-ই তোমার অস্ত্র। পরিধান করো।


    লক্ষ্মণকে রাম বল্কল দেন, লক্ষ্মণ পরেন, এমন সময় নেপথ্যে ঘোষণা শোনা যায়।


    ঘোষক। বিশ্বের প্রথম রামরাজ্যে প্রজাদের নির্বাচিত রাজা শ্রীরামচন্দ্রকে অযৌক্তিক, অন্যায়ভাবে বনবাসে পাঠানো হচ্ছে। প্রজারা এই অন্যায় মেনে নেবে না। তারা পথ অবরোধ করল।

    রাম। (উচ্চকণ্ঠে) অবরোধ তুলে নিতে বলুন। পিতৃসত্য পালনের জন্য আমি স্বেচ্ছায় বনগমন করছি, আমাকে জোর করে পাঠানো হচ্ছে না।

    লক্ষ্মণ। আমি আগে আগে যাচ্ছি। (এগিয়ে যান) পথ ছাড়ুন, পথ ছাড়ুন, বাধা দেবেন না, উন্নতশির শ্রীরামচন্দ্র এবং তাঁর অনুগামিনী সহধর্মিনী সাশ্রুনেত্রা সীতা দেবীকে দর্শন করুন, তাঁদের শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করুন।


    সীতা তাঁর অবগুণ্ঠন উন্মোচন করেন, রামের হাত ধরেন, লক্ষ্মণের পিছন পিছন তাঁরা
    এগিয়ে যান, নেপথ্যে কোলাহল, 'শ্রীরামচন্দ্রের জয়' ইত্যাদি ধ্বনি। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়।


    চলবে…
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    অঙ্ক ১
  • নাটক | ০৪ মে ২০২৫ | ৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ মে ২০২৫ ১১:৪০731066
  • অপরূপ । অনবদ্য । এমন ভাষা। রুদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেললাম। আপনার মঙ্গল হোক। 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ মে ২০২৫ ১১:৫৮731067
  • চলতি বাংলার ভঙ্গিতে সাধু ভাষার ব‍্যবহারের কি আশ্চর্য কলা ! আরো অনেক নাট্ককে পুনর্জন্ম দিন। মুদ্রা রাক্ষস ? মৃচছকটিক!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন