ফিফথ অ্যাভেনিউ, নিউ ইয়র্ক
দারুণ ঝক ঝকে অক্ষরে লেখা সাইনবোর্ড - গোল্ডবেরগ কোম্পানিঃ মহার্ঘ্য চুরুট বিক্রেতা
উত্তেজিত ক্রেতার প্রবেশ।
ক্রেতা :আপনার দোকানের সবচেয়ে ভালো চুরুট কিনে নিয়ে গেলাম এত দাম দিয়ে। সেটা মুখে দেয়া যায় না । এত খারাপ মনে হয় যেন সস্তার সিগারেটে ধোঁয়া দিচ্ছি।
গোল্ডবেরগ নিশ্চুপ ।
ক্রেতা (ক্ষিপ্ত ) ::চুপ করে আছেন কেন ? কিছু বলুন ?
গোল্ডবেরগ (উদাস হয়ে ) :আপনাকে আমি আর কি বলব ? আপনি তো ঐ এক বাকসো চুরুট কিনে পস্তাচ্ছেন । আমার সারা দোকান যে ভরা আছে ঐ চুরুটে !
**********
ফাইনস্টাইন: রাবি, এভি গিনসবেরগের খুব বিপদ। ৫০০ কোপেক ধার আছে বাজারে। আগামী কাল অব্দি শোধ
দিতে না পারলে তার জিনিস পত্র নিলামে উঠবে । এভির শরীর ভালো নয় যে কাজ করে সে টাকা
শোধ দেবে।
রাবি: খুব দুঃখের কথা। আমি দেখি যদি সিনাগগের ফান্ড থেকে কিছু টাকা তোলা যায় । আরও দু চারজনকে
অনুরোধ করি। কিছু সজ্জন হয়তো সাহায্য করবেন। তুমি তো বড় ভাল মানুষ । এভি তোমার আত্মীয় হয় বুঝি ?
ফাইনস্টাইন: না, আমি এভির কাছে টাকাটা পাই।
**********
হবু শ্বশুর অসম্ভব ধর্মনিষ্ঠ। ইহুদি ধর্মের সব প্রথা নিখুঁত ভাবে মেনে চলেন। ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করার পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঈশ্বর বিশ্রাম নিয়েছিলেন। তাই শুক্রবার সূর্যাস্ত থেকে শনিবারের সূর্যাস্ত অবদি সাবাথ, বিশ্রামের সময়। ইহুদি ধর্মে সেদিন কোন কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গাড়ি চালানো, বিজলি বাতির সুইচ অন করা, চিঠি খোলা এমনকি ঘাসের ওপরে হাঁটাও! লিস্টি অনেক লম্বা।
হবু শ্বশুর: ছেলের ব্যাপারে যা বললেন শুনে তো আমার ভালোই মনে হয়। কিন্তু আমার একটি বিশেষ প্রশ্ন আছে।
ঘটক: ছেলের গুণের কোন শেষ নেই। তবু যদি আপনার মনে যদি কোন সংশয় থাকে, বলুন?
হবু শ্বশুর: দেখুন আমাদের পরিবারে ইহুদি প্রথা খুব নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলি। আমি চাই বিয়ের পরে আমার মেয়ে যেন তার ব্যত্যয় না করে। তাই জানতে চাইছি ছেলেটি সাবাথ মেনে চলে? শনিবারে কোন কাজ করে না তো?
ঘটক: এই কথা? আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। সপ্তাহের অন্য ছ দিনেও ছেলেটি কোন কাজ করে না।
*********
লুইস কোহেন মারা গেছেন। ইন্টারনেট আসেনি তখনও। স্ত্রী ভ্যালি কোহেন গোল্ডার্স গ্রিনের জুইশ ক্রনিকলে ফোন করেছেন। বিজ্ঞাপন দেবেন।
রিসেপশনিস্ট : খুব দুঃখের কথা মিসেস ব্লুম। আমরা আপনার দীর্ঘ জীবন কামনা করি। আপনি কিভাবে বিজ্ঞাপনটা দিতে চান?
ভালি ব্লুম : মানে?
রিসেপশনিস্ট : বিজ্ঞাপনে কি লেখা হবে?
ভালি ব্লুম : লুইস কোহেন মারা গেছেন।
রিসেপশনিস্ট : আর কিছু জানাতে চান? দিন, তারিখ, কোনো ব্যক্তিগত শোক সন্তাপ বাণী?
ভালি ব্লুম : না।
রিসেপশনিস্ট : আমাদের মিনিমাম বিজ্ঞাপন সাত শব্দের, তার খরচা দশ পাউন্ড। আপনি আরও তিনটে শব্দ যোগ করতে পারেন।
ভালি ব্লুম : তাহলে জুড়ে দিন ‘ভোলভো বিক্রি হবে’।
*********
ফ্রাঙ্কফুর্টে বারন রোটশিল্ডের বাড়িতে ঘটক হাজির
ঘটক হের রোটশিল্ড, আমি আপনার পাঁচ লক্ষ মার্ক বাঁচিয়ে দিতে পারি।
রোটশিল্ড (অবাক হয়ে ) কী করে ?
ঘটক আপনি বলেছেন আপনার হবু জামাইকে দশ লক্ষ মার্ক যৌতুক দেবেন। ঠিক তো?
রোটশিল্ড হ্যাঁ, মনের মতন জামাই পেলে নিশ্চয় দেব।
ঘটক আমি একটি ভালো ছেলের সম্বন্ধ এনেছি। সে পাঁচ লক্ষ মার্ক যৌতুক পেলে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি।
**********
অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের চ্যান্সেলর মেটারনিখ গেছেন ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট, বিখ্যাত ইহুদি ব্যাঙ্কার ব্যারন এসেকেলেসের সঙ্গে দেখা করতে। সম্রাটের প্রভূত অর্থের প্রয়োজন।
আলোচনা শুরু করার আগে ব্যারনকে একটু সতর্ক করা প্রয়োজন মনে করলেন মেটারনিখ।
মেটারনিখ : শুনছি নানা রকম রাষ্ট্র বিরোধী কাজের সঙ্গে আপনার ছেলে ইয়াকবের নাম জড়িয়ে পড়েছে। একটু সাবধানে রাখুন তাকে।
এসকেলেস : মনে রাখব।
মেটারনিখ : আচ্ছা আপনার ব্যাঙ্ক আমাদের জাতীয় বন্ডে প্রতিশ্রুত টাকাটা কবে নাগাদ জমা করছে?
এসকেলেস : একটু ভেবে দেখি।
মেটারনিখ : ভেবে দেখার কি আছে?
এসকেলেস : ভাবছি আমার পুত্র ইয়াকব একাই যদি কোন রাষ্ট্রের ভয়ের কারণ হতে পারে, তাহলে সে দেশের রাজাকে টাকা ধার দেওয়াটা কি সমীচীন হবে?
বেরনহারড এসকেলেস (জন্ম মৃত্যু ভিয়েনা ১৭৫৩- ১৮৩৯) । পরে নাইট সম্মানে বিভূষিত হন- বেরনহারড রিটার উনড ফ্রাইহের ফন এসকেলেস।
**********
গোল্ডার্স গ্রিনে বসবাস ও বহুদিন জার্মানিতে থাকার সুবাদে ইহুদি সমাজ ও সংস্কৃতিকে একেবারে কাছ থেকে দেখতে পেয়েছেন লেখক হীরেন সিংহরায় ও জহুরির চোখ দিয়ে বেছে বাঙালি পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন ইহুদি জাতির ওঠাপড়ার ইতিহাস ও জীবনযাত্রার মাঝে লুকিয়ে থাকা অসম্ভব রসবোধ ও জীবন দর্শন। গুরুচণ্ডা৯ -তে এককালে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ পাওয়া বিখ্যাত সিরিজ ইহুদি রসিকতা এবার বই হয়ে বেরচ্ছে গুরুচণ্ডা৯- থেকেই।
ইহুদি রসিকতা
লেখক: হীরেন সিংহরায়
প্রকাশক: গুরুচণ্ডা৯
প্রকাশ: বৈশাখ, ১৪৩২
প্রচ্ছদ: রমিত চট্টোপাধ্যায়
যাঁরা গুরুর বইপ্রকাশের পদ্ধতিটা জানেন, তাঁরা অবগত আছেন, যে, গুরুর বই বেরোয় সমবায় পদ্ধতিতে। যাঁরা কোনো বই পছন্দ করেন, চান যে বইটি প্রকাশিত হোক, তাঁরা বইয়ের আংশিক অথবা সম্পূর্ণ অর্থভার গ্রহণ করেন। আমরা যাকে বলি 'দত্তক'। এই বইটি যদি কেউ দত্তক নিতে চান, আংশিক বা সম্পূর্ণ, জানাবেন। এই লেখার নিচে। অথবা guruchandali@gmail.com -তে ইমেল করে।
দত্তক বিষয়ে বিশদে জানতে >>