পাকশালার গুরুচন্ডালি
মাটির উনুন নিয়ে এক অগ্রজ অশোক কুন্ডু খুব ভাবতেন, কথা বলতেন, লিখতেন। বিষয়টা বেশ ভাল লাগত। আজ তিনি নেই। কিন্তু, এই উনুনের পেছনে যে নারী থাকেন, তাঁর কথা কি তেমন ভাবা হয়েছে! ভেবেছেন ড. শারদা মণ্ডল। গুরুচন্ডালি প্রকাশনা থেকে তিনি লিখেছেন "পাকশালার গুরুচন্ডালি"।
"যে বই মাত্র একটিই লেখা হয়েছে এ পর্যন্ত, পাকশালার কথা বলতে বলতে যা আমাদের হাতে তুলে দেয় এক আশ্চর্য মায়াময় দলিল, সময়ের দলিল।" এই বই পড়লে শেখা যায় রান্না, জানা যায় ইতিহাস, তৈরি হয় মানববোধ, ইতিহাস চেতনা। এই বইতে যে মায়েদের কথা আছে, তাঁরা আমাদের সবার মা। এই মায়েদের দিকে তাকানোর সময় আমরা পাইনি। পাইনা। তাঁরা জন্মান, কর্তব্য করেন। চলেও যান। আবার থাকেন, শোনা হয় না তাঁর কথা। রান্নাঘরে থেকে যাঁরা পুরো সংসারটাকে আগলেছেন, সবার মুখে গ্রাস দিয়েছেন, সন্তানকে শ্রেষ্ঠত্বের জায়গায় নিয়ে গেছেন, তাঁদের কজনের কথাই বা আমরা জেনেছি। তাঁদের জীবনটা যেন-
খাতি নাতি বেলা গেল
শুতি পেলাম না।
দুয়ার দিয়া হাতি গেল
দেখতি পেলাম না।
এই ছড়াটি লেখিকার মা শুনিয়েছিলেন লেখিকাকে। এই আফসোস প্রায় সব মায়েদের। আর পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হতে বিদেশি বয়কট থেকে শুরু করে সংসারের সফল কারিগর এই মায়েরা। উনিশ শতক থেকে চলে আসা কাহিনি লেখিকা শারদা মণ্ডল হারিয়ে যেতে দেননি। 'মেয়েলি বয়ানে' বাংলার এক গুরুত্বপূর্ণ অজানা ইতিহাসের সন্ধান দিয়েছেন এই বইতে। লেখিকা ভূগোলের বিশিষ্ট অধ্যাপিকা হওয়ার কারণে ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্থান বৈচিত্রও দেখছি আকর্ষণীয়ভাবে। জন্ম সূত্রে, লেখাপড়া সূত্রে, পিতৃ এবং বিবাহ সূত্রে কলকাতার বাগবাজার, পাতিপুকুর, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের আরবেলে, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির মৈতনা সব প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপিত। বদলেছে রান্নাঘর, বদলেছে সংস্কৃতি। জায়গার সঙ্গে সব চরিত্রই পাঠকের চেনা লাগবে, এঁরা তো আমাদের বাড়ির কেউ না কেউ। লেখিকা এঁদেরকে সবার সামনে এনে অন্দরের ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। লেখিকাকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন। প্রকাশককেও অভিনন্দন জানাই এই বই প্রকাশের জন্য।প্রয়োজনীয় তথ্য নিচে দেওয়া থাকল।
মূল্য ২৩৩ টাকা (ভারত)
প্রকাশক গুরুচণ্ডল
এ/২, ৭৩)১/১ আর কে চ্যাটার্জি রোড, কলকাতা ৭০০০৪২