এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অন্যান্য  শরৎ ২০২১

  • তুষারাচ্ছন্ন ইউরোপে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের আশ্চর্য বিষাদ

    সায়ন্তন চৌধুরী
    অন্যান্য | ০২ নভেম্বর ২০২১ | ৫১৪৫ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • স্কেচ ৬ | পানুর মেটামরফোসিস | চালচিত্রের চালচলন | কেমন আছে ওরা? | চাও করুণানয়নে | পুত্রার্থে | সই | আপনি যেখানেই থাকুন | কিসসা গুলবদনী | জনৈক আবহ ও অন্যান্যরা | গুচ্ছ কবিতা | অমল রোদ্দুর হয়ে গেছে | ইনি আর উনির গপ্পো | দুগ্গি এল | দুর্গারূপে সীতা, ভিন্নরূপে সীতা | প্রিয় অসুখ | শল্লকী আর খলিলের আম্মার বৃত্তান্ত | রানার ছুটেছে তাই | বিসর্জনের চিত্রকলা | কল্পপ্রেম | লম্বা হাত খাটো হাত | কেন চেয়ে আছো গো মা, মুখ পানে! | ছোট্ট পরীর জন্মদিন | জাপানি পুতুল | আধাঁরে আলোঃ শারদ সাহিত্য | ইন্দুলেখার ইতিকথা | মুর্শিদাবাদ | এই দিনগুলি | জ্বিন | জোনাকি এবং ডোরেমিরা | বাসায় চুরি | বিশ্বকর্মার গুপ্তঘট | দুর্গাপূজা - দুটি প্রবন্ধকথা | টিউশন | ফেরা | মায়া | বন্দী | মেয়েদের কিছু একটা হয়েছে | কেল্লা নিজামত | সীতারাম | দড়াবাজি | মায়াফুলগাছ | যখন শ্যামের দ্বারে | কুয়াশা মানুষের লেখা | সময় হয়েছে নতুন খবর আনার | মিষ্টি চেখে ওড়িশার ডোকরা শিল্পীদের গ্রামে | নিশি | পথ | প্রাকার পরিখা | নীল সাইদার গল্প | তুষারাচ্ছন্ন ইউরোপে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের আশ্চর্য বিষাদ | দীপাবলীর বারান্দায় | কলমি শুশনি | এক অনিকেত সন্ধ্যা | গৌরি বিলের বৃত্তান্ত | আনন্দগামী বাস থেকে | মুয়াজ্জিনকে চিরকুট | দেবীর সাজে সৌরভ গোস্বামী | শরৎ ২০২১
    ছবি - ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক


    ফেব্রুয়ারীর একটা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বিকেলে কোয়াড্রিও সেন্টারে ফ্রাঞ্জ কাফকার সুবিশাল ঘূর্ণায়মান স্ট্যাচুটির কাছাকাছি একটি ছোট্টো রেস্তোরাঁয় বসে অ্যারোমাটিক চিলড হোয়াইট ওয়াইনে অন্যমনস্কভাবে চুমুক দিতে দিতে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের নিজেকে হঠাৎ প্রুদেনসিয়া লিনেরো মনে হল; অথচ এমনটা মনে হবার কোনো কারণ ছিল না। কোনোকিছুই, যা তাঁর চারপাশে ছিল, তার থেকে অনতিক্রম্য দূরত্ব তিনি বোধ করছিলেন না, তবু এক মুহূর্তের জন্যে একটা অসাড় শূন্যতা অনুভব করলেন পানীয়ে শেষ চুমুকটা মেরে; উঠে পড়লেন তিনি। রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে ভ্লাদিস্লাভোভা স্ট্রীটে এসে দাঁড়াতেই প্রাগের কনকনে শীত তাঁর মুখের অনাবৃত অংশকে হাড় অব্দি জমিয়ে দিয়ে গেল; বোহেমিয়ান আকাশে দূরে ও কাছে অন্ধকার এখন হচ্ছে, কাছ থেকে দূরে আলোর সূচকীয় ক্ষয় শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ লক্ষ্য করলেন। দস্তানা-পরা হাতদুটো মুখের সামনে জড়ো করে তিনি গরম ফুঁ দিলেন বারদুয়েক। সেই মুহূর্তে তাঁর স্মৃতিতে ভেসে উঠল সুদূর ফ্লোরিডার আরামদায়ক আবহাওয়া, যেখান থেকে তিনি ইউরোপ এসেছেন। বছরের এই সময়ে প্রাগ শহরের রাস্তাগুলোয় ধূসর কবলস্টোনের ওপর ইতস্তত বরফের ছোপ; যে শৈত্যপ্রবাহে সমস্ত ইউরোপ আক্রান্ত, প্রাগেও তার প্রভাব দিব্যি টের পাওয়া যায়। এই আবহাওয়া শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখকে অনেকখানি কাবু করে ফেলেছে, যাঁর কাছে ভ্রমণ একটা কষ্টকর ব্যাপার এবং চল্লিশ পেরোনোর পর তাঁর মনে হয় দুনিয়ার বিনিময়ে একটা লাইব্রেরিই তাঁর পক্ষে যথেষ্ট হবে। — লাইব্রেরির চেয়েও তোমার বেশি দরকার একজন লাইব্রেরিয়ান — কোয়েন্টিন তাঁর স্তূপীকৃত বইগুলির দিকে ইঙ্গিত করে বলত — যত মেয়েকে আমি ডেট করেছি, তুমি হচ্ছ তাদের মধ্যে সবথেকে অগোছালো। বস্তুতপক্ষে, ফ্লোরিডাতে তাঁর জীবন ঠিক সেরকমভাবেই কাটছিল যা একজন মধ্যবয়েসী, ইউনিভার্সিটি অধ্যাপকের ক্ষেত্রে কল্পনা করা যায়: নিঃসঙ্গ এবং বিষণ্ণ। অরল্যান্ডোর ফ্ল্যাটটিতে তাঁর রাতগুলো কাটত এলোমেলো স্বপ্নে এবং ভোরগুলো শুরু হত ক্লান্তিকরভাবে; উঠে তিনি কফি বানাতেন। ক্যাফিনের প্রথম ডোজটা তাঁকে দিন শুরুর করার জন্যে প্রয়োজনীয় উদ্যম যোগাত। আর পাঁচজন অধ্যাপকের মতোই শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের কাছে ইউনিভার্সিটি ক্রমশ গুরুত্ব হারিয়েছে। আমেরিকান শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীর মান ক্রমশ নিকৃষ্টতর হয়েছে, যারা কোনোরকম দুরূহ গদ্য পড়তে আগ্রহ বোধ করেনা এবং সাহিত্যের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কোর্স পড়ানো ছাড়া বাকি সময়টুকু শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ কাটান নিজের অফিসে কাজ করে: তাঁর লেখা প্রবন্ধ আর বইগুলো তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্য সমালোচনার জগতে কিছুটা পরিচিতি দিয়েছে এবং একারণেই তাঁকে ফ্লোরিডার বৈচিত্র্যহীন জীবন ছেড়ে মাঝেমাঝে অন্যান্য শহরে বক্তৃতা দিতে যেতে হয়; যদিও এটা একটা নিরর্থক ব্যাপার, কেননা একুশ শতকের পৃথিবীতে সাহিত্য বলে কিছু হয়না, সে সম্পর্কে বক্তৃতা দেবারও কোনো মানে নেই। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের এই একঘেয়ে জীবনে ছেদ পড়ত না, যদি না কোয়েন্টিনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হত। তারা দুবার ডেটে গিয়েছিল; তৃতীয়বার তারা একটা শৌখিন রেস্তোরাঁয় ডিনার করতে যায়: মোমবাতি ও সুদৃশ্য দেয়াল নকশায় সাজানো একটা রেস্তোরাঁ। সেটা ছিল গ্রীষ্মের একটি রাত; এবং সেদিনই প্রথম তারা পরস্পরের সাথে শোয়। উন্মত্তের মতো সেক্স করেছিল দুজনে, যেন দুনিয়া শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারপর পাশাপাশি শুয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কোয়েন্টিন বলেছিল — এটাই আমার সেরা, ইজি! ইজি অর্থাৎ ইসাবেলা ফ্রয়ডেনরাইখ বিড়বিড় করেছিলেন — আমি কখনো ভাবিনি আমি আমার কোনো ছাত্রের সঙ্গে শোবো। — প্রাক্তন ছাত্র — কোয়েন্টিন শুধরে দিয়েছিল — নইলে ইউনিভার্সিটির নিয়মে আটকাত। সেদিন রাতে ইসাবেলা অস্বীকার করতে পারেননি যে তিনি অসম্ভব সুখ পেয়েছিলেন। হাভেল’স মার্কেটের দিকে হাঁটতে হাঁটতে কোয়েন্টিনের কথা ভাবতেই তাঁর মন আশ্চর্য খারাপ হলো; এবং শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ খেয়াল করলেন হাতের বইটা তিনি ভ্লাদিস্লাভোভা স্ট্রীটের রেস্তোরাঁটায় ফেলে এসেছেন। সেটা নেওয়ার জন্যে তিনি আবার উল্টো রাস্তা ধরলেন। রেস্তোরাঁটিতে ফিরে এসে তিনি লক্ষ্য করলেন বইটা ঠিক যেখানে ফেলে গিয়েছিলেন, সেখানেই পড়ে আছে। প্রচ্ছদটা বৈশিষ্ট্যহীন: একেবারে সাদা, সাদার ওপর উপন্যাসটির নাম ও লেখকের নাম লেখা — সাবমিশন / মিশেল হুয়েলবেক। একটা লাল রেখা লম্বালম্বি প্রচ্ছদটিকে দুভাগে ভাগ করেছে।

    ২০২২ সালের ফরাসী নির্বাচন যত এগিয়ে আসছিল, তত স্পষ্ট হচ্ছিল লড়াইটা আসলে দুজন পার্টি প্রতিনিধির মধ্যে — ন্যাশনাল ফ্রন্টের মারিন ল্য পেন এবং সদ্যপ্রতিষ্ঠিত মুসলিম ভ্রাতৃসঙ্ঘের মোহাম্মেদ বেন আব্বেস। নিবার্চনী ফলাফল ঘোষণার সময় দেখা গেল সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ন্যাশনাল ফ্রন্ট ৩৪.১ শতাংশ ভোট পেয়ে। দ্বিতীয় স্থানের জন্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে সোশ্যালিস্ট পার্টি এবং মুসলিম ভ্রাতৃসঙ্ঘের মধ্যে। শেষপর্যন্ত ২২.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে মুসলিম ভ্রাতৃসঙ্ঘ দ্বিতীয় স্থান দখল করে এবং তাদের থেকে সামান্য পিছিয়ে থাকা (২১.৯ শতাংশ) সোশ্যালিস্ট পার্টি পরাজিত হয়। এরপরে যেটা ঘটে সেটা সংক্ষেপে এরকম: সোশ্যালিস্টদের সঙ্গে মুসলিম ভ্রাতৃসঙ্ঘের গোপন সমঝোতার ফলে জোট তৈরি হয়, ফ্রান্সের প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বেন আব্বেস এবং তিনি গণতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে গোটা দেশের ইসলামীকরণ শুরু করেন। ক্রমে ক্রমে মেয়েরা বোরখা পরতে আরম্ভ করে, বহুবিবাহ প্রচলিত হয়, ইহুদীরা ইজরায়েলে দেশান্তরী হয় এবং আরব আফ্রিকাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জুড়ে এক নতুন রোমান সাম্রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, ফরাসী জনসাধারণের গরিষ্ঠ অংশ, যারা নির্বাচনের আগে মারিন ল্য পেনের প্রচারকালে জাতিবিদ্বেষ ও ইসলামবিদ্বেষে ফুটছিল, তারা নিঃশব্দে আত্মসমর্পণ করে ইসলামের কাছে; ইসলাম, যার আভিধানিক অর্থ সমর্পণ বা সাবমিশন — মূলত হুয়েলবেকের উপন্যাসটির কল্প-রাজনৈতিক পটভূমি নির্মাণে সাহায্য করেছে। — তুমি হুয়েলবেকের এলিমেন্টারি পার্টিকেলস পড়েছ? — শরতকালের কোনো বিকেলে অরল্যান্ডোর একটা ছিমছাম কফিশপে বসে কোয়েন্টিন হঠাৎ প্রশ্ন করেছিল শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখকে — কোনো সমালোচনা লিখেছিলে কি? অ্যাবস্ট্রাক্ট ওয়ালপেপারে মোড়া এই কফিশপটা হয়ে উঠেছিল তাঁদের দুজনের নিয়মিত দেখা করার জায়গা; ভিড় নেই, দোকানের টেবিলগুলো প্রায় সবই ফাঁকা, গাঢ় বাদামী ছায়া কফিশপটার দেয়াল থেকে গড়িয়ে মেঝেতে নেবেছে। দুটি সাদা মেয়ে কফিশপটার ফাঁকা টেবিলগুলো পরিষ্কার করছিল। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ সেদিকে তাকিয়ে জবাব দিয়েছিলেন — হুয়েলবেকের প্রতি আমি আগ্রহ বোধ করিনা; তিনি যেরকম লেখেন, তাকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ দেখিনা। সেটা ছিল বছরদুয়েক আগের একটা কথোপকথন, নারদনি পেরিয়ে প্রাগের ওল্ড টাউনে ঢুকতে ঢুকতে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ ভাবলেন। নারদনি স্ট্রীটের দুধারে আলোগুলো জ্বলে উঠেছে; কোয়াড্রিও সেন্টার, যা প্রকৃতপক্ষে প্রাগের নিউ টাউনে অবস্থিত, সেখান থেকে মাত্র মিনিটখানেক হেঁটে এসেছেন তিনি, কিন্তু ইতিমধ্যেই রাস্তার দুদিকে স্থাপত্যরীতি বদলাতে শুরু করেছে। উঁচু উঁচু কর্পোরেট বিল্ডিঙয়ের পরিবর্তে খিলান ও গম্বুজ সমন্বিত প্রাগের চিরাচরিত কারুকার্য চোখে পড়ল তাঁর। ছোটো ছোটো ক্যাফের বাইরে সাজানো টেবিলগুলোয় কতিপয় মানুষজন বসে আড্ডা দিচ্ছে। বছরের উষ্ণতর মাসগুলিতে প্রাগ শহরে ইতস্তত উৎসুক পর্যটকদের ভিড় নজরে পড়ে, যা নভেম্বরের মাঝামাঝি অব্দি বজায় থাকে; তারপর তারা প্রাগের অনন্য স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের কয়েকটা ফটোগ্রাফ সঙ্গে করে নিজেদের শহরে ফিরে যায়। শীতকালীন প্রাগ এক নিঃসঙ্গ সৌন্দর্য্যের শহর; শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ প্রাগে এসেছেন মিলান থেকে। আগামীকাল সকালে চার্লস ইউনিভার্সিটিতে কুন্দেরা ও জোসেফ ব্রডস্কির আশির দশকের পোলেমিক সম্পর্কে তাঁর বক্তৃতা দেবার কথা আছে: দস্তয়েভস্কি এবং রুশীয় সংস্কৃতি বিষয়ে একটি পোলেমিক, যা প্রকাশিত হয়েছিল তৎকালীন নিউ ইয়র্ক টাইমসে। বস্তুতপক্ষে, কয়েকটা লেকচার এবং কিছু আলোচনাচক্রে যোগদান করাই ছিল তাঁর এবারের ইউরোপ সফরের মূল উদ্দেশ্য। লন্ডন থেকে প্যারিস, সেখান থেকে মিলান, এবং অবশেষে প্রাগ তাঁর যাত্রাপথের অন্তিম গন্তব্য। একথা ঠিক যে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে তুষারাচ্ছন্ন প্রাগে তিনি একধরনের বিপন্নতা বোধ করছেন, কিন্তু সমস্ত সফরজুড়ে তাঁকে বিষাদগ্রস্ত করে রেখেছে তাঁর বাঁহাতের দস্তানার ভেতরে ধরা হুয়েলবেকের উপন্যাসটি। ঈশ্বরের দোহাই, যদি ফরাসী সাহিত্য পড়তে হয়, দয়া করে প্রুস্ত পড়ো, বা আলবেয়ার কাম্যু — কোয়েন্টিনকে বলেছিলেন তিনি — উপন্যাস আর প্যামফ্লেট ভাষ্যের মধ্যে পার্থক্য আছে, ঠিক যেমন পার্থক্য আছে হাতেগোনা প্রকৃত বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে প্যারিসের স্বঘোষিত নাকউঁচু আঁতেল শ্রেণীর। প্যারিসের প্রাদেশিক সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের একটা গোপন বিতৃষ্ণা সবসময় ছিল। এই উপন্যাসটি পড়ার পরেও হুয়েলবেক সম্বন্ধে তাঁর সামগ্রিক মতামত কতটা পাল্টেছে তা বলতে পারা যায় না। অথচ উপন্যাসটি তাঁকে মানসিক অস্বস্তির মধ্যে রেখেছে এবং তিনি এটাকে মাথা থেকে সরাতে পারছেন না — নিজের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হলেন শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ।

    সাবমিশন উপন্যাসটি প্রকাশিত হবার তারিখটা ভুলে যাওয়া কঠিন এই কারণে যে, সেদিনই ফ্রান্সে শার্লি এবদো পত্রিকার দপ্তরে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়। উপন্যাসটির খবর কানে এলেও শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ আগ্রহ দেখাননি; পরে টাইমসে মিচিকো কাকুতানির একটি রিভিউ তাঁকে আরও নিরুৎসাহিত করে। উপন্যাসটি সম্পর্কে ব্রিটিশ সমালোচকদের মতামতও খুব উৎসাহব্যাঞ্জক ছিল না এবং তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই এটাকে একটা ফরাসী হুজুগ হিসেবে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু লন্ডনে থাকাকালীন কোনো অনাড়ম্বর আলোচনাসূত্রে উপন্যাসটির কথা উঠলে একজন তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ সমালোচক, জোশুয়া রবার্টস, কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে। জোশুয়া রবার্টসকে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ চিনতেন ম্যাক্স বিয়ারবোমের ওপর একগুচ্ছ প্রবন্ধের সূত্রে; বিশেষত বিয়ারবোমের একমাত্র উপন্যাস জুলেইকা ডবসন সম্পর্কে জোশুয়ার কাজ অত্যন্ত গভীর ও প্রণিধানযোগ্য বলে তিনি মনে করতেন। ফ্রান্সের মুসলিম কমিউনিটিকে যেরকম একমাত্রিক হিসেবে হুয়েলবেক দেখেছেন, সাবমিশন সম্বন্ধে জোশুয়ার মূল সমালোচনা ছিল সেটাই। আলজেরিয়ায় ফরাসী উপনিবেশের প্রসঙ্গ এই উপন্যাসে আসেনি, কিন্তু একইসঙ্গে এটাও ঠিক যে, উত্তর আফ্রিকার সঙ্গে ফ্রান্সের কলোনির ইতিহাস সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়ার ফলে লেখক একটা বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন: এমন একটা সুবিধা যা তাঁকে ফ্রান্স এবং বৃহত্তর অর্থে গোটা ইউরোপীয় সভ্যতার ডেকাডেন্স সম্পর্কে মন্তব্য করতে সাহায্য করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বসে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ ততটা আঁচ পাননি ইউরোপে একটি উপন্যাস কতখানি সুদূরপ্রসারী তর্ক-বিতর্কের জন্ম দিয়েছে; লন্ডনে ব্যাপারটা তাঁকে প্রভাবিত করে এই কারণে যে, একুশ শতকের একজন নাগরিক হিসেবে তিনি জানেন, পশ্চিমী সমাজে সাহিত্যের প্রতিপত্তি দ্রুত ক্ষয়ে আসছে; ইউরোপীয় সভ্যতার একটা প্রাথমিক উপাদান হিসেবে যে উপন্যাসকে ধরা হয়, তা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে একটা উপন্যাস রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে এটা তাঁকে কৌতুহলী করল। বেশ কয়েকবছর ধরেই লন্ডনে এলে ফয়েলস-এ ঢুঁ মেরে যাওয়া তাঁর অভ্যাস হয়ে গেছে; এক্ষেত্রে হুয়েলবেকের উপন্যাসের একটা কপি সংগ্রহ করার পিছনে জোশুয়ার মন্তব্য অনুঘটকের কাজ করে, হাভেল’স মার্কেট পেরিয়ে ওল্ড টাউনের রাস্তাগুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ ভাবলেন। নির্জন বরফ-মোড়া রাস্তায় প্রাগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্ট্রীটল্যাম্পগুলো একলা দাঁড়িয়ে রয়েছে; রাস্তার ধারে পার্ক-করা গাড়িগুলোর ছাদে সাদা তুষার জমেছে। গলিগুলো অতিক্রম করে একসময় তিনি এসে পৌঁছলেন প্রাগ অরলয়ের কাছে, যেটা পেরোতেই একটা খোলা চত্বর দেখতে পেলেন তিনি। চত্বরের পাশে গথিক ছাঁদের গির্জার ছায়া এবং আলো-অন্ধকারের মিশেল একটুকরো পুরোনো ইউরোপকে ফুটিয়ে তুলেছে, মনে হলো তাঁর। বিশ্রাম নেবার জন্যে ওল্ড টাউন স্কোয়ারে তিনি কিছুক্ষণ দাঁড়ালেন। সেটা ছিল একটা অলস দুপুর, যখন শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ চ্যারিং ক্রস রোডে গিয়ে পৌঁছেছিলেন; তাঁর সঙ্গী দুজন তরুণ: জোশুয়া এবং তার বন্ধু, প্যাট্রিক। প্যাট্রিক একজন শ্বেতাঙ্গ, যে মূলত সমসাময়িক ব্রিটিশ কবিতার ওপর তার কাজের জন্যে (এবং একটি অ্যান্থোলজি সম্পাদনার জন্যে) পরিচিত। ফয়েলস-এ বই কেনা হয়ে যাবার পর বহুতল দোকানটির ওপরতলায় ক্যাফেতে গিয়ে তারা বসেছিল। ফ্রান্সের মতো সমাজ, যেখানে ইসলামবিদ্বেষের শিকড় গভীরে, সেখানে হুয়েলবেকের উপন্যাসটি সমস্যাজনক, বলেছিল জোশুয়া। প্রধানত রাজনীতি বিষয়ে কথা বলেছিল তারা: উত্তর আফ্রিকা থেকে ফ্রান্সে মুসলিম জনগোষ্ঠীর অভিবাসন, যা হুয়েলবেকের উপন্যাসটিতে স্পষ্টতই অতিরঞ্জিত, সেকথা মেনে নিয়েও প্যাট্রিক মনে করিয়েছিল তারা ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনে বসে কথা বলছে, এমন একটা সময়ে যখন ইউকিপ ও নাইজেল ফারাজের জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে অভিবাসনবিরোধী রাজনীতি। নাইজেল একটা ক্লাউন, জোশুয়া মাথা নেড়েছিল, ল্য পেন অনেক বেশি ধূর্ত ও বিপজ্জনক। আমি একজন প্রাগম্যাটিক, প্যাট্রিক সরাসরি তর্ক জুড়েছিল, বোজোকে যেমন সমর্থন করি না, তেমনই এঙ্গেলা মার্কেলের পলিসিও ভুল মনে করি। রিফিউজি ক্রাইসিস ক্রমাগত ইউরোপকে অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটা একটা সম্পূর্ণ সরলীকৃত বক্তব্য, জোশুয়া জানিয়েছিল, এ দিয়ে আমেরিকায় ট্রাম্পের উত্থানকে ব্যাখ্যা করা যায়না। বকবক করতে করতে তারা তিনজনে কফি ও স্কোনস খেয়েছিল। বুকস্টোর থেকে বাইরে বেরোতেই শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ টের পেয়েছিলেন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে। লন্ডনের চমৎকার বিকেল, যার ভেতর দিয়ে পরাবাস্তব ট্র্যাফিক আর লোকজন বিভিন্ন গন্তব্যের দিকে চলে যাচ্ছে। জোশুয়া ও প্যাট্রিক হাঁটতে হাঁটতে তর্ক করছিল; শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ ভাবছিলেন কোয়েন্টিনের কথা, তাঁদের ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক। সোহো স্কোয়ারের কাছাকাছি এসে তিনি ওদের বিদায় জানিয়েছিলেন।

    কোনো এক বিতর্কিত অর্থে পুরনো প্রেমিকরা বুকশেলফের পিছনে লুকিয়ে থাকা মাকড়সার মতো। বিশেষত বয়েস যত বাড়তে থাকে, সম্পর্কগুলো নিভে আসে, একাকিত্ব বিশ্বস্ত ছায়ার মতো ঘিরে ধরে মানুষকে — উঙ্গেল্ট পেরিয়ে শ্লথগতিতে হাঁটতে হাঁটতে টের পাচ্ছিলেন শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ। বরফ আর বরফ চতুর্দিকে; একটি আত্মাও দেখা যাচ্ছেনা। দু-একজন সহপথিককে তিনি ওল্ড টাউন স্কোয়ারে ফেলে এসেছেন। এখন নির্জনতা তাঁকে গ্রাস করছে। কোয়েন্টিনের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো তাঁকে স্মৃতিগ্রস্ত করছে। প্রেমের স্মৃতি, যৌনতার স্মৃতি। ঘন্টার পর ঘন্টা ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীত শোনার স্মৃতি। রাখমানিনভ, চাইকোভস্কি, বিজেট। কোয়েন্টিনের প্রিয় ছিল একটি ফরাসী রোমান্টিক পিস (দ্য সোয়ান), যেটা তাদের যৌনতার ভেতর অবিশ্বাস্যরকম বিষাদ জাগাত। তখন অরল্যান্ডোর ফ্ল্যাটটিতে তারা শুয়ে থাকত পাশাপাশি, তাদের শরীরে কোনো সুতো ছিল না। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের মনে পড়েছিল আনা পাভলোভাকে; দুই যুদ্ধের মধ্যবর্তী সেইসব বছরগুলোয় রুশ ব্যালেরিনার মুমূর্ষু রাজহংসী। এক শতাব্দী আগের ইউরোপ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ইউরোপ। প্রায় একশ বছর পরে সময়ের অশনি সংকেতগুলি যেখানে ফিরে ফিরে আসছে। অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতি ক্রমশ প্রকট হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট পার্টিগুলি মাথা তুলছে, আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বেরিয়ে আসছে নিও নাৎসী দলগুলো। ইউরোপের সামাজিক ও রাজনৈতিক মানচিত্র জুড়ে স্পষ্ট হচ্ছে সময়ের ফাটলগুলি। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ বড়ো হয়েছিলেন পেনসিলভ্যানিয়ার এক ইহুদী পরিবারে; তাঁর পূর্বপ্রজন্ম নাৎসী আগ্রাসনের সময় পোল্যান্ড থেকে পালিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। এইখানে দাঁড়িয়ে তাঁর একটা ফিল্মের কথা মনে পড়ে। পারিবারিক সূত্রে ছোটবেলায় দেখা একটা ফিল্ম। জার্মানির কোনো শহরে এক বাচ্চা মেয়ের গল্প, যার মা ছিলেন মেয়েকে আদবকায়দা শিখিয়ে বড়ো করার ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক। তাঁর মেয়েকে তিনি সেই শহরের বিখ্যাত মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। যখন জার্মানিতে ইহুদীবিদ্বেষ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, মেয়েটি সেই স্কুলে দেখে বাথরুমের দেওয়ালে লেখা থাকছে গালাগাল; যত দিন যায়, বিদ্বেষ বাড়তে থাকে এবং গালাগালে ভরে ওঠে দেয়ালটা। এরপর নাৎসীরা ক্ষমতা দখল করে এবং মেয়েটির পরিবারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। সেখানে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হয়, কিন্তু মেয়েটির মা বেঁচে যান। যুদ্ধের শেষে তিনি অর্ধোন্মাদ অবস্থায় যখন ফিরে আসেন সেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরটিতে, তিনি এবং আরও কয়েকজন বেঁচে-ফেরা ইহুদী খুঁজে পান সেই স্কুলটির ভগ্নস্তূপ; অবাক হয়ে দেখেন তাঁরা সেই বাথরুমের দেয়ালে গালাগালের মাঝে ফুটে উঠেছে রেজিস্ট্যান্সের চিহ্ন। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষা বোধহয় এটাই যে, তা থেকে শেষপর্যন্ত দুনিয়া কিছুই শেখে না। ইতিহাস ঠিক বিবর্তন নয়, শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের মনে হয়। আর একুশ শতকের প্রেক্ষাপটে এটাই তাঁকে চিন্তিত করে। — সমকালীন সভ্যতার সঙ্গে হুয়েলবেক একটা ডায়ালগ তৈরি করেছেন, যেটা একজন আধুনিক সাহিত্যিকের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ — কোয়েন্টিন বলেছিল — যেমন মার্গারেট অ্যাটউডের ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা খুঁজে পাই, কিন্তু অ্যাটউডের ডিস্টোপিয়া, যা অনেকটাই অরওয়েলিয়ান, আমাদের সময়টাকে ধরতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় এবং শেষপর্যন্ত লিবারাল ফ্যান্টাসিতে পরিণত হয়। সেখানে ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ডের নিকটবর্তী হুয়েলবেকের লেখায় লক্ষ্য করি লিবারালিজমের ক্রিটিক, আরও সঠিকভাবে বললে লিবারাল ক্যাপিটালিজমের ক্রিটিক। বামপন্থীদের পরাজয়ের পরে একুশ শতকের রাজনীতিতে একটা বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে; বস্তুতপক্ষে, লিবারাল ক্যাপিটালিজমের বিরুদ্ধে লেফটের কোনো স্ট্র্যাটেজিই নেই, কেননা লিবারাল ক্যাপিটালিজমকে সমর্থন করার অর্থ ক্যাপিটালিজমকে সমর্থন করা এবং বিরোধিতা করলে তা আসলে লিবারালিজমের বিরোধিতা করা হয়ে দাঁড়ায়। লিবারালিজমের একটা লাইডেনফ্রস্ট এফেক্ট আছে: ঠিক যেমন খুব উত্তপ্ত পাত্রে তরলের ফোঁটা বাস্পে পরিণত হতে সময় নেয়, কারণ ফোঁটার নীচের অংশ আগে বাস্পীভূত হয়ে উপরের অংশে তাপ পৌঁছাতে বাধা দেয়, সেরকমই লিবারালিজম ক্যাপিটালিস্ট ব্যবস্থায় সিস্টেম ও তার সাবজেক্টদের মধ্যে একটা অন্তরণ স্তর হিসেবে কাজ করে; এটা এমনই ক্যাচ-২২ অবস্থা যে লেফটের কোনো সুযোগই নেই সংগঠিত হবার। অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদে এটা কোনো স্থিতাবস্থার জন্ম দেয়না, ফলে লেফটের শূন্যস্থান ক্রমশ দখল করে নেয় কনজারভেটিভ দক্ষিণপন্থীরা। তারাই হয়ে দাঁড়ায় গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের বিরোধীপক্ষ, প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার মুখ। একুশ শতকীয় পৃথিবীতে শেক্সপিয়রীয় ট্র্যাজেডি বিশেষ কিছু নেই, মোটামুটি সবদিকেই হার স্বীকার করে নেওয়া গেছে, রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আগ্রহ আছে, এরকম কোনো বামপন্থী আর ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি তাদের অনুকূলে রয়েছে বলে দাবী করেনা; এই পরিস্থিতিতে হুয়েলবেকের নৈরাশ্যবাদ ও ডেকাডেন্স একুশ শতকের সাহিত্য বলে যদি কিছু হয়, তার কেন্দ্রে অবস্থান করে।

    নানা ব্যস্ততায় লন্ডনে থাকাকালীন শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ সাবমিশন উপন্যাসটি পড়া শুরু করতে পারলেন না। একমাত্র ইউরোস্টার যখন একটা ঝলমলে দিনে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখকে প্যারিসে পৌঁছে দিল, তিনি টের পেলেন সাবমিশন ঠিক কতখানি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্যারিস শহরটার সঙ্গে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ছাত্রাবস্থায় তিনি কিছুবছর এখানে কাটিয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন গরীব আর থাকতেন এইট্টিন্থ অ্যারনডিসমেন্টের একটি চেম্বার দ্য বনে, যেগুলি প্যারিসের সবচেয়ে শস্তা থাকার জায়গা। এবার তিনি থাকছিলেন লাতিন কোয়ার্টারের একটা হোটেলে। প্যারিসে পৌঁছে পরের দিন সকালে তিনি মোনিক এস্ট্রেলা নামে একজন পুরোনো বান্ধবীকে ফোন করলেন, যে লির‍্যা পত্রিকার একজন কপি এডিটর। মোনিক তাঁকে সেদিন সন্ধ্যেবেলায় রু দ্য রিভোলির একটা পার্টিতে আমন্ত্রণ জানালো। ওখানে প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক থাকবেন, সে বলেছিল। প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক সরবোর্নে পড়ান; ফরাসী সাহিত্য সমালোচনার জগতে তিনি বেশ বিখ্যাত। ফ্রান্সই একমাত্র দেশ, যেখানে নিয়মিত উঁচুদরের সমালোচকরা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং তাঁদের চর্চা এতটাই শক্তিশালী যে তা সমসাময়িক লেখকদেরও ক্যানোনাইজ করার স্পর্ধা দেখায়। হুয়েলবেকের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে; হুয়েলবেকের সঙ্গে উনিশ শতকীয় ডেকাডেন্ট আন্দোলনের একটা স্পষ্ট যোগাযোগ আছে। সাবমিশন যেভাবে উইস্মাঁর আ রেবোয়া উপন্যাসটিকে অনুসরণ করে, তাতে বোঝা যায় হুয়েলবেক একুশ শতককে একটা ডেকাডেন্স হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু ডেকাডেন্স বলতে আমরা যা বুঝি তার থেকে হুয়েলবেক আলাদা, ডেকাডেন্সের লক্ষণগুলো যেমন অস্কার ওয়াইল্ডের গথিক নভেলে বা আরও পিছিয়ে গেলে পো-এর অন্ধকারাচ্ছন্ন গল্পে ফুটে উঠেছে (ধরা যাক, কাস্ক অফ অ্যামনটিয়াডো) — তার সাথে একুশ শতকের ডেকাডেন্সের সম্পর্ক নেই। বাহ্যিকভাবে বলা যেতে পারে, যদি লেট ক্যাপিটালিজমের নিয়ন্ত্রণাধীন একটা বড়ো শহর কল্পনা করা যায়, যেখানে ছোটো ছোটো অ্যাপার্টমেন্টে ফ্যাটফ্যাটে ফ্লুরোসেন্ট আলোয় উজ্জ্বল চার দেয়ালের মধ্যে বিচ্ছিন্ন একা মানুষ বাস করছে, যারা মূলত কনজিউমার, যাদের হেডোনিস্টিক জীবনপ্রণালীর মূল দুটি উপাংশ খাদ্য ও যৌনতা, তাহলে সেটা হবে হুয়েলবেকের ডেকাডেন্সের কাছাকাছি। যেহেতু গোষ্ঠীবদ্ধ হবার সমস্ত সম্ভাবনা এই প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ থেকে মুছে গেছে, ফলে অস্তিত্বগত সংকটই হুয়েলবেকের উপন্যাসের কেন্দ্রে অবস্থান করে। একটা আধ্যাত্মিক সংকট, যেকারণে আ রেবোয়ার মূল চরিত্রটি খ্রীষ্টের কাছে আত্মসমর্পণ করে, সাবমিশনের ফ্রাঁসোয়া ঠিক একই কারণে ইসলামের সামনে নতজানু হয়। — অথচ সাবমিশন সংক্রান্ত বিতর্কটা খুব আশ্চর্যের, তাই নয় কি? — উইস্মাঁর সঙ্গে সাবমিশনের ইন্টারটেক্সচুয়াল সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে সেদিন সন্ধ্যের পার্টিতে প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক হেসে বলেছিলেন শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখকে। প্রফেসর ফ্র্যাঙ্কের বক্তব্য ছিল ইসলামের পরিবর্তে খ্রীষ্টধর্ম-কেন্দ্রিক হলে সাবমিশন নিয়ে এত বিতর্ক হত না, কিন্তু হুয়েলবেকের উপন্যাসটা সেক্ষেত্রে দাঁড়াত না। সাবমিশনে যে এত নিখুঁতভাবে আমাদের সময়টা ফুটে উঠেছে, তার মূল কারণ ইসলাম ও ইউরোপীয় সভ্যতার মধ্যে বাস্তব দ্বন্দ্ব, যেটা আসলে লিবারাল রাজনীতির সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করে। আমি হুয়েলবেককে পছন্দ করিনা, পার্টির শেষে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে মোনিক বলেছিল, অবশ্য আমি সিলিনকেও পছন্দ করিনি কোনোদিন। আমি উপন্যাসের মধ্যে এত সিনিসিজম দেখতে চাইনা। হয়তো এজন্যে যে, আমি ভিশি গভর্নমেন্টের ইতিহাস জানি। আমি লুসিয়েন রেবাতেতের ইহুদীবিদ্বেষী প্যামফ্লেটগুলো পড়েছি। আমার মনে পড়ে আশির দশকে মার্ক-এদুয়ার ন্যাবের একটি টেলিভিশন ইন্টারভিউ, যেখানে তরুণ লেখক ন্যাব ক্রমাগত কোলাবরেশনিস্টদের সপক্ষে তর্ক করতে করতে একসময় খোলাখুলি ফ্যাসিবাদকে ডিফেন্ড করতে শুরু করেন। তুমি জানো, ঐ শোয়ের শেষে সঞ্চালক একটা টেলিগ্রাম পড়ে শোনান, যেটা ন্যাবের উদ্দেশ্যে প্রশংসা করে পাঠিয়েছিল জঁ-মারি ল্য পেনের সহকারী। হ্যাঁ, ন্যাবের এককালের হাউসমেট, ফিফটিনথ অ্যারনডিসমেন্টের ১০৩ রু দ্য লা কনভেনশনের বাসিন্দা, মিশেল হুয়েলবেক সতর্কভাবেই নিজেকে ন্যাশনাল ফ্রন্ট থেকে দূরে রেখেছেন, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। বিশেষত এখন যখন সবকিছুই বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। ফরাসী ইন্টেলেকচুয়ালদের অতি বামপন্থা বা অতি দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখে আমার ভয় লাগে। সেদিন রাতে মোনিকের সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ তাঁর হোটেলে ফিরে এসেছিলেন। সেদিন অনেকক্ষণ পর্যন্ত ঘুম আসেনি তাঁর; তিনি বেডসাইড ল্যাম্পটা জ্বেলে সাবমিশন উপন্যাসটা পড়ছিলেন। মাঝরাতে একবার তিনি উঠে টয়লেট যান; বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিনি কিছুক্ষণ জানলার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোরের দিকে একটা তন্দ্রার অনুভূতি তাঁকে বইটা রেখে শুয়ে পড়তে বাধ্য করেছিল।

    পরের দিন বিকেলবেলা শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ নদীর ধারে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ালেন; ঘন্টাদুয়েক পরে হোটেলে ফিরে তিনি শুনলেন কেউ তাঁকে ফোন করেছিল। রিসেপশনের মেয়েটি কোনো নাম বলতে পারল না, কিন্তু শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখকে জানালো এই রহস্যময় ব্যক্তিটি তাঁকে একটা নাম্বারে কলব্যাক করতে বলেছে। ফোন করতেই ওপ্রান্তে একটা মেয়ে ধরল; শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ জানতে চাইলেন কী ব্যাপার। তারপর মেয়েটি ব্যাখ্যা করল সে আসলে আর্থার ভিলেন্যুভের সেক্রেটারি; আর্থার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। খোঁড়া আর্থার ভিলেন্যুভ শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের একজন অধ্যাপক ছিলেন; তিনি একজন প্রুস্ত বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিখ্যাত। সেদিন সন্ধ্যেবেলা শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ নাইনথ অ্যারনডিসমেন্টে আর্থারের বাড়িতে গেলেন। একটা বিল্ডিঙয়ের ভেতরে সিঁড়ি বেয়ে চারতলা উঠে তিনি নেমপ্লেট খুঁজছিলেন; এমনসময় তাঁর চোখে পড়ল একটা দরজা অল্প ফাঁক-করা: ঐটাই আর্থার ভিলেন্যুভের অ্যাপার্টমেন্ট। বুড়ো আর্থার দরজার দিকে পিঠ করে জানলার পাশে একটা আরামকেদারায় বসেছিল; পায়ের কাছে একটা কুকুর শুয়ে ঘুমোচ্ছিল। দেয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে ক্রাচ রাখা। আমি প্যারিসে এসেছি জানলে কি করে? — আর্থার ভিলেন্যুভ প্রশ্ন শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন; তারপর ধীরে ধীরে বললেন, লিটেরারি সার্কলে এখনও কিছু কিছু স্পাই আছে আমার। — তুমি বড্ড বুড়ো হয়ে গেছ, আর্থার — শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ হাসলেন। আহ, ঠিক বলেছেন মাদমোয়াজেল, কিন্তু আপনারও বয়েস বেড়েছে। চুলে পাক ধরেছে দেখতে পাচ্ছি। চোখ বন্ধ করে মাথা নেড়েছিল বুড়ো আর্থার। তুমি যদি ড্রিঙ্কস চাও ইসাবেলা, তাহলে তোমাকে কাবার্ড থেকে ওয়াইনের বোতলটা বের করে বানিয়ে নিতে হবে। ওখানেই গ্লাস আছে আর ফ্রিজে বরফ। না, প্লিজ আমাকেও দিও। — তুমি কি একাই বাস করো? — দুটো গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে ঢালতে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ জিগ্যেস করেছিলেন — তোমার বয়ফ্রেন্ড কোথায়? — সেসব দীর্ঘদিন আগেই চুকেবুকে গেছে — আর্থার ভিলেন্যুভের কণ্ঠস্বর শ্লথ আর হতাশায় ভরা — যদিও তারপর আই হ্যাড পার্টনারস। জাস্ট সেক্স। বার্ধক্য সবকিছুই নষ্ট করে দেয়, ইসাবেলা। — খুব বেশি টমাস মান পড়ছ কি আজকাল? — ধীরেসুস্থে পানীয়ে চুমুক দিতে দিতে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ মন্তব্য করেছিলেন — কেননা তারুণ্যের প্রতি আর বিগত যৌবনের প্রতি তোমার টান আগে বিশেষ দেখিনি। — তুমি শুনলে অবাক হবে, আমি অনেক বছর হলো প্রুস্তও পড়িনি। বরং এখন এই বুড়ো বয়সে এসে আমাকে আকর্ষণ করে ফ্রাঞ্জ কাফকার নতুন বেরোনো লেখাগুলি। ইউনিভার্সিটির দিনগুলোতে আমেরিকান সমালোচকদের কতই গালাগাল দিয়েছি প্রুস্ত কিংবা জয়েসকে আক্রমণ করার জন্যে। সেইসব নবোকভ-পড়া সমালোচকদের আমি এখনও সহ্য করতে পারি না, কিন্তু এটাও স্বীকার করতে হবে যে, আমার মত বদলে গেছে। ক্রমশ মনে হয়েছে কাফকার অতিরেকহীন লেখাগুলি যেরকম সুস্থিরভাবে বিশ শতকের ভয়াবহতার মুখোমুখি দাঁড়ায়, তা আর কারোর ক্ষেত্রেই ঘটেনি। তুমি তো জানো সাহিত্যের অপরিসীম ভঙ্গুরতা জীবনের অর্থহীনতাকে অনুকরণ করে; যদি সমস্ত মানুষের সভ্যতাকে শেক্সপিয়ারের সঙ্গে একটি কথোপকথন হিসেবে দেখি, তাহলে আমাদের সময়টা নিশ্চিতভাবে কাফকার সাথে একটা ডায়ালগ। এবং হয়তো শেষপর্যন্ত আমাদের সান্ত্বনা হবে এই যে, অন্ধকার প্রহরগুলোতেও কাফকার লেখাগুলো আমাদের সঙ্গে ছিল। বাইরে একটা দুঃখিত রাত নেমে এসেছিল প্যারিসের রাস্তাগুলোয়; সেইরাতে আর্থার ভিলেন্যুভকে একা রেখে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ অ্যাপার্টমেন্টটা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। এখন প্রাগের ওল্ড টাউনে জ্যুইশ কোয়ার্টারের রাস্তাগুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে স্প্যানিশ সিনাগগের কাছে কাফকার মূর্তিটা দেখে আর্থারের কথা মনে পড়ল শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের — মুন্ডুহীন ধড়ের কাঁধে চড়ে বসা ফ্রাঞ্জ কাফকা; ইসাবেলার মনে হলো সেদিন আর্থারকে আরো কিছুক্ষণ সঙ্গ দিলে ভালো হতো। স্প্যানিশ সিনাগগের সামনের রাস্তাটা ফাঁকা; দুদিকে বরফ জমে আছে, স্ট্রীটল্যাম্পগুলো নিঃশব্দে জ্বলছে। কনকনে শীতের রাতে তুমি প্রাগের রাস্তাগুলো ধরে উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছ কেন ইসাবেলা? — শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ নিজেকে প্রশ্ন করলেন। চারিদিকে সাদা তুষারের মাঝে দাঁড়িয়ে তাঁর মনে হলো এটাই বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা। অথচ কোয়েন্টিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ প্রথম প্রথম খুবই সহনীয় মনে হয়েছিল, অবচেতনে সম্ভবত কোয়েন্টিনের প্রতি তাঁর আকর্ষণ আসলে ফেলে আসা যৌবনের জন্যে কাতরতা। এক-একদিন রাতে কোয়েন্টিনের প্রতি তিনি অবিশ্বাস্য যৌন আকাঙ্খা বোধ করেন, যেটা একধরনের মানসিক অশান্তির রূপ নেয় এবং তাঁকে স্থির থাকতে দেয়না। প্যারিসে সেদিন আর্থারের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে হোটেলে ফিরে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ সেরকমই অস্বস্তি অনুভব করছিলেন। ঘরে এসে আলো জ্বালেননি তিনি; তাঁর শরীর ভালো লাগছিল না। ইমেল চেক করার জন্যে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ তাঁর ল্যাপটপের লিডটা তুলেছিলেন এবং অন করে ইমেল রিডার খুলেছিলেন। কয়েকটা আনরিড মেল ইনবক্সে পড়েছিল, সেগুলো খুললেন একটার পর একটা; তিনি স্ক্রোল করতে পছন্দ করেন না। তাঁর কী-স্ট্রোকের অতি মৃদু আওয়াজ ছড়িয়ে যাচ্ছিল ঘরের স্ক্রিন-ঝলমলে অন্ধকারে। ল্যাপটপ বন্ধ করে শুয়ে পড়ার পর তিনি টের পেয়েছিলেন কতকগুলো নিঃশব্দ সাপের মতো রাস্তার আলো জানলার কাঁচ বেয়ে অন্ধকার ঘরের দেয়ালে বুকে হাঁটছে। বারবার তাঁর চোখের পর্দায় ভেসে উঠছিল কোয়েন্টিনের ল্যাংটো শরীর; তার উত্থিত লিঙ্গ। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ ছটফট করতে থাকেন বিছানায় শুয়ে; একসময়ে তাঁর তন্দ্রার ভাব পুরোপুরি কেটে যায় এবং তিনি চিত অবস্থা থেকে উপুড় হয়ে নিম্নাঙ্গে হাত বোলাতে শুরু করেন। টের পান তাঁর অন্তর্বাসের সামনের দিকটা ভিজে উঠেছে। ধীরে ধীরে ভেজা অন্তর্বাস নামিয়ে তিনি ক্লিটটার চারপাশে নিজেকে স্পর্শ করতে থাকেন: বৃত্তাকারে। ক্রমশ শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ তীব্রবেগে মাস্টারবেট করতে থাকেন। উত্তেজনার শীর্ষে পৌঁছে একটা অনিয়ন্ত্রিত কাঁপুনি ছড়িয়ে ছড়িয়ে যেতে থাকে তাঁর শরীরের পেশীগুলোর মধ্যে দিয়ে; সেদিন প্যারিসের হোটেলটায় বাকিরাত তিনি ক্লান্ত হয়ে শুয়ে ছিলেন চুপচাপ।

    প্যারিস থেকে মিলান যাবার জন্যে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ গ্যার দ্য লিয়ন স্টেশনে এসে টিজিভি ট্রেন ধরেছিলেন; তাঁর টিকিট ছিল ফার্স্টক্লাসের। সমস্ত পথটা তিনি ঠিক করেছিলেন সাবমিশন উপন্যাসটা পড়তে পড়তে যাবেন। উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেনটা যখন ফ্রান্স ও ইতালির সীমান্তে মড্যান স্টেশনে পৌঁছালো, ততক্ষণে হাতের বইটার শেষ পাতায় পৌঁছে গেছেন শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ। কয়েকমিনিট হাত-পা ছাড়ানোর জন্যে তিনি ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নামলেন। আল্পসের কোলে মড্যান একটা ছোট্টো স্টেশন। আল্পসের গা বেয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের ভৌগোলিক দৃশ্যপট বদলে গেছে এবং এই নান্দনিক পরিবেশে হুয়েলবেকের উপন্যাসটা একেবারেই বেমানান। তবুও শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের কাছে এটা একটা দৈব সমাপতনের মতো মনে হলো যে এইখানে এসে সাবমিশন উপন্যাসটা পড়া শেষ করলেন তিনি। উপন্যাসের অন্তে ফ্রাঁসোয়ার উপলব্ধি — ইসলাম তার জীবনকে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দেবে এবং শোক করবার মতো কোনোকিছুই তার আর থাকবে না, পারিপার্শ্বিকের দরুন এটার অভিঘাত শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ অনেক বেশি অনুভব করলেন। সেই বিকেলে মড্যান থেকে ট্রেনটা টানেল পেরিয়ে ক্রমে ইতালির পূর্বতন তুরিন প্রদেশে এসে ঢুকেছিল এবং একসময় মিলানে পৌঁছে দিয়েছিল শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখকে। মিলানে আলোচনাচক্র মিটে যাবার পর কয়েকজনের সাথে গাড়ি করে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ একদিন নিকটবর্তী মনজা শহরে গেলেন এক আমেরিকান এক্সপ্যাটের বাড়িতে, যিনি ছিলেন মিলানের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। একটা ছোটো পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। — এইসব পার্টি আমার পছন্দ নয় — গাড়িতে বসে একজন তরুণ ইতালিয়ান সম্পাদক টোনি সান্তোরো বলেছিল — আমি শুধু যাচ্ছি ফ্রী-তে অনেক মদ খাওয়া যাবে বলে। পার্টিতে একটি চশমা-পরা যুবক পূর্বপরিচিতের মতো শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের সঙ্গে নানারকম গল্প করছিল। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলেন না ছেলেটার সাথে তাঁর আগে কোথায় আলাপ হয়েছে। কথায় কথায় এবারের সফরে তিনি বেশিরভাগ সময় হুয়েলবেক পড়েছেন শুনে ছেলেটি ইংরেজিতে সদ্যপ্রকাশিত হুয়েলবেকের আনরিকনসাইল্ড অ্যান্থোলজির উল্লেখ করল। প্যারিসে সবাই হুয়েলবেকের কবিতাকে তৃতীয় শ্রেণীর বলে গণ্য করে, সে বলল, গদ্যের মতোই তাঁর কবিতাও একেবারেই মাধুর্যহীন, স্রেফ একুশ শতকের কনজিউমারিস্ট কালচারের অন্তঃসারশূন্যতা আর সেক্সুয়াল ডিস্টোপিয়ার অনুকথন। পার্টিটা বেশ একঘেয়ে হয়ে গেছিল কিছুক্ষণ পরেই; সকলেই নিজের নিজের গ্রুপে ভাগ হয়ে গিয়ে অনুচ্চস্বরে কথা বলছিল। কোনো এক প্রসঙ্গে উগো নামে মিলান ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক বলছিল, আমি সবসময় ছাত্রছাত্রীদের বলি যদি তোমাদের সিওরান পড়তে ইচ্ছে করে, তোমরা উনামুনো পড়ো; ট্রাবল উইথ বিয়িং বর্নের পরিবর্তে ট্র্যাজিক সেন্স অফ লাইফ। টোনি সান্তোরো চুপচাপ মদ খেতে খেতে আলোচনাটা শুনছিল; এইবার সে হঠাৎ জোরে হেসে উঠল — কেন? এমিল সিওরান আয়রন গার্ডকে সমর্থন করেছিলেন বলে তোমার পলিটিক্যালি কারেক্ট পাছা ফেটে যাচ্ছে? ব্লাডি ইউনিভার্সিটি কালচার! এরপরে ঘূর্ণির মতো একটা প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়; উগো টোনিকে ফ্যাসিস্ট শুয়োর বলে। উত্তরে টোনি উগোকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে লিবারাল পুসি এবং উগোর যৌনাঙ্গ সম্পর্কে সন্দেহপ্রকাশ করে। উগো টোনির চোয়ালে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় এবং ওদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। বাকিসকলে ওদের থামানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকেই বিরক্ত হয়ে বিদায় নেয়; এরপরে পার্টি ভেঙে যায়। সেইরাতে মনজা থেকে মিলানে ফেরার সময় শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ টোনিকে লক্ষ্য করছিলেন। গাড়ির ব্যাকসীটে জানলার ধারে চুপচাপ বসেছিল সে। মিলানে ঢোকার কিছুটা আগে হাইওয়ের ধারে গাড়িটা পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল এবং সবাই গাড়ি থেকে নেমে এদিকওদিক ঘোরাফেরা করছিল। দূরে অন্ধকার রাতের প্রেক্ষাপটে মিলান শহরের আলোকোজ্জ্বল সিটিস্কেপ। টোনি সান্তোরো সেদিকে তাকিয়ে দ্রুত একটা সিগারেট টানছিল। হঠাৎ সে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের দিকে ফিরে বলল, ওরা আমাকে ইউরোসেন্ট্রিক বলে। অবশ্যই আমি ইউরোপকে পছন্দ করি। ওরা যখন পলিটিক্যাল কারেক্টনেস দেখায়, ওদের মনে রাখা উচিত সেটা আসলে ইউরোপীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য। হ্যাঁ, উদারতা দেখিয়ে রিফিউজিদের দলে দলে ইউরোপে ঢুকতে দেওয়ার আমি বিরোধী। নইলে আগের বছর নিউ ইয়ার্সের রাতে জার্মানির কোলোনে যেমন হাজারখানেক মেয়েকে আরব রিফিউজিরা যৌন হেনস্থা আর ধর্ষণ করেছে, ওরকম ঘটনা আরও ঘটবে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা জার্মান সরকার কিভাবে করেছে? যতটা সম্ভব চাপা দিয়েছে কোলোনের ঘটনাটাকে। পুলিশকে গোপনে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে ‘রেপ’ শব্দটা সরিয়ে নিতে। ওখানকার মেয়েরা এখন সঙ্গে ছোটো অস্ত্র রাখে, কারণ তারা জানে তাদের সরকার-প্রশাসন তাদের পক্ষে নেই। ইউরোপীয় লিবারালরা মূর্খের মতো মনে করে রিফিউজিদের ইউরোপীয় কালচারে মানিয়ে নেওয়া যাবে। উত্তর আফ্রিকায়, মধ্যপ্রাচ্যে, ভারতীয় সংস্কৃতিতে মেয়েদের কিভাবে ট্রিট করা হয়, ওরা কি জানে? সেদিন রাতে টোনি সান্তোরোর পেটে অ্যালকোহলটা একটু বেশি পড়েছিল, শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ ভেবেছিলেন। প্রাগের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে স্প্যানিশ সিনাগগ থেকে ভ্‌লতাভা নদীর কাছাকাছি কখন চলে এসেছেন, তাঁর খেয়ালই হয়নি।

    সেন্ট অগাস্টিনের কনফেশনস থেকে জানা যায় মিলানের বাগানেই তিনি আর্চবিশপ অরেলিয়াস অ্যামব্রোসিয়াসকে নীরবে বই পড়তে দেখে অবাক হয়েছিলেন: চুপচাপ বসে শুধু বইয়ের লাইনগুলোয় চোখ বুলিয়ে যাওয়া, কোনো কথা না বলে অর্থাৎ জিভ আর গলাকে বিশ্রাম দিয়ে — নীরব পাঠকের এই বিখ্যাত বর্ণনা সেন্ট অগাস্টিনের দেওয়া। প্রকৃত প্রস্তাবে, লেখক এবং পাঠকের মধ্যে একজন লেখক সবসময় একজন পাঠকের চেয়ে বেশি হতভাগ্য, কারণ লেখকের নীরব থাকলে চলেনা; অথবা নীরব হওয়া মাত্রই সে আর লেখক থাকেনা। মিলানের কয়েকটা দিন শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ ব্যস্ত রইলেন নানারকম পেশাগত কাজে। যেদিন তাঁর প্রাগের ফ্লাইট ধরবার কথা, তার আগেরদিন সন্ধ্যেবেলা তিনি একটা স্থানীয় বারে গিয়েছিলেন একাই। বারের উঁচু টুলগুলোর একটাতে বসে মদ খেতে খেতে তিনি তরুণ বারটেন্ডারটিকে লক্ষ্য করছিলেন। তার চিবুকটা দেখে তাঁর কোয়েন্টিনের কথা মনে পড়েছিল। নানাকারণে ফ্লোরিডাতে তাঁদের সম্পর্কটা থিতিয়ে পড়ছিল, তবুও চলে যাচ্ছিল। — তুমি কাকে ভোট দেবে ভাবছ? — অরল্যান্ডোর কফিশপে বসে তিনি একদিন কোয়েন্টিনকে জিগ্যেস করেছিলেন। — আমি জানিনা — কোয়েন্টিন অস্বস্তিকরভাবে উত্তর দিয়েছিল — আমি শুধু বলতে পারি আমি হিলারি ক্লিন্টনকে ভোট দেবনা। বার্নি স্যান্ডার্সকে যে মুহূর্তে ডেম এস্ট্যাবলিশমেন্ট আটকে দিল, সেইমুহূর্ত থেকেই আমি সবরকম আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। তখনই শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ আশঙ্কা করেছিলেন কী ঘটতে চলেছে। ইলেকশনের আগেই তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল, শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ কোয়েন্টিনকে জানিয়েছিলেন তাঁর পক্ষে সম্পর্কটা টেনে নিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হচ্ছেনা। ইলেকশনের রাতটা পেরিয়ে যাবার পর ভোরবেলা কোয়েন্টিন হঠাৎ ফোন করেছিল। — তুমি ভুল করেছ — সারারাত জাগা ক্লান্তি নিয়ে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ বলেছিলেন — সন্দেহাতীতভাবে ভুল করেছ। আমি একটা জুয়া খেলেছি, ইজি, কোয়েন্টিনের গলার স্বর ছিল স্থির, আমেরিকার রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা আমাকে ট্রাম্প ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প দেয়নি। ফোনটা নামিয়ে রেখেছিল সে। মিলানের বারটা থেকে বেরিয়ে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ এলোমেলোভাবে হাঁটছিলেন। সেইরাতে তিনি কিছুটা মত্ততা অনুভব করছিলেন। এই যে ঝলমলে মিলান শহর, রাস্তার দুধারে ফ্যাটফ্যাটে ফ্লুরোসেন্ট আলোজ্বলা স্টোরগুলোয় মানুষের ভিড়, বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং, ট্রাম চলে গেল, হাঁটতে হাঁটতে পরস্পরকে চুমু খেল যুবক-যুবতী — এই সবকিছুই তাঁর অদ্ভুত নেশাতুর লাগছিল। প্রবল আশাহীনতা তাঁকে ঢেকে ফেলছিল ধূসর বিষণ্ণতায়; কোয়েন্টিনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি ইচ্ছা করেই ইউরোপে আসার সুযোগটা গ্রহণ করেছিলেন, মনে হয়েছিল এটা তাঁকে ধারাবাহিক বিষাদ থেকে অবকাশ দেবে। অথচ সেটা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে গেছে, শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ বিস্রস্ত পদক্ষেপে বড়োরাস্তা ছেড়ে অলিগলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলেন। তাঁর এলোমেলো ভাবনার স্রোত তাঁকে অনুসরণ করছিল। এদিকের রাস্তায় আলো একটু কম আর নির্জন; স্বাভাবিক অবস্থায় হলে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ এরকম রাস্তায় অসচেতন হতেন না। পানীয়ের প্রভাব তাঁকে অনেকখানি আলগা করে তুলেছে। কিন্তু তাঁর ঘোরটা হঠাৎ কেটে গেল, যখন রাস্তার পাশ থেকে কয়েকটা স্বর তাঁর দিকে রে-রে করে ধেয়ে এল। কয়েকজন লোক, যাদের দেখে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের আরব মনে হলো, আচমকা তাঁকে ঘিরে ধরল; তৎক্ষণাৎ তাঁর শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোতের মতো আতঙ্ক বয়ে গেল আর জার্মানির কোলোনের ঘটনাটা ঝপ করে তাঁর মস্তিষ্কে চারিয়ে গেল। ইতিমধ্যে একটা লোক তাঁর বাঁ হাতটা চেপে ধরে কী যেন বলছিল দুর্বোধ্য ভাষায়। তিনি ঘনঘন মাথা নেড়ে না বলে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। লোকটা শুনল না, জোর করে তাঁর কবজিটা চেপে ধরে একটা লালরঙের সুতো বেঁধে দেবার চেষ্টা করতে লাগল। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ টের পেলেন তাঁর হ্যান্ডব্যাগটায় টান পড়ছে আর পিছন থেকে কেউ তাঁর কোমরে খোঁচা দিচ্ছে। ব্যাগে তাঁর পাসপোর্ট আছে, টাকা আছে। লোকগুলোর তীব্র মাদকতাময় গায়ের গন্ধে তাঁর বমি পেয়ে যাচ্ছিল। দুজন লোক ক্রমাগত তাঁর কানের কাছে চেঁচাচ্ছিল টোয়েন্টি ইউরো! টোয়েন্টি ইউরো! তিনি কোনোরকমে এক ঝটকায় তাঁর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়তে শুরু করলেন। পিছন থেকে একটা হল্লা শুনতে পেলেন তিনি, আর পায়ের শব্দ। লোকগুলো তাঁকে তাড়া করে আসছে। বড়োরাস্তা কোনদিকে আন্দাজ করে তিনি দৌড়তে লাগলেন। একসময় ঝলমলে ফ্লুরোসেন্ট স্টোরগুলোর সামনে এসে তিনি হাঁপাতে থাকলেন। পিছনদিকে বারকয়েক তাকিয়ে দেখলেন তিনি। তারপর হাতের কবজিতে বাঁধা সুতোটার দিকে নজর পড়ল তাঁর। তিনি একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন সেটার দিকে: তিনি তো জানেন মিলান সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছাকাছি রাতে ট্যুরিস্টদের যেতে বারণ করা হয়; এই রাস্তাগুলোয় জিপসি আর উত্তর আফ্রিকার মাইগ্রেন্টরা আশ্রয় নেয়, যারা বিশেষত একলা লোক দেখলেই ঘিরে ধরে সুতো বা বালা কিছু একটা পরিয়ে পয়সা চায়। অথচ একথাটা তাঁর মনেই পড়েনি যখন লোকগুলো তাঁকে ঘিরে ধরেছিল; তখন কোলোনের ঘটনাটাই তাঁকে আতঙ্কিত করেছিল। বিধ্বস্ত অবস্থায় শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ সেরাতে মিলানের হোটেলে ফিরেছিলেন। প্রাগের ভ্‌লতাভা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে এইসব ভাবতে ভাবতে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ জলের সৌন্দর্য দেখছিলেন। স্রোতের মৃদু ছলছল শব্দ তাঁর কানে বাজছিল। নদীর দুপাড়ে সাদা বরফ জমে রয়েছে, কিছু কিছু পাতাঝরা গাছ তাদের ন্যাড়া শাখাপ্রশাখা মেলে ধরেছে; সারিসারি জলযান দাঁড়িয়ে রয়েছে একপাশে। ওপারে কিছুকিছু আলোকোদ্ভাসিত স্থাপত্য; মাথার ওপর একধরনের ফ্যাকাশে অন্ধকার আকাশ। প্রায় ধ্যানমগ্নভাবে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ। নদীর হিমশীতল হাওয়ায় তাঁর একটু সর্দি-সর্দি লাগছিল; দু-একবার নাক টানলেন তিনি। রাত ক্রমশ গভীর হচ্ছে; একসময় শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ হোটেলে ফেরার পথ ধরলেন।

    পরদিন সকালে বক্তৃতার পর্ব মিটিয়ে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ সময় নষ্ট না করে কলীগদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে ফিরে এলেন। আজকের দিনটায় আবহাওয়া বেশ ঝকঝকে। আজ রাতের দিকে তাঁকে প্রাগ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার ফ্লাইট ধরতে হবে। কিন্তু তার আগে তিনি একটা জায়গায় ঘুরে আসবেন ঠিক করেছেন। তাঁর প্রাগের বন্ধুরা তাঁর বক্তৃতা শুনে খুব একটা খুশি হয়নি। কুন্দেরা সম্পর্কে তাদের প্রত্যেকেরই অত্যন্ত জোরালো মতামত রয়েছে। মূলত দুটি বিবদমান পক্ষে ভাগ হয়ে তারা মতামত রাখতে শুরু করেছিল। প্রথম পক্ষ মনে করে কুন্দেরা যে এককালে কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য ছিলেন সেটা তিনি বেমালুম চেপে গেছেন। এই বক্তব্যকে দ্বিতীয় পক্ষ উড়িয়ে দেয় একারণে যে, কুন্দেরার সাহিত্যে কমিউনিজমের সঙ্গে তাঁর আজীবনের টানাপোড়েন পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। এর উত্তরে প্রথম পক্ষ জানায়, কুন্দেরা পাশ্চাত্যে গ্রহণযোগ্যতার খাতিরে নিজের যে ইমেজ সযত্নে নির্মাণ করেছেন, দ্বিতীয় পক্ষ তা পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলেছে এবং তাই তাঁর লেখায় স্তালিনের প্রতি সমর্থন তাদের চোখে পড়ছে না। বলাই বাহুল্য, দ্বিতীয় পক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে। এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই; এরকম বিতর্কের জন্যে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ প্রস্তুত ছিলেন। হোটেলে ফিরে তিনি রিসেপশনে বললেন একটা ট্যাক্সি ডেকে দিতে। ঘরে ফিরে তিনি পোশাক বদলে নিলেন; তারপর হাতের ব্যাগটা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। হোটেলের সামনে ট্যাক্সিটা তাঁর জন্যে অপেক্ষা করছিল। তিনি পিছনের দরজা খুলে সীটে বসে ড্রাইভারকে কিছু নির্দেশ দিলেন। ট্যাক্সিটা চলতে শুরু করল। রাস্তায় একজায়গায় ট্যাক্সি থামিয়ে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ কিছু ফুল কিনলেন। সকালের রোদ ক্রমশ ফিকে হয়ে গেছে, ট্যাক্সির জানলা থেকে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ লক্ষ্য করলেন, একধরনের ধূসরতা ঢেকে ফেলছে দিনটাকে। হু-হু করে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, মনে হলো তাঁর। ট্যাক্সিটা তাঁকে যে জায়গায় নামালো, সেটা একটা চওড়া ক্রসিং: পরস্পরছেদী রাস্তাগুলোর কেন্দ্রে রয়েছে একটা গোলচত্বর। সেখানে একটি নীরব ফোয়ারা দাঁড়িয়ে; সম্ভবত শীতঋতুতে সেটি বন্ধ থাকে। চত্বরটার ওপারে রাস্তার উল্টোদিকে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ দেখতে পেলেন নিউ জ্যুইশ সেমেটারির অর্ধবৃত্তাকার আর্চসমেত গেটটা। নির্জন গাছে-ঢাকা সেমেটারিতে ঢুকে পরিধি বরাবর তিনি একটা সরু পথ ধরে চলতে লাগলেন, পথের পাশে কালো ও ধূসররঙা সমাধিফলকগুলি পেরিয়ে পেরিয়ে। অল্প-অল্প তুষারপাত শুরু হয়েছে, তিনি লক্ষ্য করলেন বাতাসে তুষারের হালকা কণাগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে ইতস্তত। একসময় তিনি এসে পৌঁছলেন একটি বৈশিষ্ট্যহীন সমাধির নিকট, যার সামনের বেদীতে কিছু ফুল রাখা; অসংখ্য নুড়িপাথর ও কয়েন। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ তাঁর হাতে-ধরা ফুলের তোড়া নামিয়ে রাখলেন — আমি কিছু ফুল এনেছি তোমার জন্যে, ফ্রাঞ্জ। দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি চুপ করে; কাফকার বয়েস থেমে আছে চল্লিশে, শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ টের পেলেন তুষারপাত বাড়ছে আর আরও আরও দ্রুত তিনি ক্রমশ বুড়ি হয়ে যাচ্ছেন, দেখতে দেখতে সাদা হয়ে উঠল চারপাশ। শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ তবুও দাঁড়িয়ে রইলেন: এখন তাঁর মনে হলো সমস্ত ইউরোপ জুড়ে শুধু তুষার ঝরছে — তুষার! অনেকক্ষণ পরে তাঁর ঘোরটা কেটে গেল এবং খেয়াল হলো সেমেটারির বাইরে ট্যাক্সিটা তাঁর জন্যে অপেক্ষা করছে। একটা ভূতুড়ে ছায়ার মতো তিনি কাফকার কবর থেকে ধীরে ধীরে ফেরার পথ ধরলেন।




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    স্কেচ ৬ | পানুর মেটামরফোসিস | চালচিত্রের চালচলন | কেমন আছে ওরা? | চাও করুণানয়নে | পুত্রার্থে | সই | আপনি যেখানেই থাকুন | কিসসা গুলবদনী | জনৈক আবহ ও অন্যান্যরা | গুচ্ছ কবিতা | অমল রোদ্দুর হয়ে গেছে | ইনি আর উনির গপ্পো | দুগ্গি এল | দুর্গারূপে সীতা, ভিন্নরূপে সীতা | প্রিয় অসুখ | শল্লকী আর খলিলের আম্মার বৃত্তান্ত | রানার ছুটেছে তাই | বিসর্জনের চিত্রকলা | কল্পপ্রেম | লম্বা হাত খাটো হাত | কেন চেয়ে আছো গো মা, মুখ পানে! | ছোট্ট পরীর জন্মদিন | জাপানি পুতুল | আধাঁরে আলোঃ শারদ সাহিত্য | ইন্দুলেখার ইতিকথা | মুর্শিদাবাদ | এই দিনগুলি | জ্বিন | জোনাকি এবং ডোরেমিরা | বাসায় চুরি | বিশ্বকর্মার গুপ্তঘট | দুর্গাপূজা - দুটি প্রবন্ধকথা | টিউশন | ফেরা | মায়া | বন্দী | মেয়েদের কিছু একটা হয়েছে | কেল্লা নিজামত | সীতারাম | দড়াবাজি | মায়াফুলগাছ | যখন শ্যামের দ্বারে | কুয়াশা মানুষের লেখা | সময় হয়েছে নতুন খবর আনার | মিষ্টি চেখে ওড়িশার ডোকরা শিল্পীদের গ্রামে | নিশি | পথ | প্রাকার পরিখা | নীল সাইদার গল্প | তুষারাচ্ছন্ন ইউরোপে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের আশ্চর্য বিষাদ | দীপাবলীর বারান্দায় | কলমি শুশনি | এক অনিকেত সন্ধ্যা | গৌরি বিলের বৃত্তান্ত | আনন্দগামী বাস থেকে | মুয়াজ্জিনকে চিরকুট | দেবীর সাজে সৌরভ গোস্বামী | শরৎ ২০২১
  • অন্যান্য | ০২ নভেম্বর ২০২১ | ৫১৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বোধিসত্ত্ব ​​​​​​​দাশগুপ্ত | 49.37.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০২১ ০০:৩০500616
  • সাবমিশন উপন্যাস টা আমি পড়িনি। হুলেবেক এর  অ্যাটোমাইজ্ড ছাড়া আর বিশেষ কিছু পড়িনি।  আমার একটু  ওভারহাইপড লেগেছিল। আমি ২০০ থেকে ২০০৬ er মাঝে পড়েছিলাম। তখন একটু বিচিত্র সময় ছিল,  
    ১৯৯৮ তে জিদান রা জিতলো, ২০০২ এ সিয়োল জাপানে বাজে হারলো, বোল্টনের সেনেগালের স্ট্রাইকারটা ডিউফ না কি নাম, সে হাঁটু দিয়ে গোল করায় প্রাক্তন কলোনির কাছে হেরে গেল। ২০০৫ নাগাঅ সারকোজি উঠে এলো, ২০০৪ এই বোধ হয় মাদ্রিদ আতোচা স্টেশনে বোম্বিং হল, আগে পরে লা পেন রা বেশি ভোট পেল, মানে মারির বাবা।, ১৪% মত পেয়েছিল, এর পরে প্যারিসে রায়ট হল, প্যালিস্টানিয়ান সলিডারিটি মুভমেন্ট এর লিডারশিপের সঙ্গে ওদের লিবেরাল আর ট্রেড ইউনিয়ন আর গ্রীন দের যেটা সম্পর্ক ছিল, সেটা নষ্ট হল, হামাস রা গাজা তে ইলেকশন জেতায় একটু চেয়ার ছোঁড়া টেবিল ভাঙা পাবলিক রা আর সিরিয়া থেকে পালানো শিয়া র‌্যাডিকাল দের বড় শহর গুলোর মস্ক কমিটি তে পাওয়ার বাড়লো। 
    আমি শালা একবার রায়ট পুলিশ আর চেয়ার ছোঁড়া মুসলিম প্রোটেস্টার দের মধ্যে পরে প্রচুর ক্যাল খেয়ে যাচ্ছিলাম, লেফ্ট ব্যাংকে, কোন মতে টিউব ধরে রুজভেল্ট স্টেশনে ফিরলাম। একবার ভালৈ রায়ট হয়েছিল , সাবার্বে , মার্সেই তে, কিন্তু ২০০৬ এ ত্রেজেগুয়ে গোল করে ইউরো জেতানোয় আবার একটু ঠান্ডা হয়েছিল। তখন হুলেবেক আর কেউ বিশেষ পড়তো না, তবে নর্থ ইউরোপে আর আমেরিকায় , ওর বাজার একটু বেড়েছিল, রাসমুসেন পাওয়ারে থাকার সময় আর কিছুদিন পরে নরওয়ের সেই বীভৎঅস ফ্যাসিস্ট বন্দুক বাজের ইন্সিডেন্ট এর সময়ে। কিন্তু পরে থিতিয়ে আসে।  
     
    ২০২২ এর ইলেকশন এর কল্পিত ইলেকশন এর কনটেক্স্ট টা, সাবমিশন এর প্রেক্ষিত যা বুঝলাম। আমার ভালো ​​​​​​​লাগলো ​​​​​​​এটা ​​​​​​​লেখা হিসেবে। 
     
    আমার জেনেরালি মনে হয়েছ, ​​১৯৬৮ র ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে যেমন ড্রিমারস বানিয়ে ছিলেন বার্তোলুচি, তেমন করে ফরাসী বা ইউরোপ্যান কনটেক্স্টে, আমেরিকান ইনটেলকচুয়াল বিশেষত আকাদেমিক দের এনে ফেলা বা বোলানো যেরকম তিনজন ক্রিটিক কে নিয়ে লিখেছেন, লিটেরারি ক্রিটিসিজম এর মার্কেট কে প্যাঁক দেবার জন্য, বা প্যাসন সিরিয়ালটায় যেরকম ভাবে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিতে ইমরাল রিলেশনশিপ দেখানো হয় সেটা আনা হয়েছে।  ​
     
    ​​কুন্দেরা প্রসঙ্গে ​​প্যাঁক ​​​​​​​টাও ​​​​​​​ভালো লাগলো। কাকুতানি ​​​​​​​ইত্যাদি ​​​​​​​মজাই ​​​​​​​লাগলো। ​​​​​​​
     
    লেখক কে ধন্যবাদ। 
     
    পোলিটিকালি ​​​​​​​একটাই ​​​​​​​আমার ​​​​​​​একটু ইম্পসিবল ​​​​​​​প্রস্তাব ​​​​​​​বলে ​​​​​​​মনে ​​​​​​​হয়েছে, ​​​​​​​সেটা ​​​​​​​হল, ​​​​​​​ট্রাম্প ​​​​​​​আর ​​​​​​​ইউরোপিয়ান ​​​​​​​হোয়াইট ​​​​​​​রাইট ​​​​​​​উইং ​​​​​​​তো ​​​​​​​বেশ খানিকটা ​​​​​​​আলাদা, ​​​​​​​সেটা ​​​​​​​র ​​​​​​​একটা ইকুইভ্যালেন্স ​​​​​​​হয়েছে, ​​​​​​​সেটার ​​​​​​​আর্গুমেন্ট ​​​​​​​টা ​​​​​​​আমি ​​​​​​​ধরতে ​​​​​​​পারিনি। 
     
    কিন্তু সবচেয়ে ​​​​​​​যেট ইন্টারেস্টিং লেগেছে, সেটা ​​​​​​​হল, সেখানকার ​​​​​​​বিষয় ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​আমাদের লেখকরা ​​​​​​​লিখবেন, ​​​​​​​এটা ​​​​​​​একধরণের ​​​​​​​রাইটিং ​​​​​​​ব্যাক প্রোজেক্ট, ​​​​​​​সেটা ​​​​​​​আগের ​​​​​​​প্রজন্মের ​​​​​​​থেকে ​​​​​​​আলাদা। 
     
    লেখক ​​​​​​​কে ​​​​​​​ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। 
     
    সাবমিশন ​​​​​​​না ​​​​​​​পড়া ​​​​​​​অবদি ​​​​​​​হয়তো বুঝবো ​​​​​​​না, ​​​​​​​এটা ​​​​​​​রিভিউ ​​​​​​​না ​​​​​​​গল্প ​​​​​​​, ​​​​​​​কিন্তু ​​​​​​​সে ​​​​​​​সাসপেন্স ​​​​​​​থাক। 
     
  • Ranjan Roy | ০৩ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১০500620
  • এই রিভিউ না গল্প ভাব টাই আমাকে টেনে রেখেছিল। ভালো লেগেছে।  লেখককে অভিনন্দন। 
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2405:201:8008:c03c:2585:1e0c:89bb:***:*** | ০৩ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৩৬500627
  • এবার কোন অংশের আর্গুমেন্ট টা ধরতে পারিনি সেগুলো পর দ্য রেকর্ড বলে রাখছি ঃ 
    ১- শৈত্য ই যদি বিষয় হয় তাইলে ফ্লোরিডা হোম সিটি কেন , কনট্রাস্ট  আর সাহিত্য চর্চার বিশেষ সুনাম নেই এরকম জায়গা হয়তো চেয়েছেন লেখক
    ২. নাম গুলো একটু বেশি অবভিয়াস লেগেছে অথবা বেশি বানানো লেগেছে এবার সেটা  ডেলিবারেট তো বটেই কিন্তু কেন সেটা আমি বুঝিনি। মানে তার লিটেরারি আর্গুমেন্ট টা বুঝিনি।
    ৩. ফরাসী মুসলমান ঘৃণা আজকের কথা না। আলজেরিয়ান স্বাধীনতা বা আফ্রিকান ওয়েস্ট কোস্ট এর পোস্ট কলোনী তাদের কোনোদিনই হজম হয়নি। কলোনিয়াল পাস্ট ই ফরাসী আর বেলজিয়ান মেনস্ট্রীমের রেসিজম কে নিও লিবেরালিজম পরবর্তী , ২০০১ পরবর্তী সাদা দুনিয়ার  রাইট উই়ং পলিটিক্স এ আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। এটার রেফারেন্স পাইনি , হুলেবেকের এটাই মূল সমালোচনা। এবং এই গল্পটার এটাই প্রধান দুর্বলতা। 
    ৪. ইউরোপ, তুষারাচ্ছাদিত শৈত্য ও শ্বেতাঙ্গ বুদ্ধিজীবী র একাকিত্ব এখানে জেউয়িশ ও কাফকা রেফারেন্স আবারো আমার খুবই বেশি অবভিয়াস লেগেছে কারণ এটা তিনটি নভেলাতে উল্লেখযোগ্য ভাবে আগেই ভেঙ্গে গেছে তায়েব সালিহর সিজন অফ মাইগ্রেশন টু নর্থ, জেমস বাল্ডউইন ( গিওভানিজ রুম) , আর স্নো বলে  অরহান পামুকের উপন্যাস তিনটে তে , তাই আমি এই আর্গুমেন্ট টা ধরতে পারিনি।
    ৫. ইউরোপে এবং পশ্চিমে সাধারণ ভাবে  ওয়েলফেয়ার স্টেটের মজাটা হল সবাই এটাকে গালাগাল করে আর এটার একটা ফাইনটিউনিং প্রতিটা ইলেকশনে ই হয় আর এটা ইমিগ্রান্ট দের কাছে আরো ক্লোজড হয় তাই এটার এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর ইম্পলোসনটা টা হোয়াইট ন্যাশনালিস্স্ট দের হাতেই হচ্ছে এটা র একটা রাইট লেফট সারকুলারিটি আছে যেটার কারণে সময়ের দিক‌ থেকে হুলেবেক পাঠ ক্রমশ আরো ছোটো কাল্ট হয়ে আসা উচিত যেটা আমি জানিনা এখানে রিফ্লেকটেড কিনা।
     
    কিন্তু তাও, এত গুলো বিষয় ও ভার্বোসিটির এক্সপোজার সত্ত্বেও ,  এরকম একটা লেখা এই বয়সে লেখা সত্যিই মজার ও কমেন্ডেবল। এবং এটাই প্রতিভা।  অভিনন্দন লেখক কে।
  • সায়ন্তন চৌধুরী | ০৩ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৩৪500646
  • বোধিসত্ত্ববাবু একদমই ঠিক ঠিক বলেছেন। আমারও নানারকম দোনামোনা ছিল এটা লিখতে গিয়ে এবং শেষপর্যন্ত যেরকম ভেবেছিলাম, তা লিখে উঠতে পারিনি।
     
    যাহোক, সকলকেই ধন্যবাদ পড়ার জন্যে।
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2402:3a80:1cd0:4fff:178:5634:1232:***:*** | ০৩ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৩২500647
  •   ভাই যা লিখেছেন অসাধারণ লিখেছেন। আমি জনে জনে পড়তে দিচ্ছি , আমি ছোটো মুখে বড় কথা বলেছি হয়তো মাপ করবেন। আমরা সকলেই আপনার গুণমুগ্ধ।এবার পর পর অনেক ভালো লেখা এখানে পড়া হয়েছে। আরো লিখুন আমরা খুঁজে পড়ব। 
  • Somenath Guha | ০৩ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৯500652
  • সুন্দর লেখা, ব্যতিক্রমী। সাবমিশন পড়তেই হবে।
  • সিএস | 49.37.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০২১ ২১:৪৯500655
  • ঈদ স্পেশালে সায়ন্তন একটি গল্প লিখেছিলেন। আমি এই গল্পটিকে ঐ গল্পের কন্টিনিউয়েশন হিসেবে পড়লাম।

    কিন্তু আগের গল্পটির তুলনায় এই গল্পটি দুর্বল লাগল। মনে হল, ঐ গল্পটিতে  চরিত্ররা  ফোকাসে ছিল আর তারাই ইতিহাস আর বর্তমানের ভার বহন করছিল। এই গল্পটিতে 'লেখক' ইতিহাসের ভার বহন করছেন, ইউরোপের ইতিহাসের আর তার বর্তমানের কনফ্লিক্টের। সেই ভার লেখক, গল্পটির প্রধান চরিত্রর ওপর চাপিয়েছেন যেন।আগের গল্পটি চরিত্রগুলো থেকে শুরু হয়ে ইতিহাসের অন্তহীন আগুনের কাছে পৌঁছেছিল, লেখক পেছনে ছিলেন; এই গল্পে লেখক যেন ইতিহাস আর বর্তমান নিয়ে চিন্তিত, সেই চিন্তার প্রক্ষেপ ঘটেছে লেখাটিতে।প্রধান চরিত্রটি আর তর্কগুলোকে প্রয়োজন হয়েছে সেই 'চিন্তার' প্রকাশ ঘটানোর জন্য। 
     
    এই জন্য গল্পটিকে একটু দুর্বল লাগল।

    কিন্তু আগেও লিখেছিলাম, সায়ন্তনের লেখা আমি পেলেই  পড়ি, সুতরাং লেখার সৌন্দর্য বা গুণ নিয়ে কোন মন্তব্য নেই।

    এও মনে পড়ল যে ফুএন্তেসের Constancia and other stories বইটার প্রথম গল্পে কনস্তানসিয়া নাম্নী মাঝ বয়সী মহিলা চরিত্রটি তার সন্তান হিসেবে, যে অজাত, ফ্রাঞ্জ কাফকাকে স্বপ্নে দেখত। ফুয়্ন্তেসের গল্পে যেমন হয়, বিভিন্ন সময় আর স্থান একই চরিত্রর মধ্যে মিশে থাকে;  কন্সতান্সিয়া চরিত্রটি দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের পরে স্পেন থেকে আমেরিকা চলে এসেছিল এই গল্পের কথক চরিত্রটি - যে একজন প্রফেসর - তাকে বিয়ে করে, আবার ঐ চরিত্রর মধ্যেই রাশিয়া থেকে স্তালিন আমলে পালানো এক পরিবারের ঘটনাও মিশে গিয়েছিল। গল্পটির শেষে কথক চরিত্রটি তার বাড়িতে, এল সালভাডোর থেকে পালিয়ে আসা এক পরিবারকে আশ্রয় দেয়, (গল্পটি ১৯৮০র দশকে যখন লেখা হচ্ছে তখন এল সালভাডোর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ) অবশ্য তার আগেই কনস্তানসিয়া কথকের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। ফুয়েন্তেসের এই গল্পে কাফকা বিশ শতকের বেদনার সন্তান, বিশ শতকের ইউরোপের ক্রাইসিস অথবা তার পরের ছিন্নমূল মানুষের সাথে কাফকার মুখ যুক্ত হয়ে যায়।

    সায়ন্তনের এই গল্পটি কাফকার মুখচ্ছবি আর চোখ,  তার থেকে তৈরী হচ্ছে কিন্তু গল্পের লজিকে সেই তৈরী হওয়াতে ফাঁক থেকে গেছে বলে মনে হল।
     
     
  • ইন্দ্রাণী | ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৩:০৫500759
  • সায়ন্তনের লেখায় আগে কোনদিন মন্তব্য করি নি। আজও সম্ভবত মন্তব্য করার সঠিক সময় নয়। কারণ সায়ন্তনের লেখা বার বার পড়তে হবে আমাকে।

    সায়ন্তনের কোনো গল্পই বাংলা গল্পের চলন অনুসারী নয়। যাঁরা ব্যতিক্রমী লেখক, তাঁদের চলনেরও বাইরে সায়ন্তনের লেখা। অন্য একটা জনরা বলা চলে সম্ভবত- যেখানে ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে যাওয়া থাকে- পটভূমি, চরিত্র, বিষয় এবং ভাষা-সব দিকেই। আমার এরকমই মনে হয়।

    গুরুচন্ডালিতে সায়ন্তনের লেখা যা পড়েছি -দুটি ধরণের লেখাঃ চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, যারা আস্তাবলে আগুন ধরিয়েছিল, বুড়ো ঝিনঝিনতলা, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদকে একদিকে রাখি যদি, যে সব গল্প বাঙালী চরিত্র নিয়েই লেখা, বাঙালী পটভূমি- অথচ , আমার কী রকম মনে হয়- এই লেখাগুলিতে জীবনানন্দ আর মিশিমার( সায়ন্তনের অন্য একটি লেখা থেকেই এইটা মনে এসেছিল) যুগপৎ ছায়া পড়ে; আবার উৎসব সংখ্যার এই গল্পটি, প্রেম এবং বিভিন্ন ধারাবাহিক দৃশ্য সম্পর্কে, লরা, টিনক্যানের অবিচুয়ারি- এই গল্পগুলিতে ঐ যে লিখলাম সর্বার্থেই সীমানা পেরোনোর ব্যাপার থাকে- এই রকম মনে হয়েছে। আবার এই দুটো দিক মিলিয়ে হয়ত একটা উপন্যাস পাবো আমরা- আমাদের অসুখ বিসুখের শহরে হয়ত যার ইশারা-

    মজার ব্যাপার এই, সায়ন্তনের লেখার কিছু বৈশিষ্ট্য (বিশেষত দ্বিতীয় ধরণের লেখাগুলিতে ) যাকে সায়ন্তনের সিগনেচার বলা যায় যেমন প্রথম লাইন তো বটেই এবং ভাষায় অনুবাদের আড়ষ্টতা পাই- কিম্বা হয়ত বিদেশি লেখার ধরণ- যা বাংলায় পড়তে গিয়ে (প্রথম পাঠে) আড়ষ্ট মনে হয় আমার; বিখ্যাত কিছু নাম আসে, তুষারপাত আসে, ক্যাফে আসে, তীব্র যৌনতার বিবরণ আসে, গলা বরফের ওপর ওভারকোটের কলার তুলে হেঁটে যাবেন কেউ, অথবা যাবেন না, কিন্তু আমার মনে হবে, কেউ হেঁটে গেল- প্রথমপাঠে এই ব্যাপারগুলো আমাকে বিব্রত করে,এই সিগনেচারই আমাকে খানিকটা দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু লেখার ম্যাজিকই বলুন বা চোরা টান- আমি আবার ফিরে আসি, দ্বিতীয়বার পড়ি, তৃতীয়বার- তারপর লেখার মধ্যে ঢুকে গিয়ে নানাবিধ আবিষ্কার করতে থাকি -যা প্রথমপাঠে, দ্বিতীয়্পাঠে পারি নি।

    আমার অনুভবের মাত্রা তথা, বিশ্বসাহিত্য, বিশ্বইতিহাসের জ্ঞান এমন তুখোড় নয় যে সঙ্গে সঙ্গেই সায়ন্তনের গল্পের পাঠপ্রতিক্রিয়া দিতে পারি। গল্প পড়ে কিছু রেফারেন্স ঘাঁটতে হয়, তারপর আবার গল্পের কাছে ফিরি- এই সবে দেরি হয়ে যায় কিছু বলতে। বা বলতে গিয়েও থেমে যাই কখনও।
    পাঠক হিসেবে আরো পরিণত হয়ে উঠলে হয়ত কোনোদিন আরো লিখব সায়ন্তনের লেখা নিয়ে। পড়ি যে, এবং কীভাবে পড়ি- এইটাই জানানোর ছিল।

    সায়ন্তন, নমস্কার জানবেন আমার।
  • ইন্দ্রাণী | ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৩:৩০500760
  • একটা কাজে উঠে গেলাম। তাই লেখা হয় নিঃ

    আমাদের পাঠ্যাভ্যাস- এই টুক করে পড়ে গেলাম, চোখ বোলালাম, ভালো মন্দ দু কথায় মন্তব্য করলাম - এই জাড্যতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় আপনার যে কোনো লেখা।
    এটা বিশাল ব্যাপার। আর একটি বৈশিষ্ট্যও বটে।
  • ইন্দ্রাণী | ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৩:৪০500761
  • সরি। শুধু জাড্য হবে। জাড্যতা নয়।
  • bodhisattvagc dasgupta | ০৭ নভেম্বর ২০২১ ১৯:২০500877
  • সায়ন্তনের লেখার মত করে  সাহিত্যের বিষয়ের জগত বিস্তৃত যদি হয় সেইটেই ইন্টারনেট বাংলা র সবচেয়ে বড় ছাপ থেকে যাবে সাধারণ ভাবে আমাদের সংস্কৃতি তে। 
     
    এই তলার ছোটো ইন্ট্রো করে আমি বিভিন্ন লোককে আমি এখানকার সায়ন্তনের সহ ভালো লাগা ফিকশন ফরোয়ার্ড করছি ভাই। 
     
    ---
     
    লোকে বাংলায় অল্পবয়সী দের লেখা নতুন ফিকশন‌ খোঁজে। আমিও খুঁজি। গত বিশ‌ বছরে ইন্দ্রনীল ঘোষ দস্তিদার , শাক্যজিত ভট্টাচার্য, তারেক, শান্তনু দেবনাথ , কৌশিক দত্ত,  মুরাদুল ইসলাম সবার লেখাই পড়লাম গুরুচন্ডালি ওয়েবজিন ও বাংলা সমাজমাধ্যমে। 
    তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা একটু অদ্ভুত। এক দিক থেকে দেখলে গত বিশ বছরে  আমি নিজে্ নানা ফিকশন ও নন ফিকশন লেখা লিখতে গিয়ে সাইট টির সঙ্গে জড়িত ব্যবস্থাপক ও পাঠক দু'দলের কাছেই নানাসময়ে তীব্র ভাবে অপদস্থ ও অপমানিত হয়েছি। অনলাইন রীতি অনুযায়ী নামে ও বেনামে।  অন্য দিকে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ  থাকলেও এই লেখালিখির কারণেই একটা স্নেহের সম্পর্ক রয়েগেছে। রীতি অনুযায়ী।  এর অন্তর্নিহিত কারণ লিবেরালিজম ও তার ব্যর্থতা ও সাফল্য সম্পর্কে আমাদের সময়ের ধারণার আলোচনার অভ্যাস যেটি নিতান্তই বাঙালি। 
     
     কিন্তু যেহেতু আমি পড়া ও‌ লেখা লিখি গোটাটাই রাজনৈতিক কারণে করি তাই সব মিলিয়ে আমার কিসুতেই সেরকম ব্যক্তিগত কিসু যায় আসে নি।  তাই খোলা মনে টেকস্ট পড়তেও অসুবিধা হয় না। সামাজিক অবস্থান গত সুবিধার কারণে,
    লেখা বা পড়া কোনো টাই পরিসরের অভাবে থেমে নেই।
     
    পড়া বা লেখার অভ্যাস যেটা মানুষের চর্মরোগের  মত , একবার হলে আর যায়না, সেই জগতটার স্বাস্থ্য এমনিতেই খুব খারাপ। পাঠকের অনাগ্রহের কারণেই।  সেই অবস্থায় আজকাল লেখালিখি প্রায় ডীপ ব্লু নামক কম্পিউটারের সঙ্গে দাবা খেলার মত , যেখানে পরাজয় ই একমাত্র নিশ্চিত সম্ভাবনা  , তার অনিবার্য তা জেনেই তাকে বিলম্বিত করার প্রচেষ্টাটুকুই মজার , একাধারে অমোঘ ও মৃত্যুর মত পরিপূর্ণ।  
     
    তরুণ লেখক সায়ন্তন চৌধুরী কয়েকটা বেশ মনে রাখার মত গল্প লিখেছেন গত কয়েকবছরে । তাঁর একটির লিংক দিলাম।পড়ুন ও পড়ান। ফরাসী বিতর্কিত লেখক হুলেবেক কে কেউ বলেন ইসলামোফোবিক আর কেউ বলেন ইউরোপের শেষ শ্বেতাঙ্গ আশা বা ওয়েলফেয়ার স্টেটের সঠিক ক্রিটিক , যেটা মন দিয়ে পড়লে নাকি পশ্চিমের লিবেরাল রা  , সোশাল ডেমোক্রাট রা নাকি সেই আটোমাইজড নামক উপন্যাস টা নতুন‌শতকের শুরু র দিকে বেরোনোর সময়েই ব্রেক্সিট, নাইজেল ফারাজ আর ট্রাম্পের বিপদ বুঝতে পারতেন। ইত্যাদি। এটা‌ পশ্চিমের শিল্প জগতের আভ্যন্তরীন রাজনীতি তে একটি আপাদমস্তক দক্ষিনপন্থী প্রোপাগান্ডা হলেও সেই হুলেবেকের একটি নতুন উপন্যাসের নতুন ফরাসী ডিস্টোপিয়া কে কেন্দ্র করেই একটা নতুন গল্প ফেঁদেছেন সায়ন্তন। একটু ভারবোজ কিন্তু টাইম ম্যাগাজিনের সেই বছর তিরিশ আগের ঘোষণাটি, দ্য এম্পায়ার রাইটস ব্যাক , যেটা ভারতীয় দের ইংরেজি লেখা নিয়েই বলা মূলতঃ, তার একটা বাংলা লেখালিখির দিক থেকে বৃত্ত সম্পূর্ণ হবার সম্ভাবনা দেখা গেল বলেই মনে হয়। 
  • :-) | 185.22.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২১ ২০:০০500881
  • ইন্ট্রোতে প্রথমেই লিখতে হয় আমায় কি অপমান করেছে গোও। অন্যের লেখা ফরোয়ার্ড করতেও নিজের কাঁদুনি আগে গেয়ে নিয়ে তব্বে।
    নতুন উঠতিদের মধ্যে ইন্দ্রানি দময়ন্তি প্রতিভা সরকার স্বাতী রায় জারিফা জাহানদের নাম নেই অবশ্য স্বাভাবিক কারণেই। 
  • ধোর | 76.72.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৭500885
  • বালের গপ্প। এসব জ্ঞানমারানি লেখায় গুরু ভরে গেল মাইরি!
  • dc | 122.164.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২১ ২২:২৯500892
  • সেই এক ছিলো অপমানিত ধনখড়, আর এখন হয়েছে অপমানিত বোধিদা। এতো এতো অপমান লইয়া আমরা কি করিব? 
  • পাগল রে | 5.2.***.*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৪৫500966
  • ওরে বোধি, তুই সেই অ্যাটেনশন হাংরি ই রয়ে গেলি। সব জায়গায় এই - আমি আমি , আমার আমার - এসবের থেকে বেরিয়ে আয় রে পাগল, কি আর হবে ।
     
  • Shuvajit | 91.245.***.*** | ১৮ জুন ২০২৪ ০৬:০৪533402
  • মজার লেখা। ভাল লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন