তখন আমি ছিলাম দারুণ গরীব এবং দারুণ সুখী, হেমিংওয়ের মতো বলতে পারলে ভালো হতো; কিন্তু সত্যিটা এটাই, পকেটে পয়সা না থাকাটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। তখন আমি থাকতাম ডাউনটাউন ব্রুকলিনের একটা বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে। আমার বাথরুমটা ছিল নিজস্ব আর শুধু এইটুকুর জন্যে আমি ঐ ঘুপচি অ্যাপার্টমেন্টটা ছাড়িনি। অনেকরকম ছোটখাটো কাজ করতাম আমি, যার মধ্যে রেস্তোরাঁয় বাসন ধোয়া থেকে শুরু করে ডেলিভারি সবই ছিল। কখনও কখনও বেশ অদ্ভুত কাজে জড়িয়ে পড়তাম। ... ...
ওয়াই একজন তরুণ প্রফেসর; মাত্র কয়েকবছর আগে সে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে টেনিওর পেয়েছে। ব্রুকলিনের ক্যাম্পাসে তাকে যে অফিসটা দেওয়া হয়েছে, সেটা ছোটো হলেও তার পছন্দসই। সে প্রকৃতপক্ষে ক্যানেডিয়ান, তার কলেজজীবন কেটেছে টরন্টোতে। আন্ডারগ্র্যাডে সে জেডের ছাত্র ছিল। নিজের রিসার্চ কম্যুনিটিতে জেড একজন নামকরা গবেষক; যদিও তাদের আগ্রহ আলাদা আলাদা বিষয়ে বলে ওয়াই জেডের সাম্প্রতিক কাজগুলো সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল না। গত তিনবছরে জেডের কোনো পেপার সে পড়েনি। ... ...
লরার সাথে আমার আলাপ হয়েছিল নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে এক শীতকালীন সেমেস্টারে; আমরা দুজনেই কনভেক্স অপ্টিমাইজেশনের একটা কোর্স নিয়েছিলাম আর কোর্স প্রজেক্টে আমি ছিলাম ওর পার্টনার। লরা এসেছিল এল.এ. থেকে। নিউইয়র্কের শীত আমি পছন্দ করিনা, সে প্রায়ই বলত। ... ...
সতেরো বছর বয়সে তার ভারী ওজনের শরীরটা ও একটা ভুলভাল মেকআপ সেন্স সঙ্গে করে মনিকা ম্যাকন প্রথম টরন্টো আসে ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে। টিনএজকালে তাকে বেশ সাধারণ দেখতে ছিল আর তখনও তার কোনো বয়ফ্রেন্ড জোটেনি। একমাত্র হাসলে তাকে কিছুটা সুন্দর দেখাত, কিন্তু সে প্রায় সবসময়ই মুখ গম্ভীর করে থাকত। ইউনিভার্সিটির ক্লাসগুলো সে মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করত, যদিও মাঝারিমানের ছাত্রী হওয়ায় অনেককিছুই তার মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যেত। ... ...
ঝিরঝিরে বৃষ্টি, ভোরের আকাশ ঘোলাটে মেঘে ছেয়ে আছে; যেরকম হয়ে থাকে সচরাচর লন্ডনের আবহাওয়া। রাস্তার পাশে পার্ক-করা গাড়িগুলোর বনেট বিন্দু বিন্দু জলে ভরে যাচ্ছে। ছোটো ছোটো ফোঁটা জুড়ে বড়ো হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। শহর এখনও পুরোপুরি জাগেনি। রাস্তা, রাস্তার পাশে পেভমেন্ট, বন্ধ ক্যাফে বা পাবের বাইরে বসার জায়গাগুলো — সব আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে বৃষ্টির ধূসরতায়। ... ...
কয়েকটা নিঃসঙ্গ রেখা, যারা তার অবয়বটুকুকে ফুটিয়ে তুলেছে, তাদের সাথে সংলগ্ন হয়ে একমনে সেলাই করছিল জানলার পাশে বসে; হাতের বইটা মুড়ে আমি বললাম — এত কম আলোয় চোখ ঠেরে ঠেরে সেলাই কোরোনা অনু, চোখ খারাপ হয়ে যাবে। সে তাকাল না আমার দিকে, যেন শুনতে পায়নি, এত বেশি দূরত্বে রয়েছে; তারপর চোখ তুলে হাসল। বলল — বিকেল ফুরিয়ে এল, তুমি হাঁটতে গেলে না? ... ...
বোলানিও, যিনি সারা পৃথিবীর পাঠকদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত নাম হয়ে উঠেছেন, 'দ্য রিটার্ন' ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর একটি গল্প সংকলন; ২০১০ সালে প্রকাশিত, লেখকের মৃত্যুর সাত বছর পরে। ২০০৬ সালে প্রকাশিত 'লাস্ট ইভনিংস অন আর্থ' বইটিতে যে গল্পগুলি ছাপা হয়েছিল, তার বাইরেও বোলানিওর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গল্প রয়ে গেছিল; সেগুলি এই বইটিতে স্থান পেয়েছে। ... ...
ইউকিও মিশিমা একজন বিপজ্জনক লেখক আর একারণেই তিনি জাপানের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের একজন। ব্যক্তিগতভাবে কাওয়াবাতা, তানিজাকি, দাজাইয়ের কিছু কিছু লেখা, যা আমি পড়েছি, পড়ে ভালো লাগলেও শেষপর্যন্ত ফিরে গেছি মিশিমার কাছেই। ... ...
বালাসাহেব মারা যাবার বছরখানেক পরে বোম্বে এসেছি। সন্ধ্যের ঝোঁকে রাস্তার আলোগুলো জ্বলে উঠেছে; আলো ফেটে রঙ নাবছে, রঙ থেকে ঝিনচ্যাক রঙ। ... ...
নীলাভ আলোর ঝলকে প্রস্তরীভূত শরীরের ভেতর আদিম অন্ধকারের স্বাদ থেকে জেগে উঠে দেখলাম কোনো ব্যথা নেই, কোনো স্মৃতি পর্যন্ত নেই যে কবে শরীরের অনুভূতিসম্পন্ন স্নায়ুকোষগুলি একে একে নষ্ট হয়ে ঝরে গেছে। মৃত্যুর পরে সময়ের কোনো চেতনা অনুভব করিনি আর। তাই জানিনা কতদিন শুয়ে আছি এই গ্রহের মাটিতে প্রায় জীবাশ্ম হয়ে, পাথরের দৃঢ় শরীরে গেঁথে আছে আমার কঙ্কাল, তবু জেগে ওঠবার প্রেরণা সংগ্রহ করে নিতে হলো নীল আলোর বৃত্তটায় করোটির কোটরদুটো ধাঁধিয়ে যাবার ফলে। ... ...