এই ঘটনাটা আমার নিজের দেখা। বেশ কিছুদিন আগে বালুরঘাটে হাউজিং এস্টেটে আমার প্রতিবেশী ছিলেন এক হাসিখুশি লক্ষ্মীমন্ত মহিলা, সরকারি চাকুরে। খুব দীর্ঘ চুল ছিল তাঁর, বড় করে সিঁদুর পরতেন। আজ এত দিন পর তাঁর মুখের হাসিটি ছাড়া এইটুকুই মনে পড়ছে। কিন্তু তাঁর সম্বন্ধে সবাই যে গুজগুজ করতো সেটা ভুলিনি। তাঁর অপরাধ ছিল অন্য ধর্মে বিবাহ। শিক্ষিত আধুনিক স্বাবলম্বী এই নারী এক হিন্দু স্কুলশিক্ষককে বিয়ে করে সুখে সংসার করছিলেন, আপাত দৃষ্টিতে তাঁর হাসি মুখ তাই-ই জানান দিত, অথচ তাঁকে নিয়ে চর্চা থামেনি। শুনেছিলাম তাঁর শ্বশুরবাড়ির সক্রিয় সহযোগিতায় ভারত সেবাশ্রম সংঘ বিয়ের আগেই বিরাট যজ্ঞের আয়োজন করে তাকে গোময় সহ পঞ্চগব্য খাইয়ে "শুদ্ধিকরণ" সম্পূর্ণ করেছিল।
তখন সামাজিক চর্চা ছাড়া আর কোন প্রতিকূলতা তাঁকে বোধহয় সহ্য করতে হয়নি। এই ঘটনাটা যদি এখন কোনো বিজেপিশাসিত রাজ্যে ঘটে তাহলেও কোনও প্রতিকূলতাই সহ্য করতে হবে না। বরং স্বামীটি হয়ত ঘর ওয়াপসি বা বেটি বচাও/বহু লাও প্রজেক্টে পুরস্কৃত হবেন। কারণ এই প্রজেক্টগুলো এবং লাভ জিহাদের পরিকল্পনা দক্ষিণপন্থীদের হাতে সংখ্যালঘু শায়েস্তা করার অস্ত্রমাত্র। আর সবার কাছেই মেয়েরা হচ্ছে সম্পত্তি। নিজের ধর্মের মেয়ে বিয়ে করলে সবচেয়ে ভাল, অন্য ধর্মের মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলে তাকে গোবর খাইয়ে শুদ্ধ করে নিন, ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে নিন, তেমন ঝামেলা হবে না। ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা উঠিয়ে দেওয়া মাত্র গোটা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাশ্মীরের মেয়েদের জন্য কেমন জিভের জল ফেলা শুরু হয়েছিল, মনে আছে তো? ফলে হিন্দু পুরুষ মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করলে ঠিক আছে, কিন্তু উল্টোটা কদাপি নয়।
লাভ জিহাদের থিয়োরি কেবল সংখ্যালঘু বিরোধী নয়, প্রবল ভাবে নারীবিরোধী। এতে ধরেই নেওয়া হয় নারী কখনই তার নিজের জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে না। নিজের পার্টনার এবং ধর্ম বেছে নেবার কোন যোগ্যতাই তার নেই। তাকে সবসময়েই অন্য কারো "প্রটেকশনে" থাকতে হবে। সেইজন্যই বোধহয় কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এই আইনকে দু হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন এই আইন মেয়েদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী।
আদিম যুগের গোষ্ঠী লড়াইতে লুটের মাল ছিল মেয়েরা। প্রজনন, চাষবাস, গৃহকর্ম, যৌনতা, তাদের উপযোগিতা কি কেবল একটা! যত পার ধরে আন, কিন্তু নিজের গোষ্ঠীর মেয়ে লুট হলেই বেজায় ক্ষতি। পরবর্তীতে বলা হতে লাগলো সেরা ক্ষতি নাকি ইজ্জতের।
এই ইজ্জতের দোহাইতে মুড়ে এ কালে বানান হয়েছে লাভ জিহাদ, যদিও এদেশে কোথাও হিন্দুত্ববাদীদের বানানো অর্থে লাভ জিহাদ হয়েছে এমন প্রমাণ নেই। অর্থাৎ প্রেমের ভান করে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় লাভ তুলতে চাইছে কোন সংখ্যালঘু যুবক, এরকম প্রমাণ আজও নেই। প্রমাণ নেই যে এই কাজের দ্বারা সে হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করা যায়নি যে হিন্দু রমণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সে প্রথমে তাকে ধর্মান্তরিত করে, বিবাহ করে, তারপর বিপুল প্রজননের মাধ্যমে হিন্দুদেরকেই সংখ্যালঘু করে দেবার খেলায় মাতে। এই অসম্ভব পরিকল্পনার সপক্ষে কোথাও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। লাভ জিহাদের পেছনের আসল মতলব সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও ধর্মীয় কারণে সংখ্যালঘুকে বিপাকে ফেলার কায়দা। ফলে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে এর স্বপক্ষে আইন প্রণীত হয়েছে বা হতে যাচ্ছে। তা করতে গিয়ে যে পছন্দ মত বিবাহের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারটিই অবলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে সে পরোয়া কারও নেই।
আসলে লাভ জিহাদ যতো না সামাজিক বা ধর্মীয়, তার থেকে অনেক বেশি একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনা। সেইজন্য এর পাশাপাশি বিজেপির তুমুল উৎসাহ ঘর ওয়াপসি কর্মসূচিতে। নিশ্চুপে এটা ঘটানো হচ্ছে, ফলে মিডিয়ার সব মনোযোগ লাভ জিহাদে। ২০১৪-তে ক্ষমতায় আসবার পরেই আগ্রা শহরে ঘর ওয়াপ্সি অনুষ্ঠানের কথা প্রথম জানা যায়। সেই ডিসেম্বরে হিন্দু জাগৃতি সমিতি ৫০ টি মুসলমান পরিবারকে ধর্মান্তরিত করেছিল। তাদের নাকি একটি করে বাড়ি করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয় বারের ক্ষমতাপ্রাপ্তি আরো দুঃসাহসী করেছে, ফলে অতিমারীর মধ্যেও হরিয়ানা এবং দিল্লিতে ঘর ওয়াপ্সি কর্মসূচির কথা শোনা গেল। এমনকি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও ২০১৬ সালে কোঝিকোড়ে বিজেপির ন্যাশনাল কাউন্সিল মিটিংয়ে একটু রেখেঢেকে হলেও মুখ খুলেছেন। দীনদয়াল উপাধ্যায়কে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মুসলমানদের পুরস্কৃত বা তোষণ করবার দরকার কী! তাদের ত্যাগ ক'র না, বরং শুদ্ধির পর নিজের করে নাও। আরো বলা হয়, মুসলমানদের "ভোট কি মান্ডি কা মাল" ভাবার দরকার নেই, "উনহে আপনা সমঝো।" অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে, সব মুসলমানই এককালে হিন্দু ছিল, এখন গোবর টোবর খাইয়ে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এস। সারা ভারতে অখণ্ড হিন্দুসাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হোক। বিবিধের মাঝে মহান মিলন দেখার অভ্যেস এবং আশা আমরা যেন ত্যাগ করি। বেটি বচাও, বহু লাও প্রকল্পে তাই হিন্দু মেয়েদের মুসলমান প্রেমিকের হাত থেকে বাঁচাতে হবে, যদিও মুসলমান মেয়েদের বৌ করে আনবার ইচ্ছে রাজনৈতিক ভাবে লাগামছাড়া। তাতে হিন্দুর বংশবৃদ্ধি ঘটবে, মুসলমানদের ক্ষয় হবে। সব ব্যাপারটাই ঘটে যাচ্ছে মেয়েদের পণের কড়ি করে। কিন্তু কী আর করা। মেয়েরা দুর্বল, চিন্তাশীলতা বর্জিত অবমানব, তাই তাদের হয়ে সমস্তটাই ঠিক করে দেবে এই আলফা মেল থিয়োরি। তবে এই চূড়ান্ত দুর্বল এজেন্সিহীন মেয়েদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে আলফা মেলের হাত কাঁপেনি। লাভ জিহাদ আইনে নারীও শাস্তিযোগ্য।
লাভ জিহাদ থিয়োরির কতগুলো চমকপ্রদ দিক আছে। এটা ধরেই নেওয়া হয় যে হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ নয় এবং তারা দুর্বল। উল্টোদিকে মুসলমানরা ধর্মীয় কারণে প্রবল সঙ্ঘবদ্ধ এবং শারীরিক ভাবেও প্রচণ্ড শক্তিশালী। মিনমিনে হিন্দু পুরুষের বিপরীতে তাই লাগামহীন মুসলমান পৌরুষ হিন্দু মেয়েদের পথভ্রষ্ট করতে পারে। ধরে নেওয়াই হল এই সংখ্যালঘু যুবকদের কাছে লাভ জিহাদ হচ্ছে খুব স্বাভাবিক একটি কাজ, কারণ তারা স্বভাবে ধর্ষক এবং কামলোলুপ। স্বভাবলোলুপতা, হিন্দু মেয়েকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফুসলাবার দক্ষতা, প্রবল কামতৃষ্ণা এবং প্রবল ধর্মীয় গোঁড়ামি, সংখ্যালঘু যুবকের এই চরিত্র চিত্রায়ণ ছড়িয়ে দেওয়া হল। অনায়াসে এইভাবে একই ন্যারেটিভে বুনে দেওয়া হল সংখ্যালঘুর প্রতি অবিশ্বাস এবং পিতৃতান্ত্রিক ভাবনা চিন্তাকে। হিন্দু আইডেন্টিটি, হিন্দু নেশন গড়ে উঠবে সংখ্যালঘুর ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক আইডেন্টিটিকে বলি দিয়ে, অবলুপ্ত করে এবং সেই নেশনে হিন্দু মেয়েদের নিজস্ব ভালবাসার আকাঙ্ক্ষা এবং স্বাধিকার বলে কিছু থাকবে না। সবটাই চলবে হিন্দুত্ববাদী আলফা মেলের নির্দেশানুসারে।
মনে পড়তে বাধ্য নাৎসি আমলে জার্মানিতে ন্যুরেমবার্গ আইন প্রণয়নের কথা, যাতে ইহুদি পুরুষ কোনো অ-ইহুদি নারীকে বিয়ে করতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তখনও সংখ্যাগুরু দেশবাসীর মনে একধরনের নিরাপত্তাহীনতার বোধ জাগিয়ে তোলা হয়েছিল ইহুদিদের সম্বন্ধে নানা মিথ্যে রটনার মাধ্যমে। যৌন আশংকাও সৃষ্টি করা হয়েছিল ঠিক আজকের মতো যে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে শিগগিরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সংখ্যাগুরুকে টপকে যাবে৷ আর্য সাম্রাজ্যের জায়গায় শুধু হিন্দু সাম্রাজ্য বসিয়ে নিলেই হল। এইগুলো সবই একটি বৃহত্তর নীল নকশার অংশভাগ। সেদিনও তাই ছিল, আজও তাই।
গত ২৪ নভেম্বর উত্তর প্রদেশ এই ব্যাপারে অর্ডিন্যান্স (Prohibition of Unlawful Religious Conversion Ordinance, 2020) জারি করে। বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিত করলেই জরিমানা এবং ১০ বছরের জেল। এতে উৎসাহিত হয়ে হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, আসাম এবং কর্ণাটকও অনুরূপ আইন প্রণয়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। উত্তরপ্রদেশ তো এতটাই উৎসাহী যে এখন কোনো ভিন্ন ধর্মের নরনারী বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করাতে গেলেও তাদের এরেস্ট করে লাভ জিহাদের অভিযোগে জেল খাটানো হচ্ছে। যেমন হয়েছে মোরাদাবাদে রশিদ ও পিংকির সঙ্গে। পিংকির মায়ের অভিযোগ মেয়েকে ফুসলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ধর্মান্তরিত করে বিবাহ দেবার জন্য। কিন্তু বাইশ বছরের পিংকিকে হোমে পাঠিয়ে এবং রশিদকে জেলে পাঠিয়েও পুলিশ লাভ জিহাদের মামলা টেকাতে পারল না, তবে মাঝখান থেকে নিরপরাধ রশিদের ১৫ দিনের জেল খাটা হয়ে গেল।
এইসব হয়ে চলেছে কেরলের হাদিয়া- কেস এবং অন্যান্য কেসে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর পছন্দ এবং বিবাহের স্বপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রুলিং থাকা সত্ত্বেও। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকে গুরুত্ব না দিয়ে আরএসএস এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলি গোরক্ষা এবং হিন্দু নারীরক্ষাকে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাজেন্ডা করে তুলেছে। নারী এবং গরু, দুইই তাদের কাছে সমার্থক। দুই ক্ষেত্রেই টার্গেট হচ্ছে সংখ্যালঘু। আয়রনিও লজ্জায় মুখ ঢাকবে যদি এর সঙ্গে যোগ করি এই তথ্য যে বহু বিজেপি নেতা এবং তাদের ছেলেপুলেরা আকছার অন্য ধর্মে, অন্য বিশ্বাসে বিয়ে করে চলেছে।
হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বর্তমান শাসকের চেষ্টার কোনো খামতি থাকবে না একথা ইতোমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে দেশের আইন, সংবিধান, ইতিহাস এমনকি ইতিহাসাশ্রয়ী কাহিনিগুলিকে নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে তার কোনো জুড়ি স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে নেই। লাভ জিহাদের ক্যাম্পেন তার শেকড়ে যাতে রস পায় তার জন্য মুসলিম পুরুষের এক স্টিরিওটাইপ গড়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। তার ঢালাই হয়েছে আলাউদ্দিন খিলজির আদলে। মালিক মোহাম্মদ জয়াসি রচিত কাল্পনিক গাথার ঐতিহাসিক সত্যতা থাক নাই থাক, বলিউডি সিনেমা হিট হবার পর থেকে সতীরাণী পদ্মাবতীর ওপর আলাউদ্দিনের লোলুপতা আপামর মুসলিম পুরুষে দেখার চল বেড়েছে। অথচ ঐ একই সময়ের ভিন্ন ধর্মে, ভিন্ন জাতে মন দেওয়া নেওয়ার একটি গাথাকে ইচ্ছে করেই ঠেলে ফেলা হয়েছে বিস্মরণের খাদে। আলাউদ্দিন চিতোর আক্রমণের কিছু পরে জালোর আক্রমণ করে। কিন্তু তারই নিজের কন্যা জালোরের রূপবান রাজপুত্রের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। আলাউদ্দিন অনেক বোঝালেও মেয়ে বাপের কথা শোনে না, প্রেমিককে ত্যাগ করে না। রণাঙ্গনে দুপক্ষের দেখা হয় এবং জালোরের রাজপুত্র আলাউদ্দিনের হাতে নিহত হয়। এ খবর পাওয়ামাত্র আলাউদ্দিন-কন্যা শোকাকুলা বিধর্মী নারীদের মতোই অগ্নিকুন্ডে প্রাণ বিসর্জন দেয়। এই কাহিনি ১৫ শতকে মারাঠিতে লিপিবদ্ধ করেন পদ্মনাভ। জয়াসি-র পদ্মিনী লাভ জিহাদের হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পে দিব্যি খাপ খেয়ে যায়, তাই তাঁকে নিয়ে শুরু হয় ইতিহাসের ছলনা। জালোরের রাজপুত্র খাপ খান না, তাই তাঁকে নিয়ে কোনো সিনেমাও হয় না, আলোচনাও না।
লাভ জিহাদ কী এবং কীভাবে জানতে হলে হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির ওয়েবসাইট দেখতেই হবে। এটি একটি যুদ্ধ যা জিহাদিরা প্রতারণামূলক প্রেমের মাধ্যমে হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে শুরু করেছে। জিহাদিরা ফাঁদ পাতে কোচিং ক্লাসে, স্কুলে, কলেজে, মোবাইল চার্জিং সেন্টারে, বিউটি পার্লার, স্পা ইত্যাদি স্থানে। ওয়েবসাইট আরও বলে দেয় স্কুল কলেজের বাইরে বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি, মোবাইল বেশি ঘাঁটাঘাঁটি, ফিল্মি কায়দায় কোনো ফেক বিপজ্জনক ঘটনা থেকে হিন্দু মেয়েকে উদ্ধার, এইসব ঘটতে থাকলেই সাধু সাবধান। এমনকি সংখ্যালঘু ছেলেকে প্রকাশ্যে বেশি প্রাইজ দিলেও বিপদ। ওটা হিন্দু বালিকাকে পটানোর কায়দা হলেও হতে পারে। কোনো মুসলমান হিন্দুদের আদবকেতা নকল করলেও সাবধান। মেয়ে থাকবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে, গরবা নাচ, নবরাত্রি ফেস্টিভ্যাল এইসব থেকে শতহস্ত দূরে। কারণ ঐসব দিনেই ব্ল্যাক ম্যাজিক ব্যবহার করে বশীকরণ জমে ওঠে।
এসব শুনলে প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় লাগামছাড়া হাস্যরসের। কিন্তু ক্রমে ক্রমে আমার রসবোধ এবং বিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে। লাভ জিহাদের ইস্যুকে শিক্ষিত বাঙালি রাজ্যপালের লাগামছাড়া সমর্থনের পর সত্যিই জানি না কতজন সংখ্যাগুরু বাবা মা এইসব শলা পরামর্শ হেসে উড়িয়ে দেবেন!
এই দরকারি কথাগুলো আরও বেশি করে বলা দরকার। প্রকাশ্যে আনা দরকার বিজেপি নেতাদের পরিবারে অন্য ধর্মে বিসসয়ের ঘটনাগুলো। 1993 সালে আড়বানী লন্ডনে ভাইঝির মুসলিম ব্যবসায়ী বিয়েতে হাজির ছিলেন। বিজেপির প্রিয় আইনজীবী হরিশ সালভে সম্প্রতি হিন্দু বৌ ছেড়ে ক্রিশ্চান বিয়ে করেছেন।
কথায় বলে 'দুর্জনের ছলের অভাব হয় না'। দুর্জনের 'যুক্তি' হয় না , শুধু ছলই হয়। কুযুক্তির কারবারিদের কাছে বিবেক বা ন্যায়নিষ্ঠা অপেক্ষা করা মূঢ়তা। তবু বলতে হবে, তবু প্রতিবাদ করতে হবে। নয়তো এই লোকগুলি ভাববে একমাত্র তারাই ভারতবর্ষ। সবাই তাদের মতো গোসন্তান।
প্রত্যাশিত বিবেকের আহ্বান এই লেখা । যথারীতি আত্মবিশ্বাসী, অনুচ্চকিত , দৃঢ় ও যুক্তিশীল ।
তোমার লেখাটা আমার এক বড় বোনকে পাঠালাম। ৭৬ সালে বিশেষ ম্যারেজ আইনে বিয়ে করলেও স্বামীটি এখন ইসকনে পড়ে থাকে। বোনকে তার বাবার বাড়ির সাথে এমনকি ( ওরা প্রবাসী) মুসলিম কারও সাথে যোগাযোগ করতে দেয় না। শাখা সিঁদুর না পরলে চরম অশান্তি করে আবার চরম ভালোবাসায় পা জড়িয়ে থাকে। অপ্রকাশ্যে প্রচুর টাকা দিচ্ছে রাজ্য বিজেপির ফান্ডে।
জার্মানির কথাই বারে বারে মনে হচ্ছে। ঠিক এইভাবেই ধাপে ধাপে অচ্ছে দিন এসেছিল সেখানে।
তবে বিজেপির কে কোথায় পরধর্মে বিয়ে করেছে সে আলোচনা বন্ধ হোক। আমাদের আগে সে খবর তার পার্টির বেরাদর রা জানে। তাদের কপালে দুঃখ নেমে আসতে দেরি হবে না। নাৎসি এস এস বাহিনীর থেকে ছোট নেতাদের ইহুদি আত্মীয় রাও রক্ষা পায় নি। কি দরকার তাদের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে।
ত্রিশ দশকের জার্মানি যেভাবে কপি পেস্ট হয়ে ফিরে আসছে, এ সত্যি ২০১৪ তো বটেই, ২০১৬ অবধি এতটা ভাবা যায়নি। নোটবন্দীর পর থেকে অর্থনৈতিক অধোগমন আর এইসব ন্যারেটিভের রমরমা যেন একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। জানিনা এর শেষ কোথায়, কিভাবে। মাঝে মাঝে মনে হয় গোটা দেশটাই সুইসাইডাল হয়ে গেছে
দুর্ভাগ্য এই যে মহিলা রা এই শাসনের বড় ভোটার
ঠিক কথা। মেয়েদের নিজের ধর্ম বেছে নেওয়ার অধিকার দরকার। ধর্ম না পাল্টালে সম্পত্তি পাবে না- এই কালা কানুন বাতিল হোক।
If a Hindu woman enters into a matrimonial with a Muslim man without converting to Islam beforehand, the marriage would neither be “regular” nor “valid”, under the existing laws. While the wife in such a case will be entitled to dower (mehr), she cannot inherit her husband’s property, the Supreme Court (SC) has ruled.
https://www.proptiger.com/guide/post/property-rights-of-hindu-wife-of-muslim-husband
হ্যাঁ সমস্ত মেয়ে সমান গণ্য হোক। নরেন দশলাখি স্যুট পরে ঘুরবে আর যশোদা একটা বাঁধনি সিল্কও পরতে পাবে না এই অন্যায় বন্ধ হোক।