এটি কোনো বইয়ের বিজ্ঞাপন নয়
তথাকথিত নীচু জাতের নারীর সঙ্গে তথাকথিত উঁচু জাতের পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তানের জাত কী হবে সুপ্রিম কোর্টে এইরকম একটি কেস উঠেছিল(civil appeal no 654 of 2012, decided o January 18, 2012)
সুপ্রিম কোর্টের অবজারভেশনের একটি অনুবাদ নীচে রইল।
ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ যদি আদিবাসী এবং অ-আদিবাসীর মধ্যে হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয়, সন্তান পিতার কাস্টেই পরিচিত হবে।১ এই ধরে নেওয়াটা জোরদার হয়, যদি এইরকম বিয়েতে পুরুষটি উঁচু জাতের হয়। কিন্তু এই ধরে নেওয়া সিদ্ধান্ত হিসেবে কখনই অপরিবর্তনীয় নয়। এইরকম বিয়ের সন্তানের প্রমাণ করার স্বাধীনতা থাকবে যে সে শিডিউল কাস্ট/ ট্রাইবের মায়ের দ্বারা আজন্ম পোষিত হয়েছে। উঁচু জাতের পিতার সন্তান হয়ে সে জীবনে কোনো সুযোগ সুবিধেই পায়নি, উপরন্তু বঞ্চনা, অমর্যাদা, অপমান এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছে, যেমনটি তার মায়ের কাস্টের লোকেরা হয়ে থাকে।
তাছাড়াও সন্তানটি মায়ের কাস্টের লোকেদের দ্বারা তাদেরই একজন বলে বিবেচিত হয়েছে এবং সেই কাস্টের বাইরের লোকেরাও তার সম্বন্ধে একইরকম ভেবেছে।
এই কেসে এপেল্যান্টের ট্রাইবাল সার্টিফিকেট কেড়ে নেওয়া হয়েছে, শুধুমাত্র সে ক্ষত্রিয় পিতার ঔরসজাত বলে।
এই কারণে হাই কোর্টের এবং স্ক্রুটিনি কমিটির রায় যুক্তিযুক্ত নয়। এইজন্য স্ক্রুটিনি কমিটির কাছে দু-পক্ষের প্রমাণ খতিয়ে দেখে নতুন সিদ্ধান্তের (fresh decision) জন্য কেসটি আবার পাঠানো হল।
এক মেধাবী ছেলে, মাথায় ইট বয়ে, রাজমিস্ত্রির কাজ করে জেনেরাল কোটায় সুযোগ পেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছিল। মনুবাদী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিরোধ বাধায় তাকে এবং আরও দুজনকে সাতমাস ধরে স্টাইপেন্ড বন্ধ করে রাখা হয়, যা ছিল তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। শুধু তাই নয়, হস্টেল থেকেও বিতাড়িত করা হয়েছিল তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছতলায় ধরনায় বসেছিল তারা অনেকদিন। কেউ ফিরেও দেখেনি।
এত অপমান আর কষ্ট যে কারও জীবনকে অর্থহীন করে দেয়। মেধাবী ছেলেটি আত্মহত্যা করে। তার সুইসাইড নোট সবাই পড়েছে। যে হতে চেয়েছিল নক্ষত্রের সন্তান, তাকে হতে হয় অর্থহীন ভষ্ম।
ছেলেটির মা ছিল দলিত সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র। সন্তানদের জন্ম দিয়েই খালাস ওবিসি পিতা তাকে ত্যাগ করে। ছেলেটির মা সিংগল মাদার হয়ে দলিত গ্রামে বাচ্চাটিকে বড় করে। জেলা প্রশাসন দলিতের সার্টিফিকেট দেয়।
আজ আদালতের রায়ে বলা হচ্ছে ছেলেটি দলিত ছিল না। তখনকার ভিসি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সবাই বেকসুর খালাস!
কংগ্রেস আমলে এই রায় বার হওয়া খুবই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। দলিতরা বিরুদ্ধে চলে যাবে। কিন্তু এ মামলা আজকের নয়। সাত বছর ধরে চলেছে, কিন্তু রায় বেরোয়নি। আজ চার পাঁচমাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে গেল।২ রোহিত ভেমুলা নাকি দলিতই ছিল না। জাল সার্টিফিকেট যোগাড় করে সে পড়াশুনা করেছিল, তাই ভয়ে আত্মহত্যা করেছিল! সে যে জেনেরাল কোটায় সর্বত্র সুযোগ পেত, তার কাস্ট সার্টিফিকেটের দরকার পড়েনি, এটাও মহামান্য আদালত নিশ্চয়ই বিবেচনা করেছেন। তার মৃত্যুর আগে যেসব তার ওপর যেসব অত্যাচার হয়েছিল, (তখন কেউ কাস্টের কথাই তোলেনি) তাও বিবেচিত হয়েছে নিশ্চয়ই।
যারা বলে দলিত না হলে দলিতদের নিয়ে লেখালেখি করা যাবে না, তাদের জয় হোক!
বিচার ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের জয় হোক!