ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার (১৭.০৭.২০২০) একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম – “As India skyrockets past 1 million coronavirus cases, a mystery surrounds death toll”। এই প্রতিবেদনে ভারতে সংক্রমিতের হার এবং মৃত্যুর সরকারি হিসেব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে – “Experts say government data on deaths is certain to be incomplete in a country where a large majority of people die in rural areas and without any medical attention, making them less likely to be tested or diagnosed. Already there are numerous signs that coronavirus deaths are being missed or misreported.” সাথে যোগ করা হচ্ছে যে রাশিয়াতে কনফার্মড কেসের প্রেক্ষিতে মৃত্যু ১.৬%, আমেরিকাতে ৩.৯% আর ভারতে সে হার ২.৬%। রাশিয়া এবং ভারত উভয় দেশের ক্ষেত্রেই মৃত্যু হার নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে বহুল প্রচারিত আমেরিকান দৈনিকে। নেচার পত্রিকার প্রতিবেদন (১৫.০৭.২০২০) “Plug COVID-19 research gaps in detection, prevention and care”-এ বলা হচ্ছে – “An analysis this month found that clinical trials to treat COVID-19 were often redundant and uncoordinated: one in six focused on using malaria drugs for hospitalized patients.” ইংল্যান্ডের RECOVERY ট্রায়ালে ৫.০৬.২০২০-এ সংশয়াতীতভাবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন পরিত্যক্ত হবার পরেও এর ব্যবহার এখনও চলছে, এমনকি ivermectin বলে একটি ওষুধেরও। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে সর্বশেষ রিপোর্ট বেরিয়েছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ “Hydroxychloroquine with or without Azithromycin in Mild-to-Moderate Covid-19” শিরোনামে (২৩.০৭.২০২০)। এ গবেষণাপত্রের সিদ্ধান্ত হল – “Among patients hospitalized with mild-to-moderate Covid-19, the use of hydroxychloroquine, alone or with azithromycin, did not improve clinical status at 15 days as compared with standard care.”
এতসবের পরে যে সারসত্যটি আমাদের কাছে পড়ে থাকে তা হল গত ডিসেম্বর থেকে যে মারণ ভাইরাস-বাহিত রোগের সূচনা হয়েছিল তা আজ আক্ষরিক অর্থে অতিমারির চেহারা নিয়েছে। ২১৫টি দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। worldometer-এর তথ্য অনুযায়ী (২৪.০৭.২০২০) পৃথিবীতে সংক্রমিতের সংখ্যা ১৫,৬৮৫,০৯৪। মৃত ৬৩৭,২৩১ জন মানুষ। সেরে উঠেছে ৯,৫৬৯,৩৭৭ জন। কবে এ রোগ বিদায় নেবে পৃথিবী থেকে তা বিজ্ঞানীদের অজানা এবং একইসাথে সাধারণ মানুষ অনিশ্চয়তার গুরুভার শিকার। আরএনএ গোত্রভুক্ত এই বিটা করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে এখনও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মেধার বিজ্ঞানীকুল স্বল্প পরিমাণে জেনে উঠতে পেরেছেন। কত সংখ্যক ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সংক্রমণ হবে – অজানা। শরীরের ভেতরে প্রবেশের পরে কিভাবে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়, নিত্য নতুন উপসর্গ কি পদ্ধতিতে হচ্ছে, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় প্যাথোফিজিওলজিকাল পরিবর্তন, তাও অজানা। এমনকি আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কোথায় কোথায় এবং ঠিক কি নির্দিষ্ট পথে আক্রমণ করে ও পরিবর্তন ঘটায় – এ কথাও আমরা এখনও সম্যক বুঝে উঠতে পারিনি। সবমিলিয়ে এক অনিশ্চয়তার গুরুভার আমরা বহন করছি। দুটো শব্দ দিয়ে একে হয়তো প্রকাশ করা যায় – (১) অবদমিত আতঙ্ক, এবং (২) ভেবে-নেওয়া মৃত্যুভয় (anticipatory dread)।
এর সাথে আরেকটি বিষয় আমাদের গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলছে – আমাদের সামাজিক সংস্থিতির রূপান্তর, সাময়িক হোক বা দীর্ঘকালীন। এটা কোন বন্যা, আগুন লাগা, নদী ভাঙ্গন বা খরা-মনন্ত্বরের মতো ব্যাপার নয় যেখানে যৌথভাবে ঝাঁপিয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক মানবিক এবং সামাজিক সংস্থিতির লক্ষণ। এখানে পরিস্থিতি ঠিক বিপরীত। যে যত দূরত্ব রক্ষা করতে পারবে তার নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা ততো বেশি। ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ার সর্বগ্রাসী দাপটে যেখানে এমনিই আমরা পৃথিবীর মাটিতে পরস্পর-বিচ্ছিন্ন ভার্চ্যুয়াল দ্বীপে বাস করি সেখানে সমাজের এই structural বা গঠনগত রূপান্তর আরেক নতুন পরিস্থিতি ও সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।
এরকম পরিস্থিতিতেও যারা সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে আর্ত মানুষকে সাহায্য করছেন, তাদের চিকিৎসা করছেন – চিকিৎসক-নার্স-চিকিৎসাকর্মী, পুলিস, যারা নিরন্তর ময়লা ও বর্জ্য পরিষ্কার করছেন – তাঁরা সমাজের নমস্য। ল্যান্সেট জার্নালে প্রকাশিত সম্পাদকীয় “Race for a COVID-19 vaccine”-এ বলা হয়েছে – “Right now, we celebrate the efforts of scientists, doctors, and individuals working around the clock to find a solution to this pandemic.” এ তো আমাদের সবার মনের কথা!
কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস ঘটিত যে ভয়ঙ্কর সংক্রমণের সময় আমরা অতিবাহিত করছি সেটা একেবারেই অচেনা, আগন্তুক। মানুষের শরীরের সাথে এর কোন পূর্ব পরিচয় ছিলনা। আগে যে আরএনএ ভাইরাস ঘটিত মহামারি হয়েছে – যেমন, ২০০২-৩-এ সার্স-কোভ-১ বা ২০১২-তে মূলত মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ মার্স (MERS) – সেগুলোর থেকে এর চরিত্র ভিন্ন। এর গায়ে থাকা স্পাইক প্রোটিনের ফলে সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি। সাধারণ ফ্লু-র চেয়ে ১০ গুণ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা। যদি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে তাহলে স্থায়ী সমাধান হবে, যেমনটা হাম, পোলিও বা স্মল পক্সের ক্ষেত্রে হয়েছে – বছরের পরে বছর ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে লাগাতার প্রচার এবং প্রতিটি দেশে সার্বজনীন টীকাকরণের ফলে। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া এ রোগগুলো এখন পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গেছে।
দুভাবে আমরা করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে স্থায়ীপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি গড়ে তোলার কথা ভাবতে পারি। এবং এ দুটোই একমাত্র পরীক্ষিত কার্যকরী পথ – (১) হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী ইমিউনিটি এবং (২) ভ্যাক্সিন।
কিন্তু এখানে একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে – যদি ৭০% থেকে ৯০% জনসংখ্যার সংক্রমণ ঘটে (১০.০৪.২০২০-তে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাব্লিক হেলথের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী) তাহলে আমরা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছি এমনটা ভাবতে পারি। যদি এ পরিমাপ ৪০-৫০%-ও হয় তাহলেও এরকম একটা পরিসংখ্যানে পৌঁছুনো কার্যত অসম্ভব। নিউ ইয়র্কের মতো করোনা-বিধ্বস্ত শহরে যেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৪,২৯৯ জনের (সমগ্র ভা্রতের চেয়ে অনেক বেশি) সেখানে শহরের সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র ১২.৩ থেকে ১২.৭% আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ওখানেও হার্ড ইমিউনিটির কোন ভরসা বৈজ্ঞানিকেরা দেখতে পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে ভারতবর্ষ উজার হয়ে গেলেও শেষ অবধি হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে কিনা সন্দেহ আছে।
প্রসঙ্গত, আমাদের ইমিউনিটির দীর্ঘস্থায়িত্বের ক্ষেত্রে রক্তের T-cell সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন T-cell-এর একটি অংশ CD4 অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে, তেমনি আরেকটি অংশ CD8 শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক আগন্তুককে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। এজন্য এর আরেক নাম “কিলার টি-সেল”।
হার্ড ইমিউনিটির চরিত্র নীচের ডায়াগ্রামটি থেকে আমরা সহজেই বুঝে নিতে পারবো।
তাহলে পড়ে রইলো টীকা বা ভ্যাক্সিন। একে নিয়েই আমার আলোচনা। করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন তৈরির দৌড়ে ২১০টিরও বেশি কোম্পানি, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার মডার্না, চিনের সাইনোবায়োটেক এবং অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের সাফল্য অন্যদের থেকে এগিয়ে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করি, সায়ান্স জার্নাল-এর একটি খবর হচ্ছে “Unveiling ‘Warp Speed,’ the White House’s America-first push for a coronavirus vaccine” (১২.০৫.২০২০)। অর্থাৎ, ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজ যে বিকারগ্রস্ত গতি (Warp Speed) দেখাচ্ছে তা আমেরিকা-প্রথম (America-First) এই মন্ত্র নিয়ে করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন তৈরি হবে। এ লেখাতে পরে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে – “Eschewing international cooperation—and any vaccine candidates from China—it hopes to have 300 million doses by January 2021 of a proven product, reserved for Americans.” ভ্যাক্সিনের সুফল ভোগ করবে কেবল আমেরিকা। আরও বলা হয়েছে – “Warp Speed has already narrowed its list of vaccine candidates to 14 and plans to push ahead with eight”। একেবারে হালে রয়টার্স সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী (১৪.০৭.২০২০) – “Warp Speed initiative aims for COVID-19 vaccine production within 6 weeks”। এই Operation Warp Speed (OWS)-এর সুবাদেই অক্সফোর্ড ভ্যাক্সিনের সুবাদেই ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া-র সাথে ১০ কোটি ভ্যাক্সিনের ডোজের ব্যবস্থা হয়েছে।
কিছুদিন আগে (২.০৭.২০২০) আমেরিকার বিখ্যাত ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ (NIH) আমেরিকান কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দিয়েছিল – “Testimony on Operation Warp Speed: Researching, Manufacturing, & Distributing a Safe & Effective Coronavirus Vaccine”। সে সাক্ষ্যে “Witnesses appearing before the Senate Appropriations Committee Subcommittee on Labor, Health and Human Services, Education, and Related Agencies”। কারা ছিলেন সাক্ষী হিসেবে? Francis Collins, M.D., P.h.D., Director, National Institutes of Health; Robert R. Redfield, M.D., Director, Centers for Disease Control and Prevention এবং Gary Disbrow, Ph.D., Acting Director, Biomedical Advanced Research and Development Authority। Operation Warp Speed (OWS)-এর মূল বিষয়টি কি? এদের বয়ানে – “Rather than eliminating steps from traditional development timelines, steps will proceed simultaneously, such as starting manufacturing of the vaccine at industrial scale well before the demonstration of vaccine efficacy and safety, as happens normally. This increases the financial risk, but not the product risk.” অর্থাৎ, যে যে ধাপে সাধারণভাবে ভ্যাক্সিন তৈরি হয় এখানে সেগুলো বাতিল করা হচ্ছেনা। একইসাথে একাধিক ধাপের কাজ সমান্তরালভাবে চালিয়ে যাওয়া হবে।
মেডিসিনের জগতে পৃথিবীর মান্য জার্নাল নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ ভ্যাক্সিনে তৈরির নতুন পথ-পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে – “The Covid-19 Vaccine-Development Multiverse” শিরোনামে (১৪.০৭.২০২০)। এই সম্পাদকীয়তে বলা হল – “A vaccine is urgently needed to prevent Covid-19 and thereby stem complications and deaths resulting from transmission of the disease.” বলা হল – “Many phase 3 studies fail because of incorrect identification of the dose that best balances safety and efficacy. The dosing regimen for this mRNA vaccine is still under study.” তাহলে এখনো খুব নিশ্চিত অবস্থানে আমরা নেই। বৈপ্লবিক গতিতে করোনা ভ্যাক্সিনের প্রস্তুতি চলছে – ৬ বছরের সময় সীমাকে ৬ মাসে নামিয়ে আনা হয়েছে। সম্পাদকীয়তে আরও বলা হল – “The world has now witnessed the compression of 6 years of work into 6 months. Can the vaccine multiverse do it again, leading to a reality of a safe, efficacious Covid-19 vaccine for the most vulnerable in the next 6?” পাঠকেরা নিজেদের মতো করে বুঝে নিন। এখানেই জানানো হল “from publication of the first SARS-CoV-2 sequences through phase 1 in 6 months, as compared with a typical timeline of 3 to 9 years.” সহজ কথা হল, জানুয়ারি, ২০২০-তে সার্স-কোভ-২-এর জেনোমিক সিকোয়েন্স বিজ্ঞানীদের হাতে আসার পরে ফেজ ১ ট্রায়াল শুরু হয়েছে ৬ মাসের মধ্যে যেখানে প্রচলিত পথে এ সময় লাগার কথা ৩ থেকে ৯ বছর। নীচের ছবিতে এটা খানিকটা পরিষ্কার হবে।
অতিমারির জীবন-মরণ সমস্যার ক্ষণে সময়ের পরিমাপকে সংকুচিত ও জমাট বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে (condensed, coalesced and overlapped)। এতে সময় সংক্ষেপ হচ্ছে। এর ফলে রোগীর নিরাপত্তা, ভ্যাক্সিন নিরাপদ কিনা এগুলো যেমন বিবেচ্য তেমনই বিবেচ্য ভ্যাক্সিনটি নৈতিকতার এবং বৈজ্ঞানিক কঠোর শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে গেলো কিনা – এ পরীক্ষাগুলোয় পাস করলো কিনা এগুলো প্রধান বিবেচ্য।
অবশ্য বৈজ্ঞানিকদের পূর্ব-লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে বিশেষ কাজে লেগেছে। সেগুলো হল – (১) করোনা ভাইরাসের দেহের স্পাইক প্রোটিনের ভূমিকা সম্বন্ধে আগাম ধারণা থাকা, (২) ইমিউনিটির ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে “নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি”-র ভূমিকা, (৩) নিউক্লিক অ্যাসিড (যেমন আরএনএ বা ডিএনএ) ভ্যাক্সিন প্ল্যাটফর্মের উন্নত চেহারায় বিবর্তন এবং (৪) ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়াকে ধাপে ধাপে (sequentially) করার পরিবর্তে সমান্তরাল ভাবে (parallel) করা, কিন্তু যারা ভ্যাক্সিন স্টাডিতে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে কোন ঝুঁকি না নিয়ে। পূর্বোল্লেখিত সমাদকীয়তে বলা হয়েছে – “efficacy can be determined only if there is a match between the location of vaccinated participants and pandemic hot spots .... Careful selection of primary end points and event-driven study designs with the possibility of sample size reestimation should be considered.”
নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে প্রকাশিত (১.০৭.২০২০) আরেকটি গবেষণাপত্র “Accelerating Development of SARS-Cov-2 Vaccines – The Role for Controlled Human Infection Model”-এ বলা হল – “Current efforts shorten development timelines by compressing and overlapping the stages, accelerating the transition between clinical phases, powering efficacy studies to yield results in a short time frame, and pursuing large-scale manufacture of vaccines before regulatory approval.” একটি চিত্রের সাহায্যে বিষয়টি বোঝানোও হল।
কত ধরনের ভ্যাক্সিন?
এই মুহূর্তে কমবেশি ২১৪টি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বহুজাতিক সংস্থা ভ্যাক্সিন তৈরির দৌড়ে রয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় (২১.০৭.২০২০) “Coronavirus Vaccine Tracker” শিরোনামের প্রবন্ধে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে এই মুহূর্তে ২৭টি ভ্যাক্সিন হিউম্যান ট্রায়াল বা মানুষের শরীরে পরীক্ষার স্তরে আছে। একটি ডায়াগ্রাম বিষয়টি সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।
অতিমারির বিশেষ পরিস্থিতিতে ট্র্যাডিশনাল যে পথে ভ্যাক্সিন তৈরি হয় – যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায় একটি ভ্যাক্সিনকে গবেষণাগার থেকে বাজারে মানুষেড় ব্যবহারের উপযোগী করে আনতে – সে পথে এখন আর ভ্যাক্সিন তৈরি হচ্ছেনা। এখনকার ধাপগুলো হল – (১) প্রিক্লিনিক্যাল টেস্টিং (বিজ্ঞানীরা ভ্যাক্সিনটি প্রাণীদের দেহে পরীক্ষা করেন), (২) ফেজ ১ সেফটি ট্রায়াল (বিজ্ঞানীরা ভ্যাক্সিনটি স্বল্পসংখ্যক মানুষের দেহে প্রয়োগ করে নিরাপদ কিনা এবং কি ডোজে দেওয়া যেতে পারে তা দেখে নেন), (৩) ফেজ ২ এক্সপান্ডেড ট্রায়াল (এখানে ট্রায়াল চালানো হয় কয়েক’শ মানুষের ওপরে – ট্রায়ালটি আরও প্রসারিত হল। জুন, ২০২০-তে আমেরিকার মান্য সংস্থা এফডিএ নির্দেশ দিয়েছে যাদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে তাদের অন্তত ৫০%-এর ক্ষেত্রে সুরক্ষা থাকতে হবে), (৪) ফেজ ৩ এফিকেসি ট্রায়াল (এখানে বিজ্ঞানীরা ভ্যাক্সিনটি কয়েক হাজার মানুষের ওপরে প্রয়োগ করেন এবং এবং একইসাথে প্ল্যাসেবোর সাথে তুলনা করে দেখে নিতে চান ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা কেমন), (৫) এর পরের ধাপ অ্যাপ্রুভাল বা অনুমোদন, (৬) WARP SPEED – The U.S. government’s Operation Warp Speed program is expected to name five or more vaccine projects to receive billions of dollars in federal funding before there’s proof that the vaccines work. এটা এবারের অতিমারির বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ সংযোজন, (৭) CMOBINED PHASES – এটাও বর্তমান পরিস্থিতির বিশেষ অবদান। একইসাথে একাধিক ফেজকে চালানো হবে সমান্তরালভাবে, পরপর ধাপে ধাপে নয়।
এর আগে (৩০.০৪.২০২০) নেচার পত্রিকায় “The Race for Coronovirus Vaccines” এ নিয়ে সহজবোধ্য বৈজ্ঞানিক আলোচনা হয়েছিল। সে প্রতিবেদনের কিছু ডায়াগ্রাম থেকে বিভিন্ন ভ্যাক্সিন নিয়ে একটি সম্যক ধারণা করা যায়।
এ মুহূর্তে যেসব ভ্যাক্সিন (আপাতত মোট ৬টি) সবচেয়ে এগিয়ে আছে সেগুলো হল আমেরিকার মডার্না কোম্পানির নিউক্লিক অ্যাসিড ভ্যাক্সিন mRNA-1273। এই ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে একটি নতুন পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে – mRNA-এর একটি টুকরো যেটাকে একটি ন্যানো পার্টিকল দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে, এবং যার পূর্ণ ক্ষমতা আছে দেহে প্রবেশ করার পরে স্পাইক প্রোটিন হিসেবে কাজ করে ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে (a novel lipid nanoparticle-encapsulated mRNA-based vaccine that encodes for a full-length, prefusion stabilised spike (S) protein of SARS-CoV-2)। যে সমস্ত বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত, দিনরাত এক করে নিরলস পরিশ্রম মাত্র ৬৩ দিনের মধ্যে জেনোমিক সিকোয়েন্স নির্বাচন করে মানুষের ওপরে ট্রায়ালকে (from genomic sequence to trial) সম্ভব করে তুললেন তাঁরা মানবজাতির নমস্য। ল্যান্সেট পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয় “Race for a COVID-19 vaccine”-এ মন্তব্য করা হয়েছে – “The speed of these developments_63 days from sequence selection for mRNA-1273 to the beginning of a human trial for a vaccine candidate – is impressive, owing to both the relentless work of the scientists and the unprecedented demand of the circumstances.” যেহেতু mRNA-1273 ভ্যাক্সিনে জীবিত ও খর্বিত ক্ষমতার ভাইরাসকে (live attenuated virus) ব্যবহার করা হয়নি এজন্য তুলনায় নিরাপদ।
আরেকটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে এই ভ্যাক্সিনকে সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইনের আলাদা করে প্রয়োজন নেই। এমনকি গামা রশ্মি দিয়ে একে পরিশুদ্ধ করলেও এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়না। উল্লেখ করা দরকার, যেকোন ওষুধ, প্রযুক্তি বা ভ্যাক্সিনকে ৩টি ফেজের ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখানে ফেজ-১, ২ এবং ৩ কিভাবে হয় জেনে নেওয়া ভালো। ফেজ-১-এ কয়েক ডজন স্বাস্থ্যবান ভলান্টিয়ারকে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ফেজ-২-এ নেওয়া হয় কয়েক’শ মানুষকে। ফেজ-৩-এ সে পরীক্ষা করা হয় কয়েক হাজার মানুষের ওপরে – ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এখনও অবধি জেনেটিক মেটেরিয়াল – আরএনএ কিংবা ডিএনএ – থেকে তৈরি ভ্যাক্সিন FDA-র অনুমোদন লাভ করেনি। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একধরনের ইমার্জেন্সি অবস্থা তৈরি হয়েছে। এজন্য সমস্ত সম্ভাবনা খোলা রাখা হয়েছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ “An mRNA Vaccine against SARS-CoV-2 – Preliminary Report” শিরোনামে মডার্না ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে (১৪.০৭.২০২০)। ট্রায়াল রিপোর্টে বলা হয়েছে – “We conducted a phase 1, dose-escalation, open-label trial including 45 healthy adults, 18 to 55 years of age, who received two vaccinations, 28 days apart, with mRNA-1273 in a dose of 25 μg, 100 μg, or 250 μg. There were 15 participants in each dose group.” অর্থাৎ, মোট ৪৫ জন ভলান্টিয়ারের ওপরে তিনটি ডোজের – ২৫, ১০০ এবং ২৫০ মাইক্রোগ্রাম – ভ্যাক্সিন দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন সমস্যা ভ্যাক্সিন গ্রহীতাদের হয়নি। এদের সিদ্ধান্ত হল – “The mRNA-1273 vaccine induced anti–SARS-CoV-2 immune responses in all participants, and no trial-limiting safety concerns were identified. These findings support further development of this vaccine.”
এর সাথে এই ট্রায়াল রিপোর্টের লক্ষ্যণীয় অংশ হল – “Of the three doses evaluated, the 100-μg dose elicits high neutralization responses and Th1-skewed CD4 T cell responses, coupled with a reactogenicity profile that is more favorable than that of the higher dose.” এছাড়া, ৬০০ জন ভলান্টিয়ারকে নিয়ে ২৫ এবং ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজে ফেজ ২ ট্রায়াল শুরু হয়েছে। “A large phase 3 efficacy trial, expected to evaluate a 100-μg dose, is anticipated to begin during the summer of 2020.”
ভ্যাক্সিন নিয়ে পরীক্ষা শুরুর একেবারে গোড়ার দিকে নেচার পত্রিকায় (১৮.০৩.২০২০) “Coronavirus vaccines: five key questions as trials begin” প্রবন্ধে মৌলিক কতগুলো প্রশ্ন রাখা হয়েছিল ভ্যাক্সিন ট্রায়াল নিয়ে – (১) মানুষের কি ইমিউনিটি তৈরি হয়? (এখানে বলার যে WHO পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে কোন “ইমিউনিটি পাসপোর্ট” নেই। একবার আক্রান্ত হলে একজন ব্যক্তি যে আবার আক্রান্ত হবেনা এরকম কোন নিশ্চয়তা নেই।) (২) যদি ইমিউনিটি তৈরি হয় তাহলে সেটা কতদিন অব্দি থাকবে? (উপরের প্রশ্নে এর উত্তর আছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সেরে ওঠার পরে আবার সংক্রমিত হবার ঘটনা দেখা যাচ্ছে।) (৩) যারা ভ্যাক্সিন তৈরি করছে তারা কি ধরনের ইমিউন প্রতিক্রিয়া আশা করে? (৪) আমরা কি করে জানবো যে একটি ভ্যাক্সিন ঠিকভাবে কাজ করবে? (৫) ভ্যাক্সিনটি কি নিরাপদ হবে? এ প্রশ্নগুলো এখনও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং এগুলো মাথায় রেখে ভ্যাক্সিন তৈরির কাজ চলছে।
“Race for a COVID-19 vaccine” সম্পাদকীয়তে (১৯.০৭.২০২০) বলা হয়েছে – “Moderna and CureVac (T€ubingen, Germany) are developing an mRNA-based vaccine, Novavax (MD, USA) is using recombinant protein nanoparticle technology to deliver antigens derived from the viral S protein.” এছাড়া অন্য পদ্ধতিও ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমনটা আমরা নেচার পত্রিকার একাধিক ডায়াগ্রাম থেকে বুঝেছি। উল্লেখিত সম্পাদকীয়তে বলা হল – “Other recombinant vaccine approaches have also been considered. Researchers at the University of Hong Kong (Pok Fu Lam, Hong Kong) are using a weakened version of influenza virus that has been altered to express the surface protein of the SARS-CoV-2 virus, and the consortium led by Institut Pasteur (Paris, France) is adopting a measles vaccine as a vector. The University of Queensland (QLD, Australia) is leveraging on its S-spike vaccine. The candidate has been developed via molecular clamp technology, which uses a lab-created polypeptide to pin the spike protein in its tortile position so that the body’s immune system can target it before the virus has a chance to activate.” এছাড়াও ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিন তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
অক্সফোর্ড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে শিম্পাঞ্জির শরীরে বাস করা অ্যাডেনো ভাইরাসকে (যা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ফ্লু বা হাঁচি-কাশি-সর্দি ঘটায়) live attenuated virus করে ইঞ্জেকশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে (২০.০৭.২০২০) ল্যান্সেট জার্নালে “Safety and immunogenicity of the ChAdOx1 nCoV-19 vaccine against SARS-CoV-2: a preliminary report of a phase 1/2, single-blind, randomised controlled trial” শিরোনামে। এই ট্রায়ালে 5 × 1010 viral particles ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। মোট ১০৭৭ জন ভলান্টিয়ারের ওপরে ওপরে পরীক্ষা করা হয়েছে – “Between April 23 and May 21, 2020, 1077 participants were enrolled and assigned to receive either ChAdOx1 nCoV-19 (n=543) or MenACWY (n=534), ten of whom were enrolled in the non-randomised ChAdOx1 nCoV-19 prime-boost group”। ফলাফল হিসেবে দেখা গেছে – “ChAdOx1 nCoV-19 showed an acceptable safety profile, and homologous boosting increased antibody responses. These results, together with the induction of both humoral and cellular immune responses, support largescale evaluation of this candidate vaccine in an ongoing phase 3 programme.” ব্রিটেন, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ৩০,০০০ ভলান্টিয়ারের ওপরে ChAdOx1 nCoV-19 ভ্যাক্সিন পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। অক্সফোর্ড গবেষদের মতে এই ভ্যাক্সিন রক্তে T-cell তৈরি বাড়িয়ে দেয় এবং এই বিশেষ টি-সেলের দল রক্তপ্রবাহে বহু বছর ধরে থাকতে পারে। ফলে শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে।
একই দিনে (২০.০৭.২০২০) চিনের আরেকটি স্টাডির ফলাফলও ল্যান্সেট পত্রিকায় প্রকাশিত হয় “Immunogenicity and safety of a recombinant adenovirus type-5-vectored COVID-19 vaccine in healthy adults aged 18 years or older: a randomised, double-blind, placebo-controlled, phase 2 trial” শিরোনামে। এখানে শিম্পাঞ্জির পরিবর্তে মানব শরীরের live attenuated virus-কে ব্যবহার করা হয় ভাইরাল-ভেক্টর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। এই স্টাডির ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে – “The Ad5-vectored COVID-19 vaccine at 5 × 1010 viral particles is safe, and induced significant immune responses in the majority of recipients after a single immunisation.” এখানে যাদের ওপরে ট্রায়াল দেওয়া হয়েছিল তারা “were randomly assigned to receive the vaccine at a dose of 1 × 1011 viral particles per mL or 5 × 1010 viral particles per mL, or placebo. Investigators allocated participants at a ratio of 2:1:1 to receive a single injection intramuscularly in the arm.”
সবমিলিয়ে কয়েক’শ কোটি ভ্যাক্সিন তৈরির লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করে যাচ্ছেন। এখানে মনে রাখতে হবে “The race for a vaccine moves fast, as the need for a solution is evident, but we cannot forget that safety is of the highest importance.” তার সাথে এটাও মনে রাখতে হবে শুধু neutralizing antibody নয়, আমাদের শরীরের T-cell-কে কতোটা সক্রিয় করে তুলতে পারছে সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে T-cell-এর ভূমিকা (CD4 and CD8) অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নেচার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে (Coronavirus vaccines leap through safety trials — but which will work is anybody’s guess – ২১.০৭.২০২০) বলা হয়েছে – “If a vaccine can elicit a combination of neutralizing antibodies and both kinds of T-cells, it could bode well for protecting against disease ... The nature of the immune response that protects — or fails to protect — against COVID-19 will become clearer when efficacy trials deliver their first results.” বিজ্ঞানীদের এখনো অজানা ঠিক কত পরিমাণ (what levels) অ্যান্টিবডি প্রয়োজন দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য। এখানে বিবিসি থেকে প্রকাশিত একটি খবর (২০.০৭.২০২০) “The people with hidden immunity against Covid-19” শ্রান্ত বিশ্বমানসে কিছুটা আশার আলো হয়তো ফেলছে। এখানে বলা হয়েছে, যদিও সর্বশেষ গবেষণা দেখাচ্ছে যে ৩ মাসের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি শেষ হয়ে যেতে পারে কিন্তু “a new hope has appeared in the horizon: the enigmatic T cell.” এজন্য এ প্রবন্ধের শুরুতেই টি-সেল নিয়ে আলোচনা করেছি।
সবশেষে একটি চিঠির উল্লেখ করি। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়েছে (২১.০৭.২০২০) “Rapid Decay of Anti–SARS-CoV-2 Antibodies in Persons with Mild Covid-19” শিরোনামে। এ চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে আক্রান্তের শরীর থেকে যেভাবে দ্রুত অ্যান্টিবডি হ্রাস পাচ্ছে সেটা নিতান্ত উদ্বেগের বিষয় – “the results call for caution regarding antibody-based “immunity passports,” herd immunity, and perhaps vaccine durability, especially in light of short-lived immunity against common human coronaviruses.”
আমাদের একমাত্র আশা ভ্যাক্সিনের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকার পাশাপাশি এ সতর্কবাণীগুলোও মাথায় রাখতে হবে আমাদের।
Beautifully presented sir.
"দুভাবে আমরা করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে স্থায়ীপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি গড়ে তোলার কথা ভাবতে পারি। এবং এ দুটোই একমাত্র পরীক্ষিত কার্যকরী পথ – (১) হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী ইমিউনিটি এবং (২) ভ্যাক্সিন।"
আসলে ভ্যাক্সিনও Herd Immunity গড়ে তোলে, তাই ভ্যাকসিনের এত চাহিদা, তবে অতি দ্রুত ও নিরাপদ ভাবে গড়ে তোলে ।
মহামারীর অঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, মহামারীর শুরুতে একজনে মানুষ কতজনকে সংক্রমিত করতে পারেন তাকে বলা হয় R0 | এর থেকে অঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, সংক্রমণ হতে হতে যখন জনসংখ্যার (1 - 1/R0) * 100 শতাংশ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ হবে, তখন জনসংখ্যার বাকী অংশে নতুন করে সংক্রমণ ছড়ানো আর সম্ভব হবে না, এইভাবে জনসমাজে একরকমের প্রতিষেধন গড়ে উঠবে। এখানে একটা কথা বলার যে, এ শুধু সেই ধরণের সংক্রমণের ক্ষেত্রেই হবে যেখানে একবার সংক্রমণ হয়ে কেউ সেরে উঠলে সেই মানুষটির পুনরায় আর সংক্রমণ হবে না, তা না হলে Herd Immunityর প্রশ্ন ওঠে না। এখন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে জানা আছে যে R0 = 2.5 (এক জনের থেকে আড়াই জনের সংক্রমণ হতে পারে) , যার জন্য শুধু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটি ৬০% (উপরিউক্ত ফরমুলা অনুযায়ী) । ভারতের মত দেশে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের সংক্রমণ হয়ে Herd Immunity হতে গেলে ৪০ কোটি মানুষের সংক্রমণ হতে হবে, এর ফলে যদি ২% শতাংশ মানুষেরও মৃত্যু ধরে নেওয়া হয়, খুব কম করে ৮০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে হবে। এটি কি গ্রহণযোগ্য? কাজেই করোনাভাইরাসের মতন ছোঁয়াচে অসুখের জন্য Herd Immunity গড়ে তোলার জন্য ভ্যাকসিনই একমাত্র ভরসা। ভ্যাকসিন এখনো পাওয়া যায়নি, আমরা জানি না কবে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল হবে, অর্থাৎ সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া এও জানা নেই যে নতুন ধরনের এই ভ্যাকসিনের কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
আরেকটি ব্যাপার, লেখক লিখছেন,
"এখানে যাদের ওপরে ট্রায়াল দেওয়া হয়েছিল তারা “were randomly assigned to receive the vaccine at a dose of 1 × 1011 viral particles per mL or 5 × 1010 viral particles per mL, or placebo. Investigators allocated participants at a ratio of 2:1:1 to receive a single injection intramuscularly in the arm.”
এখানে একটা ব্যাপার ভেবে দেখুন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় যাঁরা placebo পেলেন, তাঁদের অবস্থাটি। ধরুন এই ট্রায়াল double blind, মানে না পরীক্ষকরা, না এঁরা, কেউ জানবেন না কি পেলেন। এঁরা ইনজেকশনের বেদনা সহ্য করলেন অথচ এটি কোনভাবে কাজ করবে না, যিনি পেলেন সে ব্যাপারটি জানেন না কিন্তু | এবার করোনাভাইরাসের যে অবস্থা, তাতে মনে করুন, প্লেসিবো যাঁরা পেলেন, তাঁরা ধরুন ভ্যাকসিন পেয়েছেন ধরে করোনার সংক্রমণ স্বইচ্ছায় নিজের শরীরে নিলেন, বা করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে এমন বিপজ্জনক আচার আচরণ করতে শুরু করলেন। মনে রাখতে হবে এখন বহু দেশে জনসমাজে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিদ্যমান, এমত অবস্থায় ভ্যাকসিনের সামাজিক পরীক্ষা (phase III trial) কতটা নৈতিক তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কাজেই এই ধরণের পরীক্ষা বা গবেষণার খুঁটিনাটি বিশদে আলোচনা করার একটি জায়গা আছে।
আমাদের কাছে সৌভাগ্যের বিষয় যে জয়ন্ত ভট্টাচার্য এই গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণের কাজটি বহুদিন ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন।
অরিন,যদ্দুর জানি একটি ভ্যাকসিন ট্রায়াল করা হবে ১৮-৫৫ বছর বয়সী দের মধ্যে। যাঁদের মধ্যে কোমর্বিডিটি খুব কম।ভ্যাকসিন নেবার পর ভলান্টিয়ার গণ জানতে পারছেন না,ভ্যাকসিন পেলেন না ডিস্টিল্ড ওয়াটার পেলেন। ভ্যাকসিন নেবার পরবর্তী মাস কয়েক সাধারণ মানুষের মতন ই প্রি কশন নিতে থাকবেন। সুতরাং সংক্রমণ হারের বিরাট পরিবর্তন হবে না।ভ্যাকসিন এফেকটিভ হলে অবশ্যই স্টাডি তে ধরা পড়বে।
মূল প্রবলেম হলো,ফেজ থ্রি তে টাইম খুব কম দেওয়া হচ্ছে।তাই ভ্যাকসিন দেবার জন্য কোন লং টার্ম সাইড এফেক্ট ভালো ভাবে বোঝা যাবে না।
কিন্তু এই মহামারীর সময়, বিশেষত ভারতের মতন বিপুল জনসংখ্যার দেশের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন এর বিকল্প কোথায়? পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ই যখন ডামাডোলে রয়েছে।
আই সি এম আর এখনো পর্যন্ত গোষ্ঠী সংক্রমণ হোয়েচে কিনা স্পষ্ট করে জানালো কি!? সাধারণ মানুষ হন্যে হয়ে যাচ্ছে কোথায় গেলে টেস্ট করাতে পারবো?কবে রিপোর্ট আসবে,ইত্যাদি প্রভৃতি। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা।
আমার একান্ত আপনার অনুজরতিম অরিনের মতামত মূল কথাগুলোকে আরো সমৃদ্ধ করলো। আমি সমৃদ্ধ হলাম।
ভালোয়াবাসা*
sm নাম ব্যবহার করে যিনি মতামত দিয়েছেন তিনি হয়তো আমার অপরিচিত। কিন্তু মতামত গুরুত্বপূর্ণ। এরকম ছেলেখেলা করে, লঘুভাবে এই মারণান্তক রোগের মোকাবিলা করা যায়না।
আমরা এরকম ইতিহাসের সাক্ষী হয় রইলাম।
@sm:
"অরিন,যদ্দুর জানি একটি ভ্যাকসিন ট্রায়াল করা হবে ১৮-৫৫ বছর বয়সী দের মধ্যে। যাঁদের মধ্যে কোমর্বিডিটি খুব কম।ভ্যাকসিন নেবার পর ভলান্টিয়ার গণ জানতে পারছেন না,ভ্যাকসিন পেলেন না ডিস্টিল্ড ওয়াটার পেলেন। ভ্যাকসিন নেবার পরবর্তী মাস কয়েক সাধারণ মানুষের মতন ই প্রি কশন নিতে থাকবেন। সুতরাং সংক্রমণ হারের বিরাট পরিবর্তন হবে না।ভ্যাকসিন এফেকটিভ হলে অবশ্যই স্টাডি তে ধরা পড়বে।"
এতে করে অবশ্য যাঁদের কোমর্বিডিটি (অন্যান্য অসুখ) নেই আর যাঁরা ৫৫ বছর বয়সের উর্দ্ধে, তাঁদের ওপর ভ্যাকসিনের কি উপযোগিতা তা জানা যাবে না। ভ্যাকসিন হয়ত পরীক্ষামূলক ভাবে কার্যকরী (efficacious) হবে, কিন্তু সে যে বৃহত্তর সমাজে কতটা কার্যক্ষেত্রে কার্যকরী ("effective") সেইটে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, কেননা বৃদ্ধ ও অন্যান্য অসুখে ভোগা মানুষের জন্য করোনা সংক্রমণ মারাত্মক রকমের ক্ষতিকর, এবং ভ্যাকসিনের প্রয়োজন এঁদেরই সর্বাগ্রে । সে যাই হোক, ভ্যাকসিনের পরীক্ষা যেন কার্যকরী হয়, সকলেই চাইব ।
দুনিয়া জুড়ে অতিমারী চলাকালীন ভ্যাকসিনের ট্রায়াল কতটা নৈতিক?
অন্যদিকে এ ছাড়া উপায়ই বা কি?
প্রশ্নগুলো কঠিন আর উত্তরটাও যে অজানা।
Consolidated nice article for everyone
আবার একটি সুচিন্তিত এবং অভিজ্ঞতা নির্ভর প্রবন্ধ পড়বার সুযোগ পেলাম। ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ প্রবন্ধে তাঁর স্বকীয়তা বজায় রাখবার জন্য এবং প্রবন্ধটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত নন এমন লোকেরাও পড়তে পারেন তা মাথায় রাখার জন্য।
আবার একটি সুচিন্তিত এবং অভিজ্ঞতা নির্ভর প্রবন্ধ পড়বার সুযোগ পেলাম। ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ প্রবন্ধে তাঁর স্বকীয়তা বজায় রাখবার জন্য এবং প্রবন্ধটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত নন এমন লোকেরাও পড়তে পারেন তা মাথায় রাখার জন্য।
তথ্য সমৃদ্ধ লেখনী, যা অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করে
খুব উপযোগী পোস্ট।
Dear Jayanto -- I do not know how to type in "Bangal" script. With hard labour just handling laptop at 87th.yrs of mine. Your didactive essay is simply marvelous ; simple to grasp even for non medical persons and shows elegantly your masterly capacity to prove your point. I came to know you academiclly very recently. Only regret -- how I missed you so long ! Keep it up -- with regards ... nirmalya da
সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ, মনোযোগ দিয়ে লেখাটি পড়েছেন বলে।
সবাই ভালো থাকুন